মুসলিম নারীর প্রতিদিনের সহীহ আমল-২
বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম
Power point Presentation:
মুসলিম নারীর প্রতিদিনের আমল ২য়
মহান আল্লাহ তা’লা বলেছেন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَلْتَنْظُرْ نَفْسٌ مَا قَدَّمَتْ لِغَدٍ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ (18) وَلَا تَكُونُوا كَالَّذِينَ نَسُوا اللَّهَ فَأَنْسَاهُمْ أَنْفُسَهُمْ أُولَئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ (19)
হে ঈমানদারগণ, আল্লাহ তা’লাকে ভয় কর এবং প্রত্যেক ব্যক্তিই যেন খেয়াল রাখে যে, সে আগামী দিনের জন্য কি ব্যবস্থা রেখেছে। আর তোমরা ভয় করো আল্লাহ তা’লাকে। আল্লাহ নিশ্চিতই তোমাদের সেই সব আমল সম্পর্কে অবহিত যা তোমরা করতে থাকো। তোমরা সেই লোকদের মত হয়ে যেও না যারা আল্লাহকে ভুলে গিয়েছে। ফলে আল্লাহ তাদেরকে আত্মভোলা বানিয়ে দিয়েছেন। এসব লোকেরাই ফাসেক। সুরা আল হাশর: ১৮-১৯
মহান আল্লাহ বলেছেন:
আর মানুষ ততটুকু ফল লাভ করবে যতটুকু চেষ্টা সে করেছে, তার প্রচেষ্টা শিগগীরই দেখে নেয়া হবে। অতঃপর সে পুরোপুরি ফল লাভ করবে। আর পরিশেষে সবাইকে তোমাদের প্রতিপালকের কাছেই পৌঁছাতে হবে। সূরা নাজম: ৩৯-৪২
বুদ্ধিমান ব্যক্তির কর্তব্য হলো তার সময়কে ভাগ করে নেয়া। কিছু সময় ব্যয় করবে তার প্রভুর প্রার্থনায়, কিছু সময় ব্যয় করবে আল্লাহর সৃষ্টি কৌশল বিষয়ে চিন্তা করে, কিছু সময় রাখবে আত্মসমীক্ষার জন্য এবং কিছু সময় ব্যয় করবে জীবিকার প্রয়োজনে। (ইবনে হিব্বান)
কাজ মূলত তিন ধরনের:
১। নিজের প্রতি কর্তব্য ২। স্রষ্টার প্রতি কর্তব্য ৩। সৃষ্টির প্রতি কর্তব্য
তাই সময়কে কাজের সাথে সমন্বয় করে নিতে হবে।
মুমিন জীবনের সকল কর্মের গুরুত্ব ও পর্যায়গুলি নিম্নরূপঃ(রাহে বেলায়েত)
প্রথমত, ঈমান
দ্বিতীয়ত, বৈধ উপার্জন
তৃতীয়ত, বান্দার হক সংশ্লিষ্ট হারাম বর্জন.
ফরয কর্ম দুই প্রকার: প্রথম প্রকার যা করা ফরয ও দ্বিতীয় প্রকার যা বর্জন করা ফরয, যা “হারাম” নামে অভিহিত।
চতুর্থত, আল্লাহর অন্যান্য আদেশ নিষেধ বিষয়ক হারাম বর্জন।
পঞ্চমত, ফরয কর্মগুলি পালন।
ষষ্ঠত, মাকরূহ তাহরীমি বর্জন ও সুন্নাতে মু‘আক্কাদা কর্ম পালন।
সপ্তমত, মানুষ ও সৃষ্টির সেবা ও কল্যাণমূলক সুন্নাত-নফল ইবাদত পালন।
অষ্টমত, ব্যক্তিগত সুন্নাত-নফল ইবাদত পালন
ক. ইবাদত কবুলের শর্ত পূরণ: কুরআন কারীম ও সুন্নাতের আলোকে যিকরসহ সকল ইবাদত আল্লাহর দরবারে কবুল বা গৃহীত হওয়ার জন্য তিনটি মৌলিক শর্ত রয়েছেঃ
(১) বিশুদ্ধ ঈমান ও ইখলাস
(২) সুন্নাতের অনুসরণ
(৩) হালাল ভক্ষণ
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ
مَا نَهَيْتُكُمْ عَنْهُ فَاجْتَنِبُوهُ وَمَا أَمَرْتُكُمْ بِهِ فَافْعَلُوا مِنْهُ مَا اسْتَطَعْتُمْ
“আমি তোমাদেরকে কোনো কিছু নিষেধ করলে তা সর্বোতভাবে পরিত্যাগ করবে। আর তোমাদেরকে যা করতে নির্দেশ প্রদান করব তা সাধ্যমত করবে।” সহীহ মুসলিম ৪/১৮৩০, নং ১৩৩৭
- ৪টি কাজ প্রতিদিনের আমলে রাখার লক্ষ্য রাখা
সিয়াম পালন করা
জানাযায় অংশগ্রহন
মিসকীনকে খাবার দেয়া
অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়া
মুহাম্মাদ ইবনু উমার মাক্কী (রহঃ) ….. আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আজ তোমাদের মাঝে কে সিয়াম পালনকারী? আবূ বকর (রাযিঃ) বললেন, আমি। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আজ তোমাদের মাঝে কে একটা জানাযাকে অনুকরণ করেছো? আবূ বাকর (রাযিঃ) বললেন, আমি। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমাদের মাঝে কে একজন মিসকীনকে আজ খাবার দিয়েছো? আবূ বাকর বললেন, আমি। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমাদের মাঝে কে আজ একজন অসুস্থকে দেখতে গিয়েছো? আবূ বাকর (রাযিঃ) বললেন, আমি। তারপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যার মধ্যে এ কাজগুলোর সংমিশ্রণ ঘটেছে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। সহিহ মুসলিমঃ ১০২৮, ই ফা ৫৯৬৬, ই সে ৬০০৫
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারীদের জান্নাত লাভের সোজা পথ বাতলে দিতে গিয়ে সেখানেও বলেছেন,
إذا صلت المرأة خمسها وصامت شهرها وحفظت فرجها وأطاعت زوجها قيل لها ادخلي الجنة من أي أبواب الجنة شئت. ورواه ابن حبان في صحيحه عن أبي هريرة رضي الله عنه، والحديث صححه الألباني في الجامع الصغير.
– “যখন কোন একজন নারী পাঁচ ওয়াক্ত সলাত আদায় করবে
– রামাদ্বানের সিয়াম পালন করবে
– নিজের সতীত্বের হিফাজত করবে
– এবং তার স্বামীর আনুগত্য করবে, তাকে বলা হবে জান্নাতের যে দরজা দিয়ে চাও তুমি প্রবেশ কর।”
(ইবনু মজাহ, ইমাম আল-বানী হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন)
ইবনু আব্বাস রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
أُرِيتُ النَّارَ فَإِذَا أَكْثَرُ أَهْلِهَا النِّسَاءُ يَكْفُرْنَ قِيلَ أَيَكْفُرْنَ بِاللَّهِ قَالَ يَكْفُرْنَ الْعَشِيرَ وَيَكْفُرْنَ الْإِحْسَانَ لَوْ أَحْسَنْتَ إِلَى إِحْدَاهُنَّ الدَّهْرَ ثُمَّ رَأَتْ مِنْكَ شَيْئًا قَالَتْ مَا رَأَيْتُ مِنْكَ خَيْرًا قَطُّ
“আমাকে জাহান্নাম দেখানো হয়েছে ; আর সেখানে অধিকাংশ অধিবাসিরাই নারী। আর এটা এই কারনে যে তারা অস্বীকারকারিনী। বলা হল, তারা কি আল্লাহকে অস্বীকার করে? রাসূল সা বললেন, তারা তাদের স্বামীদের অকৃতজ্ঞ হয়/ স্বামীদের অবদান, ইহসান অস্বীকার করে। তাদের অবস্থাটা এমন যে, তুমি সারা জীবন তাদের প্রতি ইহসান করে যাচ্ছো আর তোমার কোন একটি ত্রুটির কারণে তোমাকে বলবেঃ তোমার মাঝে আমি কখনোই ভালো কিছু পাইনি।” বুখারি-১০৫২।
একজন মুমিনা নারীকে উপরের হাদীস দুটো বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করে আমল করবে।
“যখনই কোনো মুসলিম পাপ ও আত্মীয়তা নষ্ট করা ছাড়া অন্য যে কোনো বিষয় আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে তখনই আল্লাহ তাঁর প্রার্থনা পূরণ করে তাঁকে তিনটি বিষয়ের একটি দান করেন : হয় তাঁর প্রার্থিত বস্তুই তাঁকে সঙ্গে সঙ্গে প্রদান করেন, অথবা তাঁর প্রার্থনাকে (প্রার্থনার সাওয়াব) তাঁর আখেরাতের জন্য সঞ্চয় করে রাখেন অথবা দু‘আর পরিমাণে তাঁর অন্য কোনো বিপদ তিনি দূর করে দেন।” একথা শুনে সাহাবীগণ বলেনঃ তাহলে আমরা বেশি বেশি দু‘আ করব। তিনি উত্তরে বলেনঃ আল্লাহ তা’আলা আরো বেশি (প্রার্থনা পূরণ করবেন)। হাদীসটি সহীহ। সুনানুত তিরমিযী ৫/৫৬৬, নং ৩৫৭৩, মুসনাদ আহমাদ ৩/১৮,
দু‘আর সুন্নাত-সম্মত নিয়ম ও আদব:
ক।. ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায়ের নিষেধ
“যার হাতে আমার জীবন তাঁর শপথ করে বলছি, তোমরা অবশ্যই ভালোকাজে মানুষদেরকে নির্দেশ প্রদান করবে এবং অবশ্যই অন্যায় থেকে মানুষদেরকে নিষেধ করবে। যদি তা না কর তাহলে আল্লাহ তোমাদের উপর তাঁর পক্ষ থেকে শাস্তি প্রেরণ করবেন। এরপর তোমরা তাঁর নিকট প্রার্থনা করলেও তিনি তা কবুল করবেন না। সুনানুত তিরমিযী ৪/৪৬৮, নং ২১৬৯। ইমাম তিরমিযী হাদিসটিকে হাসান বা গ্রহনযোগ্য বলে উল্লেখ করেছেন।
খ। সুন্নাতের অনুসরণ
“কোনো বয়স্ক বা বৃদ্ধ মুসলিম যদি সৎকর্মশীল হন এবং সুন্নাত আঁকড়ে ধরে থাকেন তাহলে তিনি কোনো কিছু আল্লাহর কাছে চাইলে আল্লাহ তাঁর প্রার্থিত বস্তু না দিতে লজ্জা পান (আল্লাহ তাঁর প্রার্থনা পূরণ করেন)।” হাদীসটির সনদ মোটামুটি গ্রহণযোগ্য। তাবারানী, আল-আউসাত, মাযমাউয যাওয়াইদ ১০/১৪৯।
গ। সদা সর্বদা দু‘আ করা
“যে চায় যে, আল্লাহ বিপদের সময় তার প্রার্থনায় সাড়া দিবেন, সে যেন সুখশান্তির সময় বেশি বেশি আল্লাহর কাছে দু‘আ করে।” হাদীসটি সহীহ। সুনানুত তিরমিযী ৫/৪৬২, নং ৩৩৮২, মুসতাদরাক হাকিম ১/৭২৯।
ঘ। বেশি করে চাওয়া
“তোমাদের কেউ যখন কামনা করবে, আশা করবে বা প্রার্থনা করবে তখন বেশি করে চাইবে; কারণ সে তো তার মালিকের কাছে চাচ্ছে (কাজেই, কম চাইবে কেন, তিনি তো অপারগ নন কৃপণও নন)।” হাদীসটির সনদ সহীহ। তাবারানী, মু’জামুল আওসাতে সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন। মাজমাউয যাওয়াইদ ১০/১৫০।
ঙ।কেবলমাত্র মঙ্গল কামনা
“যখন তোমাদের কেউ কামনা বা প্রার্থনা করে তখন সে যেন চিন্তা ভাবনা করে কামনা বা প্রার্থনা করে, কারণ তার কোন্ কামনা আল্লাহর দরবারে কবুল হয়ে যাচ্ছে তা সে জানে না। (কাজেই, এমন কিছু যেন কেউ কামনা বা প্রার্থনা না করে যার জন্য পরে আফসোস করতে হয়)।” হাদীসটির সনদ সহীহ। ইমাম আহমাদ সহীহ সনদে মুসনাদে হাদিসটি সংকলিত করেছেন। মাজমাউয যাওয়াইদ ১০/১৫১।
“তোমরা কখনো নিজেদের বা তোমাদের সন্তানদের বা তোমাদের মালসম্পদের অকল্যাণ, অমঙ্গল বা ক্ষতি চেয়ে বদ দু‘আ করবে না। কারণ, হয়ত এমন হতে পারে যে, যে সময়ে তোমরা বদদু’আ করলে, সেই সময়টি এমন সময় যখন আল্লাহ বান্দার সকল প্রার্থনা কবুল করেন এবং যে যা চায় তাকে তা প্রদান করেন। এভাবে তোমাদের বদদু‘আও তিনি কবুল করে নেবেন।”সহীহ মুসলিম ৪/২৩০১-২৩০৪, নং ৩০০৬।
চ। ফলাফলের জন্য ব্যস্ত না হওয়া
বান্দা যতক্ষণ পাপ বা আত্মীয়তার ক্ষতিকারক কোনো কিছু প্রার্থনা না করে ততক্ষণ তার দু‘আ কবুল করা হয়, যদি না সে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।” বলা হলোঃ “ইয়া রাসূলাল্লাহ, ব্যস্ততা কিরূপ?” তিনি বলেনঃ “প্রার্থনাকারী বলতে থাকে – দু‘আ তো করলাম, দু‘আ তো করলাম ; মনে হয় আমার দু‘আ কবুল হলো না। এভাবে সে হতাশ হয়ে পড়ে এবং তখন দু‘আ করা ছেড়ে দেয়। “ সহীহ মুসলিম ৪/২০৯৬, নং ২৭৩৫।
ছ। মনোযোগ ও কবুলের দৃঢ় আশা
“তোমরা যখন আল্লাহর কাছে চাইবে, তখন দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে প্রার্থনা করবে যে, আল্লাহ অবশ্যই তা কবুল করবেন ও পূরণ করবেন। কারণ কোনো বান্দা অমনোযোগী অন্তরে দু‘আ করলে আল্লাহ তার দু‘আ কবুল করেন না। হাদিসটির সনদ হাসান। মুসনাদ আহমাদ, মাজমাউয যাওয়াইদ ১০/১৪৮।
জ। নিজের জন্য নিজে দু‘আ করা
আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ আমি প্রশ্ন করলাম, “হে আল্লাহর রাসূল, সর্বোত্তম দু‘আ কি?” তিনি উত্তরে বলেনঃ
دعاء المرء لنفسه
“মানুষের নিজের জন্য নিজের দু’আ”। হাদীসটির সনদ গ্রহণযোগ্য। মাজমাউয যাওয়াইদ ১০/১৫২।
নবী (সা.) যখন দু’আ করতেন তখন নিজেকে দিয়ে শুরু করতেন। হাদিসটির সনদ হাসান বা গ্রহণযোগ্য। মুসনাদ আহমাদ ৫/১২১, ১২২,
ঝ। অনুপস্থিতদের জন্য দু’আ করা
“কোনো মুসলিম যখন তার কোনো অনুপস্থিত ভাইয়ের জন্য দু‘আ করে তখন আল্লাহ তার প্রার্থনা কবুল করেন। তার মাথার কাছে একজন ফিরিশতা নিয়োজিত থাকেন। যখনই ঐ মুসলিম তার অনুপস্থিত ভাইয়ের জন্য কোনো কল্যাণ বা মঙ্গল চায়, তখনই ফিরিশতা বলেনঃ আমীন, এবং আপনার জন্যও অনুরূপ।” সহীহ মুসলিম ৪/২০৯৪, নং ২৭৩২, ২৭৩৩।
ঞ। সকল বিষয় শুধু আল্লাহর নিকটেই চাওয়া
দু’আ করার সময় আদবঃ (আদব হলো উত্তম)
১। দু‘আর শুরুতে ও শেষে সালাত পাঠ
২। দু‘আয় ‘ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম’ বলা
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ
ألظوا ب-يا ذا الجلال والإكرام
“তোমরা ‘ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম’-কে [অর্থ: হে মর্যাদা ও সম্মানের অধিকারী] সর্বদা আঁকড়ে ধরে থাকবে (দু‘আয় বেশি বেশি বলবে)” হাদিসটি সহীহ। মুসতাদরাক হাকিম ১/৬৭৬, মুসনাদ আবী ইয়ালা ৬/৪৪৫, সুনানুত তিরমিযী (আনাস থেকে) ৫/৫৩৯-৫৪০,
৩। দু‘আ কবুলের অবস্থাগুলির প্রতি লক্ষ্য রাখা
৪।বারবার চাওয়া বা তিনবার চাওয়া
আব্দুল্লাহ ইবনু মাস’ঊদ বলেনঃ
كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا دَعَا دَعَا ثَلاثًا وَإِذَا سَأَلَ سَأَلَ ثَلاثًا
“নবীয়ে আকরাম (সা.) যখন দু‘আ করতেন তখন তিনবার দু‘আ করতেন এবং তিনি যখন চাইতেন বা প্রার্থনা করতেন তখন ৩ বার করতেন।” সহীহ মুসলিম ৩/১৪১৮, নং ১৭৯৪।
৫।দু‘আর সময় কিবলামুখী হওয়া
আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ
إن لكل شيء سيدا وإن سيد المجالس قبالة القبلة
“প্রত্যেক বিষয়ের সাইয়্যেদ বা নেতা আছে। বসার নেতা কিবলামুখী হয়ে বসা।” হাদীসটির সনদ হাসান।তাবারানী, আল-মু’জামুল আওসাত ৩/২৫, মাজমাউয যাওয়াইদ ৮/৫৯।
৬। দু‘আর সময় হাত উঠানো
আয়েশা (রাঃ) বলেন,রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর মুবারক হাত দু’খানা উঠিয়ে দু‘আ করতেন, এমনকি আমি তাঁর (বেশি বেশি) হাত উঠিয়ে দু‘আ করাতে ক্লান্ত ও অস্থির হয়ে পড়তাম; তিনি এভাবে দু‘আয় বলতেনঃ হে আল্লাহ, আমি একজন মানুষ মাত্র। আমি কোনো মানুষকে গালি দিয়ে ফেললে বা কষ্ট দিলে আপনি সেজন্য আমাকে শাস্তি দিবেন না। হাদীসটির সনদ সহীহ।মুসনাদ আহমাদ ৬/১৬০, ২২৫, মাজমাউয যাওয়াইদ ১০/১৬৮।
৭। দু‘আর সময় শাহাদত আঙ্গুলি দিয়ে ইশারা করা
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ
الْمَسْأَلَةُ أَنْ تَرْفَعَ يَدَيْكَ حَذْوَ مَنْكِبَيْكَ أَوْ نَحْوِهِمَا وَالِاسْتِغْفَارُ أَنْ تُشِيرَ بِأُصْبُعٍ وَاحِدَةٍ وَالِابْتِهَالُ أَنْ تَمُدَّ يَدَيْكَ جَمِيعًا
“প্রার্থনা করা এই যে, তুমি তোমার দুই হাত তোমার দুই কাঁধ বরাবর বা কাছাকাছি উঠাবে। আর ইস্তিগফার এই যে, তুমি তোমার একটি আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করবে। আর ইবতিহাল বা কাকুতি মিনতি করে প্রার্থনা করা এই যে, তুমি তোমার দুই হাতই সামনে এগিয়ে দেবে।” হাদীসটির সনদ গ্রহণযোগ্য।সুনানু আবী দাউদ ২/৭৯, নং ১৪৮৯, জামিউল উসূল ৪/১২৭-১২৮।
৮।দু‘আর সময় দৃষ্টি নত রাখা
আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ “যে সমস্ত মানুষেরা সালাতের মধ্যে দু‘আর সময় উপরের দিকে দৃষ্টি দেয় তারা যেন অবশ্যই এই কাজ বন্ধ করে, নাহলে তাদের দৃষ্টিশক্তি হরণ করা হবে।” সহীহ মুসলিম ১/৩২১, নং ৪২৯।
মাজমাউয যাওয়াইদ ১০/১৬৭-১৬৮ বর্ণনায় ‘সালাতের মধ্যে’ কথাটি নেই, সব দু‘আতেই দৃষ্টি ঊর্ধ্বে উঠাতে নিষেধ করা হয়েছে।
৯। দু‘আ কবুল হওয়ার সময়ের দিকে লক্ষ্য রাখা
- সালাতের সময়কে কেন্দ্র করেই আমলের পরিকল্পনা নিতে হবে।
যে সমস্ত সুন্নাত ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত সেগুলো পড়াই একজন মুছল্লীর জন্য যথেষ্ট।
عَنْ أُمِّ حَبِيْبَةَ قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ مَنْ صَلَّى فِىْ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ اثْنَتَيْ عَشْرَةَ رَكْعَةً بُنِيَ لَهُ بَيْتٌ فِي الْجَنَّةِ أَرْبَعًا قَبْلَ الظُّهْرِ وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَهَا وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْمَغْرِبِ وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْعِشَاءِ وَرَكْعَتَيْنِ قَبْلَ صَلَاة الْفَجْرِ.
উম্মু হাবীবাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি দিনে রাতে ১২ রাক‘আত ছালাত আদায় করবে, তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরি করা হবে। সেগুলো হল- যোহরের পূর্বে চার পরে দুই, মাগরিবের পরে দুই, এশার পর দুই এবং ফজরের পূর্বে দুই। মুসলিম হা/১৭২৯, ১/২৫১ পৃঃ, (ইফাবা হা/১৫৬৪), ‘মুসাফিরের ছালাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১৫; তিরমিযী হা/৪১৫; মিশকাত হা/১১৫৯, পৃঃ ১০৩; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১০৯১, ৩/৯০ পৃঃ।
অন্য বর্ণনায় ১০ রাক‘আতের কথা এসেছে। সেখানে যোহরের পূর্বে দুই রাক‘আত বলা হয়েছে। বুখারী হা/১১৮০; তিরমিযী হা/৪৩৩; মিশকাত হা/১১৬০, পৃঃ ১০৪; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১০৯২, ৩/৯১ পৃঃ।
ফযর সালাতঃ
ফযর সালাতের পূর্বে:
রাত্রে হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেলে পালনীয় যিকরঃ
لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ الْحَمْدُ لِلَّهِ وَسُبْحَانَ اللَّهِ وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ وَلا حَوْلَ وَلا قُوَّةَ إِلا بِاللَّهِ
উচ্চারণঃ লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু, ওয়া‘হদাহু লা- শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু, ওয়া লাহুল ‘হামদ, ওয়া হুআ ‘আলা- কুল্লি শাইয়্যিন ক্বাদীর, ‘আল-‘হামদু লিল্লাহ’, ওয়া ‘সুব‘হা-নাল্লা-হ’, ওয়া লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু, ওয়া ‘আল্লা-হু আকবার’, লা- ‘হাওলা ওয়া লা- ক্বুওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ।
অর্থঃ “আল্লাহ ছাড়া কোনো মা’বুদ নেই, তিনি একক, তাঁর কোনো শরীক নেই। রাজত্ব তাঁরই, এবং প্রশংসা তাঁরই। এবং তিনি সর্বোপরি ক্ষমতাবান। সকল প্রশংসা আল্লাহর। আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করছি। আল্লাহ ছাড়া কোনো মা’বুদ নেই। আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ। কোনো অবলম্বন নেই, কোনো ক্ষমতা নেই আল্লাহর (সাহায্য) ছাড়া।”
উবাদা ইবনু সামিত (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছে‘ন, “যদি কারো রাত্রে ঘুম ভেঙ্গে যায় অতঃপর সে উপরের যিকরের বাক্যগুলি পাঠ করে এবং এরপর সে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায় অথবা কোনো প্রকার দু‘আ করে বা কিছু চায় তাহলে তার দু‘আ কবুল করা হবে। আর যদি সে এরপর উঠে ওযু করে (তাহাজ্জুদের) সালাত আদায় করে তাহলে তার সালাত কবুল করা হবে।” সহীহ বুখারি ১/৩৮৭, নং ১১০৩।
স্বাভাবিকভাবে ভোরে ঘুম থেকে উঠার যিকর :
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَحْيَانَا بَعْدَ مَا أَمَاتَنَا وَإِلَيْهِ النُّشُورُ
উচ্চারণঃ আল-‘হামদু লিল্লা-হিল লাযী আ‘হইয়া-না- বা‘দা মা- আমা-তানা ওয়া ইলাইহিন নুশূর।
অর্থঃ “সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাদেরকে জীবিত করেছেন মৃত্যুর (ঘুমের) পরে, আর তাঁর কাছেই আমাদের ফিরে যেতে হবে।”হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান (রাঃ) ও আবু যার (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ঘুম থেকে উঠে উপরের যিকরটি বলতেন। সহীহ বুখারি ৫/২৩৬, ২৩২৭, ২৩৩০, ৬/২৬৯২, নং ৫৯৫৩, ৫৯৫৫, ৫৯৬৫, ৫৯৫৯, সহীহ মুসলিম ৪/২০৮৩, নং ২৭১১।
২ রাকাত সুন্নাত সালাতঃ
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ رَكْعَتَا الْفَجْرِ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيْهَا.
আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ফজরের দুই রাক‘আত ছালাত দুনিয়া ও দুনিয়ার মধ্যে যা কিছু তা হতে উত্তম। মুসলিম হা/১৭২১, ১/২৫১ পৃঃ; মিশকাত হা/১১৬৪, পৃঃ ১০৪; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১০৯৬, ৩/৯২ পৃঃ।
ফজরের পরে যিকরের দুটি পর্যায়।
প্রথম পর্যায় – সালাতের পরে বসে, বিশেষত চারজানু হয়ে বসে সূর্যোদয়ের কিছুক্ষণ পর পর্যন্ত যিকর করা, যখন মাকরূহ ওয়াক্ত শেষ হবে।
“রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন ফজরের সালাত আদায় করতেন তখন সূর্য ভালোভাবে উঠে যাওয়া পর্যন্ত তাঁর বসার স্থানে চারজানু হয়ে বসে
থাকতেন।” সহীহ মুসলিম ১/৪৬৪, নং ৬৭০।
রাসূলুল্লাহ (সা.) যে স্থানে ফজরের সালাত আদায় করতেন সেখানে সূর্যোদয় পর্যন্ত বসে থাকতেন। সূর্যোদয়ের পরে তিনি উঠতেন। তাঁর বসা অবস্থায় সাহাবায়ে কেরাম কথাবার্তা বলতেন, জাহেলী যুগের কথা আলোচনা করতেন, কবিতা পাঠ করতেন এবং হাসতেন। আর তিনি শুধু মুচকি হাসতেন।” সহীহ মুসলিম ১/৪৬৩, নং ৬৭০,
উমার (রাঃ) বলেন :
“রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন ফজরের সালাত আদায় করতেন তখন তাঁর সালাতের স্থানে বসে থাকতেন। মানুষেরা তাঁর চারিদিকে বসত। সূর্যোদয় পর্যন্ত তিনি এভাবে থাকতেন। এরপর তিনি একে একে তাঁর সকল স্ত্রীর ঘরে গিয়ে তাঁদেরকে সালাম দিতেন ও তাঁদের জন্য দু‘আ করতেন।”
আল্লামা হাইসামীর বর্ণনা অনুযায়ী হাদীসটির সনদ গ্রহণযোগ্য।ফাতহুল বারী ৯/৩৭৯।
দ্বিতীয় পর্যায়– মাকরূহ ওয়াক্ত শেষ হলে (সূর্যোদয়ের মোটামুটি আধাঘণ্টা পরে) অন্তত দুই রাক’আত ইশরাক সালাত আদায় করা।
“যে ব্যক্তি ফযরের সালাত জামা‘আতে আদায় করে, তারপর একই জায়গায় বসে সূর্য উদয় হওয়া পর্যন্ত আল্লাহর যিকির করে অতঃপর দুই রাকা‘আত সালাত আদায় করে সে ব্যক্তি একটি হজ ও একটি পূর্ণ উমরার সাওয়াব পাবে”। (তিরমিযী, হাদীস নং ৫৮৬) এ দুই রাকাত সালাতুদ দুহা কিনা?
উত্তর: হাদীসে উল্লিখিত দুই রাকাত সালাত সালাতুদ-দুহা, তবে এ দুই রাকাত সালাতের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। কারণ, এ দুই রাকাত সালাত ফজরের সালাত আদায়ের পর থেকে সূর্য ওপরে উঠার আগ পর্যন্ত স্বীয় সালাত আদায় করার স্থানে বসে থাকার সাথে সম্পৃক্ত। (আল-লাজনাহ আদ-দায়িমাহ: ১৪৮/৬)
ফযরের সালাতের পর যিকর সমূহঃ ২/১টি উল্লেখ হলো)
উম্মুল মুমিনিন হজরত জুওয়ায়রিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যূষে (ফজরের নামাজ শেষ করে) তাঁর কাছ থেকে বের হলেন। যখন তিনি ফজরের নামাজ আদায় করলেন তখন তিনি নামাজের জায়গায় ছিলেন।
এরপর তিনি দোহার পরে (সূর্য ওঠার বেশকিছু সময় পর) ফিরে এলেন। তখনও তিনি বসেছিলেন। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘আমি তোমাকে যে অবস্থায় রেখে গিয়েছিলাম তুমি সেই অবস্থায়ই আছো?
তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ’। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন-
‘আমি তোমার কাছ থেকে যাওয়ার পর ৪টি কালেমা ৩বার পড়েছি। আজকে তুমি এ পর্যন্ত যা বলেছ; তার সঙ্গে ওজন করলে এই কালেমা চারটির ওজনই বেশি হবে। কালেমাগুলো এই-
سُبْحَانَ اللّٰهِ وَبِحَمْدِهِ عَدَدَ خَلْقِهِ، وَرِضَا نَفْسِهِ، وَزِنَةَ عَرْشِهِ، وَمِدَادَ كَلِمَاتِهِ
উচ্চারণ : সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি আদাদা খালকিহি; ওয়া রিদাআ নাফসিহি; ওয়া যিনাতা আরশিহি; ওয়া মিদাদা কালিমাতিহি।’
অর্থ : ‘আল্লাহ পবিত্র আর প্রশংসাও তার; এ পবিত্রতা ও প্রশংসা তার সৃষ্ট বস্তুর সমান। তার নিজের সন্তুষ্টু সমান। (পবিত্রতা ও প্রশংসায় তিনি) তার আরশের ওজনের সমান। (পবিত্রতা ও প্রশংসায় তিনি) তার বাণীসমূহ লেখার কালির পরিমানের সমান।’ (মুসলিম)
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا وَعَمَلًا مُتَقَبَّلًا وَرِزْقًا طَيِّبًا
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা, ইন্নী আস্আলুকা ‘ইলমান না-ফি‘আন, ওয়া ‘আমালান মুতাক্বাব্বালান ওয়া রিযক্বান তবাইয়িবান।
অর্থ: “হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে চাচ্ছি কল্যাণকর জ্ঞান, কবুলকৃত কর্ম ও পবিত্র রিযিক।” (১ বার)
উম্মু সালামা (রাঃ) বলেনঃ (إن النبي صلى الله عليه وسلم يقول في دبر الفجر إذا صلي) নবীয়ে আকরাম (সা.) ফজরের সালাতের শেষে, যখন সালাত আদায় হয়ে যেত তখন এই বাক্যগুলি বলতেন।
অন্যতম যিকর:
لَا إلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ، لَهُ الـمُلْكُ وَلَهُ الـحَمْدُ، يُحْيِي وَيُمِيتُ (بِيَدِهِ الـخَيْرُ) وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيءٍ قَدِيرٌ
উচ্চারণ : লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু, ওয়া‘হদাহু লা- শারীকা লাহু, লাহুল মুলক, ওয়া লাহুল ‘হামদ, ইউ‘হয়ী ওয়া ইউমীতু (বিইয়াদিহিল খাইরু) ওয়া হুআ ‘আলা- কুলিল শাইয়িন কাদীর।
অর্থঃ “আল্লাহ ছাড়া কোনো মা’বুদ নেই, তিনি একক, তাঁর কোনো শরীক নেই। রাজত্ব তাঁরই এবং প্রশংসা তাঁরই। তিনিই জীবন
দান করেন এবং তিনিই মৃত্যু দান করেন। তাঁর হাতেই সকল কল্যাণ এবং তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।”
বিভিন্ন হাদীসে ফজর সালাতের পরেই সালাতের অবস্থায় পা ভেঙ্গে বসে থেকেই ১০০ বার অথবা ১০ বার এই যিকর করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে
https://sistersforuminislam.com/collections/prayers/morning-zikr/
যোহর সালাতের পূর্বে
দোহা/চাশত/আউয়্যাবিন
মূলত এই সালাতগুলো একই সালাতের বিভিন্ন নাম। একই ফায়দা লাভ হয়।
সালাতুদ-দুহার উত্তম সময়, উট (বা গো) বাছুরের গা যখন সূর্যের তাপে গরম হতে শুরু করে। আর তা হলো, সূর্যের আলো পরিপূর্ণ ছড়ানো ও উজ্জল হওয়ার পর থেকে নিয়ে সূর্য মাথা বরাবর হওয়ার আগ পর্যন্ত। (ফাতওয়া বিষয়ক আল-লাজনাহ আদ-দায়িমাহ: ১৪৮/৬)
শাইখ আব্দুল আযীয ইবন আবদুল্লাহ ইবন বায রহ. বলেন, সূর্য এক ধনুক পরিমাণ উপরে উঠা থেকে নিয়ে পশ্চিম আকাশে হেলে পড়ার আগ পর্যন্ত। উত্তম হলো, এ সালাত পূর্ণ গরম হওয়ার পরপরই পড়ে নেওয়া। আর একেই বলে আউয়াবীনের সালাত। (মাজমু‘উল ফাতওয়া: ৩৯৬/১১)
শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ ইবন উসাইমীন রহ. বলেন, সূর্য এক ধনুক পরিমাণ উঁচু হওয়ার পর থেকে অর্থাৎ সূর্য উদয়ের পনের বা ত্রিশ মিনিট পর থেকে সূর্য ডলে পড়ার পাঁচ-দশ মিনিট পূর্ব পর্যন্ত। (মাজমু‘উল ফাতওয়া: ৩০৬/১৪)
শাইখ আব্দুল আযীয ইবন আবদুল্লাহ ইবন বায রহ. বলেন, সর্বনিম্ন রাকাত সংখ্যা দুই রাকাত। আর যদি চার, ছয় বা আট রাকাত বা তার চেয়েও বেশিও কেউ স্বীয় সামর্থ্য অনুযায়ী আদায় করে, তাতে কোনো অসুবিধা নেই। এ সালাতের রাকাত সংখ্যার সুনির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা নির্ধারিত নয়। (মাজমু‘উল ফাতওয়া: ৩৯৯/১১)
মুআয রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে জিজ্ঞাসা করলেন,
“রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুহার সালাত কত রাকাত আদায় করতেন? তিনি বললেন, চার রাকাত। ইচ্ছে হলে বেশিও পড়তেন।” সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭১৯।
আর আবূ যর রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাদীস দ্বারা দুই রাকাত সাব্যস্ত। আবূ যর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“তোমাদের কেউ যখন ভোরে উঠে, তখন তার প্রতিটি জোড়ার ওপর একটি সদকা রয়েছে। প্রতি সুবহানাল্লাহ সদকা, প্রতি আলহামদুলিল্লাহ সদকা, প্রতি লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ সদকা, প্রতি আল্লাহু আকবার সদকা, আমর বিল মা‘রুফ (সৎকাজের আদেশ) সদকা, নাহী আনিল মুনকার (অসৎকাজের নিষেধ) সদকা। অবশ্য চাশতের সময় দু-রাকাত সালাত আদায় করা এ সবের পক্ষ থেকে যথেষ্ট।” সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭২০।
যাওয়াল সালাতঃ
যাওয়াল (زَوَال) অর্থ: বিলোপ, বিলুপ্তি, অস্তগামিতা, সূর্য হেলার সময়, উধাও, মধ্যাহ্ন, দ্বিপ্রহর ইত্যাদি। চাশতের সালাত আদায়ের পর সূর্য যখন ঠিক মাথার উপর থেকে পশ্চিম আকাশে হেলতে শুরু করে, তখন যোহরের সালাতের ওয়াক্ত শুরু হয়। আর যোহরের সূচনাতেই পড়তে হয় যাওয়ালের সালাত।
আবু আইয়ুব আনসারি (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবি করিম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতিনিয়ত (পশ্চিমাকাশে) সূর্য ঢলার সময় চার রাকাআত সালাত পড়তেন। একবার আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল! (আপনাকে দেখছি) সূর্য ঢলার সময় চার রাকাআত প্রতিনিয়তই পড়ছেন!’ তিনি বললেন, “সূর্য ঢলার সময় আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয় এবং যোহরের সালাত না পড়া পর্যন্ত বন্ধ করা হয় না। তাই, আমি পছন্দ করি যে, এই সময় আমার নেক আমল (আসমানে) উঠুক।” আমি বললাম, ‘এ সালাতের প্রত্যেক রাকাআতেই কি কিরাত আছে?’ তিনি বললেন, “হ্যাঁ।” আমি বললাম, ‘তার মাঝে কি পৃথককারী সালাম আছে?’ (অর্থাৎ, দুই রাকাআত পর সালাম ফেরানো আছে?) তিনি বললেন, “না।” (অর্থাৎ, এক সালামে চার রাকাআত। যেভাবে আমরা যোহরের চার রাকাত সুন্নাহ সালাত পড়ি, ঠিক সেভাবে) [তিরমিযি, আশ-শামাইল: ২৪৯; হাদিসটি সহিহ]
আব্দুল্লাহ ইবনে সায়েব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ সূর্য (পশ্চিম গগনে) ঢলে যাবার পর, যোহরের ফরযের পূর্বে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চার রাকআত সুন্নাহ সালাত পড়তেন। আর বলতেন, “এটা এমন সময়, যখন আসমানের দ্বারসমূহ খুলে দেওয়া হয়। তাই আমার পছন্দ যে, সে সময়েই আমার সৎকর্ম ঊর্ধ্বে উঠুক। [তিরমিযী ৪৭৮,হাদিস সম্ভার, হাদিস নং ৮৭৯]।
যোহর সালাতের পরে
যোহরের পূর্বে ৪ রাকআত এবং পরে ৪ রাকআত সালাত পড়ার ব্যাপারে হাদিসে বিশাল ফযিলত বর্ণিত হয়েছে।
নিম্নে এ ব্যাপারে দুটি হাদিস পেশ করা হল:
▪ ১) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সহধর্মীনী উম্মে হাবিবা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন:
مَنْ صَلَّى أَرْبَعًا قَبْلَ الظُّهْرِ وَأَرْبَعًا بَعْدَهَا لَمْ تَمَسَّهُ النَّارُ
“যে ব্যক্তি যোহরের আগে চার রাকাআত এবং পরে চার রাকাআত নামায পড়বে তাকে জাহান্নামের আগুন স্পর্ষ করবে না।” (সুনান নাসাঈ, হা/ ১৮১৭ ও তিরমিযী হা/৪২৮)
▪২) আবু দাউদ ও তিরমিযীতে বর্ণিত হয়েছে:
مَنْ حَافَظَ عَلَى أَرْبَعِ رَكَعَاتٍ قَبْلَ الظُّهْرِ وَأَرْبَعٍ بَعْدَهَا حَرَّمَهُ اللَّهُ عَلَى النَّارِ
“যে ব্যক্তি যোহরের আগে চার রাকাআত ও পরে চার রাকাআতের উপর যত্মশীল হবে আল্লাহ তার উপর জাহান্নামের আগুন হারাম করে দিবেন।” (ইমাম তিরমিযী বলে, এ হাদিসটি হাসান-সহীহ, শাইখ আলবানীও উক্ত হাদীসটিকে সহীহ বলে সাব্যস্ত করেছেন)
🔸 এই ৪ রাকআত পড়ার নিয়ম হল, যোহরের চার রাকআত ফরয সালাত শেষে দু রাকআত (সুন্নাত) পড়ে সালাম ফিরানোর পরে আরও দু রাকআত (নফলের নিয়্যতে) আদায় করা।
আসর সালাতের পূর্বে
আলী (রঃ) বলেন, “নবী (সঃ) আসরের পূর্বে ৪ রাকাআত নামায পড়তেন এবং প্রত্যেক দুই রাকাআতে আল্লাহ্র নিকটবর্তী ফিরিশতা, আম্বিয়া ও তাঁদের আনসারী মুমিন-মুসলিমদের প্রতি সালাম (তাশাহহুদ) দিয়ে পৃথক করতেন। আর সর্বশেষে সালাম ফিরতেন।” আহমাদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, সিঃ সহীহাহ ২৩৭ নং)
ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ সে ব্যক্তির উপর রহম করুন, যে ব্যক্তি আসরের পূর্বে চার রাকআত সালাত আদায় করে।”
[আবু দাউদ ১২৭১, তিরমিযি ৪৩০ম আল্লামা আলবানী হাদিসটিকে হাসান বলে আখ্যায়িত করেছেন, সহীহুত তরাগীব ওয়াত তরাহীব, হা/৫৮৮]
আসর সালাতের পরে
সাধারনত বিকালের যিকির আসর থেকে সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত সময়ের মাঝে করার কথা বলা হয়েছে তবে অনেক ইসলামিক স্কলার্স এটাও বলেছেন যে মাগরিবের পর প্রথম তৃতীয়াংশ সময়ের মাঝে করলেও সওয়াব পেয়ে যাবেন।
اللهم إِنّيْ أَمْسَيْتُ ُ أُشْهِدُكَ، وَأُشْهِدُ حَمَلَةَ عَرْشِكَ، وَمَلاَئِكَتِكَ، وَجَمِيعَ خَلْقِكَ، أَنَّكَ أَنْتَ اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ وَحْدَكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ، وَأَنَّ مُحَمَّداً عَبْدُكَ وَرَسُولُكَ» (৪ বার).
“হে আল্লাহ আমি বিকালে উপনীত হয়েছি”। আপনাকে আমি সাক্ষী রাখছি, আরও সাক্ষী রাখছি আপনার ‘আরশ বহনকারীদেরকে, আপনার ফেরেশতাগণকে ও আপনার সকল সৃষ্টিকে, (এর উপর) যে-নিশ্চয় আপনিই আল্লাহ, একমাত্র আপনি ছাড়া আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই, আপনার কোনো শরীক নেই; আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনার বান্দা ও রাসূল।”
যে ব্যক্তি সকালে অথবা বিকালে তা চারবার বলবে, আল্লাহ তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত করবেন।বুখারী, আল-আদাবুল মুফরাদ, নং ১২০১;
اللَّهُمَّ مَا أَمسَى بِي مِنْ نِعْمَةٍ أَوْ بِأَحَدٍ مِنْ خَلْقِكَ فَمِنْكَ وَحْدَكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ، فَلَكَ الْحَمْدُ وَلَكَ الشُّك
“হে আল্লাহ! যে নেয়ামত আমার সাথে বিকালে উপনীত হয়েছে, অথবা আপনার সৃষ্টির অন্য কারও সাথে; এসব নেয়ামত কেবলমাত্র আপনার নিকট থেকেই; আপনার কোনো শরীক নেই। সুতরাং সকল প্রশংসা আপনারই। আর সকল কৃতজ্ঞতা আপনারই প্রাপ্য।”
যে ব্যক্তি সকালবেলা উপরোক্ত দো‘আ পাঠ করলো সে যেনো সেই দিনের শুকরিয়া আদায় করলো। আর যে ব্যক্তি বিকালবেলা এ দো‘আ পাঠ করলো সে যেনো রাতের শুকরিয়া আদায় করলো’’। আবূ দাউদ ৪/৩১৮, নং ৫০৭৫;
https://sistersforuminislam.com/collections/prayers/evening-zikr/
মাগরিব সালাতের পূর্বে
মাগরিবের পূর্বে সুন্নাত পড়ার ছহীহ দলীল :
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مُغَفَّلٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلُّوْا قَبْلَ صَلَاةِ الْمَغْرِبِ رَكْعَتَيْنِ صَلُّوْا قَبْلَ صَلَاةِ الْمَغْرِبِ رَكْعَتَيْنِ قَالَ فِى الثَّالِثَةِ لِمَنْ شَاءَ كَرَاهِيَةَ أَنْ يَتَّخِذَهَا النَّاسُ سُنَّةً.
আব্দুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা মাগরিবের পূর্বে দুই রাক‘আত ছালাত আদায় কর, তোমরা মাগরিবের পূর্বে দুই রাক‘আত ছালাত আদায় কর। তৃতীয়বার বলেন, যার ইচ্ছা সে পড়বে। এজন্য যে লোকেরা যেন তাকে সুন্নাত হিসাবে গ্রহণ না করে। বুখারী হা/১১৮৩, ১/১৫৭ পৃঃ, (ইফাবা হা/১১১২ ও ১১১৩, ২/৩২৩ পৃঃ); মুসলিম হা/১৯৭৫, ১/২৭৮ পৃঃ, (ইফাবা হা/১৮০৮);
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ كُنَّا بِالْمَدِيْنَةِ فَإِذَا أَذَّنَ الْمُؤَذِّنُ لِصَلاَةِ الْمَغْرِبِ ابْتَدَرُوا السَّوَارِىَ فَيَرْكَعُوْنَ رَكْعَتَيْنِ رَكْعَتَيْنِ حَتَّى إِنَّ الرَّجُلَ الْغَرِيْبَ لَيَدْخُلُ الْمَسْجِدَ فَيَحْسِبُ أَنَّ الصَّلاَةَ قَدْ صُلِّيَتْ مِنْ كَثْرَةِ مَنْ يُصَلِّيْهِمَا.
আনাস (রাঃ) বলেন, আমরা যখন মদ্বীনায় থাকতাম তখন এমন হত যে, মুয়াযযিন মাগরিবের ছালাতের যখন আযান দিত, তখন লোকেরা কাতারে দাঁড়িয়ে যেত। অতঃপর তারা দুই রাক‘আত দুই রাক‘আত করে ছালাত আদায় করত। এমনকি কোন অপরিচিত লোক মসজিদে প্রবেশ করলে ধারণা করত, অবশ্যই মাগরিবের ছালাত হয়ে গেছে। এত মানুষ উক্ত দুই রাক‘আত ছালাত আদায় করত। মুসলিম হা/১৯৭৬, ১/২৭৮ পৃঃ, (ইফাবা হা/১৮০৯); মিশকাত হা/১১৮০, পৃঃ ১০৪;
মাগরিব সালাতের পরে
হুযাইফা (রাঃ) বলেন, “আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কাছে এসে তাঁর সাথে মাগরিবের সালাত আদায় করলাম। তিনি মাগরিবের পরে ইশা’র সালাত পর্যন্ত নফল সালাতে রত থাকলেন।” হাদীসটি সহীহ। ইবনু আবী শাইবা, মুসান্নাফ ২/১৫, নাসাঈ, সুনানুল কুবরা ১/৫১, ৫/৮০, সহীহুত তারগীব ১/৩৪০,
মাগরিব ছালাতের পর প্রচলিত বিভিন্ন সালাত নির্ধারন করার হাদীস যঈফ যা অনুসরনীয় নয়। যেমনঃ
মাগরিবের পর কেবল দুই রাক‘আত সুন্নাত ছালাত আদায় করতে হবে। এরপর দাঁড়িয়ে বা বসে আরো দুই রাক‘আত ছালাত আদায়ের ছহীহ কোন দলীল নেই। মাকহূল (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি মাগরিব ছালাতের পর কোন কথা বলার পূর্বেই দুই রাক‘আত অন্য বর্ণনায় এসেছে, চার রাক‘আত পড়বে তার ছালাতকে ‘ইল্লীইনে’ উঠানো হবে। মিশকাত হা/১১৮৪, পৃঃ ১০৫; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১১১৬, ৩/৯৮ পৃঃ।
তাহক্বীক্ব : যঈফ। এর সনদে আবু ছালেহ নামে একজন যঈফ রাবী আছে।. তাহক্বীক্ব মিশকাত হা/১১৮৪-এর টীকা দ্রঃ, ১/৩৭১ পৃঃ; যঈফ আত-তারগীব হা/৩৩৫।
ইশা সালাতঃ
ইশা সালাতের পূর্বে
আনাস (রাঃ) বলেন, “সাহাবায়ে কেরাম মাগরিব ও ইশা’র মধ্যবর্তী সময়ে সজাগ থেকে অপেক্ষা করতেন এবং নফল সালাত আদায় করতেন।” আবু দাউদ, আস-সুনান ২/৩৫; আলবানী, সহীহুত তারগীব ১/৩১৩। হাদীসটি সহীহ।
ইশা সালাতের পরে
এ সময়ে নির্ধারিত পরিমাণ কুরআন পাঠ, সালাত (দরুদ) পাঠ, দুআ ও মুনাজাত ওযীফা করে নিতে পারেন।
প্রিয় রাসূল (ﷺ) এশার নামাযকে এক তৃতীয়াংশ রাত্রি পর্যন্ত দেরী করে পড়তে পছন্দ করতেন এবং এশার পূর্বে ঘুমানো ও পরে কথাবার্তা বলাকে অপছন্দ করতেন। (বুখারী ৫৯৯, মুসলিম, প্রমুখ)।
সালাতুল বিতর ও আনুষঙ্গিক যিকর
বিতির সালাতের সময়ঃ ইশা’র সালাত আদায়ের পর থেকে ফজরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত। বিতির সালাত আদায়ের সর্বোত্তম সময় শেষ রাত্র। এটা বেশি সাওয়াবের এবং রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আচরিত সুন্নাত।
যারা শেষ রাতে উঠতে পারবেন না বলে ভয় পান তাদের উচিত যখনই ঘুমাতে যাওয়ার সময় হবে, ওযু করে সম্ভব হলে কয়েক রাক’আত নফল সালাত আদায় করে,বিতির আদায় করে ঘুমাতে যাওয়া।
সালাতুল বিতরের পরের যিকর
বিতির সালাত শেষ হলে তিন বার বলতেনঃ
سبحان الملك القدوس
উচ্চারণঃ সুব’হা-নাল মালিকিল কুদ্দূস।
অর্থঃ “ঘোষণা করছি পবিত্রতা মহান মহা পবিত্র সম্রাটের।” তিনি শেষবারে লম্বা (জোরে শব্দ) করে বলতেন। হাদীসটির সনদ সহীহ। সুনানু আবী দাউদ ২/৬৫, নং ১৪৩০, সুনানুন নাসাঈ ৩/২৩৫, নং ১৬৯৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ৬/২০৩,
হালকী নফল
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) শেষ রাতে তাহাজ্জুদ আদায়ের পরে বিতর আদায় করতেন। এরপর দুই রাক‘আত নফল সালাত আদায় করতেন। একটি হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বিতর-এর পরে দু রাক‘আত নফল সালাত আদায় করলে ‘তাহাজ্জুদ’ বা কিয়ামুল্লাইলের সাওয়াব পাওয়া যায়। হাদীস দ্বারা এতটুকুই প্রমাণিত। দারিমী, আস-সুনান ১/৪৫২।
বিতরের পরে ২ রাকআত সুন্নত বসে বসে পড়া। মা আয়েশা (রাঃ) বলেন, রসূল (সাঃ) (বিত্র নামাযের) সালাম ফিরার পর বসে বসে ২ রাকআত নামায পড়তেন। (মুসলিম, সহীহ) হযরত উম্মে সালামাহ্ বলেন। ‘তিনি বিতরের পর বসে বসে (হাল্কা করে) ২ রাকআত নামায পড়তেন।’ (আহমাদ, মুসনাদ, আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, মিশকাত ১২৮৪নং)
মহানবী (সাঃ) বলেন, “নিশ্চয় এই (সফর) রাত্রি জাগরণ ভারী ও কষ্টকর। সুতরাং তোমাদের কেউ যখন বিত্র পড়বে তখন সে যেন ২ রাকআত পড়ে নেয়। অতঃপর সে যদি রাত্রে উঠতে পারে তো উত্তম। নচেৎ, ঐ ২ রাকআত তার (রাতের নামায) হয়ে যাবে।” (দারেমী, সুনান, মিশকাত ১২৮৬, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ১৯৯৩নং দ্র:)
যদিও এই সালাতটি রাসূল সা নিয়মিত করতেন না এবং সব শেষ সালাত বিতর সালাত হওয়ার কথা রাসূল সা এর হাদীস থেকে জানা যায়, তাই স্কলার্স এই সালাতের ব্যপারে বলেছেন এটা পড়া যায় তবে এটাকে উম্মার জন্য নির্ধারন করে দেন নি।
এছাড়া সারাদিনই বিভিন্ন সময়ে যে যিকর গুলো করা যেতে পারে—
https://sistersforuminislam.com/collections/prayers/daily-tasbih/
ঘুমের পূর্বেঃ
জাবির (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ
যখন কোনো মানুষ বিছানায় শয়ন করে তখন একজন ফিরিশতা ও একজন শয়তান তার নিকট আসে। ফিরিশতা বলে, হে আল্লাহ, কল্যাণ ও মঙ্গল দিয়ে এর দিনের সমাপ্তি করুন। আর শয়তান বলে, অমঙ্গলের সাথে এর সমাপ্তি হোক। যদি ঐ ব্যক্তি আল্লাহর যিকর করে নিদ্রা যায় তাহলে সারারাত ঐ ফিরিশাত তাঁকে দেখাশুনা ও হেফাযত করেন।” হাদীসটি সহীহ। সহীহ ইবনু হিব্বান ২/৩৪৩,
আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “কোনো মুসলিম যদি দু’টি কাজ নিয়মিত করতে পারে তাহলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। কাজ দু’টি খুবই সহজ কিন্তু করার মানুষ খুব কম। প্রথমত, প্রত্যেক সালাতের পরে ১০ বার ‘সুবহানাল্লাহ’, ১০ বার ‘আল-হামদু লিল্লাহ’ ও ১০ বার ‘আল্লাহু আকবার’ বলবে। এতে ১৫০ বার জিহ্বার যিকর হবে এবং আল্লাহর কাছে আমলনামায় বা মীযানে ১৫০০ সাওয়াব হবে। দ্বিতীয়ত, বিছানায় শয়ন করার পরে ৩৪ বার ‘আল্লাহু আকবার’, ৩৩ বার ‘আল-হামদু লিল্লাহ’ ও ৩৩ বার ‘সুবহানাল্লাহ’ বলবে। এতে মুখে ১০০ বার ও মীযানে ১০০০ বার হবে।” রাসূলুল্লাহ (সা.) আঙ্গুলে গুণে গুণে তা দেখান। সাহাবীগণ প্রশ্ন করেন, “এই দু’টি কর্ম সহজ হওয়া সত্ত্বেও পালনকারী কম কেন?” তিনি উত্তরে বলেনঃ “কেউ শুয়ে পড়লে শয়তান এসে এগুলি বলার আগেই ঘুম পাড়িয়ে দেয়। সালাতের পরে এগুলি বলার আগেই তাকে তার বিভিন্ন কথা মনে করিয়ে দেয়।” হাদীসটি সহীহ। সুনানু আবী দাউদ ৪/৩১৬, নং ৫০৬৫, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫/৩৫৪, সহীহুত তারগীব ১/৩২১-৩২২।
আয়াতুল কুরসী
আবু হুরাইরা (রাঃ) বর্ণিত হাদীস থেকে আমরা জানতে পারি যে, কেউ রাতে বিছানায় শয়ন করার পরে আয়াতুল কুরসী পাঠ করলে সারারাত আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁকে হেফাযত করা হবে এবং কোনো শয়তান তাঁর নিকট আসতে পারবে না। সহীহ বুখারী ২/৮১২, ৩/১১৯৪, ৪/১৯১৪, নং ২১৮৭, ৩১০১, ৪৭২৩।
সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত
আবু মাস’ঊদ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যদি কেউ রাতে সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পাঠ করে তাহলে তা তাঁর জন্য যথেষ্ট হবে। সহীহ বুখারী ৪/১৪৭২, ১৯১৪, ১৯২৩, ১৯২৬, নং ৩৭৮৬, ৪৭২২, ৪৭৫৩, ৪৭৬৪, সহীহ মুসলিম ১/৫৫৪-৫৫৫, নং ৮০৭।
সূরা কাফিরূন
নাওফাল আল-আশজায়ী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাকে বলেছেন, তুমি সূরা ‘কাফিরূন’ পড়ে ঘুমাবে, এ শির্ক থেকে তোমার বিমুক্তি। হাদীসটি হাসান। সুনানুত তিরমিযী ৫/৪৭৪, নং ৩৪০৩, সুনানু আবী দাউদ ৪/৩১৩, নং ৫০৫৫, সহীহ ইবনু হিব্বান ৩/৭০,
সূরা ইখলাস
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, নবীজী (সা.) তাঁর সাহাবীগণকে বললেন: তোমরা কি পারবে না রাতে কুরআনের একতৃতীয়াংশ তিলাওয়াত করতে? বিষয়টি তাঁদের কাছে কষ্টকর মনে হলো। তাঁরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমাদের মধ্যে কে-ই বা তা পারবে? তখন তিনি বলেনঃ ‘কুল হুআল্লাহু আহাদ্’ সূরাটি কুরআনের এক তৃতীয়াংশ।’ আবু দারদা (রাঃ) থেকে একই অর্থে আরেকটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে। সহীহ বুখারী ৪/১৯১৬, ৪৭২৭, সহীহ মুসলিম ১/৫৫৬, নং ৮১১।
সূরা ইখলাস, ফালাক ও নাস একত্রে (তিন বার)
দুই হাত একত্র করে এই সূরাগুলি পাঠ করে হাতে ফুঁ দিয়ে হাত দু’টি যথাসম্ভব শরীরের সর্বত্র বুলানো। – এভাবে ৩ বার।
আয়েশা (রাঃ) বলেন, “রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রতি রাতে বিছানায় গমনের পরে তাঁর মুবারক দু’টি হাত একত্রিত করে তাতে ফুঁ দিতেন এবং তাতে উপরের তিনটি সূরা পাঠ করতেন। এরপর শরীরের যতটুকু সম্ভব স্থান দুই হাত দিয়ে মোছেহ করতেন। মাথা, মুখ ও শরীরের সামনের দিক থেকে শুরু করতেন। – এভাবে ৩ বার করতেন।” সহীহ বুখারী ৪/১৯১৬, নং ৪৭২৯, ৫/২১৬৫, ২১৬৯, ২১৭০।
সূরা বনী ইসরাঈল (কুরআন কারীমের ১৭ নং সূরা) সূরা সাজদা, (কুরআন কারীমের ৩২ নং সূরা) সূরা যুমার (কুরআন কারীমের ৩৯ নং সূরা) সূরা মুলক (কুরআন কারীমের ৬৭ নং সূরা)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আল্লাহ তা’আলার কিতাবে একটি সূরা আছে, যার আয়াত তো মাত্র তিরিশটি কিন্তু কেয়ামতের দিন এই সূরা এক এক ব্যক্তির পক্ষে সুপারিশ করবে এবং তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে জান্নাতে দাখিল করবে; সেটা সূরা মুলক। [আবু দাউদ; ১৪:০০, তিরমিযী: ২৮৯১, নাসায়ী: আল কুবরা, ৭১০, ইবনে মাজহঃ ৩৭৮৬, মুসনাদে আহমাদ: ২/২৯৯, ৩২১] অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘আলিফ লাম তানযীল’ (সূরা আস-সাজদাহ) এবং ‘তাবারাকাল্লাযী বি ইয়াদিহিল মুলক’ (সূরা আল-মুলক) সূরাদ্বয় না পড়ে ঘুমাতেন না”। [তিরমিযী: ২৮৯৭, দারেমী: ৩৪১১, মুস্তাদরাকে হাকিমঃ ২/৪৪৬, (৩৫৪৫)]
জাবির (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) সূরা সাজদাহ ও সূরা মুলক তিলাওয়াত না করে ঘুমাতেন না। আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) সূরা বানী ইসরাঈল ও সূরা যুমার তিলাওয়াত না করে ঘুমাতেন না। অন্য হাদীসে আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রত্যেক রাতে সূরা সাজদাহ ও সূরা যুমার পাঠ করতেন। হাদীসগুলি সহীহ। সুনানুত তিরমিযী ৫/১৮১, নং ২৯২০, নাসাঈ,
বিশেষ মুনাজাত
اللَّهُمَّ رَبَّ السَّمَوَاتِ وَرَبَّ الأَرْضِ وَرَبَّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ رَبَّنَا وَرَبَّ كُلِّ شَيْءٍ فَالِقَ الْحَبِّ وَالنَّوَى مُنْزِلَ التَّوْرَاةِ وَالإِنْجِيلِ وَالْفُرْقَانُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ كُلِّ شَيْءٍ أَنْتَ آخِذٌ بِنَاصِيَتِهِ اللَّهُمَّ أَنْتَ الأَوَّلُ فَلَيْسَ قَبْلَكَ شَيْءٌ وَأَنْتَ الآخِرُ فَلَيْسَ بَعْدَكَ شَيْءٌ وَأَنْتَ الظَّاهِرُ فَلَيْسَ فَوْقَكَ شَيْءٌ وَأَنْتَ الْبَاطِنُ فَلَيْسَ دُونَكَ شَيْءٌ اقْضِ عَنَّا الدَّيْنَ وَأَغْنِنَا مِنَ الْفَقْرِ
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা, রাব্বাস সামা-ওয়া-তি ওয়ারাব্বাল আরদ্বি ওয়ারাব্বাল ‘আরশিল ‘আযীম। রাব্বানা- ওয়ারাব্বা কুল্লি শাইয়িন, ফা-লিকিল হাবিব ওয়ান নাওয়া-। ওয়া মুনযিলাত তাওরা-তি ওয়াল ইনজীলি ওয়াল ফুরকা-ন। আ‘ঊযু বিকা মিন শার্রি কুল্লি শাইয়িন আনতা আ-খিযুম বিনা-সিয়্যাতিহী। আল্লা-হুম্মা, আনতাল আউআলু, ফালাইসা ক্বাবলাকা শাইউন। ওয়া আনতাল আ- খিরু ফালাইসা বা’দাকা শাইউন। ওয়া আনতায যা-হিরু ফালাইসা ফাউক্বাকা শাইউন। ওয়া আনতাল বা-তিনু ফালাইসা দূনাকা শাইউন। ইকদ্বি আন্নাদ দাইনা ওয়া আগনিনা- মিনাল ফাক্বর।
অর্থ: “হে আল্লাহ, আসমানসমূহ ও জমিনের প্রভু এবং মহান আরশের প্রভু, আমাদের প্রভু এবং সবকিছুর প্রভু, যিনি অঙ্কুরিত করেন শস্য বীজ ও আঁটি, যিনি নাযিল করেছেন তাওরাত, ইঞ্জিল ও ফুরকান; আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি আপনার কাছে আপনার নিয়ন্ত্রণে যা কিছু রয়েছে সবকিছুর অকল্যাণ ও অমঙ্গল থেকে। হে আল্লাহ, আপনিই প্রথম, আপনার পূর্বে আর কিছুই নেই। এবং আপনিই শেষ, আপনার পরে আর কিছুই নেই। এবং আপনিই প্রকাশ্য, আপনার উপরে আর কিছুই নেই। এবং আপনিই গোপন, আপনার নিম্নে আর কিছুই নেই। আপনি আমাদের ঋণমুক্ত করুন এবং আমাদেরকে দারিদ্র থেকে মুক্তি দিয়ে সচ্ছলতা প্রদান করুন।
আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদেরকে বিছানায় শয়ন করার পরে (ডান কাতে শুয়ে) এই মুনাজাতটি পাঠ করতে শিক্ষা দিতেন। অন্য বর্ণনায় তিনি বলেন, ফাতিমা (রাঃ) তাঁর কাছে খাদিমা চাইলে তিনি তাঁকে দু‘আটি শিখিয়ে দেন। সহীহ মুসলিম ৪/২০৮৪, নং ২৭১৩।
باسمك ربي وضعت جنبي فاغفرلي ذنبي
উচ্চারণঃ বিসমিকা রাব্বী, ওয়াদ্বা‘অ্তু জানবী, ফাগফির লী যাম্বী।
অর্থঃ “হে আমার প্রভু, আপনারই নামে শয়ন করলাম। আপনি আমার গোনাহ ক্ষমা করে দিন।”
আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) বলেন, নবীজী (সা.) যখন বিছানায় ঘুমের জন্য শয়ন করতেন, তখন উপরোল্লেখিত দু‘আটি বলতেন। হাদীসটি হাসান।মুসনাদ আহমাদ ২/১৭৩, মাজমাউয যাওয়াইদ ১০/১২৩।
বিসমিকা, আল্লা-হুম্মা, আমূতু ওয়া আ‘হইয়া-।
অর্থ: “আপনারই নামে, হে আল্লাহ, আমি মৃত্যু বরণ করি এবং জীবিত হই।”
হুযাইফা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ঘুমানোর এরাদা করলে এই যিকরটি বলতেন। সহীহ বুখারী ৫/২৩৩০, নং ৫৯৬৫।
ঘুমের আগে সর্বশেষ মুনাজাত :
اللَّهُمَّ أَسْلَمْتُ نَفْسِي إِلَيْكَ وَفَوَّضْتُ أَمْرِي إِلَيْكَ وَأَلْجَأْتُ ظَهْرِي إِلَيْكَ رَغْبَةً وَرَهْبَةً إِلَيْكَ لا مَلْجَأَ وَلا مَنْجَا مِنْكَ إِلا إِلَيْكَ آمَنْتُ بِكِتَابِكَ الَّذِي أَنْزَلْتَ وَبِنَبِيِّكَ الَّذِي أَرْسَلْتَ
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা, আসলামতু নাফসী ইলাইকা, ওয়াফাওআদ্বতু আমরী ইলাইকা,ওয়া আলজা’তু যাহরী ইলাইকা, রাগবাতান ওয়ারাহবাতান ইলাইকা, লা- মালজাআ ওয়ালা- মানজা- মিনকা ইল্লা- ইলাইকা। আ-মানতু বিকিতা-বিকাল্লাযী আনযালতা, ওয়াবি নাবিয়্যিকাল্লাযী আরসালতা।
অর্থ: “হে আল্লাহ, আমি সমর্পণ করলাম আমাকে আপনার নিকট, দায়িত্বার্পণ করলাম আপনাকে আমার যাবতীয় কর্মের, আমার পৃষ্ঠকে আপনার আশ্রয়ে সমর্পিত করলাম, আপনার প্রতি আশা ও ভয়ের সাথে। আপনার নিকট থেকে আপনি ছাড়া কোনো আশ্রয়স্থল নেই ও কোনো মুক্তির স্থান নেই। আমি ঈমান এনেছি আপনি যে কিতাব নাযিল করেছেন তার উপর এবং আপনি যে নবী (সা.) প্রেরণ করেছেন তার উপর।
বারা ইবনুল আযিব (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাকে বলেন, “যখন তুমি বিছানায় যাবে তখন সালাতের ওযুর মতো ওযু করবে। এরপর ডান কাতে শুয়ে বলবেঃ (উপরের বাক্যগুলি)। এই বাক্যগুলি তোমার শেষ কথা হবে (এর পরে আর কোনো কথাবার্তা বলবে না)। যে ব্যক্তি এই দু‘আ পাঠের পরে সেই রাত্রিতে মৃত্যুবরণ করবে সেই ব্যক্তি ফিতরাতের উপরে (নিষ্পাপভাবে) মৃত্যু বরণ করবে। আর যদি বেঁচে থাকে তাহলে কল্যাণময় দিবস শুরু করবে।” সহীহ বুখারী ১/৯৭, নং ২৪৪, ৫/২৩২৬, নং ৫৯৫২, ৫/২৩২৭, নং ৫৯৫৬, সহীহ মুসলিম ৪/২০৮২, নং ২৭১০।
তাহাজ্জুদের নিয়্যাতসহ ঘুমাতে যাওয়া
একটি হাদীসে আবু দারদা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ
مَنْ أَتَى فِرَاشَهُ، وَهُوَ يَنْوِي أَنْ يَقُومَ فَيُصَلِّيَ مِنَ اللَّيْلِ، فَغَلَبَتْهُ عَيْنُهُ حَتَّى يُصْبِحَ، كُتِبَ لَهُ مَا نَوَى، وَكَانَ نَوْمُهُ صَدَقَةً عَلَيْهِ مِنْ رَبِّهِ
“যদি কেউ রাতে উঠে তাহাজ্জুদ আদায় করবে বলে নিয়্যাত করে ঘুমায়, কিন্তু তার ঘুমের আধিক্যের কারণে ভোরের আগে (ফজরের আগে) উঠতে না পারে, তাহলে তাঁর নিয়্যাত অনুসারে সাওয়াব তাঁর জন্য লিখা হবে, আর তাঁর ঘুম আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর জন্য দান হিসাবে গণ্য হবে।” হাদীসটি সহীহ। সুনানুন নাসাঈ ৩/২৫৮, নং ১৭৮৭, সুনানু ইবনি মাজাহ ১/৪২৬, নং ১৩৪৪, সহীহ ইবনু খুযাইমাহ ২/১৯৫,
ওযু অবস্থায় ঘুমানোর ফযীলত :
ঘুমের জন্য ওযু অবস্থায় শয়ন বিশেষ দুটি পুরস্কারের সুসংবাদ প্রদান করেছেন। একটি হাদীসে আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন :
طَهِّرُوا هَذِهِ الأَجْسَادَ طَهَّرَكُمُ اللَّهُ فَإِنَّهُ لَيْسَ مِنْ عَبْدٍ يَبِيتُ طَاهِرًا إِلا بَاتَ مَلَكٌ فِي شِعَارِهِ لا يَنْقَلِبُ سَاعَةً مِنَ اللَّيْلِ إِلا قَالَ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِعَبْدِكَ فَإِنَّهُ بَاتَ طَاهِرًا
“তোমরা তোমাদের দেহগুলিকে পবিত্র রাখবে, আল্লাহ তোমাদের পবিত্র করুন। যদি কোনো বান্দা ওযু অবস্থায় ঘুমান, তাহলে তার পোশাকের মধ্যে একজন ফিরিশতা শুয়ে থাকেন। রাত্রে যখনই এই ব্যক্তি নড়াচড়া করে তখনই এই ফিরিশতা বলেনঃ হে আল্লাহ আপনি এই ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দিন, কারণ সে ওযু অবস্থায় ঘুমিয়েছে।” হাদীসটি হাসান। সহীহ ইবনু হিব্বান ৩/৩২৮,
অন্য হাদীসে মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ
ما من امرئ مسلم يبيت طاهرا (على ذكر الله) فيتعار من الليل فيسأل الله من خير الدنيا والاخرة الا أعطاه اياه
“যে কোনো মুসলিম যদি ওযু অবস্থায় (আল্লাহর যিকরের উপর) ঘুমায় ; এরপর রাত্রে কোনো সময় হঠাৎ তাঁর ঘুম ভেঙ্গে যায় এবং সে (ঐ অবস্থায় শুয়ে শুয়ে) আল্লাহর কাছে তাঁর জাগতিক বা পারলৌকিক কোনো কল্যাণ কামনা করে, তাহলে আল্লাহ তাঁকে তাঁর প্রার্থিত বস্তু দিবেনই।” হাদিসটি সহীহ। নাসাঈ, সুনানুল কুবরা ৬/২০২, সুনানু আবী দাউদ ৪/৩১০, নং ৫০৪২,
রাতে ঘুম থেকে জেগে রাসূল সা কি পড়তেন——–
শারীক আল-হাওযানী (রহঃ) বলেন, একদা আমি আয়িশাহ (রাঃ)-এর নিকট গিয়ে বলি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে জেগে সর্বপ্রথম কোনো দু’আ পড়ার মাধ্যমে শুরু করতেন। তিনি বললেন, তুমি আমাকে এমন একটি বিষয়ে প্রশ্ন করেছো, তোমার পূর্বে কেউই এ ব্যাপারে আমার নিকট জানতে চায়নি। তিনি যখন রাতে জাগতেন তখন দশবার আল্লাহু আকবার ও দশবার আলহামদুলিল্লাহ বলতেন। আর সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি দশবার ও সুবহানাল মালিকুল কুদ্দুস দশবার এবং আসতাগফিরুল্লাহ ও লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ দশবার বলতেন। অতঃপর তিনি বলতেনঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট দুনিয়া ও আখিরাতের যাবতীয় অভাব, সংকীর্ণতা ও বিপদগ্রস্ততা থেকে আশ্রয় চাইছি। এরপর তিনি সালাত শুরু করতেন। সূনানে আবু দাউদ ৫০৮৫(তাহকীককৃত) হাসান সহীহ। নাসায়ী, ইবনু মাজাহ।
ইবনে আব্বাস রা. নবীজীর রাতের আমল প্রত্যক্ষ করার জন্য তার খালা উম্মুল মুমিনীন মায়মুনা রা.-এর ঘরে ছিলেন। তিনি বলেন, দেখলাম-
… اسْتَيْقَظَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ، فَجَلَسَ يَمْسَحُ النّوْمَ عَنْ وَجْهِهِ بِيَدِهِ، ثُمّ قَرَأَ العَشْرَ الآيَاتِ الخَوَاتِمَ مِنْ سُورَةِ آلِ عِمْرَانَ.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুম থেকে উঠে দুই হাত দিয়ে চোখ মুছে ঘুম দূর করলেন এবং সূরা আলে ইমরানের শেষ দশ আয়াত তিলাওয়াত করলেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৭৬৩
মিসওয়াক করাঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে যখন তাহাজ্জুদের জন্য উঠতেন, তখন ভালো করে মিসওয়াক করতেন। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১১৩৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৫১৬
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
إِذَا قَامَ أَحَدُكُمْ مِنَ اللّيْلِ، فَلْيَفْتَتِحْ صَلاَتَهُ بِرَكْعَتَيْنِ خَفِيفَتَيْنِ.
তোমাদের কেউ যখন রাতে উঠবে, সে যেন প্রথমে হালকা দুই রাকাতের মাধ্যমে শুরু করে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৭৬৮; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৩২৩
রাতঃ রাতের সময়টুকুকে হাদীসের আলোকে চারটি পর্যায়ে ভাগ করতে পারি :
প্রথম তৃতীয়াংশঃ (মাগরিব থেকে প্রথম ৩-৪ঘন্টা)
“নিশ্চয় রাত্রের মধ্যে এমন একটি সময় আছে যে সময় কোনো মুসলিম আল্লাহর কাছে পার্থিব, জাগতিক বা পারলৌকিক যে কোনো কল্যাণ প্রার্থনা করলে আল্লাহ তাকে তা অবশ্যই দিবেন। এভাবে প্রতি রাত্রেই।সহীহ মুসলিম ১/৫২১, নং ৭৫৭।
দ্বিতীয় তৃতীয়াংশঃ (১ম তৃতীয়াংশ পর থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত) শীতে রাত ৯.৩০/১০টা-১২ টা পর্যন্ত এবং গরমে রাত ১০ – প্রায় ১১.৩০ টা পর্যন্ত ; এবং এরপর বাকি রাত।
“আমার উম্মাতের কষ্ট না হলে ইশা’র সালাত রাতের প্রথম তৃতীয়াংশ পর্যন্ত দেরি করতাম। কারণ রাতের এক তৃতীয়াংশ অতিক্রান্ত হলে মহান প্রভু আল্লাহ সর্বনিম্ন আসমানে নেমে আসেন। প্রভাতের শুরু পর্যন্ত তিনি এভাবে থাকেন। তিনি বলেন: কেউ কি চাইবে যাকে দেওয়া হবে? কেউ কি ডাকবে যার ডাকে সাড়া দেওয়া হবে? কোনো পাপী কি আছে যে ক্ষমা চাইবে তাহলে তাকে ক্ষমা করা হবে? অসুস্থ কেউ আছে কি? যে রোগমুক্তি চাইবে ফলে তাকে সুস্থতা প্রদান করা হবে।মুসনাদ আহমাদ ১/১২০, ২/৫০৯, মুসনাদু আবী ইয়ালা ১১/৪৪৭-৪৪৮, মাজমাউয যাওয়াইদ ১০/১৫৪।
তৃতীয় ভাগঃ মধ্য রাত থেকে (রাত ১১.৩০ টা বা ১২ টা থেকে) রাতের শেষ তৃতীয়াংশের শুরু পর্যন্ত
মধ্য রাতে আসমানের সকল দরজা খুলে দেওয়া হয়। তখন একজন ঘোষক ঘোষণা করতে থাকেনঃ ‘কোনো প্রার্থনাকারী আছ কি? যদি কেউ প্রার্থনা করে তাহলে তা কবুল করা হবে। কোনো যাচ্ঞাকারী আছ কি? যদি কেউ কিছু চায় তাহলে তাকে তা দেওয়া হবে। কোনো বিপদগ্রস্ত আছ কি? বিপদ মুক্তি চাইলে তার বিপদ কাটানো হবে।’ এ সময়ে যে কোনো মুসলিম যে কোনো বিষয়ে প্রার্থনা করুক, আল্লাহ তার প্রার্থনা কবুল করবেন। শুধুমাত্র দেহ ব্যবসায়ী ব্যভিচারিণী ও টোল আদায়কারী (নাগরিকদের কষ্ট দিয়ে যে টোল খাজনা ইত্যাদি আদায় করে) বাদে।” হাদীসটির সনদ সহীহ। সহীহ মুসলিম ১/৫২২, নং ৭৫৮।
চতূর্থ ভাগঃ রাতের শেষ তৃতীয়াংশ(রাত ১ টা বা ২ টা থেকে বাকি রাত)
আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ
يَنْزِلُ رَبُّنَا تَبَارَكَ وَتَعَالَى كُلَّ لَيْلَةٍ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا حِينَ يَبْقَى ثُلُثُ اللَّيْلِ الْآخَرُ فَيَقُولُ مَنْ يَدْعُونِي فَأَسْتَجِيبُ لَهُ مَنْ يَسْأَلُنِي فَأُعْطِيهِ مَنْ يَسْتَغْفِرُنِي فَأَغْفِرُ لَهُ
“আমাদের মহান মহিমান্বিত প্রভু প্রতি রাতে, যখন রাতের শেষ তৃতীয়াংশ বাকি থাকে তখন নিকটবর্তী আসমানে নেমে আসেন এবং বলেনঃ কেউ যদি আমাকে ডাকে, তাহলে আমি তার ডাকে সাড়া দিব। কেউ যদি আমার কাছে কিছু চায়, আমি তাকে তা প্রদান করব। কেউ যদি আমার কাছে ক্ষমা চায়, আমি তাকে ক্ষমা করব। সহীহ বুখারী ১/৩৮৪, নং ১০৯৪, ৫/২৩৩০, নং ৫৯৬২, ৬/২৭২৩, নং ৭০৫৬, সহীহ মুসলিম ১/৫২১, নং ৭৫৮।
আবু উমামা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহকে (সা.) প্রশ্ন করা হলোঃ “কোন দু‘আ সবচেয়ে বেশি শোনা হয় বা কবুল করা হয়? তিনি উত্তরে বলেনঃ “রাত্রের শেষ অংশ ও ফরয সালাতের পরে (দু‘আ বেশি কবুল হয়)।” ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। ফাতহুল বারী ১১/১৩৪, সুনানুত তিরমিযী ৫/৫২৬, নং ৩৪৯৯,
বান্দা তার প্রভুর সবচেয়ে নৈকট্য লাভ করে যখন সে সাজদায় থাকে এবং যখন সে রাতের শেষ তৃতীয়াংশে [বা শেষাংশে] সালাত আদায়ের জন্য দাঁড়ায়। অতএব, রাতের ঐ সময়ে যারা আল্লাহর যিকর করেন, তুমি যদি তাদের অন্তর্ভুক্ত হতে পার, তাহলে তা হবে। হাদীসটি সহীহ।সুনানুত তিরমিযী ৫/৫৬৯, নং ৩৫৭৯ (৩৫৭৪), মুসতাদরাক হাকিম ১/৪৫৩, সহীহ ইবনু খুযাইমা ২/১৮২,
কিয়ামুল লাইল বা রাতের সালাতঃ
কিয়ামুল্লাইল’ অর্থ রাতের কিয়াম বা রাত্রিকালীন দাঁড়ানো। সালাতুল ইশার পর থেকে ফজরের ওয়াক্তের উন্মেষ পর্যন্ত সময়ে যে কোনো নফল সালাত আদায় করলে তা ‘কিয়ামুল্লাইল’ বা ‘সালাতুল্লাইল’ অর্থাৎ রাতের দাঁড়ানো বা রাতের সালাত বলে গণ্য।
তাহাজ্জুদঃ ‘তাহাজ্জুদ’ অর্থ ঘুম থেকে উঠা। রাতে ঘুম থেকে উঠে আদায় করা সালাতকে তাহাজ্জুদ বলা হয়। কেউ যদি ইশার সালাত আদায় করে রাত ৯টা বা ১০টায় ঘুময়ে পড়েন এবং ১১/১২টায় উঠে নফল সালাত আদায় করেন তবে তা ‘কিয়ামুল্লাইল’ ও ‘তাহাজ্জুদ’ বলে গণ্য হবে।
পক্ষান্তরে কেউ যদি ইশার পরে না ঘুমিয়ে রাত ১১/১২ টার দিকে কিছু নফল সালাত আদায় করেন তবে তা ‘কিয়ামুল্লাইল’ বলে গণ্য হলেও ‘তাহাজ্জুদ’ বলে গণ্য নয়।
কুরআন তিলাওয়াত, তাহাজ্জুদ ও দরুদ পাঠ, দু‘আ দিয়ে পার হতো রাতের শেষ রাতটুকু।
আবূ হুরাইরা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
أفضل الصلاة بعد الصلاة المكتوبة (صلاة الليل) الصلاة في جوف الليل
“ফরয সালাতের পরে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সবচেয়ে ফযীলতপূর্ণ সালাত রাতের সালাত বা রাতের গভীরে আদায়কৃত সালাত। মুসলিম, আস-সহীহ ২/৮২১।
আব্দুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন,
أَيُّهَا النَّاسُ أَفْشوا السَّلامَ، وَأَطْعِمُوا الطَّعَامَ، وَصَلُّوا باللَّيْل وَالنَّاسُ نِيامٌ، تَدخُلُوا الجَنَّةَ بِسَلامٍ
“হে মানুষেরা তোমরা সালামের প্রচলন কর, খাদ্য প্রদান কর, আত্মীয়তা রক্ষা কর এবং মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন সালাত আদায় কর, তাহলে তোমরা শান্তিতে নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।” হাদীসটি সহীহ। তিরমিযী, আস-সুনান ৪/৬৫২।
আবূ উমামা বাহিলী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন,
عليكم بقيام الليل؛ فإنه دأب الصالحين قبلكم، وقربة إلى ربكم ومكفرة للسيئات، ومنهاة عن الإثم ومطردة للداء عن الجسدز
“তোমরা অবশ্যই কিয়ামুল্লাইল পালন করবে। কারণ তা তোমাদের পূর্ববর্তী নেককার মানুষদের অভ্যাস, তোমাদের জন্য তোমাদের প্রতিপালকের নৈকট্য, পাপের ক্ষমা, পাপ থেকে আত্মরক্ষার পথ এবং দেহ থেকে রোগব্যধির বিতাড়ন।” হাদীসটি সহীহ। তিরমিযী, আস-সুনান ৫/৫৫২; আলবানী, সহীহুত তারগীব ১/৩২৮, সহীহুল জামি ২/৭৫২।
রাসূলুল্লাহ (সা.) সাধারণত ‘বিতর’-সহ মোট এগার রাক’আত তাহাজ্জুদ আদায় করতেন। তিনি অধিকাংশ সময় শেষ রাতে তাহাজ্জুদ আদায় করতেন। তিনি তাহাজ্জুদের আগে অনেক সময় কুর’আনের কিছু আয়াত তিলাওয়াত করতেন। কখনো কিছু তাসবীহ, তাহলীল ইত্যাদি যিকর করার পর তাহাজ্জুদ শুরু করতেন। তিনি তাহাজ্জুদের সালাতের তিলাওয়াত খুব লম্বা করতেন। এক রাক’আতে অনেক সময় ৪/৫ পারা কুরআন তিলাওয়াত করতেন। রুকু ও সাজদাও অনুরূপভাবে দীর্ঘ করতেন। যতক্ষণ তিনি তিলাওয়াত করতেন প্রায় ততক্ষণ রুকুতে ও সাজদায় থাকতেন। আর তিলাওয়াতের সময় তিনি কুরআনের আয়াতের অর্থ অনুসারে থেমে থেমে দু’আ করতেন। তাহাজ্জুদের সালাতের মধ্যে তিনি ক্রন্দন করতেন। দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে তাহাজ্জুদ আদায় করার কারণে অনেক সময় তাঁর মুবারক পদযুগল ফুলে যেত।
মহানবী (ﷺ) বলেন, “তোমরা তত পরিমাণে আমল কর যত পরিমাণে তোমরা করার ক্ষমতা রাখ। আল্লাহর কসম! আল্লাহ (সওয়াব দিতে) ক্লান্ত হবেন না, বরং তোমরাই (আমল করতে) ক্লান্ত হয়ে পড়বে।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ১২৪৩)
কতগুলো জাল বা দূর্বল হাদীসের আমলঃ
- সহীহ হাদীসে সূরা ইয়াসিনের অতিরিক্ত কোনো ফযিলত বর্ণিত হয় নি। দু একটি দুর্বল ও বিভিন্ন জাল বানোয়াট হাদীসে এ সূরার বিভিন্ন ফযিলত বর্ণনা করা হয়েছে। দুর্বল হাদীসের মধ্যে প্রসিদ্ধ হাদিসটি হচ্ছে:
” إن لكل شيء قلبا وقلب القرآن يس ومن قرأ يس كتب الله له بقراءتها قراءة القرآن عشر مرات”. ( سنن الترمذي، فضل يس، رقم:2887)
‘প্রত্যেক বস্তুর একটি হৃদয় রয়েছে, আর কুরআনে হৃদয় হচ্ছে ‘ইয়াসিন’। যে ব্যক্তি ‘ইয়াসিন পড়বে আল্লাহ তার আমলনামায় দশবার পূর্ণ কুরআন পড়ার নেকী দান করবেন। তিরমিযী. সুনান, ইয়াসিনের মর্যাদা অনুচ্ছেদ, নং:২৮৮৭।
ইমাম তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনার পর নিজেই হাদীসটির সনদ গরীব ও দুর্বল বলে মন্তব্য বরং প্রমাণ করেছেন। তার মন্তব্য মতে হাদীসটি একেবারেই দুর্বল। অনেকে হাদীসটিকে বানোয়াট বলেও মন্তব্য করেছেন। তিরমিযির আলোচনা থেকেও এমন ইঙ্গিত পাওয়া যায়। মোটকথা ‘ইয়াসিন’ সূরার আলাদা ফযিলতে কোনো নির্ভরযোগ্য হাদীস নেই। আলী হাশীশ, সিলসিলাতুল আহাদীসিল ওয়াহিয়াহ, ১/৩৩৫, আলবানী, আস-সিলসিলাতুদ্-দ‘য়ীফাহ, ১/৩১২।
‘মৃত্যু উপস্থিত ব্যক্তিকে তোমরা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর তালক্বীন করো।’সহীহ মুসলিম, মৃত্যু উপস্থিত ব্যক্তিকে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর তালক্বীন অনুচ্ছেদ, নং: ২১৬২। তালক্বীন অর্থাৎ মুমূর্ষ ব্যক্তি মুখোমুখি এই কালেমা উচ্চরণ করা, যাতে সে তা শিখে বা স্মরণ করে পড়তে পারে। এতে তার জীবনের শেষ বাক্য ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ হবে।
এর বিপরীত মূমূর্ষ ব্যক্তির পাশে ‘ইয়াসিন’ পড়ার কোনো আমল রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত নয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন শিক্ষা সাহাবিদের দেন নি। এ সম্পর্কে যা বলা সবই অনির্ভরযোগ্য, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট।
- ‘শিফা’ শব্দের আরবী মূল শব্দ ‘شِفاء’ যার অর্থ রোগমুক্ত করা বা রোগ নিরাময়। এভাবে ‘খতমে শিফা’ অর্থ: রোগ নিরাময় করার খতম। কেউ অসুস্থ হলে তার রোগমুক্তির আশায় এই খতম পড়ানো হয়। আমাদের দেশে প্রচলিত এই খতমটি বিভিন্ন পদ্ধতিতে তুলে ধরা হয়েছে ,যার কোন সহিহ ভিত্তি নেই।
খতমে শিফা لا اله الا الله (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্)
এই পবিত্র কালেমা একলক্ষ পঁচিশ হাজার বার পাঠ করাকে ‘‘খতমে শিফা’’ বলে। একে খতমে তাহলীলও বলা হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষার মাঝে ‘খতমে শিফা’ নামের কিছু নেই। এ সবকিছুই মনগড়া, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।
- ‘খতমে তাসমিয়া’ বিসমিল্লাহ এর খতমকে বুঝানো হয়ে থাকে। একলক্ষ পঁচিশ হাজার বার ‘‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’’ পাঠের মাধ্যমে এই খতম করতে হয়। সম্পূর্ণ মনগড়া ও ভিত্তিহীন ফজর ও মাগরিব ছালাতের পর সূরা হাশরের শেষ তিনটি আয়াত পড়া : উক্ত আমল সম্পর্কে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে, তার সনদ যঈফ।
মা‘কিল ইবনু ইয়াসির রাসূল (ছাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি সকালে তিনবার ‘আঊযুবিল্লা-হিস সামীইল আলীম মিনাশ শায়ত্ব-নির রাজীম’সহ সূরা হাশরের শেষ তিনটি আয়াত পড়বে, আল্লাহ তার জন্য ৭০ হাযার ফেরেশতা নিযুক্ত করবেন, যারা সন্ধ্যা পর্যন্ত তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে। যদি ঐ দিন ঐ ব্যক্তি মারা যায়, তাহলে শহীদ হয়ে মারা যাবে। আর যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় পড়বে, তার জন্যও একই ফযীলত রয়েছে। তিরমিযী হা/২৯২২, ২/১২০ পৃঃ।
তাহক্বীক্ব : ইমাম তিরমিযী বলেন, এই হাদীছটি গরীব। আর এই সূত্র ছাড়া আর অন্য কোন সূত্র নেই। ঐ, ২/১২০ هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ لَا نَعْرِفُهُ إِلَّا مِنْ هَذَا الْوَجْهِ।
এর সনদে খালেদ ইবনু ত্বাহমান নামে যঈফ রাবী আছে। ইরওয়াউল গালীল ২/৫৮ পৃঃ। এ সম্পর্কে আরো জাল হাদীছ রয়েছে। যঈফুল জামে‘ হা/১৩২০। অতএব উক্ত হাদীছ আমল করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
- মাগরিব ছালাতের পর চার রাক‘আত সুন্নাত পড়া
মাগরিবের পর কেবল দুই রাক‘আত সুন্নাত ছালাত আদায় করতে হবে। এরপর দাঁড়িয়ে বা বসে আরো দুই রাক‘আত ছালাত আদায়ের ছহীহ কোন দলীল নেই।
মাকহূল (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি মাগরিব ছালাতের পর কোন কথা বলার পূর্বেই দুই রাক‘আত অন্য বর্ণনায় এসেছে, চার রাক‘আত পড়বে তার ছালাতকে ‘ইল্লীইনে’ উঠানো হবে। মিশকাত হা/১১৮৪, পৃঃ ১০৫; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১১১৬, ৩/৯৮ পৃঃ।
তাহক্বীক্ব : যঈফ। এর সনদে আবু ছালেহ নামে একজন যঈফ রাবী আছে।. তাহক্বীক্ব মিশকাত হা/১১৮৪-এর টীকা দ্রঃ, ১/৩৭১ পৃঃ; যঈফ আত-তারগীব হা/৩৩৫।
- ছালাতুত তাসবীহ সম্পর্কে যে সমস্ত বর্ণনা এসেছে[1] সেগুলোকে অধিকাংশ মুহাদ্দিছ যঈফ ও মুনকার বলেছেন। সঊদী আরবের সর্বোচ্চ উলামা পরিষদ মন্তব্য করেছেন,
صَلاَةُ التَّسْبِيْحِ بِدْعَةٌ وَحَدِيْثُهَا لَيْسَ بِثَابِتٍ بَلْ هُوَ مُنْكَرٌ وَذَكَرَهُ بَعْضُ أَهْلِ الْعِلْمِ فِى الْمَوْضُوْعَاتِ
‘ছালাতুত তাসবীহ’ বিদ‘আত। এর হাদীছ প্রমাণিত নয়; বরং মুনকার বা অস্বীকৃত। কোন কোন মুহাদ্দিছ জাল হাদীছের মধ্যে একে উল্লেখ করেছেন। ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৮/১৬৪ পৃঃ।
এ সম্পর্কিত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বর্ণিত হাদীছকে কেউ ‘মুরসাল’ কেউ ‘মওকূফ’ কেউ ‘যঈফ’ এবং কেউ ‘মওযূ’ বা জাল বলেছেন। যদিও শায়খ আলবানী (রহঃ) উক্ত হাদীছের যঈফ সূত্রসমূহ পরস্পরকে শক্তিশালী মনে করে তাকে হাসান ছহীহ বলেছেন এবং ইবনু হাজার আসক্বালানী ‘হাসান’ স্তরে উন্নীত বলে মন্তব্য করেছেন। এরূপ বিতর্কিত ও সন্দেহযুক্ত হাদীছ দ্বারা ইবাদত সাব্যস্ত করা যায় না।দ্রঃ ইবনু হাজার আসক্বালানী বিস্তারিত আলোচনা; আলবানী, মিশকাত পরিশিষ্ট, ৩ নং হাদীছ ৩/১৭৭৯-৮২ পৃঃ; আবুদাঊদ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/১৩২৮ হাশিয়া; বায়হাক্বী ৩/৫২; আব্দুল্লাহ ইবনু আহমাদ, মাসায়েলু ইমাম আহমাদ, মাসআলা নং ৪১৩, ২/২৯৫ পৃঃ।
* ডান দিক থেকে কাতার পূরণ করা :
সুন্নাত হল ইমামের পিছন থেকে কাতার সোজা করা। ডান দিক থেকে কাতার পূরণ করার কোন শারঈ ভিত্তি নেই। প্রত্যেকটি কাতার ইমামের পিছন থেকে পূরণ করতে হবে।
عَنْ أَنَسٍ قَالَ صَلَّى النَّبِىُّ فِىْ بَيْتِ أُمِّ سُلَيْمٍ فَقُمْتُ وَيَتِيْمٌ خَلْفَهُ وَأُمُّ سُلَيْمٍ خَلْفَنَا.
আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) বলেন, একদা নবী করীম (ছাঃ) উম্মু সুলাইমের বাড়ীতে ছালাত আদায় করলেন। আমি এবং একজন ইয়াতীম তাঁর পিছনে দাঁড়ালাম। আর উম্মু সুলাইম আমাদের পিছনে দাঁড়ালেন।ছহীহ বুখারী হা/৮৭৪, ১/১২০ পৃঃ, (ইফাবা হা/৮২৯, ২/১৬৩ পৃঃ); মিশকাত হা/১১০৮; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১০৪০, ৩/৬৩ পৃঃ।
উক্ত হাদীছ প্রমাণ করে ডান দিক থেকে কাতার সোজা না করে ইমামের পিছন থেকেই কাতার করতে হবে।
উমরী কাযা
সালাত মুমিনের জীবনের এমন একটি ফরয ইবাদত যার কোনো বিকল্প নেই বা কাফ্ফারা নেই। সালাত মুমিনের জীবনের এমন একটি ফরয ইবাদত যার কোনো বিকল্প নেই বা কাফ্ফারা নেই। যতক্ষণ হুশ বা চেতনা থাকবে সালাত আদায় করতেই হবে। দাঁড়িয়ে, বসে, শুয়ে, দৌঁড়িয়ে, হেঁটে, ইশারায় বা যেভাবে সম্ভব সালাত আদায় করতে হবে। চেতনা রহিত হলে সালাত মাফ হয়ে যাবে।
কোনো বিশেষ কারণে একান্ত বাধ্য হয়ে দুই এক ওয়াক্ত সালাত ছুটে গেলে কাযা করতে হবে। কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে অনেক ওয়াক্তের সালাতের কাযা করার কোনোরূপ বিধান হাদীস শরীফে দেয়া হয় নি। কারণ, কোনো মুসলিম সালাত পরিত্যাগ করতে পারে, এরূপ চিন্তুা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও সাহাবীগণের যুগে ছিল না। সর্বাবস্থায় সকলেই একমত যে, ইচ্ছাকৃতভাবে দীর্ঘ সময়ের সালাত পরিত্যাগ করলে পরে সে সালাতের ‘কাযা’ করার বিষয়ে হাদীসে কোনোরূপ বিধান দেয়া হয় নি। তবে জালিয়াতগণ এ বিষয়ে কিছু জাল হাদীস তৈরি করেছে। এছাড়া সমাজে কিছু প্রচলিত ভিত্তিহীন কথাবার্তাও এ বিষয়ে প্রচলিত আছে। দু’টি ক্ষেত্রে তা ঘটেছে। প্রথমত, উমরী কাযা ও দ্বিতীয়ত, কাফ্ফারা বা এস্কাত। এ বিষয়ে জালিয়াতদের বানানো একটি হাদীস:
قَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! إِنِّيْ تَرَكْتُ الصَّلاَةَ، قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ: فَاقْضِ مَا تَرَكْتَ. فَقَالَ: يَا رَسُوْلَ اللهِ، كَيْفَ أَقْضِيْ؟ فَقَالَ: صَلِّ مَعَ كُلِّ صَلاَةٍ صَلاَةً مِثْلَهَا، قَالَ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! قَبْلُ أَمْ بَعْدُ؟ قَالَ: لاَ بَلْ قَبْلُ
‘‘এক ব্যক্তি বলে, হে আল্লাহর রাসূল, আমি সালাত পরিত্যাগ করেছি। তিনি বলেন, তুমি যা পরিত্যাগ করেছ তা ‘কাযা’ কর। লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসূল, আমি কিভাবে তা ‘কাযা’ করব? তিনি বলেন, প্রত্যেক ওয়াক্তের সালাতের সাথে অনুরূপ সালাত আদায় কর। সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল, আগে, না পরে? তিনি বলেন, না, বরং আগে।’’
মুহাদ্দিসগণ একমত যে, এ হাদীসটি জাল, ভিত্তিহীন ও বাতিল। জূযকানী, আল-আবাতীল ২/৫০; ইবনুল জাওযী, আল-মাওদূ‘আত ২/২৬; সুয়ূতী, আল-লাআলী ২/২৪; ইবনু আর্রাক, তানযীহ ২/৮০; শাওকানী, আল-ফাওয়াইদ ১/৩৫।
যদি কোনো মুসলিম দীর্ঘদিন সালাতে অবহেলার পরে অনুতপ্ত হয়ে নিয়মিত সালাত শুরু করেন, তখন তার প্রধান দায়িত্ব হবে বিগত দিনগুলোর পরিত্যক্ত সালাতের জন্য বেশি বেশি করে কাঁদাকটি ও তাওবা করা।
আলহামদুলিল্লাহ, সহিহ আমলের দিক নির্দেশনা ও বিষয় সমূহ অধিকাংশই রাহে বেলায়েত বই থেকে সংগৃহিত।
ড আব্দুল্লাহ জাহাংগীর (রহ) এর হাদীসের নামে জালিয়াতি, রাহে বেলায়েত বই দুটি পড়লে একজন মুমিনের বেসিক জ্ঞান লাভ হয়ে যাবে ইন শা আল্লাহ ।
কুরআনের বিভিন্ন সূরার ফযীলতঃ
আল্লামা মাউসিলী বলেন, কুরআনের ফযীলতের বিষয়ে কিছু হাদীস সহীহ, তবে এ বিষয়ে অনেক বানোয়াট হাদীস সমাজে প্রচার করা হয়েছে। নিম্নলিখিত সূরা বা আয়াতের বিষয়ে বিশেষ মর্যাদা বা ফযীলত জ্ঞাপক সহীহ বা হাসান হাদীস বর্ণিত হয়েছে। সূরা ফাতিহা, সূরা বাকারাহ, সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত, আয়াতুল কুরসী, সূরা আল-ইমরান, সূরা কাহাফ, সূরা কাহাফের প্রথম বা শেষ দশ আয়াত, সূরা মুলক, সূরা কাফিরূন, সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস। এছাড়া অন্যান্য সূরার ফযীলতে বর্ণিত হাদীসগুলি বানোয়াট বা অত্যন্ত দুর্বল। এছাড়া উপরের সূরাগুলোর ফযীলতেও অনেক বানোয়াট কথা হাদীস নামে প্রচার করা হয়েছে।
এখানে কুরআনের যেসব সূরা ও আয়াতের কথা সহীহ হাদিসে বিশেষ গুরুত্বের সাথে উল্লেখিত হয়েছে, সে হাদিসগুলো একত্রে উপস্থাপন করা হল
সূরা ফাতিহা
১) আবু সাইদ রাফে’ ইবনে মুআল্লা (রাঃ) হতে বর্নিত, তিনি বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে বললেন, “মসজিদ থেকে বের হবার পূর্বেই তোমাকে কি কুরআনের সব চেয়ে বড় (মাহাত্ম্যপূর্ণ) সূরা শিখিয়ে দেব না?” এই সাথে তিনি আমার হাত ধরলেন। অতঃপর যখন আমরা বাহিরে যাওয়ার ইচ্ছা করলাম, তখন আমি নিবেদন করলাম, “ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ)! আপনি যে আমাকে বললেন তোমাকে অবশ্যই কুরআনের সব চেয়ে বড় (মাহাত্ম্যপূর্ণ) সূরা শিখিয়ে দেব?’ সুতরাং তিনি বললেন, “(তা হচ্ছে) ‘আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন’ (সূরা ফাতেহা), এটি হচ্ছে ‘সাবউ মাসানি (অর্থাৎ নামাযে বারংবার পঠিতব্য সপ্ত আয়াত ) এবং মহা কুরআন; যা আমাকে দান করা হয়েছে”। সহীহুল বুখারি ৪৪৭৪
সূরা ইখলাস
২) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত , রাসূলুল্লাহ (সাঃ) (সূরা) ‘কূল হুওয়াল্লাহু আহাদ’ সম্পর্কে বলেছেন, “সেই মহান সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রান আছে, নিঃসন্দেহে এটি কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমতুল্য”।
৩) অপর এক বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সাহাবাগনকে বললেন, ‘তোমরা কি এক রাতে এক তৃতীয়াংশ কুরআন পড়তে অপারগ?’ প্রস্তাবটি তাদের পক্ষে ভারী মনে হল। তাই তারা বলে উঠলেন ‘হে আল্লাহর রাসূল! এ কাজ আমাদের মধ্যে কে করতে পারবে?’ ( অর্থাৎ কেও পারবে না।) তিনি বললেন, “কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ, আল্লাহুস সামাদ” (সূরা ইখলাস) কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমতুল্য”। (অর্থাৎ, এই সূরা পড়লে এক তৃতীয়াংশের কুরআন পড়ার সমান নেকী অর্জিত হয়।) (সহীহুল বুখারি ৫০১৫)
৪) উক্ত সাহাবী (রাঃ) আরো বর্ণনা করেন যে, এক ব্যক্তি কোন লোককে সূরাটি বারবার পড়তে শুনল। অতঃপর সে সকালে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নিকট এসে তা ব্যক্ত করল। সে সূরাটিকে নগণ্য মনে করেছিল। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, “সেই সত্তার শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ আছে, নিঃসন্দেহে এই সূরা (ইখলাস) কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান”। [সহীহুল বুখারি ৫০১৫]
৫) আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) (সূরা) ‘কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ’ সম্পর্কে বলেছেন, “নিঃসন্দেহে এটি কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমতুল্য”। [মুসলিম ৮১২]
৬) আনাস (রাঃ) হতে বর্নিত, এক ব্যক্তি নিবেদন করল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি এই (সূরা) ‘কূল হুওয়াল্লাহু আহাদ’ ভালবাসি। তিনি বললেন, ‘ এর ভালবাসা তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে’। [সহীহুল বুখারি ৭৭৪]
সূরা ফালাক ও সূরা নাস
৭) উকবাহ বিন আমের (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) একদা বললেন, ‘তুমি কি দেখনি, আজ রাতে আমার উপর কতকগুলি আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে; যার আনুরূপ আর কিছু দেখা যায়নি? (আর তা হল,) ‘কুল আউযু বিরাব্বিল ফালাক্ক’ ও ‘কুল আউযু বিরাব্বিল নাস’। [মুসলিম ৮১৪]
৮) আবূ সাঈদ খুদরী ( রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন ‘রাসূলুল্লাহ (সূরা ফালাক্ক ও নাস অবতীর্ণ হবার পূর্ব পর্যন্ত নিজ ভাষাতে) জিন ও বদ নজর থেকে (আল্লাহর) আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। পরিশেষে যখন উক্ত সূরা দু’ টি অবতীর্ণ হল, তখন ঐ সূরা দু’টি দ্বারা আশ্রয় প্রার্থনা করতে লাগলেন এবং অন্যান্য সব পরিহার করলেন’। [তিরমিজী ২০৫৮]
সূরা মূলক
৯) আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘কুরআনের তিরিশ আয়াতবিশিষ্ট একটি সূরা এমন আছে , যা তার পাঠকারীর জন্য সুপারিশ করবে এবং শেষাবধি তাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে,সেটা হচ্ছে ‘তাবা-রাকাল্লাযী বিয়্যাদিহিল মূলক’ (সূরা মূলক)। [আবূ দাউদ ১৪০০]
সূরা বাক্বারা
১০) আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বললেন, একদা জিবরাইল (আঃ) নবী(সাঃ)-এর নিকট বসে ছিলেন। এমন সময় উপর থেকে একটি শব্দ শুনতে পেলেন। তিনি (জিবরাইল) মাথা তুলে বললেন, ‘এটি আসমানের একটি দরজা, যা আজ খোলা হল। ইতোপূর্বে এটা কখনও খোলা হয় নাই। ওদিক দিয়ে একজন ফেরেশতা আবতির্ন হল। এই ফেরেশতা যে দুনিয়াতে অবতরণ করেছে,ইতোপূর্বে কখনও অবতরণ করেনি। সুতরাং তিনি এসে নবী (সাঃ)-কে সালাম জানিয়ে বললেন, ‘‘আপনি দুটি জ্যোতির সুসংবাদ নিন। যা আপনার আগে কোন নবীকে দেওয়া হই নাই। (সে দুটি হচ্ছে) সূরা ফাতেহা ও সূরা বাক্কারার শেষ আয়াতসমূহ । ওর মধ্যে হতে যে বর্নটিই পাঠ করবেন, তাই আপনাকে দেওয়া হবে।’’ [মুসলিম ৮০৬]
১১) আবূ মাসাঊদ বদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রাতে সূরা বাক্বারার শেষ আয়াত দু’টি পাঠ করবে, তার জন্য সেই দু’টি যথেষ্ট হবে’। [সহীহুল বুখারি ৪০০৮]
বলা হয়েছে যে, সে রাতে অপ্রীতিকর জিনিসের মোকাবেলায় যথেষ্ট হবে। অথবা তাহাজ্জুদের নামায থেকে যথেষ্ট হবে।
১২) আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা নিজিদের ঘর-বাড়িগুলোকে কবরে পরিণত করো না। কেননা, যে বাড়িতে সূরা বাক্কারা পাঠ করা হয়, সে বাড়ি থেকে শয়তান পলায়ন করে’। [মুসলিম ৭৮০]
(অর্থাৎ সুন্নত ও নফল নামায তথা পবিত্র কুরআন পড়া ত্যাগ ক’রে ঘরকে কবর বানিয়ে দিয়ো না। যেহেতু কবরে এ সব বৈধ নয়)।
আয়াতুল কুরসী পড়ার ফযীলত
১৩) উবাই ইবনে কা’ব (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘হে আবূ মুনযির! তুমি কি জান,মহান আল্লাহর গ্রন্থ (আল-কুরাআন) এর ভিতর তমার যা মুখস্থ আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বড় (মর্যাদাপূর্ণ) আয়াত কোনটি?’ আমি বললাম, ‘সেটা হচ্ছে আয়াতুল কুরসী।’ সুতরাং তিনি আমার বুকে চাপড় মেরে বললেন, ‘আবুল মুনযির! তোমার জ্ঞান তোমাকে ধন্য করুক’। [মুসলিম ৮১০
(অর্থাৎ তুমি, নিজ জ্ঞানের বর্কতে উক্ত আয়াতটির সন্ধান পেয়েছ, সে জন্য তোমাকে ধন্যবাদ।
১৪) আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বললেন (একবার) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে রমযানের জাকাত(ফিৎরার মাল-ধন) দেখাশোনা করার দায়িত্ব দেন। বস্তুতঃ ( আমি পাহারা দিচ্ছিলাম ইত্যবসরে) একজন আগমনকারী এসে আজঁলা ভরে খাদ্যবস্তু নিতে লাগল। আমি তাকে ধরলাম এবং বললাম, ‘তোকে অবশ্যই রাসূলুল্লাহ (সাঃ) –এর কাছে পেশ করব।’ সে আবেদন করল,আমি একজন সত্যিকারের অভাবী। পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব আমার উপর, আমার দারুন অভাব।’ কাজেই আমি তাকে ছেড়ে দিলাম।
সকালে (রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট হাযির হলাম) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, ‘হে আবূ হুরাইরা! গত রাতে তোমার বন্দী কী আচারন করেছে’? আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! সে তার অভাব ও (অসহায়) পরিবার-সন্তানের অভিযোগ জানাল। সুতরাং তার প্রতি আমার দয়া হলে আমি তাকে ছেরে দিলাম ।’ তিনি বললেন, ‘ সতর্ক থেকো, সে আবার আসবে’।
আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর আনুরুপ উক্তি শুনে সুনিশ্চিত হলাম যে, সে আবার আসবে। কাজেই আমি তার প্রতীক্ষায় থাকলাম। সে (পুর্ববৎ) এসে আজঁলা ভরে খাদ্যবস্তু নিতে লাগল। আমি বললাম, ‘অবশ্যই তোকে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) –এর কাছে পেশ করব ।’ সে বলল, ‘আমি অভাবী,পরিবারের দায়ত্ব আমার উপর, (আমাকে ছেড়ে দাও) আমি আর আসব না ।’সুতরাং আমার মনে দয়া হল। আমি তাকে ছেড়ে দিলাম।
সকালে উঠে (যখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর কাছে গেলাম তখন) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে বললেন, ‘‘আবূ হুরাইরা! গত রাতে তোমার বন্দী কী আচারন করেছে’? আমি বললাম, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাঃ)! সে তার অভাব ও অসহায় সন্তানের-পরিবারের অভিযোগ জানাল। সুতরাং আমার মনে দয়া হলে আমি তাকে ছেরে দিলাম’। তিনি বললেন, ‘ সতর্ক থেকো, সে আবার আসবে’। সুতরাং তৃতীয়বার তার প্রতীক্ষায় রইলাম। সে (এসে)আজঁলা ভরে খাদ্যবস্তু নিতে লাগল। আমি তাকে ধরে বললাম ‘‘এবারে তোকে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) –এর দরবারে হাযির করবই।’ এটা তিনবারের মধ্যে শেষবার । ‘ফিরে আসবো না’ বলে তুই আবার ফিরে এসেছিস ।’’ সে বলল ‘তুমি আমাকে ছেড়ে দাও, আমি তোমাকে এমন কতকগুলি শব্দ শিখিয়ে দেব, যার দ্বারা আল্লাহ তোমার উপকার করবেন ।’ আমি বললাম ‘সেগুলি কী?’ সে বলল, ‘যখন তুমি (ঘুমাবার জন্য) বিছানাই যাবে, তখন আয়াতুল কুরসী পাঠ ক’রে (ঘুমাবে) তাহলে তোমার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন রক্ষক নিযুক্ত হবে।
আর সকাল পর্যন্ত তোমার কাছে শয়তান আসতে পারবে না’। সুতরাং আমি তাকে ছেড়ে দিলাম। আবার সকালে (রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর কাছে গেলাম) তিনি আমাকে বললেন, ‘‘তোমার বন্দী কী আচারন করেছে?’’ আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! সে বলল, ‘‘ আমি তোমাকে এমন কতিপয় শব্দ শিখিয়ে দেব, যার দ্বারা আল্লাহ আমার কল্যাণ করবেন ।’’ বিধায় আমি তাকে ছেড়ে দিলাম তিনি বললেন ‘‘সে শব্দগুলি কী?’’ আমি বললাম, ‘সে আমাকে বলল, ‘‘যখন তুমি বিছানাই (শোয়ার জন্য) যাবে, তখন আয়াতুল কুরসী শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ‘আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম’ পড়ে নেবে ।’’সে আমাকে আর বলল, “তার কারনে আল্লাহর তরফ থেকে সর্বদা তোমার জন্য একজন রক্ষক নিযুক্ত থাকবে। আর সকাল পর্যন্ত তোমার কাছে শয়তান আসতে পারবে না’’।
(এ কথা শুনে) তিনি (সাঃ) বললেন, ‘‘শোনো ! সে নিজে ভীষণ মিথ্যাবাদী; কিন্তু তোমাকে সত্য কথা বলেছে। হে আবূ হুরাইরা! তুমি জান, তিন রাত ধরে তুমি কার সাথে কথা বলছিলে?’’ আমি বললাম, ‘জী না ।’ তিনি বললেন, ‘‘সে ছিল শয়তান’’। [সহীহুল বুখারী ২৩১১]
সূরা কাহফ
১৫) আবূ দার্দা (রা:) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি সূরা কাহফের প্রথম দিক থেকে দশটি আয়াত মুখস্ত করবে,সে দাজ্জালের(ফিৎনা) থেকে পরিএাণ পাবে।’’ অন্য বর্ণনায় ‘কাহফ সূরার শেষ দিক থেকে’ উল্লেখ হয়েছে। [মুসলিম ৮০৯]