আসসালামু’আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ
যে সকল মহান আল্লাহর সাহায্যে হজ্জের সকল কার্যাবলী সমাপন করে এসেছেন, তাদের জন্য শুভাকাংখী দীনী সম্পর্কের অধিকার থেকে কিছু আবেদন।
মহান আল্লাহ তাঁর ভালোবাসার বান্দ হিসেবেই কবুল করে নিন সকলের হজ্জ, জমা করে দিন মকবুল হজ্জের পুরস্কার।
সম্মানীত- যে অনুভূতি আবেগ মাখা সুন্দর একটি মন যাওয়ার প্রাক্কালে ছিল যা সারাক্ষন পেরেশানিতে ছিল- কি জানি হজ্জ করা সম্ভব হবে কি না, হজ্জ কবুল হওয়ার মত সকল কাজ সুষ্ঠভাবে করতে পারবো কিনা-ঠিক তার চেয়ে আরো গভীর অনুভূতি ও আবেগ নিয়ে নিশ্চয়ই দেশের মাটিতে ফিরে এসেছেন যে, আবার ইন শা আল্লাহ আল্লাহর ঘরে যেতে হবে, আরো পড়াশুনা করে গেলে ভালো হতো, যা করে এসেছি তা কি ধরে রাখতে পারবো কিনা, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কিছু ভুল হয়তো ধরা পড়ছে(সকলের না)ইত্যাদি।সবচেয়ে বড় পেরেশানি-আমার হজ্জ কবুল হয়েছে কি না!
হাঁ , মনের এই অবস্থা আসা মহান রবের সাথে ভালোবাসারই প্রকাশ। আখেরাতের প্রত্যাশী যারা তাদেরই এই অনুভূতির প্রকাশ হয়ে থাকে। আলহামদুলিল্লাহ, আশা করে নিতে হবে যে মহান আল্লাহ অবশ্যই আমার হজ্জ কবুল করেছেন ইন শা আল্লাহ।
এবার আসি কিছু আবেদন নিয়ে—
হাসান বসরি রহ. বলেছেন: “হজ্জে-মাবরুর হচ্ছে ব্যক্তির (হাজ্জীর) দুনিয়াত্যাগী ও আখিরাতমুখী হয়ে দেশে প্রত্যাবর্তন করা”।
হজ্জ করে গায়ে রঙ লাগিয়ে আসতে হবে যা আল্লাহর রঙ, যা সবচেয়ে উত্তম।
(বাকারাঃ১৩৮) বলোঃ “আল্লাহর রঙ ধারণ করো !আর কার রঙ তার চেয়ে ভলো? আমরা তো তাঁরই ইবাদাতকারী ৷
এইখানেই অনেকে ব্যর্থ হয়ে যান, হজ্জের ময়দানে যে কি না রবের অতিথি হয়ে আনুগত্যের প্রকাশ হিসেবে পর্দার অনুশীলনে নিজেকে পূর্ন নিয়োজিত রেখে ইবাদাতে মগ্ন ছিলেন সেই বান্দী আজ হজ্জ সমাপনের পর পর্দার লেবাস থেকে বের হতে চাইছেন। আর রবের প্রিয় বান্দা তিনি দাঁড়ি শেইভ করে টাখনুর নিচে কাপড় পড়ে আবার আগের মতই রঙ ধারন করে নিতে চাইছেন, তাহলে কি আল্লাহর রং ধারন হলো?
অনেকেই আবার হারাম ব্যবসার সাথে কাজ শুরু করে দেবার উদ্যোগ নিচ্ছেন।
শুধুমাত্র নামে রঙ(হাজ্জী বলে পরিচয়) লাগালে হবে না বরং মূলত একমাত্র কাজেই এই রঙ লাগাতে হবে।অন্তরে ধারন করা এই রং বাইরে লেবাসে ও আচরনে আখলাকেও আসতে হবে।
সম্মানীত হজ্জ আদায় করে ফিরে আসা বান্দা বান্দীরা
একটু সচেতন হয়ে নিজেকে আবার নতুন করে আমলে জীবনকে সমৃদ্ধ করার পরিকল্পনা নিয়ে বাস্তবায়নের পথে এগুতে থাকুন।মনে রাখা প্রয়োজন এখন নব জন্ম নেয়া শিশুর মতই নিষ্পাপ আপনি ইন শা আল্লাহ। আর তাই মৃত্যুর আগ মুহুর্ত পর্যন্ত যেন এই মান ধরে রাখতে পারেন সেই জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা ও রবের কাছে আকুলভাবে প্রতি নিয়ত চাইতে থাকতে হবে। পাশা পাশি শয়তানের সব ধরনের চক্রান্তকে বুঝার ও চেনার মাধ্যমে দূরে থাকতে হবে। মহান আল্লাহ আপনাদেরসহ আমাদের সকলকেই এইভাবে জীবনের ক্ষুদ্র সময়কে কাজে লাগানোর সুযোগদানে সহজ করে দিন।
- কিছু ইবাদাতকে নিয়মিত আমলে পরিনত করে নিন।
কোন আমল আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়? তিনি বললেন: “ধারাবাহিক আমল, যদিও তা কম হয়”।সহীহ মুসলিম
আর যারা আমার পথে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়, তাদেরকে আমি অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করব। আর নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মশীলদের সাথেই আছেন”। সূরা আন’কাবুত:৬৯
কুর’আন,সালাত,তাহাজ্জুদ,সাওম ও অন্যান্য নফল সালাত ও দান সাদাকা,ভালো কাজের আদেশ ও অন্যায় কাজে বারন।
- জ্ঞানার্জনে পরিকল্পিতভাবে নিজেকে নিযুক্ত রাখুন।
- ধৈর্যসহ ইবাদতে অবিচল থাকা জরুরী।
যদি আপনি অলসতায় গা হেলিয়ে দেন তাহলে ‘নফসে আম্মারা’ আপনাকে কাবু করবে এবং শয়তান আপনার ওপর প্রভাব বিস্তারে সফল হবে, ফলে আপনার হজ্জ ধুলো-বালিতে মিশে যাবে।
হাসান বসরি রহ. বলতেন: “দ্রুত কর! দ্রুত কর! কারণ (জীবনের) মূল হচ্ছে কেবল নিঃশ্বাস, যদি তা বন্ধ করে দেয়া হয়, তাহলে তোমাদের আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের আমল শেষ হয়ে যাবে। আল্লাহ তাকে রহম করুন, যে নিজের দিকে তাকিয়ে পাপের জন্য ক্রন্দন করে।” তারপর তিনি এ আয়াতটি পড়েন:
“আমি তো কেবল তাদের জন্য নির্ধারিত কাল গণনা করছি”। (সূরা মারইয়াম:৮৪)
এরপর তিনি কেঁদে বলেন: “ভাই! জানেন নির্ধারিত কাল কি? আপনার নফস বের হওয়া। অপর নির্ধারিত কাল হচ্ছে আপনার পরিবার-পরিজন ত্যাগ করা। অপর নির্ধারিত কাল হচ্ছে আপনার কবরে প্রবেশ করা।
ওমর ইব্ন আব্দুল আযিয রহ. বলেন: “দুনিয়ার ভোগ-বিলাস ও চাকচিক্য সত্যেও দুনিয়াবাসীদের জীবন বিষাদময় করে দিয়েছে মৃত্যু। মৃত্যু তাদের দুয়ারে অকস্মাৎ হানা দিয়ে জীবন সাঙ্গ করে দেয়। মৃত্যু যাকে সতর্ক করতে পারেনি তার জন্য ধ্বংস, সর্বনাশ! ধ্বংস তার জন্যও যে সচ্ছলতার সময় মৃত্যুকে স্মরণ করে কোন কল্যাণ করতে সক্ষম হয় নি, যার ফল সে দুনিয়া ও পরিবার ত্যাগ করে ভোগ করবে”। অতঃপর তার ওপর কান্না প্রবল হয়, তিনি চলে যান।
- সময়কে পুঁজি করে সাক্ষী রাখুন কল্যানের কাজে যা হবে শুধুমাত্র রবের সন্তুষ্টির জন্য,পুঁজি শেষ হয়ে যাচ্ছে।ছোট ছোট আমলকেও মূল্য দিন,আবার ছোট গুনাহকেও গুনাহ বলে ভয় রাখুন-দূরে থাকুন।
- যেভাবে হজ্জের সময় ইহরাম অবস্থায় নিজেকে রাগ, হিংসা লোভ পরচর্চা অহংকার থেকে মুক্ত রাখার অনুশীলন করেছেন, এখন তার বাস্তব অনুশীলন করুন প্রাত্যহিক জীবনে।
- যেভাবে সেখানে বেহুদা কথা ও কাজ থেকে মুক্ত রেখেছেন,তেমনি এখনও সেগুলো থেকে মুক্ত রাখুন কারন এইতো আবার সেলাইবিহীন সাদা কাপড় পড়ার সময় চলে আসছে বলে!
- হজ্জের সময়ে অবস্থানকালীন কষ্টকে অন্যের কাছে এতো সমস্যা হিসেবে প্রচার না করে ভালো ও সুন্দর কথাগুলো প্রচার করুন। সমস্যাগুলোর সমাধানে করনীয় দিক পরামর্শ হিসেবে জানিয়ে দিতে পারেন যে, এই জিনিষগুলো বা বিষয়টি এইভাবে করার চেষ্টা করবেন ইত্যাদি।
- কোন কোন দিক পড়াশুনার ঘাটতি ছিলো সেইদিকগুলো জানিয়ে পরামর্শ দিন পরবর্তীতে যারা হজ্জে যেতে চান তাদেরকে।তারা যেন পূর্ণ প্রস্তুতি নিতে পারেন।
- আশা রাখুন আবার উমরাহ করতে যাবার।
- বেশী বেশী তাওবা ইস্তিগফার করুন(আগের তুলনায় আরো বেশী)
- রাসূল স.এর জীবনীটা আবার পড়ে দেখুন ও সেই জায়গাগুলোকে মনে করুন।শিক্ষা নিন- কত ত্যাগ শ্রম প্রচেষ্টার আজকের এই ইসলাম।
- নিজেকেও ইসলামের পথে অবিচল রাখতে ত্যাগ তিতিক্ষার পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হবে ও পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য সবর, নিষ্ঠা ও খুলুসিয়াত রাখতে হবে।
আমাদের নবী সা. ইব্ন ওমরকে তার গর্দান ধরে বলেছেন:
“তুমি দুনিয়াতে এভাবে থাক যেন তুমি পরদেশী বা পথিক”। ইব্ন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলতেন: যখন তুমি সন্ধ্যা কর সকালের অপেক্ষা কর না, যখন তুমি ভোর কর সন্ধ্যার অপেক্ষা কর না। তুমি তোমার সুস্থতা থেকে অসুস্থতার সম্বল গ্রহণ কর এবং জীবন থেকে মৃত্যুর জন্য সঞ্চয় কর”। [বুখারি]
ইমাম নববি রহ. বলেছেন: “এ হাদিসের অর্থ হচ্ছে দুনিয়ার দিকে ঝুঁকে যেয়ো না এবং তাকে স্থায়ী নিবাস হিসাবে গ্রহণ কর না, এখানে চিরদিন থাকার চিন্তা কর না, এর সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত কর না যেমন পরদেশী পরদেশের সাথে গভীর সম্পর্ক কায়েম করে না।
আল্লাহ তা’আলা বলেন:
“যারা তাদের রবের সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে সবর করে, সালাত কায়েম করে এবং আমি তাদের যে রিযক প্রদান করেছি, তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে এবং ভাল কাজের মাধ্যমে মন্দকে দূর করে, তাদের জন্যই রয়েছে আখিরাতের শুভ পরিণাম। স্থায়ী জান্নাতসমূহ, যাতে তারা এবং তাদের পিতৃপুরুষগণ, তাদের স্ত্রীগণ ও তাদের সন্তানদের মধ্যে যারা সৎ ছিল তারা প্রবেশ করবে। আর ফেরেশতারা প্রতিটি দরজা দিয়ে তাদের নিকট প্রবেশ করবে। (আর বলবে) ‘শান্তি তোমাদের উপর, কারণ তোমরা সবর করেছ, আর আখিরাতের এ পরিণাম কতই না উত্তম”। সূরা রাদ:২২-২৪
মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে আমল করার ও তাঁর করুনা ক্ষমা পাওয়ার সুযোগ করে দিন।
https://www.youtube.com/watch?v=R2ls8bizlAU