কলেমা সম্পর্কে যা জানা প্রয়োজন

 

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন : আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই এবং আমি আল্লাহ্‌র রাসূল। যে কোন বান্দা সন্দেহাতীতভাবে এই বাক্য দু’টির ওপর ঈমান আনবে, সে আল্লাহ্‌র সাথে এমন অবস্থায় সাক্ষাৎ করবে যে, সে জান্নাত থেকে বঞ্চিত হবে না।

 হাদীস সহীহ : সহীহ মুসলিম হা/১৪৮- তাহক্বীক্ব শু’আইব আরনাউত্ব ও অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ : হাদীস সহীহ : তাহক্বীক্ব শায়খ আহমাদ শাকির : এর সানাদ সহীহ।

সুফিয়ান ইবনু ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

একদা আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে ইসলামের এমন একটি কথা বলে দিন যা আপনার পরে বা আপনি ছাড়া অন্য কাউকে আমি জিজ্ঞেস করবো না। তিনি (সাঃ) বললেন : তুমি বলো : আমি আল্লাহর প্রতি ঈমান আনলাম। অতঃপর এরই উপর প্রতিষ্ঠিত থাকো।” (সহীহ মুসলিম হা/১৬৮)

‘উবাদাহ ইবনু সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন: যে ব্যক্তি এ সাক্ষ্য দেয় যে, “আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই এবং মুহাম্মাদ (সাঃ) আল্লাহর রাসূল” আল্লাহ্ তার উপর জাহান্নামের আগুন হারাম করে দেন। হাদীস সহীহ্ : সহীহ্ মুসলিম হা/১৫১শির্‌ক

আবূ ‘আমরাহ আল-আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন : আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি আল্লাহর রাসূল। আর আমি আল্লাহর নিকট সাক্ষ্য দিচ্ছি- যে কোন বান্দা এ (কালেমা) দু’টির প্রতি ঈমান রেখে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে, এ দুটো অবশ্যই তার জন্য ক্বিয়ামাতের দিন জাহান্নামের আগুন থেকে আড়াল হবে। সহীহ লিগাইরিহি : ইবনু হিব্বান হা/২২১- হাদীসের শব্দাবলী তার- তাহক্বীক্ব আলবানী : সহীহ লিগাইরিহি।

‘আমার ইবনু ‘আবাসাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা অত্যন্ত বৃদ্ধ একটি লোক তার লাঠির উপর ভর করে নাবী (সাঃ)-এর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! (কাফির অবস্থায়) আমি বহু ওয়াদা ভঙ্গ করেছি এবং অসংখ্য পাপ কাজ করেছি, সুতরাং আমার ক্ষমার ব্যবস্থা আছে কি? তিনি (সাঃ) জবাবে বললেন : তুমি কি এ সাক্ষ্য দাও না যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই? লোকটি বললো, হ্যাঁ, আর আমি এ সাক্ষ্যও দেই যে, আপনি আল্লাহর রাসূল। নাবী (সাঃ) বললেন : তাহলে তো তোমার সমস্ত ওয়াদা ভঙ্গ ও গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে।

আহমাদ হা/১৯৪৩২, তাহক্বীক্ব শু’আইব : হাদীসটি সহীহ এর শাওয়াহিদ দ্বারা। এছাড়া আরো বহু শাহেদ বর্ণনা রয়েছে)

কলেমার প্রচলিত প্রসারঃ

কুরআন কারীমে এরশাদ করা হয়েছে: “তুমি কি দেখ নি, কিভাবে আল্লাহ একটি উদাহরণ পেশ করেছেন: একটি ‘কালিমায়ে তাইয়েবা’ বা পবিত্র বাক্য একটি পবিত্র বৃক্ষের মত, তার মূল প্রতিষ্ঠিত এবং তার শাখা-প্রশাখা আকাশে প্রসারিত।”

(সূরা ইবরাহীম: ২৪)

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা) ও অন্যান্য মুফাস্সির থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, এখানে ‘কালিমা তাইয়েবা’ বলতে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ তাওহীদের এ বাক্যটিকে বুঝানো হয়েছে। (তাফসির ইবনে কাসির)

কিন্তু (লা ইলাহা ইল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ) দুইটি বাক্য একত্রিতভাবে কোনো হাদীসে কালিমা তাইয়েবা হিসাবে উল্লেখ করা হয়নি। আমরা দেখেছি যে, কালিমা শাহাদাতকে অনেক সময় “শাহাদাত” শব্দ উহ্য রেখে নিম্নরূপে

বলা হয়েছে:

ﻻ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻟَّﺎ ﺍﻟﻠﻪُ ﻭ ﺃَﻥِّ ﻣُﺤَﻤَّﺪًﺍ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ কিন্তু মাঝখানে ( ﻭَ ﺃَﻥَّ ) বাদ দিয়ে উভয় অংশ একত্রে             ﻻ ﺇﻟﻪ ﺇﻻ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﺤﻤّﺪٌ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪِ এভাবে ‘কালিমা’ হিসাবে প্রসার হয়েছে।

মূলত  ‘কালিমা’ বা বাক্যটি দুইটি বাক্যের সমন্বয়ে গঠিত।

প্রথম বাক্য:          ﺃَﺷْﻬَﺪُ ﺃَﻥْ ﻻ ﺇﻻ ﺍﻟﻠﻪ   “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ  ছাড়া কোনো মাবূদ (উপাস্য) নেই।”

এ প্রথম বাক্যটির ক্ষেত্রে কোনো কোনো হাদীসে বলা হয়েছে:

ﻻ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻻ ﺍﻟﻠﻪُ ﻭَﺣْﺪَﻩُ ﻻ ﺷَﺮِﻳْﻚَ ﻟَﻪُ

“আল্লাহ ছাড়া কোনো মা’বুদ নেই, তিনি একক, তাঁর কোনো শরীক নেই।”

দ্বিতীয় বাক্য:             ﻭ ﺃَﺷْﻬَﺪُ ﺃﻥَّ ﻣُﺤَﻤَّﺪًﺍ ﻋََﺒْﺪُﻩُ ﻭَﺭَﺳﻮﻟُﻪُ

“আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সা) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। আযানের মধ্যে এ বাক্যদ্বয়কে  পৃথকভাবে উল্লে খ করা হয়েছে।

দ্বিতীয় বাক্যটির ক্ষেত্রে কোনো কোনো হাদীসে (ﺃﺷﻬﺪ) অর্থাৎ ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি’ কথাটি পুনরাবৃত্তি  না করে শুধুমাত্র ( ﻭَ ﺃَﻥَّ ) ‘এবং নিশ্চয়’ বলা হয়েছে।

কোনো কোনো হাদীসে বাক্যদ্বয়ের শুরুতে ( ﺃﺷﻬﺪ) বলা হয়নি, বরং বলা হয়েছে:            ﻻ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻟَّﺎ ﺍﻟﻠﻪُ ﻭَ ﺃَﻥَّ ﻣُﺤَﻤَّﺪًﺍ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ

দ্বিতীয় বাক্যটির ক্ষেত্রে অনেক   হাদীসে ( ﺃَﻥَّ ﻣُﺤَﻤَّﺪًﺍ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ) ‘মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল’ কথাটির  পরিবর্তে ( ﺃَﻥَّ ﻣُﺤَﻤَّﺪًﺍ ﻋََﺒْﺪُﻩُ ﻭَ ﺭَﺳﻮﻟُﻪُ )  ‘মুহাম্মাদ আল্লাহর বান্দা ও রাসূল’ – বলা হয়েছে। এছাড়া কোনো

কোনো হাদীসে ‘সাক্ষ্য প্রদান’ শব্দের পরিবর্তে ‘বলা’ শব্দ ব্যবহার  করা হয়েছে।

বুখারী, আস-সহীহ, ১/১২, ২৯, ৩/১২৬৭; মুসলিম, আস-সহীহ ১/৪৫, ৪৭, ৫৭, ৬১)

(১) প্রথম রূপ:

                                 ﺃَﺷْﻬَﺪُ ﺃَﻥْ ﻻ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻟَّﺎ ﺍﻟﻠﻪُ ﻭ ﺃَﺷْﻬَﺪُ ﺃَﻥِّ  ﻣُﺤَﻤَّﺪًﺍ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ

আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবূদ (উপাস্য) নেই এবং আমি সাক্ষ্য প্রদান করছি যে, মুহাম্মাদ (সা) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল।”

 

(২) দ্বিতীয় রূপ:

                                                          ﺃَﺷْﻬَﺪُ ﺃَﻥْ ﻻ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻟَّﺎ ﺍﻟﻠﻪُ ﻭ ﺃَﻥِّ ﻣُﺤَﻤَّﺪًﺍ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ

(৩) তৃতীয় রূপ:

                                                                             ﺃَﺷْﻬَﺪُ ﺃَﻥْ ﻻ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻟَّﺎ ﺍﻟﻠﻪُ ﻭﺣْﺪَﻩُ ﻻ  ﺷَﺮِﻳﻚَ ﻟَﻪُ ﻭَ ﺃَﻥَّ ﻣُﺤَﻤَّﺪًﺍ ﻋَﺒْﺪُﻩُ ﻭ ﺭَﺳﻮﻟُﻪُ

 

(৪) চতুর্থ রূপ:                                           ﻻ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻟَّﺎ ﺍﻟﻠﻪُ ﻭ ﺃَﻥِّ ﻣُﺤَﻤَّﺪًﺍ  ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ        

 

(৫) পঞ্চম রূপ:                                   ﺃَﺷْﻬَﺪُ ﺃَﻥْ ﻻ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻟَّﺎ ﺍﻟﻠﻪُ ﻭَ ﺃَﻥَّ  ﻣُﺤَﻤَّﺪًﺍ ﻋَﺒْﺪُﻩُ ﻭ ﺭَﺳﻮﻟُﻪُ

সাহাবায়ে কেরাম ইসলাম গ্রহণের সময়ে এ উপরে উল্লিখিত এ সকল বাক্যের কোনো একটি পাঠ করে ইসলামের ছায়াতলে প্রবেশ করতেন। (বুখারী,আস-সহীহ ১/১৭৬, ৩/১২১১; মুসলিম, আস- সহীহ ১/৩০২, ৩/১৩৮৬; নাসাঈ, আস-সুনান ১/১০৯)

‘কালিমা শাহাদত’হিসাবে পরিচিত। এই কালিমায় আল্লাহর তাওহীদ এবং মুহাম্মাদ (সা) এর রিসালাতের সাক্ষ্য প্রদান করা হয়। প্রকৃতপক্ষে একমাত্র কালিমা শাহাদতই হাদীস শরীফে ঈমানের মূল বাক্য হিসাবে উল্লে খ করা হয়েছে।

 

আল্লাহকে এক বলে সাক্ষ্য দেয়া এবং মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে আল্লাহর রাসূল হিসাবে সাক্ষ্য দেয়ার অর্থ কি?
উত্তরঃ আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন মা’বূূদ নেই এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর রাসূল এ কথার ঘোষণা দেয়া ইসলামে প্রবেশের চাবিকাঠি স্বরূপ। এই সাক্ষ্য দেয়া ব্যতীত ইসলামে প্রবেশ করা সম্ভব নয়। এই জন্যই রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুয়া’য (রাঃ)কে ইয়ামান দেশে পাঠানোর সময় আদেশ দিয়েছিলেন যে, তুমি সর্বপ্রথম এই কথার সাক্ষ্য দেয়ার আহবান জানাবে যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন মা’বূূদ নাই। এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর রাসূল।
প্রথম বাক্যটি অর্থাৎ “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ” এর অর্থ হচ্ছে, মানুষ অন্তর দিয়ে বিশ্বাস করবে যে, আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোন উপাস্য নেই। সেই সাথে মুখে এই কালেমাটির উচ্চারণ করবে।
যার দাসত্ব ও উপাসনা করা হয় তার নাম ইলাহ। (لاَ اِلَهَ اِلاَّ اللَّهُ) “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ” এই বাক্যটির দু’টি অংশ। একটি ‘না’ বাচক অংশ অপরটি ‘হ্যাঁ’ বাচক অংশ। “লা-ইলাহা” কথাটি ‘না’ বাচক। এবং “ইল্লাল্লাহ” কথাটি ‘হ্যাঁ’ বাচক। প্রথমে সমস্ত বাতিল মা’বূূদের জন্য কৃত সকল প্রকার এবাদতকে অস্বীকার করে দ্বিতীয় বাক্যে তা একমাত্র হক্ক মা’বূূদ আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করা হয়েছে।
“লা-ইলাহ ইল্লাল্লাহ” এর অর্থ ‘আল্লাহ ছাড়া কোন মা’বূূদ নেই।’ যদি কেউ প্রশ্ন করে যে, আপনি কিভাবে বললেন আল্লাহ ছাড়া কোন মা’বূূদ নেই? অথচ আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, বাস্তবে আল্লাহ ব্যতীত অসংখ্য মা’বূূদের উপাসনা করা হচ্ছে। আল্লাহ ব্যতীত যাদের এবাদত করা হচ্ছে আল্লাহও তাদেরকে মা’বূূদ হিসাবে নাম রেখেছেন। আল্লাহ বলেন,
فَمَا أَغْنَتْ عَنْهُمْ ءَالِهَتُهُمْ الَّتِى يَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللَّهِ مِنْ شَيْءٍ لَمَّا جَاء أمْرُ رَبِّكَ
“আল্লাহকে বাদ দিয়ে তারা যেসব মা’বূূদকে ডাকত, আপনার পালনকর্তার হুকুম যখন এসে পড়বে, তখন কেউ কোন কাজে আসবেনা।” (সূরা হুদঃ ১০১)
আল্লাহ আরো বলেনঃ
وَ لاَ تَجْعَلْ مَعَ اللَّهِ إِلَهًا ءَاخَرَ
“আল্লাহর সাথে অন্য কোন মা’বূূদ স্থির করবেন না”। (সূরা বানী ইসরাঈলঃ ৩৯)
আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ
وَلَا تَدْعُ مَعَ اللَّهِ إِلَهًا آخَرَ
“আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে মা’বূদ ডেকো না।” (সূরা কাসাসঃ ৮৮)
আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ
 لَنْ نَدْعُوَ مِنْ دُونِهِ إِلَهًا
“আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন মা’বূদকে আমরা কখনই আহবান করব না।” (সূরা কাহ্‌ফঃ ১৪)
এখন আমরা কিভাবে বলতে পারি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মা’বূদ নেই। অথচ দেখা যাচ্ছে গাইরুল্লাহর জন্য উলুহিয়্যাত উল্লেখ করা হয়েছে। আর আমরাই বা কিভাবে গাইরুল্লাহর জন্য এবাদত সাব্যস্ত করতে পারি? অথচ রাসূলগণ তাদের সমপ্রদায়ের লোকদেরকে বলেছেন,
اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُمْ مِنْ إِلَهٍ غَيْرُهُ
“তোমরা এক আল্লাহর এবাদত কর। তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন মা’বূদ নাই।” (সূরা আরাফঃ ৫৯)
উপরোক্ত সমস্যার উত্তর এই যে, “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বাক্যটির মধ্যে ইলাহা কথাটির পরে হাক্কুন শব্দ উহ্য রয়েছে। আসলে বাক্যটি এ রকম হবে, (لا اله حق الا الله) (লা-ইলাহা হাক্কুন ইল্লাল্লাহ) হাক্কুন শব্দটি উহ্য মানলেই সমস্যা দূর হয়ে যাবে। তাই আমরা বলব আল্লাহ ছাড়া যাদের এবাদত করা হয়, তারাও মা’বূদ কিন্তু এগুলো বাতিল মা’বূদ। এবাদত বা দাসত্ব পাওয়ার তাদের কোন অধিকার নাই। এ কথার প্রমাণ আল্লাহর বাণী,
ذَلِكَ بِأَنَّ اللَّهَ هُوَ الْحَقُّ وَأَنَّ مَا يَدْعُونَ مِنْ دُونِهِ الْبَاطِلُ وَأَنَّ اللَّهَ هُوَ الْعَلِيُّ الْكَبِيرُ
“এটাই প্রমাণিত যে, আল্লাহ-ই সত্য এবং আল্লাহ ব্যতীত তারা যাদের উপাসনা করে তারা সবাই মিথ্যা। আল্লাহ সর্বোচ্চ সুমহান।” (লুকমানঃ ৩০)
আল্লাহ আরো বলেনঃ
أَفَرَأَيْتُمْ اللَّاتَ وَالْعُزَّى, وَمَنَاةَ الثَّالِثَةَ الْأُخْرَى, أَلَكُمْ الذَّكَرُ وَلَهُ الْأُنثَى, تِلْكَ إِذًا قِسْمَةٌ ضِيزَى, إِنْ هِيَ إِلَّا أَسْمَاءٌ سَمَّيْتُمُوهَا أَنْتُمْ وَآبَاؤُكُمْ مَا أَنزَلَ اللَّهُ بِهَا مِنْ سُلْطَانٍ
অর্থঃ “তোমরা কি ভেবে দেখেছ লাত ও ওয্‌যা সম্পর্কে এবং তৃতীয় আরেকটি মানাত সম্পর্কে? পুত্র সন্তান কি তোমাদের জন্য এবং কন্যা সন্তান আল্লাহর জন্যে? এমতাবস্থায় এটা তো হবে খুবই অসংগত বন্টন। এগুলো কতগুলো নাম ছাড়া অন্য কিছু নয়, যা তোমরা নিজেরা রেখেছ এবং তোমাদের পূর্ব-পুরুষেরা রেখেছে। এর সমর্থনে আল্লাহ কোন দলীল নাযিল করেন নি।” (সূরা নাজ্‌মঃ ১৯-২৩)
আল্লাহ তাআ’লা কুরআনে ইউসুফ (আঃ) এর কথা উল্লেখ করে বলেন,
مَا تَعْبُدُونَ مِنْ دُونِهِ إِلَّا أَسْمَاءً سَمَّيْتُمُوهَا أَنْتُمْ وَآبَاؤُكُمْ مَا أَنزَلَ اللَّهُ بِهَا مِنْ سُلْطَانٍ
“তোমরা আল্লাহকে ছেড়ে নিছক কতগুলো নামের এবাদত কর, সেগুলো তোমরা এবং তোমাদের বাপ-দাদারা নাম করণ করে নিয়েছো। আল্লাহ এদের পক্ষে কোন প্রমাণ অবতীর্ণ করেন নি।” (সূরা ইউসুফঃ ৪০)
সুতরাং লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ অর্থ আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নাই। তিনি ব্যতীত অন্যান্য মা’বূূদগুলো সত্য মা’বূদ নয়। বরং তা বাতিল উপাস্য।
মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর রাসূল এ কথার সাক্ষ্য দেয়ার অর্থ এই যে, অন্তরে বিশ্বাস এবং মুখে এই কথার স্বীকৃতি প্রদান করা যে, মুহাম্মাদ বিন আবদুল্লাহ সমস্ত জিন ও মানুষের জন্য রাসূল হিসাবে প্রেরিত হয়েছেন। আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ
قُلْ يَاأَيُّهَا النَّاسُ إِنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكُمْ جَمِيعًا الَّذِي لَهُ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ يُحْيِ وَيُمِيتُ فَآمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ النَّبِيِّ الْأُمِّيِّ الَّذِي يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَكَلِمَاتِهِ وَاتَّبِعُوهُ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ
“হে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনি বলে দিন যে, হে মানব মন্ডলী তোমাদের সবার প্রতি আমি আল্লাহ প্রেরিত রাসূল, সমগ্র আসমান ও জমিনের রাজত তাঁর। একমাত্র তাঁকে ছাড়া আর কারো উপাসনা নয়। তিনি জীবন ও মৃত্যু দান করেন। সুতরাং তোমরা সবাই বিশ্বাস স্থাপন কর আল্লাহর উপর, তার প্রেরিত উম্মী নবীর উপর, যিনি বিশ্বাস রাখেন আল্লাহর উপর এবং তাঁর সমস্ত কালামের উপর। তাঁর অনুসরণ কর, যাতে তোমরা সরল পথ পেতে পার।” (সূরা আরাফঃ ১৫৮) আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ
تَبَارَكَ الَّذِي نَزَّلَ الْفُرْقَانَ عَلَى عَبْدِهِ لِيَكُونَ لِلْعَالَمِينَ نَذِيرًا
বড়ই বরকত সম্পন্ন  তিনি যিনি এ ফুরকান  যাতে সে সারা বিশ্ববাসীর জন্য সতর্ককারী হয় তারঁ বান্দার ওপর নাযিল করেছেন। সূরা ফুরকানঃ১
মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে রাসূল হিসাবে সাক্ষ্য দেয়ার অর্থ হলঃ
  • (১) তিনি যে বিষয়ের সংবাদ দিয়েছেন, তা বিশ্বাস করা,
  • (২) তাঁর আদেশ মান্য করা,
  • (৩) তিনি যে বিষয় নিষেধ করেছেন, তা থেকে দূরে থাকা
  • (৪) তাঁর নির্দেশিত শরীয়ত অনুযায়ী আল্লাহর এবাদত করা।
  • (৫) তাঁর শরীয়তে নতুন কোন বিদ্‌আত সৃষ্টি না করা।
এই বিষয়ের সাক্ষ্য দেয়ার অন্যতম দাবী হল সৃষ্টি বা পরিচালনায় এবং প্রভুত্বে কিংবা এবাদতে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর কোন অধিকার নাই। বরং তিনি আবদ্‌ বা আল্লাহর দাস ও বান্দা। মা’বূদ নন। তিনি সত্য রাসূল। তাঁকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা যাবে না। তিনি নিজের জন্য কিংবা অপরের জন্য কল্যাণ-অকল্যাণের কোন ক্ষমতা রাখেন না। মানুষের কল্যাণ-অকল্যাণের একমাত্র মালিক আল্লাহ। আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ
قُلْ لَا أَقُولُ لَكُمْ عِندِي خَزَائِنُ اللَّهِ وَلَا أَعْلَمُ الْغَيْبَ وَلَا أَقُولُ لَكُمْ إِنِّي مَلَكٌ إِنْ أَتَّبِعُ إِلَّا مَا يُوحَى إِلَيَّ
“আপনি বলুনঃ আমি তোমাদেরকে বলি না যে, আমার কাছে আল্লাহর ভান্ডার রয়েছে। তাছাড়া আমি অদৃশ্য বিষয় অবগতও নই। আমি এমনও বলি না যে, আমি ফেরেশতা। আমি তো শুধু ঐ ওহীর অনুসরণ করি, যা আমার কাছে আসে।”
(সূরা আনআ’মঃ ৫০)
সুতরাং তিনি একজন আদেশ প্রাপ্ত বান্দা মাত্র। তাঁর প্রতি যা আদেশ করা হয় তিনি কেবল মাত্র তারই অনুসরণ করে থাকেন। আল্লাহ বলেনঃ
قُلْ إِنِّي لَا أَمْلِكُ لَكُمْ ضَرًّا وَلَا رَشَدًا قُلْ إِنِّي لَنْ يُجِيرَنِي مِنْ اللَّهِ أَحَدٌ وَلَنْ أَجِدَ مِنْ دُونِهِ مُلْتَحَدًا
“বলুনঃ আমি তোমাদের ক্ষতি সাধন করার ও সুপথে আনয়ন করার মালিক নই। বলুনঃ আল্লাহ তাআ’লার কবল থেকে আমাকে কেউ রক্ষা করতে পারবে না। এবং তিনি ব্যতীত আমি আশ্রয়স্থল পাবনা।” (সূরা জিনঃ ২১-২২) আল্লাহ তাআ’লা আরো বলেনঃ
قُلْ لَا أَمْلِكُ لِنَفْسِي نَفْعًا وَلَا ضَرًّا إِلَّا مَا شَاءَ اللَّهُ وَلَوْ كُنتُ أَعْلَمُ الْغَيْبَ لَاسْتَكْثَرْتُ مِنْ الْخَيْرِ وَمَا مَسَّنِي السُّوءُ إِنْ أَنَا إِلَّا نَذِيرٌ وَبَشِيرٌ لِقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ
“আপনি বলে দিন, আমি আমার নিজের কল্যাণ সাধনের এবং অকল্যাণ সাধনের মালিক নই। কিন্তু আল্লাহ যা চান। আর আমি যদি গায়েবের খবর জেনে নিতে পারতাম, তাহলে বহু মঙ্গল অর্জন করে নিতে পারতাম। ফলে আমার কখনো কোন অমঙ্গল হতনা। আমি তো শুধুমাত্র একজন ভীতি প্রদর্শক এবং সুসংবাদদাতা ঈমানদারদের জন্য।” (সূরা আরা‘ফঃ ১৮৮) এটাই হল লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদূর রাসূলুল্লাহ এর প্রকৃত অর্থ।
সুতরাং এই অর্থের মাধ্যমেই জানা যায় যে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বা অন্য কোন মাখলুক এবাদতের অধিকারী নয়। এবাদতের মালিক একমাত্র আল্লাহ তাআ’লা। তিনি বলেনঃ
قُلْ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَاي وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ لَا شَرِيكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ
“আপনি বলুনঃ আমার নামায, আমার কোরবানী এবং আমার জীবন ও মরণ বিশ্ব-প্রতিপালক আল্লাহর জন্যে। তাঁর কোন শরীক নেই। আমি তাই আদিষ্ট হয়েছি এবং আমি প্রথম আনুগত্যশীল মুসলিম।” (সূরা আন্‌আমঃ ১৬২-১৬৩) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে আল্লাহ তাআ’লা যে সম্মান দান করেছেন, তাতে অধিষ্ঠিত করাই নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর জন্য যথেষ্ট। তিনি আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। মর্যাদাবান হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট। তাঁর উপর আল্লাহর পক্ষ হতে সীমাহীন শান্তির ধারা বর্ষিত হোক।
ফতোয়া আরকানুল ইসলাম
মূল: শায়খ মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল-উসাইমীন (রহ.)
অনুবাদক: মুহাঃ আব্দুল্লাহ আল-কাফী ও আব্দুল্লাহ শাহেদ আল-মাদানী
Meaning of laa ilaaha illa Allah Muhammadun rasool ullah
What is the meaning of the words “laa ilaahah illa Allaah muhammadun rasool ullaah”?
Published Date: 2000-11-28
Bearing witness “laa ilaahah illa allah” and that “muhammadun rasool ullaah” is the first pillar of the five pillars of Islam. And the meaning of “laa ilaahah illa allah” is that nothing worshipped is worthy of worship except Allah—it is simultaneously a denial and affirmation. “laa ilaahah” is denial of all worship other than that of Allah. “illa allaah” is affirmation that all worship is for Allah alone without partners.
As for the declaration, “muhammadun rasool ullaa,” its meaning is the assertion of the message of Mohammed (peace and blessings of Allah be upon him) and to believe in it and to adhere to it by speech, action and faith, and to avoid all that is against it, whether it be sayings, actions, or intentions… In other words, obeying him in what he ordered and believing in what he said and relayed and avoiding what he has forbid and denounced and not worshipping Allah except as he has ordained.
wa-sall-allahu wa-sallim ‘ala nabiyyina muhammadin wa-aalihi wa-sahbih. (May the peace and blessings of Allah be upon our prophet Muhammad and upon his families and companions).
Islam Q&A Sheikh Muhammed Salih Al-Munajjid
https://youtu.be/NO4ew9z56VA
https://www.youtube.com/watch?v=xvu6rkt8Fd4