আসসালামু’আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
হৃদয়ে স্থান নেয়া আমার ভালোবাসার আপুজীরা, সম্পর্কের অধিকার খাটায়ে আজ তোমাদের কিছু আবেদন করবো। একটু অন্তর দিয়ে উপলব্ধির জানালা খুলে দিয়ে চোখের পর্দা সরিয়ে কিছুক্ষন চিন্তা করে দেখার বিনীত অনুরোধ রইলো।
মহান আল্লাহ তা’লা বলেছেন:
তুমি কি কখনো সেই ব্যক্তির অবস্থা ভেবে দেখেছো যে তার প্রবৃত্তির কামনা বাসনাকে প্রভূ বানিয়ে নিয়েছে আর জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও আল্লাহ তাকে গোমরাহীর মধ্যে নিক্ষেপ করেছেন, তার দিলে ও কানে মোহর মেরে দিয়েছেন এবং চোখে আবরণ সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ ছাড়া আর কে আছে যে তাকে হিদায়াত করতে পারে? তোমরা কি কোন শিক্ষা গ্রহণ করো না? সূরা জাসিয়াহ: ২৩
তোমাদের কাছে যে জ্ঞান এসেছে তা লাভ করার পর যদি তোমরা তাদের ইচ্ছা ও বাসনার অনুসারী হও, তাহলে নিঃসন্দেহে তোমরা জালেমদের অন্তর্ভুক্ত হবে। সূরা বাকারা: ১৪৫
আপুরা, কুর’আনের এই দুইটি আয়াত আমাদের জন্য(যারা জান্নাতের প্রত্যাশী) খুবই চিন্তার বিষয়। মহান আল্লাহর অনেক বিধান আমরা অনেকেই জেনে শুধুমাত্র নিজ নফস ও শয়তানের ষড়যন্ত্রের মাঝে থেকে মহান রবের আনুগত্য থেকে দূরে থাকি, এটা ভয়ানক একটি অবস্থা। যেকোন ফরয ওয়াজীব কাজ করা ও হারাম থেকে দূরে থাকা যা বাধ্যতামূলক এবং যা শুধুমাত্র ব্যক্তির জন্যই নয় বরং সমাজ ব্যবস্থাপনায় প্রভাব পড়ে সেই ধরনের আমল থেকে দূরে থাকা নিজেকে জালেমের কাতারে নিয়ে যাওয়ারই নাম এবং রবের অনুগ্রহ সাহায্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত করার অবস্থান।
আমরা সকলেই কম বেশী পর্দা সম্পর্কে জানি। সালাতের ব্যপারে আমরা যেমন সচেতন আলহামদুলিল্লাহ,পর্দার ব্যপারে কি আমরা সেই রকম সচেতন? অথচ সালাত ব্যক্তির নিজ আমল,পর্দা সামাজিক ইবাদাত(যেহেতু এর প্রভাব অন্যের ক্ষতি বা লাভের কারন হয়)।
আপুরা, আমরা অনেকেই পর্দার পুরু অনুশীলন না করেও অনেক সময় এমন অবস্থায় আটকে থাকি যেন এক মন বলে পর্দা করতে আবার অন্য মন বলে সমাজের সাথে তাল মেলাতে, নফসের খায়েশাতকে পূর্ণ করেই চলতে-এ যেন দু নায়ে পা দেয়ার মত অবস্থা।
আপুরা, ভেবে দেখো-জীবন একটাই, রাস্তাটাও একমুখী, সময়ের কাঁটা চলতেই থাকে ফিরে আসে না কখনোই, জীবনের কাঁটা কখন কোথায় থেমে যাবে আমরা কেউই জানি না। আপুরা, খুবই ভয় লাগে যে যখন মৃত্যুর ফেরেশতা সামনে চলে আসবে, তখন কি অবস্থা থাকবে-নিজেকে কি পূর্ণ আত্মসমর্পনকারী অবস্থায় নিতে পেরেছি? না কি সুবিধাবাদী নীতিতে চলতে চলতেই চলে এসেছি?
মহান আল্লাহ জানিয়েছেন–
তোমরা কিতাবের একটি অংশের ওপর ঈমান আনছো এবং অন্য অংশের সাথে কুফরী করছো? তারপর তোমাদের মধ্য থেকে যারাই এমনটি করবে তাদের শাস্তি এ ছাড়া আর কি হতে পারে যে, দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছিত ও পর্যুদস্ত হবে এবং আখেরাতে তাদেরকে কঠিনতম শাস্তির দিকে ফিরিয়ে দেয়া হবে ? তোমাদের কর্মকান্ড থেকে আল্লাহ বেখবর নন৷ এই লোকেরাই আখেরাতের বিনিময়ে দুনিয়ার জীবন কিনে নিয়েছে ৷ কাজেই তাদের শাস্তি কমানো হবে না এবং তারা কোন সাহায্যও পাবে না ৷ সূরা বাকারাঃ৮৫-৮৬
তারা বলে, জাহান্নামের আগুন আমাদের কখনো স্পর্শ করবে না , তবে কয়েক দিনের শাস্তি হলেও হয়ে যেতে পারে ৷এদেরকে জিজ্ঞেস করো, তোমরা কি আল্লাহর কাছ থেকে কোন অংগীকার নিয়েছো, যার বিরুদ্ধাচারণ তিনি করতে পারেন না? অথবা তোমরা আল্লাহর ওপর চাপিয়ে দিয়ে এমন কথা বলছো যে কথা তিনি নিজের ওপর চাপিয়ে নিয়েছেন বলে তোমাদের জানা নেই? আচ্ছা জাহান্নামের আগুন তোমাদেরকে স্পর্শ করবে না কেন ? যে ব্যক্তিই পাপ করবে এবং পাপের জালে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে পড়বে সে-ই জাহান্নামী হবে এবং জাহান্নামের আগুনে পুড়তে থাকবে চিরকাল ৷সূরা বাকারাঃ ৮০-৮১
যে কথা বলার জন্য এই ভূমিকা তা হলো, আমাদের অনেক ভালোবাসার আপুরা পর্দার সঠিক অনুসরন করতে প্রস্তুত হচ্ছেন না। প্রথমত ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই যে, পর্দা হলো রবের আদেশ, পর্দার অনুসরন হলো রবের আনুগত্যের প্রমান। কিভাবে করতে হবে তা রাসূল স. হাদিসে জানিয়ে দিয়েছেন।
পর্দার সঠিক অনুসরন কি তা আজ সকলেই জানে-আমার বিশ্বাস,বা জানার অনেক উৎস হাতের নাগালেই আছে, ইবনে কাসীর তাফসীর থেকে সূরা আহযাব ও সূরা নূরের পুরুটা ব্যাখ্যাসহ পড়লে কোন কমতি থাকবে না ইন শা আল্লাহ।
আমার অন্তরের ভালোবাসা থেকেই আপুরা আকুল আবেদন-নিজেকে প্রশ্ন করে দেখোতো—
পূর্ণ পর্দায় আসতে কেনো চাইছো না? কবরের জীবনে হাশরের মাঠে কেউ কি সাহায্য করতে পারবে অন্যকে?
কার মন জয় করার জন্য মহান রবের আদেশকে অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে?
রবের পূর্ণ আনুগত্য না করে কি জান্নাত যাওয়া যাবে?
পূর্ণ সংশোধন হওয়ার সুযোগ যদি না আসে?
শয়তান কি একটি ফরয লংঘন দিয়ে সকল আমলকে শূন্যের খাতায় ফেলে দিচ্ছেনাতো?(ইবলিস কিন্তু একটি মাত্র আদেশ অমান্য করেই জান্নাত থেকে বঞ্চিত হয়েছে)
রবের আনুগত্যের বিরোধিতা করে কি কল্যান লাভ সম্ভব?
যতটুকু রবের পথে আসতে চাচ্ছি,তাহলে এটা কার সন্তুষ্টির জন্য?
আপুরা-নিজের মাঝেই প্রশ্ন করে দেখো-কোথায় আছে ইখলাসের অবস্থান?
সুন্দর এই মন না নিয়ে জান্নাতের আশাই করা যাবে না। এই সুন্দর মনের প্রমান হলো নিজ বাস্তব আমল। লেবাস বলে দেয় কোন আদর্শকে লালন করছি অন্তরে।
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন:
হে নবী বলে দাও, যদি তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান ও তোমাদের ভাই, তোমাদের স্ত্রী,তোমাদের আত্মীয়স্বজন, তোমাদের উপার্জিত সম্পদ, তোমাদের যে ব্যবসায়ের মন্দা দেখা দেয়ার ভয়ে তটস্থ থাকো এবং তোমাদের যে বাসস্থানকে তোমরা খুবই পছন্দ কর-এসব যদি আল্লাহ ও তাঁর রাসুল এবং তাঁর পথে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানোর চাইতে তোমাদের কাছে বেশী প্রিয় হয়, তাহলে আল্লাহর ফয়সালা তোমাদের কাছে না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা কর, আল্লাহ ফাসিকদেরকে কখনো সত্য পথের সন্ধান দেন না।সূরা তাওবা: ২৪
আমার প্রিয় আপুজীরা, নিজকে বুঝো, নিজকে জানো, নিজের জন্য উঠে দাড়াও,নিজ কল্যানের কথা ভাবো,আখেরাতের সফলতার জন্যো জাহান্নাম থেকে মুক্ত থাকার জন্য শতভাগ স্বার্থপর হতে সচেষ্ট হও। শয়তানকে জানো,বুঝো ও শতহাত দূরে রাখো তাকে।
নিজেকে যেভাবে মুক্ত করার চেষ্টা চালাবে তেমনি পরিবারকেও মুক্ত করার প্রচেষ্টা চালাবে।
মহান আল্লাহ বলেছেন: হে ইমানদারগন, তোমরা নিজেদেরকে এবং নিজেদের পরিবার ও সন্তান-সন্ততিকে সেই আগুন থেকে রক্ষা করো যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর। সুরা তাহরীম: ৬
হে ঈমানদারগন, আল্লাহর কাছে তাওবা করো, প্রকৃত তাওবা। অসম্ভব নয় যে, আল্লাহ তোমাদের দোষ-ত্রুটি দূর করে দিবেন এবং এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যার পাদদেশ দিয়ে ঝর্ণাসমূহ প্রবাহিত হতে থাকবে। সূরা তাহরীম: ৮
৩টি হাদিস তুলে ধরা হলো–
আপুরা, নারীর জীবনের জান্নাত অত্যন্ত সহজ আর তা হলো—
১। প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেন, ‘যে নারী-
*পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বে;*রমজানের রোজা রাখবে; *স্বীয় গুপ্তস্থানের হেফাজত করবে ( পর্দা রক্ষা করে এবং ব্যভিচার থেকে বিরত থেকে);*স্বামীর আনুগত্য করবে।এমন নারীদের জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেয়া হবে। যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। (তিরমিজি ও তাবরানি)
কারণ উল্লেখিত কাজগুলোর দ্বারা আল্লাহ তাআলা কর্তৃক নির্ধারিত নারীর জন্য সব বিধানই পালন করা হয়ে যাবে।
২। “দু শ্রেণীর মানুষ জাহান্নামে যাবে- যাদের আমি এখনো দেখি নি। (অর্থাৎ নবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে তাদের আত্মপ্রকাশ হয় নি)
ক) এমন কিছু লোক যাদের হাতে থাকবে গরুর লেজের মত লাঠি। এরা তা দিয়ে জনগণকে প্রহার করবে।
খ) এবং ঐ সকল জামাকাপড় হীন বা ছোট ছোট জামাকাপড় পরা নারী যারা (নিজেদের চলাফেরা ও বেশ-ভূষায়) মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করবে এবং নিজেরাও অন্য মানুষের প্রতি আকৃষ্ট হবে। তাদের মাথায় উটের মত উঁচু এবং একপাশে ঝুঁকে থাকা চূড়ার মতো কেশ রাশি শোভা পাবে। এসমস্ত নারী জান্নাতে তো যাবেই না বরং জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না অথচ এত এত দূর থেকে জান্নাতের সুঘ্রাণ পাওয়া যায়।” (সহীহ মুসলিম, হা/২১২৮)
৩।রাসূল সা: বলেছেন: মহিলারা হল পর্দায় থাকার বস্তু। সুতরাং তারা যখন (পর্দা উপেক্ষা করে) বাইরে বের হয়ে আসে, তখন শয়তান তাদেরকে (অন্য পুরুষের চোখে) সুসজ্জিত করে দেখায়। তিরমিযী: ১১৭৩
চলুন পর্দাকে জানি ও মানি এবং পরিবারে প্রতিষ্ঠিত করি তথা সমাজকে পবিত্র, শান্তিময় করি-১