বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
যে বিষয়গুলো আমরা দেখতে পাই ও যা দেখতে পাই না তা অহীর জ্ঞানের আলোকে জানতে পারি, আলহামদুলিল্লাহ, এই দুটোর সমন্বয়ে জীবনের ধারাবাহিক পর্যায়গুলো জানা সকলের জন্যই জরুরী।
কোন একটি স্থানে নিরাপদে পৌছাতে হলে সেই স্থান সম্পর্কে যেমন জানা প্রয়োজন তেমনি সেখানে যাওয়ার রাস্তা ও বাহন সম্পর্কেও জানা জরুরী। তাই আখেরাত সম্পর্কে বিশ্বাস রাখা অত্যাবশ্যক করে দেয়া হয়েছে, ঈমান পূর্ন করার জন্য। সহিহ জ্ঞান লাভ তখনই সম্ভব যখন অহীর জ্ঞানের আলোকে জানা যাবে। তাই কুর’আন ও সুন্নাহের আলোকে ধারাবাহিক আলোচনা রইলো। বিভিন্ন স্কলারদের লেখনী বই থেকে, বিভিন্ন স্কলারদের লেকচার থেকে অনুবাদ করে ও কুর’আন তাফসীর ও হাদিস গ্রন্থ থেকে সংগৃহিত করে একটি মিনিমাম ধারনা লাভের প্রচেষ্টা করা হয়েছে। মহান আল্লাহ আমাদের সঠিক জ্ঞানটুকু অন্তরে ধারন করার তাওফিক দান করুন, ভুল ও ত্রুটিগুলো দূর করে দিন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ إِنَّ وَعۡدَ ٱللَّهِ حَقّٞۖ فَلَا تَغُرَّنَّكُمُ ٱلۡحَيَوٰةُ ٱلدُّنۡيَا وَلَا يَغُرَّنَّكُم بِٱللَّهِ ٱلۡغَرُورُ ٥ إِنَّ ٱلشَّيۡطَٰنَ لَكُمۡ عَدُوّٞ فَٱتَّخِذُوهُ عَدُوًّاۚ إِنَّمَا يَدۡعُواْ حِزۡبَهُۥ لِيَكُونُواْ مِنۡ أَصۡحَٰبِ ٱلسَّعِيرِ ٦﴾ [فاطر: ٥، ٦]
“হে মানুষ, নিশ্চয় আল্লাহর ওয়াদা সত্য। অতএব দুনিয়ার জীবন যেন তোমাদেরকে কিছুতেই প্রতারিত না করে; আর বড় প্রতারক(শয়তান) যেন তোমাদেরকে আল্লাহর ব্যাপারে প্রতারণা না করে। নিশ্চয় শয়তান তোমাদের শত্রু, অতএব তাকে শত্রু হিসেবে গণ্য কর। সে তার দলকে কেবল এজন্যই ডাকে যাতে তারা জ্বলন্ত আগুনের অধিবাসী হয়”। [সূরা আল-ফাতির: ৫-৬]
জীবনের পর্যায়ঃ
প্রত্যেক মানুষ (নিম্নের) তিনটি স্তর অতিক্রম করে থাকে।
১- ইহকালীন জীবন
২- বারযাখী জীবন (বারযাখ অর্থ পর্দা যা দুনিয়ার জীবন ও আখেরাতের জীবনের মাঝে)
৩- পরকালীন জীবন বা চিরস্থায়ী জীবন, যার কোনো শেষ নেই।
ইহকালীন জীবনঃ জন্ম থেকে মৃত্যুর পূর্ব মূহুর্ত পর্যন্ত
বারযাখী জীবনঃ মৃত্যু থেকে আখেরাতের ময়দানে উঠা পর্যন্ত
পরকালীন জীবনঃ আখেরাতের ময়দান থেকে জান্নাত/জাহান্নামে প্রবেশ ও অনন্ত জীবনের শুরু।
আখিরাত আরবি শব্দ। আভিধানিক অর্থ- পরকাল। পারিভাষিক দৃষ্টিকোণ থেকে আখিরাত বলতে, মৃত্যু পরবর্তী জীবন। এক কথায়, ইনতিকালের পর থেকে যে জীবন শুরু হয় সেটাকে বলে আখিরাত।
আখিরাত বা পরকাল হলো- যে এই দিনের পর আর কোনো দিন নেই, নেই কোনো কাল বা সময়। সে দিন থেকে জান্নাতিরা জান্নাতে এবং জাহান্নামিরা জাহান্নামে চিরকাল থাকবে।
পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে আখিরাতের জীবনকে দুভাগে বিন্যাস করা হয়েছে-
১. মৃত্যু থেকে কিয়ামত পর্যন্ত( আলমে বরযখ বা কবরের জীবন)
২. কিয়ামত থেকে অনন্তকাল অবধি। সেখানে মৃত্যু ও ধ্বংস নেই।
প্রথম পর্যায়ের নাম আলমে বরযখ বা কবরের জীবন। মৃত্যুর পর মানব দেহ কবরস্থ করা হোক কিংবা না করা হোক কিংবা সাগরে ভাসিয়ে দেয়া হোক কিংবা আগুনে ভষ্মীভূত হয়ে যাক বা অন্যকোন ভাবে নিশেষ হয়ে যাক- সর্বাবস্থায় তারপর থেকে বরযখ জীবন শুরু হয়।
আর দ্বিতীয় পর্যায় হল কিয়ামত, হাশর নশর বা অনন্তকালের জীবন।
আখেরাতের কয়েকটি অধ্যায় বা স্তর রয়েছে। মৃত্যু পর সে অধ্যায়গুলো মানুষের জীবনে একটির পর আরেকটি আসে। অধ্যায়গুলো হলো-
১. মৃত্যু
২. আলমে বরযখ বা কবরের জীবন- ক) ইল্লিয়্যিন ও খ) সিজ্জিন
৩. কিয়ামত (পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে)- ১ম শিংগা ও ২য় শিংগা (নতুন পৃথিবী ও যমীন)
৪। হাসরের মাঠে অবস্থান – এখানে কয়েকটি পর্যায়ঃ
ক) কবর থেকে দলে দলে বের হওয়া
খ) নির্ধারিত খোলা মাঠে বস্ত্রহীন অবস্থায় অবস্থান
গ) সূর্যকে খুব নিকটে আনা
ঘ) ৭ ধরনের ব্যক্তি(আল্লাহর আরশের ছায়া লাভ) ছাড়া বাকীদের ঘর্মাক্ত হওয়া ও ডুবে থাকা
ঙ) হাউযে কাউসার ও বিদ’আতীদের জাহান্নামে তাড়িয়ে নেয়া
চ) মহান আল্লাহর অবতরন
ছ) বিচার কার্য শুরু করার জন্য সুপারিশ
জ) মহান রবের সাথে কথোপকথন
ঝ) বিনা বিচারে জান্নাত লাভ করবেন যারা
ঞ) আমলনামা পেশ
ট) বিভিন্ন পর্যায়ের সাক্ষী
ঠ) মিযান কায়েম
ড) পুল সিরাত
ঢ) ঈমানদার, নবী রাসূল ও মহান রবের সুপারিশ
ণ) আরাফবাসী, মুমিন ও মুনাফিকদের কথোপকথন
ত) কানতারা
থ) জান্নাত ও জাহান্নাম
দ) মৃত্যুর মৃত্যু হওয়া
ধ) চিরস্থায়ী জান্নাত ও জাহান্নামের ফয়সালা