সূরা ইখলাস তাফসির

সূরা ইখলাস তাফসির

সূরা সম্পর্কেঃ এ সূরার বহু ফযীলত রয়েছে। তন্মধ্যে নিম্নে কয়েকটির উল্লেখ করা হলোঃ

এক. এর ভালবাসা জান্নাতে যাওয়ার কারণ;

হাদীসে এসেছে, জনৈক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে এসে আরয করলঃ আমি এই সূরাটি খুব ভালবাসি। তিনি বললেনঃ এর ভালবাসা তোমাকে জান্নাতে দাখিল করবে। [মুসনাদে আহমাদ: ৩/১৪১, ১৫০]

দুই. এটি কুরআনের এক তৃতীয়াংশ।

হাদীসে এসেছে, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ তোমরা সবাই একত্রিত হয়ে যাও। আমি তোমাদেরকে কুরআনের এক তৃতীয়াংশ শুনাব। অতঃপর যাদের পক্ষে সম্ভব ছিল, তারা একত্রিত হয়ে গেলে তিনি আগমন করলেন এবং সূরা এখলাস পাঠ করে শুনালেন। তিনি আরও বললেন, এই সূরাটি কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান। [মুসলিম: ৮১২, তিরমিযী: ২৯০০] এ অর্থে হাদীসের সংখ্যা অসংখ্য।

তিন. বিপদাপদে উপকারী।

হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি সকাল-বিকাল সূরা এখলাস, ফালাক ও নাস পাঠ করে তা তাকে বালা-মুসীবত থেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যে যথেষ্ট হয়। [আবু দাউদ: ৫০৮২, তিরমিযী: ৩৫, ৭৫, নাসায়ী: ৭৮৫২]

চার. ঘুমানোর আগে পড়ার উপর গুরুত্ব।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, হে উকবা ইবনে আমের আমি কি তোমাকে এমন তিনটি উত্তম সূরা শিক্ষা দিব না। যার মত কিছু তাওরাত, ইঞ্জীল, যাবুর এবং কুরআনেও নাযিল হয়নি। উকবা বললেন, আমি বললাম, অবশ্যই হ্যাঁ, আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করুন। উকবা বলেন, তারপর রাসূল আমাকে ‘কুল হুয়াল্লাহু আহাদ, কুল আউযু বিরাব্বিল ফালাক, কুল আউযু বিরাব্বিন নাস’ এ সূরাগুলো পড়ালেন, তারপর বললেন, হে উকবা! রাত্রিতে তুমি ততক্ষণ নিদ্রা যেয়ো না, যতক্ষণ সূরা এখলাস, ফালাক ও নাস না পাঠ কর। উকবা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ সেদিন থেকে আমি কখনও এই আমল ছাড়িনি। [মুসনাদে আহমাদ: ৪/১৪৮, ১৫৮-১৫৯]

পাঁচ. এ সূরা পড়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিয়মিত আমল ছিল।

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন বিছানায় ঘুমানোর জন্য যেতেন তখন তিনি তার দু হাতের তালু একত্রিত করতেন তারপর সেখানে ‘কুল হুয়াল্লাহু আহাদ, কুল আউযু বিরাব্বিল ফালাক এবং কুল আউযু বিরাব্বিন নাস’ এ তিন সূরা পড়ে ফুঁ দিতেন, তারপর এ দু হাতের তালু দিয়ে তার শরীরের যতটুকু সম্ভব মসেহ করতেন। তার মাথা ও মুখ থেকে শুরু করে শরীরের সামনের অংশে তা করতেন। এমনটি রাসূল তিনবার করতেন। [বুখারী: ৫০১৭, আবু দাউদ: ৫০৫৬, তিরমিযী: ৩৪০২]

বিষয়বস্ত্ত :

ইখলাস শুধু এ সূরাটির নামই নয় ,এখানে আলোচ্য বিষয়বস্তুর শিরোনামও

আল্লাহ স্বীয় সত্তা ও গুণাবলীতে একক ও অনন্য এবং তাঁর সমতুল্য কেউ নেই- সেকথাই আলোচিত হয়েছে পুরা সূরাটিতে।

এ সূরাটি আসলে মক্কী । বরং এর বিষয়বস্তু সম্পর্কে চিন্তা করলে একে মক্কায় একেবারে প্রথম যুগে অবতীর্ণ সূরাগুলোর অন্তরভুক্ত করা যায়।

আল্লাহর সত্তা ও গুণাবলী সম্পর্কে কুরআনের কোন বিস্তারিত আয়াত তখনো পর্যন্ত নাযিল হয়নি। তখনো লোকেরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আল্লাহর দিকে দাওয়াতের বার্তা শুনে জানতে চাইতো : তাঁর এ রব কেমন , যাঁর ইবাদাত – বন্দেগী কারার দিকে তাদেরকে আহবান জানানো হচ্ছে। এর একেবারে প্রাথমিক যুগে অবতীর্ণ সূরাগুলোর অন্তরভুক্ত হবার আর একটি প্রমাণ হচ্ছে , মক্কায় হযরত বেলালকে (রা) তার প্রভু উমাইয়া ইবনে খালাফ যখন মরুভূমির উত্তপ্ত বালুকার ওপর চিৎ করে শুইয়ে তার বুকের ওপর একটা বড় পাথর চাপিয়ে দিতো তখন তিনি “ আহাদ ” “ আহাদ ” বলে চিৎকার করতেন। এ আহাদ শব্দটি এ সূরা ইখলাস থেকেই গৃহীত হয়েছিল।

ইসলামে সৃষ্টিকর্তার মূল ধারণাকে মাত্র চারটি বাক্যে প্রকাশ করা হয়েছে সূরা ইখলাসে—

বলো, তিনিই আল্লাহ্‌, অদ্বিতীয়! অমুখাপেক্ষী, সবকিছু তাঁর উপর নির্ভরশীল। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি। তাঁর সমকক্ষ আর কিছুই নেই!

সূরা ইখলাসের প্রতিটি শব্দের গভীরতা, যৌক্তিকতা এবং প্রভাব নিয়ে এক একটি রিসার্চ

 

১) قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ কুল হুয়া ল্লা-হু আহাদ

প্রথমে কু’ল শব্দটি নিয়ে বলি। কু’ল (গলার ভীতর থেকে কু বলা) অর্থ ‘বল’। সাবধান থাকবেন, শুধু ‘কুল’ অর্থ কিন্তু ‘খাও’। নামাযে সূরা ইখলাস পড়ার সময় ভুলে বলবেন না, “খাও, তিনি আল্লাহ, অদ্বিতীয়!”

একবার কয়েকজন খ্রিস্টান এসে রাসুলকে عليه السلام আল্লাহর تعالى সম্পর্কে প্রশ্ন করলো। তারা আল্লাহর تعالى সম্পর্কে নানা ধরনের আপত্তিকর মন্তব্য করে জিজ্ঞেস করলো যে, ইসলামে আল্লাহর تعالى সংজ্ঞা কী। এর উত্তর আল্লাহ تعالى নিজে দিলেন সূরা ইখলাস নাজিল করে। তিনি রাসুলকে বললেন, “বলো, তিনি আল্লাহ, …”  রাসুলের عليه السلام মুখ দিয়ে বেড়িয়ে আসলো আল্লাহর تعالى ভাষণ।[সূত্র: তাফহীমুল কু’রআন]

এবার আসি দ্বিতীয় শব্দে: “হুয়া” – “তিনি।” কেন আয়াতটি শুধুই “বল, আল্লাহ تعالى অদ্বিতীয়” হলো না? কেন এখানে “তিনি” যোগ করা হল?

“তিনি” যোগ করার উদ্দেশ্য হলো: যখন নবীকে عليه السلام খ্রিস্টান, ইহুদী, মুশরিকরা সৃষ্টিকর্তার ব্যাপারে জিগ্যেস করেছিল, আল্লাহ تعالى তাদেরকে উত্তরে বলেছেন যে, তিনি কোনো নতুন সৃষ্টিকর্তা নন। ইসলাম কোনো নতুন ধর্ম নয় যে, এখানে কোনো এক নতুন সৃষ্টিকর্তার ধারণা দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু সমগ্র সৃষ্টিজগতের একমাত্র সৃষ্টিকর্তা যে এক, তিনিই যে আল্লাহ, সেটাই এখানে ‘তিনি’ ব্যবহার করে জোর দেওয়া হয়েছে। ইসলাম কোনো নতুন সৃষ্টিকর্তাকে নিয়ে আসেনি। ইহুদী, খ্রিস্টান, আরব মুশরিকরা যেই সর্বোচ্চ “প্রভু”-কে ইতিমধ্যেই “এল্লাহি”, “এলোহিম” ইত্যাদি বলে জানতো, ইসলাম যে তাঁকেই সৃষ্টিকর্তা হিসেবে দাবি করে, সেটাই এখানে “তিনি” এর মাধ্যমে আল্লাহ تعالى তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন।

 

মহান আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়া তা‘আলার অনেকগুলো সুন্দর সুন্দর নাম রয়েছে এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,

وَلِلهِ الْأَسْمَآءُ الْحُسْنٰى فَادْعُوْهُ بِهَا وَذَرُوا الَّذِيْنَ يُلْحِدُوْنَ فِى اسْمَائِه

 

অর্থাৎ- ‘‘মহান আল্লাহ সুব্হানাহূ ওয়াতা‘আলার অনেক সুন্দর সুন্দর নাম রয়েছে। সুতরাং তোমরা সেগুলোর মাধ্যমে আল্লাহকে ডাকো আর যারা আল্লাহর নামের বিকৃতি ঘটায় তাদেরকে বর্জন করো।’’ (সূরা আল আ‘রাফ ৭ : ১৮০)

১     আল্লাহ اللَّـهُ   উপাস্য, মাবুদ

ব্যাখ্যা: আল্লাহ শব্দের অর্থ মা’বুদ বা উপাস্য। তিনি সেই সত্বা যার কাছে সমগ্র সৃষ্টিলোক তাদের সকল অভাব-অনটন ও বিপদাপদে পরম ভালবাসা,ভয়ভীতি ও বিনম্র ভক্তি-শ্রদ্ধা সহকারে ছুটে যায়।

এ নামের মধ্যেই তাঁর সকল সুন্দর নাম ও গুণাবলীর সমন্বয় ঘটেছে।

❑ কুরআনে এ নামটি মোট ২৭২৪/ প্রায় ৩৫০০বার উল্লেখিত হয়েছে।

❑  আল্লাহ তায়ালা বলেন, إِنَّنِي أَنَا اللَّـهُ لَا إِلـهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدْنِي وَأَقِمِ الصَّلَاةَ لِذِكْرِي

“আমিই আল্লাহ। আমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। অতএব আমার এবাদত কর এবং আমার স্মরণার্থে সলাত কায়েম কর।”(সূরা ত্বাহা:১৪)

সহজে সংক্ষেপে বলা যায়ঃ

  • আল্লাহ হলেন এমন সত্তা যার নিকট আপনি সাহায্যের জন্য ছুটে আসেন।
  • আল্লাহ হলেন এমন সত্তা যার জ্ঞান মানুষের মন মানসকে বিস্ময়ে স্তম্ভিত করে ফেলে।
  • আল্লাহ হলেন এমন সত্তা যার স্মরণে আপনার মন প্রশান্তি লাভ করে।
  • “আল্লাহ” হলেন এমন সত্তা যাঁর উপাসনা করা হয়।
  • “আল্লাহ” শব্দটি দ্বারা এমন এক সত্তার কথা বোঝায় যিনি উপাসনা পাওয়ার যোগ্য।

وَمَا بِكُم مِّن نِّعۡمَةٖ فَمِنَ ٱللَّهِۖ ثُمَّ إِذَا مَسَّكُمُ ٱلضُّرُّ فَإِلَيۡهِ تَجۡ‍َٔرُونَ٥٣﴾ [النحل: ٥٣]

“আর তোমাদের কাছ যে সব নি’আমত আছে, তা আল্লাহর পক্ষ থেকে। অতঃপর দুঃখ-দুর্দশা যখন তোমাদের স্পর্শ করে তখন তোমরা শুধু তার কাছেই ফরিয়াদ কর।”

[সূরা আন-নাহাল: ৫৩]

সৃষ্টিকর্তার প্রধান এবং সর্বাধিক পরিচিত নামটি হলো ‘আল্লাহ।’ আমাদের মালিক এবং সৃষ্টিকর্তার সবচেয়ে পরিচিত এবং কমন নাম হলো আল্লাহ

কুরআন শুরু করা হয়েছে এই নামটি দিয়ে। …. বিসমিল্লাহির রাহ মানির রাহিম। আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন।

ব্যাবিলনীয় সভ্যতার প্রাচীনতম যে পাণ্ডুলিপি পাওয়া যায় তাতে এমন এক ঈশ্বরের কথা উল্লেখ আছে যার উচ্চারণ “আল্লাহ” শব্দের উচ্চারণের কাছাকাছি। এই নামটি আমরা ওল্ড এবং নিউ টেষ্টামেন্টেও পাই ‘ইলো এবং ইলোহিম’ হিসেবে।

কুরাইশদের নিকটও এই নামটি পরিচিত ছিল। বিস্ময়কর একটা ব্যাপার হলো, প্রাচীন ব্যাবিলন এবং কুরাইশদের নিকট “আল্লাহ” ছিলেন সকল ঈশ্বরের ঈশ্বর। তিনি ছিলেন প্রধান ঈশ্বর। তারা কখনো আল্লাহর জন্য কোনো মূর্তি তৈরী করেনি। কুরাইশরা আল্লাহকে চিনতো; তারা আল্লাহর উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছিল। وَلَئِن سَأَلْتَهُم مَّنْ خَلَقَهُمْ لَيَقُولُنَّ اللَّهُ – (৪৩: ৮৭) আপনি যদি কুরাইশদের জিজ্ঞেস করেন কে তোমাদের সৃষ্টি করেছে, তারা বলবে আল্লাহ। সুতরাং তারা আল্লাহ নামটি সম্পর্কে জানতো। কখনো কখনো তারা আল্লাহর উপাসনাও করতো। কিন্তু তারা আল্লাহকে অনেক বেশি পবিত্র মনে করতো। মোটকথা আল্লাহ নামটি তাদের নিকট জানা ছিল।

আল্লাহ নামটি কোথাও থেকে উদ্গত (non-derived) হয়নি, এটি একটি প্রপার নাউন যার কোনো অর্থ নেই। কিন্তু এই মতটি খুবই দুর্বল মত

আরবি ভাষার অধিকাংশ ভাষাবিদ এবং তাফসীরকারকের মতে, প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ শব্দের অর্থ আছে। এই বিষয়ে ছয়টির অধিক মতামত পাওয়া যায়।

কিছু কিছু অভিমত হচ্ছে –

১। “আল্লাহ” নামটি এসেছে ‘আলাহা’ ক্রিয়াবাচক শব্দ থেকে। আর ‘আলাহা’ শব্দের অর্থ হচ্ছে রক্ষা পাওয়ার জন্য ছুটে আসা, সাহায্য পাওয়ার জন্য আসা, কোথাও আশ্রয় পাওয়া, কোথাও অবলম্বন পাওয়া।

তাই এই ব্যাখ্যা অনুযায়ী, আল্লাহ হলেন এমন সত্তা যার নিকট সবাই সাহায্যের জন্য ছুটে আসে। আল্লাহ হলেন এমন সত্তা যার নিকট অন্তর প্রশান্তি পায়। আল্লাহ হলেন এমন সত্তা যার নিকট সমস্ত সৃষ্টি জগৎকে অবশ্যই চাইতে হবে। আর এই অর্থটি সম্পূর্ণরূপে একটি বৈধ অর্থ।

يَسْأَلُهُ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۚ كُلَّ يَوْمٍ هُوَ فِي شَأْنٍ – নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের সবাই তাঁর কাছে প্রার্থী। তিনি সর্বদাই কোন না কোন কাজে রত আছেন।

قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ – اللَّهُ الصَّمَدُ – এখানে “الصَّمَدُ” শব্দের অর্থ হলো – যার নিকট ফেরা হয় এবং কোনো কিছু চাওয়া হয়। সুতরাং “আল্লাহ” শব্দের অর্থ হলো – এমন সত্তা সবাই যার মুখাপেক্ষী।

২। আল্লাহ নামের আরো অর্থ হলো….কিছু ওলামা বলেন, “আল্লাহ” শব্দটি এমন একটি ক্রিয়াপদ থেকে এসেছে যার অর্থ হলো – উন্নত করা, ঊর্ধ্বে ওঠানো। আল্লাহ হলেন সর্বোচ্চ সত্তা। আর এটা সঠিক অভিমত। যেমন আমরা বলি, আল্লাহু আকবার। আল্লাহর আরেকটি নাম হলো, আল আ’লা। যেমন কুরআনে এসেছে – “সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আ’লা।” (আপনার সর্বোচ্চ প্রতিপালকের নামের পবিত্রতা বর্ণনা করুন।)

আর তাই যারা আল্লাহর ইবাদাত করে তাদেরও মর্যাদা উন্নত করা হয়। يَرْفَعِ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنكُمْ وَالَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ دَرَجَاتٍ ۚ – “তোমাদের মধ্যে যারা ঈমানদার এবং যারা জ্ঞানপ্রাপ্ত, আল্লাহ তাদের মর্যাদা উচ্চ করে দিবেন।” আর তাই “আল্লাহ” শব্দের এই ব্যাখ্যা টিও একটি সঠিক ব্যাখ্যা।

৩। আল্লাহ হলেন এমন সত্তা যার স্মরণে আপনার মন প্রশান্তি লাভ করে। أَلَا بِذِكْرِ اللَّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ – “আল্লাহর যিকির দ্বারাই অন্তর সমূহ শান্তি পায়।” এই সবগুলো মতই যুক্তিসিদ্ধ।

৪।“আল্লাহ” শব্দের আরেকটি যে ব্যাখ্যা পাওয়া যায় তা হলো – আল্লাহ হলেন এমন সত্তা যিনি আমাদের মনকে বিস্ময়াভিভূত করে ফেলেন, এমন সত্তা যাঁকে আমাদের ক্ষুদ্র বুদ্ধির পক্ষে উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। অন্য কথায়,  আল্লাহ সম্পর্কে যত জানবেন তত বেশি অবাক হবেন। এই সবগুলো ব্যাখ্যাই যুক্তিসিদ্ধ।

৫। তবে সবচেয়ে শক্তিশালী মতামত হলো – “আল্লাহ” শব্দটি “আলিহা – ইয়া’লাহু” থেকে এসেছে। আর ‘আলিহা’ শব্দের অর্থ হলো – ইবাদাত করা। সুতরাং আল্লাহ হলেন এমন সত্তা যাঁর উপাসনা করা হয়। এটাই সবচেয়ে সঠিক ব্যাখ্যা।

৬। সবচেয়ে শক্তিশালী মত যা আরবি ভাষার অধিকাংশ ভাষাবিদ ব্যক্ত করেছেন তা হলো – “আল্লাহ” শব্দটি দ্বারা এমন এক সত্তার কথা বোঝায় যিনি উপাসনা পাওয়ার যোগ্য। কেউই আল্লাহ সুব হানাহু ওয়া তায়ালার মত উপাসনা পাওয়ার যোগ্য নয়। এটাই অধিকাংশ আলেমের মত।

এই ব্যাখ্যার ফলে আমরা বুঝতে পারি কেন “আল্লাহ” নামটি আমাদের সৃষ্টিকর্তার প্রধানতম নাম।

ইবনুল কায়্যিম (রহ) আরও বলেন,

এটা আল্লাহ’র সেই নাম যার মাধ্যমে বিপদ দূর হয়, যার মাধ্যমে বরকত-বৃদ্ধির খোঁজ মেলে, যার মাধ্যমে দু’আর জবাব মেলে, যার মাধ্যমে ভয় ও অসহায়ত্ব একাকার হয়ে যায়, এটা সেই নাম যার মাধ্যমে খারাপ থেকে বেঁচে থাকা যায় আর ভালোর করা হয়। আর এটা হলো আল্লাহ’র সেই নাম যার ওপরই আসমান ও যমীন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যার ওপর কিতাবসমূহ নাযিল হয়েছে, আর সমস্ত নবী-রাসূল প্রেরিত হয়েছেন। এটাই তো আল্লাহ’র সেই নাম যার মাধ্যমে শরিয়াহ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, এটা সেই নাম বিশ্বাসীদের পৃথক করে দেয় অবিশ্বাসীদের থেকে। যারা আল্লাহ’র এই নাম মেনে নেয় তারাই বিশ্বাসী আর যারা মানে না তারা অবিশ্বাসী। আর এটাই আল্লাহ’র সেই নাম যা বিচারের নিক্তিতে ভারী, যা পুলসিরাত নিমিষেই পার করে দেবে, আর যা বেহেশতের দরজাগুলো উন্মুক্ত করে দেয়। আর তাই যে এই নামটি জানবে ও বিশ্বাস স্থাপন করবে সেই সফলকাম, আর যে আল্লাহ’র এই নামটিকে অগ্রাহ্য করবে, পরিত্যাগ করবে সে ধ্বংস হবে।

 

এই আয়াতের শেষ শব্দটি হচ্ছে ‘আহাদ’ যা এক অসাধারণ শব্দ। প্রচলিত বাংলা অনুবাদ হলো: “এক” বা “একক।” কিন্তু সেটা পুরোপুরি সঠিক নয়। কারণ “এক” বলতে আমরা অনেক সময় বুঝি “অনেক কিছুর সমষ্টি।” যেমন এক দেশ, এক জাতি।

কিন্তু আল্লাহ تعالى সৃষ্টিজগত এবং সৃষ্টিজগতের বাইরে যা কিছু আছে, সবকিছুর সমষ্টি নন। আবার সংখ্যাগত দিক থেকে একের সাথে অন্য সংখ্যা যোগ করা যায়, যেমন ১+১=২, এক-কে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করা যায়, যেমন ১ = ০.৫ + ০.৫; সুতরাং সৃষ্টিকর্তার জন্য “এক” শব্দটি ব্যবহার করা সঠিক হবে না, কারণ তিনি মানুষের ধারণা অনুসারে মোটেও এক নন। মানুষ যতই কল্পনা করুক না কেন, তারা কখনই এক বলতে এমন কিছু কল্পনা করতে পারবে না, যা পরম অসীম “এক”, যাকে কোনো ছোট ভাগে ভাগ করা যায় না, যার কোনো তুলনা হয় না, যা ‘অদ্বিতীয়।’

ভাষাগত দিক থেকে “এক” সংখ্যাটির আরবি হচ্ছে “ওয়াহিদ”, আহাদ নয়। কিন্তু আল্লাহ تعالى বলেননি তিনি ওয়াহিদ, বরং তিনি বলেছেন তিনি আহাদ। তাকে কোনো সংখ্যা দিয়ে প্রকাশ করা যাবে না। এছাড়াও আরেকটি অদ্ভুত ব্যাপার হলো, কু’রআনের আগে কোনদিন কোনো আরব ‘আহাদ’ শব্দটিকে বিশেষণ হিসেবে ব্যবহার করেনি। এটি মুলত ব্যবহার হতো না-বাচক বাক্য তৈরি করতে। কু’রআন হচ্ছে প্রথম কোনো আরব সাহিত্য, যেখানে আহাদ শব্দটিকে  একটি বিশেষণ হিসেবে প্রথম বারের মতো হা-বাচক বাক্যে ব্যবহার করা হয়েছে। একারণেই আল্লাহ تعالى অতুলনীয়, অদ্বিতীয়। তিনি শুধু নিজেই অতুলনীয় নন, তিনি সূরা ইখলাসে যেভাবে তাঁর পরিচয় দিয়েছেন, সেটাও আরবি ব্যাকরণ অনুসারে অতুলনীয়।

বিশ্বের সকল জ্ঞানী সমাজ ও ধর্মীয় সম্প্রদায় এ বিষয়ে একমত যে, সৃষ্টি জগতের অবশ্যই একজন সৃষ্টিকর্তা আছেন। কিন্তু মতভেদ কেবল এক্ষেত্রে যে, তিনি একাই সবকিছু করেন, না তাঁর কোন শরীক আছে? ইসলাম ব্যতীত অন্য সকল ধর্মের লোকেরা আল্লাহর শরীক সাব্যস্ত করেছে। যেমন ইহুদীগণ ওযায়েরকে এবং নাছারাগণ ঈসাকে ‘আল্লাহর পুত্র’ বলেছে (তওবা ৯/৩০)।

ত্রিত্ববাদে বিশ্বাসী নাছারাগণ আল্লাহকে ‘তিন উপাস্যের একজন’ বলেছে (মায়েদাহ ৫/৭৩)। অন্যদিকে ভারতীয় বহু ঈশ্বরবাদীদের তো ভগবানের সংখ্যাসীমা নেই।

বান্দাকে উদ্দেশ্য করে আল্লাহ তাই বলেন,

إِنَّنِيْ أَنَا اللهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنَا فَاعْبُدْنِيْ وَأَقِمِ الصَّلاَةَ لِذِكْرِيْ-

‘নিশ্চয়ই আমি আল্লাহ। আমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। অতএব তুমি আমার ইবাদত কর এবং আমাকে স্মরণ করার জন্য ছালাত কায়েম কর. (ত্বোয়াহা:১৪)।

তিনি বলেন,

আল্লাহ সবকিছু সৃষ্টি করেছেন, এবং সকল কিছুই তাঁর ওপর নির্ভরশীল।(সূরা যুমার: ৬২)

“আল্লাহ তোমাদের এবং তোমরা যা কিছু কর, তার স্রষ্টা। (সূরা আস সাফ্‌ফাত : ৯৬)

আমাদের পরম প্রভু আমাদেরকে সন্মান দিয়েছেন, যেন আমরা সরাসরি তাঁর সাথে যে কোনো সময় কথা বলতে পারি, সরাসরি তাঁর কাছেই চাইতে পারি। তাঁকে সরাসরি ডাকাটা তিনি এতই পছন্দ করেন যে, তিনি গভীর ভালবাসায় বলেছেন-

যখন আমার বান্দারা তোমাকে (মুহম্মদ) আমার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করে (তাদেরকে বল)— নিশ্চয়ই আমি কাছেই আছি! আমি তাদের প্রার্থনায় সারা দেই, যখন সে সরাসরি আমাকেই ডাকে। তাই তাদেরকে আমার প্রতি সারা দিতে দাও এবং তাদেরকে আমার উপর বিশ্বাস রাখতে দাও, যাতে করে তারা সঠিক পথ পেতে পারে। [বাকারাহ ২:১৮৬]

‘তোমরা আল্লাহকে ছেড়ে নিছক কিছু নামের উপাসনা করে থাক। যেসব নাম তোমরা ও তোমাদের বাপ-দাদারা সাব্যস্ত করে নিয়েছে। আল্লাহ এ সবের কোন প্রমাণ অবতীর্ণ করেননি। বস্ত্ততঃ বিধান দেওয়ার ক্ষমতা কারু নেই আল্লাহ ব্যতীত। তিনি আদেশ করেছেন যে, তোমরা কারু ইবাদত করো না তাঁকে ব্যতীত। এটাই সরল পথ। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানেনা’ (ইউসুফ ১২/৪০)।

‘আল্লাহ’ ও ‘আহাদ’ দুটি নামকে পাশাপাশি উল্লেখ করার মধ্যে ইঙ্গিত রয়েছে যে, আল্লাহ হলেন সকল পূর্ণতা গুণের সমষ্টি (مجمع صفات الكمال)। অর্থাৎ বান্দার সর্বশেষ আশ্রয়স্থল হ’লেন আল্লাহ। তিনি ব্যতীত অন্য কারু কাছে চাওয়া-পাওয়ার কিছুই নেই বা তাদের দেওয়ারও কোন ক্ষমতা নেই।

পাশাপাশি ‘আহাদ’ নামটি উল্লেখ করে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে যে, তিনি হ’লেন সকল পরাক্রম গুণের সমষ্টি (مجمع صفات الجلال)। অর্থাৎ পৃথিবীতে যিনি যত বড় ক্ষমতাধর হৌন না কেন, কেউ একা কিছু করতে পারেন না অন্যের সাহায্য ব্যতীত। পক্ষান্তরে আল্লাহ এমনই এক প্রতাপান্বিত সত্তা, যার কোন পরামর্শদাতা বা সাহায্যকারীর প্রয়োজন নেই।

তিনি একাই সবকিছু করেন। إِنَّمَا أَمْرُهُ إِذَا أَرَادَ شَيْئاً أَنْ يَّقُوْلَ لَهُ كُنْ فَيَكُوْنُ

‘তাঁর কাজ এমনই যে, যখনই তিনি কিছু ইচ্ছা করেন, বলেন হও, তখনি হয়ে যায়’ (ইয়াসীন ৩৬/৮২)। অতএব ‘আল্লাহ’ নামটি এনে যেমন তাঁকে বান্দার যাবতীয় চাওয়া-পাওয়ার সর্বশেষ আশ্রয়স্থল ও সমস্ত পূর্ণতা গুণের সমষ্টি বুঝানো হয়েছে, তেমনি পাশাপাশি ‘আহাদ’ নামটি এনে তাঁকে একক ও অদ্বিতীয় ক্ষমতাধর এবং সকল শক্তি ও প্রতাপ গুণের সমষ্টি বুঝানো হয়েছে।

জেনে রাখো যদি গোটা মানবজাতিও তোমাকে সাহায্য করতে উদ্যত হয়, তারা ততটুকুই করতে সমর্থ হবে যা আল্লাহ ইতিমধ্যেই তোমার জন্য লিখে রেখেছেন। তেমনি যদি গোটা মানবজাতি তোমার কোন ক্ষতিসাধন করার জন্য একত্রিত হয়, তারা তোমার ক্ষতি হিসেবে ততটুকুই করতে পারবে যা আল্লাহ আগেই তোমার জন্য লিখে রেখেছেন।” (ইব্‌ন্‌ আব্বাস (রা) কর্তৃক বর্ণিত হাদীস)

ফলে সে বুঝতে পারে যে যদিও কারও মাধ্যমেই তার কোন ক্ষতি হয়েছে, কিন্তু সেটা আল্লাহ্‌রই সিদ্ধান্ত। কেন? কারণ আল্লাহ ক্ষতির দ্বারা মানুষকে পরীক্ষা করে দেখতে চান যে সে ধৈর্য্য ধারণ করে কিনা:

“নিশ্চয়ই আমরা তোমাদেরকে ভয়, ক্ষুধার যন্ত্রণা, সম্পদ ও জীবনের এবং ফসলের ক্ষতির দ্বারা পরীক্ষা করব, অতএব যারা ধৈর্য্যশীল, তাদের সুসংবাদ দাও।” (সূরা আল বাকারাহ, ২ : ১৫৫)

সবরকারীদের প্রতিদান সম্পর্কে আল্লাহ্‌ পাক বলেছেন:

“যারা সবরকারী, তারাই তাদের পুরস্কার পায় অগণিত।”(সূরা আয যুমার : ১০)

আনাস (রা) এর রিওয়ায়াতে রাসূলুল্লাহ্‌ (সা) বলেছেন:

কিয়ামতের দিন ইনসাফের দাঁড়িপাল্লা স্থাপন করা হবে। দাতাগণ আসলে তাদের দান খয়রাত ওজন করে সে হিসাবে পূর্ণ সওয়াব দান করা হবে। এমনিভাবে নামায, হাজ্জ্ব ইত্যাদি ইবাদতকারীদের ইবাদত মেপে তাদেরকে প্রতিদান দেয়া হবে। অতঃপর বিপদে-আপদে সবরকারীরা আগমন করলে তাদের জন্য কোন ওজন ও মাপ হবে না, বরং তাদেরকে অপরিমিত ও অগণিত সওয়াব দেওয়া হবে। কেননা আল্লাহ পাক বলেছেন: “যারা সবরকারী, তারাই তাদের পুরস্কার পায় অগণিত।” (সূরা আয যুমার : ১০)

ফলে যাদের পার্থিব জীবন সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে অতিবাহিত হয়েছে, তারা বাসনা প্রকাশ করবে – হায়, দুনিয়াতে আমাদের দেহ কাঁচির সাহায্যে কাটা হলে (ভাল হত) আজ আমরাও সবরের এমনি প্রতিদান পেতাম!

ইমাম মালিক (রহঃ) এ আয়াতে “সাবিরুন” এর অর্থ নিয়েছেন, যারা দুনিয়াতে বিপদাপদ ও দুঃখ-কষ্টে সবর করে। কারও মতে এর অর্থ পাপকাজ থেকে সংযমকারী।

আবার আল্লাহ পাকের নিয়ন্ত্রণের বাইরে কিছু ঘটে না, তাওহীদী এ ধারণার ফলে মানুষ কষ্টের অবস্থাতেও আল্লাহর সিদ্ধান্তের ওপর আস্থা স্থাপন করে স্বস্তি লাভ করে, কারণ সে জানে:

“হতে পারে তোমরা এমন কিছুকে অপছন্দ করছ যা প্রকৃতপক্ষে তোমাদের জন্য কল্যাণকর অথবা এমন কিছুকে পছন্দ করছ যা ক্ষতিকর, কিন্তু আল্লাহ জানেন (কোনটি তোমার জন্য উত্তম), এবং তোমরা জান না।”(সূরা আল বাকারাহ, ২ : ২১৬)

 

এভাবে তাওহীদের এই ধারণা মানুষকে শেখায় যে সে যেন সাধ্যমত চেষ্টা করার পর, ফলাফলের উপর সন্তুষ্ট থাকে, কেননা এ ফলাফল আল্লাহ পাকের ইচ্ছাধীন, এবং তিনি তাঁর বান্দার প্রতি লক্ষ্য রেখেই তা নির্ধারণ করে থাকেন। তাই যদি দেখা যায় যে একজন মুসলিম তাঁর জীবন নিয়ে সন্তুষ্ট নয়, অথবা সে নিজের অবস্থা নিয়ে মানুষের কাছে অভিযোগ করছে, তবে বুঝতে হবে তার তাওহীদের চেতনায় গলদ রয়েছে, কিংবা সে এ কথা বুঝে উঠতে পারে নি, যে আল্লাহ পাক প্রতিটি মুহূর্তে আমাদের প্রতি লক্ষ্য রাখছেন, এবং আমাদের জীবনের খুঁটিনাটি পর্যন্ত তাঁর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তিনি এক মুহূর্তের জন্যও ভুলে যান না:

“এবং আপনার পালনকর্তা ভুলে যান না।” (সূরা মারইয়াম, ১৯ : ৬৪)

‘দূর কি ঝামেলায় পড়লাম!’, ‘কেন যে আমার কপালে এইসব জুটে!’, ‘সকাল থেকেই কুফা লেগে আছে!’, ‘আমারই কেন সবসময় ঠকতে হয়!’ – এ জাতীয় বিরক্তিসূচক উক্তি মুসলিমদেরকে একেবারেই পরিহার করতে হবে, কারণ হয় এসব উক্তির অর্থ দাঁড়ায় যে জাগতিক ব্যাপারে আল্লাহর কোন ভূমিকা নেই, যা তাওহীদ আর রুবুবিয়্যাহ্‌র ধারণার পরিপন্থী, আর নয়ত এসব উক্তির দ্বারা আল্লাহ্‌র প্রতি বিরক্তি প্রকাশ করা হয়, যা এক প্রকার অকৃতজ্ঞতা এবং বিরাট ধৃষ্টতা।

 

২) اللَّهُ الصَّمَدُ আল্লা-হু স্‌সামাদ

আস-সামাদ আরেকটি অদ্ভুত শব্দ যেটা পুরো কু’রআনে মাত্র একবারই এসেছে। এর অর্থগুলো হলো—

বিপদে পড়লে আপনি যাঁর কাছে যান।

যাঁর কাউকে দরকার নেই, যিনি অমুখাপেক্ষী।

যাঁর উর্ধে কেউ যেতে পারে না।

যাঁর কোনো ত্রুটি নেই।

যাঁকে আপনি আপনার জীবনের লক্ষ্য হিসেবে ঠিক করেছেন।

এই সামাদ শব্দটির সবগুলো অর্থ ভালোভাবে লক্ষ্য করলে আমরা অনেক ধরণের শির্‌ক থেকে দূরে থাকতে পারি।

প্রথমত,

সামাদ আমাদেরকে বলে যে বিপদে পড়লে আমরা যেন কোনো মূর্তি, দেবতা, পীর, শেখের কাছে না যাই, কারণ তারা সামাদ নয়। বরং আল্লাহ হচ্ছেন আস-সামাদ।

দ্বিতীয়ত,

আপনাকে কোনো বিপদ থেকে রক্ষা করার জন্য বা চাকরি-ব্যবসা আরও ভালো করার জন্য আপনার গায়ে কোনো তাবিজ, ব্রেসলেট, পৈতা লাগানোর দরকার নেই। আল্লাহ যদি চান, তিনি আপনাকে এগুলো সবই দিতে পারেন, ওই সব জড় বস্তুর সাহায্য ছাড়াই। আপনার ভাগ্য তাড়াতাড়ি পরিবর্তন করে দিতে ওইসব জড় বস্তু আল্লাহকে تعالى বাধ্যও করতে পারে না, এবং তারা কোনো ভাবে আল্লাহকে تعالى সাহায্যও করতে পারে না। আল্লাহর تعالى কোনো সৃষ্টির কাছ থেকে সাহায্য নেওয়ার কোনোই দরকার নেই, কারণ তিনি সামাদ।

তৃতীয়ত,

আল্লাহর উর্ধে কেউ নেই। কখনও বলবেন না, “ডাক্তার সাহেব! আমাকে বাঁচান!” কারণ ডাক্তার সাহেব আপনার প্রাণের মালিক নন। তিনি আপনাকে বাঁচাতে পারবেন না। শুধুই আল্লাহ تعالى পারবেন আপনাকে বাঁচাতে।

আল্লাহ বলেন,

وَمَا بِكُمْ مِّنْ نِّعْمَةٍ فَمِنَ اللهِ ثُمَّ إِذَا مَسَّكُمُ الضُّرُّ فَإِلَيْهِ تَجْأَرُوْنَ-

‘তোমাদের কাছে যেসব নেমত রয়েছে, তা আল্লাহরই পক্ষ হতে। অতঃপর যখন তোমরা কষ্টে পতিত হও, তখন তাঁর নিকটেই কান্নাকাটি করে থাক’ (নাহল ১৬/৫৩)। অর্থাৎ সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী। তিনি কারও মুখাপেক্ষী নন।

আস সামাদ الصَّمَدُ     মুখাপেক্ষী হীন,অভাব মুক্ত,স্বয়ং সম্পূর্ণ,আশ্রয়দাতা,সাহায্যকারী

তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন বরং সকল সৃষ্টি জীব তার প্রতি মুখাপেক্ষী। বিপদাপদ,সমস্যা ও কষ্টে সবাই তাঁর কাছেই সাহায্যের ফরিয়াদ নিয়ে ছুটে যায়।

মানব মন যখন ভয়ে-আতংকে মুষড়ে পড়ে তখন তাঁর কাছে ছুটে গেলে তিনি তাতে প্রশান্তির সুধা ঢেলে দেন। আনন্দ-বেদনায়, সুখে-দুখে সর্বাবস্থায় হৃদয় তাঁর দিকেই ধাবিত হয়। তাঁর দরবারেই খুঁজে পায় অনাবিল প্রশান্তি।

 

৩) لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ লাম ইয়ালিদ ওয়া লাম ইয়ুলাদ

এর অর্থ “তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাঁকে জন্ম দেয়নি।”

(তিনি কাউকে জন্ম দেননি) বলার মধ্যে তিনটি ভ্রান্ত দলের প্রতিবাদ করা হয়েছে। মুশরিক, ইহুদী ও নাছারা। মুশরিকরা ফেরেশতাদের ‘আল্লাহর কন্যা’ বলত (ইসরা ১৭/৪০)।

ইহুদীরা ওযায়ের নবীকে ‘আল্লাহর বেটা বলত (তওবা ৯/৩০)।

নাছারারা মসীহ ঈসাকে ‘আল্লাহর পুত্রবলত (তওবা ৯/৩০)।

وَلَمْ يُولَدْ (এবং তিনি কারু জন্মিত নন) বলার মাধ্যমে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, তিনিই আদি সৃষ্টিকর্তা। তাঁর পূর্বে কোন কিছুর অস্তিত্ব ছিল না।

যেমন আল্লাহ অন্যত্র বলেন, هُوَ الْأَوَّلُ وَالْآخِرُ وَالظَّاهِرُ وَالْبَاطِنُ وَهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمٌ ‘তিনিই আদি, তিনিই অন্ত। তিনি প্রকাশ্য, তিনি গোপন এবং তিনি সর্ব বিষয়ে অবগত’ (হাদীদ ৫৭/৩)।

এছাড়াও অন্য ধর্মের অনুসারীদের মাঝে সৃষ্টিকর্তার জন্ম নেওয়ার নানা ধরণের রুপকথার গল্প শোনা যায়। সেগুলোও যে সবই ভুল, তা আল্লাহ تعالى এখানে স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন। প্রথম দিকের মুসলমানরা যারা হিন্দু, খ্রিস্টান, ইহুদী ইত্যাদি ধর্ম থেকে এসেছিল, তারা তাদের মাথায় তাদের আগের ধর্মের অনেক ধারণা বয়ে নিয়ে এসেছিল। যদিও তারা ইসলাম গ্রহণ করেছিল, কিন্তু তারপরেও বহু বছরের ভুল ধারণা, ভুল প্রশ্ন তাদের মাথায় তখনও ঘুরাঘুরি করতো। সূরা ইখলাস হচ্ছে তাদের কলুষিত মন এবং মগজকে পরিস্কার করার জন্য এক চমৎকার নিরাময়।

কিন্তু তারপরেও দেখবেন অনেকেই প্রশ্ন করে, “যদি সবকিছুর সৃষ্টি হয়, তাহলে সৃষ্টিকর্তাকে কে সৃষ্টি করলো?” উত্তর: লাম ইয়ালিদ ওয়া লাম ইয়ুলাদ —কেউ না। কিন্তু কেন কেউ না? যদি এই মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা থাকে, সবকিছুরই যদি একজন স্রস্টা থাকে, তাহলে তো সৃষ্টিকর্তাকেও কারও না কারও সৃষ্টি করতে হবে, তাই না?

এটা একটি ফিলসফিকাল প্যাঁচ। এদেরকে আপনি প্রশ্ন করুন, সে আল্লাহকে تعالى সৃষ্টি করেছে, তাকে তাহলে কে সৃষ্টি করেছে? সেই মহা-স্রস্টাকে যে মহা-মহা-স্রস্টা সৃষ্টি করেছে, তাকে কে সৃষ্টি করেছে? …

 

৪) وَلَمْ يَكُن لَّهُ كُفُوًا أَحَدٌ ওয়া লাম ইয়াকু ল-লাহু কুফুওয়ান আহাদ!

কুফু শব্দটির অর্থ সমকক্ষ, যার সমান পদ রয়েছে। যেমন: বিয়েতে স্বামী স্ত্রী হচ্ছে একজন আরেকজনের কুফু, কারণ তারা সমান। যুদ্ধ ক্ষেত্রে একই পদের যারা থাকে, তারা একে অন্যের কুফু। আল্লাহ تعالى এখানে আমাদেরকে বলছেন যে, তার সমকক্ষ আর কেউ নেই। এই আয়াতটি ওই সব মূর্খদের জন্য উত্তর যারা বলে, “আচ্ছা, আল্লাহকে কেউ জন্ম দেয়নি ঠিক আছে। মানলাম তিনি এখনও কাউকে জন্ম দেননি। কিন্তু তার মানে তো এই না যে, কেউ তাঁর সমান হতে পারবে না। যীশু প্রভু হতেই পারেন।” এর একটা চমৎকার উত্তর আছে আরেকটি সুরায়—

… কিভাবে তাঁর সন্তান হতে পারে যেখানে তাঁর কোনো সঙ্গীই নেই, যেখানে তিনিই সবকিছু সৃষ্টি করেছেন এবং সবকিছুর ব্যাপারে সব জানেন? [সূরা আনাম ৬:১০১]

উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হলো: কুফু শব্দটি আস-সামাদের মতো পুরো কু’রআনে মাত্র একবারই এসেছে। সূরা ইখলাসে এরকম দুটি শব্দ আমরা পাই, যা পুরো কু’রআনে মাত্র একবার করে এসেছে, শুধুমাত্র সূরা ইখলাসে। কু’রআনে আর কোনো কিছুর বেলায় এই শব্দ দুটো ব্যবহার করা হয়নি। আল্লাহ تعالى এই শব্দ দুটিকে তাঁকে ছাড়া আর কারও বেলায় ব্যবহার করার যোগ্য মনে করেননি।

আরবিতে এই শেষ আয়াতটির বাক্য গঠন অদ্ভুত। প্রচলিত আরবি ব্যাকরণ অনুসারে বাক্যটি হওয়ার কথা “ওয়া লাম ইয়া কুন আহাদুন কুফুওয়ান লাহু।” কিন্তু আল্লাহ تعالى শেষের তিনটি শব্দকে ভিন্ন ভাবে ব্যবহার করেছেন। তিনি লাহু অর্থাৎ “তাঁর সাথে” কে আগে নিয়ে এসেছেন। আরবিতে এটা করা হয় যখন কোনো কিছুকে বিশেষ ভাবে উল্লেখ করা হয়। যেমন “হামদুন লাহু” অর্থ “প্রশংসা তাঁর”, কিন্তু “লাহু ল-হামদ” অর্থ “প্রশংসা শুধুমাত্র তাঁরই।” একইভাবে “লাহু কুফুওয়ান আহাদ” ব্যবহার করে এই আয়াতটিতে বিশেষভাবে বলা হয়েছে, “শুধুমাত্র তাঁর সমকক্ষ আর কিছুই নেই।” এখানে বিশেষভাবে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ تعالى ছাড়া আর সবকিছুর সমকক্ষ থাকতে পারে, কিন্তু একমাত্র তাঁর বেলায়, শুধুই তাঁর বেলায় কোনো সমকক্ষ নেই এবং থাকতে পারে না!

অর্থাৎ সত্তা ও গুণাবলীতে আল্লাহর সাথে তুলনীয় কিছুই নেই।

যেমন আল্লাহ বলেন, لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيْعُ البَصِيْرُ

‘তাঁর অনুরূপ কিছুই নয়। তিনি সবকিছু শোনেন ও দেখেন’ (শূরা ৪২/১১)।

এতে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহর নিজস্ব আকার রয়েছে, যা কারু সাথে তুলনীয় নয়। যেমন ক্যাসেট ও ভিডিও সবকিছু শোনে ও দেখে। তাদের নিজস্ব আকার আছে, যা মানুষের মত নয়। কুরআনের বিভিন্ন স্থানে আল্লাহর হাত, পা, চেহারা ইত্যাদি সম্পর্কে বর্ণিত হয়ছে (মায়েদাহ ৫/৬৪; ক্বলম ৬৮/৪২; বাক্বারাহ ২/১১৫)। কিন্তু তা কারু সাথে তুলনীয় নয়।

জান্নাতে মুমিনগণ আল্লাহকে দেখতে পাবে। যেমন আল্লাহ বলেন, وُجُوْهٌ يَوْمَئِذٍ نَاضِرَةٌ، إِلَى رَبِّهَا نَاظِرَةٌ ‘অনেক চেহারা সেদিন উজ্জ্বল হবে’। ‘তাদের প্রতিপালকের দিকে তারা তাকিয়ে থাকবে’ (ক্বিয়ামাহ ৭৫/২২-২৩)।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, إِنَّكُمْ سَتَرَوْنَ رَبَّكُمْ عِيَانًا فَنَظَرَ إِلَى الْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ فَقَالَ إِنَّكُمْ سَتَرَوْنَ رَبَّكُمْ كَمَا تَرَوْنَ هَذَا الْقَمَرَ لاَ تُضَامُّوْنَ فِى رُؤْيَتِهِ ‘তোমরা তোমাদের প্রভুকে স্পষ্ট দেখতে পাবে। অতঃপর তিনি পূর্ণিমার রাতে চাঁদের দিকে তাকিয়ে বলেন, তোমরা সত্বর তোমাদের প্রতিপালককে দেখতে পাবে, যেমন তোমরা এই চাঁদকে দেখতে পাচ্ছ, যা দেখায় তোমাদের কোন বাধা হবে না’।বুখারী হা/৫৫৪, মুসলিম হা/৬৩৩; মিশকাত হা/৫৬৫৫-৫৬ ‘ক্বিয়ামতের অবস্থা’ অধ্যায়-২৮।

কিন্তু অবিশ্বাসী ও কপট বিশ্বাসীরা এই দর্শন লাভের মহা সৌভাগ্য হতে বঞ্চিত হবে।

যেমন আল্লাহ বলেন, كَلاَّ إِنَّهُمْ عَنْ رَبِّهِمْ يَوْمَئِذٍ لَمَحْجُوْبُوْنَ ‘কখনোই না। অবশ্যই সেদিন তারা তাদের প্রভুর দর্শন থেকে বঞ্চিত হবে’ (মুত্বাফফেফীন ৮৩/১৫)।

আল্লাহ বলেন, سُبْحَانَ اللهِ عَمَّا يَصِفُوْنَ ‘তারা যা বলে তা থেকে আল্লাহ পবিত্র’ (ছাফফাত ৩৭/১৫৯)। অতএব তিনি নিরাকার ও নির্গুণ সত্তা বলে লোকেরা যেসব কথা বলে থাকে, তা থেকে তিনি মুক্ত। যেমন আল্লাহ বলেন, سُبْحَانَ رَبِّكَ رَبِّ الْعِزَّةِ عَمَّا يَصِفُوْنَ

‘তারা যা কিছু আরোপ করে, তা থেকে তোমার পালনকর্তা পবিত্র, যিনি সকল সম্মানের অধিকারী’ (ছাফফাত ৩৭/১৮০)। সুবহান্নাল্লাহি ওয়া বেহামদিহী, সুবহানাল্লাহিল ‘আযীম।

আল্লাহর আদেশ ও বিধানের পরিবর্তনকারী কেউ নেই (আন‘আম ৬/১১৫; রা‘দ ১৩/৪১; কাহফ ১৮/২৭)। তাঁর সত্তার যেমন কোন তুলনা নেই, তাঁর প্রেরিত বিধান তথা ইসলামী শরী‘আতেরও কোন তুলনা নেই। ইসলামই আল্লাহর একমাত্র মনোনীত ধর্ম (আলে ইমরান ৩/১৯)।

অন্য কোন সত্তাকে আল্লাহর সমতুল্য গণ্য করা যেমন শিরক, তেমনি নিজেদের রচিত আইন ও বিধানকে ইসলামী আইন ও বিধানের সমতুল্য বা তার চাইতে উত্তম গণ্য করাও অনুরূপ শিরক (নূর ২৪/৬৩)। একইভাবে মানুষের মনগড়া বিধান বাস্তবায়নের জন্য সমর্থন দান ও চেষ্টা সাধনা করা কবীরা গোনাহ (নিসা ৪/৮৫; বনু ইসরাঈল ১৭/১৮, হজ্জ ২২/৫১; সাবা ৩৪/৫)।

কেননা ইসলামী বিধান ব্যতীত অন্য কিছুই আল্লাহর নিকটে গৃহীত হবে না। যেমন আল্লাহ বলেন, وَمَن يَّبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلاَمِ دِيْناً فَلَنْ يُّقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ

‘যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন তালাশ করবে, কখনোই তা কবুল করা হবে না এবং আখেরাতে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে’ (আলে ইমরান ৩/৮৫)।

* মানুষ কেবল মসজিদে আল্লাহর দাসত্ব করবে, আর বাইরে এসে মানুষের মনগড়া আইনের দাসত্ব করবে। নিজেদের সুবিধামত কুরআনের কিছু অংশ মানবে ও কিছু অংশ ছাড়বে, এটা পুরোপুরি কুফরীর শামিল (নিসা ৪/১৫০-১৫১; বাক্বারাহ ২/৮৫)।

যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলদের সাথে কুফরী করে, আল্লাহ ও তাঁর রসূলদের মধ্যে পার্থক্য করতে চায় এবং বলে আমরা কাউকে মানবো ও কাউকে মানবো না আর কুফর ও ঈমানের মাঝখানে একটি পথ বের করতে চায়,তারা সবাই আসলে কট্টর কাফের ৷ আর এহেন কাফেরদের জন্য আমি এমন শাস্তি তৈরী করে রেখেছি, যা তাদেরকে লাঞ্ছিত ও অপমানিত করবে৷বিপরীত পক্ষে যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলদেরকে মেনে নেয় এবং তাদের মধ্যে কোন পার্থক্য করে না, তাদেরকে আমি অবশ্যি তা পুরস্কার দান করবো ৷আর আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল ও করুণাময়৷ নিসা ১৫০-১৫২;

* আল্লাহ চান সার্বিক জীবনে আল্লাহর দাসত্বের মাধ্যমে মানবতার সার্বিক মুক্তি (নাহল ১৬/৩৬; নিসা ৪/৬০)।

প্রত্যেক জাতির মধ্যে আমি একজন রসূল পাঠিয়েছি এবং তার মাধ্যমে সবাইকে জানিয়ে দিয়েছি যে, “আল্লাহর বন্দেগী করো এবং তাগূতের বন্দেগী পরিহার করো৷এরপর তাদের মধ্য থেকে কাউকে আল্লাহ সঠিক পথের সন্ধান দিয়েছেন এবং কারোর ওপর পথভ্রষ্টতা চেপে বসেছে৷তারপর পৃথিবীর বুকে একটু ঘোরাফেরা করে দেখে নাও যারা সত্যকে মিথ্যা বলেছে তাদের পরিণাম কি হয়েছে৷ নাহল ৩৬

* মানুষ হ’ল সৃষ্টির সেরা জীব (বনু ইস্রাঈল ১৭/৭০)।

এতো আমার অনুগ্রহ, আমি বনী আদমকে মর্যাদা দিয়েছি এবং তাদেরকে জলে স্থলে সওয়ারী দান করেছি, তাদেরকে পাক-পবিত্র জিনিস থেকে রিযিক দিয়েছি এবং নিজের বহু সৃষ্টির ওপর তাদেরকে সুস্পষ্ট প্রাধান্য দিয়েছি৷ বনু ইস্রাঈল ৭০)

* তার দাসত্ব পাওয়ার হকদার কেবলমাত্র তার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ। যিনি একক ও লা-শারীক (ত্বোয়াহা ২০/১৪)।

আমিই আল্লাহ, আমি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই, কাজেই তুমি আমার ইবাদত করো এবং আমাকে স্মরণ করার জন্য নামায কায়েম করো৷ ত্বোয়াহা ১৪)।

* তিনি সকল ক্ষমতার অধিকারী (বাক্বারাহ ১৬৫)।

“কিন্তু( আল্লাহর একত্বের প্রমাণ নির্দেশক এসব সুস্পষ্ট নিদর্শন থাকা সত্ত্বেও) কিছু লোক আল্লাহ ছাড়া অন্যদেরকে তাঁর সমকক্ষ ও প্রতিপক্ষ দাঁড় করায় এবং তাদেরকে এমন ভালোবাসে যেমন আল্রাহকে ভালোবাসা উচিত – অথচ ঈমানদাররা সবচেয়ে বেশী আল্লাহকে ভালোবাসে।  হায়! আযাব সামনে দেখে এই যালেমরা যা কিছু অনুধাবন করার তা যদি আজই অনুধাবন করতো যে , সমস্ত শক্তি ও ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর অধীন এবং শাস্তি ব্যাপারে আল্লাহ অত্যন্ত কঠোর ৷  বাক্বারাহ ২/১৬৫)

তাঁর সমতুল্য কেউ নেই। সূরা ইখলাছ একথাই মানুষকে জানিয়ে দেয়।

সারকথা :

স্বীয় সত্তা ও গুণাবলীতে আল্লাহ একক ও তুলনাহীন- এই নির্ভেজাল তাওহীদ বিশ্বাসকে যাবতীয় শিরকের কালিমা হতে মুক্ত রাখার আহবানই হল সূরা ইখলাছের সারকথা।

সুত্রঃ

নওমান আলি খানের লেকচারঃ http://www.nakcollection.com/surah-ikhlaas.html

সুরা ইখলাসের তাফসির—

http://www.searchtruth.com/tafsir/Quran/112/index.html

Tafseer Surat al-Ikhlâs

তাদাব্বুর এ কু’রআনঃ http://www.tadabbur-i-quran.org/text-of-tadabbur-i-quran/volume-9/surah-ikhlas/

আহমেদ দিদাত-এর বইঃ http://www.islamawareness.net/Allah/wihn.html

সৈয়দ মাওদুদি এর তাফ্সির থেকে ইবন আব্বাস এর সূরা ইখলাস নাজিল হবার বর্ণনা ৭ নম্বর পয়েন্ট – http://www.islamicity.com/quran/maududi/mau112.html