রমাদান-২০২১ কে স্বাগত জানানোর জন্য প্রস্তুতি । পর্ব-১

আসসালামু’আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ

আলহামদুলিল্লাহ, মহান রবের অশেষ করুনায় ২০২১ সালের রজব মাসের দ্বারপ্রান্তে এসেছি। ইন শা আল্লাহ এইভাবে রমাদানকেও আমরা আমাদের দ্বারপ্রান্তে দেখতে পাবো। 

জীবনের  সময়ের চাকাটাকে আবর্তিত হয়ে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে পরকাল জীবনের শুরুর দিকে। আমরা প্রস্তুতি নিতে থাকি যেনো সুন্দর একটি অন্তর(নফসে মুতমায়িন্নাহ বা ক্বলবে সালিম) নিয়ে রবের দরবারে হাযির হতে পারি।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

আল্লাহ তা’লা বলেন, হে আদম সন্তান! তুমি নিজেকে আমার ইবাদাতের জন্য মুক্ত করে দাও, আমি তোমার বক্ষকে ঐশ্বর্য ও অভাবহীনতা দিয়ে পূর্ণ করে দিব। তোমার দারিদ্র ও অভাব দূর করে দিব। আর যদি তা না করো, তবে আমি তোমার অন্তরকে ব্যস্ততা দিয়ে পূর্ণ করবো এবং তোমার দারিদ্র দূর করব না।

আল জামে আত তিরমিযী ও ইবনে মাজা

মহান আল্লাহ বলেছেন:

وَلَوْ تَرَى إِذِ الْمُجْرِمُونَ نَاكِسُو رُءُوسِهِمْ عِنْدَ رَبِّهِمْ رَبَّنَا أَبْصَرْنَا وَسَمِعْنَا فَارْجِعْنَا نَعْمَلْ صَالِحًا إِنَّا مُوقِنُونَ (12) وَلَوْ شِئْنَا لَآتَيْنَا كُلَّ نَفْسٍ هُدَاهَا وَلَكِنْ حَقَّ الْقَوْلُ مِنِّي لَأَمْلَأَنَّ جَهَنَّمَ مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ (13) فَذُوقُوا بِمَا نَسِيتُمْ لِقَاءَ يَوْمِكُمْ هَذَا إِنَّا نَسِينَاكُمْ وَذُوقُوا عَذَابَ الْخُلْدِ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَ (14)

হায়! সেই সময়টা যদি তুমি দেখতে যখন অপরাধী তার প্রভুর সামনে অবনত মস্তকে দাঁড়াবে এবং বলবে: হে আমার প্রতিপালক! এবার আমরা দেখে নিয়েছি এবং শুনতেও পেয়েছি, এখন আমাদেরকে ফিরিয়ে দাও, আমরা ভালো কাজ করবো, এবার আমরা প্রত্যয় লাভ করেছি। কিন্তু বলা হবে, এবার তোমরা সেই অবহেলার স্বাদ গ্রহণ করো যে কারণে তোমরা এই দিন আমাদের সামনে হাযির হওয়ার ব্যাপারকে ভুলে গিয়েছিলে। আজকে আমরাও তোমাদেরকে ভুলে গিয়েছি। সুতরাং তোমরা যে আমল করতে তার বিনিময়ে আজ চিরস্থায়ী আযাবের স্বাদ গ্রহণ কর।   সূরা আস সাজদা: ১২-১৪

শয়তান যেনো আমাদের গাফেল করে রাখতে না পারে সেইজন্য অলসতা কাটিয়ে রবের পানে পরিশ্রমী হতে হবে।

আর এই দৃষ্টিভংগীকে সামনে রেখে নিজেদের পরিশুদ্ধতার সকল রকমের ব্যবস্থা গ্রহন করি। মহান আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।

আবু বাকর আল-বালখী বলেছেন:

রজব মাস হলো বীজ বপনের মাস, শা’বান মাস হল ক্ষেতে সেচ প্রদানের মাস এবং রামাদান মাস হল ফসল তোলার মাস। তিনি আরও বলেছেন:

রজব মাসের উদাহরণ হলো বাতাসের ন্যায়, শা’বান মাসের উদাহরণ মেঘের ন্যায়, রামাদান মাসের উদাহরণ বৃষ্টির ন্যায়, তাই যে রজব মাসে বীজ বপন করলো না, শা’বান মাসে সেচ প্রদান করলো না, সে কিভাবে রামাদান মাসে ফসল তুলতে চাইতে পারে?

 সপ্তাহের করনীয় (১৪ই ফেব্র – ২০ই ফেব্র)(১লা রজব-৭ই রজব)

১। অযুর ফরয  ও পদ্ধতি সঠিকভাবে জানি। অযু ভংগের কারন সমূহ জানি।

২। সালাতের ফরয ওয়াজীব ও সুন্নাতকে জানি। সহিহ পদ্ধতিতে সালাতে অভ্যস্থ হওয়া।

৩। মুখস্থঃ সূরা ফাতিহা -শব্দার্থ, সানা, রুকু,সাজদাহ তাসবীহ শব্দার্থ শিখে নেই। কুর’আনিক আরবী গ্রামার শেখার সুযোগ করে নেই।

৪। কুর’আন সহীহ পদ্ধতি  যারা জানি না শিখে নেই। যারা জানি রিভিশন দেই যেনো ভুলে না যেয়ে থাকি।

৫। প্রতিদিন দান করা। ইচ্ছে করলে একটি বক্সে  প্রতিদিন সাদাকার অর্থ  রেখে রেখে, সুযোগ করে একসাথে জমানগুলো দান করে দেয়া যায়।

৬। পরিবারে একটি কুর’আন ও হাদীসের শিক্ষা জানানো। ছোট বড় সকলের প্রতি।

৭। বেহুদা কথা বলা থেকে বিরত থাকার অভ্যাস গড়ে নেই। যিকরে অভ্যস্থ হই।

অপ্রয়োজনীয় ঠাট্টা, মিথ্যা বলা, গীবত ও অপ্রয়োজনীয় কথা থেকে বিরত থাকার অনড় সিদ্ধান্ত নিয়ে অভ্যস্থ হই।

৮। একটি দ্বীনী শিক্ষার সহিহ বই উপহার দেই। পরিবার, আত্মীয়, কলিগ, প্রতিবেশী, বা অধিনস্থ যেকোন গ্রুপে।

৯। কমপক্ষে একটি রাত তাহাজ্জুদ পড়া্র মাধ্যমে রবের সাথে সম্পর্ক বাড়াই।

১০। প্রতি আজানের জবাব ও দু’আ করাতে অভ্যস্থ হই ইন শা আল্লাহ।

সপ্তাহের করনীয়ঃ (২১ ফেব্র ২৭ই ফেব্র)(৮ই রজব – ১৪ই রজব)

১। তায়াম্মুম,সফর ও অসুস্থ অবস্থায় সালাত কিভাবে আদায় করতে হয় জানা।

২। মুখস্থঃ সালাতে পঠিত ৫টি সূরা শাব্দিক অর্থসহ, তাশাহহুদ অর্থসহ সহিহভাবে পাঠ।

৩। কুর’আন সহিহ পদ্ধতি রিভিশন দেয়া ও কুর’আনিক গ্রামার শেখার প্রচেষ্টা।

৪। মিউজিকসহ গান শুনা থেকে দূরে থাকা, সকল গানের ফাইল সরিয়ে ফেলা ও কুর’আন তেলাওয়াত শুনা বা নিজে করাতে অভ্যস্থ হওয়া

৫। প্রতিদিন দান অব্যাহত রাখা।

৬। পরিবারে একটি কুর’আন ও হাদীসের শিক্ষা জানানো।

৭। নিজের ও পরিবারের বেপর্দা ছবি সকল সোস্যাল মিডিয়া ও ফোন থেকে সরিয়ে নেয়া। অন্যদের ছবি শেয়ার ও লাইক দেয়া থেকেও বিরত থাকি যেনো বেপর্দার গুনাহে সাক্ষী না হই।

৮। একটি দ্বীনী শিক্ষার সহিহ বই উপহার দেয়া

৯। কমপক্ষে দুইদিন তাহাজ্জুদ পড়া

১০। প্রতি সকাল বিকাল যিকিরে দু’আ করাতে অভ্যস্থ হওয়া ইন শা আল্লাহ

 সপ্তাহের করণীয়ঃ  (২৮শে ফেব্র -৬ইমার্চ)(১৫ ই রজব-২১শে রজব )

১।  সালাত ভংগের কারন, সহু সাজদাহ ও কসমের কাফফারা সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করি।

২। মুখস্থ-সালাতে পঠিত ৫টি সূরার শাব্দিক অর্থসহ, দরুদ শাব্দিক অর্থসহ শেখা।

৩। প্রতিদিন রাতে সুরা মূলক পাঠ, শুক্রবার সূরা কাহাফ পাঠে অভ্যস্থ হওয়া

৪। পারিবারিক তালিম, অধিনস্থ(গৃহ কর্মী ও দাড়োয়ান, ড্রাইভার) দের ইসলামের বেসিক জ্ঞান দানে বই ও পরামর্শ, কুর’আন শিক্ষার ব্যবস্থা করা

৫। তাহাজ্জুদ অন্তত ২ দিন

৬। নিয়মিত সাদাকা করা

৭। ভাংতি রোজা(পূর্বের ফরয অনাদায়কৃত) থাকলে তা আদায় করায় সচেষ্ট হওয়া।

৮। কারো সাথে তর্কে না জড়ানো ও পরিস্থিতিতে উত্তেজিত না হওয়ার অভ্যাস করা

৯। রাগের প্রকাশ নিয়ন্ত্রন করা।  জিহবার সংযম করা।

১০।   সময় নষ্ট করা থেকে দূরে থাকা।

সময়কে বাঁচাতে হলে কিছু টিপস:

  • সুপরিকল্পিত ভাবে কাজ করা
  • সময়ের কাজ সময়ে করে ফেলা
  • কম সময়ের কাজ ততটুকু সময়ে করে ফেলা
  • যা প্রয়োজন নেই তা না করা
  • যা করে লাভ নেই তা না করা
  • যা করলে ক্ষতি তা না করা
  • যা দায়িত্ব না, তা না করা
  • অপ্রয়োজনীয় বা বাজে কথা ও কাজ না করা
  • অবসর সময়কে কাজে লাগানো
  • অপেক্ষার সময়কে কাজে লাগানো
  • এক কাজের ফাঁকে অন্য কাজ করার সুযোগ থাকলে করে ফেলা।

 আপনারাও নিজেরা এর সাথে নিজেদের প্রয়জনীয় বিষয় যোগ করে পরিকল্পনা করে নিতে পারেন ও পরিবারের সদস্যদের দিতে পারেন।

মহান আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। আমাদের সকলের পরিবারকে জান্নাতের উপযোগী করে দিন তাঁর দয়া করুনা ও সাহায্যে।

 

 

রমাদানকে সামনে রেখে আত্মিক উন্নয়নের একটি পরিকল্পনা নমুনা (2021)