দয়াময় মেহেরবান আল্লাহর নামে।
মহান আল্লাহ আমাদের জন্য ইবাদাতের মাঝেও বৈচিত্রতা দিয়ে রেখেছেন। সারা বছরের বিভিন্ন দিন, মাসের প্রাধান্য তার একটি নমুনা। কতগুলি মৌ্লিক কাজ সহ প্রতিটি হারাম মাসের একটি বিশেষ দিক নির্দেশনা রয়েছে আলহামদুলিল্লাহ। তাই এই মাসগুলো সম্পর্কে আমাদের জানার মাধ্যমেই আমলগুলো বা করনীয় সমূহ বুঝা যাবে ও অনুভূতি সহকারে ভূমিকা রাখা যাবে যা মহান রবের কাছে গ্রহনীয় হওয়াতে সহায়ক ইন শা আল্লাহ।
মহান আল্লাহ নিজ সত্ত্বায় প্রশংসিত। তিনি অতিশয় সুক্ষদর্শী, সর্ব জ্ঞানী, সুবিজ্ঞ, সর্ব ক্ষমতার অধিকারী, সুতরাং তিনি যা করেন তার পেছনে এই সবগুলো গুণ কাজ করে। মহান আল্লাহ কতগুলো দিনকে অন্য দিনের উপর যেমন প্রাধান্য দিয়েছেন, তেমনি কিছু মাসকেও অন্যান্য মাসের তুলনায় প্রাধান্য দিয়েছেন।
আল্লাহ তা’লা বলেন:
إِنَّ عِدَّةَ الشُّهُورِ عِنْدَ اللَّهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا فِي كِتَابِ اللَّهِ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ فَلَا تَظْلِمُوا فِيهِنَّ أَنْفُسَكُمْ
আসমানসমূহ ও পৃথিবীর সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহ তা’লার বিধানে মাসের সংখ্যা লেখা ছিল বারোটি, এই (বারোটির) মধ্যে চারটি হচ্ছে (যুদ্ধ-বিগ্রহের জন্যে) নিষিদ্ধ মাস। এটা (আল্লাহর প্রণীত) নির্ভুল ব্যবস্থা। অতএব এই সময়ের ভিতরে তোমরা নিজেদের উপর যুলুম করো না। সুরা আত তওবা: ৩৬
এই মাসগুলোর হিসেব করা হয় চাঁদের গতিকে হিসেব করে।
মহান আল্লাহ এভাবেই আমাদের জানিয়েছেন:
﴿هُوَ الَّذِي جَعَلَ الشَّمْسَ ضِيَاءً وَالْقَمَرَ نُورًا وَقَدَّرَهُ مَنَازِلَ لِتَعْلَمُوا عَدَدَ السِّنِينَ وَالْحِسَابَ
তিনি সূর্য্য (প্রখর) তেজোদ্যীপ্ত, চাঁদকে জ্যোতির্ময় করেছেন এবং তাদের কক্ষপথও নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন, যেন তোমরা বছর ও তারিখ গননা করতে পারো। সূরা ইউনুস: ৫
হাদীস থেকে আমরা পবিত্র বা হারাম মাসের নামগুলো জানতে পারি।
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
নিশ্চয়ই আবর্তনের পথ ধরে মহাকাল আজ তার সেই প্রারম্ভিক বিন্দুতে প্রত্যাবর্তন করেছে, যেখানে সে আল্লাহ কর্তৃক আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টির দিনে ছিল। আল্লাহর কাছে মাস সুনিশ্চিতভাবেই বারোটাই। যখন আল্লাহ আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন তখন থেকেই তাঁর অদৃষ্ট লিপিতে মাসের সংখ্যা এভাবেই লেখা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে চারটি মাস নিষিদ্ধ। তিনটি মাস ধারাবাহিক – জিলকদ, জিলহজ্জ ও মুহাররম। আর একটির অবস্থান একাকী অর্থাৎ রজব মাস, যা জমাদিউস সানী ও শা’বানের মাঝখানে অবস্থিত। সহীহ আল বুখারী: ১৭৪১
পবিত্র মাসগুলো হলো — রজব, জিলকদ, জিলহজ্জ এবং মুহাররম।
এই মাসগুলোকে পবিত্র বলা হয় এই কারণে যে —
এই মাসগুলোতে যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষেধ, তবে শত্রুপক্ষ আগে আঘাত করলে সেক্ষেত্রে প্রতিরক্ষার জন্য প্রতিরোধ করতে পারবে।
যে কোন সময় গুনাহের কাজ করা স্বাভাবিক ভাবে হারাম ও নিষিদ্ধ, কিন্তু এই মাসগুলোতে অন্য সময়ের তুলনায় আরো জোড়ালোভাবে নিষেধ করা হয়েছে।
মহান আল্লাহ আরো বলেছেন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُحِلُّوا شَعَائِرَ اللَّهِ وَلَا الشَّهْرَ الْحَرَامَ .
হে ঈমানদার বান্দারা, তোমরা আল্লাহ তা’লার নিদর্শনসমূহের অসম্মান করো না, সম্মানিত মাসগুলোকেও না। সূরা আল মায়েদা: ২
সুতরাং, এই পবিত্র মাসগুলোতে যেন আমরা গুনাহের কাজে না জড়িয়ে পড়ি তার প্রতি বিশেষ নজর রাখতে হবে যদিও সবসময়েও গুনাহ থেকে দূরে থাকতে হবে। নেতিবাচক কাজ যা নিজের উপর যুলুম হয় তা থেকেও দূরে থাকার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। মহান আল্লাহ তা’লা আমাদের বুঝার ও আমল করার তৌফিক দান করুন।