হযরত আদম আঃ ১ (কেনো আদম আ কে পাঠানো হলো)

আসসালামু’আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ

দয়াময় মেহেরবান আল্লাহর নামে।

নবী কাহিনী-২

কেনো আদম আ কে পাঠানো হলোঃ

আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করে তাকে পৃথিবীতে স্থিতি দান করেছেন। তিনি তাদেরকে অসহায় ও লাগামহীনভাবে ছেড়ে দেননি বরং ‘প্রথম মানুষ’ আদমকে তাঁর বংশধরগণের হেদায়াতের জন্য ‘প্রথম নবী’ হিসাবে প্রেরণ করেন ।

আল্লাহ তাআলা “হিকমত” বা প্রজ্ঞার গুণে গুণান্বিত। তাঁর মহান নামের মধ্যে রয়েছে- “আল-হাকিম” বা প্রজ্ঞাবান।

তোমরা কি মনে করেছিলে আমি তোমাদেরকে অনর্থক সৃষ্টি করেছি  এবং তোমাদের কখনো আমার দিকে ফিরে আসতে হবে না?’’ মুমিনূন ১১৫)

আল্লাহ তাআলা বলেন: “আসমান-জমিন এবং এ দুইটির মাঝে যা কিছু আছে সে সব আমি তামাশা করে সৃষ্টি করিনি।”[সূরা আম্বিয়া, আয়াত: ১৬]

আল্লাহ আরও বলেন: “আমি আসমান-জমিন আর এ দুটির মাঝে যা আছে সে সব তামাশা করে সৃষ্টি করিনি। আমি ও দুটিকে যথাযথ উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছি। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না।”[সূরা দুখান, আয়াত: ৩৮, ৩৯]

তিনি আরও বলেন: “হা-মীম। এই কিতাব পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময় আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ। নভোমন্ডল, ভূ-মন্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু আমি যথাযথভাবেই এবং নির্দিষ্ট সময়ের জন্যেই সৃষ্টি করেছি। কাফেরদেরকে যে বিষয়ে সাবধান করা হয়েছে তারা তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।”[সূরা আহকাফ, আয়াত: ১-৩]

চতুষ্পদ জন্তুর মত শুধু পানাহার ও বংশবৃদ্ধির জন্য আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেননি। আল্লাহ মানুষকে সম্মানিত করেছেন। অনেক সৃষ্টির উপর আল্লাহ মানুষকে মর্যাদা দিয়েছেন।

আল্লাহ তাআলা বলেন: “আর যারা কুফরি করে তারা ভোগ-বিলাসে মত্ত থাকে আর আহার করে যেভাবে আহার করে চতুষ্পদ জন্তু জানোয়াররা।”[সূরা মুহাম্মদ, আয়াত: ১২]

তিনি আরও বলেন, “ছেড়ে দাও ওদেরকে, ওরা খেতে থাক আর ভোগ করতে থাক, আর (মিথ্যে) আশা ওদেরকে উদাসীনতায় ডুবিয়ে রাখুক, শীঘ্রই ওরা (ওদের আমলের পরিণতি) জানতে পারবে।”।[সূরা আল-হিজর, আয়াত: ৩]

মানুষকে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে প্রধানত ৩টি উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে-

১। আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি আসমান-জমিন, জীবন-মৃত্যু সৃষ্টি করেছেন পরীক্ষা করার জন্য। মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য- কে তাঁর আনুগত্য করে যাতে তাকে পুরস্কৃত করতে পারেন; আর কে তাঁর অবাধ্য হয় যাতে তাকে শাস্তি দিতে পারেন। তিনি বলেন: “যিনি করেছেন মরণ ও জীবন যাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন- আমলের দিক দিয়ে তোমাদের মধ্যে কোন্‌ ব্যক্তি সর্বোত্তম? তিনি মহা শক্তিধর, অতি ক্ষমাশীল।”[সূরা আল-মুল্‌ক, আয়াত: ২]

এ পরীক্ষার মাধ্যমে আল্লাহর নাম ও গুণাবলীর প্রভাব ফুটে উঠে। যেমন-‘আল-রহমান ‘আল-গফুর’, ‘আল-হাকিম’, ‘আল-তাওয়াব’, ‘আল-রহীম’ ইত্যাদি আল্লাহর গুণবাচক নাম।

২। সবচেয়ে যে মহান উদ্দেশ্য ও মহা পরীক্ষার জন্য মানুষ সৃষ্টি করা হয়েছে সেটা হচ্ছে- তাওহীদ বা নিরংকুশভাবে এক আল্লাহর ইবাদতের নির্দেশ প্রদান করা। আল্লাহ নিজেই মানুষ সৃষ্টির এ উদ্দেশ্য বর্ণনা করেছেন।

তিনি বলেন: “আমি জিন্ন ও মানবকে সৃষ্টি করেছি একমাত্র এ কারণে যে, তারা আমারই ‘ইবাদাত করবে।”[সূরা যারিয়াত, আয়াত: ৫৬]

আর তাই দেখা যায় প্রথম মানব আদম আ কে সৃষ্টি লগ্নে যা বলেছেন আল্লাহ রাব্বুল আ’আলামীন–

৩। আবার  সেই সময়ের কথা একটু স্মরণ কর যখন তোমাদের রব ফেরেশতাদের   বলেছিলেন , “আমি পৃথিবীতে একজন খলীফা- প্রতিনিধি  নিযুক্ত করতে চাই ৷” তারা বললো , “আপনি কি পৃথিবীতে এমন কাউকে নিযুক্ত করতে চান যে সেখানকার ব্যবস্থাপনাকে বিপর্যস্থ করবে এবং রক্তপাত করবে?  আপনার প্রশংসা ও স্তুতিসহকারে তাসবীহ পাঠ এবং আপনার পবিত্রতা বর্ণনা তো আমরা করেই যাচ্ছি৷ ”  আল্লাহ বললেন, “আমি জানি যা তোমরা জানো না ৷ (বাক্বারাহ ২/৩০)।

মানব জাতিকে শুধুমাত্র তাসবীহ করার জন্য পাঠানো হয়নি যা ফেরেশতারা করেই যাচ্ছেন।

মহান আল্লাহ বলেছেন-

আমরা বললাম , “ তোমরা সবাই এখান থেকে নেমে যাও । এরপর যখন আমার পক্ষ থেকে কোন হিদায়াত তোমাদের কাছে পৌছুবে তখন যারা আমার সেই হিদায়াতের অনুসরণ করবে তাদের জন্য থাকবে না কোন ভয় দুঃখ বেদনা ৷

আর যারা একে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানাবে এবং আমার আয়াতকে মিথ্যা বলে উড়িয়ে দেবে তারা হবে আগুনের মধ্যে প্রবেশকারী ৷ সেখানে তারা থাকবে চিরকাল ৷(বাক্বারাহ ৩৮-৩৯)।

সৃষ্টি সম্পর্কে কাফেরদের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরতে গিয়ে আল্লাহ বলেন: “আমি আসমান-যমীন ও এ দু’ এর মধ্যে যা কিছু আছে তা অনর্থক সৃষ্টি করিনি। এ রকম ধারণা তো কাফিররা করে, কাজেই কাফিরদের জন্য আছে জাহান্নামের দূর্ভোগ।”[সূরা স্বাদ, আয়াত: ২৭]

আল্লাহ তাআলা বলেছেন: “যারা ঈমান এনেছে ও সৎ কর্ম করেছে আমি কি তাদেরকে পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের (কাফেরদের) সমতুল্য গণ্য করব? নাকি আমি মুত্তাকিদেরকে পাপাচারীদের সমান গণ্য করব।”[সূরা স্বাদ, আয়াত: ২৮]

মুমিন ও কাফের উভয়ের সাথে সমান আচরণ আল্লাহর হেকমত ও তাঁর বিধান বিরোধী।

প্রথম মানব কি দিয়ে বানানো হয়েছেঃ

বিশ্ব ইতিহাসে প্রথম মানুষ ও প্রথম নবী হিসাবে আল্লাহ পাক আদম (আলাইহিস সালাম)-কে নিজ দু’হাত দ্বারা সরাসরি সৃষ্টি করেন । মাটির সকল উপাদানের সার-নির্যাস একত্রিত করে আঠালো ও পোড়ামাটির ন্যায় শুষ্ক মাটির তৈরী সুন্দরতম অবয়বে রূহ ফুঁকে দিয়ে আল্লাহ আদমকে সৃষ্টি করেছেন।

আর প্রাণবান সমস্ত কিছু সৃষ্টি করলাম পানি থেকে’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত : ৩০)।

আদম এর মূল উপাদান হল মাটি, তাই তাকে ‘আদম’ বলা হয়।

পক্ষান্তরে হাওয়ার মূল হলেন আদম, যিনি তখন জীবন্ত ব্যক্তি। তাই তাকে ‘হাওয়া’ বলা হয়, যা ‘হাই’ (জীবন্ত) থেকে উৎপন্ন (কুরতুবী), ব; আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ১/৬২ পৃঃ।

মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন-

রব বললেন, “ হে ইবলিস! আমি আমার দু’হাত দিয়ে যাকে তৈরি করেছি তাকে সিজদা করতে তোমাকে কিসে বাধা দিয়েছে? তুমি কি বড়াই করছো, না তুমি কিছু উচ্চ মর্যাদার অধিকারী?” ছোয়াদ ৩৮/৭৫)

আমি মানুষকে তৈরী করেছি মাটির উপাদান থেকে, মুমিনূন ২৩/১২;

এখন এদেরকে জিজ্ঞেস করো, এদের সৃষ্টি বেশী কঠিন, না আমি যে জিনিসগুলো সৃষ্টি করে রেখেছি সেগুলোর? এদেরকে তো আমি সৃষ্টি করেছি আঠাল কাঁদামাটি দিয়ে৷ সাফফাত ৩৭/১১

মাটির শুকনো ঢিলের মত পচা কাঁদা থেকে তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন৷ সূরা আর রহমান ৫৫/১৪

আমি মানুষকে পয়দা করেছি সর্বোত্তম কাঠামোয় ৷ ত্বীন- ৯৫/৪

অতঃপর আদমের পাঁজর থেকে তাঁর স্ত্রী হাওয়াকে সৃষ্টি করেন। আর এ কারণেই স্ত্রী জাতি স্বভাবগত ভাবেই পুরুষ জাতির অনুগামী ও পরস্পরের প্রতি আকৃষ্ট। অতঃপর স্বামী-স্ত্রীর মাধ্যমে যুগ যুগ ধরে একই নিয়মে মানববংশ বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে।

হে মানব জতি ! তোমাদের রবকে ভয় করো৷ তিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন একটি প্রাণ থেকে ৷ আর সেই একই প্রাণ থেকে সৃষ্টি করেছেন তার জোড়া ৷ তারপর তাদের দুজনার থেকে সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে দিয়েছেন বহু পুরুষ ও নারী ৷ নিসা ৪/১;

তখন আমরা আদমকে বললাম , “তুমি ও তোমার স্ত্রী উভয়েই জান্নাতে থাকো এবং এখানে স্বাচ্ছন্দের সাথে ইচ্ছে মতো খেতে থাকো, তবে এই গাছটির কাছে যেয়ো না ৷  অন্যথায় তোমরা দু’জন যালেমদের  অন্তরভুক্ত হয়ে যাবে ৷ ” বাক্বারাহ ৩৫;

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কিয়ামতের দিন মু’মিনগণ একত্রিত হবে এবং তারা বলবে, আমরা যদি আমাদের রবের কাছে আমাদের জন্য একজন সুপারিশকারী পেতাম। এরপর তারা আদম (আলাইহিস সালাম) এর কাছে আসবে এবং তাঁকে বলবে আপনি মানব জাতির পিতা। আপনাকে আল্লাহ তা‘আলা নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন। আর ফেরেশতা দ্বারা আপনাকে সিজদা করিয়েছেন এবং যাবতীয় বস্তুর নাম আপনাকে শিক্ষা দিয়েছেন। অতএব আপনি আপনার রবের কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন, যেন আমাদের কঠিন স্থান থেকে আরাম দিতে পারেন। তিনি বলবেন, তোমাদের এ কাজের আমার সাহস হচ্ছে না। তিনি নিজ ভুলের কথা স্মরণ করে লজ্জাবোধ করবেন। (তিনি বলবেন) তোমরা নূহ (আলাইহিস সালাম) এর কাছে যাও। তিনই প্রথম রাসূল যাকে আল্লাহ জগতবাসীর কাছে পাঠিয়েছেন। হাদীসের কিছু অংশ- সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) | অধ্যায়ঃ ৫২/ তাফসীর (كتاب تفسير) | হাদিস নাম্বারঃ ৪১২৪

 

মহান আল্লাহ বলেন,

وَإِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلاَئِكَةِ إِنِّيْ خَالِقٌ بَشَرًا مِّن صَلْصَالٍ مِّنْ حَمَإٍ مَّسْنُوْنٍ، فَإِذَا سَوَّيْتُهُ وَنَفَخْتُ فِيْهِ مِن رُّوحِيْ فَقَعُوْا لَهُ سَاجِدِيْنَ-

 

‘স্মরণ কর সেই সময়ের কথা, যখন তোমার প্রভু ফেরেশতাদের বললেন, আমি মিশ্রিত পচা কাদার শুকনো মাটি দিয়ে ‘মানুষ’ সৃষ্টি করব। অতঃপর যখন আমি তার অবয়ব পূর্ণভাবে তৈরী করে ফেলব ও তাতে আমি আমার রূহ ফুঁকে দেব, তখন তোমরা তার প্রতি সিজদায় পড়ে যাবে’ (হিজর ১৫/২৮-২৯)।

মানুষের আদি উৎস সম্পর্কে কুরআন বলছে, সরাসরি মৃত্তিকার উপাদান থেকে তার সৃষ্টিকর্ম শুরু হয়।

(صَلْصَالٍ مِنْ حَمَإٍ مَسْنُونٍ) “শুকনো কালো ঠনঠনে পচা মাটি” শব্দাবলীর মাধ্যমে একথা ব্যক্ত করা হয়েছে।

حمأ বলতে আরবী ভাষায় এমন ধরনের কালো কাদা মাটিকে বুঝায় যার মধ্যে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়ে গেছে, যাকে আমরা নিজেদের ভাষায় পংক বা পাঁক বলে থাকি অথবা অন্য কথায় বলা যায়, যা মাটির গোলা বা মন্ড হয়ে গেছে। [সা’দী]

مَسْنُون শব্দের দুই অর্থ হয়। একটি অর্থ, পরিবর্তিত, অর্থাৎ এমন পচা, যার মধ্যে পচন ধরার ফলে চকচকে ও তেলতেলে ভাব সৃষ্টি হয়ে গেছে। [সা’দী]

আর দ্বিতীয় অর্থ, চিত্রিত। অর্থাৎ যা একটি নির্দিষ্ট আকৃতি ও কাঠামোতে রুপান্তরিত হয়েছে। [ফাতহুল কাদীর]

صَلْصَال বলা হয় এমন পচা কাদাকে যা শুকিয়ে যাওয়ার পর ঠনঠন করে বাজে। [ বাগভী; কুরতুবী ইবন কাসীর] এ শব্দাবলী থেকে পরিষ্কার জানা যাচ্ছে যে, গাজানো কাদা মাটির গোলা বা মন্ড থেকে প্রথমে প্রথম মানুষকে বানানো হয় এবং তা তৈরী হবার পর যখন শুকিয়ে যায় তখন তার মধ্যে প্রাণ ফুঁকে দেয়া হয়।

নিশ্চয় আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি কালো পচা শুষ্ক ঠনঠনে মাটি হতে।হিজরঃ২৬

মাটির বিভিন্ন অবস্থার কারণে বিভিন্ন নামে নামকরণ হয়ে থাকে।

শুকনো মাটিকে تراب,

ভিজে মাটিকে طين,

দুর্গন্ধযুক্ত পচা কাদা মাটিকে حمأ مسنون বলা হয়।

যেমন তা শুকিয়ে গিয়ে তা থেকে ঠনঠন্ শব্দ বের হলে তাকে صلصال এবং আগুনে পোড়ালে فخَّار বলা হয়।

অন্যত্র তিনি বলেন,

هُوَ الَّذِيْ يُصَوِّرُكُمْ فِي الأَرْحَامِ كَيْفَ يَشَآءُ لآ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ- (آل عمران ৬)-

‘তিনিই সেই সত্তা যিনি তোমাদেরকে মাতৃগর্ভে আকার-আকৃতি দান করেছেন যেমন তিনি চেয়েছেন। তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তিনি মহা পরাক্রান্ত ও মহা বিজ্ঞানী

(আলে ইমরান ৩/৬)। তিনি আরও বলেন,

يَخْلُقُكُمْ فِيْ بُطُوْنِ أُمَّهَاتِكُمْ خَلْقًا مِّن بَعْدِ خَلْقٍ فِي ظُلُمَاتٍ ثَلاَثٍ- (زمر ৬)-

‘তিনি তোমাদেরকে তোমাদের মাতৃগর্ভে সৃষ্টি করেন একের পর এক স্তরে তিনটি অন্ধকারাচ্ছন্ন আবরণের মধ্যে’ (যুমার ৩৯/৬)।

তিনটি আবরণ হ’ল- পেট, রেহেম বা জরায়ু এবং জরায়ুর ফুল বা গর্ভাধার।

উপরোক্ত আয়াতগুলিতে আদম সৃষ্টির তিনটি পর্যায় বর্ণনা করা হয়েছে।

প্রথমে মাটি দ্বারা অবয়ব নির্মাণ, অতঃপর তার আকার-আকৃতি গঠন ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সমূহে শক্তির আনুপতিক হার নির্ধারণ ও পরস্পরের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান এবং সবশেষে তাতে রূহ সঞ্চার করে আদমকে অস্তিত্ব দান। অতঃপর আদমের অবয়ব (পাঁজর) থেকে কিছু অংশ নিয়ে তার জোড়া বা স্ত্রী সৃষ্টি করা। সৃষ্টির সূচনা পর্বের এই কাজগুলি আল্লাহ সরাসরি নিজ হাতে করেছেন।

রব বললেন, “ হে ইবলিস! আমি আমার দু’হাত দিয়ে যাকে তৈরি করেছি তাকে সিজদা করতে তোমাকে কিসে বাধা দিয়েছে?  তুমি কি বড়াই করছো, না তুমি কিছু উচ্চ মর্যাদার অধিকারী?” (ছোয়াদ ৩৮/৭৫)।

অতঃপর এই পুরুষ ও নারী স্বামী-স্ত্রী হিসাবে বসবাস করে প্রথম যে যমজ সন্তান জন্ম দেয়, তারাই হ’ল মানুষের মাধ্যমে সৃষ্ট পৃথিবীর প্রথম মানব যুগল। তারপর থেকে এযাবত স্বামী-স্ত্রীর মিলনে মানুষের বংশ বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।

শুধু মানুষ নয়, উদ্ভিদরাজি, জীবজন্তু ও প্রাণীকুলের সৃষ্টি হয়েছে মাটি থেকে। আর মাটি সৃষ্টি হয়েছে পানি থেকে। পানিই হ’ল সকল জীবন্ত বস্ত্তর মূল

আর তিনিই মানুষকে সৃষ্টি করেছেন পানি হতে; তারপর তিনি তাকে বংশগত ও বৈবাহিক সম্পর্কশীল করেছেন। আর আপনার রব হলেন প্রভূত ক্ষমতাবান। (ফুরক্বানঃ৫৪।

মৃত্তিকাজাত সকল প্রাণীর জীবনের প্রথম ও মূল একক (Unit) হচ্ছে ‘প্রোটোপ্লাজম (Protoplasm)। যাকে বলা হয় ‘আদি প্রাণসত্তা’। এ থেকেই সকল প্রাণী সৃষ্টি হয়েছে। এজন্য বিজ্ঞানী মরিস বুকাইলী একে Bomb shell বলে অভিহিত করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে মাটির সকল প্রকারের রাসায়নিক উপাদান। মানুষের জীবন বীজে প্রচুর পরিমাণে চারটি উপাদান পাওয়া যায়। অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, কার্বন ও হাইড্রোজেন। আর আটটি পাওয়া যায় সাধারণভাবে সমপরিমাণে।

সেগুলি হল- ম্যাগনেশিয়াম, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ক্লোরিন, সালফার ও আয়রণ। আরও আটটি পদার্থ পাওয়া যায় স্বল্প পরিমাণে। তাহল: সিলিকন, মোলিবডেনাম, ফ্লুরাইন, কোবাল্ট, ম্যাঙ্গানিজ, আয়োডিন, কপার ও যিংক। কিন্তু এই সব উপাদান সংমিশ্রিত করে জীবনের কণা তথা ‘প্রোটোপ্লাজম’ তৈরী করা সম্ভব নয়।

জনৈক বিজ্ঞানী দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে এসব মৌল উপাদান সংমিশ্রিত করতে চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছেন এবং তাতে কোন জীবনের ‘কণা’ পরিলক্ষিত হয়নি। এই সংমিশ্রণ ও তাতে জীবন সঞ্চার আল্লাহ ব্যতীত কারু পক্ষে সম্ভব নয়। বিজ্ঞান এক্ষেত্রে মাথা নত করতে বাধ্য হয়েছে।

প্রথম পর্যায়ে মাটি থেকে সরাসরি আদমকে অতঃপর আদম থেকে তার স্ত্রী হাওয়াকে সৃষ্টি করার পরবর্তী পর্যায়ে আল্লাহ আদম সন্তানদের মাধ্যমে বনু আদমের বংশ বৃদ্ধির ব্যবস্থা করেছেন। এখানেও রয়েছে সাতটি স্তর।

যেমন: মৃত্তিকার সারাংশ তথা প্রোটোপ্লাজম, বীর্য বা শুক্রকীট, জমাট রক্ত, গোশতপিন্ড, অস্থিমজ্জা, অস্থি পরিবেষ্টনকারী গোশত এবং সবশেষে রূহ সঞ্চারণ

“কাজেই মানুষ একবার এটাই দেখে নিক কী জিনিস থেকে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে !

তাকে সৃষ্টি করা হেয়ছে প্রবলবেগে নিঃসৃত পানি থেকে, যা পিঠ ও বুকের হাড়ের মাঝখান দিয়ে বের হয়৷নিশ্চিতভাবেই তিনি ( স্রষ্টা ) তাকে দ্বিতীয় বার সৃষ্টি করার ক্ষমতা রাখেন”৷ তারেকঃ ৫-৮

“আমি মানুষকে তৈরী করেছি মাটির উপাদান থেকে, তারপর তাকে একটি সংরক্ষিত স্থানে টপ্‌কে পড়া ফোঁটায় পরিবর্তত করেছি, এরপর সেই ফোঁটাকে জমাট রক্তপিন্ডে পরিণত করেছি, তারপর সেই রক্তপিন্ডকে মাংসপিন্ডে পরিণত করেছি,এরপর মাংসপিন্ডে অস্থি-পঞ্জর স্থাপন করেছি, তারপর অস্থি-পঞ্জরকে ঢেকে দিয়েছি গোশত দিয়ে, তারপর তাকে দাঁড় করেছি স্বতন্ত্র একটি সৃষ্টি রূপে৷ কাজেই আল্লাহ বড়ই বরকত সম্পন্ন,  সকল কারিগরের চাইতে উত্তম কারিগর তিনি”৷মুমিনূনঃ১২-১৪

“তিনিই তো সে সত্তা যিনি তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন৷ তারপর শুত্রু থেকে৷ তারপর রক্তের পিণ্ড থেকে৷ অতপর তিনি তোমাদেরকে শিশুর আকৃতিতে বের করে আনেন৷ এরপর তিনি তোমাদেরকে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত করেন যাতে তোমরা নিজেদের পূর্ণ শক্তিতে উপনীত হতে পারো৷ তারপর আরো বৃদ্ধিপ্রাপ্ত করেন যাতে তোমরা বৃদ্ধাবস্থায় উপনীত হও৷ তোমাদের কাউকে আগেই ফিরিয়ে নেয়া হয়৷ এসব কাজ করা হয় এ জন্য যাতে তোমরা তোমাদের নির্ধারিত সময়ের সীমায় পৌঁছতে পারো এবং যাতে প্রকৃত সত্য উপলব্ধি করতে পারো”৷ মুমিনঃ৬৭

উল্লেখ্য যে, পুরুষের একবার নির্গত লম্ফমান বীর্যে লক্ষ-কোটি শুক্রাণু থাকে। আল্লাহর হুকুমে তন্মধ্যকার একটি মাত্র শুক্রকীট স্ত্রীর জরায়ুতে প্রবেশ করে। এই শুক্রকীট পুরুষ ক্রোমোজম Y অথবা স্ত্রী ক্রোমোজম X হয়ে থাকে। এর মধ্যে যেটি স্ত্রীর ডিম্বের X ক্রোমোজমের সাথে মিলিত হয়, সেভাবেই পুত্র বা কন্যা সন্তান জন্ম গ্রহণ করে আল্লাহর হুকুমে।

মাতৃগর্ভের তিন তিনটি গাঢ় অন্ধকার পর্দার অন্তরালে এইভাবে দীর্ঘ নয় মাস ধরে বেড়ে ওঠা প্রথমত: একটি পূর্ণ জীবন সত্তার সৃষ্টি, অতঃপর একটি জীবন্ত প্রাণবন্ত ও প্রতিভাবান শিশু হিসাবে দুনিয়াতে ভূমিষ্ট হওয়া কতই না বিষ্ময়কর ব্যাপার। কোন মানুষের পক্ষে এই অনন্য-অকল্পনীয় সৃষ্টিকর্ম আদৌ সম্ভব কী? মাতৃগর্ভের ঐ অন্ধকার গৃহে মানবশিশু সৃষ্টির সেই মহান কারিগর কে? কে সেই মহান আর্কিটেক্ট, যিনি ঐ গোপন কুঠরীতে পিতার ২৩টি ক্রোমোজম ও মাতার ২৩টি ক্রোমোজম একত্রিত করে সংমিশ্রিত বীর্য প্রস্ত্তত করেন? কে সেই মহান শিল্পী, যিনি রক্তপিন্ড আকারের জীবন টুকরাটিকে মাতৃগর্ভে পুষ্ট করেন? অতঃপর ১২০ দিন পরে তাতে রূহ সঞ্চার করে তাকে জীবন্ত মানব শিশুতে পরিণত করেন এবং পূর্ণ-পরিণত হওয়ার পরে সেখান থেকে বাইরে ঠেলে দেন (আবাসা ৮০/১৮-২০)।

মায়ের গর্ভে মানুষ তৈরীর সেই বিষ্ময়কর যন্ত্রের দক্ষ কারিগর ও সেই মহান শিল্পী আর কেউ নন, তিনি আল্লাহ! সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি, সুবহানাল্লাহিল আযীম!!

পুরুষ ও নারীর সংমিশ্রিত বীর্যে সন্তান জন্ম লাভের তথ্য কুরআনই সর্বপ্রথম উপস্থাপন করেছে (দাহর ৭৬/২)।

আধুনিক বিজ্ঞান এ তথ্য জনতে পেরেছে মাত্র গত শতাব্দীতে ১৮৭৫ সালে ও ১৯১২ সালে। তার পূর্বে এরিষ্টটল সহ সকল বিজ্ঞানীর ধারণা ছিল যে, পুরুষের বীর্যের কোন কার্যকারিতা নেই। রাসূলের হাদীছ বিজ্ঞানীদের এই মতকে সম্পূর্ণ বাতিল ঘোষণা করেছে।মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৪৩৩-৪৩৪ ‘পবিত্রতা’ অধ্যায় ‘গোসল’ অনুচ্ছেদ।

কেননা সেখানে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে সন্তান প্রজননে পুরুষ ও নারী উভয়ের বীর্য সমানভাবে কার্যকর।

উল্লেখ্য যে, মাতৃগর্ভে বীর্য প্রথম ৬ দিন কেবল বুদ্বুদ আকারে থাকে। তারপর জরায়ুতে সম্পর্কিত হয়। তিন মাসের আগে ছেলে বা মেয়ে সন্তান চিহ্নিত হয় না। চার মাস পর রূহ সঞ্চারিত হয়ে বাচ্চা নড়েচড়ে ওঠে ও আঙ্গুল চুষতে থাকে। যাতে ভূমিষ্ট হওয়ার পরে মায়ের স্তন চুষতে অসুবিধা না হয়। এ সময় তার কপালে চারটি বস্ত্ত লিখে দেওয়া হয়। তার আজাল (হায়াত), আমল, রিযিক এবং সে ভাগ্যবান না দুর্ভাগা।মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৮২ ‘ঈমান’ অধ্যায় ‘তাক্বদীরে বিশ্বাস’ অনুচ্ছেদ।

এভাবেই জগত সংসারে মানববংশ বৃদ্ধির ধারা এগিয়ে চলেছে। এ নিয়মের ব্যতিক্রম নেই কেবল আল্লাহর হুকুম ব্যতীত। একারণেই আল্লাহ অহংকারী মানুষকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘মানুষ কি দেখে না যে, আমরা তাকে সৃষ্টি করেছি শুক্রবিন্দু থেকে? অতঃপর সে হয়ে গেল প্রকাশ্যে বিতন্ডাকারী। সে আমাদের সম্পর্কে নানারূপ দৃষ্টান্ত বর্ণনা করে। অথচ সে নিজের সৃষ্টি সম্পর্কে ভুলে যায়, আর বলে যে, কে জীবিত করবে এসব হাড়গোড় সমূহকে, যখন সেগুলো পচে গলে যাবে? (ইয়াসীন ৩৬/৭৭-৭৮)।

রাসুলুল্লাহ (সা.) মাতৃগর্ভে মানবশিশু জন্মের স্তর সম্পর্কে এভাবে বলেছেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকের সৃষ্টির উপাদান আপন মাতৃগর্ভে বীর্যের আকারে ৪০ দিন, জমাট বাঁধা রক্তে পরিণত হয়ে ৪০ দিন, গোশত আকারে ৪০ দিন। এরপর আল্লাহ একজন ফেরেশতাকে পাঠান এবং চারটি বিষয়ে আদেশ দেন যে, তার (শিশুর) আমল, রিজিক, আয়ুষ্কাল ও ভালো না মন্দ—সব লিপিবদ্ধ করো। অতঃপর তার মধ্যে রুহ ফুঁকে দেওয়া হয়।’ (বুখারি, হাদিস : ২৯৬৮)

অন্যত্র এসেছে, ‘আল্লাহ মাতৃগর্ভে একজন ফেরেশতা মোতায়েন করেন। ফেরেশতা বলেন, হে রব! এখনো তো ভ্রূণ মাত্র। হে রব! এখন জমাট বাঁধা রক্তপিণ্ডে পরিণত হয়েছে। হে রব! এবার গোশতের টুকরায় পরিণত হয়েছে। আল্লাহ যদি তাকে সৃষ্টি করতে চান, তখন ফেরেশতাটি বলেন, হে আমার রব! (সন্তানটি) ছেলে না মেয়ে হবে, পাপী না নেককার, রিজক কী পরিমাণ ও আয়ুষ্কাল কত হবে? অতএব এভাবে তার তাকদির মাতৃগর্ভে লিপিবদ্ধ করে দেওয়া হয়।’ (বুখারি, হাদিস : ৩০৮৭)

ইমাম বুখারী (র) বর্ণনা করেন যে, আবু হুরায়রা (রা) বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (সা) বলেছেন

“আল্লাহ্ তাআলা হযরত আদম (আ)-কে ষাট হাত দীর্ঘ করে সৃষ্টি করেন ৷ তারপর বললেন,ঐ ফেরেশতা দলের কাছে গিয়ে তুমি তাদের সালাম কর এবং লক্ষ্য করে শোন, তারা তোমাকে কি উত্তর দেয় ৷ কারণ এটাই হবে তোমার এবং তোমার সন্তান-সন্ততির অভিবাদন ৷ আদেশ অনুযায়ী হযরত আদম আ গিয়ে ফেরেশতাদের আসসালামু’আলাইকুম অর্থ ‘আপনাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। বলে সালাম করেন, ফেরেশতারা উত্তরে বলেন, ‘আসসালামু আলাইকা ওয়া রহমাতুল্লাহ’, অর্থ ‘আপনার ওপর শান্তি এবং আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক। আর তারা বলে উত্তর দেন ৷ উল্লেখ্য যে, আদমের সন্তানদের যারাই জান্নাতে প্রবেশ করবে, তারা সকলেই আদম (আ) এর আকৃতিসম্পন্ন হবে ৷ ধীরে ধীরে হ্রাস পেতে পেতে মানুষের উচ্চতা এখন এ পর্যায়ে এসে পৌছেছে ৷

অনুরুপ ইমাম বুখারী (র) কিতাবুল ইস্তিয়ানে’ আর ইমাম মুসলিম (র) তার গ্রন্থে ভিন্ন

ভিন্ন সুত্রে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন ৷ ইমাম আহমদ (র) বর্ণনা করেন যে , আবু হুরায়রা (রা)বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন : আদম (আ)-এর উচ্চতা ছিল ষাট হাত আর প্রস্থ সাত হাত ৷

তিরমিষী (র) বর্ণনা করেন যে, আবু হুরায়রা (রা) বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (সা) বলেছেন :

“আদম (আ)-কে সৃষ্টি করে আল্লাহ্ তা আলা তার পিঠে হাত বুলান ৷ সাথে সাথে কিয়ামত পর্যন্ত আগমনকারী তার সব কটি সন্তান তার পিঠ থেকে ঝরে পড়ে ৷ আর আল্লাহ্ তাআলা তাদের প্রত্যেকের দুচোখের মাঝে একটি করে নুরের দীপ্তি স্থাপন করে দিয়ে তাদেরকে আদম আ)-এর সামনে পেশ করেন ৷ তখন আদম (আ) জিজ্ঞাসা করলেন, হে আমার রব! এরা কারা? আল্লাহ্ বললেন, এরা তোমার সন্তান-সন্ততি ৷ তখন তাদের একজনের দুচোখের মাঝে দীপ্তিতে বিমুগ্ধ হয়ে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, হে আমার রব! ইনি কে? আল্লাহ বললেন, যে তোমার ভবিষ্যত বংশধরের দাউদ নামক এক ব্যক্তি ৷ তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, এর আয়ু কত নির্ধারণ করেছন? আল্লাহ বললেন : ষাট বছর ৷ আদম (আ) বললেন, হে আমার রব ৷

আমার আয়ু থেকে নিয়ে এর আয়ু আরো চল্লিশ বছর বৃদ্ধি করে দিন ৷ তারপর যখন আদম(আ)-এর আয়ু শেষ হয়ে যায়; তখন জান কবয করার জন্য মৃত্যুর ফেরেশতা তার কাছে আগমন করেন ৷ তখন তিনি বললেন, আমার আয়ু না আরো চল্লিশ বছর বাকি আছে?

মৃত্যুর ফেরেশতা বললেন, কেন, আপনি না তা আপনার সন্তান দাউদ (আ)-কে দিয়ে

দিয়েছিলেন? কিন্ত আদম (আ) তা অস্বীকার করে বলেন ৷ এ কারণে তার সন্তানদের মধ্যে অস্বীকৃতির প্রবণতা রয়েছে ৷ তিনি পুর্বের কথা ভুলে যান ৷ ফলে তার সন্তানদের মধ্যেও বিস্মৃতির প্রবণতা রয়েছে ৷ আদম (আ) ত্রুটি করেন, তাই তার সন্তানরাও ত্রুটি করে থাকে ৷ইমাম তিরমিষী (র) হাদীসটি হাসান সহীহ বলে মন্তব্য করেছেন ৷ আবু হুরায়রা (রা) থেকে আরো একাধিক সুত্রে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে ৷ হাকিম (র) তীর মুস্তাদরাকে আবু নুআয়ম (ফযল ইবনে দুকায়ন)-এর সুত্রে হাদীসটি বর্ণনা করে বলেছেন, ইমাম মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী হাদীসটি সহীহ ৷ তবে ইমাম বুখারী ও মুসলিমের কেউই হাদীসটি বর্ণনা করেননি ৷