সুরা বাকারাঃ ৩০তম রুকু (২৩২-২৩৫)আয়াত

 সুরা বাকারাঃ ৩০তম রুকু (২৩২-২৩৫)আয়াত

أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ

২:২৩২ وَ اِذَا طَلَّقۡتُمُ النِّسَآءَ فَبَلَغۡنَ اَجَلَهُنَّ فَلَا تَعۡضُلُوۡهُنَّ اَنۡ یَّنۡکِحۡنَ اَزۡوَاجَهُنَّ اِذَا تَرَاضَوۡا بَیۡنَهُمۡ بِالۡمَعۡرُوۡفِ ؕ ذٰلِکَ یُوۡعَظُ بِهٖ مَنۡ کَانَ مِنۡکُمۡ یُؤۡمِنُ بِاللّٰهِ وَ الۡیَوۡمِ الۡاٰخِرِ ؕ ذٰلِکُمۡ اَزۡکٰی لَکُمۡ وَ اَطۡهَرُ ؕ وَ اللّٰهُ یَعۡلَمُ وَ اَنۡتُمۡ لَا تَعۡلَمُوۡنَ ﴿۲۳۲﴾

২৩২. আর তোমরা যখন স্ত্রীদেরকে তালাক দাও এবং তারা তাদের ইদ্দতকাল পূর্ণ করে, এরপর তারা যদি বিধিমত পরস্পর সম্মত হয়, তবে স্ত্রীরা নিজেদের স্বামীদের বিয়ে করতে চাইলে তোমরা তাদেরকে বাধা দিও না। এ দ্বারা তাকে উপদেশ দেয়া হয় তোমাদের মধ্যে যে আল্লাহ ও আখেরাতে ঈমান রাখে, এটাই তোমাদের জন্য শুদ্ধতম ও পবিত্রতম। আর আল্লাহ্ জানেন এবং তোমরা জান না।

এখানে তালাকপ্রাপ্তা মহিলার ব্যাপারে তৃতীয় একটি নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে যে, ইদ্দত অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পর তারা (প্রথম বা দ্বিতীয় তালাকের পর) স্বামী-স্ত্রী উভয়েই সন্তুষ্টচিত্তে পুনরায় যদি বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হতে চায়, তাহলে তোমরা তাদেরকে তাতে বাধা দিও না। নবী করীম (সাঃ)-এর যামানায় এ রকম একটি ঘটনা ঘটেছিল। মহিলার ভাই বিবাহে বাধা দিয়েছিল। যার ফলে এই আয়াত নাযিল হয়েছিল। (সহীহ বুখারী, কিতাবুননিকাহ, পরিচ্ছেদঃ অলী ব্যতীত বিবাহ হয় না) এখানে একটি কথা এও জানা গেল যে, মহিলা নিজে-নিজে বিবাহ করতে পারে না, বরং তার বিবাহের জন্য অলী (অভিভাবকে)র অনুমতি, সম্মতি ও সহমত অত্যাবশ্যক। আর এই কারণেই তো মহান আল্লাহ অভিভাবকদেরকে তাদের অভিভাবকত্বের অধিকারকে অন্যায়ভাবে ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন। নবী করীম (সাঃ)-এর হাদীস দ্বারা এ কথার আরো সমর্থন হয়ে যায়। তিনি বলেন, ‘‘অভিভাবক ব্যতীত বিবাহ হয় না।’’ (আবূ দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, হাদীসটি সহীহ। দ্রষ্টব্যঃ ইরওয়াউল গালীল ৬/২৩৫) অপর এক বর্ণনায় এসেছে যে, ‘‘যে মহিলাই তার অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া বিবাহ করল, তার বিবাহ বাতিল, তার বিবাহ বাতিল, তার বিবাহ বাতিল।’’ (আবূ দাউদ, তিরমিযী ও ইবনে মাজাহ, আল্লামা আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।)

স্বাধীন স্ত্রীলোককে তার মর্জিমত শরীআত বিরোধী কার্য ব্যতীত বিয়ে হতে বাধা দেয়া একান্তই অন্যায়, তা তার প্রথম স্বামীর পক্ষ থেকেই হোক, অথবা তার অভিভাবকদের পক্ষ থেকেই হোক। কিন্তু শর্ত হচ্ছে “উভয়ে শরীআতের নিয়মানুযায়ী রায়ী হবে”। এতে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, যদি উভয়ে রাযী না হয়, তবে কোন এক পক্ষের উপর জোর বা চাপ সৃষ্টি করা বৈধ হবে না। যদি উভয়ে রাযীও হয় আর তা শরীআতের আইন মোতাবেক না হয়, যথা, বিয়ে না করেই উভয়ে স্বামী-স্ত্রীর মত বাস করতে আরম্ভ করে, অথবা তিন তালাকের পর অন্যত্র বিয়ে না করেই পুনর্বিবাহ করতে চায়, অথবা ইদতের মধ্যেই কোন নারী অন্যের সাথে বিয়ের ইচ্ছা করে, তখন সকল মুসলিম তথা বিশেষ করে ঐ সমস্ত লোকের যারা তাদের সাথে সম্পর্কযুক্ত তারা সবাই এমন কর্মকাণ্ডে বাধা দিতে হবে, এমনকি শক্তি প্রয়োগ করতে হলেও তা করতে হবে। [মাআরিফুল কুরআন]

এতে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, যারা আল্লাহ্ তা’আলা ও আখেরাতে বিশ্বাস করে, তাদের জন্য এসব আহকাম যথাযথভাবে পালন করা অবশ্য কর্তব্য। আর যারা এ আদেশ পালনে শিথিলতা প্রদর্শন করে তাদের বোঝা উচিত যে, তাদের ঈমানে দুর্বলতা রয়েছে।

এতে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, এর ব্যতিক্রম করা পাপ-মগ্নতা এবং ফেৎনা-ফাসাদের কারণ। কেননা, বয়ঃপ্রাপ্ত বুদ্ধিমতী যুবতী মেয়েকে সাধারণভাবে বিয়ে থেকে বিরত রাখা একদিকে তার প্রতি অত্যাচার, তাকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা এবং অপরদিকে তার পবিত্রতা ও মান-ইজ্জতকে আশংকায় ফেলারই নামান্তর। তৃতীয়তঃ সে যদি এ বাধার ফলে কোন পাপে লিপ্ত হয়ে পড়ে, তবে তার সে পাপের অংশীদার তারাও হবে যারা তাকে বিয়ে থেকে বিরত রেখেছে।

কী কী কারণে স্ত্রীর জন্য তার স্বামীর নিকট তালাক চওয়া বৈধ?

উত্তর:

ইসলামের দৃষ্টিতে একান্ত জরুরি কারণ ছাড়া স্বামীর নিকট তালাক চাওয়া বৈধ নয়। হাদিসে এ ব্যাপারে কঠিন পরিণতির কথা বর্ণিত হয়েছ। যেমন,

সাওবান রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

‏ أَيُّمَا امْرَأَةٍ سَأَلَتْ زَوْجَهَا طَلاَقًا فِي غَيْرِ مَا بَأْسٍ فَحَرَامٌ عَلَيْهَا رَائِحَةُ الْجَنَّةِ ‏‏

“যদি কোন মহিলা অহেতুক তার স্বামীর নিকট তালাক চায় তার জন্য জান্নাতের সুগন্ধও হারাম হয়ে যায়।” (আবু দাউদ, অধ্যায়: তালাক, অনুচ্ছেদ: খোলার বর্ণনা, হা/২২২৬, সহীহ)

* প্রাসঙ্গিক ভাবে উল্লেখ্য যে, অনেক সময় কিছু খারাপ চরিত্রের মানুষ কোন সহজ-সরল স্ত্রীর নিকট তার স্বামীর বদনাম গেয়ে তার ব্যাপারে বিতৃষ্ণা সৃষ্টি করার অপপ্রয়াস চালায় অথচ ইসলামে এ ব্যাপারে কঠোর হুমকি এসেছে। যেমন,

আবূ হুরাইরাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

‏ لَيْسَ مِنَّا مَنْ خَبَّبَ امْرَأَةً عَلَى زَوْجِهَا أَوْ عَبْدًا عَلَى سَيِّدِهِ ‏

“যে ব্যক্তি কোন স্ত্রীকে তার স্বামীর বিরুদ্ধে অথবা দাসকে তার মনিবের বিরুদ্ধে প্ররোচিত করে সে আমাদের দলভুক্ত নয়।” (আবু দাউদ, অধ্যায়: তালাক, অনুচ্ছেদ: অনুচ্ছেদ-১ যে ব্যক্তি কোন স্ত্রীকে স্বামীর বিরুদ্ধে উত্তেজিত করে হা/২১৭৫, সহীহ)

* অনেক সময় স্ত্রী তার সতীনকে তালাক দেয়ার জন্য স্বামীর নিকট দাবি করে অথবা বাইরে কোন মহিলা কোন পুরুষকে বিবাহ করার জন্য শর্ত দেয় যে, তার আগের স্ত্রীকে তালাক দিতে হবে তাহলে তার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে। অথচ এ ধরণের দাবি বা শর্তারোপ কোনটাই ইসলামে বৈধ নয়।

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

لاَ تَسْأَلِ الْمَرْأَةُ طَلاَقَ أُخْتِهَا لِتَسْتَفْرِغَ صَحْفَتَهَا وَلْتَنْكِحْ فَإِنَّمَا لَهَا مَا قُدِّرَ لَهَا ‏”‏ ‏

“কোন নারী যেন নিজ স্বার্থের জন্য এবং বিয়ে বসার জন্য তার বোনের তালাক না চায়। কেননা সে তাই পাবে যা তার জন্য নির্ধারিত আছে।” ( সহীহুল বুখারী, অধ্যায়: বিবাহ। অনুচ্ছেদ, বিয়েতে যে সকল শর্ত করা বৈধ নয়। সুনানে আবু দাউদ, অধ্যায়: তালাক, অনুচ্ছেদ: কোন মহিলার স্বামীর নিকট তার সতীনের তালাক দাবি করা হা/২১৭৬, সহীহ)

➰ *যে সব কারণে স্ত্রীর জন্য তার স্বামীর নিকট তালাক চাওয়া জায়েয:*

সম্মানিত ফিকহবিদগণ বলেন, স্ত্রী যদি স্বামীর পক্ষ থেকে ক্ষয়-ক্ষতির সম্মুখীন হয় বা হওয়ার আশংকা করে তাহলে তার স্বামীর নিকট তালাক চাওয়া জায়েয রয়েছে। এই ক্ষয়-ক্ষতি শারীরিক, মানসিক, আমল-আখলাক, ইবাদত-বন্দেগি ইত্যাদি বিভিন্ন দিক দিয়ে হতে পারে।

*নিম্নে এ বিষয়ে মৌলিক ১০টি দিক তুলে ধরা হল:*

১. স্বামী যদি স্ত্রীর ভরণ-পোষণের হক আদায় করতে অপারগ হয়।

২. স্বামী যদি স্ত্রীর জৈবিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হয়।

৩. স্বামী যদি পরকীয়া, পাপাচারিতা এবং অন্যায়-অপকর্মে লিপ্ত হয়।

৪. স্বামীর প্রতি মনে প্রচণ্ড ঘৃণা সৃষ্টি হলে ( তা যে কারণেই হোক না কেন)।

৫. স্বামী দীর্ঘ সময় জেলে বন্দি থাকার কারণে স্ত্রী যদি নিজের নিরাপত্তা হীনতা অনুভব করে বা ক্ষয়-ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

৬. স্বামী দীর্ঘ সময় অনুপস্থিত থাকার কারণে স্ত্রী যদি এতে নিজের ঈমান-আখলাকের ব্যাপারে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকা করে।

৭. স্বামী যদি স্ত্রীকে শরীয়ত সম্মত কারণ ব্যতিরেকে মারপিট, জুলুম-নির্যাতন, অপমান-অপদস্থ, অভিসম্পাত ও গালাগালি করে।

৮. স্বামী যদি এমন কোন দুরারোগ্য রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হয় যার কারণে স্ত্রী তাতে সংক্রমিত হওয়ার আশংকা করে।

৯. স্বামী যদি স্ত্রীকে তার পরিবার-পরিজন বিশেষ করে পিতামাতার সাথে দেখা-সাক্ষাতে সম্পূর্ণভাবে বাধা দেয়।

১০. স্বামী যদি নিজে তাওহীদ ভিত্তিক জীবন গঠন, নামায, রোযা, যাকাত, হজ্জ ইত্যাদি ইসলামের মৌলিক বিধি-বিধান পালন না করে অথবা ইসলামের কোন বিষয়কে অস্বীকার করে অথবা ইসলাম সম্পর্কে কটূক্তি করে অথবা স্ত্রীকে নামায, রোযা, পর্দা ইত্যাদি ফরয ইবাদতে বাধা দেয়…ইত্যাদি।

♻ *মোটকথা,* স্বামীর অন্যায়-অপকর্ম ও পাপাচারের কারণে স্ত্রী নিজের ঈমান-আমল, আখলাক ইত্যাদি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকা করলে এবং স্ত্রীর প্রতি অবধারিত হক আদায়ে ব্যর্থতার পরিচয় দিলে সেই স্বামীর নিকট স্ত্রীর খোলা তালাক চাওয়া বৈধ। স্বামী খোলা তালাক দিতে অস্বীকার করলে সে কোর্টের আশ্রয় নিয়ে বিবাহ ভঙ্গ করতে পারে। তবে একজন বুদ্ধিমান নারীর করণীয় হল, স্বামীর মাঝে দোষ-ত্রুটি দেখলে তাকে ধৈর্যের সাথে সংশোধন করার চেষ্টা করা, নিজে না পারলে অন্যের মাধ্যমে চেষ্টা করা, স্বামীকে তার আচার-আচরণ পরিবর্তনের জন্য পর্যাপ্ত সময় ও সুযোগ দেয়া। মোটকথা সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাড়াহুড়া করবে না এবং সন্তান-সন্ততির কথা বিবেচনা করে সবর অবলম্বন করবে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে বিজ্ঞজনদের পরামর্শ গ্রহণের পাশাপাশি ইস্তিখারার সালাত আদায় করবে। তাহলে আশা করা যায়, আল্লাহ তাকে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছতে সাহায্য করবেন।আল্লাহু আলাম

আল্লাহু তাওফিক দান করুন। আমীন। উত্তর প্রদানে:

আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল, দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব

২:২৩৩ وَ الۡوَالِدٰتُ یُرۡضِعۡنَ اَوۡلَادَهُنَّ حَوۡلَیۡنِ کَامِلَیۡنِ لِمَنۡ اَرَادَ اَنۡ یُّتِمَّ الرَّضَاعَۃَ ؕ وَ عَلَی الۡمَوۡلُوۡدِ لَهٗ رِزۡقُهُنَّ وَ کِسۡوَتُهُنَّ بِالۡمَعۡرُوۡفِ ؕ لَا تُکَلَّفُ نَفۡسٌ اِلَّا وُسۡعَهَا ۚ لَا تُضَآرَّ وَالِدَۃٌۢ بِوَلَدِهَا وَ لَا مَوۡلُوۡدٌ لَّهٗ بِوَلَدِهٖ ٭ وَ عَلَی الۡوَارِثِ مِثۡلُ ذٰلِکَ ۚ فَاِنۡ اَرَادَا فِصَالًا عَنۡ تَرَاضٍ مِّنۡهُمَا وَ تَشَاوُرٍ فَلَا جُنَاحَ عَلَیۡهِمَا ؕ وَ اِنۡ اَرَدۡتُّمۡ اَنۡ تَسۡتَرۡضِعُوۡۤا اَوۡلَادَکُمۡ فَلَا جُنَاحَ عَلَیۡکُمۡ اِذَا سَلَّمۡتُمۡ مَّاۤ اٰتَیۡتُمۡ بِالۡمَعۡرُوۡفِ ؕ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ وَ اعۡلَمُوۡۤا اَنَّ اللّٰهَ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ بَصِیۡرٌ ﴿

২৩৩. আর জননীগণ তাদের সন্তানদেরকে পূর্ণ দু’বছর স্তন্য পান করাবে এটা সে ব্যক্তির জন্য, যে স্তন্যপান কাল পূর্ণ করতে চায়। পিতার কর্তব্য যথাবিধি তাদের (মাতাদের) ভরণ-পোষণ করা। কাউকেও তার সাধ্যাতীত কাজের ভার দেয়া হয় না। কোন মাতাকে তার সন্তানের জন্য এবং যার সন্তান (পিতা) তাকেও তার সন্তানের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে না। আর উত্তরাধিকারীরও অনুরূপ কর্তব্য। কিন্তু যদি তারা পরস্পরে সম্মতি ও পরামর্শক্রমে স্তন্যপান বন্ধ রাখতে চায়, তবে তাদের কারো কোন অপরাধ নেই। আর যদি তোমরা (কোন ধাত্রী দ্বারা) তোমাদের সন্তানদেরকে স্তন্য পান করাতে চাও, তাহলে যদি তোমরা প্রচলিত বিধি মোতাবেক বিনিময় দিয়ে দাও তবে তোমাদের কোন পাপ নেই। আর আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর এবং জেনে রাখ, তোমরা যা কর নিশ্চয় আল্লাহ তা প্রত্যক্ষকারী।

এই আয়াতে দুধপানের মাসআলা বর্ণিত হয়েছে। এখানে প্রথম যে কথাটি বলা হয়েছে তা হল, যে ব্যক্তি দুধপানের নির্ধারিত সময় পুরা করতে চায়, সে পূর্ণ দু’বছর দুধ পান করাবে। এই শব্দগুলো থেকে এ কথাও ফুটে উঠে যে, দু’বছরের কমও দুধ পান করাতে পারে। আর দ্বিতীয় যে কথাটি জানা যায় তা হল, দুধপানের সর্বাধিক সময়সীমা হল, দু’বছর।

﴿وَوَصَّيْنَا الْإِنسَانَ بِوَالِدَيْهِ حَمَلَتْهُ أُمُّهُ وَهْنًا عَلَىٰ وَهْنٍ وَفِصَالُهُ فِي عَامَيْنِ أَنِ اشْكُرْ لِي وَلِوَالِدَيْكَ إِلَيَّ الْمَصِيرُ﴾

-আর   প্রকৃতপক্ষে আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার হক চিনে নেবার জন্য নিজেই তাকিদ করেছি৷ তার মা দুর্বলতা সহ্য করে তাকে নিজের গর্ভে ধারণ করে এবং দু’বছর লাগে তার দুধ ছাড়তে ৷  (এ জন্য আমি তাকে উপদেশ দিয়েছি) আমার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো এবং নিজের পিতা-মাতার প্রতিও, আমার দিকেই তোমাকে ফিরে আসতে হবে৷সূরা লুকমানঃ১৪

যারা আড়াই বছরের কথা বলেন, সেটার রেফারেন্স দেন—

﴿وَوَصَّيْنَا الْإِنسَانَ بِوَالِدَيْهِ إِحْسَانًا ۖ حَمَلَتْهُ أُمُّهُ كُرْهًا وَوَضَعَتْهُ كُرْهًا ۖ وَحَمْلُهُ وَفِصَالُهُ ثَلَاثُونَ شَهْرً

আমি মানুষ এই মর্মে নির্দেশনা দিয়েছি যে, তারা যেন পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করে৷ তার মা কষ্ট করে তাকে গর্ভে ধারণ করেছিলো এবং কষ্ট করেই তাকে প্রসব করেছিলো৷ তাকে গর্ভে ধারণ ও দুধপান করাতে ত্রিশ মাস লেগেছে৷আহকাফঃ১৫

এ আয়াতে সূরা লোকমানের ১৪ আয়াত এবং সূরা বাকারার ২৩৩ আয়াতে থেকে আরো একটি আইনগত বিষয় পাওয়া যায়৷ একটি মামলায় হযরত আলী ও হযরত ইবনে আব্বাস সেই বিষয়টিই তুলে ধরেছিলেন এবং তার ওপর ভিত্তি করে হযরত উসমান (সা) তাঁর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছিলেন৷ ঘটনাটা হচেছ, হযরত উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর খিলাফত যুগে এক ব্যক্তি জুহায়না গোত্রের একটি মেয়েকে বিয়ে করে এবং বিয়ের ছয় মাসের মধ্যেই তার গর্ভ থেকে একটি সুস্থ ও ক্রটিহীন শিশু ভুমিষ্ঠ হয়৷ লোকটি হযরত উসমানের কাছে ঘটনাটা পেশ করে৷ তিনি উক্ত মহিলাকে ব্যভিচারিনী ঘোষনা করে তাকে রজম করার নির্দেশ দেন৷ হযরত আলী (রা) এই ঘটনা শোনা মাত্র হযরত উসমানের (রা) কাছে পৌঁছেন এবং বলেন : আপনি এ কেমন ফায়সালা করলেন? জবাবে হযরত উসমান বললেন, বিয়ের ছয় মাস পরেই সে জীবিত ও সুস্থ সন্তান প্রসব করেছে৷ এটা কি তার ব্যভিচারিনী হওয়ার সুস্পষ্ট প্রমাণ নয়? হযরত আলী (রা) বললেন : না এর পর তিনি কুরআন মজীদের উপরোক্ত আয়াত তিনটি ধারাবাহিভাবে পাঠ করলেন৷ সূরা বাকারায় আল্লাহ বলেছেন : “যে পিতা দুধ পানের পূর্ণ সময় পর্যন্ত দুধ পান করাতে চায় মায়েরা তার সন্তানকে পূর্ণ দুই বছর দুধ পান করাবে৷” সূরা লোকমানে বলেছেন : “তার দুধ ছাড়তে দুই বছর লেগেছে৷ সূরা আহক্বাফে বলেছেন : “তাকে গর্ভে ধারণ ও দুধ পান করাতে ত্রিশ মাস লেগেছে৷” এখন ত্রিশ মাস থেকে যদি দুধ পানের দুই বছর বাদ দেয়া হয় তাহলে গর্ভে ধারণকালে ছয় মাস মাত্র অবশিষ্ট থাকে৷ এ থেকে জানা যায়, গর্ভ ধারণের স্বল্পতম মেয়াদ ছয় মাস৷ এই সময়ের মধ্যে সুস্থ ও পূর্ণাঙ্গ বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হতে পারে৷ অতএব, যে মহিলা বিয়ের ছয় মাস পরে সন্তান প্রসব করেছে তাকে ব্যভিচারিনী বলা যায় না৷ হযরত আলীর (রা) এই যুক্তি-প্রমাণ শুনে হযরত উসমান বললেন : আমার মন-মস্তিষ্কে এ বিষয়টি আদৌ আসেনি৷ এরপর তিনি মহিলাটিকে ডেকে পাঠালেন এবং তাঁর সিদ্ধান্ত পরবর্তন করলেন৷ একটি বর্ণনাতে আছে, হযরত ইবনে আব্বাসও এ বিষয়ে হযরত আলীর মতকে সমর্থন করেছিলেন এবং তারপর হযরত উসমান তাঁর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেছিলেন৷ (ইবনে জারীর, আহকামুল কুরআন জাসসাস, ইবনে কাসীর)৷

এ তিনটি আয়াতে একত্রিত করে পাঠ করলে যেসব আইনগত বিধান পাওয়া যায় তা হচ্ছে :

এক : যে মহিলা বিয়ের পর ছয় মাসের কম সময়ের মধ্যে সুস্থ ও পূর্ণাঙ্গ সন্তান প্রসব করবে (অর্থাৎ তা যদি গর্ভপাত না হয়, বরং স্বাভাবিক প্রসব হয়) সে ব্যভিচারিনী সাব্যস্ত হবে এবং এবং তার স্বামীর বংশ পরিচয় তার সন্তান পরিচিত হবে না৷

দুই : যে মহিলা বিয়ের ছয় মাস পর বা তার চেয়ে বেশী সময় পর জীবিত ও সুস্থ সন্তান প্রসব করবে শুধু এই সন্তান প্রসব করার কারণে তাকে ব্যভিচারের অভিযুক্ত করা যাবে না৷ তার স্বামীকে তার প্রতি অপবাদ আরোপের অধিকার দেয়া যেতে পারে না এবং তার স্বামী ঐ সন্তানের বংশ পরিচয় অস্বীকার করতে পারে না৷ সন্তান তারই বলে স্বীকার করা হবে এবং মাহিলাকে শাস্তি দেয়া যাবে না৷

তিন : দুধপান করানোর সর্বাধিক মেয়াদ দুই বছর৷ এই বয়সের পর যদি কোন শিশু কোন মহিলার দুধ পান করে তাহলে সে তার দুধ মা হবে না এবং সূরা নিসার ২৩ আয়াতে দুধ পানের যে বিধি-বিধান বর্ণিত হয়েছে তাও এই ধরনের দুধপানের বেলায় প্রযোজ্য হবে না৷ এ ক্ষেত্রে ইমাম আবু হানীফা অধিক সতর্কতার জন্য দুই বছরের পরিবর্তে আড়াই বছরের মেয়াদ নির্ধারণ করেছেন যাতে দুধপান করানোর কারণে যে সব বিষয় হারাম হয় সেই সব নাজুক বিষয়ে ভুল করার সম্ভাবনা না থাকে৷ (অধিক ব্যাখ্যার জন্য দেখুন, তাফহীমুল কুরআন, সূরা লোকমান, টীকা ২৩)

এখানে এ বিষয়টির অবগতি বে-ফায়েদা হবে না যে, সর্বাধুনিক মেডিকেল গবেষণা অনুসারে একটি শিশুকে পরিপুষ্টি ও পরিবৃদ্ধি লাভ করে জীবন্ত ভূমিষ্ঠ হওয়ার উপযোগী হতে হলে কমপক্ষে ২৮ সপ্তাহ মাতৃগর্ভে অবস্থান প্রয়োজন৷ এটা সাড়ে ছয় মাস সময়কালে সামান্য বেশী৷ ইসলামী আইনে আরো প্রায় অর্ধ মাস সুযোগ দেয়া হয়েছে৷ কারণ, একজন মহিলার ব্যভিচারিনী প্রমাণিত হওয়া এবং একটি শিশুর বংশ পরিচয় থেকে বঞ্চিত হওয়া বড় গুরুতর ব্যাপার৷ মা ও শিশুকে আইনগত এই কঠিন পরিনাম থেকে রক্ষা করার জন্য বিষয়টির নাজুকতা আরো বেশি সুযোগ পাওয়ার দাবী করে৷তাছাড়া গর্ভ কোন্‌ সময় স্থিতি লাভ করেছে তা কোন ডাক্তার, কোন বিচারক এবং এমনকি মহিলা নিজে এবং তাকে গর্ভাদানকারী পুরুষও সঠিকভাবে জানতে পারে না৷ এ বিষয়টিও গর্ভধারণেরা স্বল্পতম আইনগত মেয়াদ নির্ধারণ আরো কয়েক দিনের অবকাশ দাবী করে৷

শিশু অবস্থায় দু বছরের ভিতরে ছাড়া দুধপান বিবাহ হারাম সাব্যস্ত করে না) কাজেই দুধপানের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোন শিশু যদি কোন মহিলার ঐভাবে দুধ পান করে নেয়, যেভাবে পান করলে দুধপান সাব্যস্ত হয়, তাহলে তাদের মধ্যে দুধপানের সম্পর্ক স্থাপিত হয়ে যাবে এবং দুধ ভাই-বোনদের মধ্যে আপোসের বিবাহ ঐরূপ হারাম হয়ে যাবে, যেরূপ রক্তের সম্পর্কের ভাই-বোনদের সাথে হারাম। মহানবী (সাঃ) বলেছেন, ‘‘দুধপানেও তা হারাম হয়, যা রক্তের সম্পর্কের কারণে হারাম হয়।’’ (বুখারী ২৬৪৫নং)

مَوْلُودٌ لَه বলতে পিতাকে বুঝানো হয়েছে। তালাক হয়ে যাওয়ার পর দুধের শিশু ও তার মায়ের দেখা-শোনার ব্যাপারটা আমাদের সমাজে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এর কারণ হল, শরীয়ত থেকে বিমুখতা। আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী স্বামী যদি তার সাধ্যমত তালাকপ্রাপ্তা মহিলার খাওয়া-পরার দায়িত্ব গ্রহণ করে যেভাবে এই আয়াতে বলা হচ্ছে, তাহলে অতি সহজেই সেই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।

মাতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করা বা কষ্ট দেওয়া যেমন, মা শিশুকে নিজের কাছে রাখতে চায়, কিন্তু মায়ের মমতার কোন পরোয়া না করে শিশুকে জোর করে তার কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া অথবা তার কোন ব্যয়ভার বহন না করে তাকে দুধ পান করাতে বাধ্য করা। আর পিতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করা বা কষ্ট দেওয়া যেমন, মায়ের দুধ পান করাতে অস্বীকার করা কিংবা তার (শিশুর পিতার) কাছ থেকে তার সাধ্যের বাইরে খরচ কামনা করা।

(শিশুর) পিতার মৃত্যু হয়ে গেলে তার উত্তরাধিকারীরা এই দায়িত্ব গ্রহণ করে মায়ের অধিকার সঠিকভাবে আদায় করবে, যাতে না মায়ের কোন কষ্ট হয়, আর না শিশুর লালন-পালনে কোন ব্যাঘাত ঘটে।

শিশুর মা ব্যতীত অন্য মহিলা দিয়েও দুধ পান করানোর অনুমতি আছে। তবে শর্ত হল, প্রচলিত নিয়মানুযায়ী এই মহিলারও পারিশ্রমিক আদায় করে দিতে হবে।

সম্মানিত ফকিহগণ উল্লেখ করেছেন যে, রাযআত বা দুগ্ধ পান এর কারণে বিবাহ হারাম হওয়ার বিষয়টি সাব্যস্ত হওয়ার জন্য কতিপয় শর্ত রয়েছে। সেগুলো হল:

  • ক. দু বছর বয়সের মধ্যে শিশুর দুধ পান করা।
  • খ. কমপক্ষে পাঁচ বার তৃপ্তি সহকারে দুধ পান করা।
  • গ. পাঁচ বার দুধ পান করার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া।
  • ঘ. দুধ শিশুর পাকস্থলী পর্যন্ত পৌঁছা।
  • ঙ. এবং এ বিষয়ে কমপক্ষে একজন বিশ্বস্ত মহিলা সাক্ষ্য প্রদান করা।

প্রশ্ন : আমার ছেলের বয়স তিন বছর। এখনো সে মায়ের বুকের দুধ খায়। আমি জানতে চাই, মায়ের বুকে যদি দুধ থাকে এবং সন্তান যদি খেতে চায়, তাহলে সর্বোচ্চ কত দিন খেতে পারবে?

উত্তর : দুধ সন্তানকে আপনি দিতে পারেন। তবে উত্তম হচ্ছে যেটা, সেটা হলো, দুই বছর পর সন্তানের দুধ ছাড়িয়ে ফেলা। যেহেতু আল্লাহ সুবহানওয়াতায়ালা কোরআনে কারিমের মাধ্যমে দুধপানের সময় দুই বছর বলে দিয়েছেন। এখানে পিতামাতার অতি আবেগের কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ, এটি সন্তানের জন্য খুব বেশি উপকারী হবে না। অর্থাৎ সন্তানের জন্য এই দুধ দান খুব একটা উপকারী হবে না। তাই যেটা সন্তানের জন্য উপযোগী, যেটা উপাদেয়, যেটা স্বাস্থ্যকর, সেটাই আল্লাহু রাব্বুল আলামিন বিধান দিয়েছেন। সুতরাং এ ক্ষেত্রে আপনার উচিত হচ্ছে সন্তানের দুধ ছাড়িয়ে নেওয়া। এটাই ইসলামের বিধান।

তবে যদি দুধ থাকে, সন্তান পান করলে তা হারাম হবে না। সে পান করতে পারবে। তবে যেহেতু সন্তানের বয়স তিন বছর হয়ে গেছে, যত দ্রুত সম্ভব আপনার উচিত সন্তানের দুধ ছাড়ানোর চেষ্টা করা।

– ড. মুহাম্মাদ সাইফুল্লাহ

প্রশ্ন: কোনও নারী তার স্বামীর অনুমতি ব্যতীত কোনও এতিম শিশুকে নিজের দুধ পান করাতে পারবেন কি?

উত্তর:

এ বিষয়ে আলেমগণ বলেছেন, স্ত্রী যদি বুঝতে পারে যে, তার স্বামী তা পছন্দ করবে না তাহলে তার সম্মতি ছাড়া অন্যের সন্তানকে দুধ পান করাতে পারবে না। কারণ সে তার স্বামীর ভরণ-পোষণের উপর নির্ভরশীল। সুতরাং তার স্তনের দুধ স্বামীর অনুমতি ছাড়া অন্যকে দেয়া যাবে না। তাছাড়া অন্যের সন্তানকে দুধ পান করানোর ফলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্বামী স্ত্রীর নিকট তার হক থেকে বঞ্চিত হবে। যেমন: দুগ্ধ দানে ব্যস্ততার কারণে সে সময় তাকে কাছে না পাওয়া বা সংসারের কাজকর্মে ব্যাঘাত সৃষ্টি হওয়া ইত্যাদি।

তবে যদি বিশেষ পরিস্থিতিতে কোন অসহায় শিশুকে দুধ পান করানোর মত বিকল্প কোনও ব্যবস্থা না থাকে তাহলে জীবন রক্ষার্থে স্বামীর অনুমতি ছাড়াও দুধ পান করানো যাবে ইনশাআল্লাহ।

◆ ’যাদুল মুস্তাকনা’ শীর্ষক বিখ্যাত হাম্বলি ফিকাহের কিতাবে বলা হয়েছে,

وله منعها من إجارة نفسها ، ومن إرضاع ولدها من غيره إلا لضرورته .

”স্বামীর অধিকার আছে, স্ত্রীকে ভাড়া খাটা (অর্থের বিনিময়ে শ্রম দেয়া) এবং জরুরি প্রয়োজন ছাড়া অন্যের সন্তানকে দুধ পানের ক্ষেত্রে বাধা দেয়ার।”

قال الشيخ ابن عثيمين رحمه الله في شرحه : ” ويكون هذا بأن تكون امرأة طلقها زوجها الأول وهي حامل ، فتنتهي العدة بوضع الحمل ويتزوجها آخر، وهي لا تزال ترضع الولد ، فللزوج الثاني أن يمنعها من إرضاع ولدها من الزوج الأول ، إلا في حالين :

الأولى : الضرورة ، بأن لا يقبل هذا الطفل ثديا غير ثدي أمه ، فيجب إنقاذه .

الثانية : أن تشترط ذلك على زوجها الثاني ، فإذا وافق لزمه ” انتهى من “الشرح الممتع” (12/ 426)

◆ ’রদ্দুল মুহতার’ শীর্ষক বিখ্যাত হানাফি ফিকাহ গ্রন্থে বলা হয়েছে, “স্বামীর অনুমতি ছাড়া অন্যের বাচ্চাকে দুধ পান করানো জায়েজ নেই। হ্যাঁ, শিশুটি যদি দুধের তৃষ্ণায় ছটফট করতে থাকে এবং মারা যাবার আশংকা থাকে, তাহলে অনুমতি ছাড়াই দুধ পান করাতে পারবে।”

◯ উল্লেখ্য যে, কোনও নারী যদি অন্যের শিশুকে দু বছর বয়সের মধ্যে কমপক্ষে ৫ বার তৃপ্তি সহকারে দুধ পান করায় তাহলে দুগ্ধ পানকারী সন্তানের সাথে দুগ্ধ দান করিনি নারী, তার স্বামী ও সন্তানদের মাঝে মাহরামিয়াতের সম্পর্ক (বিয়ে নিষিদ্ধ) সাব্যস্ত হয়। (এ বিষয়ে বিস্তারিত পড়ুন নিম্নে প্রদত্ব লিংক থেকে)

সুতরাং দুধ পান করালে সে ব্যাপারে সাক্ষ্য রাখা, লোকজনকে জানানো বা বিষয়টি স্পষ্টভাবে লিখিত রাখা জরুরি-যেন ভবিষ্যতে সম্পর্কগত হালাল-হারামের মত স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কোনও ধরণের অস্পষ্টতা বা সংশয় সৃষ্টি না হয়।

والواجب على النساء أن لا يرضعن كل صبي من غير ضرورة، وإذا أرضعن فليحفظن ذلك وليشهرنه ويكتبنه احتياطا اهـ

-الدر المختار وحاشية ابن عابدين (رد المحتار) – دار الفكر-بيروت (3/ 212)

আল্লাহু আলাম। -আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল. দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।

প্রশ্ন: এক ছেলে শিশু তার মা মারা যাওয়ার কারণে নানীর দুধ পান করেছে। এখন প্রশ্ন হল, উক্ত ছেলেটির জন্য বড় হওয়ার পর তার মামাতো বোনকে বিবাহ করা বৈধ হবে কি?

উত্তর:

কোনও শিশু যদি দু বছরের বয়সের মধ্যে কমপক্ষে পাঁচবার কোন মহিলার দুধ পান করে তাহলে দুধ দানকারীনী মহিলা দুধ মা, তার স্বামী পিতা এবং তার সন্তানগণ তার দুধ ভাইবোন হিসেবে সাব্যস্ত হবে। এমনকি তাদের ঊর্ধ্বতন পুরুষ-নারীগণ (যত উপরেই যাক না কেন) এবং নিম্নস্তরের সন্তান-সন্ততিগণ (যত নিম্নস্তরেই যাক না কেন) তার জন্য মাহরাম হিসেবে সাব্যস্ত হবে। অর্থাৎ উপরোক্ত ব্যক্তিদের সাথে চিরতরে তার বিবাহ বন্ধন হারাম হয়ে যাবে এবং তাদের পরস্পরে পর্দা করা আবশ্যক নয়।

কেননা সহীহ বুখারীর বর্ণনায় এসেছে-

٢٦٤٥ -حَدَّثَنَا مُسْلِمُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، حَدَّثَنَا هَمَّامٌ، حَدَّثَنَا قَتَادَةُ، عَنْ جَابِرِ بْنِ زَيْدٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي بِنْتِ حَمْزَةَ: «لاَ تَحِلُّ لِي، يَحْرُمُ مِنَ الرَّضَاعِ مَا يَحْرُمُ مِنَ النَّسَبِ، هِيَ بِنْتُ أَخِي مِنَ الرَّضَاعَةِ –

ইবনে আব্বাস (রা.) হযরত হামজা (রা.) এর কন্যাকে বিবাহের বিষয়ে রাসূল (সা.) কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, তাকে বিবাহ করা তোমার জন্য বৈধ না। কেননা দুধ পান করার দ্বারা যেমন বিবাহ হারাম হয়, তেমনি বংশের কারণেও হারাম হয়, আর হামজা (রা.) এর কন্যা তোমার দুধবোন। (বুখারী-৩/১৭০, হাদীস-২৬৪৫।)

অর্থাৎ বংশগত সম্পর্কের কারণে যা হারাম দুধ পান করার মাধ্যমেও তা হারাম হবে।

সুতরাং কোন সন্তান যদি নানীর দুধ পান করে থাকে তাহলে উক্ত নানীর ঊর্ধ্বতন পুরুষ-নারীগণ এবং তার নিম্নস্তরের পুরুষ-নারীগণ তার জন্য হারাম বলে সাব্যস্ত হবে। যেমন, নানীর ছেলে অর্থাৎ মামা, মামার সন্তানগণ, মামার সন্তানদেরদের সন্তানগণ….অনুরূপভাবে নানীর মেয়ে অর্থাৎ তার খালা..খালার সন্তানগণ..খালার সন্তানদের সন্তানগণ…..এভাবে নিচের দিকে যতদূর যাক।

আল্লাহু আলাম▪▪▪▪▪▪▪▪ উত্তর প্রদানে: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল

জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব

প্রশ্ন: আমার পরিচিত এক ভাইয়ের দাম্পত্য জীবন আজ আট বছর প্রায়। তার স্ত্রী সম্পর্কে আপন খালাতো বোন। তাদের তিন বছরের একটি কন্যা সন্তানও রয়েছে। কিন্তু বর্তমান সময়ে জানা গেছে যে, বিশেষ প্রয়োজনে বা নিরুপায় হয়ে আমার সেই ভাইয়ের মা’ র দুগ্ধ পান করেছিলো তার উক্ত খালাতো বোন বর্তমানে যে তার স্ত্রী। তাদের বিয়ের সময় অভিভাবকদের অজ্ঞতা হোক বা ধর্মীয় জ্ঞানের অভাবের কারণেই হোক বিষয়টি তখন দৃষ্টিগোচর হয় নি। কিন্তু বর্তমানে বিষয়টি জানাজানি হয়েছে। ইসলাম এক্ষেত্রে কী বলে? পুনরায় উল্লেখ করা যাচ্ছে যে, তাদের তিন বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।

তাই এক্ষেত্রে ইসলামের শরিয়ত অনুযায়ী সঠিক করণীয় বলে দিলে বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ থাকবো।

উত্তর:

ইসলামের দৃষ্টিতে দুধ ভাই-বোনের মাঝে বিবাহ বন্ধন চিরকালের জন্য হারাম। কেননা আল্লাহ তাআলা যে সকল মহিলার সাথে বিবাহ বন্ধন হারাম করেছেন সেগুলোর মধ্য একজন হল, দুধবোন। যেমন: আল্লাহ বলেন,

وَأُمَّهَاتُكُمُ اللَّاتِي أَرْضَعْنَكُمْ وَأَخَوَاتُكُم مِّنَ الرَّضَاعَةِ

“(তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে) তোমাদের সে মা’ দেরকে যারা তোমাদেরকে দুধ পান করিয়েছে (দুধ মাগণ) এবং তোমাদের দুধ বোনদেরকে।” (সূরা নিসা: ২৩)

এ ব্যাপারে একাধিক সহিহ হাদিসও বিদ্যমান রয়েছে।

সুতরাং যদি কোন পুরুষ এবং নারী নির্দিষ্ট কতিপয় শর্ত সাপেক্ষে একই মায়ের ‘দুধ পান’ করেছে বলে সাব্যস্ত হয় তাহলে তাদের মাঝে বিবাহ বন্ধন চিরকালের জন্য হারাম।

সম্মানিত ফকিহগণ উল্লেখ করেছেন যে, রাযআত বা দুগ্ধ পান এর কারণে বিবাহ হারাম হওয়ার বিষয়টি সাব্যস্ত হওয়ার জন্য কতিপয় শর্ত রয়েছে। সেগুলো হল:

  • ক. দু বছর বয়সের মধ্যে শিশুর দুধ পান করা।
  • খ. কমপক্ষে পাঁচ বার তৃপ্তি সহকারে দুধ পান করা।
  • গ. পাঁচ বার দুধ পান করার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া।
  • ঘ. দুধ শিশুর পাকস্থলী পর্যন্ত পৌঁছা।
  • ঙ. এবং এ বিষয়ে কমপক্ষে একজন বিশ্বস্ত মহিলা সাক্ষ্য প্রদান করা। (এ বিষয়ে বিস্তারিত আলাদা একটি পোস্ট দেয়া হবে ইনশাআল্লাহ)

যদি উপরোক্ত শর্তাবলী অনুযায়ী কোন শিশু কোন মহিলার দুধ পান করেছে বলে সাব্যস্ত হয় তাহলে তাদের মাঝে রাযআত বা দুধ পান জনিত কারণে মাহরামিয়াত সাব্যস্ত হবে। অর্থাৎ উক্ত শিশুর সাথে ওই মহিলা ও তার স্বামীর সাথে সম্পর্ক হবে হুবহু নিজের জন্মদাতা পিতামাতার অনুরূপ এবং তাদের সন্তানাদির সাথে সম্পর্ক হবে হুবহু জন্মসূত্রের ভাই-বোনের অনুরূপ। অর্থাৎ তাদের মাঝে পর্দা করা আবশ্যক নয় এবং তাদের মাঝে চিরতরে বিবাহ বন্ধন হারাম। (এতে সম্পদের উত্তরাধিকার সাব্যস্ত হবে না।)

কিন্তু যদি কোনো পুরুষ ও নারীর মাঝে বিয়ে সংঘটিত হওয়ার পরে জানা যায় যে, তারা শিশুকালে একই মায়ের দুধ পান করেছিলো (এবং তা যথাযথ শর্তাবলীর আলোকে সুসাব্যস্ত হয়) তাহলে সাথে সাথে তাদের বিয়ে বাতিল বলে গণ্য হবে এবং তাদেরকে তৎক্ষণাৎ পৃথক হতে হয়ে যেতে হবে।

নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগেও এমন একটি ঘটনা ঘটেছিলো। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে, তিনি তাদেরকে আলাদা করে দেন। এ মর্মে হাদিস হল:

عَنْ عُقْبَةَ بْنِ الْحَارِثِ، أَنَّهُ تَزَوَّجَ ابْنَةً لأَبِي إِهَابِ بْنِ عَزِيزٍ، فَأَتَتْهُ امْرَأَةٌ فَقَالَتْ قَدْ أَرْضَعْتُ عُقْبَةَ وَالَّتِي تَزَوَّجَ‏.‏ فَقَالَ لَهَا عُقْبَةُ مَا أَعْلَمُ أَنَّكِ أَرْضَعْتِنِي وَلاَ أَخْبَرْتِنِي‏.‏ فَأَرْسَلَ إِلَى آلِ أَبِي إِهَابٍ يَسْأَلُهُمْ فَقَالُوا مَا عَلِمْنَا أَرْضَعَتْ صَاحِبَتَنَا‏.‏ فَرَكِبَ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم بِالْمَدِينَةِ فَسَأَلَهُ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ كَيْفَ وَقَدْ قِيلَ ‏”‏‏.‏ فَفَارَقَهَا، وَنَكَحَتْ زَوْجًا غَيْرَهُ‏.‏

উকবা ইবনে হারিস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি আবু ইহাব ইবনে আজিজের কন্যাকে বিবাহ করলেন। পরে এক মহিলা এসে বলল, আমি তো উকবাহ এবং যাকে সে বিয়ে করেছে দু জনকেই দুধ পান করিয়েছি। উকবাহ রা. তাকে বললেন, এটা তো আমার জানা নেই যে, আপনি আমাকে দুধ পান করিয়েছেন আর আপনিও এ বিষয়ে আমাকে অবহিত করেন নি।

অতঃপর আবু ইহাব পরিবারের নিকট লোক পাঠিয়ে তিনি তাদের নিকট জানতে চাইলেন। তারা বলল, সে আমাদের মেয়েকে দুধ পান করিয়েছে বলে তো আমাদের জানা নেই। তখন তিনি মদিনার উদ্দেশে সওয়ার হলেন এবং নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: “যখন এরূপ বলা হয়েছে তখন এ (বিবাহ) কিভাবে সম্ভব?”

অত:পর উকবাহ রা. তাকে ত্যাগ করলেন। আর সে অন্য জনকে বিয়ে করল।

(সহিহ বুখারি, অধ্যায়: সাক্ষ্যদান, অনুচ্ছেদ: ৫২/৪. অধ্যায়: এক বা একাধিক ব্যক্তি কোন বিষয়ে সাক্ষ্য প্রদান করলে আর অন্যরা এ বিষয়ে অজ্ঞতা প্রকাশ করলে সাক্ষ্য দাতার কথা অনুযায়ী ফায়সালা হবে।)

অজ্ঞতা বশত: এমন বিয়ে হওয়ার পর যদি তাদের সন্তান হয় তাহলে তা পিতার সন্তান হিসেবে গণ্য হবে এবং সন্তান হিসেবে বাবার মৃত্যুর পর সে উত্তরাধিকারী সম্পদ ভাগ পাবে। কারণ এখানে বিবাহটি ছিল শুবহা তথা সংশয়পূর্ণ। (যা অজ্ঞতাবশত সংঘটিত হয়েছিল)

এ কথাই বলেছেন ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহ.। তিনি বলেন:

فإن المسلمين متفقون على أن كل نكاح اعتقد أنه نكاح سائغ إذا وطئ فيه فإنه يلحقه فيه ولده ويتوارثان باتفاق المسلمين، وإن كان ذلك النكاح باطلاً في نفس الأمر باتفاق المسلمين. انتهى

আর যেহেতু বিষয়টি তাঁদের অজানা বশত: হয়েছিল সেহেতু ইনশাআল্লাহ তারা গুনাহগার হবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন:

رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَا إِنْ نَسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا

“হে আমাদের পালনকর্তা, যদি আমরা ভুলে যাওয়ার কারণে কিংবা অনিচ্ছাবশত: অন্যায় করে ফেলি তবে আমাদেরকে অপরাধী করো না।” (সূরা বাকারা: ২৮৬)

আল্লাহু আলাম।

উত্তর প্রদানে:আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল

 

প্রশ্ন

আমার জমজ বাচ্চা আছে। তাদের বয়স পাঁচ মাস। আমার বুকের দুধ কম হওয়ায় শুধু বুকের দুধে তাদের খাদ্য হয় না। পাশাপাশি তারা কৃত্রিম দুধও খায়। কিন্তু আমি আশংকা করছি, রোযা রাখলে আমার দুধ আরও কমে যাবে। এতে করে আমি তাদেরকে দুধ খাওয়াতে পারব না। ফলে এ অল্প বয়সেই তারা বুকের দুধ খাওয়া ছেড়ে দিবে। এমতাবস্থায়, আমার জন্যে রোযা ভাঙ্গা কি জায়েয হবে?

উত্তর আলহামদু লিল্লাহ।.

এক:

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সাব্যস্ত হয়েছে যে, তিনি বলেন: “নিশ্চয় আল্লাহ্‌ তাআলা মুসাফিরের উপর থেকে অর্ধেক নামায শিথিল করেছেন। এবং মুসাফির, গর্ভবতী নারী ও স্তন্যদায়ী নারীর উপর থেকে সাওম (রোযা) বা সিয়াম শিথিল করেছেন।”[সুনানে আবু দাউদ (২৪০৮), সুনানে তিরমিযি (৭১৫), সুনানে নাসাঈ (২২৭৫), সুনানে ইবনে মাজাহ (১৬৬৭), আলবানি ‘সহিহ আবু দাউদ’ গ্রন্থে ‘হাসান সহিহ’ বলেছেন]

যদিও বাহ্যতঃ এই হাদিসটিতে ‘গর্ভবতী নারী ও স্তন্যদায়ী নারী’-র ক্ষেত্রে কোন শর্তারোপ করা হয়নি, কিন্তু হাদিসটির অর্থ শর্তযুক্ত। শর্তটি হচ্ছে- যদি তারা নিজেদের জীবন কিংবা সন্তানের জীবনের ব্যাপারে আশংকাবোধ করে।

সিন্দি কর্তৃক রচিত সুনানে ইবনে মাজাহ-এর হাশিয়াতে (১/৫১২) এসেছে: গর্ভবতী নারী ও স্তন্যদায়ী নারী: অর্থাৎ তারা উভয়ে যদি গর্ভস্থিত সন্তান কিংবা দুগ্ধপোষ্য সন্তানের ব্যাপারে আশংকা করেন কিংবা তাদের নিজেদের জীবনের ব্যাপারে আশংকা করেন।[সমাপ্ত]

আল-জাস্‌সাস তাঁর ‘আহকামুল কুরআন’ গ্রন্থে (১/২৪৪) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: ‘নিশ্চয় আল্লাহ্‌ তাআলা মুসাফিরের উপর থেকে অর্ধেক নামায শিথিল করেছেন। এবং মুসাফির, গর্ভবতী নারী, স্তন্যদায়ী নারীর উপর থেকে সাওম (রোযা) বা সিয়াম শিথিল করেছেন’ উল্লেখ করার পর বলেন: “এটা জ্ঞাত যে, তাদের জন্য (অর্থাৎ গর্ভবতী নারী ও স্তন্যদায়ী নারী) এ শিথিলায়ন তাদের জীবনের উপর আশংকা কিংবা তাদের সন্তানের জীবনের উপর আশংকার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।”। তিনি অন্যত্র (১/২৫২) বলেন: “গর্ভবতী নারী ও স্তন্যদায়ী নারীর ক্ষেত্রে; হয়তো রোযা তাদের নিজেদের স্বাস্থ্যহানি করবে কিংবা তাদের সন্তানের স্বাস্থ্যহানি করবে। যেটাই হোক না কেন তাদের উভয়ের জন্য রোযা না-থাকা উত্তম। রোযা রাখা তাদের জন্য নিষিদ্ধ। আর যদি তাদের স্বাস্থ্যহানি না করে কিংবা তাদের সন্তানের স্বাস্থ্যহানি না করে তাহলে তাদের উপর রোযা রাখা ফরয। রোযা না-রাখা নাজায়েয।”[সমাপ্ত]

আলেমগণ তাদের ভাষ্যগুলোতে এ শর্তটি উল্লেখ করেছেন। বরং এ শর্তের উপর আলেমগণের ঐক্যমত্য বর্ণিত হয়েছে; যেমনটি ইতিপূর্বে 66438 নং প্রশ্নোত্তরে আমরা বিস্তারিত বর্ণনা করেছি।

এ আলোচনার প্রেক্ষিতে বলব

যদি রোযা রাখার কারণে আপনি আপনার সন্তানের স্বাস্থ্যহানির আশংকা করেন, যেমন- দুধ শুকিয়ে যাওয়া কিংবা দুধ এমন কমে যাওয়া যাতে তাদের ক্ষতি হবে সেক্ষেত্রে আপনি রোযা না-রাখতে কোন অসুবিধা নেই। অনুরূপভাবে, আপনি যদি নিজের ব্যাপারে আশংকাবোধ করেন যে, আপনি যদি রোযা রেখে দুধ খাওয়ান সেক্ষেত্রে আপনার এমন কষ্ট হবে যা এমন ক্ষেত্রে সম্ভাব্য কষ্টের অধিক কিংবা আপনার স্বাস্থ্যহানির আশংকা করেন তাহলেও আপনার রোযা না-রাখতে কোন অসুবিধা নেই।

আর যদি আপনার প্রবল ধারণা হয় যে, রোযা রাখার কারণে দুধে যে ঘাটতি হবে সেটা বাচ্চাদ্বয়ের প্রয়োজনীয় পরিমাণ দুধ পানের উপর কোন নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না সেক্ষেত্রে রোযা না-রাখা বৈধ হবে না। বিশেষতঃ এ সামান্য ঘাটতি যদি কৃত্রিম দুধের মাধ্যমে পূরণ করা যায়

ইমাম শাফেয়ি-র ‘আল-উম্ম’ কিতাবে (২/১১৩) এসেছে: “গর্ভবতী নারী যদি নিজ সন্তানের জীবনের উপর আশংকা করেন তাহলে রোযা থাকবেন না। অনুরূপ বিধান স্তন্যদায়ী নারীর ক্ষেত্রেও; যদি রোযা তার দুধের উপর ব্যাপক ক্ষতি করে। আর যদি ক্ষতিটা সীমিত হয় তাহলে রোযা ছাড়বেন না। রোযা সাধারণত রোগ বৃদ্ধি করে; কিন্তু এটা সীমিত বৃদ্ধি। রোযা দুধে ঘাটতি করে; কিন্তু সীমিত ঘাটতি। আর যদি রোগবৃদ্ধি ও দুধ-ঘাটতি ব্যাপকভাবে ঘটে থাকে তাহলে তারা উভয়ে রোযা রাখবেন না।”[সমাপ্ত

দুই:

যদি কোন স্তন্যদায়ী নারী নিজ সন্তানের উপর আশংকা করে রোযা ভেঙ্গে থাকে তার উপর কী বর্তাবে এ নিয়ে আলেমগণ মতভেদ করেছেন:

‘আল-মাওসুআ আল-ফিকহিয়্যা আল-কুওয়াইতিয়্যা’ গ্রন্থে (৩২/৬৯) এসেছে:

“যদি তারা উভয়ে তাদের সন্তানের উপর আশংকা করে রোযা না রাখেন সে ব্যাপারে আলেমগণ মতভেদ করেছেন। শাফেয়ি মাযহাবের প্রকাশ্য বক্তব্য, হাম্বলি মাযহাব ও মুজাহিদের মতে, তাদের উভয়কে কাযা পালন করতে হবে এবং প্রত্যেক দিন একজন মিসকীন খাওয়াতে হবে। যেহেতু তারা উভয়ে আল্লাহ্‌র নিম্নোক্ত বাণীর সাধারণ হুকুমের অধীনে পড়ে: “আর যাদের জন্য সিয়াম কষ্টসাধ্য তাদের কর্তব্য এর পরিবর্তে ফিদিয়া দেয়া তথা একজন মিসকীনকে খাদ্য দান করা।”।[সূরা বাকারা ২: ১৮৪] ইতিপূর্বে ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত এ আয়াতের তাফসির উল্লেখ করা হয়েছে।

ইবনে কুদামা বলেন: এ ধরণের তাফসির ইবনে উমর (রাঃ) থেকেও বর্ণিত হয়েছে। সাহাবীদের মাঝে তাঁদের দুইজনের সাথে ইখতিলাফকারী কেউ নেই। তাছাড়া যেহেতু শারীরিক অক্ষমতার কারণে এ রোযা না-রাখার বিষয়টি ঘটেছে। তাই বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তির হুকুমের ন্যায় কাফ্‌ফারা আদায় করা ফরয হবে।

হানাফি মাযহাবের আলেমগণ, আতা বিন আবি রাবাহ, হাসান, দাহ্‌হাক, নাখায়ি, সাঈদ বিন জুবাইর, যুহরি, রাবিআ, আওযায়ি, ছাওরি, আবু উবাইদ, আবু ছাওর এবং শাফেয়ি আলেমগণের অপর এক মতে: উভয়ের উপর ফিদিয়া ফরয হবে না; বরং তাদের ফিদিয়া দেয়া মুস্তাহাব হবে। দলিল হল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: “নিশ্চয় আল্লাহ্‌ তাআলা মুসাফিরের উপর থেকে অর্ধেক নামায শিথিল করেছেন। এবং মুসাফির, গর্ভবতী নারী, স্তন্যদায়ী নারীর উপর থেকে সাওম (রোযা) বা সিয়াম শিথিল করেছেন।

আর মালেকি মাযহাব ও লাইছ এর মতানুযায়ী (এটি শাফেয়ি মাযহাবেরও তৃতীয় একটি মত): গর্ভবতী নারী রোযা ভাঙ্গবেন; পরবর্তীতে কাযা পালন করবেন; তবে তাকে কোন ফিদিয়া দিতে হবে না। আর স্তন্যদায়ী নারীও রোযা ভাঙ্গবেন; পরবর্তীতে কাযা পালন করবেন এবং ফিদিয়া দিবেন। কেননা স্তন্যদায়ী নারী অন্য কারো মাধ্যমে তার সন্তানকে দুধ পান করাতে পারেন; যেটা গর্ভবতী নারী পারেন না। তাছাড়া গর্ভস্থিত সন্তান গর্ভবতী নারীর সাথে একীভূত। তাই গর্ভের সন্তানের জন্য আশংকা তার কোন একটি অঙ্গের জন্য আশংকার ন্যায়। তাই গর্ভবতী নারী তার নিজের মধ্যস্থিত একটি কারণের প্রেক্ষিতে রোযা ভেঙ্গেছেন; এ ক্ষেত্রে তিনি অসুস্থ ব্যক্তির মত। আর স্তন্যদায়ী নারী তার থেকে বিচ্ছিন্ন একটি কারণের প্রেক্ষিতে রোযা ভেঙ্গেছেন; এজন্য তার উপর ফিদিয়া ফরয হবে।

সলফে সালেহিনদের কেউ কেউ যেমন- ইবনে উমর (রাঃ), ইবনে আব্বাস (রাঃ), সাঈদ বিন জুবাইর (রাঃ) এর অভিমত হচ্ছে- তারা উভয়ে রোযা ভাঙ্গবেন এবং মিসকীন খাওয়াবেন। তাদেরকে কাযা রোযা পালন করতে হবে না।[সমাপ্ত

অগ্রগণ্য অভিমত হচ্ছে- সঠিক জ্ঞান আল্লাহর কাছে- তাদেরকে শুধু কাযা রোযা পালন করতে হবে

শাইখ উছাইমীন (রহঃ) কে জিজ্ঞেস করা হয়: যদি গর্ভবতী নারী ও স্তন্যদায়ী নারী শক্তিশালী ও কর্মঠ হওয়া সত্ত্বেও কোন ওজর ছাড়া রোযা না রাখেন; যদিও রোযা রাখলে তাদের উপর শারীরিক কোন প্রভাব পড়বে না? জবাবে তিনি বলেন: কোন গর্ভবতী বা স্তন্যদায়ী নারীর জন্য ওজর ছাড়া রমযানের দিনের বেলা রোযা না-রাখা জায়েয হবে না। যদি তারা ওজরের কারণে রোযা না-রাখেন তাহলে কাযা পালন করা তাদের উপর ফরয। যেহেতু আল্লাহ্‌ তাআলা বলেছেন: “আর কেউ অসুস্থ থাকলে কিংবা সফরে থাকলে সে অন্য দিনগুলোতে এ সংখ্যা পূরণ করবে।”[সূরা বাকারা ২:১৮৫] এ দুই শ্রেণীর নারী অসুস্থ শ্রেণীর আওতায় পড়ে।

আর যদি তাদের ওজর হয় যে, তাদের সন্তানের উপর আশংকা; সেক্ষেত্রে কোন কোন আলেমের মতানুযায়ী তাদের উপর কাযা ফরয হওয়ার সাথে সাথে প্রতিদিনের বদলে একজন মিসকীনকে দেশীয় খাদ্য যেমন- গম, চাল বা খেজুর ইত্যাদি খাদ্য দান করা ফরয হবে। আর কোন কোন আলেমের মতে, সর্বাবস্থায় তাদের উপর রোযার কাযা পালন ছাড়া আর কিছু ফরয নয়। কেননা খাবার খাওয়ানো ফরয হওয়ার ব্যাপারে কুরআন-সুন্নাহর দলিল নেই। মূল অবস্থা হচ্ছে: বান্দা দায়-দায়িত্ব মুক্ত থাকা; যতক্ষণ না দায়-দায়িত্বের পক্ষে কোন দলিল পাওয়া যায়। এটি ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) এর মাযহাব এবং এটি শক্তিশালী অভিমত।”[ফাতাওয়াস সিয়াম, পৃষ্ঠা-১৬১]

শাইখ উছাইমীন (রহঃ) কে আরও জিজ্ঞেস করা হয় যে: যদি কোন গর্ভবতী নারী তার নিজ জীবনের বা সন্তানের জীবনের আশংকা করে রোযা না রাখেন সেক্ষেত্রে হুকুম কী?

জবাবে তিনি বলেন: এ প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে-

গর্ভবতী নারীর দুইটি অবস্থা হতে পারে:

১। গর্ভবতী নারী কর্মঠ ও শক্তিশালী হওয়া। (রোযা রাখার দ্বারা) তার কোন কষ্ট না হওয়া এবং তার গর্ভস্থিত সন্তানের উপর কোন প্রভাব না পড়া। এ নারীর উপর রোযা রাখা ফরয। কেননা রোযা বর্জন করার ক্ষেত্রে তার কোন ওজর নেই।

২। গর্ভবতী নারী রোযা রাখতে সক্ষম না হওয়া। গর্ভের কাঠিন্যের কারণে কিংবা শারীরিকভাবে দুর্বল হওয়ার কারণে কিংবা অন্য কোন কারণে। এক্ষেত্রে তিনি রোযা রাখবেন না। বিশেষত: যদি তার গর্ভস্থিত সন্তানের ক্ষতি হয় সেক্ষেত্রে রোযা না রাখা তার উপর ফরযও হতে পারে। যদি তিনি রোযা না রাখেন সেক্ষেত্রে তার বিধান অন্যসব লোকের মত যারা কোন ওজরের কারণে রোযা রাখতে পারেন না। তিনি যখন ঐ ওজর থেকে মুক্ত হবেন তখন রোযার কাযা পালন করা তার উপর ফরয। অর্থাৎ প্রসব করার পর ও নিফাস থেকে পবিত্র হওয়ার পর কাযা পালন করা তার উপর ফরয। কিন্তু, কখনও কখনও এক ওজর শেষ হয়ে অন্য ওজর দেখা দেয়। যেমন- গর্ভধারণ এর ওজর শেষ হওয়ার পর দুগ্ধপান করানোর ওজর। হতে পারে স্তন্যদায়ী নারী পানাহারের মুখাপেক্ষী হবেন। বিশেষত: গ্রীষ্মের লম্বা দিনগুলোতে, তীব্র গরমের সময় স্তন্যদায়ী নারী তার সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ানোর স্বার্থে রোযা না থাকার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে। এমতাবস্থায় আমরা তাকে বলব: আপনি রোযা রাখবেন না। যখন আপনার ওজর শেষ হবে; তখন আপনার যতগুলো রোযা ভাঙ্গা পড়েছে সবগুলো রোযা কাযা করবেন।”।[ফাতাওয়াস সিয়াম, পৃষ্ঠা- ১৬২]

শাইখ বিন বায (রহঃ) বলেন:

পক্ষান্তরে, গর্ভবতী নারী ও স্তন্যদায়ী নারীর ব্যাপারে আনাস বিন মালিক আল-কা’নাবি কর্তৃক বর্ণিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি থেকে সাব্যস্ত হয়েছে যে, তিনি তাদের উভয়কে রোযা না রাখার অবকাশ দিয়েছেন। তাদেরকে তিনি মুসাফিরের বিধানের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এতে করে জানা গেল যে, তারা উভয়ে মুসাফিরের মত রোযা না রেখে কাযা পালন করবেন। আলেমগণ উল্লেখ করেছেন যে, তাদের পক্ষে রোযা রাখা অসুস্থ ব্যক্তির মত কষ্টকর না হলে বা তাদের সন্তানের ক্ষতির আশংকা না থাকলে তাদের রোযা ভাঙ্গা জায়েয হবে না। আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।”

আরও জানতে দেখুন: 49794 নং ও 50005 নং প্রশ্নোত্তর।

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

২:২৩৪ وَ الَّذِیۡنَ یُتَوَفَّوۡنَ مِنۡکُمۡ وَ یَذَرُوۡنَ اَزۡوَاجًا یَّتَرَبَّصۡنَ بِاَنۡفُسِهِنَّ اَرۡبَعَۃَ اَشۡهُرٍ وَّ عَشۡرًا ۚ فَاِذَا بَلَغۡنَ اَجَلَهُنَّ فَلَا جُنَاحَ عَلَیۡکُمۡ فِیۡمَا فَعَلۡنَ فِیۡۤ اَنۡفُسِهِنَّ بِالۡمَعۡرُوۡفِ ؕ وَ اللّٰهُ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ خَبِیۡرٌ ﴿۲۳۴﴾

২৩৪. আর তোমাদের মধ্যে যারা স্ত্রী রেখে মারা যায়, তারা (স্ত্রীগণ) নিজেরা চার মাস দশ দিন অপেক্ষায় থাকবে। অতঃপর যখন তারা তাদের ইদ্দতকাল পূর্ণ করবে, তখন যথাবিধি নিজেদের জন্য যা করবে তাতে তোমাদের কোন পাপ নেই। আর তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক খবর রাখেন।

স্বামীর মৃত্যুর পর (শোক পালনের) এই ইদ্দত সকল নারীর জন্য, তাতে বিবাহের পর স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক কায়েম হয়ে থাকুক বা না হয়ে থাকুক, যুবতী হোক বা বৃদ্ধা। অবশ্য গর্ভবতী মহিলা এই আওতায় পড়বে না। কারণ, তার ইদ্দতকাল হল সন্তানপ্রসব হওয়া পর্যন্ত। মহান আল্লাহ বলেন, ‘‘গর্ভবতী নারীদের ইদ্দতকাল সন্তানপ্রসব হওয়া পর্যন্ত।’’ (সূরা ত্বালাক ৪ আয়াত) স্বামী-মৃত্যুর এই ইদ্দতকালে মহিলার সাজ-সজ্জা করার (এমন কি সুর্মা লাগানো) এবং স্বামীর বাড়ি ছেড়ে অন্য কোথাও বাস করার অনুমতি নেই। তবে রজয়ী তালাকপ্রাপ্তা (যাকে ফিরিয়ে নেওয়ার স্বামীর অধিকার থাকে এমন) মহিলার জন্য সাজ-সজ্জা করা নিষেধ নয়। আর তালাকে বায়েন প্রাপ্তা (যাকে যথাবিহিত ব্যবস্থা ছাড়া আর ফিরিয়ে নেওয়া সম্ভব নয় এমন) মহিলার ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেছেন, বৈধ এবং কেউ বলেছেন, অবৈধ। (ইবনে কাসীর)

অর্থাৎ, ইদ্দত শেষ হয়ে যাওয়ার পর সে যদি সাজ-সজ্জা করে এবং অভিভাবকদের অনুমতি ও তাদের পরামর্শক্রমে অন্যত্র বিবাহ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে, তাহলে তাতে কোন দোষ নেই। কাজেই (হে মহিলার অভিভাবকগণ) তোমাদেরও কোন পাপ নেই। এ থেকে জানা গেল যে, বিধবা-বিবাহকে খারাপ ভাবা উচিত নয়, উচিত নয় তাতে বাধা দেওয়া। যেমন হিন্দু-প্রভাবিত মুসলিম সমাজে এমন আচরণ লক্ষ্য করা যায়।

আবু সালামার মেয়ে যয়নব বলেন, শাম থেকে আবু সুফিয়ান রা. এর মৃত্যু সংবাদ আসার পর তৃতীয় দিন (তাঁর মেয়ে উম্মুল মুমিনিন) উম্মে হাবিবা রা. কিছু হলুদ বা জাফরান (অন্য বর্ণনায় সুগন্ধি) আনতে বললেন। অত:পর তা আনা হলে তিনি তা তার চেহারার দু পাশে ও দু গালে এবং দু বাহুতে মাখলেন। অত:পর বলেন, এটা করার আমার কোন দরকার ছিল না। কিন্তু আমি এজন্যই এমনটি করলাম যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

« لاَ يَحِلُّ لاِمْرَأَةٍ تُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ أَنْ تُحِدَّ عَلَى مَيِّتٍ فَوْقَ ثَلاَثٍ ، إِلاَّ عَلَى زَوْجٍ ، فَإِنَّهَا تُحِدُّ عَلَيْهِ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ وَعَشْرًا »

“যে মহিলা আল্লাহ ও পরকালের উপর বিশ্বাস রাখে তার জন্য স্বামী ছাড়া কারও মৃত্যুতে তিন দিনের বেশি শোক পালন করা বৈধ নয়। স্বামীর মৃত্যুতে সে চার মাস দশ দিন শোক পালন করবে।” (সহিহ বুখারি, অনুচ্ছেদ: স্বামী ছাড়া অন্যের মৃত্যুতে মহিলার শোক পালন করা)।

◈◈ শোক পালনের পদ্ধতি:

  • ১) মৃতের প্রতি শোক প্রকাশের উদ্দেশ্যে মহিলা সকল প্রকার সৌন্দর্য গ্রহণ থেকে দূরে থাকবে।
  • ২) আতর-সুগন্ধি ব্যবহার না করা। তবে তৈল, সাবান, রোগ-ব্যাধির জন্য ঔষধ ইত্যাদি ব্যবহারে অসুবিধা নাই যদিও তাতে সুগন্ধি থাকে। কারণ এগুলো মূলত: সুগন্ধি হিসেবে ব্যবহৃত হয় না।
  • ৩) সৌন্দর্য বর্ধক পোশাক না পরা। বরং স্বামী মারা যাওয়ার আগে স্বাভাবিকভাবে যে পোশাক পরিধান করত তাই পরিধান করবে। তবে শুধু সাদা বা শুধু কালো পোশাক পরিধান করতে হবে-এমন ধারণা ঠিক নয়।
  • ৪) সুরমা, কাজল ইত্যাদি ব্যবহার না করা।
  • ৫) মেহেদী, খেজাব বা আলাদা রং ব্যবহার না করা।
  • ৬) কোন ধরণের অলংকার-যেমন: দুল, চুরি, নাক ফুল, আংটি, নূপুর ইত্যাদি ব্যবহার না করা।
  • ৭) বিয়ের প্রস্তাব বা বিয়ে থেকে বিরত থাকা।
  • ৮) শোক পালনের দিন শেষ পর্যন্ত নিজের বাড়িতে থাকবে। এমনকি সে সময় যদি সে তার পিতার বাড়িতেও থাকে তবে স্বামীর মৃত্যুর খবর পেলে নিজ বাড়িতে ফিরে আসবে। তবে একান্ত প্রয়োজন-যেমন: বিপদের আশংকা, প্রয়োজন বশত: বাড়ি পরিবর্তন, চিকিৎসা বা নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কেনা ইত্যাদি জরুরি কাজে অন্যত্র যেতে পারবে।
  • ৯) স্ত্রী যদি গর্ভবতী হয়ে থাকে তবে সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে অথবা চার মাস দশ দিন অতিবাহিত হলে তখন উপরোক্ত নিষেধাজ্ঞা সমূহ উঠে যাবে এবং অন্যত্র বিয়ের ব্যবস্থা করা যাবে।

মোটকথা, স্বামী মারা যাওয়ার পর স্ত্রী এমন সব ধরণের আচরণ বা সৌন্দর্য অবলম্বন করবে না যা তাকে বিয়ের দিকে আকৃষ্ট করতে পারে।

এটা এ কারণে যে এর মাধ্যমে, স্বামীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হয়, স্বামীর পিতা-মাতা ও নিকটাত্মীয়দের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করা হয়, তাদের বেদনা বিধুর অনুভূতিতে সহমর্মিতা প্রকাশ হয় সর্বোপরি আল্লাহ এবং তার রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নির্দেশের আনুগত্য করা হয়।

আল্লাহু আলাম। গ্রন্থনায়:

আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল

দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

প্রশ্ন: স্বামী মৃত্যুবরণ করলে নাক ফুল, কানের দুল, হাতের চুড়ি, মালা ইত্যাদি খুলে ফেলা কি শিরক? এ প্রথা না কি হিন্দুদের থেকে এসেছে। এ কথা কি সঠিক?

উত্তর: স্বামী মৃত্যুবরণ করলে ইদ্দত পালনের সময় নাক ফুল, কানের দুল, হাতের চুড়ি, মালা ইত্যাদি সৌন্দর্য বর্ধক অলংকারাদি ব্যবহার করা জায়েজ নাই। কেউ আগে থেকে ব্যবহার করলে তা খুলে রাখবে। ইদ্দত অতিক্রম করার পরে পুনরায় সেগুলো পরতে পারে। কিন্তু এগুলো খুলে ফেলাকে শিরক বলা বা হিন্দু রীতি বলা মারাত্মক বাতিল ও ভ্রান্ত কথা। এমন কথা বলা জায়েজ নাই। কোনও আলেম এমন কথা বলে থাকলে তা অবশ্যই পরিত্যাগ করতে হবে।

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রী উম্মে সালামা রা. সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

الْمُتَوَفَّى عَنْهَا زَوْجُهَا لَا تَلْبَسُ الْمُعَصْفَرَ مِنَ الثِّيَابِ، وَلَا الْمُمَشَّقَةَ، وَلَا الْحُلِيَّ، وَلَا تَخْتَضِبُ، وَلَا تَكْتَحِلُ

“কোনও মহিলার স্বামী মারা গেলে সে রঙ্গিন পোশাক, কারুকার্য খচিত জামা ও অলংকার পরবে না, খিজাব (চুল, হাত বা শরীরের অন্য কোথাও কলপ) ও সুরমা ব্যবহার করবে না।” [সুনানে আবু দাউদ, অধ্যায়: ৭/ তালাক, পরিচ্ছেদ: ৪৬. ইদ্দত পালন কারিনী ইদ্দতকালে যা বর্জন করবে]

❑ এ ব্যাপারে নিম্নে সম্মানিত ফকিহদের অভিমত তুলে ধরা হল:

◍ বিখ্যাত ফকিহ ইমাম ইবনে আব্দুল বার রাহ. [মৃত্যু: ৪৬৩ হি.] বলেন,

”وأما الحلي والخاتم وما فوقه فلا يجوز للحاد لبسه

“গহনা, আংটি এবং তার উপরে যা আছে, ইদ্দত পালনকারী নারীর জন্য পরিধান করা জায়েজ নয়।” [আল কাফি ফী ফিকহি আহলিল মাদিনাহ, ২/৬২২]

◍ আবু ইসহাক শিরাজি রাহ. [মৃত্যু: ৩৯৩] বলেন,

والإحداد : أن تترك الزينة ، فلا تلبس الحلي

“মহিলাদের শোক পালন হল, সাজসজ্জা পরিত্যাগ করা। সুতরাং গহনা পরিধান করবে না…।” [আত তানবিহ, ১/২০১]

◍ অনুরূপভাবে বিখ্যাত হানাফি ফকিহ আবুল লাইস সামরকান্দি [মৃত্যু: ৩৭৩ হি.]ও মহিলাদের অলঙ্কার পরিধান থেকে বিরত থাকার কথা বলেছেন। [তুহফাতুল ফুকাহা, ২/২৫১]

قال السمرقندي في تحفة الفقهاء (2 / 251): “تَفْسِير الْإِحْدَاد : هُوَ الاجتناب عَن جَمِيع مَا يتزين بِهِ النِّسَاء من الطّيب ، وَلبس الثَّوْب الْمَصْبُوغ ، والمطيب بالعصفر والزعفران ، والاكتحال ، والادهان ، والامتشاط وَلبس الْحلِيّ والخضاب ، وَنَحْو ذَلِك ” انتهى.

◍ আধুনিক যুগের বিশিষ্ট ফকিহ সৌদি আরবের সাবেক প্রধান মুফতি শাইখ আব্দুল্লাহ বিন বায বলেন,

الأمر الثالث: عدم الحلي، لا تلبس الحلي لا الذهب ولا الفضة ولا ولا الماس ولا الخواتيم كلها لا تلبس شيء، وإذا كانت عليها تزيلها؛ لأن الرسول

ﷺ نهى عن لبس الحلي للمحادة.

“তৃতীয়ত: অলংকার ব্যবহার না করা। স্বর্ণ-রৌপ্য ডায়মন্ড আংটি ইত্যাদি কোন কিছু ব্যবহার করবে না। এগুলো তার শরীরে থাকলে খুলে ফেলবে। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শোক পালনকারিণী নারীর জন্য অলংকার ব্যবহার নিষেধ করেছেন।”

সুতরাং কোনও মহিলার স্বামী মারা গেলে ইদ্দত পালন কালীন সময় (গর্ভবতী না হলে চার মাস দশ দিন আর গর্ভবতী হলে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত) কোনও ধরণের সাজসজ্জা গ্রহণ, মেহেদি ও রং এর ব্যবহার, কানের দুল, নাকের ফুল, হাতের চুরি, গলার মালা ইত্যাদি পরিধান করা বৈধ নয়। কেউ পরে থাকলে তা খুলে ফেলবে। এটাই ইসলামের বিধান।

আল্লাহ আমাদেরকে দীনের সঠিক জ্ঞান দান করুন এবং সব ধরণের বিভ্রান্তি থেকে রক্ষা করুন। আমিন।

উত্তর প্রদানে: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল। দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।

২:২৩৫ وَ لَا جُنَاحَ عَلَیۡکُمۡ فِیۡمَا عَرَّضۡتُمۡ بِهٖ مِنۡ خِطۡبَۃِ النِّسَآءِ اَوۡ اَکۡنَنۡتُمۡ فِیۡۤ اَنۡفُسِکُمۡ ؕ عَلِمَ اللّٰهُ اَنَّکُمۡ سَتَذۡکُرُوۡنَهُنَّ وَ لٰکِنۡ لَّا تُوَاعِدُوۡهُنَّ سِرًّا اِلَّاۤ اَنۡ تَقُوۡلُوۡا قَوۡلًا مَّعۡرُوۡفًا ۬ؕ وَ لَا تَعۡزِمُوۡا عُقۡدَۃَ النِّکَاحِ حَتّٰی یَبۡلُغَ الۡکِتٰبُ اَجَلَهٗ ؕ وَ اعۡلَمُوۡۤا اَنَّ اللّٰهَ یَعۡلَمُ مَا فِیۡۤ اَنۡفُسِکُمۡ فَاحۡذَرُوۡهُ ۚ وَ اعۡلَمُوۡۤا اَنَّ اللّٰهَ غَفُوۡرٌ حَلِیۡمٌ ﴿۲۳۵﴾

২৩৫. আর যদি তোমরা আকার-ইঙ্গিতে (সে) নারীদের বিয়ের প্রস্তাব দাও বা তোমাদের অন্তরে গোপন রাখ তবে তোমাদের কোন পাপ নেই। আল্লাহ জানেন যে, তোমরা তাদের সম্বন্ধে অবশ্যই আলোচনা করবে: কিন্তু বিধিমত কথাবার্তা ছাড়া গোপনে তাদের সাথে কোন প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখো না; এবং নির্দিষ্ট কাল পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত বিবাহ বন্ধনের সংকল্প করো না। আর জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের অন্তরে যা আছে তা জানেন। কাজেই তাকে ভয় কর এবং জেনে রাখ, নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাপরায়ণ, পরম সহনশীল।

এখানে বিধবা অথবা তালাকে বায়েনা তথা তিন তালাকপ্রাপ্তা মহিলা সম্পর্কে বলা হচ্ছে যে, ইদ্দতের মধ্যে তোমরা তাকে ইশারা-ইঙ্গিতে বিবাহের পয়গাম দিতে পারো (যেমন এ রকম বলা যে, আমার বিবাহ করার ইচ্ছা আছে বা আমি একজন সৎশীলা মহিলার খোঁজ করছি ইত্যাদি)। কিন্তু তার নিকট থেকে গোপনভাবে কোন অঙ্গীকার নেবে না এবং ইদ্দত পূর্ণ হওয়ার পূর্বে বিবাহ পাকা করবে না। পক্ষান্তরে যে মহিলাকে তার স্বামী এক বা দু’ তালাক দিয়েছে, তাকে ইদ্দতের মধ্যে ইশারা-ইঙ্গিতেও বিবাহের পয়গাম দেওয়া জায়েয নয়। কেননা, ইদ্দত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তার উপর স্বামীরই অধিকার থাকে। হতে পারে স্বামী তাকে ফিরিয়ে নেবে।

মাসআলাঃ কখনো কখনো এমনও হয় যে, কোন কোন অজ্ঞ লোক মহিলার ইদ্দতের মধ্যেই বিবাহ করে নেয়। তাদের ব্যাপারে নির্দেশ হল, যদি তাদের মধ্যে সহবাস না হয়ে থাকে, তাহলে সত্বর তাদেরকে একে অপর থেকে পৃথক করে দেওয়া হবে। আর যদি সহবাস হয়ে থাকে, তবুও তাদেরকে একে অপর থেকে পৃথক তো করতেই হবে, কিন্তু পুনরায় (ইদ্দত শেষ হওয়ার পর) তাদের মধ্যে বিবাহ হতে পারে কি না –এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। কোন কোন আলেমদের মত হল, তাদের মধ্যে আর কখনোও বিবাহ হতে পারে না। এরা একে অপরে জন্য চিরকালের মত হারাম। তবে অধিকাংশ উলামার মতে তাদের মধ্যে পুনর্বিবাহ হতে পারে। (ইবনে কাসীর)

এ থেকে উদ্দেশ্য, ইশারা-ইঙ্গিত যা পূর্বে বলা হয়েছে। যেমন বলা, তোমার ব্যাপারে আমি আকাঙ্ক্ষা করি অথবা তার অভিভাবককে বলা যে, তার বিবাহের ব্যাপারে ফায়সালা করার পূর্বে আমাকে অবশ্যই জানাবেন ইত্যাদি। (ইবনে কাসীর)

নিম্নে কোন ধরণের তালাকের ক্ষেত্রে কত দিন ইদ্দত পালন করতে হয় তা সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরা হল:

  • স্বামী যদি স্ত্রীর সাথে ঘর সংসার করে এবং নিয়ম মাফিক তালাক দেয় তাহলে স্ত্রীর ইদ্দত হল, তিন হায়য কিন্তু স্ত্রী যদি গর্ভবতী থাকে তাহলে তার ইদ্দত হল, সন্তান ভূমিষ্ট হওয়া পর্যন্ত। তালাকের কিছুক্ষণ পর সন্তান ভূমিষ্ট হলেই ইদ্দত শেষ হয়ে যাবে।
  • বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রী যদি একান্ত একাকিত্বে থাকার সুযোগ না পায় (অর্থাৎ দু জন এক ঘরে দরজা বন্ধ করে না থাকে- প্রবাসে থাকার কারণে অথবা অন্য কোন কারণে) এবং এ অবস্থায় তালাক সংঘটিত হয় তাহলে তার কোন ইদ্দত পালনের কোন প্রয়োজ নাই।
  • স্ত্রীর যদি হায়েয না হয়-অপ্রাপ্ত বয়স্ক থাকার কারণে অথবা বৃদ্ধ হওয়ার কারণে তাহলে তার ইদ্দত হল, তিন মাস।
  • স্বামী মারা যাওয়ার কারণে স্ত্রী বিধবা হলে তার ইদ্দত হল, চার মাস দশ দিন।
  • আর যদি স্ত্রীর পক্ষ থেকে খোলা তালাক নেয়া হয় তাহলে অধিক বিশুদ্ধ মতানুসারে তার ইদ্দত হল, এক হায়েয।

এই ইদ্দত চলাকালীন সময় উক্ত মহিার জন্য অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া বৈধ নয়। উত্তর প্রদানে: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল

প্রশ্ন: স্ত্রীর পক্ষ থেকে খোলা তালাক চাওয়ার প্রেক্ষিতে স্বামী যদি তালাক দেয় তাহলে ওই মহিলা কত দিন ইদ্দত পালন করবে? এসময় কি কেউ তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিতে পারবে?

– সে মহিলা যদি পূণরায় বিয়ে করতে চায় এক্ষেত্রেও কি তার ওয়ালীর অনুমতি নেয়া জরুরি?

উত্তর:

যদি স্ত্রীর পক্ষ থেকে খোলা তালাক নেয়া হয় তাহলে অধিক বিশুদ্ধ মতানুসারে তার ইদ্দত হল, এক হায়েয। একবার হায়েয শেষ হলে তার ইদ্দত শেষ হয়ে যাবে। ইদ্দত শেষ হওয়া পর সে মহিলা অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে; এর আগে নয়।

▪ ১ম স্বামী যদি পূণরায় তাকে বিবাহ করতে চায় তাহলে মহিলার সম্মতিক্রমে নতুন আকদ এবং নতুন মোহর নির্ধারণের মাধ্যমে পূণরায় বিয়ে করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে ইদ্দত পালন করা জরুরি নয়। এ ব্যাপারে ফকীহদের মাঝে কোন দ্বিমত নাই। (বিদায়াতুল মুজতাহিদ ৩/৯২) তবে যেহেতু নতুন বিবাহ তাই ওয়ালী বা অবিভাবকের অনুমতি নেয়া অপরিহার্য।

▪অনুরূপভাবে যদি সে অন্যত্র বিবাহ করতে চায় তবুও ওয়ালী বা অবিভাবকের অনুমতি নেয়া আবশ্যক। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

لا نكاح إلا بولي)

অভিভাবক ব্যতীত বিবাহ হবে না। (তিরমিজী, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)

(لا تزوج المرأة المرأة، ولا تزوج المرأة نفسها)

কোন মহিলা অপর মহিলাকে বিবাহ দিতে পারবে না। সে নিজেও নিজের বিবাহ দিতে পারবে না। (মিশকাত, ইবনে মাজাহ)

আল্লাহু আলাম। উত্তর প্রদানে: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল

ইদ্দত পালন বিধবা নারীর জন্য বিশেষ একটি ইবাদাত-১৩

 

সংগ্রহেঃ

তাফসিরে যাকারিয়া,তাফহিমুল কুর’আন,আহসানুল বায়ান