গীবত বা পরনিন্দা

দয়াময় মেহেরবান আল্লাহর নামে

গীবত শব্দটির আভিধানিক অর্থ হচ্ছে দোষারোপ করা, পরচর্চা করা, পরনিন্দা করা, কুৎসা রটনা করা, পিছে সমালোচনা করা ইত্যাদি। অর্থাৎ কারো অনুপস্থিতিতে তাঁর সম্পর্কে এমন মন্তব্য করা যা শুনলে সে কষ্ট পেতো তাকেই গীবত বলে।

সংজ্ঞাঃ রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই এর সংজ্ঞা জানিয়ে দিয়েছেন।

সাহাবি আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

গীবত কাকে বলে, তোমরা জান কি? সাহাবিগণ বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -ই ভালো জানেন। তিনি বললেন, তোমার কোনো ভাই (দীনি) সম্পর্কে এমন কথা বলা, যা সে অপছন্দ করে, তা-ই গীবত। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমি যে দোষের কথা বলি তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে তাহলেও কি গীবত হবে? উত্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি যে দোষের কথা বল, তা যদি তোমার ভাইয়ের থাকে তবে তুমি অবশ্যই তার গীবত করলে আর তুমি যা বলছ তা যদি তার মধ্যে না থাকে তবে তুমি তার ওপর মিথ্যা অপবাদ দিয়েছ। মুসলিম: ২৫৮৯, আবু দাউদ: ৪৮৭৪, তিরমিযীঃ ১৯৩৪

পবিত্র আল কুর’আনে সূরা হুমাযাতে এসেছে-

وَيْلٌ لِّكُلِّ هُمَزَةٍ لُّمَزَةٍ

ধ্বংস এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য যে (সামনা সামনি) লোকদের ধিক্কার দেয় এবং (পেছনে ) নিন্দা করতে অভ্যস্ত।আয়াতঃ১

অনেকের মতে هَمز চোখ ও হাতের ইশারায় নিন্দা প্রকাশ করা এবং لَمز জিহ্বা দ্বারা পরনিন্দা করাকে বলা হয়। শব্দ দুটি সমার্থবোধক।

আয়াতে ‘হুমাযাহ’ ও ‘লুমাযাহ’ দু’টি শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। অধিকাংশ তাফসীরকারের মতে همز এর অর্থ গীবত অর্থাৎ পশ্চাতে পরনিন্দা করা এবং لمز এর অর্থ সামনাসামনি দোষারোপ করা ও মন্দ বলা। এ দুটি কাজই জঘন্য গোনাহ।

গীবত করার পিছনে কিছু কারন সমূহঃ

  • মানব প্রবৃত্তির কাছে গীবতের মজাদার হওয়ার দুইটি কারণ।

প্রথমত, নিজের দোষের প্রতি দৃষ্টি দেওয়া বিরক্তিকর। অন্যের দোষ আলোচনা করলে এ বিরক্তি থেকে বাঁচা যায়।

দ্বিতীয়ত, নিজের ভালত্ব, ও প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার সহজ উপায় গীবত। নিজের বড়ত্ব নিজে বলা একটু খারাপ দেখায়। অন্যেদের গীবতের মাধ্যমে সহজেই প্রমান করা যায় যে, সকলেই দোষযুক্ত, আমি অনেক ভাল।

মানবীয় এ দুর্বলতার বিষয়ে রাসূলুল্লাহ  বলেন:

يُبْصِرُ أَحَدُكُمْ الْقَذَاةَ فِيْ عَيْنِ أَخِيْهِ، وَيَنْسَى الْجِذْعَ فِيْ عَيْنِهِ

“তোমাদের মধ্যে একজন মানুষ তার ভাইয়ের চোখের সামান্য কুটাটুকু দেখতে পায়, কিন্তু নিজের চোখের মধ্যে বিশাল বৃক্ষের কথা ভুলে যায়।” (সহীহ ইবন হিব্বান, মাওয়ারিদুয্ যামআন ৬/৯০ সহীহ

  • রাগ ও ক্রোধের বশবর্তী হয়ে অনেকে গীবত করে থাকে।

অনেকেই রাগের সময়  ব্যক্তির(যার সাথে রাগ) দোষ সমূহ  বলে ফেলেন, অথবা ব্যক্তির নিজ পরিবারের বা আত্মীয়-স্বজনের গীবত করে ফেলেন।

রাগ দমন করা একটি মহৎ গুণ।গীবত থেকে রক্ষা পেতে রাগকে দমন করার অভ্যাস রাখতে সচেষ্ট হতে হবে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি (কোন বিষয়ে রাগ হলে) তার রাগকে দমন করে নিবে অথচ সে ঐ বিষয়ে তার রাগকে বাস্তবায়ন করতে সক্ষম, একারণে আল্লাহ তা‘আলা পরকালে তাকে সমস্ত সৃষ্টিকুলের সামনে ডেকে “হুরদের ব্যাপারে স্বাধীনতা দিবেন। সে যত সংখ্যক হুর চাইবে আল্লাহ তা‘আলা তাকে তাদের সাথে বিয়ে দিয়ে দিবেন”(সহীহুল জামে হা/ ৬৫২২)।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

“যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল উভয় অবস্থায় দান করে থাকে, ক্রোধকে সংবরণ করে থাকে আর মানুষের অপরাধকে মার্জনা করে থাকে, মহান আল্লাহ এই জাতীয় সৎকর্মশীলদেরকে ভালবাসেন” (আলে ইমরান-১৩৪) ।

  • নিজেকে বড় মনে করা আর অপরকে ছোট মনে করাঃ এই ধরনের মন মানসিকতায় যারা থাকেন, অধিকাংশ সময়েই এই ধরনের অসৎ উদ্দেশ্যের কারণে বহু মানুষ একে অপরের গীবত করে থাকে।

অথচ এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,

“কোন মানুষের অমঙ্গলের জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে নিজ মুসলিম ভাইকে তুচ্ছ মনে করবে”(সহীহ মুসলিম)।

এইক্ষেত্রে মনে রাখা প্রয়োজন মহান আল্লাহ কাকে পছন্দ করেন আর ভালোবাসেন, আমরা কেউ বলতে পারিনা। আবার কোন ব্যক্তির কোন একটি আমল মহান আল্লাহ পছন্দ করে সন্তুষ্ট হয়ে তাকে প্রিয় বান্দাদের অন্তর্ভূক্ত করে ফেলেছেন,আমরা সেটা জানি না, তাহলে কিভাবে কোন ব্যক্তিকে আমরা ছোট বা হেয় করতে পারি? যাকে হেয় করতে যাচ্ছেন সেই ব্যক্তি যদি রবের প্রিয় বান্দা হয়ে থাকে তাহলে নিজের অবস্থা কি হবে তখন একটু চিন্তা করা প্রয়োজন। তাই কাউকে ছোট করার মানসিকতাই রাখা ঠিক নয়, ফলে গীবত থেকেও মুক্ত থাকা সম্ভব।

  • বন্ধু-বান্ধবের সাথে / নিজ পরিবারের/ আত্মীয়দের সাথে মিল দিয়ে চলা এবং তাদের গীবতের কোন প্রতিবাদ না করে বাহ্যিকভাবে তা সমর্থন করা।

কারণ প্রতিবাদ করলে তাকে তারা বিদ্রোহী মনে করবে ও খারাপ ভাববে। ফলে কেউ গীবত করলে তার সাথে আরো কিছু যোগ করে ব্যক্তিও গীবত করে। এই প্রকৃতির লোকদের রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিম্নের বানী স্মরন রাখা উচিত।

“যে ব্যক্তি মানুষকে নাখোশ রেখে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করতে চায়, আল্লাহ তা‘আলাই তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবেন মানুষের সাহায্যের মোকাবেলায়। আর যে ব্যক্তি মানুষের সন্তুষ্টি কামনা করে মহান আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করে, আল্লাহ তাকে মানুষের নিকট সোপর্দ করে দেবেন”(সহীহুল জামে হা/৬০৯৭)।

  • খেল তামাসা ও ঠাট্টা মশকরা করতে গিয়ে বিনা প্রয়োজনে অনেক সময় মানুষ অন্য লোকের দোষ বর্ণনা করতে থাকে।

নবী কারীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এই ধরণের লোকদের সম্পর্কে বলেছেন,

“দুর্ভোগ ঐ ব্যক্তির জন্য, যে মানুষকে হাসানোর জন্য মিথ্যা কথা বলে। দুর্ভোগ তার, দুর্ভোগ তার” (সহীহুল জামে হা/৭১৩৬) । খেল তামাসা ও ঠাট্টা মশকরা করতে গিয়ে বিনা প্রয়োজনে অনেক সময় মানুষ অন্য লোকের দোষ বর্ণনা করতে থাকে। আবার অনেকে এই সমালোচনা দ্বারা নিজের জীবিকা অর্জনের ব্যবস্থা করে থাকে। বিশেষ করে পত্রিকা ও নেটে এই ধরনের অনেক তথ্য আসে যা শুধুমাত্র ব্যক্তির গীবতই হয়।

  • একে অপরের সাথে হিংসা-বিদ্বেষ করার কারনে গীবত হয়ঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,“তোমরা একে অপরের সাথে হিংসা-বিদ্বেষ কর না” (সহীহ বুখারী)।

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)আরো বলেছেন,

“তোমাদের মধ্যে প্রবেশ করেছে তোমাদের পূর্ববর্তী জাতির রোগ তথা হিংসা-বিদ্বেষ ও ঘৃণা।আর এ ঘৃণাবোধ হলো মুণ্ডনকারী বিষয়। এটা চুল মুণ্ডনকারী নয়; বরং দ্বীন অর্থাৎ ইসলাম ধর্মকে মুণ্ডনকারী” (সহীহুল জামে হা/৩৩৬১)।

হিংসা-বিদ্বেষের তাড়নায় অনেকে অপরের গীবতে জড়িয়ে পড়ে। কারো উন্নতি বা প্রশংসা দেখলে অনেকেই হিংসায় সেই ব্যক্তি সম্পর্কে কটু কথা বলে থাকেন বা ব্যক্তিজীবনের অনেক গোপন কথাও প্রকাশ করে দেন,উদ্দেশ্য ব্যক্তিকে হেয় করা। এই ধরনের অবস্থা থেকে মনকে পবিত্র রাখতে পারলে গীবত থেকে রক্ষা পাবে।

  • অনেক ব্যক্তি আছেন যাদের কাজ কম, অফুরন্ত সময়, তখন সময়কে ব্যয় করার জন্য কিছু খুঁজতে থাকেন গীবত হয় তখন।

তখন যারা অলস প্রকৃতির তারা শুয়ে বসে গল্প করেই পার করতে চায় সময়টি। এধরণের মানুষই বেশী বেশী অপরের গীবত করে থাকে।

কারণ তাদের কোন কাজ থাকে না। সময় কাটানোর মাধ্যম হিসাবে তারা ঐ নোংরা পথকে বেছে নেয়। অথচ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “দুটি নেয়ামত এমন রয়েছে,যার ব্যাপারে অনেক মানুষ ধোঁকাগ্রস্ত রয়েছে।সুস্থতা ও অবসর।” (সহীহ বুখারী হা/২৯১)

  • কারোর গীবত করা মুনাফিকের আলামত।

আবূ বারযাহ্ আস্লামী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

يَا مَعْشَرَ مَنْ آمَنَ بِلِسَانِهِ وَلَمْ يَدْخُلِ الْإِيْمَانُ قَلْبَهُ ! لَا تَغْتَابُوْا الْـمُسْلِمِيْنَ، وَلَا تَتَّبِعُوْا عَوْرَاتِهِمْ، فَإِنَّهُ مَنِ اتَّبَعَ عَوْرَاتِهِمْ يَتَّبِعِ اللهُ عَـوْرَتَهُ، وَمَنْ يَّتَّبِعِ اللهُ عَوْرَتَهُ يَفْضَحْهُ فِيْ بَيْتِهِ.

‘‘হে তোমরা যারা মুখে ঈমান এনেছো; অথচ ঈমান তোমাদের অন্তরে প্রবেশ করেনি! তোমরা মুসলিমদের গীবত এবং তাদের ছিদ্রান্বেষণ করো না। কারণ, যে ব্যক্তি মুসলিমদের ছিদ্রান্বেষণ করবে আল্লাহ্ তা‘আলাও তার ছিদ্রান্বেষণ করবে। আর আল্লাহ্ তা‘আলা যার ছিদ্রান্বেষণ করবেন তাকে তিনি তার ঘরেই লাঞ্ছিত করবেন’’। (আবূ দাউদ ৪৮৮০)

গীবত শুনার পরিবেশে করনীয়ঃ

·       কাউকে অন্যের গীবত করতে দেখলে তাকে অবশ্যই বাধা দিতে হবে।

তা হলে আল্লাহ্ তা‘আলা কিয়ামতের দিন জাহান্নাম থেকে রক্ষা করবেন।

যে মজলিসে কারও গীবত করা হয় সেখানে যে ব্যক্তিই উপস্থিত থাকুক তাকে তা নিষেধ করা ওয়াজিব। যে ভাইয়ের গীবত করা হয় তার পক্ষ নিয়ে সাধ্যমত তাকে সহযোগিতা করাও আবশ্যক। সম্ভব হলে ঐ মজলিসেই গীবতের বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,

مَنْ رَدَّ عَنْ عِرْضِ أَخِيهِ رَدَّ اللهُ عَنْ وَجْهِهِ النَّارَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ-

        ‘যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের মান-সম্ভ্রমের বিরুদ্ধে কৃত হামলাকে প্রতিহত করবে, ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তার থেকে জাহান্নামের আগুনকে প্রতিহত করবেন’। আহমাদ হা/২৭৫৮৩; তিরমিযী হা/১৯৩১।

মু‘আয বিন্ আনাস্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

‘‘যে ব্যক্তি কোন মু’মিনকে মুনাফিকের কুৎসার হাত থেকে রক্ষা করলো আল্লাহ্ তা‘আলা (এর প্রতিফল স্বরূপ) কিয়ামতের দিন তার নিকট এমন একজন ফিরিশতা পাঠাবেন যে তার শরীরকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করবে। আর যে ব্যক্তি কোন মুসলিমকে তার ইজ্জত হননের উদ্দেশ্যে কোন ব্যাপারে অপবাদ দিলো আল্লাহ্ তা‘আলা তাকে কিয়ামতের দিন (এর প্রতিফল স্বরূপ) জাহান্নামের পুলের উপর আটকে রাখবেন যতক্ষণ না সে উক্ত অপবাদ থেকে নিষ্কৃতি পায়’’। (আবূ দাউদ ৪৮৮৩)

একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদেরকে নিয়ে তাবুক এলাকায় বসেছিলেন এমতাবস্থায় তিনি তাঁদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন: কা’ব বিন্ মা’লিক কোথায়? তখন বনী সালিমাহ্ গোত্রের জনৈক ব্যক্তি বললেন: হে আল্লাহ্’র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তার সম্পদ ও আত্মগর্ব তাকে যুদ্ধ থেকে বিরত রেখেছে। তখন মু‘আয বিন্ জাবাল (রাঃ) প্রত্যুত্তরে বললেন: হে ব্যক্তি তুমি অত্যন্ত খারাপ উক্তি করলে। হে আল্লাহ্’র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আল্লাহ্’র কসম! আমরা তার ব্যাপারে ভালো ধারণাই রাখি। (মুসলিম ২৭৬৯)

  •    সম্মানের সাথে সেই জায়গা থেকে চলে আসাঃ

আর যখন তারা কোন বেহুদা কথা কথা শোনে , তা উপেক্ষা করে যায় ৷ বলে, আরে ভাই , আমাদের কাজের ফল আমরা পাবো এবং তোমাদের কাজের ফল তোমরা পাবে৷ সালাম তোমাদের , আমরা জাহেলদের সাথে কথা বলি না৷”(আল কাসাস : ৫৫)

  • এই ধরনের লোক থেকে দূরে থাকা।  ইরশাদ হচ্ছে, ‘আর তুমি আনুগত্য করো না এমন প্রত্যেক ব্যক্তির, যে অধিক কসমকারী, লাঞ্ছনা, পেছনে নিন্দাকারী ও যে চোগলখোরি করে বেড়ায়, ভালো কাজে বাধাদানকারী, সীমা লঙ্ঘনকারী, পাপিষ্ঠ।’ (সুরা ক্বালাম : ১০-১৩)

গীবতের প্রকারভেদঃ

আমা‌দের সমস্যা হ‌চ্ছে, ঠিক কোন গু‌লো গীবত বুঝতেই না পারা । এখা‌নে বেশ ক‌য়েক প্রকা‌রের গীবত নি‌য়ে আলোচনা করা হলো।

(১) খাবা‌রের গীবত :

নিকৃষ্টতম গীবত হল খাবা‌রের গীবত করা ।

যেমন বলা, খাবারটা মজা হয় নাই, লবণ কম হই‌ছে, এত লবণ দি‌য়ে‌ছে যে তিতা লাগ‌ছে ইত্যা‌দি ।

নবী(স:) কখনই খাবা‌রের দোষ ধর‌তেন না । ভা‌লো না লাগ‌লে এক পা‌শে স‌রি‌য়ে রাখ‌তেন । কখনই বল‌তেন না, কী খাবার রান্না ক‌র‌েছে মু‌খেই দেয়া যা‌চ্ছে না !

(২) দৈ‌হিক কাঠা‌মোর গীবত :

কা‌রো কা‌ছে কোন ব্যক্তির দৈ‌হিক ত্রু‌টি উল্লেখ করাও গীবত ।

যেমন বলা, অমুক ব্যক্তি খুব মোটা, তার নাক বোঁচা, চোখ খু‌বি ছোট, চো‌খে দে‌খে না, মাথায় তো চুল নাই, পে‌টে ভূ‌ড়ি আছে, সে তো খু‌বই খাট ইত্যা‌দি ।

“একবার আয়েশা(রা:) ব‌লেন, হে আল্লাহর রাসূল ! আপ‌নি কী সা‌ফিয়ার বেঁ‌টে হওয়াটা অপছন্দ ক‌রেন না ?

রাসূল(স:) বল‌লেন, হে আয়েশা ! তু‌মি এমন এক‌টি কথা বল‌লে যা নদীর পা‌নির সা‌থে মি‌শি‌য়ে দি‌লে তার উপর প্রতি‌ক্রিয়া সৃ‌ষ্টি কর‌বে ।”

(আবু দাউদ )

(৩) পোশা‌কের গীবত :

এভা‌বে বলা, অমু‌কের পোশাক খাট, কেমন কালা‌রের জামা-কাপড় প‌রে দেখ‌তে বি‌শ্রি লা‌গে, ঐ মে‌য়ে এত ফি‌টিং ওয়ালা পোশাক প‌রে, অমুক তো পাতলা ড্রেস প‌রে ইত্যা‌দি ।

” একবার আয়েশা(রা:) বলেন, অমুক স্ত্রীলো‌কের আচল খুব লম্বা । রাসূল(স:) একথা শু‌নে বলল‌েন, হে আয়েশা ! তোমার থুথু ফেলা কর্তব্য । আয়েশা(রা:) ব‌লেন, আমি থুথু ফেল‌লে মুখ থে‌কে গোশ‌তের এক‌টি টুকরা বের হ‌য়ে আসে ।”(আত তারগীব ওয়াত তারহীব)

(৪) বং‌শের গীবত :

তুচ্ছ করার জন্য কাউ‌কে বলা, অমু‌কের বংশ নিচু, অমু‌কের পূর্ব পুরু‌ষেরা ছিল কূ‌লি মজুর বা চোর ডাকাত ইত্যা‌দি, অমু‌কের তো কোন বংশই নেই ইত্যা‌দি বলা ।

(৪) অভ্যাস বা আচার-আচার‌ণের গীবত :

কোন ব্যক্তির আচার ব্যবহার নি‌য়ে সমা‌লোচনা করা ।

যেমন, সে মানুষ‌কে কষ্ট দি‌য়ে কথা ব‌লে, ব্যবহার খারাপ, অভদ্র, পেটুক, অলস, সকাল ১০টা পর্যন্ত ঘুমায় ইত্যা‌দি ।

(৫) ইবাদ‌তের গীবত :

ইবাদ‌তের ত্রু‌টি বিচ্যু‌তি নি‌য়ে সমা‌লোচনা করা ।

যেমন, কাউ‌কে গি‌য়ে বলা অমু‌কতো ঠিকমত নামায পর‌তে পা‌রে না, মাকরুহ ওয়া‌ক্তে নামায প‌রে, রমযা‌নের রোজা রা‌খে না, এত বড় হই‌ছে কিন্তু এখ‌নো নামায প‌ড়ে না, এত বড় মে‌য়ে কুরআন পড়‌তে জা‌নে না ইত্যা‌দি ।

“তাহাজ্জু‌দের ওয়া‌ক্তে কতক লোক ঘু‌মি‌য়ে থাক‌লে শেখ সাদী(রহ:) তা‌দের সমা‌লোচনা ক‌রেন এবং ব‌লেন, এই লোকগু‌লো য‌দি তাহাজ্জুদ পড়‌তো ত‌বে কতই না ভা‌লো হত । সাদীর পিতা একথা শু‌নে ব‌লেন, কতই না ভা‌লো হত য‌দি তু‌মি তাহাজ্জুদ না প‌ড়ে এদের মত ঘু‌মি‌য়ে থাক‌তে । তাহ‌লে এদের গীবত করার পাপ তোমার ঘা‌ড়ে চাপত না ।”এহইয়া উলূ‌মিদ-দীন)

(৬) গুনা‌হের গীবত :

যেমন বলা, অমুক যেনা ক‌রে‌ছে, অমুক মানু‌ষের ন‌া‌মে বদনাম ক‌রে, বাবা-মা কে কষ্ট দেয়, মিথ্যা কথা ব‌লে, হিংসুক, অমু‌কের মে‌য়ে প্রেম ক‌রে ছে‌লে নি‌য়ে রাস্তা দি‌য়ে ঘু‌ড়ে বেড়ায় ইত্যা‌দি ।

৭) অভিনয়/ইশারা-ইং‌গি‌তের মাধ্যমে গীবত :

কোন ব্যক্তির অসহায় অবস্থা অভিন‌য়ের বা ইশারা-ইং‌গি‌তের মাধ্যমে দেখা‌নো ।

যেমন, অন্ধ, বোবা, খুরা ইত্যা‌দি সে‌জে দেখা‌নো । এমনকি সমা‌লোচনার জন্য কা‌রো চালচলন, কথা, পোশাক ইত্যা‌দি নকল ক‌রে অভিনয় করাটাও গীবত । সরাস‌রি না‌মো‌ল্লেখ না ক‌রে এমন কিছু ইং‌গিতবহ উপমা ব্যবহার করে দোষ বর্ণনা করা যে লো‌কেরা উপমা শু‌নেই বু‌ঝে ফে‌লে কার কথা বলা হ‌চ্ছে ।

অর্থাৎ গীবত করার সময় নাম না নি‌লেও এমন ভা‌বে কোন ব্যা‌ক্তির দোষ-ত্রু‌টি বলা যে মানু‌ষের আর বুঝ‌তে বা‌কি থা‌কে না কার কথা বলা হ‌চ্ছে, এটাও গীবত পর্যা‌য়ে পড়‌বে ।

“রাসূল(স:) ব‌লেন, আমি পরানুকরণ পছন্দ ক‌রি না, এত এত সম্প‌দের বি‌নিম‌য়েও না ।” (তির‌মি‌যি)

(৭) কা‌নের গীবত :

নি‌জে না বল‌লেও কা‌রো গীবত শোনা এবং শোনার সময় কোনরুপ বাধা না দেয়া কা‌নের গীবত । গীবত দুই ভা‌বে হয় –

(১) মু‌খে ব‌লে

(২) কা‌নে শো‌নে

গীবত বলা ও শোনা সমান পাপ ।রাসূল(স:) ব‌লে‌ছেন, গীবত শ্রবণকারীও গীবতকারী‌দের একজন ।” (তাবরানী)

(৮) অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মাধ্য‌মে গীবত :

নি‌জের হাত, পা, চোখ ইত্যা‌দির মাধ্যমে অন্য লো‌কের নিকট কোন ব্যক্তির দোষ বর্ণনা করা ।

যে ব্যক্তি চোখ এবং হা‌তের ইশারার দ্বারা মানুষ‌দের কষ্ট দেয় তা‌দের জন্য র‌য়ে‌ছে ক‌ঠোর শা‌স্তি । এবং হুতামাহ নামক জাহান্নাম‌টি তা‌দের জন্যও প্রস্তুত র‌য়ে‌ছে ।

যেমন, কোন ব্যক্তি কোন মজ‌লিস থে‌কে উঠে চ‌লে যাওয়ার পর তার প্রতি মানু‌ষের দৃ‌ষ্টি আকর্ষণ করার জন্য চোখ অথবা হা‌তের ব্যবহার করা ।

“খর্বাকৃ‌তি এক ম‌হিলা মহানবী(স:) এর নিকট আগমন কর‌লো । তার চ‌লে যাওয়ার পর আয়েশা(রা:) তা‌কে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্য হা‌তের দ্বারা তার প্রতি ইং‌গিত ক‌রেন । মহানবী(স:) ব‌লেন, হে আয়েশা ! তু‌মি তো তার গীবত কর‌লে ।” (বায়হাকী)

(৯) লেখনীর মাধ্যমে গীবত :

কাউকে হেয় করার জন্য ফেসবুক, প‌ত্রিকা ইত্যা‌দি‌তে লিখা । বা অন্য কা‌রো কা‌ছে পত্র লিখার সময় কা‌রো দোষ লিখা ।

এমন‌কি মে‌সেন্জা‌রে একজ‌নের কা‌ছে আরেকজ‌নের দোষ লি‌খে মে‌সেজিং করা, বি‌শেষ ক‌রে দুজন ফ্রেন্ড কথা বলার সময় এ সমস্যাটা বে‌শি হয় ইত্যা‌দি ।

(১০) দাওয়াত কেন্দ্রিক ঘৃণ্য গীবতঃ

আমাদের সমাজে দা’ওয়াতে লিপ্ত সম্মানিত মুমিনগণকে শয়তান বিভিন্নভাবে গীবতে লিপ্ত করে।

তন্মধ্যে প্রধান পথ দুইটি: ১. পাপে বা অন্যায়ে লিপ্ত ব্যক্তিগণের গীবত

দাওয়াত দিতে গিয়ে অনেকেই দেখা যায় যাকে দাওয়াত দেয়া হবে তার সম্পর্কে গীবত করে ফেলা হয়। যেমন “ক” অনেক

ভালো গুন আছে,কিন্ত একটু বেশী রাগী বা আবেগপ্রবন ইত্যাদি।

২. দাওয়াতে লিপ্ত অন্য মুসলিমের গীবত।

আজ বিভিন্ন ভাবে মাঠ কাজ করা দাঈ রা একজন অন্যজনের গীবত করে যাচ্ছেন। সোস্যাল মিডিয়াতে যেনো গীবতের ছুড়াছুড়ি।

ফলে ব্যক্তির ক্ষতি যতটা হচ্ছে দাওয়াতের ক্ষেত্র বেশী নষ্ট হচ্ছে। সাধারন মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে যাচ্ছে। দলাদলি বেড়েই চলেছে। এই ফাঁকে ইসলামের শএু আরো বেশী দীনের ক্ষতি করার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে।

মৃত ব্যক্তির গীবত করা যাবে নাঃ

আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা তোমাদের মৃতদের ভালো কাজগুলোর আলোচনা করো এবং মন্দ কাজের আলোচনা থেকে বিরত থাকো।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯০০)

রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা মৃতদের গালমন্দ কোরো না, তারা যা করেছে তারা তা পেয়েছে।’ (বুখারি, হাদিস ১৩২৯)

হযরত আবু হুরাইয়া (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদীসে আছে-
‘ইসা ইবনে মালিকিনা আসলামী নবী করীম (সা.)-এর নিকট এসে চতুর্থবারের মতো ব্যাভিচারের স্বীকারোক্তি দেওয়ায়, তিনি তাকে প্রস্তরাঘাতে হত্যার আদেশ দেন। অতঃপর নবী করীম (সা.) ও কতিপয় সাহাবা (রা.) তার কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। তখন তাদের মধ্য থেকে একজন বলে উঠলেন, এই বিশ্বাসঘাতকটা কয়েকবারই নবী করীম (সা.)-এর নিকট আসে এবং প্রত্যেকবারই রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে ফিরে যেতে বলেন, অতঃপর যেভাবে কুকুর হত্যা করা হয়, তেমনি তাকে হত্যা করা হয়। নবী করীম (সা.) এ কথা শুনে মৌনতা অবলম্বন করেন। এরপর তারা যখন একটি মৃত গাধার পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন এবং গাধাটি ফুলে যাওয়ায় এর পাগুলো উপরের দিকে উঠেছিলো, তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমরা দু’জনে এটা খাও। তারা বললেন, গাধার মৃত দেহ খেতে বলেছেন হে রাসূল! তিনি বললেন, কেন তোমাদের ভাইয়ের সম্মানহানীর মাধ্যমে ইতোপূর্বে তোমরা যা অর্জন করেছো,তা এর তুলনায় অধিক বেশি গর্হিত। মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রাণ যার হাতে সে পবিত্র সত্তার শপথ সে এখন জান্নাতের ঝর্ণাসমূহের মধ্যে একটি ঝর্ণাতে সাঁতার কাটছে।’ (আল আদাবুল মুফরাদ)।

গীবত করা যায় কোন কোন ক্ষেত্রেঃ

অন্যের গীবত করা জায়েয হওয়ার ব্যাপারে ২ টি শর্ত রয়েছে। এই শর্ত দুটি অবশ্যই সামনে রেখেই গীবত বা দোষটি উন্মুক্ত করা যাবে ক্ষেত্র বিশেষে।

১। নিয়ত খালেছ বা সঠিক হওয়া।

২। প্রয়োজন দেখা দেওয়া। (আল-হালাল ওয়াল হারাম ফিল ইসলাম, ২৯০)।

অর্থাৎ নিয়তের মধ্যে যদি কাউকে হেয় প্রতিপন্ন করা উদ্দেশ্য হয়, তবে তা গীবত বলে গণ্য হবে। বিনা প্রয়োজনে অন্যের কোন বিষয় নিয়ে সমালোচনা ও পর্যালোচনা করাও গীবতের ভিতর গণ্য হবে। অতএব আমাদের সকলের উপর অপরিহার্য কর্তব্য হবে জিহবাকে সংযত রাখা। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,

“যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার প্রতি আর পরকালের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছে, তাঁর উচিত হবে এটাই- সে যেন ভাল কথা বলে অথবা চুপ থাকে”।

কোন কোন অবস্থায় গীবত করা যায় তা উল্লেখ হলোঃ

১। ব্যক্তির পরিচয় দিতে গিয়েঃ

মুসলিম শরীফে এসেছে,“নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর দুইজন মুয়াজ্জিন ছিল। একজন বিলাল (রাঃ) আর একজন অন্ধ সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতূম (রাঃ)” (সহীহ মুসলিম হা/৩৮)। অত্র হাদীসে আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতূম (রাঃ)-কে কেবলমাত্র পরিচিতির জন্যেই অন্ধ বলা হয়েছে।

২। ফাতাওয়া জানার প্রয়োজনেঃ

হিন্দা (রাঃ) নবী কারীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর দরবারে এসে অভিযোগ করে বলেছিলেন, নিশ্চয়ই আবূ সুফিয়ান(রাঃ) (স্বীয় স্বামী) একজন কৃপণ লোক, সে আমার ও আমার সন্তানদের জন্য যে পরিমাণ খাদ্য দ্রব্য অর্থাৎ খরচ খরচার প্রয়োজন তা ঠিকমত আমাদেরকে দেয় না। এমতাবস্থায় আমি যদি তাঁকে না জানিয়ে তাঁর ধন-সম্পদ হতে কোন কিছু নিয়ে ফেলি, তাহলে কি আমার গোনাহ হবে? একথা শুনে নবী কারীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁকে বললেন, তোমার ও তোমার ছেলে মেয়েদের জন্য অতিরিক্ত যে জিনিসের প্রয়োজন হয়- ঠিক সে পরিমাণ জিনিস তুমি তোমার স্বামীর ধন-সম্পদ থেকে নিয়ে নিবে। বুখারী ও মুসলিম শরীফ

৩। কেউ কারো কাছে কারো সম্পর্কে ব্যবসা-বাণিজ্য কিংবা বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করা যাবে কি না এ সম্পর্কে সুপরামর্শ চাওয়ার ক্ষেত্রেঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যার নিকট পরামর্শ তলব করা হয়, সে একজন আমানতদার (সহীহুল জামে হা/ ৬৭০০)।

নবী কারীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট এসে ফাতেমা বিনতু ক্বায়েস (রাঃ) বললেন, তাঁকে মু‘আবিয়া (রাঃ) ও আবূ জাহাম (রাঃ) বিবাহের প্রস্তাব দিয়েছে। এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁকে বললেন, মু‘আবিয়া (রাঃ) হলো ফকীর। তাঁর কোন ধন-সম্পদ নেই। আর আবূ জাহাম (রাঃ) এর বৈশিষ্ট্য হলো, সে কাঁধ থেকে লাঠি (মাটিতে) রাখে না অর্থাৎ স্ত্রীদেরকে সে অধিক মার-ধর করে। বরং তুমি উসামাকে (রাঃ) বিবাহ কর। (সহীহ মুসলিম হা/১৪৮০)।

৪। শরীয়াত বিরোধী অন্যায় কাজ সমাজ থেকে দূর করার জন্য ক্ষমতাশীল লোকদের নিকট হতে সাহায্য তলব করার প্রয়োজনেঃ

যেমন কেউ কোন মহল্লার কোন মাস্তানের উৎপাতে বিপদগ্রস্ত। এমতাবস্থায় ঐ এলাকায় মাস্তানদের সকল তৎপরতা অর্থাৎ অন্যায়-অপকর্ম বন্ধের জন্যে থানায় গিয়ে তাদের পরিচয় ব্যক্ত করা জায়েয, এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই।

৫। মাযলুম ব্যক্তির জন্য গীবত করা জায়েযঃ

এটা কুরআন মাজীদের আয়াত দ্বারা প্রমাণিত। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

“ কারো ব্যাপারে কোন খারাপ কথা প্রকাশ করা মহান আল্লাহ পছন্দ করেন না, তবে যে নির্যাতিত তাঁর কথা ভিন্ন। আর আল্লাহ তা‘আলা সব কিছুই শুনেন ও সব কিছুই জানেন ”(আন-নিসা,১৪৮)

যদি কেউ কারো উপর জুলুম করে, তাহলে মাজলুম ব্যক্তি জালেমের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট তার জুলুমের প্রতিকার পাবার জন্য দোষ বর্ণনা করা যায়েজ আছে।

৬। কোন মানুষের কল্যাণ কামনার উদ্দেশ্যে অন্য কোন চরিত্রহীন ও দুষ্ট লোকের অনিষ্ট বা ক্ষতি থেকে সতর্ক করার উদ্দেশ্যে

তাদের দোষ-গুণ মানুষের সামনে বলা জায়েয আছে। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

“ইসলাম ধর্ম উপদেশের উপর ভিত্তিশীল।(হাদীস বর্ণনাকারী তামীমুদ্দারী বলেন) আমরা বললাম, কাদের জন্য (এই উপদেশ)? উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন, আল্লাহর জন্য, তাঁর কিতাবের জন্য, তাঁর রাসূলের জন্য, মুসলমানদের ইমামের জন্য আর তাদের সাধারণ লোকদের জন্য”(সহীহ মুসলিম হা/ ১২) ।

একবার একজন লোক রাসুলুল্লাহ সা. এর সাথে সাক্ষাতের অনুমতি চাইল।রাসুলুল্লাহ সা. বললেন, তাকে আসতে দাও, লোকটা তার গোত্রের খুবই
খারাপ মানুষ। এরপর লোকটা যখন বসল, তখন রাসুলুল্লাহ সা. তার সাথেবেশ হাসি-খুশি অবস্থায় মিলিত হলেন এবং প্রসন্নভাবে কথা-বার্তা
বললেন। এরপর লোকটা চলে গেলে, হযরত আয়েশা রা. বললেন- ইয়ারাসুলুল্লাহ আপনি তো এ লোকটার সম্পর্কে এমন উক্তি করলেন,
আবার তার সাথে প্রসন্নবদনে কথা বললেন, ভাল ব্যবহার করলেন! তখনরাসুলুল্লাহ সা. বললেন, তুমি কি কখনো আমাকে রুঢ়ভাষী ও
দূর্ব্যবহারকারী হিসেবে পেয়েছ? নিশ্চয়ই কিয়ামতের দিন আল্লাহরনিকট ওই ব্যক্তি সব থেকে নিকৃষ্ট মর্যাদার হবে, যাকে মানুষ তার
অনিষ্টের ভয়ে বর্জন করে।” [বুখারি-মুসলিম]

আলোচ্য হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, রাসুলুল্লাহ সা. সাক্ষাৎপ্রার্থী লোকটির দোষ বর্ণনা করেছেন, তার অনিষ্ট থেকে মানুষকে সতর্ক ও রক্ষা করার জন্যে।

৭। দুপক্ষের মিমাংসা করার জন্য

গীবতের পরিণতিঃ

·        যার গীবত করা হয় তার জন্য লাভ—- যে গীবত করে তার জন্য ক্ষতি

গীবতের পরিণতি প্রসঙ্গে হাদীসে কুদসীতে এসেছে :  নিশ্চয়ই কিয়ামতের দিন বান্দাকে তার আমলনামা খোলা অবস্থায় দেয়া হবে। সে তাতে এমন কতগুলো নেকী দেখবে যা সে আমল করেনি। সে বলবে : হে প্রভু! আমি এই নেকীগুলো অর্জন করিনি। তিনি বলবেন : লোকেরা তোমার নিন্দা করেছিল, তারই বদলে আমি এগুলো লিপিবদ্ধ করেছি। অপর এক বান্দার সামনে কিয়ামতের দিন তার আমলনামা খুলে দেয়া হবে। সে বলবে : হে প্রভু! আমি কি অমুক দিন অমুক পুণ্য করিনি? তখন তাকে বলা হবে, তুমি লোকদের নিন্দা করতে। ফলে সেসব পুণ্য তোমার আমলনামা হতে মুছে ফেলা হয়েছে।

·        গীবত থেকে বাঁচার জন্য আজ শুধু এতটুকু জেনে নিই- গীবত ও পরনিন্দার শাস্তি কত কঠিন। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

মে‘রাজের সময় আমি কিছু লোকের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলাম, যাদের ছিল তামার নখ। সেই নখ দিয়ে তারা নিজেদের চেহারা এবং বুক ক্ষত-বিক্ষত করছিল। আমি বললাম, জিবরীল! এরা কারা? উত্তরে তিনি বললেন, যারা (দুনিয়াতে) মানুষের গোশত খেত (গীবত করত) এবং মানুষের সম্মান হানি করত। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৮৭৮; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৩৩৪০

·        আল্লাহ তাআলা কুরআনে এ স্বভাবের নিন্দা করে বলেন,

وَیْلٌ لِّكُلِّ هُمَزَةٍ لُّمَزَةِ.

দুর্ভোগ প্রত্যেক ঐ ব্যক্তির, যে পেছনে ও সামনে মানুষের নিন্দা করে। -সূরা হুমাযাহ, (১০৪) : ১

হে ঈমানদাগণ, বেশী ধারণা ও অনুমান করা থেকে বিরত থাকো কারণ কোন কোন ধারণা ও অনুমান গোনাহ৷ দোষ অন্বেষন করো না৷ আর তোমাদের কেউ যেন কারো গীবত না করে৷ এমন কেউ কি তোমাদের মধ্যে আছে, যে তার নিজের মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়া পছন্দ করবে ? দেখো, তা খেতে তোমাদের ঘৃণা হয়৷ আল্লাহকে ভয় করো৷ আল্লাহ অধিক পরিমাণে তাওবা কবুলকারী এবং দয়ালু৷ সূরা হুজরাতঃ১২

·        আর পরনিন্দাকারীর পরিণাম বড় ভয়াবহ।

নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ نَمَّامٌ. পরনিন্দাকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১০৫; শুআবুল ঈমান, বায়হাকী, হাদীস ১০৫৯০

·        আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি রাসূলুল্লাহ (সা) কে বললাম: “আপনি সাফিয়্যা থেকে এই এই বেশী” ৷ [কোন কোন বর্ণনাকারী বলেছেন এটা বোঝাচ্ছে যে, তিনি ক্ষুদ্রাকৃতির ছিলেন], তো তিনি (সা.) বললেন: “তুমি এমন একটি কথা উচচারণ করলে, সেটিকে যদি সমুদ্রের পানির সাথে মিশ্রিত করা হত, তবে তা সে পানিকেও বিবর্ণ করে দিত ৷” (সহীহ আবু দাউদ, আত-তিরমিযী এবং আহমদ

আত-তিরমিযী এ হাদীসকে হাসান সহীহ বলে উল্লেখ করেছেন ৷ আমি(নববী) বলি যে, ‘বিবর্ণ’ (মাঝাজা) শব্দটির অর্থ হচেছ যে, “তা পানির সাথে এমনভাবে মিশ্রিত হত যে, তা পানির স্বাদ এবং গন্ধকে পরিবর্তন করে ফেলতো – এর দুর্গন্ধ ও বীভৎসতার কারণে ৷ এ হাদীসটি গীবত হারাম হওয়ার ব্যাপারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণগুলোর অন্যতম, যদি না এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয় ৷

·        সূদের (পাপের) ৭২টি দরজা বা স্তর রয়েছে। তন্মধ্যে নিম্নতম স্তর হচ্ছে স্বীয় মায়ের সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া তুল্য পাপ এবং ঊর্ধ্বতম স্তর হল কোন ব্যক্তি কর্তৃক তার এক ভাইয়ের মান-সম্ভ্রমের হানি ঘটান তুল্য পাপ। তাবারাণী; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৮৭১।

গীবত থেকে বাঁচার পরামর্শঃ

·        ব্যক্তি আলাপ আলোচনাতে অন্য কারো সম্পর্কে আলাপ না করে নিজের সম্পর্কে বা কোন কল্যানমূলক কাজের আলাপ বা কুর’আন হাদীসের শিক্ষা নিয়ে আলাপ করার মাঝে সীমাবদ্ধ থাকলে গীবত থেকে নিজেকে রক্ষা করা সহজ হবে ইন শা আল্লাহ।)

·        যত কম কথা বলা হবে ততই গীবত করা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। তাছাড়া চুপ থাকাটা একটা ইবাদতও বটে।

হযরত আনাস রা. রাসুলুল্লাহ সা. থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন,একবার রাসুলুল্লাহ সা. বললেন, “হে আবু যর, আমি কি তোমাকে এমনদুটি গুণের কথা বলব না? যা বহন করতে অত্যন্ত হালকা, কিন্তু মিজানের পাল্লায় খুবই ভারী? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন রাসুলুল্লাহ সা. বললেন,দীর্ঘ সময় ধরে চুপ থাকা এবং উত্তম ব্যবহার। সে মহান সত্ত্বার নামেশপথ করে বলছি, যার হাতে আমার জীবন, কোন মাখলুক এদুটির চেয়েকোন ভাল কাজ আর করতে পারেনা। [ইতহাফুল খাইরা : ৪৬৭৭, মেশকাত]                                                                                                                                                                                               ‘যে ব্যক্তি আমার জন্য তার জিহ্বা ও লজ্জাস্থানের জিম্মাদার হবে, আমি তার জন্য জান্নাতের জিম্মাদার হবো।’ (বুখারি)

  •    গীবতের পরিনতি সম্পর্কে জ্ঞান রাখা, তাহলে আখেরাতের ভয়াবহতা ও দুনিয়ায় লাঞ্চিত হওয়ার ভয়ে নিজেকে গীবত থেকে সংযত রাখবে।
  •     সবসময় নিজের দোষ  কথা চিন্তা করা : কারণ নিজের ত্রটির কথা স্মরণ থাকলে, অন্যের চেয়ে নিজেকেই ছোট মনে হবে এবংঅন্যের সমালোচনা করার কথা মাথায় আসবেনা
  • নবী রাসূলদের জীবনী পড়াঃ দুনিয়ার জীবনের লোভ লালসা, হিংসা রাগ থেকে নিজেকে পরিশুদ্ধি করার আগ্রহ আসবে ইন শা আল্লাহ। আর এইগুলো থেকে নিবৃত্ত থাকলে গীবত থেকেও দূরে থাকা যাবে।
  • আখেরাতের জীবন ও দুনিয়ার জীবন তুলনামূলক জ্ঞান থাকাঃ এর ফলে আখেরাতের জীবনের প্রাধান্য আসবে ও গুনাহ থেকে সচেতন থাকা হবে।
  • বেশী বেশী রবের কাছেই দু’আ করা যেনো এই গুনাহ থেকে হেফাজত করার ঈমানিয়াত শক্তি, হিকমাত , সাহায্য করেন।

গীবত করে ফেলার পর তা থেকে পরিত্রান লাভের উপায়ঃ

অবশ্যই আল্লাহ তাদের তওবা কবুল করবেন, যারা ভুলবশতঃ মন্দ কাজ করে, অতঃপর অনতিবিলম্বে তওবা করে; এরাই হল সেসব লোক যাদের তওবা আল্লাহ কবুল করেন। আল্লাহ মহাজ্ঞানী, রহস্যবিদ।” সূরা নিসা: ১৭

“কিন্তু যারা তাওবা করেছে, নিজেদের সংশোধন করেছে এবং বর্ণনা করেছে তারা হলো সেই লোক যাদের তাওবা আমি কবুল করবো এবং আমিই একমাত্র তাওবা কবুলকারী, দয়ালু।” সূরা আল বাকারা: ১৬০

তওবা শব্দের আভিধানিক অর্থ – ফিরে আসা। ইস্তেগফার অর্থ ক্ষমা প্রার্থনা করা।

পরিভাষায় তওবা হল : যে সকল কথা ও কাজ মানুষকে আল্লাহর নৈকট্য থেকে দূরে সরিয়ে দেয় তা থেকে ফিরে এসে ঐ সকল কথা ও কাজে লেগে যাওয়া, যা দিয়ে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায় ও তাঁর অসন্তুষ্টি থেকে বেঁচে থাকা যায়।
এক কথায় পাপ-কর্ম থেকে ফিরে এসে সৎকাজে প্রবৃত্ত হওয়া।

তওবাতুন নাসূহ বা পরিশুদ্ধ তওবা প্রতিটি গোনাহগারের উপর ফরয। সকল গোনাহের জন্যও তওবা জরুরী -যেগুলো করতে আল্লাহ নিষেধ করেন, যেগুলো পরিহার ছাড়া আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যাবে না।

যে সকল পাপ বা অপরাধ মানুষের অধিকার সম্পর্কিত। যে পাপ করলে কোন না কোন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যেমন, জুলুম-অত্যাচার, চুরি-ডাকাতি, ঘুষ খাওয়া, অন্যায়ভাবে সম্পদ আত্নসাৎ , সম্মানহানী (গীবত,অপমান)   ইত্যাদি।

পাপ থেকে তাওবা করার শর্ত হল মোট ছয়টি:
১। ইখলাস (অকপটতা),
২। পাপ কাজটি পরিহার করা।
৩। কৃত পাপটিতে লিপ্ত হওয়ার কারণে আন্তরিকভাবে অনুতপ্ত হওয়া।
৪। ভবিষ্যতে আর এ পাপ করব না বলে দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করা।
৫। পাপের কারণে যে মানুষটির অধিকার ক্ষুন্ন করা হয়েছে বা যে লোকটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তার পাওনা পরিশোধ করা বা যথাযথ ক্ষতিপুরণ দিয়ে তার সাথে মিটমাট করে নেয়া অথবা তার কাছে ক্ষমা চেয়ে দাবী ছাড়িয়ে নেয়া।
৬। তওবা কবুল হওয়ার সময়সীমার মধ্যে তওবা করা।                           শাইখ উছাইমীনের “লিকাউল বাব আল-মাফতুহ” ৫৩/৭৩

সুতরাং, যে ব্যক্তি গীবত করে, তার জন্য উপরোক্ত ৬টি শর্ত পূরণ করে তওবা করা অবশ্য কর্তব্য ৷ কেননা গীবত অন্যের অধিকারকে সন্বন্ধযুক্ত করে ৷ তাই ঐ ব্যক্তির উচিত যার সম্পর্কে গীবত করা হয়েছে, তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা ৷

শাফি’ঈ আলেমগণের দু’টি মত রয়েছে:

প্রথম মতে, ঐ ব্যক্তি গীবত করার সময়ে কি বলেছিলেন তা জানানো একটি শর্ত ৷ কেননা, এ ক্ষেত্রে তিনি ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে কি বলেছিলেন তা না জানিয়ে যদি দোষ থেকে মুক্ত হতে চান, তবে তার ক্ষমা প্রার্থনা বৈধ হবে না, ঠিক যেমন করে কোন লোকের টাকা আত্মসাৎ করলে, তা থেকে নিজেকে মুক্ত করতে হয় ৷

দ্বিতীয় মতানুসারে, ঐ ব্যক্তিকে জানানো জরুরী নয় যে, গীবতকারী কি বলেছিল, কেননা এটি এমন একটি বিষয় যে সে তা সহ্য করতে পারবে না এবং ক্ষমাও করতে পারবেনা ৷ সুতরাং, তার জানাটা (সে কি বলেছিল) এক্ষেত্রে শর্ত নয়, যেটা টাকা আত্মসাৎ এর উদাহরণের বিপরীত ৷

প্রথম মতটিই জোরালো, যেহেতু লোকদের কোন কোন গীবত ক্ষমা করার ব্যাপারে যোগ্যতা রয়েছে কিন্তু অন্য ব্যাপারে নেই ৷

এবং যে ব্যক্তির ব্যাপারে গীবত করা হয়েছে, সে যদি মৃত বা অনুপস্থিত থাকে – তবে আলেমগণ বলেন : দোষী ব্যক্তিটি সে লোকটির জন্য বেশী বেশী দোয়া করবে এবং অনেক বেশী নেক আমল করবে ৷

যার সম্পর্কে গীবত করা হয়েছে, সে ব্যক্তির জন্য গীবতকারীকে পাপ থেকে মুক্ত করা পছন্দনীয় – কিন্তু তিনি সেটা করতে বাধ্য নন ৷ যেহেতু, এটা হচেছ একজন ব্যক্তির অধিকার লংঘনের ক্ষতিপূরণ, তাই সেটা হচ্ছে তার ইচ্ছাধীন ৷ যাহোক, এটি খুব দৃঢ়ভাবে সুপারিশকৃত  যে, তিনি যেন গীবতকারীকে দোষমুক্ত করেন যাতে করে, তার মুসলিম ভাইটি সে গুনাহের ক্ষতি থেকে বাঁচতে পারেন এবং যাতে তিনি আল্লাহ তা’আলার ক্ষমা ও ভালবাসা অর্জন করে সফলকাম হন ৷ মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন :

“এবং যারা ক্রোধ-দমনকারী এবং মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল, আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদের ভালবাসেন ৷” (সূরা আলে-ইমরান, ৩:১৩৪)

দোষী ব্যক্তিকে ক্ষমা করার জন্য তিনি যে পন্থা অবলম্বন করতে পারেন, তা হচ্ছে এই যে, তিনি নিজেকে মনে করিয়ে দিতে পারেন: “এ বিষয়টি ইতোমধ্যে ঘটে গেছে, এটা দূর করার কোন উপায় নেই ৷ সুতরাং, তার পুরস্কার পাওয়ার সুযোগকে ব্যাহত করাটা এবং তাকে পাপ থেকে মুক্ত না করাটা আমার জন্য ঠিক নয় ৷ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন :অবশ্য যে ধৈর্য ধারণ করে এবং ক্ষমা করে দেয়, সেটা তো হবে দৃঢ় সংকল্পের কাজ ৷” (সূরা শূরা ৪২:৪৩)

আল্লাহর রাসূল সা. বলেন:
“গোনাহ থেকে তওবাকারীর কোন গোনাহই থাকে না।” ইবন মাজাহ

 

 

তাওবা ও ইস্তিগফার