সন্তানের ক্যারীয়ার গঠনে ভূমিকা। সন্তান গঠনে মায়ের ভূমিকা-২৯

সন্তানদের উপযুক্ত শিক্ষা ও প্রশিক্ষনের মাধ্যমে এমনভাবে সক্ষম করে গড়ে তোলা, তারা যেন উপার্জন করার মত যোগ্যতা অর্জন করতে পারে। সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে এভাবে বলেছেন,

তোমাদের সন্তান সন্ততিদেরকে সক্ষম ও সাবলম্বি রেখে যাওয়া, তাদেরকে অভাবী ও মানুষের কাছে হাত পাতা অবস্থায় রেখে যাওয়ার চেয়ে উত্তম। [সহীহ বুখারী:১২৯৫]

তবে এই কাজটি নিয়ত সহিহ রেখে এবং মহান আল্লাহর স্মরন থেকে শরীয়তের সীমালংঘন না করে করা হলে ইন শা আল্লাহ ইবাদাত হিসেবে মহান আল্লাহ গ্রহন করবেন।

আর এই ক্যরীয়ার গঠনের পিছনে ছুটতে যেয়ে আবার অনেকে ভারসাম্যহীন হয়ে যায়, ফলে দেখা যায় অনেক সন্তান মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এর পিছনে বড় এক কারন পিতা মাতার অতিরিক্ত অভিলাস পূরনে সন্তানকে মানসিক চাপে রাখা। সামাজিক প্রেক্ষাপট প্রতিযোগীতামূলক হয়ে যাওয়ায় এর সাথে খাপ খেতে না পারাটা আরেকটি কারন।

এইক্ষেত্রে পরিবার থেকেই সহজ সুন্দর পরামর্শ ও সহযোগীতা প্রয়োজন। পরিবারের সহযোগীতা পেলে সামাজিক পরিবেশগত সমস্যাকে সন্তানেরা ওভারকাম করে নিতে পারে।

ক্যারীয়ার গঠনের মূল অবস্থা শুরু হয় স্কুল কলেজের পড়াশুনার মাধ্যমে। আর তাই এই ক্ষেত্রগুলোতে পরীক্ষার ফলাফল ভালো করার জন্য প্রতিযোগীতা শুরু হয়ে যায়। একদিকে এটা ভালো তবে যখন অতিরিক্ত চাপ সমভাবে সব সন্তানের উপর পরিবার ও শিক্ষাংগন থেকে আসে তখনই সমস্যা দেখা দেয়। তাই পরিকল্পিতভাবে সন্তানের যোগ্যতা সামর্থের দিকে নজর রেখেই পরিশ্রম করার তাগিদ দিতে হবে। সব সন্তান একরকম অবস্থায় আসতে পারে না, এটাই প্রকৃতিগত ব্যাপার। মহান আল্লাহ একেকজনকে একেকরকম যোগ্যতা দিয়ে পাঠিয়েছেন যেন সমাজ ব্যবস্থা টিকে থাকে পারস্পরিক সহযোগীতা ও সুন্দর সম্পর্কের মাধ্যমে, এটা জানা ও বুঝা প্রয়োজন।

বছরের বিভিন্ন সময়ে ঘরে ঘরে সন্তান সন্ততিদের বিভিন্ন স্তরে পরীক্ষার পর্ব চলে। স্কুল কলেজ, ভার্সিটি, মাদ্রাসা, বিভিন্ন জায়গায়  পরীক্ষা। এই পরীক্ষা যেন আজ সমাজে মা-বাবাদেরও পরীক্ষার একটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায় প্রতিটি পরিবারে যেন আজ একই চিন্তা যেন আদরের সন্তানটি পরীক্ষায় ভালো ফল লাভ করে। সুবহানা আল্লাহ। অনেক বাবা মায়েরা নফল ইবাদাত করে থাকেন যেন মহান আল্লাহর সাহায্য পেয়ে সেই কাজটিতে উত্তীর্ণ হতে পারে। আলহামদুলিল্লাহ।

তাই যা লক্ষ্যনীয় সন্তানদের জন্য

কুর’আনের ও হাদীসের জ্ঞান অল্প হলেও প্রতিদিনের রুটিনে রাখা

  • ফরয সালাত যেনো কোনভাবেই বাদ না যায়।
  • অস্থির হয়ে আচরন খারাপ যেন না হয়।
  • অতিরিক্ত রাত জেগে শরীরের হক যেন নষ্ট না হয়।
  • মিথ্যা বা দুর্নীতিপরায়ন সম্পন্ন কোন কাজের চিন্তা যেনো না আসে।
  • মহান আল্লাহর উপর ভরসা করে তাঁর সাহায্য চাইতে থাকতে হবে।
  • সব সময় মহান রবের নামে পড়া শুরু করবে।
  • কোন বন্ধু পরীক্ষার হলে সাহায্য করবে এই ধরনের অশুভ চিন্তা সরিয়ে নিজের যোগ্যতাকে কাজে লাগানোর প্রস্তুতি নিতে হবে।
  • সমাজের অন্যদের কারচুপি করা দেখেও নিজেকে সত্যের পথে রাখতে হবে।
  • মনে রাখা প্রয়োজন মহান আল্লাহ তাকদীরে যা রেখেছেন তা অতিক্রম করা যাবে না।
  • নিজের প্রচেষ্টার পুরুটাই কাজে লাগিয়ে আল্লাহর উপর ভরসা করতে হবে, এরপর যা ফলাফল আসে তা ই তাকদীর, সেটা আলহামদুলিল্লাহ বলে মেনে নেয়ার মানসিকতা রাখতে হবে। এখানেই কল্যান রয়েছে।
  • জীবনের এই পরীক্ষাই সব নয়, তাই অস্থির বা হতাশ হওয়ার কোন কারন নেই।
  • মহান আল্লাহর উপর যে ভরসা করে প্রচেষ্টা চালায়, আল্লাহ তার রিযিক(এখানে পরীক্ষায় ফল লাভ) বাড়িয়ে দেন। কাজটি সহজ করে দেন।
  • মনে রাখতে হবে রিযিক ও সম্মানের মালিক আল্লাহ, তিনি যাকে ইচ্ছা বাড়িয়ে দেন বা কমিয়ে দেন, তাই মহান আল্লাহর দিকে একান্তভাবে নির্ভর করে সত্য পথ ধরে পরিশ্রম করে যেতে হবে।

অভিভাবকদের জন্য—

  • মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাকে ভালোবাসেন বেশী, সেই তুলনায় মা বাবা সন্তানকে কতটুকু ভালোবাসেন তা আমরা হাদীস থেকে জানি। মহান আল্লাহ মাত্র একভাগ ভালোবাসা পুরু সৃষ্টির মাঝে দিয়েছেন। তাই মহান আল্লাহ আমাদের সন্তানদেরও সেইভাবে কল্যান দিবেন।

দুনিয়ার এই অস্থায়ী জীবনের ফলাফলের চেয়ে আখেরাতের স্থায়ী জীবনের ফলাফল এর প্রয়োজনীয়তা সব সময় মাথায় রাখা প্রয়োজন এবং তা সন্তানদের মাঝেও বিস্তার করাতে হবে।

তাই অন্যায় কোন পদ্ধতি যেনো অনুসরন না করে এখনি নৈ্তিকতার ও সত্যের প্রতিক হওয়ার শিক্ষা দিতে হবে। এই একটি পরীক্ষা নয়, দুনিয়ার জীবনে অসংখ্য পরীক্ষা দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে আপনার সন্তানকে।

  • ভবিষ্যত আমরা দেখিনা বা বলতে পারিনা, মহান আল্লাহ সব দেখেন ও জানেন, তাই প্রচেষ্টার পর যা ভাগ্যে আসে তা কল্যান বলে আস্থা রাখতে হবে এবং মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে হবে। সন্তানকেও বুঝতে দিতে হবে আল্লাহর উপর কিভাবে খুশি থাকতে হয়।
  • রাগের বশবর্তী হয়ে কখনো সন্তানকে বকা ঝকার পাশাপাশি অভিশাপ দিয়ে নিজে গুনাহগার ও সন্তানের জীবনে অকল্যান নিয়ে আসার সুযোগ করে দিবেন না। মানুষের বিশেষ করে পিতা মাতার দুআ যেকোন সময় কবুল হয়ে যেতে পারে, তাই সময় থাকতেই সতর্ক থাকা প্রয়োজন। এই অভিশাপ দেয়ার অভ্যাস কখনো মুমিনের চরিত্রে থাকতে পারে না।
  • সন্তানকে আদর ও যত্ন দিয়ে কাছে টেনে বুঝিয়ে বলুন। তার শারিরীক ও মানসিক সুস্থ্যতার গুরুত্ব তুলে ধরুন। বুঝতে দিন আপনি তাকে কত ভালোবাসেন এবং জান্নাতেও একসাথে থাকতে চান, তাই এতো দিক নির্দেশনা দেয়া।
  • এই ধরনের অবস্থা দিয়েই সন্তানকে সবর ও আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করা শেখানো যায়।
  • তাই পিতা মাতাকে আগে সবর ও তাওয়াক্কুলের আচরন দেখাতে হবে এবং তা সন্তানকে বুঝতে দিতে হবে।
  • প্রতিটি অভিভাবকের কর্তব্য পরীক্ষার ফলাফলের জন্য বকা ঝকা না করে, বুঝানো ও পরিশ্রম করার জন্য উত্সাহিত করা। এইভাবে বলা যে, তুমি আল্লাহর নামে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাও তারপর যা ফলাফল আসবে সেটাতেই আমরা খুশি আলহামদুলিল্লাহ। তবে সন্তান যেন ঠিকভাবে পরিশ্রম করে সেদিকে তদারকি করা অভিভাবকদের কর্তব্য।
  • মহান আল্লাহর দরবারে বেশি করে দুআ করুন সন্তানের স্বার্থক জীবনের জন্য।

কর্মজীবনে প্রবেশের ক্ষেত্রেও হালাল হারামের বিধান ও মহান রবের আনুগত্যের মাঝে থাকা যাবে কি যাবে না এই বিষয়টি সামনে আনার পরামর্শ দিতে হবে সন্তানকে। টাকা উপার্জনই জীবনের প্রতিষ্ঠা নয়, টাকার প্রয়োজন আছে তবে আখেরাতের জীবনের মুক্তি নিশ্চয়তা ঠিক রেখেই টাকা উপার্জনে ভূমিকা রাখতে হবে।

অভিভাবকদের সচেতন ও আদর্শ মুসলিম হিসেবে ভূমিকা রাখার মাধ্যমে ও সন্তানকে কুরআনের আলোকে গঠনের প্রচেষ্টার মাধ্যমেই একমাত্র এই সমাজ থেকে অন্যায় ও দূর্নিতি দূর করা সহজ হতে পারে। আল্লাহ আমাদের বুঝার তাওফিক দিন।

আল্লাহ আমাদের সকল সন্তানদের সত্যের পথে থেকে আদর্শ মুসলিম হিসেব কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন জায়গায় স্বার্থক করে দিন,  রিযিক ও সম্মান বাড়িয়ে দিন দুনিয়া ও আখেরাতে।

https://youtu.be/6ZXOMUuv97M

https://youtu.be/QnA6YhETFZ4

আল্লাহ আমাদের ঈমানের বলে বলীয়ান হয়ে পরিবার গঠনের জন্য পরিশ্রমী হওয়ার ও কামীয়াব হওয়ার সুযোগ করে দিন।