সূরা আন নিসাঃ ২৩তম রুকু(১৬৩-১৭১)আয়াত
আউযুবিল্লাহি মিনাস শাইতোয়ানির রজিম
৪:১৬৩ اِنَّاۤ اَوۡحَیۡنَاۤ اِلَیۡکَ کَمَاۤ اَوۡحَیۡنَاۤ اِلٰی نُوۡحٍ وَّ النَّبِیّٖنَ مِنۡۢ بَعۡدِهٖ ۚ وَ اَوۡحَیۡنَاۤ اِلٰۤی اِبۡرٰهِیۡمَ وَ اِسۡمٰعِیۡلَ وَ اِسۡحٰقَ وَ یَعۡقُوۡبَ وَ الۡاَسۡبَاطِ وَ عِیۡسٰی وَ اَیُّوۡبَ وَ یُوۡنُسَ وَ هٰرُوۡنَ وَ سُلَیۡمٰنَ ۚ وَ اٰتَیۡنَا دَاوٗدَ زَبُوۡرًا
নিশ্চয় আমরা আপনার নিকট ওহী প্রেরণ করেছিলাম যেমন নূহ ও তার পরবর্তী নবীগণের প্রতি ওহী প্রেরণ করেছিলাম। আর ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব ও তার বংশধরগণ, ঈসা, আইউব, ইউনুস, হারূন ও সুলাইমানের নিকট ওহী প্রেরণ করেছিলাম এবং দাউদকে প্রদান করেছিলাম যাবূর।
অহী অর্থ হচ্ছে ইশারা করা, মনের মধ্যে কোন কথা প্রক্ষিপ্ত করা, গোপনভাবে কোন কথা বলা এবং পয়গাম পাঠানো৷
নবীগণের প্রতি প্রেরিত আল্লাহ্ তা’আলার বিশেষ নির্দেশ ও বাণীকে অহী বলা হয়।
হারিস ইবন হিশাম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার নিকট অহী কিভাবে আসে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ অহী কোন কোন সময় ঘন্টার আওয়াজের মত আমার নিকট আসে। আর ওটাই আমার পক্ষে সবচেয়ে কষ্টদায়ক অহী, এরপর ফেরেশতা আমার থেকে পৃথক হতো এমতাবস্থায় যে, তিনি যা বলেন তা শেষ হতেই তার কাছ থেকে আমি তা আয়ত্ব করে ফেলি। আবার কোন কোন সময় ফেরেশতা মানুষের আকারে এসে আমাকে যে অহী বলেন, আমি তা সাথে সাথে আয়ত্ব করে নেই। [বুখারীঃ ২]
এ আয়াতে বলা হয়েছে যে, পূর্ববতী নবীগণের প্রতি যেমন আল্লাহর পক্ষ থেকে অহী নাযিল হয়েছিল, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতিও তেমনি আল্লাহ্ তা’আলা অহী নাযিল করেছেন। অতএব, পূর্ববর্তী নবীগণকে যারা মান্য করে, তারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কেও মান্য করতে বাধ্য। আর যারা তাকে অস্বীকার করে তারা যেন অন্যসব নবীকে এবং তাদের প্রতি প্রেরিত অহীকেও অস্বীকার করলো।
বর্তমানে বাইবেলের মধ্যে ‘যাবুর’ (গীতসংগিতা)) নামে যে অধ্যায়টি পাওয়া যায় তার সবটুকুই দাউদ আলাইহিস সালামের ওপর অবতীর্ণ যাবুর নয়৷ তার মধ্যে অন্যান্য লোকদের বহু কথা মিশিয়ে দেয়া হয়েছে এবং সেগুলোকে তাদের রচয়িতাদের সাথে সংশ্লিষ্ট করা হয়েছে৷ তবে যে সমস্ত বাণীতে (স্তোত্র) একথা সুস্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে যে, সেগুলো হযরত দাউদ আলাইহিস সালামের, সেগুলোর মধ্য যথার্থই সত্য বাণীর উজ্জ্বল আলো অনুভূত হয়৷
অনুরূপভাবে বাইবেলে ‘আমসালে সুলাইমান’ (হিতোপদেশ) নামে যে অধ্যায়টি রয়েছে, তাতেও ব্যাপক মিশ্রণ পাওয়া যায়৷ তার শেষ দু’টি অনুচ্ছেদ যে পরে সংযোজন করা হয়েছে, এতে কোন সন্দেহ নেই৷ তবুও তার বৃহত্তর অংশ নির্ভুল ও সত্য মনে হয়৷ এই দু’টি অধ্যায়ের সাথে সাথে হযরত ‘আইউব’ (ইয়োব) আলাইহিস সালামের নামেও আর একটি অধ্যায় বাইবেলের অন্তরভুক্ত হয়েছে৷ কিন্তু তার মধ্যে জ্ঞানের বহু অমূল্য তত্ত্ব থাকা সত্ত্বেও সেটি পড়তে গিয়ে হযরত আইউবের সাথে তার সংশ্লিষ্ট করার ব্যাপারটি সত্য বলে বিশ্বাস করা যায় না৷ কারণ কুরআনেও এই অধ্যায়টির প্রথম দিকে হযরত আইউবের যে মহান সবরের প্রশংসা করা হয়েছে সমগ্র অধ্যায় ঠিক তার উলটো চিত্রই পেশ করা হয়েছে৷ সেখানে বলা হয়েছে, হযরত আইউব তার সমগ্র বিপদকালে আল্লাহর বিরুদ্ধে সর্বক্ষণ অভিযোগ মুখর ছিলেন৷ এমনিক তার সহচর নাকি এই মর্মে তাকে সান্ত্বনা দেবার চেষ্টা করতেন যে, আল্লাহ জালেম নন; কিন্তু তিনি কোনক্রমেই তা মানতে প্রস্তুত হতেন না৷
এসব সহীফা ছাড়াও বনী ইসরাঈলদের নবীদের আরো ১৭ খানি সহীফা বাইবেলে অন্তরভূক্ত হয়েছে৷ এগুলোর বেশীর ভাগ সঠিক বলে মনে হয়৷ বিশেষ করে ইয়াস’ঈয়াহ্ (যিশাইয়), ইয়ারমিয়াহ (যিরমিয়), হাযকী ইন (যিহিস্কেল), অমূস (আমোষ) ও আরো কয়েকটি সহীফার অধিকাংশ স্থান পড়ার পর মানুষের হৃদয় নেচে উঠে৷ এগুলোর মধ্যে আল্লাহর কালামের সুস্পষ্ট মাহাত্ম অনুভূত হয়৷ এগুলোতে শিরকের বিরুদ্ধে জিহাদ, তাওহীদের সপক্ষে শক্তিশালী যুক্তি প্রদান এবং বনী ইসরাঈলের নৈতিক অধপতনের ওপর কড়া সমালোচনা পড়ার সময় একজন সাধারণ পাঠক একথা অনুভব না করে থাকতে পারে না যে, ইঞ্জীলে হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের ভাষণসমূহ এবং কুরআন মজীদ ও এই সহীফাগুলো একই উৎস থেকে উৎসারিত স্রোতধারা ছাড়া আর কিছুই নয়।
৪:১৬৪ وَ رُسُلًا قَدۡ قَصَصۡنٰهُمۡ عَلَیۡکَ مِنۡ قَبۡلُ وَ رُسُلًا لَّمۡ نَقۡصُصۡهُمۡ عَلَیۡکَ ؕ وَ کَلَّمَ اللّٰهُ مُوۡسٰی تَکۡلِیۡمًا
আর অনেক রাসূল, যাদের বর্ণনা আমরা আপনাকে পূর্বে দিয়েছি এবং অনেক রাসূল, যাদের বর্ণনা আমরা আপনাকে দেইনি। আর অবশ্যই আল্লাহ মূসার সাথে কথা বলেছেন।
অন্যান্য নবীদের ওপর যে পদ্ধতিতে অহী আসতো তা ছিল এই যে, একটি আওয়াজ আসতো অথবা ফেরেশতারা পয়গাম শুনাতেন এবং নবীগণ তা শুনতেন৷ কিন্তু মূসা আলাইহিস সালামের সাথে একটি বিশেষ ব্যবস্থা অবলম্বিত হয়৷ আল্লাহ নিজে তাঁর সাথে কথা বলেন৷ আল্লাহ ও বান্দার মধ্যে এমনভাবে কথাবর্তা হতো যেমন- দু’জন লোক সামনাসামনি কথা বলে থাকে৷ দৃষ্টান্ত স্বরূপ সূরা ‘তা-হা’য় উদ্ধৃত কথোপকথনের বরাত দেয়াই যথেষ্ট মনে করি৷
এ আয়াতে নূহ আলাইহিস সালাম-এর পরে যেসব নবী-রাসূল আগমন করেছেন, তাদের সম্পর্কে প্রথমে সাধারণভাবে বলার পর তন্মধ্যে বিশিষ্ট ও মর্যাদাসম্পন্ন কয়েকজনের নাম বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বোঝানো হয়েছে যে, এরা সবাই আল্লাহর রাসূল এবং তাদের নিকটও বিভিন্ন পস্থায় অহী প্রেরিত হয়েছে। কখনো ফিরিশতাদের মাধ্যমে অহী পৌছেছে, কখনো লিপিবদ্ধ কিতাব আকারে এসেছে, আবার কখনো আল্লাহ তা’আলা রাসূলের সাথে পর্দার আড়াল থেকে কথোপকথন করেছেন। যে কোন পস্থায়ই অহী পৌছুক না কেন, তদানুযায়ী আমল করা মানুষের একান্ত কর্তব্য। অতএব, ইয়াহুদীদের এরূপ আবদার করা যে, তাওরাতের মত লিখিত কিতাব নাযিল হলে আমরা মান্য করবো, অন্যথায় নয়- সম্পূর্ণ আহম্মকী ও স্পষ্ট কুফরী। আবু যর গিফারী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা এক লাখ চব্বিশ হাজার নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন, যাদের মধ্যে স্বতন্ত্র শরীআতের অধিকারী রাসূলের সংখ্যা ছিল তিনশ’ তের জন। [সহীহ ইবন হিব্বানঃ ৩৬১]
যে সকল নবী ও রসূলগণের নাম ও তাঁদের ঘটনাবলী কুরআন কারীমে বর্ণিত হয়েছে ,তাঁদের সংখ্যা ২৪ অথবা ২৫ যথাঃ (১) আদম (আঃ) (২) ইদরীস (আঃ) (৩) নূহ (আঃ) (৪) হূদ (আঃ) (৫) সালেহ (আঃ) (৬) ইবরাহীম (আঃ) (৭) লূত (আঃ) (৮) ইসমাঈল (আঃ) (৯) ইসহাক (আঃ) (১০) ইয়াক্বূব (আঃ) (১১) ইউসুফ (আঃ) (১২) আইউব (আঃ) (১৩) শুআইব (আঃ) (১৪) মূসা (আঃ) (১৫) হারূন (আঃ) (১৬) ইউনুস (আঃ) (১৭) দাউদ (আঃ) (১৮) সুলাইমান (আঃ) (১৯) ইলয়্যাস (আঃ) (২০) আল-য়্যাসা’ (আঃ) (২১) যাকারিয়া (আঃ) (২২) ইয়াহইয়া (আঃ) (২৩) ঈসা (আঃ) (২৪) যুল কিফল (আঃ) (অধিকাংশ মুফাসসিরগণের নিকটে) (২৫) মুহাম্মাদ (সাঃ)।
যে সকল নবী ও রসূলগণের নাম ও ঘটনাবলী কুরআনে উল্লেখ হয়নি তাঁদের সংখ্যা কত? এ ব্যাপারে আল্লাহই ভালো জানেন। তবে একটি হাদীস পাওয়া যায় যেটা আম জনতার নিকট খুবই প্রসিদ্ধ, তাতে নবী ও রসূলগণের সংখ্যা এক লাখ চব্বিশ হাজার এবং অন্য এক হাদীসে আট হাজার উল্লেখ হয়েছে। কিন্তু এই হাদীসগুলি অত্যন্ত দুর্বল। অথচ কুরআন ও সহীহ হাদীস থেকে শুধু এতটুকু বুঝা যায় যে, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পরিস্থিতির মোকাবেলায় যুগে যুগে মহান আল্লাহ নবী ও রসূলগণকে সুসংবাদদাতা ও ভীতি-প্রদর্শনকারী রূপে প্রেরণ করেছেন। অতঃপর নবুঅতের সেই ধারাবাহিকতা শেষ হয় মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর মাধ্যমে। কিন্তু শেষনবী (সাঃ)-এর পূর্বে নবী ও রসূলের সংখ্যা কত? এর সঠিক উত্তর আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানে না। পক্ষান্তরে শেষনবী (সাঃ)-এর পরে যত নবুঅতের দাবী করেছে বা করবে, তারা সকলেই দাজ্জাল ও মিথ্যুক। আর তাদের মিথ্যা নবুঅতের অনুসারীগণ ইসলামের গন্ডি হতে খারিজ। যারা উম্মতে মুহাম্মাদিয়া হতে পৃথক এক প্রতিদ্বন্দ্বী উম্মত। যেমন, বাবিয়াহ, বাহাইয়াহ, মীর্যাইয়াহ বা ক্বাদিয়ানী ফির্কা প্রভৃতি। অনুরূপভাবে মির্যা ক্বাদিয়ানীকে প্রতিশ্রুত ‘মাসীহ’ বলে বিশ্বাসী লাহোরী মির্যায়ী ফির্কাও।
(অদৃশ্য থেকে গায়বীভাবে অথবা স্পষ্টভাবে।) এটি মূসা (আঃ)-এর পৃথক বৈশিষ্ট্য; যার ফলে তিনি অন্যান্য নবীদের তুলনায় পৃথক মর্যাদার অধিকারী। সহীহ ইবনে হিব্বানের এক বর্ণনার ভিত্তিতে ইমাম ইবনে কাসীর আল্লাহর সাথে সরাসরি কথোপকথনে আদম (আঃ) ও মুহাম্মাদ (সাঃ)-কেও মূসা (আঃ)-এর শরীক বলেছেন। (তাফসীরে ইবনে কাসীর সূরা বাক্বারার ২৫৩নং আয়াতের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য)
৪:১৬৫ رُسُلًا مُّبَشِّرِیۡنَ وَ مُنۡذِرِیۡنَ لِئَلَّا یَکُوۡنَ لِلنَّاسِ عَلَی اللّٰهِ حُجَّۃٌۢ بَعۡدَ الرُّسُلِ ؕ وَ کَانَ اللّٰهُ عَزِیۡزًا حَکِیۡمًا
১৬৫. সুসংবাদদাতা ও সাবধানকারী রাসূল প্রেরণ করেছি, যাতে রাসূলগণ আসার পর আল্লাহর বিরুদ্ধে মানুষের কোন অভিযোগ না থাকে। আর আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
আল্লাহ তা’আলা ঈমানদারদের ঈমান ও সৎকর্মশীলতার পুরস্কারস্বরূপ জান্নাতের সুসংবাদ দান করার জন্য এবং কাফের, বেঈমান ও দূরাচারদের কুফর ও অবাধ্যতার শাস্তিস্বরূপ জাহান্নামের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির ভীতি প্রদর্শনের জন্য যুগে যুগে, দেশে দেশে অব্যাহতভাবে নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন, যেন কিয়ামতের শেষ বিচারের দিনে অবাধ্য ব্যক্তিরা অজুহাত উত্থাপন করতে না পারে যে, হে আল্লাহ! কোন কাজে আপনি সন্তুষ্ট আর কোন কাজে আপনি অসন্তুষ্ট হন, তা আমরা উপলব্ধি করতে পারিনি। জানতে পারলে অবশ্যই আমরা আপনার সন্তুষ্টির পথ অবলম্বন করতাম। অতএব, আমাদের অনিচ্ছাকৃত ক্রটি মার্জনীয় এবং আমরা নিরপরাধ।
পথভ্রষ্ট লোকেরা যাতে এহেন অজুহাত পেশ করতে বা বাহানার আশ্রয় নিতে না পারে, তজ্জন্য আল্লাহ তা’আলা স্পষ্ট নিদর্শনসহ নবীগণকে প্রেরণ করেছেন এবং তারা সর্বস্ব উৎসর্গ করে সত্য পথ প্রদর্শন করেছেন। অতএব, এখন আর সত্য দ্বীন ইসলাম গ্রহণ না করার ব্যাপারে কোন অজুহাত গ্রহণযোগ্য হবে না, কোন বাহানারও অবকাশ নেই। আল্লাহর ওহী এমন এক প্রকৃষ্ট প্রমাণ যার মোকাবেলায় অন্য কোন প্রমাণই কার্যকর হতে পারে না। কুরআনুল কারীম এমন এক অকাট্য দলীল যার সামনে কোন অযুক্তি টিকতে পারে না।
আল্লাহ বলেন, {وَلَوْ أَنَّا أَهْلَكْنَاهُم بِعَذَابٍ مِّن قَبْلِهِ لَقَالُوا رَبَّنَا لَوْلَا أَرْسَلْتَ إِلَيْنَا رَسُولًا فَنَتَّبِعَ آيَاتِكَ مِن قَبْلِ أَن نَّذِلَّ وَنَخْزَى} অর্থাৎ, যদি আমি ওদেরকে তার পূর্বে শাস্তি দ্বারা ধ্বংস করতাম তাহলে ওরা বলত, হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি আমাদের নিকট একজন রসূল প্রেরণ করলে না কেন? করলে আমরা লাঞ্ছিত ও অপমানিত হওয়ার পূর্বেই তোমার নিদর্শন মেনে নিতাম। (সূরা ত্বা-হা ১৩৪ আয়াত)
﴿وَلَوْلَا أَن تُصِيبَهُم مُّصِيبَةٌ بِمَا قَدَّمَتْ أَيْدِيهِمْ فَيَقُولُوا رَبَّنَا لَوْلَا أَرْسَلْتَ إِلَيْنَا رَسُولًا فَنَتَّبِعَ آيَاتِكَ وَنَكُونَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ﴾
(আর আমি এজন্য করেছি যাতে) এমনটি যেন না হয় যে, তাদের নিজেদের কৃতকর্মের বদৌলতে কোন বিপদ তাদের ওপর এসে যায়, আর তারা বলে, “হে আমাদের রব! তুমি কেন আমাদের কাছে কোন রসূল পাঠাওনি? তাহলে তো আমরা তোমার আয়াত মেনে চলতাম এবং ঈমানদারদের অন্তর্ভুক্ত হতাম৷সূরা কাসাসঃ ৪৭
৪:১৬৬ لٰکِنِ اللّٰهُ یَشۡهَدُ بِمَاۤ اَنۡزَلَ اِلَیۡکَ اَنۡزَلَهٗ بِعِلۡمِهٖ ۚ وَ الۡمَلٰٓئِکَۃُ یَشۡهَدُوۡنَ ؕ وَ کَفٰی بِاللّٰهِ شَهِیۡدًا
কিন্তু আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন আপনার প্রতি যা তিনি নাযিল করেছেন তার মাধ্যমে। তিনি তা নাযিল করেছেন নিজ জ্ঞানে। আর ফেরেশতাগণও সাক্ষী দিচ্ছেন। আর সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট।
আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেনঃ একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সমীপে একদল ইয়াহুদী উপস্থিত হলো।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে লক্ষ্য করে বললেনঃ আল্লাহর শপথ! তোমরা সন্দেহাতীতভাবে জান যে, আমি আল্লাহ তা’আলার সত্য রাসূল। তারা অস্বীকার করলো। তখনই উক্ত আয়াত নাযিল হলো- আল্লাহ্ তা’আলা ঐ কিতাবের (আল-কুরআনের) মাধ্যমে -যা তার পরিপূর্ণ জ্ঞানের নিদর্শন- আপনার নবুওয়াতের সাক্ষী দিচ্ছেন। আর ফিরিশতাগণও এর সাক্ষী। অধিকন্তু সর্বজ্ঞানী আল্লাহ্ তা’আলার সাক্ষ্যদানের পর আর কোন সাক্ষ্য-প্রমাণের প্রয়োজন নেই। [তাবারী, আত-তাফসীরুস সহীহ] এ আয়াতে কুরআনের সত্যতার উপর সাক্ষাদানের পাশাপাশি কুরআন যার উপর নাযিল হয়েছে তার সত্যতার উপরও সাক্ষ্য প্রদান হয়ে গেছে। তাছাড়া অন্যত্র আল্লাহ তা’আলা শুধু কুরআনের জন্যও এ সাক্ষ্য দিয়ে বলেছেন, “আর আমরা সত্য-সহই কুরআন নাযিল করেছি এবং তা সত্য-সহই নাযিল হয়েছে। আমি তো আপনাকে শুধু সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে পাঠিয়েছি। [সূরা আল ইসরা: ১০৫]
৪:১৬৭ اِنَّ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا وَ صَدُّوۡا عَنۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ قَدۡ ضَلُّوۡا ضَلٰلًۢا بَعِیۡدًا
নিশ্চয় যারা কুফর করেছে এবং আল্লাহর পথ থেকে বাধা দিয়েছে তারা অবশ্যই ভীষনভাবে পথভ্রষ্ট হয়েছে।
মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন-
যারা দুনিয়ার জীবনকে আখেরাতের ওপর প্রাধান্য দেয় যারা লোকদেরকে আল্লাহর পথ থেকে রুখে দিচ্ছে এবং চাচ্ছে এ পথটি (তাদের আকাংখা অনুযায়ী) বাঁকা হয়ে যাক৷ ভ্রষ্টতায় এরা অনেক দূর এগিয়ে গেছে৷সূরা ইবরাহীমঃ ৩
তারা আল্লাহর ইচ্ছার অনুগত হয়ে থাকতে চায় না৷ বরং আল্লাহর দীনকে নিজেদের ইচ্ছার অনুগত করে রাখতে চায়৷ নিজেদের প্রত্যেকটি ভাবনা-চিন্তা, মতবাদ ও ধারণা-অনুমানকে তারা নিজেদের চিন্তারাজ্যে অবস্থান করতে দেয় না যা তাদের ভাবনার সাথে খাপ খায় না৷ তারা চায় আল্লাহর দীন তাদের অনুসৃত প্রত্যেকটি রীতি-নীতি, আচার-আচরণ ও অভ্যাসকে বৈধতার ছাড়পত্র দিক এবং তাদের কাছে এমন কোন পদ্ধতির অনুসরণের দাবী না জানাক যা তারা পছন্দ করে না৷ এরা নিজেদের প্রবৃত্তি ও শয়তানের অনুসরণে যেদিকে মুখ ফিরায়, আল্লাহর দীনও যেন এদের গোলাম হয়ে ঠিক সেদিকেই মুখ ফিরায়৷ সে যেন কোথাও এদেরকে বাধা না দেয় বা সমালোচনা না করে এবং কোথাও এদেরকে নিজের পথের দিকে ফিরিয়ে নেবার চেষ্টা না করে৷ আল্লাহ তাদের কাছে এ ধরনের দীন পাঠালেই তারা তা মানতে প্রস্তুত৷
৪:১৬৮ اِنَّ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا وَ ظَلَمُوۡا لَمۡ یَکُنِ اللّٰهُ لِیَغۡفِرَ لَهُمۡ وَ لَا لِیَهۡدِیَهُمۡ طَرِیۡقًا
নিশ্চয় যারা কুফরী করেছে ও যুলুম করেছে আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করবেন না এবং তাদেরকে কোন পথও দেখাবেন না,
৪:১৬৯ اِلَّا طَرِیۡقَ جَهَنَّمَ خٰلِدِیۡنَ فِیۡهَاۤ اَبَدًا ؕ وَ کَانَ ذٰلِکَ عَلَی اللّٰهِ یَسِیۡرًا
জাহান্নামের পথ ছাড়া; সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে এবং এটা আল্লাহর পক্ষে সহজ।
কেননা, অব্যাহতভাবে কুফরী ও যুলুমে লিপ্ত থাকার কারণে তারা তাদের অন্তরগুলিকে কালো করে নিয়েছে। যার কারণে হিদায়াতের আলো বা ক্ষমা, কোনটিই তাদের জন্য আশা করা যায় না।
কাফের শব্দের অর্থ অস্বীকারকারী, কাফের শব্দটি মুমিন শব্দের বিপরীত। বিভিন্ন কারণে কেউ কাফের হয়, তন্মধ্যে বিশেষ করে ঈমানের ছয়টি রুকনের কোন একটির প্রতি ঈমান না থাকলে সে নিঃসন্দেহে কাফের। এ ছাড়াও ইসলামের আরকানসমূহও যদি কেউ অস্বীকার করে তাহলেও সে কাফের হবে। অনুরূপভাবে কেউ দ্বীনের এমন কোন আহকামকে অস্বীকার করলেও কাফের বলে বিবেচিত হবে যা দ্বীনের বিধিবিধান বলে সাব্যস্ত হয়েছে। কুরআন ও সুন্নাহর আয়াত ও হাদীসসমূহ বিশ্লেষণ করে আমরা কুফরীকে দু’ভাগে ভাগ করতে পারি। বড় কুফর, ছোট কুফর।
প্রথমতঃ বড় কুফর। আর তা পাঁচ প্রকারঃ
১) মিথ্যা প্রতিপন্ন করার সাথে সম্পৃক্ত কুফর। আর তা হল রাসূলগণের মিথ্যাবাদী হওয়ার বিশ্বাস পোষণ করা। অতএব তারা যা কিছু নিয়ে এসেছেন, তাতে যে ব্যক্তি তাদেরকে প্রকাশ্যে কিংবা অপ্রকাশ্যে মিথ্যা সাব্যস্ত করল, সে কুফরী করল। এর দলীল হল আল্লাহর বাণীঃ “যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করে অথবা তার কাছে সত্যের আগমণ হলে তাকে সে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে, তার অপেক্ষা অধিক যালিম আর কে? জাহান্নামেই কি কাফিরদের আবাস নয়”? [সূরা আল-আনকাবুতঃ ৬৮]
২) অস্বীকার ও অহংকারের মাধ্যমে কুফরঃ এটা এভাবে হয় যে, রাসূলের সত্যতা এবং তিনি যে আল্লাহর পক্ষ থেকে সত্য নিয়ে এসেছেন সে সম্পর্কে জ্ঞাত থাকা, কিন্তু অহংকার ও হিংসাবশতঃ তার হুকুম না মানা এবং তার নির্দেশ না শোনা। এর দলীল আল্লাহর বাণীঃ “যখন আমরা ফেরেশতাদের বললাম, আদমকে সিজদা কর, তখন ইবলীস ব্যতীত সকলেই সিজদা করল। সে অমান্য করল ও অহংকার করল। সুতরাং সে কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত হল”। [সূরা আল-বাকারাহঃ ৩৪]
৩) সংশয়-সন্দেহের কুফরঃ আর তা হল রাসূলগণের সত্যতা এবং তারা যা নিয়ে এসেছেন সে সম্পর্কে ইতস্তত করা এবং দৃঢ় বিশ্বাস না রাখা। একে ধারণা সম্পর্কিত কুফরও বলা হয়। আর ধারণা হল একীন ও দৃঢ় বিশ্বাসের বিপরীত। এর দলীল আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ “আর নিজের প্রতি যুলুম করে সে তার উদ্যানে প্রবেশ করল। সে বলল, আমি মনে করি না যে, এটি কখনো ধ্বংস হয়ে যাবে। আমি মনে করি না যে, কিয়ামত হবে। আর আমি যদি আমার রবের নিকট প্রত্যাবর্তিত হই-ই, তবে আমি তো নিশ্চয়ই এ অপেক্ষা উৎকৃষ্ট স্থান পাব। তদুত্তরে তার বন্ধু বিতর্কমূলকভাবে জিজ্ঞাসা করতঃ তাকে বলল, তুমি কি তাঁকে অস্বীকার করছ যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন মৃত্তিকা ও পরে শুক্র হতে এবং তার পর পূর্ণাঙ্গ করেছেন পুরুষ আকৃতিতে? কিন্তু তিনিই আল্লাহ আমার রব এবং আমি কাউকেও আমার রবের শরীক করি না”। [সূরা আল-কাহফঃ ৩৫-৩৮]
৪) বিমুখ থাকার মাধ্যমে কুফরঃ এদ্বারা উদ্দেশ্য হল দ্বীন থেকে পরিপূর্ণভাবে বিমুখ থাকা এমনভাবে যে, স্বীয় কর্ণ, হৃদয় ও জ্ঞান দ্বারা ঐ আদর্শ থেকে দূরে থাকা যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিয়ে এসেছেন। এর দলীল আল্লাহর বাণীঃ “কিন্তু যারা কুফরী করেছে তারা সে বিষয় থেকে বিমুখ যে বিষয়ে তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে”। [সূরা আল-আহকাফঃ ৩]
৫) নিফাকের মাধ্যমে কুফরঃ এদ্বারা বিশ্বাসগত নিফাক বুঝানো উদ্দেশ্য, যেমন ঈমানকে প্রকাশ করে গোপনে কুফর লালন করা। এর দলীল আল্লাহর বাণীঃ “এটা এজন্য যে, তারা ঈমান আনার পর কুফর করেছে। ফলে তাদের হৃদয়ে মোহর মেরে দেয়া হয়েছে। অতএব তারা বুঝে না”। [সূরা আল-মুনাফিকূনঃ ৩]
দ্বিতীয়তঃ ছোট কুফর
এ ধরনের কুফরে লিপ্ত ব্যক্তি মুসলিম মিল্লাত থেকে বের হয়ে যাবে না এবং চিরতরে জাহান্নামে অবস্থান করাকেও তা অপরিহার্য করে না। এ কুফরে লিপ্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে শুধু কঠিন শাস্তির ধমক এসেছে। এ প্রকার কুফর হল নেয়ামত অস্বীকার করা। কুরআন ও সুন্নার মধ্যে বড় কুফর পর্যন্ত পৌছে না এ রকম যত কুফরের উল্লেখ এসেছে, তার সবই এ প্রকারের অন্তর্গত। এর উদাহরণের মধ্যে রয়েছে, আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ “আল্লাহ্ দৃষ্টান্ত দিচ্ছেন এমন এক জনপদের যা ছিলো নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত, যেখানে সর্বদিক হতে তার প্রচুর জীবিকা আসত। অতঃপর তারা আল্লাহর অনুগ্রহ অস্বীকার করল। ফলে তারা যা করত তজ্জন্য আল্লাহ সে জনপদকে আস্বাদন করালেন ক্ষুধা ও ভীতির আচ্ছাদন”। [সূরা আন-নাহলঃ ১১২] এখানে অনুগ্রহ অস্বীকার করাকে কুফর বলা হয়েছে, যা ছোট কুফর। [আল-ওয়াজিবাতুল মুতাহাত্তিমাতু]
৪:১৭০ یٰۤاَیُّهَا النَّاسُ قَدۡ جَآءَکُمُ الرَّسُوۡلُ بِالۡحَقِّ مِنۡ رَّبِّکُمۡ فَاٰمِنُوۡا خَیۡرًا لَّکُمۡ ؕ وَ اِنۡ تَکۡفُرُوۡا فَاِنَّ لِلّٰهِ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ؕ وَ کَانَ اللّٰهُ عَلِیۡمًا حَکِیۡمًا
হে লোকসকল! অবশ্যই রাসূল তোমাদের রবের কাছ থেকে সত্য নিয়ে এসেছেন সুতরাং তোমরা ঈমান আন, এটা তোমাদের জন্য কল্যাণকর হবে আর যদি তোমরা কুফরী কর তবে আসমানসমূহ ও যমীনে যা আছে সব আল্লাহরই এবং আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
অর্থাৎ তোমাদের কুফরী করার কারণে আল্লাহর কোন ক্ষতি হবে না। যেমন মূসা (আঃ) তাঁর স্বজাতিকে বলেছিলেন,
{إِن تَكْفُرُواْ أَنتُمْ وَمَن فِي الأَرْضِ جَمِيعًا فَإِنَّ اللهَ لَغَنِيٌّ حَمِيدٌ}
অর্থাৎ, তোমরা এবং পৃথিবীর সকলেই যদি অকৃতজ্ঞ কাফের হয়ে যাও; তবুও নিঃসন্দেহে আল্লাহ অভাবমুক্ত এবং সর্বপ্রশংসিত। (সূরা ইবরাহীম ৮)
আর হাদীসে কুদসীতে বর্ণিত হয়েছে যে, আল্লাহ বলেন; হে আমার বান্দা সকল! তোমাদের আদি ও অন্ত সমস্ত মানুষ ও জ্বিন যদি একটি এমন মানুষের অন্তরের মত হয়ে যায়, যে তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক আল্লাহ ভীরু, তাহলে তাতে আমার সাম্রাজ্যে কোন বৃদ্ধি লাভ হবে না। আর তোমাদের আদি ও অন্ত সমস্ত মানুষ ও জ্বিন যদি একটি এমন মানুষের অন্তরের মত হয়ে যায়, যে তোমাদের মধ্যে সব থেকে বড় অবাধ্য, তাহলে তাতে আমার সাম্রাজ্যে কোন হ্রাস বা ঘাটতি হবে না। হে আমার বান্দা সকল! তোমরা সকলেই যদি একটি ময়দানে একত্রিত হয়ে সম্মিলিতভাবে আমার নিকট চাও এবং প্রত্যেক মানুষকে যদি তার কামনা মোতাবেক দান করি, তাহলে তা আমার ভান্ডার ঐ পরিমাণ হ্রাস পাবে, একটি সূচ সাগরে ডুবানোর পর তার ডগায় লেগে যে পরিমাণ সাগরের পানি হ্রাস পায়। (সহীহ মুসলিমঃ বির্র অধ্যায়)
একমাত্র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্যের মধ্যেই হেদায়াত সীমাবদ্ধ; তার অবাধ্যতা ও বিরুদ্ধাচরণ করা চরম গোমরাহী। অতএব, ইয়াহুদীদের ধ্যান-ধারণা, ধর্ম-কর্ম ভ্রান্ত ও বাতিল।
﴿اللَّهِ الَّذِي لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ۗ وَوَيْلٌ لِّلْكَافِرِينَ مِنْ عَذَابٍ شَدِيدٍ﴾
এবং পৃথিবী ও আকাশের যাবতীয় বস্তুর মালিক৷ আর কঠিন ধ্বংসকর শাস্তি রয়েছে তাদের জন্য যারা সত্য গ্রহণ করতে অস্বীকার করে। সূরা ইবরাহীমঃ ২
৪:১৭১ یٰۤاَهۡلَ الۡکِتٰبِ لَا تَغۡلُوۡا فِیۡ دِیۡنِکُمۡ وَ لَا تَقُوۡلُوۡا عَلَی اللّٰهِ اِلَّا الۡحَقَّ ؕ اِنَّمَا الۡمَسِیۡحُ عِیۡسَی ابۡنُ مَرۡیَمَ رَسُوۡلُ اللّٰهِ وَ کَلِمَتُهٗ ۚ اَلۡقٰهَاۤ اِلٰی مَرۡیَمَ وَ رُوۡحٌ مِّنۡهُ ۫ فَاٰمِنُوۡا بِاللّٰهِ وَ رُسُلِهٖ ۚ۟ وَ لَا تَقُوۡلُوۡا ثَلٰثَۃٌ ؕ اِنۡتَهُوۡا خَیۡرًا لَّکُمۡ ؕ اِنَّمَا اللّٰهُ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ ؕ سُبۡحٰنَهٗۤ اَنۡ یَّکُوۡنَ لَهٗ وَلَدٌ ۘ لَهٗ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَ مَا فِی الۡاَرۡضِ ؕ وَ کَفٰی بِاللّٰهِ وَکِیۡلًا
. হে কিতাবীরা স্বীয় দ্বীনের মধ্যে তোমরা বাড়াবাড়ি করো না এবং আল্লাহর উপর সত্য ব্যতীত কিছু বলো না। মারইয়াম-তনয় ঈসা মসীহ কেবল আল্লাহ্র রাসূল এবং তার বাণী, যা তিনি মারইয়ামের কাছে পাঠিয়েছিলেন ও তার পক্ষ থেকে রূহ। কাজেই তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূলদের উপর ঈমান আন এবং বলো না, তিন! নিবৃত্ত হও, এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর হবে। আল্লাহই তো এক ইলাহ; তার সন্তান হবে—তিনি এটা থেকে পবিত্র-মহান। আসমানসমূহে যা কিছু আছে ও যমীনে যা কিছু আছে সব আল্লাহরই; আর কর্মবিধায়করূপে আল্লাহই যথেষ্ট।
غُلُوّ শব্দের অর্থ সীমা ছাড়িয়ে যাওয়া। অর্থাৎ দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করার অর্থ তার ন্যায়সঙ্গত সীমারেখা অতিক্রম করা। আহলে কিতাব অর্থাৎ ইয়াহুদী-নাসারা উভয় জাতিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, দ্বীনের ব্যাপারে কোনরূপ বাড়াবাড়ি করো না। কারণ এ বাড়াবাড়ি রোগে উভয় জাতিই আক্রান্ত হয়েছে। নাসারারা ঈসা ‘আলাইহিস্ সালাম-কে ভক্তি-শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করেছে। তাকে স্বয়ং আল্লাহ, আল্লাহর পুত্র অথবা তিনের এক আল্লাহ বানিয়ে দিয়েছে। অপরদিকে ইয়াহুদীরা তাকে অমান্য ও প্রত্যাখ্যান করার দিক দিয়ে বাড়াবাড়ি পথ অবলম্বন করেছে। তারা ঈসা আলাইহিস সালাম-কে আল্লাহর নবী হিসেবে স্বীকার করেনি। বরং তার মাতা মারইয়াম ‘আলাইহাস সালাম-এর উপর মারাত্মক অপবাদ আরোপ করেছে এবং তার নিন্দাবাদ করেছে। দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবড়ি ও সীমালংঘনের কারণে ইয়াহুদী ও নাসারাদের গোমরাহী ও ধ্বংস হওয়ার শোচনীয় পরিণতি বারবার প্রত্যক্ষ হয়েছে। তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার প্রিয় উম্মতকে এ ব্যাপারে সংযত থাকার জন্য সতর্ক করেছেন।
মহান আল্লাহ বলেছেন, {اتَّخَذُواْ أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِّن دُونِ اللّه}
অর্থাৎ, তারা আল্লাহকে ছেড়ে দিয়ে তাদের পন্ডিত-পুরোহিতগণকে প্রভু বানিয়ে নিয়েছে। (সূরা তাওবাহ ৩১) আল্লাহর আসনে বসানোর সারকথা হচ্ছে, তাদের (পুরোহিতগণ কর্তৃক) হালালকৃত জিনিসকে হালাল এবং হারামকৃত জিনিসকে হারাম বলে মেনে নেওয়া। অথচ এ বিষয়ে পরিপূর্ণ অধিকার একমাত্র আল্লাহর। কিন্তু আহলে কিতাবরা এই অধিকারও তাদের পন্ডিত-পুরোহিতগণকে প্রদান করেছে। আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা আহলে কিতাবদেরকে ধর্মীয় ব্যাপারে বাড়াবাড়ি ও অতিরঞ্জন করতে নিষেধ করেছেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমরা আমার প্রশংসা করতে গিয়ে এমন অতিরঞ্জিত করো না, যেমন নাসারারা ঈসা ইবন মারইয়াম আলাইহিমুস সালাম-এর ব্যাপারে করেছে। স্মরণ রাখবে যে, আমি আল্লাহর বান্দা। অতএব, আমাকে আল্লাহর বান্দা ও তার রাসূল বলবে।” [বুখারীঃ ৩৪৪৫] অর্থাৎ আল্লাহর বান্দা ও মানুষ হিসেবে আমিও অন্য লোকদের সমপর্যায়ের। তবে আমার সবচেয়ে বড় মর্যাদা এই যে, আমি আল্লাহর রাসূল। এর চেয়ে অগ্রসর করে আমাকে আল্লাহ তা’আলার কোন বিশেষণে বিশেষিত করা বাড়াবাড়ি বৈ নয়। তোমরা ইয়াহুদী-নাসারাদের মতো বাড়াবাড়ি করো না। হাদীসে এসেছে যে, হজের সময় ‘রমীয়ে জামারাহ’ অর্থাৎ কংকর নিক্ষেপের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা-কে কংকর আনতে আদেশ করলেন। তিনি মাঝারি আকারের পাথরকুচি নিয়ে এলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত পছন্দ করলেন এবং বললেন, “এ ধরণের মাঝারী আকারের কংকর নিক্ষেপ করাই পছন্দনীয়। বাক্যটি তিনি দু’বার বললেন। তারপর বললেন, ‘তোমরা দ্বীনের মধ্যে বাড়াবাড়ি থেকে দূরে থেকে। কারণেই ধ্বংস হয়েছে। [ইবন মাজাহ: ৩০২৯]
‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে কোন কাজ করলেন এবং অন্যদের সেটা করার অনুমতি দিলেন। তা সত্ত্বেও একদল লোক তাত্থেকে বিরত রইল। এ সংবাদ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে পৌঁছলে তিনি ভাষণ দিলেন এবং আল্লাহর প্রশংসার পর বললেনঃ কিছু লোকের কী হয়েছে, তারা এমন কাজ থেকে বিরত থাকতে চায়, যা আমি নিজে করছি। আল্লাহর কসম! আমি আল্লাহর সম্পর্কে তাদের থেকে বেশি জানি এবং আমি তাদের চেয়ে অনেক অধিক তাঁকে ভয় করি। [বুখারীঃ৭৩০১; মুসলিম ৪৩/৩৫, হাঃ ২৩৫৬, আহমাদ ২৫৫৩৮] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৬২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫৫৮)
(২) এখানে ‘কালেমাতুহু’ শব্দে বাতলে দেয়া হয়েছে যে, ঈসা আলাইহিস সালাম আল্লাহর কালেমা। মুফাসসিরগণ এর বিভিন্ন অর্থ বর্ণনা করেছেন
(১) ‘কালেমাতুল্লাহ’ অর্থ আল্লাহর সুসংবাদ। এর দ্বারা ঈসা আলাইহিস্ সালাম-এর ব্যক্তি-সত্তাকে বোঝানো হয়েছে। ইতোপূর্বে আল্লাহ তা’আলা ফিরিশতার মাধ্যমে মারইয়াম ‘আলাইহাস সালামকে ঈসা আলাইহিস সালাম সম্পর্কে যে সুসংবাদ দান করেছিলেন সেখানে ‘কালেমা’ শব্দ প্রয়োগ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, (إِذْ قَالَتِ الْمَلَائِكَةُ يَا مَرْيَمُ إِنَّ اللَّهَ يُبَشِّرُكِ بِكَلِمَةٍ) “যখন ফিরিশতারা বললো, হে মারইয়াম! নিশ্চয় আল্লাহ তোমাকে সুসংবাদ দিচ্ছেন এক কালেমার” [সূরা আলে-ইমরানঃ ৪৫]
(২) কারো মতে এখানে ‘কালেমা’ অর্থ নিদর্শন। যেমন অন্য এক আয়াতে শব্দটি নিদর্শন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যথা: (وَصَدَّقَتْ بِكَلِمَاتِ رَبِّهَا) ইমরানের কন্যা মারয়ামের উদাহরণও পেশ করেছেন, যে তার লজ্জাস্থানকে হিফাজত করেছিল৷ অতপর আমি আমার পক্ষ থেকে তার মধ্যে রূহ ফুঁৎকার করছিলাম৷ সে তার বাণীসমুহ এবং কিতাবসমুহের সত্যতা প্রতিপন্ন করেছে৷ সে ছিল আনুগত্যকারীদের অন্তরভুক্ত৷ [সূরা আত-তাহরীম: ১২]
তাই আল্লাহ্ তা’আলা কর্তৃক মারইয়ামের প্রতি কালেমা পাঠাবার অর্থ হচ্ছে এই যে, আল্লাহ তা’আলা মারইয়াম ‘আলাইহাস সালামের গর্ভাধারকে কোন পুরুষের শুক্ৰকীটের সহায়তা ছাড়াই গর্ভধারণের হুকুম দিলেন। সে হিসেবে ঈসা আলাইহিস সালাম শুধু আল্লাহর কালেমা বা নির্দেশে চিরাচরিত প্রথার বিপরীতে পিতার মাধ্যম ছাড়াই জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
(৩) কাতাদা বলেন, কালেমা দ্বারা كُنْ বা ‘হও’ শব্দ বোঝানো হয়েছে। [তাবারী] ঈসা আলাইহিস সালামকে ‘কালেমাতুল্লাহ’ বলার কারণ হচ্ছে এই যে, ঈসা আলাইহিস সালামের জন্মের ব্যাপারটি জাগতিক কোন মাধ্যম বাদেই আল্লাহর কালেমা দ্বারা সংঘটিত হয়েছে। এখানে তাকে ‘আল্লাহর কালাম’ বলে বিশেষভাবে উল্লেখ করে সম্মানিত করাই উদ্দেশ্য। নতুবা সবকিছুই আল্লাহর কালেমার মাধ্যমেই হয়। তার কালেমা ব্যতীত কিছুই হয় না। আল্লাহ ঈসা আলাইহিস সালামকে তার নিদর্শন ও আশ্চর্যতম সৃষ্টি হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। তিনি জিবরীল আলাইহিস সালামকে মারইয়ামের নিকট পাঠালেন। জিবরীল আলাইহিস সালাম তার জামার ফাঁকে ফুঁ দিলেন। এ পবিত্র ফেরেশতার পবিত্র ফুঁ মারইয়ামের গর্ভে প্রবেশ করলে আল্লাহ তা’আলা সে ফুঁকটিকে পবিত্র রুহ হিসেবে পরিণত করলেন। আর এ জন্যই তাঁকে সম্মানিত করে ‘রুহুল্লাহ’ বলা হয়ে থাকে। [তাফসীরে সা’দী]
(৩) কুরআন নাযিলের সমসাময়িক কালে খৃষ্টানরা যেসব উপদলে বিভক্ত ছিল, তন্মধ্যে ত্রিত্ববাদ সম্পর্কে তাদের ধর্মবিশ্বাস তিনটি ভিন্ন ভিন্ন মূলনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। এক দল মনে করতো-মসীহই আল্লাহ। স্বয়ং আল্লাহই মসীহরূপে পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছেন। দ্বিতীয় দল বলতো – মসীহ পুত্র। তৃতীয় দলের বিশ্বাস ছিল – তিন সদস্যের সমন্বয়ে আল্লাহর একক পরিবার। এ দলটি আবার দুটি উপদলে বিভক্ত ছিল। এক দলের মতে পিতা, পুত্র ও মারইয়াম এ তিনের সমন্বয়ে এক আল্লাহ। অন্য একদলের মতে মারইয়াম ‘আলাইহিস সালাম-এর পরিবর্তে রূহুল কুদুস বা পবিত্র আত্মা জিবরীল আলাইহিস সালাম ছিলেন তিন আল্লাহর একজন।
মোটকথা, খৃষ্টানরা ঈসা আলাইহিস সালাম-কে তিনের এক আল্লাহ মনে করতো। তাদের ভ্রান্তি অপনোদনের জন্য কুরআনুল কারীমে প্রত্যেকটি উপদলকে ভিন্ন ভিন্নভাবে সম্বোধন করা হয়েছে এবং সম্মিলিতভাবেও সম্বোধন করা হয়েছে। তাদের সামনে স্পষ্ট ও জোরালোভাবে তুলে ধরা হয়েছে যে, সত্য একটিই। আর তা হলো ঈসা মসীহ আলাইহিস সালাম তার মাতা মারইয়াম আলাইহিস সালাম এর গর্ভে জন্মগ্রহণকারী একজন মানুষ ও আল্লাহ্ তা’আলার সত্য রাসূল। এর অতিরিক্ত তার সম্পর্কে যা কিছু বলা বা ধারণা করা হয়, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও বাতিল। তার প্রতি ইয়াহুদীদের মত অবজ্ঞা বা ঈর্ষা পোষণ করা অথবা খৃষ্টানদের মত অতিভক্তি প্রদর্শন করা সমভাবে নিন্দনীয় ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কুরআনুল কারীমের অসংখ্য আয়াতে একদিকে ইয়াহুদী-খৃষ্টানদের পথভ্রষ্টতা দৃঢ়ভাবে প্রকাশ করা হয়েছে, অপরদিকে আল্লাহ্ তা’আলার দরবারে ঈসা আলাইহিস সালাম-এর উচ্চ মর্যাদা ও বিশেষ সম্মানের অধিকারী হওয়ার কথাও জোরালোভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে। ফলে অবজ্ঞা ও অতিভক্তি দুটি পরস্পর বিরোধী ভ্রান্ত মতবাদের মধ্যবর্তী সত্য ও ন্যায়ের সঠিক পথ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।
(৪) অর্থাৎ আকাশ ও যমীনের উপর হতে নীচে পর্যন্ত যাকিছু আছে সবই আল্লাহ তা’আলার সৃষ্টি ও তার বান্দা। অতএব, তার কোন অংশীদার বা পুত্র-পরিজন হতে পারে না। আল্লাহ তা’আলা একাই সর্বকার্য সম্পাদনকারী এবং সকলের কার্য সম্পাদনের জন্য তিনি একাই যথেষ্ট; অন্য কারো সাহায্য-সহযোগীতার প্রয়োজন নেই। তিনি একক, তার কোন অংশীদার বা পুত্র-পরিজন থাকতে পারে না। সারকথা, কোন সৃষ্ট ব্যক্তিরই স্রষ্টার অংশীদার হওয়ার যোগ্যতা নেই। আল্লাহ তা’আলার পবিত্র সত্তার জন্য এর অবকাশও নেই, প্রয়োজনও নেই। অতএব, একমাত্র বিবেকবর্জিত, ঈমান হতে বঞ্চিত ব্যক্তি ছাড়া আল্লাহ্ তা’আলার সৃষ্ট কোন জীবকে তার অংশীদার বা পুত্র বলা অন্য কারো পক্ষে সম্ভব নয়।
اَلَّذِیۡنَ قَالَ لَهُمُ النَّاسُ اِنَّ النَّاسَ قَدۡ جَمَعُوۡا لَکُمۡ فَاخۡشَوۡهُمۡ فَزَادَهُمۡ اِیۡمَانًا ٭ۖ وَّ قَالُوۡا حَسۡبُنَا اللّٰهُ وَ نِعۡمَ الۡوَکِیۡلُ
এদেরকে লোকেরা বলেছিল, তোমাদের বিরুদ্ধে লোক জড়ো হয়েছে, কাজেই তোমরা তাদেরকে ভয় কর; কিন্তু এ কথা তাদের ঈমানকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছিল এবং তারা বলেছিল, ‘আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনি কত উত্তম কর্মবিধায়ক। আলে ইমরানঃ ১৭৩
فَاَعۡرِضۡ عَنۡهُمۡ وَ تَوَکَّلۡ عَلَی اللّٰهِ ؕ وَ کَفٰی بِاللّٰهِ وَکِیۡلًا
কাজেই আপনি তাদেরকে উপেক্ষা করুন এবং আল্লাহর প্রতি ভরসা করুন; আর কাজ উদ্ধারের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। নিসাঃ৮১
وَ لِلّٰهِ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَ مَا فِی الۡاَرۡضِ ؕ وَ کَفٰی بِاللّٰهِ وَکِیۡلًا
আসমানে যা আছে ও যমীনে যা আছে সব আল্লাহরই এবং কার্যোদ্ধারে আল্লাহই যথেষ্ট। নিসাঃ১৩২
ذٰلِکُمُ اللّٰهُ رَبُّکُمۡ ۚ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ ۚ خَالِقُ کُلِّ شَیۡءٍ فَاعۡبُدُوۡهُ ۚ وَ هُوَ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ وَّکِیۡلٌ
তিনিই তো আল্লাহ, তোমাদের রব; তিনি ছাড়া কোন সত্য ইলাহ নেই। তিনিই সবকিছুর স্রষ্টা; কাজেই তোমরা তাঁর ইবাদত কর; তিনি সবকিছুর তত্ত্বাবধায়ক। আন’আমঃ১০২
وَّ تَوَکَّلۡ عَلَی اللّٰهِ ؕ وَ کَفٰی بِاللّٰهِ وَکِیۡلًا
এবং আপনি নির্ভর করুন আল্লাহর উপর। আর কর্মবিধায়ক হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট। আহযাবঃ৩
وَ لَا تُطِعِ الۡکٰفِرِیۡنَ وَ الۡمُنٰفِقِیۡنَ وَ دَعۡ اَذٰىهُمۡ وَ تَوَکَّلۡ عَلَی اللّٰهِ ؕ وَ کَفٰی بِاللّٰهِ وَکِیۡلًا
আর আপনি কাফির ও মুনাফিকদের আনুগত্য করবেন না, তাদের নির্যাতন উপেক্ষা করুন এবং নির্ভর করুন আল্লাহর উপর এবং কর্মবিধায়করূপে আল্লাহই যথেষ্ট। আহযাবঃ৪৮