রমাদানকে সামনে রেখে আত্মিক উন্নয়নের একটি পরিকল্পনা নমুনা (2021)

রমাদানকে সামনে রেখে আত্মিক উন্নয়নের একটি পরিকল্পনা নমুনা

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম

মহান আল্লাহ আমাকেসহ সকল মুমিনকে সাহায্য করুন আমল করার জন্য, কবুল করে নিন প্রচেষ্টা সমূহ।

আপনারা এর সাথে আরো কিছু নিজ নিজ অবস্থা পরিবেশে সংযোজন বা বিয়োজন করে নিতে পারেন।

আলহামদুলিল্লাহ, ইসলামী ফাউন্ডেশনের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নিচের তারিখ হিসেব করা হয়েছে। যদিও চাঁদ দেখার উপর হিজরি মাস সমূহের শুরু হয়। একটু পরিবর্তন হতেও পারে।

আমাদের এই হিসেবের মূল লক্ষ্য রমাদানকে সামনে রেখে একটি পরিকল্পনা করা। তাই ২/১ আগে পরে হলেও হিসেবে সমস্যা নেই ইন শা আল্লাহ।

রমাদান মাস শুরু (চাঁদ দেখার উপর নির্ভরশীল) সম্ভাব্য ১৪ই এপ্রিল ইন শা আল্লাহ।

রবিউস সানি ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত।

জুমাদিউল আউয়াল ১৭ই ডিসেম্বর – ১৩ই জানুয়ারী ২০২১

জুমাদিউসসানি ১৪ই জানুয়ারী – ১২ই ফেব্রুয়ারী

রজব    ১৩ই ফেব্রুয়ারী – ১৩ই মার্চ

শা’বান  ১৪ই মার্চ – ১৩ই এপ্রিল

রমাদান ১৪ই এপ্রিল- ১২ই মে

শাওয়াল     ১৩ই মে – ১১ই জুন

আমরা বর্তমানে রয়েছি রবিউসসানি মাসে। আজ বাংলাদেশে ৪ঠা ডিসেম্বর  ১৭ই রবিউস সানি মাস।

রমাদান আসতে আমাদের আরো বাকী হলো মোট ৪মাস ১৩ দিন প্রায়।

তাহলে আমরা ৪মাসের (১২০দিন) একটি পরিকল্পনা নিতে পারি।

১। ব্যক্তিগত আমলের উন্নয়নের জন্য

২। পারিবারিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে সাদাকায়ে জারিয়া রাখার জন্য

ব্যক্তিগত আমলের উনুয়নের জন্যঃ

  • কুর’আন তাফসিরঃ ইবনে কাসীর/তাফহিমুল কুর’আন/তাফসিরে যাকারিয়া/অন্য যেকোন তাফসির

১-১০ পারা —৫০ দিন

১১-২০ পারা—৩৫দিন

২১-৩০ পারা—৩৫দিন

  • বুখারী শরীফ-প্রতি মাসে ১টি খন্ড
  • জীবনীঃ রাসূল সা এর জীবনী ও অন্যান্য নবী কাহিনী
  • দু’আ মুখস্থঃ প্রতি মাসে কুর’আন অধ্যয়নের সাথে সাথে কুর’আনিক দু’আ সমূহ যা সূরাতে আছে তা মুখস্থ করে ফেলা।
সূরা বাকারাঃ ১২৭,১২৮,২০১,২৫০,২৮৬

সূরা আলে ইমরানঃ ৮,৯,১৬,৩৫,৩৮,৫৩,১৪৭,১৯৩,১৯৪

সূরা মায়িদাঃ ৮৩  সূরা আরাফঃ ২৩,৪৭,৮৯,১২৬,১৪৩,১৫১,১৫৫-১৫৬

সূরা তাওবাঃ ১২৮-১২৯   সূরা ইউনুসঃ ৮৫-৮৬      সূরা হুদঃ ৪৭   সূরা ইউসুফঃ ৩৫, ৪০,৪১        সূরা বনী ইসরাইলঃ ২৪, ৮০, ১০৮  সূরা কাহফঃ ১০   সূরা মরিয়মঃ ৪   সূরা ত্বাহাঃ ২৫-২৯,১১৪

সূরা আম্বিয়াঃ ৮৩,৮৭,৮৯    সূরা মূমিনুনঃ ২৯,৯৭-৯৮,১০৮,১০৯  সূরা ফুরকানঃ ৬৫,৭৪           সূরা শো’আরাঃ ৮৩-৮৫    সূরা নমলঃ ১৯ সূরা কাসাসঃ ১৭, ২১   সূরা আনকাবুতঃ৩০

সূরা সাফফাতঃ ১০০ সূরা মুমিনঃ ৭-৯  সূরা দুখানঃ ১২  সূরা আহকাফঃ ১৫   সূরা হাসরঃ ১০

সূরা মুমতাহিনাঃ ৪-৫ সূরা তাহরীমঃ ৮,১১ সূরা নূহঃ ২৮

  • সালাতে পঠিত সকল বিষয়ের শাব্দিক অর্থসহ সহিহ তাজবীদের সাথে শেখা।
  • ফরয সালাতের সালাম ফিরানোর পূর্বে পঠিত কিছু দু’আ ও সালাম ফিরানোর পর যিকর সমূহ অর্থসহ মুখস্থ
  • শরীয়তে ফরয ওয়াজীবে আমল করা বিশেষ করে পর্দার পূর্ণ অনুশীলন করা
  • হাদীসের আলোকে দু’আ মুখস্থ

১। নতুন চাঁদ দেখে পড়ার দু’আ

اللَّهُ أَكْبَرُ، اللَّهُمَّ أَهِلَّهُ عَلَيْنَا بِالْأَمْنِ وَالْإِيمَانِ، وَالسَّلاَمَةِ وَالْإِسْلاَمِ، وَالتَّوْفِيقِ لِمَا تُحِبُّ رَبَّنَا وَتَرْضَى، رَبُّنَا وَرَبُّكَ اللَّهُ».

(আল্লা-হু আকবার, আল্লা-হুম্মা আহিল্লাহু ‘আলাইনা বিলআমনি ওয়ালঈমানি ওয়াস্‌সালা-মাতি ওয়াল-ইসলা-মি, ওয়াত্তাওফীকি লিমা তুহিব্বু রব্বানা ওয়া তারদ্বা, রব্বুনা ওয়া রব্বুকাল্লাহ)

“আল্লাহ সবচেয়ে বড়। হে আল্লাহ! এই নতুন চাঁদকে আমাদের উপর উদিত করুন নিরাপত্তা, ঈমান, শান্তি ও ইসলামের সাথে; আর হে আমাদের রব্ব! যা আপনি পছন্দ করেন এবং যাতে আপনি সন্তুষ্ট হন তার প্রতি তাওফীক লাভের সাথে। আল্লাহ আমাদের রব্ব এবং তোমার (চাঁদের) রব্ব।” সহীহুত তিরমিযী, ৩/১৫৭।

.২। ইফতারের সময় রোযাদারের দু’আ

ذَهَبَ الظَّمَأُ وَابْتَلَّتِ العُرُوقُ، وَثَبَتَ الْأَجْرُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ

ক)  (যাহাবায-যামাউ ওয়াবতাল্লাতিল ‘উরূকু ওয়া সাবাতাল আজরু ইনশা-আল্লা-হু)।

“পিপাসা মিটেছে, শিরাগুলো সিক্ত হয়েছে এবং আল্লাহ্‌ চান তো সওয়াব সাব্যস্ত হয়েছে।” আবূ দাউদ ২/৩০৬, নং ২৩৫৯, সহীহুল জামে‘৪/২০৯।

اللَّهُمَّ  إِنِّي أَسْأَلُكَ بِرَحْمَتِكَ الَّتِي وَسِعَتْ كُلَّ شَيْءٍ أَنْ تَغْفِرَ لِي

খ)  (আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা বিরহ্‌মাতিকাল্লাতী ওয়াসি‘আত কুল্লা শাই’ইন আন তাগফিরা লী)।

“হে আল্লাহ! আপনার যে রহমত সকল কিছু পরিব্যাপ্ত করে রেখেছে তার উসীলায় আবেদন করি, আপনি আমাকে ক্ষমা করুন।” ইবন মাজাহ্‌ ১/৫৫৭, নং ১৭৫৩; যা মূলত আবদুল্লাহ ইবন আমর রা দো‘আ।

৩। খাওয়ার পূর্বে দু’আ

সেহরীর জন্য আলাদা কোন দু’আ জানা যায় না। এই দু’আটি খাওয়ার পূর্বে বলার জন্য।

“যখন তোমাদের কেউ আহার শুরু করে তখন সে যেনো বলে,

«بِسْمِ اللَّهِ» (বিসমিল্লাহ)“আল্লাহর নামে।” আর শুরুতে বলতে ভুলে গেলে যেন বলে,

بسمِ اللَّهِ فِي أَوَّلِهِ وَآخِرِهِ» (বিস্‌মিল্লাহি ফী আওওয়ালিহী ওয়া আখিরিহী)।

“এর শুরু ও শেষ আল্লাহ্‌র নামে।” সহীহুত তিরমিযী, ২/১৬৭।

৪। আহার শেষ করার পর দু’আ

«الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَطْعَمَنِي هَذَا، وَرَزَقَنِيهِ، مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِنِّي وَلاَ قُوَّةٍ».

(আলহামদু লিল্লা-হিল্লাযী আত‘আমানী হা-যা ওয়া রাযাকানীহি মিন গাইরি হাউলিম মিন্নী ওয়ালা কুওয়াতিন)।

“সকল প্রশংসা আল্লাহ্‌র জন্য, যিনি আমাকে এ আহার করালেন এবং এ রিযিক দিলেন যাতে ছিল না আমার পক্ষ থেকে কোনো উপায়, ছিল না কোনো শক্তি-সামর্থ্য।” সহীহুত তিরমিযী ৩/১৫৯।

৫। রোযাদারকে কেউ গালি দিলে যা বলবে

إِنِّي صَائِمٌ، إِنِّي صَائِمٌ (ইন্নি সা‘ইমুন, ইন্নি সা’ইমুন)

“নিশ্চয় আমি রোযাদার, নিশ্চয় আমি রোযাদার।”বুখারী, (ফাতহুল বারীসহ) ৪/১০৩, নং ১৮৯৪

৬।  কোনো পরিবারের কাছে ইফতার করলে তাদের জন্য দো‘আ

أَفْطَرَ عِنْدَكُمُ الصَّائِمُونَ، وَأَكَلَ طَعَامَكُمُ الْأَبْرَارُ، وَصَلَّتْ عَلَيْكُمُ الْمَلاَئِكَةُ».

(আফত্বারা ইন্দাকুমুস সা-ইমূন, ওয়া আকালা ত্বা‘আ-মাকুমুল আবরা-রু, ওয়াসাল্লাত আলাইকুমুল মালা-ইকাহ)

“আপনাদের কাছে রোযাদাররা ইফতার করুন, আপনাদের খাবার যেন সৎলোকেরা খায়, আর আপনাদের জন্য ফিরিশতারা ক্ষমা প্রার্থনা করুন।” সুনান আবি দাউদ ৩/৩৬৭, নং ৩৮৫৬

৭। শবে কদরের রাতে পড়ার দু’আ

اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي

আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আ’ফুউউন তুহিব্বুল আ’ফওয়া ফা’ফু আ’ন্নী

আয়েশা রা. বলেছেন: হে রাসূলুল্লাহ! যদি আমি জানি কোন রাতে লাইলাতুল ক্বদর তবে আমি সেই রাতে কি বলবো? তিনি সা. বললেন, বল: আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আ’ফুউউন তুহিব্বুল আ’ফওয়া ফা’ফু আ’ন্নী

হে আল্লাহ! তুমি বড়ই ক্ষমাকারী, বড়ই অনুগ্রহশীল।মাফ করে দেয়াই তুমি পছন্দ কর। তাই তুমি আমার গুনাহ মাফ করে দাও। আল জামে আত তিরমিযী

৮। তাহাজ্জদ সালাতে দু’আ

حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مُحَمَّدٍ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، سَمِعْتُ سُلَيْمَانَ بْنَ أَبِي مُسْلِمٍ، عَنْ طَاوُسٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم إِذَا قَامَ مِنَ اللَّيْلِ يَتَهَجَّدُ قَالَ ‏

“‏ اللَّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ، أَنْتَ نُورُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَمَنْ فِيهِنَّ، وَلَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ قَيِّمُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَمَنْ فِيهِنَّ، وَلَكَ الْحَمْدُ، أَنْتَ الْحَقُّ وَوَعْدُكَ حَقٌّ، وَقَوْلُكَ حَقٌّ، وَلِقَاؤُكَ حَقٌّ، وَالْجَنَّةُ حَقٌّ، وَالنَّارُ حَقٌّ، وَالسَّاعَةُ حَقٌّ، وَالنَّبِيُّونَ حَقٌّ، وَمُحَمَّدٌ حَقٌّ، اللَّهُمَّ لَكَ أَسْلَمْتُ وَعَلَيْكَ تَوَكَّلْتُ وَبِكَ آمَنْتُ، وَإِلَيْكَ أَنَبْتُ، وَبِكَ خَاصَمْتُ، وَإِلَيْكَ حَاكَمْتُ، فَاغْفِرْ لِي مَا قَدَّمْتُ وَمَا أَخَّرْتُ، وَمَا أَسْرَرْتُ، وَمَا أَعْلَنْتُ، أَنْتَ الْمُقَدِّمُ وَأَنْتَ الْمُؤَخِّرُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ ـ أَوْ ـ لاَ إِلَهَ غَيْرُكَ ‏”‏‏.‏

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যখনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাহাজ্জুদের সলাতে দাঁড়াতেন, তখন বলতেনঃ হে আল্লাহ! সমস্ত প্রশংসা আপনারই জন্য, আপনি রক্ষক আসমান ও যমীনের এবং যা কিছু এগুলোর মধ্যে আছে, আপনিই তাদের নূর। আর যাবতীয় প্রশংসা শুধু আপনারই। আসমান যমীন এবং এ দু’এর মধ্যে যা আছে, এসব কিছুকে সুদৃঢ় ও কায়িম রাখার একমাত্র মালিক আপনিই। আর সমূহ প্রশংসা একমাত্র আপনারই। আপনিই সত্য, আপনার ওয়াদা সত্য, আখিরাতে আপনার সাক্ষাৎ লাভ করা সত্য, বেহেশ্‌ত সত্য, দোযখ সত্য, ক্বিয়ামাত সত্য, পয়গম্বরগণ সত্য এবং মুহাম্মাদ সত্য। হে আল্লাহ! আপনারই কাছে আত্মসমর্পণ করেছি। আমি একমাত্র আপনারই উপর ভরসা রাখি। একমাত্র আপনারই উপর ঈমান এনেছি। আপনারই দিকে ফিরে চলছি। শত্রুদের সঙ্গে আপনারই সন্তুষ্টির জন্য শত্রুতা করি। আপনারই নিকট বিচার চাই। অতএব আমার আগের পরের এবং লুক্কায়িত প্রকাশ্য গুনাহসমূহ আপনি ক্ষমা করে দিন। আপনি কোন ব্যক্তিকে অগ্রসরমান করেন, আর কোন ব্যক্তিকে পশ্চাদপদ করেন, আপনি ব্যতীত সত্যিকারের কোন মাবূদ নেই। সহিহ বুখারি(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৭২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৬৫)

৯।(ইস্তিখারা দু’আ)

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْتَخِيرُكَ بِعِلْمِكَ وَأَسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ وَأَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ الْعَظِيمِ

فَإِنَّكَ تَقْدِرُ وَلَا أَقْدِرُ وَتَعْلَمُ وَلَا أَعْلَمُ وَأَنْتَ عَلَّامُ الْغُيُوبِ

اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الْأَمْرَ خَيْرٌ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي فَاقْدُرْهُ لِي وَيَسِّرْهُ لِي ثُمَّ بَارِكْ لِي فِيهِ

وَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الْأَمْرَ شَرٌّ فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي فَاصْرِفْهُ عَنِّي وَاصْرِفْنِي عَنْهُ وَاقْدُرْ لِيَ الْخَيْرَ حَيْثُ كَانَ ثُمَّ ارْضِنِي بِهِ

আল্লা-হুম্মা ইন্নী আস্তাখীরুকা বিইলমিকা ওয়া আস্তাক্বদিরুকা বিকুদরাতিকা ওয়া আসআলুকা মিন ফাদলিকাল আযীম,

ফাইন্নাকা তাক্বদিরু ওয়ালা- আক্বদিরু ওয়াতা’লামু ওয়ালা- আ’লামু ওয়া আন্তা আল্লা-মুল গুয়ূব।

আল্লা-হুম্মা ইন কুন্তা তা’লামু আন্না হা-যাল আমরা (…) খাইরুল লী ফী দীনী ওয়া মাআ’শী ওয়া আ’-ক্বিবাতি আমরী ফাক্বদুরহু লী, ওয়া ইয়াসসিরহু লী, সুম্মা বা-রিক লী ফীহ।

ওয়া ইন কুন্তা তা’লামু আন্না হা-যাল আমরা (…) র্শারুল লী ফী দীনী ওয়া মাআ’শী ওয়া আ’ক্বিবাতি আমরী

ফাসরিফহু আন্নী ওয়াসরিফনী আনহু, ওয়াক্বদুর লিয়াল খাইরা হাইসু কা-না সুম্মা রাদ্দিনী বিহ।

(অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার জ্ঞানের সাহায্যে আপনার কাছে কল্যাণ প্রার্থনা করছি। আমি আপনার শক্তির সাহায্যে শক্তি ও আপনার অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি।

কেননা আপনিই ক্ষমতা রাখেন; আমি ক্ষমতা রাখি না। আপনি জ্ঞান রাখেন, আমার জ্ঞান নেই এবং আপনি অদৃশ্য বিষয়ে সম্পূর্ণ পরিজ্ঞাত।

হে আল্লাহ! আপনার জ্ঞানে আমার এ কাজ (এখানে উদ্দিষ্ট কাজ বা বিষয়টি মনে মনে উল্লেখ করবে) আমার বর্তমান ও ভবিষ্যত জীবনের জন্য কিংবা বলবে আমার দ্বীনদারি, জীবন-জীবিকা ও কর্মের পরিণামে কল্যাণকর হলে আপনি তা আমার জন্য নির্ধারণ করে দিন। সেটা আমার জন্য সহজ করে দিন এবং তাতে বরকত দিন।

হে আল্লাহ্‌! আর যদি আপনার জ্ঞানে আমার এ কাজ আমার দ্বীনদারি, জীবন-জীবিকা ও কর্মের পরিণামে কিংবা বলবে, আমার বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য অকল্যাণকর হয়, তবে আপনি আমাকে তা থেকে ফিরিয়ে দিন এবং সেটাকেও আমার থেকে ফিরিয়ে রাখুন।

আমার জন্য সর্বক্ষেত্রে কল্যাণ নির্ধারণ করে রাখুন এবং আমাকে সেটার প্রতি সন্তুষ্ট করে দিন।”

[সহিহ বুখারী (৬৮৪১) এ হাদিসটির আরও কিছু রেওয়ায়েত তিরমিযি, নাসাঈ, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ ও মুসনাদে আহমাদে রয়েছে]

১০। সাইয়্যদুল ইস্তেগফার

اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ، خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ، وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ، أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ، وَأَبُوءُ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لاَ يَغْفِرُ الذُّنوبَ إِلاَّ أَنْتَ

আল্লা-হুম্মা আনতা রব্বী লা ইলা-হা ইল্লা আনতা খলাক্বতানী ওয়া আনা ‘আব্দুকা, ওয়া আনা ‘আলা ‘আহদিকা ওয়া ওয়া‘দিকা মাস্তাত্বা‘তু। আ‘উযু বিকা মিন শাররি মা সানা‘তু, আবূউ লাকা বিনি‘মাতিকা ‘আলাইয়্যা, ওয়া আবূউ বিযাম্বী। ফাগফির লী, ফাইন্নাহূ লা ইয়াগফিরুয যুনূবা ইল্লা আনতা।

“হে আল্লাহ্‌! আপনি আমার রব্ব, আপনি ছাড়া আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং আমি আপনার বান্দা। আর আমি আমার সাধ্য মতো আপনার (তাওহীদের) অঙ্গীকার ও (জান্নাতের) প্রতিশ্রুতির উপর রয়েছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট থেকে আপনার আশ্রয় চাই। আপনি আমাকে আপনার যে নিয়ামত দিয়েছেন তা আমি স্বীকার করছি, আর আমি স্বীকার করছি আমার অপরাধ। অতএব আপনি আমাকে মাফ করুন। নিশ্চয় আপনি ছাড়া আর কেউ গুনাহসমূহ মাফ করে না।”

“যে ব্যক্তি সকালবেলা অথবা সন্ধ্যাবেলা এটি (‘সায়্যিদুল ইসতিগফার’) অর্থ বুঝে দৃঢ় বিশ্বাসসহকারে পড়বে, সে ঐ দিন রাতে বা দিনে মারা গেলে অবশ্যই জান্নাতে যাবে।” বুখারী, ৭/১৫০, নং ৬৩০৬।

১১। মৃত ব্যক্তির জন্য জানাযার সালাতে দু’আ

«اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِحَيِّنَا وَمَيِّتِنَا، وَشَاهِدِنَا وَغَائِبِنَا، وَصَغِيرِنَا وَكَبيرِنَا، وَذَكَرِنَا وَأُنْثَانَا. اللَّهُمَّ مَنْ أَحْيَيْتَهُ مِنَّا فَأَحْيِهِ عَلَى الْإِسْلاَمِ، وَمَنْ تَوَفَّيْتَهُ مِنَّا فَتَوَفَّهُ عَلَى الإِيمَانِ، اللَّهُمَّ لاَ تَحْرِمْنَا أَجْرَهُ، وَلاَ تُضِلَّنَا بَعْدَهُ».

১। (আল্লা-হুম্মাগফির লিহায়্যিনা ওয়া মায়্যিতিনা ওয়া শা-হিদিনা ওয়া গা-য়িবিনা ওয়া সগীরিনা ওয়া কাবীরিনা ওয়া যাকারিনা ওয়া উনসা-না। আল্লা-হুম্মা মান আহ্ইয়াইতাহু মিন্না ফা’আহয়িহি ‘আলাল-ইসলাম। ওয়ামান তাওয়াফ্‌ফাইতাহু মিন্না ফাতাওয়াফফাহু ‘আলাল ঈমান। আল্লা-হুম্মা লা তাহরিমনা আজরাহু ওয়ালা তুদ্বিল্লান্না বা‘দাহু)।

“হে আল্লাহ! আমাদের জীবিত ও মৃত, উপস্থিত ও অনুপস্থিত, ছোট ও বড় এবং নর ও নারীদেরকে ক্ষমা করুন। হে আল্লাহ! আপনি আমাদের মধ্যে যাদের আপনি জীবিত রাখবেন তাদেরকে ইসলামের উপর জীবিত রাখুন এবং যাদেরকে মৃত্যু দান করবেন তাদেরকে ঈমানের সাথে মৃত্যু দান করুন। হে আল্লাহ! আমাদেরকে তার (মৃত্যুতে ধৈয্যধারণের) সওয়াব থেকে বঞ্চিত করবেন না এবং তার (মৃত্যুর) পর আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করবেন না।”আবূ দাঊদ, নং ৩২০১; তিরমিযী, নং ১০২৪;

১২। সকল বিষয় সংশোধনের জন্য দু’আ

«اَللهم أَصْلِحْ لِي دِينِيَ الَّذِي هُوَ عِصْمَةُ أَمْرِي، وَأَصْلِحْ لِي دُنْيَايَ الَّتي فِيهَا مَعَاشِي، وَأَصْلِحْ لِي آخِرتِيَ الَّتي فِيهَا مَعَادِي، وَاجْعَلِ الحَيَاةَ زِيَادَةً لِي فِي كُلِّ خَيْرٍ، وَاجْعَلِ المَوتَ رَاحَةً لِي مِنْ كُلِّ شَرٍّ

‘আল্লা-হুম্মা আস্বলিহ লী দ্বীনিইয়াল্লাযী হুয়া ইসমাতু আমরী, ওয়া আস্বলিহ লী দুনইয়া ইয়াল্লাতী ফীহা মাআ-শী, ওয়া আস্বলিহ লী আ-খিরাতি ইয়াল্লাতী ফীহা মাআ-দী। ওয়াজআললিল হায়া-তা যিয়া-দাতাল লী ফী কুল্লি খাইর্। ওয়াজআললিল মাউতা রা-হাতাল লী মিন কুলি শার্র্।’

অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি আমার দ্বীনকে শুধরে দাও, যা আমার সকল কর্মের হিফাযতকারী। আমার পার্থিব জীবনকে শুধরে দাও, যাতে আমার জীবিকা রয়েছে। আমার পরকালকে শুধরে দাও, যাতে আমার প্রত্যাবর্তন হবে। আমার জন্য হায়াতকে প্রত্যেক কল্যাণে বৃদ্ধি কর এবং মৃত্যুকে প্রত্যেক অকল্যাণ থেকে আরামদায়ক কর। ( সহিহ মুসলিম ২৭২০

১৩। দু’আর সমষ্টি

“‏ اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ مِنَ الْخَيْرِ كُلِّهِ عَاجِلِهِ وَآجِلِهِ مَا عَلِمْتُ مِنْهُ وَمَا لَمْ أَعْلَمْ

وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الشَّرِّ كُلِّهِ عَاجِلِهِ وَآجِلِهِ مَا عَلِمْتُ مِنْهُ وَمَا لَمْ أَعْلَمْ

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ مِنْ خَيْرِ مَا سَأَلَكَ عَبْدُكَ وَنَبِيُّكَ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا عَاذَ بِهِ عَبْدُكَ وَنَبِيُّكَ

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْجَنَّةَ وَمَا قَرَّبَ إِلَيْهَا مِنْ قَوْلٍ أَوْ عَمَلٍ وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ النَّارِ وَمَا قَرَّبَ إِلَيْهَا مِنْ قَوْلٍ أَوْ عَمَلٍ وَأَسْأَلُكَ أَنْ تَجْعَلَ كُلَّ قَضَاءٍ قَضَيْتَهُ لِي خَيْرًا ‏”‏ ‏.‏

‘আয়িশাহ (রাঃ)  থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে এই দু’আ শিখিয়েছেনঃ ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে যাবতীয় কল্যাণ ভিক্ষা করছি, যা তাড়াতাড়ি আসে, যা দেরিতে আসে, যা জানা আছে, যা জানা নেই।

আর আমি যাবতীয় মন্দ হতে তোমার আশ্রয় ভিক্ষা করছি- যা তাড়াতাড়ি আগমনকারী আর যা দেরিতে আগমনকারী আর যা আমি জানি আর যা অবগত নই।

হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকটে ঐ মঙ্গলই চাচ্ছি যা চেয়েছেন- তোমার (নেক) বান্দা ও তোমার নাবী, আর তোমার কাছে ঐ মন্দ বস্ত্ত থেকে পানাহ চাচ্ছি যা হতে তোমার বান্দা ও নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানাহ চেয়েছেন।

হে আল্লাহ্! আমি তোমার কাছে জান্নাত চাচ্ছি এবং ঐসব কথা ও কাজ চাচ্ছি যেগুলো আমাকে জান্নাতের নিকটবর্তী করে দেবে। আর আমি জাহান্নাম হতে তোমার নিকট পানাহ চাচ্ছি এবং ঐসব কথা ও কাজ হতেও পানাহ চাচ্ছি যেগুলো আমাকে জাহান্নামের নিকটবর্তী করে দেবে।

আর আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি  যে, তুমি আমার জন্য যেসব ফায়সালা করে রেখেছ তা আমার জন্য কল্যাণকর করে দাও। সুনানে ইবনে মাজাহ ৩৮৪৬

আহমাদ ২৪৪৯৮, ২৪৬১৩, সহীহাহ ১৫৪২। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।

পারিবারিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের সাদাকায়ে জারিয়া রাখার জন্য

১। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কুর’আনিক আলোচনার আসর শুরু করা

২। পরিবারে তাওহীদ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান ও জামা’আতে সালাত আদা প্রতিষ্ঠিত করা

৩। বিদ’আত, হারাম ও অশ্লীলতা থেকে নিজে দূরে থেকে অন্যকে দূরে থাকার শিক্ষা দেয়া

৪। অন্যদের হক্ব সংক্রান্ত বিষয়াদি জ্ঞান দান করা, বিশেষ করে অধিনস্থদের প্রতি দায়িত্ব পালনে সচেতন করা

৫। কল্যান কাজে আর্থিক ব্যয়ের বাস্তব ভূমিকা রাখা। যাকাতের সুষ্ঠ বন্টন করা।

৬। আত্মীয়দের মাঝে এখন থেকে যোগাযোগ রক্ষা করে বিভিন্ন সহযোগীতা করা

৭। দ্বীনী জ্ঞানার্জনের জন্য কুর’আন হাদীস ও সহিহ আকীদার বই উপহার দেয়া।

৮। গরীব, মিসকীন, এতিমদের খুজে খুজে সাহায্য করা।

৯। রোগী, মসজিদ, মাদরাসায় সহযোগীতার হাত বাড়ানো।

১০। রমাদান পূর্ব শুকনো ইফতার গরীব, মিসকীন ও আত্মীয়দের মাঝে হাদিয়া দেয়া।

১২। বেশী বেশী ইস্তিগফার করা ও নিজ সংশোধনে সচেতন থাকা ও রবের কাছে সকল কাজ কবুল হওয়ার প্রার্থনা করা।

মহান আল্লাহ আমাদের পরিকল্পনা নেয়ার ও আমল করার সহজতা দান করুন।

রমাদানকে সামনে রেখে আত্মিক উন্নয়নের একটি পরিকল্পনা নমুনা

রমাদান ১০দিনের পরিকল্পনা ও পর্যালোচনায় সংরক্ষন