১।“আমার রমাদান, আপণ সাথী আল কুর’আন”- ১ম পারা

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।

মহান আল্লাহর অশেষ শুকরিয়া যিনি কুর’আন পড়া ,জানা,বুঝার অন্তর দান করেছেন। আলহামদুলিল্লাহ। রব্বুল আলামীন কুর’আনের প্রতি ভালো লাগা ও ভালোবাসার বিশেষ নি’আমত সকল মুমিন পরিবারেই দান করুন।

আজ এখানে ১ম পারার সংক্ষিপ্ত রুকু ভিত্তিতে বিষয় শিক্ষা তুলে ধরা হলো। নীচে power point slide presentation ফাইল আপলোড করা হলো। দাওয়ার কাজে কোন উপকার হলে আলহামদুলিল্লাহ। আপনারা শেয়ার করে পাঠিয়ে দিতে পারেন প্রিয়জনকে। মহান আল্লাহ আমাদের সকলের প্রচেষ্টা কবুল করে নিন।(তাফসিরে যাকারিয়া, আহসানুল বয়ান, ইবন কাসীর থেকে নোট করা)

সূরা ফাতিহা

আল্লাহর নাম সমূহঃ

الرَّحۡمٰنِ—-দুনিয়াতে তাঁর রহমত ব্যাপক;  কাফের ও মু’মিন সকলেই উপকৃত।

لرَّحِیۡمِ —–আখেরাতে কেবল ‘রাহীম’ তাঁর মু’মিনদের জন্য নির্দিষ্ট।

مٰلِکِ—– মালিক, একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী,বিচার দিনের মালিক

শব্দার্থঃ

اَلۡحَمۡدُ لِلّٰه———সকল প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা আল্লাহর জন্য

 صِّرَاط———পথ,      اهدِ ——–(হিদায়াত/পথ প্রদর্শন)

 لۡمُسۡتَقِیۡمَ—সহজ সরল, مَغۡضُوۡب—অভিশপ্ত,  الضَّآلِّیۡن-পথভ্রষ্

মুমিনের ওয়াদাঃ

আমরা কেবল তোমারই ইবাদত করি এবং তোমারই কাছে সাহায্য চাই।

মুমিনের প্রার্থনাঃ

আমাদেরকে সরল পথের হিদায়াত দান করো।

তাদের পথ, যাদেরকে আপনি নিয়ামত দিয়েছেন,

যাদের উপর আল্লাহর ক্রোধ আপতিত হয়নি এবং যারা পথভ্রষ্টও নয়।

করনীয়ঃ

  • জীবনের সকল প্রাপ্তির জন্য অন্তর থেকে মুখে বলা আলহামদুলিল্লাহ।
  • প্রতি কাজে রবের দাসত্ব ও তাঁরই সাহায্য কামনা ও নির্ভর করা।
  • অভিশপ্ত পথ ও ভ্রষ্ট পথ থেকে দূরে সরে থাকা।

সূরা বাকারাঃ ১ম রুকু (১-৭)আয়াত

মুত্তাকীদের হিদায়াতঃ এই আল কুর’আন যেখানে কোন সন্দেহ নেই।

মুত্তাকীদের গুনাবলীঃ

  • যারা গায়েবের প্রতি ঈমান আনে
  • সালাত কায়েম করে
  • মহান আল্লাহ যা দান করেছেন তা থেকে ব্যয় করে।
  • ঈমান আনে আল কুর’আন এবং  পূর্বে নাযিলকৃত কিতাব সমূহে।
  • আর যারা আখেরাতে দৃঢ় বিশ্বাসী।

 মুত্তাকীরাই রব-এর নির্দেশিত হেদায়াতের পথে থেকে সফলকাম।

কাফেরদের উপর সীল মেরে দেয়া হয়েছে দৃষ্টি অন্তর শ্রবন শক্তির উপর।

কাফেরদের জন্য রয়েছে মহা শাস্তি।

সূরা বাকারাঃ ২য় রুকু (৮-২০)আয়াত

মুনাফিকদের চরিত্রঃ

  • মুখে বলে ঈমান এনেছি কিন্তু অন্তরে ইমান নাই, তারা মুমিন নয়।
  • আল্লাহ ও মুমিনদের প্রতারিত করে মুলত নিজেদের প্রতারিত করে।
  • মুনাফেকী একটি অন্তরের রোগ, তাদের কাজ কর্মের কারনে এই রোগ আল্লাহ বৃদ্ধি করে দেন।
  • তারা মিথ্যাবাদী
  • নিজেদের সংশোধনকারী মনে করে, মূলত ফাসাদকারী এরাই।
  • ইমান আনতে বললে এরা বলে, নির্বোধ লোকদের মত ইমান আনবো না। ইমানদারদের নির্বোধ মনে করে।
  • ইমানদারদের সাথে মিলিত হলে একরকম,শয়তানদের সাথে মিলে বলে, ইমানদারদের উপহাস করি।
  • এরা ভ্রান্ত পথ কিনেছে,হিদায়াত প্রাপ্ত নয়,সফল নয়।

আল্লাহ তাদের অবকাশ দিচ্ছেন অবাধ্যতার মধ্যে বিভ্রান্তের মত ঘুরে বেড়াতে।

করনীয়ঃ মুনাফেকী চরিত্র থেকে নিজেদের মুক্ত রাখা ও মুনাফিকদের থেকে সতর্ক থাকা।

মুনাফিকদের উদাহরনঃ দুটি উপমা দিয়ে বুঝানো হয়েছে।

সূরা বাকারাঃ ৩য় রুকু (২১-২৯)আয়াত

এই রুকুতে সরাসরি সাধারন সকল মানুষকে সম্বোধন করে আল্লাহ বলেছেনঃ

  • তোমরা তোমাদের সৃষ্টিকর্তা রব-এর ইবাদাত কর যেন তাকওয়ার অধিকারী হও। তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ বা একমাত্র আল্লাহর ইবাদাত করলেই তাকওয়ার অধিকারী হওয়া যাবে নতুবা নয়।

আল্লাহর নিদর্শন সমূহঃ

  • যমীনকে বিছানা ও আসমানকে ছাদ এবং
  • আকাশ হতে পানি অবতীর্ণ করে জীবিকার জন্য ফলমূল উৎপাদন
  • প্রানহীন থেকে জীবন দিয়েছেন
  • যমীনের সকল কিছুই মানুষের জন্য সৃষ্টি করেছেন রব।
  • সাতটি আকাশকে সুবিন্যস্থ করেছেন।

মহান আল্লাহ চ্যালেঞ্জ করেছেনঃ এই রকম একটি সুরা বানাও যদি পারো।

মানুষ ও পাথর হবে ইন্ধন সেই আগুন থেকে বাঁচার আহবান আল্লাহ করেছেন।

কাফেরদের জন্য জাহান্নাম।

জান্নাতীদের চরিত্রঃ ঈমান আনা ও নেক আমল করা

জান্নাতের বর্ননাঃ

স্থায়ী বাসস্থান, তলদেশে নহর, পবিত্র সংগীনি, ফল-মূল(দুনিয়ার সাদৃশ্যপূর্ণ)

মহান আল্লাহ উপমা দেন মুমিনদের জন্য কল্যান,হিদায়াত কিন্তু ফাসিকদের জন্য বিভ্রান্তি।

ক্ষতিগ্রস্থ কারাঃ

  • যারা আল্লাহর সাথে দৃঢ় অঙ্গীকারে আবদ্ধ হওয়ার পর তা ভঙ্গ করে,
  • আর যে সম্পর্ক অক্ষুন্ন রাখতে আল্লাহ আদেশ করেছেন তা ছিন্ন করে
  • এবং যমীনের উপর ফাসাদ সৃষ্টি করে বেড়ায়।

আল্লাহর নাম সমূহঃ عَلِیۡم -সব কিছু অবগত

সূরা বাকারাঃ ৪র্থ রুকু (৩০-৩৯)আয়াত

মানব সৃষ্টির উদ্দেশ্যঃ আল্লাহর খলিফা বা প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন।

                   হামদ তাসবী ও পবিত্রতা ঘোষনা ফেরেশতাদের মূল কাজ

আদম আ এর শ্রেষ্ঠত্বঃ         জ্ঞান ও শিক্ষা দিয়েছেন।

ইবলিসের চরিত্রঃ অবাধ্যতা, অহংকার ও কাফিরদের অন্তর্ভূক্ত।

আদমের সংগী হাওয়া কে সৃষ্টির পদ্ধতি উল্লেখ না করেই দুজনের জান্নাতে অবস্থানের নির্দেশনা।

মহান আল্লাহর প্রথম নিষেধবানীঃ একটি গাছের কাছে না যাওয়া, অবাধ্য হলে পরিনতি জালেমদের অন্তর্ভূক্ত হবে।

শয়তানের কাজঃ পদস্খলন করানো

প্রথম তাওবার বানী শেখালেন আল্লাহঃ

দুনিয়ায় প্রথম অবতরনঃ দুই পক্ষ-মানবদ্বয় ও  ইবলিস(শত্রু)

দুনিয়ায় অবস্থানের ধরনঃ কিছুদিনের জন্য বসবাস ও জীবিকা লাভ

দুনিয়ার জীবনের প্রয়োজনীয় বিষয় লাভঃ হিদায়াত

হিদায়াতঃ জীবন চলার গাইড    এর অনুসরনে গ্রুপঃ কোন ভয় বা চিন্তা নেই

                  এর অস্বীকার ও মিথ্যারোপকারীদের পরিনতিঃ স্থায়ী জাহান্নাম

আল্লাহর নাম সমূহঃ  প্রজ্ঞাময়  الۡعَلِیۡم   الۡحَکِیۡمُ-সর্বজ্ঞ

 التَّوَّاب-তাওবা কবুলকারী, لرَّحِیۡم – পরম দয়ালু

করনীয়ঃ          প্রতিনিধির দায়িত্ব বুঝা ও পালন করা।

                শয়তানকে শত্রু হিসেবে চেনা ও দূরে অবস্থান ও প্রতিহত করা।

                ভুল হলে তাওবা করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসা।

সূরা বাকারাঃ ৫ম রুকু (৪০-৪৬)আয়াত

বনী ইসরাইলকে সম্বোধন করে বলা—-

১। আল্লাহর নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা স্বীকার ও অংগীকার পূরনের আদেশ। বিনিময়ে আল্লাহও অংগিকার পূর্ণ করে দিবেন।

২। শুধুমাত্র আল্লাহকে ভয় করার আদেশ।

৩। কুর’আনের প্রতি ইমান আনার আদেশ (তাদের তাওরাত এর সত্যতাকারী)

৪। আমার আয়াতের বিনিময়ে স্বল্প মূল্য গ্রহণ করো না, অস্বীকারকারী হইনা।

৫। তাকওয়া অবলম্বন, সত্য কে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত না করা, সত্য গোপন না করা

৬। তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা ও যাকাত দাও এবং রুকূ’কারীদের সাথে রুকূ কর।

৭। কিতাব অধ্যয়ন করেও অন্যকে উপদেশ দেয় কিন্তু নিজেরা অনুসরন করে না।

সবর ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনাকারীর বৈশিষ্ট্যঃ

  • বিনয়ী
  • আল্লাহর সাথে সাক্ষাত ও আল্লাহর কাছে ফিরে যাওয়া বিশ্বাসী

করনীয়ঃ

  • নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা আদায় ও অংগীকার পূরনে সচেতন
  • তাকওয়া, সত্যবাদী, সত্য সাক্ষীদানকারী, কুর’আনের কথাকে স্বার্থে বিক্রি না করা
  • সালাত,যাকাত ও জামা’আত বদ্ধ, কথা কাজ ও জ্ঞানের সামঞ্জস্যতা রক্ষা
  • বিনয়ী হওয়া ও আখেরাতের বিশ্বাস দৃঢ় থাকা

সূরা বাকারাঃ ৬ষ্ঠ রুকু (৪৭–৫৯)আয়াত

বনী ইসরাইলকে স্মরন করিয়ে দেয়া হচ্ছে-

১। বনী ইসরাইলের নিয়ামত-তাদের শ্রেষ্ঠত্ব দান অন্য সকল সৃষ্টির উপর।

২। হাসরের মাঠের চিত্রঃ কেউ কারো কাজে আসবে না, সুপারিশ গ্রহন করা হবে না, কারো বিনিময় গ্রহন বা সাহায্যপ্রাপ্ত হবে না।

৩। ফেরাউনের নির্যাতন থেকে মুক্তি দান ও তাদের ধ্বংস(সাগরডুবি)

৪। মুসা আ ৪০দিনের জন্য আল্লাহর সাথে সাক্ষাত

৫। বনী ইসরাইল জাতি গো পুজায় লিপ্ত হয়ে যালিমে পরিনত

৬। আল্লাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন কৃতজ্ঞ হওয়ার আহবান

৭। মূসা আ কে ফুরকান প্রদান যা হিদায়াতের জন্য।

৮। আল্লাহর কাছে তাওবা করা ব্যক্তির জন্যই কল্যানকর।

৯। মৃত্যর পর আবার জীবিত করা, মান্না ও সালওয়া দান

মুহসিনিনঃ যিনি ইহসান করেন, সুন্দর করে ভালো কল্যান কাজ করে। তাদের জন্য রিযিক বাড়িয়ে দেয়ার কথা যদি ক্ষমা প্রার্থনা সহকারে বিনয়াবনত থাকে।

যালিমঃ যারা অবাধ্য আচরন করে, তাদের আকাশ থেকে শাস্তি(প্লেগ বা মহামারি) প্রদান।

আল্লাহর নামসমূহঃ التَّوَّابُ الرَّحِیۡمُ – অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু

     بَارِئِ – সঠিকভাবে সৃষ্টিকারী(নির্মাণকারী, পরিকল্পনাকারী, সৃষ্টিকারী)

করনীয়ঃ সকল নিয়ামত স্মরন করে কৃতজ্ঞ থাকা,মুহসিনিন হওয়া,ক্ষমা প্রার্থনাকারী হওয়া।

সূরা বাকারাঃ ৭ম রুকু (৬০–৬১)আয়াত

১। বারোটি পানির(প্রশ্রবনের ব্যবস্থা)

২। ফাসাদ করতে নিষেধ।

৩। ৩। জান্নাতী খাবারে সন্তুষ্ট না থেকে অন্য খাবার দাবী(পিঁয়াজ—)

লাঞ্ছনা ও দারিদ্র্য আপতিত হলো এবং আল্লাহর গযবের শিকার কারনঃ

  • আল্লাহর আয়াতসমূহকে অস্বীকার
  • নবীদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা
  • অবাধ্যতা ও সীমালংঘন করা

সূরা বাকারাঃ ৮ম রুকু (৬২–৭১)আয়াত

১। পুরস্কার লাভ,ভয় ও চিন্তামুক্ত জীবনা লাভ এর শর্তঃ

  • ঈমান আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি
  • আমলে সালেহ করা

২। তুর পর্বত উত্তোলনের ঘটনা।

৩। কিতাবকে দৃঢ়তার সাথে ধারন, স্মরন রাখা ও তাকওয়া অবলম্বনের আদেশ

৪। শনিবারের ঘটনাঃ  অন্যায়কারী ও অন্যায়ে বাধা না দানকারীর পরিনতি শাস্তি

                       অন্যায়ে বাধাদানকারী লোকেরা আযাব থেকে মুক্ত।

৫। এই ঘটনা মুত্তাকীদের জন্য উপদেশ ও  অন্যায়কারীদের জন্য শিক্ষা।

৬। গাভী যবাই করার ঘটনা

করনীয়ঃ ঈমান ও আমলে সালেহ করা

 কিতাবকে স্মরন রাখা ও শক্তভাবে অটল থাকা,তাকওয়া অবলম্বন।

অন্যায় কাজে বাধা দান করা, অতিরিক্ত প্রশ্ন করা থেকে বিরত থাকা

সূরা বাকারাঃ ৯ম রুকু (৭২–৮২)আয়াত

১।বনী ইসরাইল জাতিতে এক ব্যক্তি খুন হওয়া ও তার সনাক্তকারী বের করার ঘটনার মাধ্যমে মৃতকে জীবিত করার নিদর্শন বুঝানো।

২। অন্তরের  উপমা দিয়ে উদাহরনঃ পাথরের তিনটি ক্রিয়া বর্ণিত হয়েছেঃ

(ক) পাথর থেকে বেশী পানি প্ৰসরণ,

(খ) কম পানির নিঃসরণ। এ দুটি প্রভাব সবারই জানা।

(গ) নীচে গড়িয়ে পড়া(আল্লাহর ভয়ে)

৩। ইয়াহুদীদের তিন শ্রেণী উল্লেখঃ

এক শ্রেণী হচ্ছে, আলেম সম্প্রদায়-আল্লাহর কালাম বিকৃত করা।

২য় শ্রেনী হচ্ছে মুনাফিক- মুমিনদের কাছে নিজেদেরকে মুমিন হিসেবে পেশ করে।

৩য় শ্রেণী হচ্ছে, জাহেল মূর্খ গোষ্ঠী। তারা পড়ালেখা জানে না।অমূলক ধারনা ও আশা করে। তারা কেবল অন্যদের অন্ধ অনুসরণ করে থাকে। [ইবনে কাসীর]

৪। কিতাব বিকৃতকারীদের জন্য ধবংস।(ওয়াইল জাহান্নাম)

জাহান্নামের নামঃ  وَيْلٌ   ওয়াইল’ জাহান্নামের এক উপত্যকা যার গভীরতা এত বেশী যে, একজন কাফেরকে তার তলদেশে পড়তে চল্লিশ বছর সময় লাগবে! (আহমাদ, তিরমিযী, ইবনে হিববান, হাকেম, ফাতহুল ক্বাদীর)

৫। তাদের ধারনা ও বলে যে মাত্র কয়েকটি দিন জাহান্নাম তারপরেতো জান্নাতে যাবোই, যা অমূলক চিন্তা। কারন যে ইমান আনবে ও আমলে সালেহ করবে সে চিরস্থায়ী জান্নাত এবং যে পাপ করবে স্থায়ী জাহান্নাম।

করনীয়ঃ        নিজ অন্তরের অবস্থা উপমার সাথে মিলিয়ে সঠিক করা,

               মুনাফেকী চরিত্র থেকে সাবধান ও পরিচ্ছন্ন হওয়া

               ইমান ও আমল জান্নাতের জন্য অত্যাবশ্যকীয়।

সূরা বাকারাঃ ১০ম রুকু (৮৩–৮৬)আয়াত

১। বনী ইস্রাইলের কাছ থেকে অঙ্গীকারঃ

  • আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো উপাসনা করবে না,
  • মাতা-পিতা, আত্মীয়-স্বজন, পিতৃহীন ও দরিদ্রের প্রতি সদ্ব্যবহার করবে এবং মানুষের সাথে সদালাপ করবে,
  • নামাযকে যথাযথভাবে প্রতিষ্ঠিত করবে এবং যাকাত প্রদান করবে।
  • একে অপরের রক্তপাত করবে না এবং একে অন্যকে স্বদেশ থেকে বহিস্কার করবে না,
  • তা স্বীকার করেছিলে,আর  তার সাক্ষ্য দিচ্ছ।

২। পরিপূর্নভাবে কিতাব মানে না কারাঃ

  • যারা আখেরাতের বিনিময়ে দুনিয়ার জীবন ক্রয় করে

৩। পরিপূর্নভাবে কিতাব না মানলে পরিনতিঃ

  • দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছনা ও অপমান এবং
  • কেয়ামতের দিন তাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হবে কঠিনতম শাস্তির দিকে
  • শাস্তি কিছুমাত্র কমানো হবে না ও সাহায্যপ্রাপ্ত হবে না।

করনীয়ঃ ইমান, সকলের সাথে সদব্যবহার, পরিপূর্নভাবে কিতাব অনুসরন করা

সূরা বাকারাঃ ১১তম রুকু (৮৭–৯৬)আয়াত

১ ইসা আ ও তাঁকে যে মুজিযা দেয়া হয়েছে তা বলা হয়েছে।.

২’রূহুল ক্বুদুস’ জিবরাইল আ কে বলা হয়েছে।

৩। অস্বীকারকারিদের চরিত্রঃ (বিধান পছন্দ হয়নি বলে)

  • মিথ্যা প্রতিপন্ন করা, অহংকার করা, হত্যা করা
  • সত্য প্রত্যাখ্যান করার কারনে আল্লাহ অভিসম্পাত করেছেন।
  • ক্রোধের উপর ক্রোধ অর্জন করেছে কারন সত্য জানা বুঝা ও চেনার পর হিংসা জিদের কারনে অস্বীকার করেছে

৪। মুসা আ এর অনুসারীদের অন্তরে পূজার ইচ্ছে এসেছে কারন-

আল্লাহর আদেশের অবাধ্যতা( শুন ও দৃঢ়ভাবে ইস্তিকামাত থাকো)

 সত্য অস্বীকার করা ও না মানা( তারা বলে আমরা শুনলাম ও মানলাম না)

জীবনের প্রতি এদের বেশী ভালোবাসা

দীর্ঘায়ু তাদের আকাঙ্ক্ষা

করনীয়ঃ সাহাবাদের মতো বলা আমরা শুনলাম ও মানলাম।

 

সূরা বাকারাঃ ১২তম রুকু (৯৭–১০৩)আয়াত

১। ইহুদীরা জিবরাইল আ কে শত্রু ভাবার কারন

  • ওহী নিয়ে রাসূল সা এর কাছে অবতরন যা পূর্ববর্তী কিতাবেরও সত্যায়ণকারী এবং যা মুমিনদের জন্য পথপ্রদর্শক ও শুভ সংবাদ

২। মহান আল্লাহ কাফেরদের শত্রু যারা আল্লাহ, তার ফেরেশতাগণ, তার রাসূলগণ এবং জিবরীল ও মীকাঈলের শত্রু হবে

৩। ফাসিকরা আল্লাহর কালাম অস্বীকার করে

৪। সুলায়মান আ ও যাদুবিদ্যার কথা উল্লেখ।

৫। যাদু সম্পূর্নভাবে নিষেধ তারা জানতো,তারপরেও অবাধ্য হয়েছিলো।

৬। ইমান ও তাকওয়া অবলম্বনে আল্লাহর পক্ষ থেকে সাওয়াব ও কল্যান লাভ।

৭। হারুত ও মারুত দুই ফেরেশতার নাম জানা যায়।

করনীয়ঃ যাদু সংক্রান্ত সকল কিছু থেকে দূরে থাকা

 

সূরা বাকারাঃ ১৩তম রুকু (১০৪–১১২)আয়াত

১। رَاعِنَا বা ‘রা’এনা’ শব্দটি আরবী ভাষায় নির্দেশসূচক শব্দ। এর অর্থ হচ্ছে ‘আমাদের প্রতি লক্ষ্য করুন’।

তারা বলত, رَاعِيْنَا ‘রায়ীনা’ (আমাদের রাখাল) অথবা رَاعِنَا ‘রায়েনা’ (নির্বোধ)।

اُنْظُرْنَا বলো আমাদের খেয়াল করুন

২। কাফের ও মুশরিকরা কখনোই ইমানদারদের কল্যান চায় না। তারা তাদের পথে ফিরাতে চায়।

৩। কোন আয়াত আল্লাহ রহিত করলে তার থেকে উওত্তম আয়াত নাযিল করে থাকেন। হাদীস ও কুরআনের পরিভাষায় এক বিধানের স্থলে অন্য বিধান প্রবর্তন করাকে ‘নস্‌খ’ বলা হয়।

৪। আল্লাহর পরিচয়ঃ সার্বভৌমত্ব একমাত্র তাঁর, তিনিই একমাত্র সাহায্যকারী ও অভিভাবক

৫। ইমানকে কুফর দিয়ে পরিবর্তন পথ হারাকেই বুঝায়

৬। সালাত কায়েম, যাকাত প্রদান, কল্যান কাজ করা যার বিনিময় অবশ্যই আল্লাহ দিবেন। মুশরিক কাফেরদের ব্যপারে ধৈর্য ও উপেক্ষার পথ অবলম্বন করা।

৭। পূর্ণ আত্মসমর্পনকারী ও আমলে সালেহকারী জান্নাতে স্থায়ী থাকবে, চিন্তা ভয় নেই।

৮। হাসরের মাঠে সকল বিতর্কের অবসান হয়ে যাবে।

আল্লাহর নামঃ  قَدِیۡر -ক্ষমতাবান  بَصِیۡر – সম্যক দ্রষ্টা।

করনীয়ঃ শব্দ উচ্চারনে সচেতন থাকা যেনো অর্থের বিকৃতি না হয়।

কাফের মুশরিক থেকেও সচেতন থাকা। সবর নেয়া। পুর্ন আত্মসমর্পনকারী হয়ে আমলে সালেহ করা।

 

সূরা বাকারাঃ ১৪তম রুকু (১১৩–১২১)আয়াত

১। বায়তুল-মুকাদ্দাস, মসজিদে হারাম ও মসজিদে-নববীর অবমাননা, যেমনি বড় যুলুম, তেমনি অন্যান্য মসজিদের বেলায়ও তা সমভাবে প্রযোজ্য। তবে এই তিনটি মসজিদের বিশেষ মাহাত্ম্য ও সম্মান স্বতন্ত্রভাবে স্বীকৃত।

২। উক্ত যুলুমকারীদের জন্য দুনিয়াতে জন্য লাঞ্ছনা ও আখেরাতে রয়েছে মহাশাস্তি।

৩। আল্লাহর পরিচয়ঃ তিনি শিরক থেকে মুক্ত। তিনি পবিত্র, আসমান যমীনের মালিক।

 کُنۡ فَیَکُوۡنُ বললেই তা হয়ে যায়।

৪। রাসূল সা এর পরিচয়ঃ  সত্যসহ সুসংবাদদাতা সতর্ককারীরূপে ( بَشِیۡرًا وَّ نَذِیۡرً)

৫। ইহুদী নাসারারা কখনোই খুশী হবে না যতক্ষন তাদের পথে না যাবে।

৬। আল্লাহর হেদায়েতই প্রকৃত।

রাসূল সা কেও জানিয়েছেন- ইহুদী নাসারাদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ  জ্ঞান আসার পরও করলে, আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন অভিভাবক ও সাহায্যকারীও থাকবে না।

৭। কিতাব যথাযথ তেলাওয়াত করতে হবে।

আল্লাহর নামঃ وَاسِعٌ সর্বব্যাপী  عَلِیۡمٌ- সর্বজ্ঞ  بَدِیۡع – উদ্ভাবনকর্তা

সূরা বাকারাঃ ১৫তম রুকু (১২২–১২৯)আয়াত

বনী ইসরাইলদের নিয়ামতের কথা বলে জানানো হচ্ছে—

১। আখেরাতের কথা স্মরনঃ  তাকওয়া অবলম্বন কর

  যেদিন কোন সত্তা অপর কোন সত্তার কোন কাজে আসবে না। কারো কাছ থেকে কোন বিনিময় গ্রহণ হবে না এবং কোন সুপারিশ কারো পক্ষে লাভজনক হবে না। আর তারা সাহায্যপ্রাপ্তও হবে না।

২। ইবরাহীম আ এর কথা এসেছেঃ তাঁকে পরীক্ষা দেয়া হয়েছিলো, তিনি উত্তীর্ণ হয়েছেন আল্লাহ জানিয়েছেন।

৩। ইবরাহীম আ কে ইমাম বানানো হয়, বংশধরদের মাঝেও ওয়াদা তবে যালিম ব্যতিত।

৪। কাবাঘর পরিচিতিঃ   মানবজাতির মিলনকেন্দ্র ও নিরাপত্তাস্থল।

  মাকামে ইবরাহীমকে সালাতের স্থানরূপে গ্রহণ ।

 তাওয়াফকারী, ইতিকাফকারী, রুকু ও সিজদাকারীদের জন্য (পবিত্র রাখার নির্দেশ)

ইবরাহীম ও ইসমাইল আ ভিত্তি স্থাপন করেন।

৫। ইবরাহীম আ দু’আ করেনঃ

 رَبِّ اجۡعَلۡ هٰذَا بَلَدًا اٰمِنًا وَّ ارۡزُقۡ اَهۡلَهٗ مِنَ الثَّمَرٰتِ مَنۡ اٰمَنَ مِنۡهُمۡ بِاللّٰهِ وَ الۡیَوۡمِ الۡاٰخِرِ

হে আমার রব! এটাকে নিরাপদ শহর করুন এবং এর অধিবাসীদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান আনে তাদেরকে ফলমূল হতে জীবিকা প্রদান করুন।(১২৬)

رَبَّنَا تَقَبَّلۡ مِنَّا ؕ اِنَّکَ اَنۡتَ السَّمِیۡعُ الۡعَلِیۡمُ

হে আমাদের রব! আমাদের পক্ষ থেকে কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।১২৭

رَبَّنَا وَ اجۡعَلۡنَا مُسۡلِمَیۡنِ لَکَ وَ مِنۡ ذُرِّیَّتِنَاۤ اُمَّۃً مُّسۡلِمَۃً لَّکَ ۪ وَ اَرِنَا مَنَاسِکَنَا وَ تُبۡ عَلَیۡنَا ۚ اِنَّکَ اَنۡتَ التَّوَّابُ الرَّحِیۡمُ

‘হে আমাদের রব। আর আমাদের উভয়কে আপনার একান্ত অনুগত করুন এবং আমাদের বংশধর হতে আপনার এক অনুগত জাতি উত্থিত করুন। আর আমাদেরকে ইবাদতের নিয়ম পদ্ধতি দেখিয়ে দিন এবং আমাদের তাওবা কবুল করুন। নিশ্চয় আপনিই বেশী তাওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু। ১২৮

رَبَّنَا وَ ابۡعَثۡ فِیۡهِمۡ رَسُوۡلًا مِّنۡهُمۡ یَتۡلُوۡا عَلَیۡهِمۡ اٰیٰتِکَ وَ یُعَلِّمُهُمُ الۡکِتٰبَ وَ الۡحِکۡمَۃَ وَ یُزَکِّیۡهِمۡ ؕ اِنَّکَ اَنۡتَ الۡعَزِیۡزُ الۡحَکِیۡمُ

হে আমাদের রব! আর আপনি তাদের মধ্য থেকে তাদের কাছে এক রাসূল পাঠান(১), যিনি আপনার আয়াতসমূহ তাদের কাছে তিলাওয়াত করবেন(২); তাদেরকে কিতাব ও হেকমত শিক্ষা দেবেন(৩) এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধ করবেন(৪) আপনি তো পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়’।১২৯

৬। আল্লাহ যারা কুফরি করবে তাদেরকেও জীবন উপকরন দিবেন কিন্তু আখেরাতে শাস্তি।

সূরা বাকারাঃ ১৬তম রুকু (১৩০–১৪১)আয়াত

১। ইবরাহীমের মিল্লাত অনুসরনের আহবান।

২।  দুনিয়াতে তাকে (ইবরাহীম আ) আমরা মনোনীত করেছি; আর আখেরাতেও তিনি অবশ্যই সৎকর্মশীলদের অন্যতম। পুর্ন সমর্পন করে দিয়েছিলেন আল্লাহর আহবানে।

৩। ইবরাহীম ও ইয়াকুব আ  তাদের পুত্রদেরকে এরই নির্দেশ দিয়ে বলেছিলেন, হে পুত্রগণ! আল্লাহই তোমাদের জন্য এ দ্বীনকে মনোনীত করেছেন। কাজেই আত্মসমর্পণকারী (মুসলিম) না হয়ে তোমরা মারা যেও না।

৩। যারা অতীত হয়ে গেছে। তারা যা অর্জন করেছে তা তাদের, তোমরা যা অর্জন করেছো তা তোমাদের। আর তারা যা করত সে সম্বন্ধে তোমাদেরকে প্রশ্ন করা হবে না।

৪। উম্মতে মুহাম্মদীকে বলার আহবানঃ

একনিষ্ঠ হয়ে আমরা ইবরাহীমের মিল্লাত অনুসরণ করব এবং তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না।

আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহ্‌র প্রতি এবং যা আমাদের প্রতি নাযিল হয়েছে এবং যা পূর্বে নাযিল হয়েছে।

আমরা কোন রাসূলদের মধ্যে তারতম্য করি না

আমরা তারই কাছে আত্মসমর্পণকারী।

আল্লাহর রং এ রঞ্জিত হও। আর রং এর দিক দিয়ে আল্লাহর চেয়ে কে বেশী সুন্দর? আর আমরা তারই ইবাদতকারী।

তিনি আমাদের রব এবং তোমাদেরও রব! আমাদের জন্য আমাদের আমল। আর তোমাদের জন্য তোমাদের আমল, এবং আমরা তাঁরই প্রতি একনিষ্ঠ।

৫। ইহুদী নাসারা যারা ইমান আনে নি তাদের বিপক্ষে আল্লাহই যথেষ্ট। আর তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ।

৬। আল্লাহর সাক্ষী গোপন করে তারা যালিম।

আল্লাহর নামঃ  لسَّمِیۡعُ  সর্বশ্রোতা

১ম পারা সমাপ্ত

Power point presentation:————

১ম পারাঃ সূরা ফাতিহা + বাকারা ১৬ রুকু