শিশুর প্রাথমিক সিলেবাস

শিশুর প্রাথমিক সিলেবাস

ভূমিকা

দয়াময় মেহেরবান আল্লাহর নামে শুরু করে তাঁরই প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই যিনি আমাদের মুসলিম পরিবারে স্থান করে দিয়েছেন, আলহামদুলিল্লাহ। আজ মুসলিম হিসেবে নিজেকে ইস্তিকামাত রাখা ও পরিবারকে মুসলিম হিসেবে গড়ে তোলা খুবই চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে। শয়তানী শক্তি নব নব পরিকল্পনা দিয়ে প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে মুসলিম পরিবারে ভাংগন ও ঈমানের পথ থেকে সরানোর সকল প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় মুসলিম পিতা মাতার আরো বেশী সচেতনতার সাথে প্রযুক্তির ব্যবহার দিয়েই সন্তানদের আদর্শ মুসলিম হিসেবে গড়ে তোলার আরো বেশী পরিশ্রম করে যেতে হবে। সর্বোপরি নিজেরা বাস্তব জীবনে দ্বীনের অনুসারী হয়েই মহান রবের কাছে কায়মনোভাবে দু’আ করে যেতেই হবে।

প্রত্যেক শিশুই ফিতরাত তথা আল্লাহর তাওহীদবাদ ও একত্ববাদের স্বীকৃতি দিয়ে পৃথিবীতে আসে। কিন্তু পরবর্তীতে তার পিতা-মাতা ইয়াহুদী, খ্রীষ্টান অথবা অগ্নিপূজক বানায়। বুখারী ও মুসলিম শরীফ

ইমাম গাজ্জালি রহ. বলেছেন: ‘সন্তান মাতা-পিতার কাছে আমানত। সন্তানের হৃদয় নকশা- ইমেজমুক্ত এক সরল-স্বচ্ছ  মুক্তা, যা যেকোনো নকশা- ইমেজ ধারণ করতে প্রস্তুত। তাকে যে দিকেই হেলানো হবে সে সে দিকেই ঝুঁকে পড়বে। যা কিছু উত্তম ও ভালো তা যদি তাকে শেখানো হয়, তাকে যদি এগুলোর প্রতি অভ্যস্ত করে নেয়া হয় তবে সেভাবেই সে বড় হবে। ফলে তার মাতা-পিতা দুনিয়া ও আখেরাতে সৌভাগ্যবান হবে। তার উস্তাদ ও আদব-কায়দার শিক্ষকগণও তৃপ্তি অনুভব করবে। এর বিপরীতে তাকে যদি খারাপ বিষয়ে অভ্যস্ত করা হয়, জন্তু জানোয়ারের মতো তাকে লাগামহীন করে দেওয়া হয়, তাহলে সে ভাগ্যবিড়ম্বিত হবে, অতঃপর নিক্ষিপ্ত হবে ধ্বংসের গহ্বরে। আর এর দায়ভার বর্তাবে তাদের ঘাড়ে যারা ছিল তার কর্ণধার, যাদের দায়িত্ব ছিল তাকে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার।

মহান আল্লাহ আমাদের আহবান করে বলেছেন-

হে মুমিনগন! তোমরা নিজদিগকে এবং তোমাদের পরিবার পরিজনকে রক্ষা কর আগুন থেকে যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর। সূরা আত তাহরীমঃ ৬

মানুষ যখন মারা যায়, তখন তার আমল বন্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি আমল চলতে থাকে। সাদাকায়ে জারিয়া অথবা এমন ইলম যা দ্বারা কল্যান লাভ করা যায় অথবা নেককার সন্তান, যে তার জন্য দু’আ করে। সহিহ মুসলিম

সন্তানদের সঠিক শিক্ষা ও পরিবেশ দিয়ে গড়ে তোলা আজ বড় একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কুর’আন ও হাদীসের শিক্ষাকে সামনে রেখে প্রতিটি পরিবারে পিতা মাতাকে সচেতন ও পরিকল্পিতভাবে সন্তান গঠনে সময় ও শ্রম দিতে হবে। উভয়ের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ও উপযুক্ত পরিবেশের স্পর্শে মহান আল্লাহ সেই পরিবারের সন্তানকে সঠিকরুপে গড়ে তোলার সহায়ক উপাদান দিবেন ইন শা আল্লাহ।

এই বইটিতে ছোট পরিসরে ১-৫ বছর শিশুর জন্য একটি সিলেবাস ও দু’আ সন্নিবেশিত করা হলো। মহান আল্লাহ আমাদের সন্তানদের ও তাদের পরিবারকে জান্নাতী হিসেবে গড়ে দিন ও কবুল করে নিন এবং আমাদের ক্ষমা করে জান্নাতী হিসেবে কবুল করে নিন।

 

সন্তান গঠনে পর্যায়ক্রমিক শিক্ষাদানের ছোট একটি সিলেবাসঃ

অভিজ্ঞতার আলোকে একটি ছোট্ট সিলেবাস উল্লেখ করা হলো। এটা একটি পরামর্শভিত্তিক সিলেবাস। আপনারা নিজের মত করে এর সাথে আরো কিছু পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করে নিতে পারেন।

জন্মের পর-১ মাসঃ সিলেবাস ও করনীয়ঃ

এই ক্ষেত্রে  মা বা সন্তানের তদারক  যিনি করবেন তাকে কিছু দু’আ শিখে নেয়া উত্তম।

  • মা যখন বুকের দুধ খাওয়াবেন তখন দুধ পানের দু’আ শিশুকে শুনিয়ে বলা।
  • এই সময় মা তেলাওয়াত শুনার কাজ করবেন বা নিজেই তেলাওয়াত করবেন।
  • শিশুকে মাঝে মাঝেই জড়িয়ে এমনভাবে ধরুন যেন চামড়ার সাথে চামড়ার সংস্পর্শ হয়,

সেই সময় মহান রবের কাছে বিভিন্ন দু’আ করা।

  • ঘুমের সময় যে যিকির রয়েছে তা শব্দ করে বলা যেন শিশুর কানে যায়।
  • খাবার খাওয়ার শুরুতে ও শেষ করার দু’আ সমূহ শব্দ করে বলা যেন শিশুর কানে যায়।
  • পায়খানা/প্রস্রাব করানোর পূর্বে বা পরিষ্কার করার পূর্বে টয়লেট এর দু’আ সমূহ শব্দ করে

শুনিয়ে বলা।

  • পরিধেয় বস্ত্র পরিবর্তন করার সময় শিশুকে শুনিয়ে দু’আ পাঠ করা
  • জন্মের এক ঘন্টার মধ্যে রবের নাম নিয়ে বুকের দুধ খাওয়ান
  • বাচ্চাকে যখন খাড়া করে ধরবেন মাথায় সাপোর্ট দিন
  • প্রায়ই বাচ্চাকে মাসাজ্‌ করুন এবং জড়াজড়ি করে আদর করুন
  • যতবার সম্ভব বাচ্চার সাথে কথা সুন্দর করে বলুন, ভালো কিছু পড়ুন।
  • টিকাদান কার্ড সঠিকভাবে সঠিক সময়ে পূরন করুন।

বর্জনীয় কাজঃ

বাদ্যযন্ত্র বা মিউজিক ও গান( তথাকথিত বাংলা ইংরেজী রাইমস) ছেড়ে শুনাবেন না।

মোবাইল বা টিভির সামনে মিউজিক ধরনের শব্দ থেকে দূরে রাখুন শিশুকে।

মাথার কাছে মোবাইল বা ডিভাইস যা ইন্টারনেট সম্বলিত রাখবেন না।

জন্মের পর ২-৩ মাসঃ সিলেবাস ও করনীয়ঃ

* এই সময়েও সন্তান যখন বিছানায় শুয়ে হাত পা নাড়াবে, তখন কুর’আন তেলাওয়াত ছেড়ে শুনানো।

  • সন্তানের সাথে হাসি মুখে মহান আল্লাহর নাম সমূহ বার বার বলা।
  • সন্তানকে যখন দুলাবেন তখন উপরে উঠানোর সময় আল্লাহু আকবার ও নীচে নামানোর সময়

সুবহানা আল্লাহ শুনিয়ে শুনিয়ে বলুন।

  • সুবহান আল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ ও আল্লাহু আকবার সহ কলেমার যিকিরসমূহ করা।

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ স. বলা।

  • ইসলামিক গান বা ছড়া( অবশ্যই মিউজিক ছাড়া) শুনাতে পারেন।
  • হাসিমুখে আস্তে ধীরে কথা বলা।
  • মায়ের সান্নিধ্যে ঘুমাতে দেয়া

বর্জনীয় কাজঃ  

উত্তেজিত কণ্ঠে কোন কথা বলা বা শুনা থেকে দূরে রাখা।

বাদ্যযন্ত্র বা মিউজিক ও গান( তথাকথিত বাংলা ইংরেজী রাইমস) ছেড়ে শুনাবেন না।

মোবাইল বা টিভির সামনে মিউজিক ধরনের শব্দ থেকে দূরে রাখুন শিশুকে।

মাথার কাছে মোবাইল বা ডিভাইস যা ইন্টারনেট সম্বলিত রাখবেন না।

 

জন্মের ৪-৬ মাস  সিলেবাস ও করনীয়ঃ  

  • এই সময় শিশুকে আল্লাহু আকবার,আলহামদুলিল্লাহ ও সুবহানা আল্লাহ শেখান বার বার বলে।
  • যতবার সম্ভব শিশুর সাথে হাসিমুখে সুন্দর কথা বলুন, শব্দ করে কিছু (হাদীস বা জীবনী) পড়ুন বা

তেলাওয়াত শোনান।

  • হাসি মুখে খেলা করুন। বিছানায় একা হাত পা নাড়তে দিন তাতে ব্যয়ামের কাজ হবে ও ক্ষুধা

লাগবে।

  • গোসলের আগে হালকা মেসেজ করে দিন।
  • বাচ্চাকে একটা পরিস্কার, নিরাপদ সমতলে রাখুন, যেন মুক্তভাবে নড়াচড়া করতে পারে এবং

জিনিষপত্র ধরতে পারে,

  • বাচ্চাকে তুলে ধরুন এমনভাবে, যেন সে আশপাশে কী হচ্ছে দেখতে পায়
  • দিনে রাত্রে, বুকের দুধ খাওয়ানো চালু রাখুন, তার সাথে অন্য খাবারও দিতে শুরু করুন ( ৬থেকে ৮

মাস বয়স পর্যন্ত দিনে দুবার, ৮ থেকে ১২ মাস পর্যন্ত দিনে তিন থেকে চারবার)।

 

জন্মের ৭-৯ মাসঃ সিলেবাস ও করনীয়ঃ   

  • এই সময় ছোট ছোট যিকির শুনিয়ে হাসিমুখে খেলা করা,
  • ছোট ছোট সূরা শুনিয়ে বার বার তেলাওয়াত করা
  • আযানের সময় চুপ করে আযান শুনতে দেয়া ও শুনিয়ে আযানের জবাব দেয়া
  • সন্তানের গোসল খাওয়াসহ সকল কাজেই আনন্দের সাথে মহান আল্লাহর নামে করা যা সন্তানকেও

বুঝতে দিতে হবে।

  • ছোট ছোট বর্ণ বা ব্লক দিয়ে কনস্ট্রাকটিভ খেলায় সময় দিতে হবে মা বা বাবাকেই।
  • এই সময় নিজেদের বিছানাসহ শিশুর বিছানা ফ্লোরে নীচে কিছুদিনের জন্য করে নিতে পারেন যেন

শিশু পড়ে না যায়।

  • ছোটদের নবী কাহিনী থেকে শব্দ করে পড়ে শুনানো, শিশু না বুঝলেও শুনার অভ্যাস গড়ে উঠবে।

বর্জনীয় কাজঃ  

  • উপহার পাওয়া মিউজিকসহ খেলনা দিয়ে খেলা করা।
  • গৃহকর্মীর কাছে একা খেলতে ছেড়ে দেয়া।
  • নিজ কাছের বা দূরের আত্মীয় বিশেষ করে বিপরীত লিংগের কাছে একা ছেড়ে দেয়া।
  • একা ঘরে ঘুমন্ত রেখে চলে যাওয়া(সজাগ হয়ে হামা দিয়ে পড়ে যেতে পারে)

জন্মের ১০-১২ মাসঃ সিলেবাস ও করনীয়ঃ   

 

  • ছবি বা কোন জিনিষের দিকে দেখিয়ে তার নাম বলুন ও তাকেও বলতে দিন এবং সাথে সাথে

আলহামদুলিল্লাহ বলুন।

  • মসজিদ, মক্কা, জায়নামায, ফল ফুল ও প্রানীর ছবি দেখান ও শেখান।
  • শিশুর সাথে প্রায়ই খেলুন ও সুন্দর করে কথা বলুন
  • মাঝে মাঝে খুব অল্প সময় কম্পিউটারে ইসলামিক ছোটদের অনুষ্ঠান মিউজিক ছাড়া নিজে বসে থেকে

দেখান ।

  • পরিবারের সাথে একসাথে টেবিলে প্লেট চামচ দিয়ে/হাতে খেতে বসিয়ে দিন।
  • অতিথিদের সামনে নিজে সাথে নিয়ে যান ও সালাম দিতে শেখান।
  • অতিথির সন্তানদের সাথে মিশতে দেয়া ও লক্ষ্য রাখা।
  • অতিথিদের বা কারো বিদায়ের সময় দরজার কাছে যেয়ে সালাম দিয়ে বিদায় দেয়া শেখান।
  • সালাতের সময় হলে নিজে সালাতে দাঁড়িয়ে পাশেই আরেকটি জায়নামায দেয়া যেন শিশুটি বুঝতে

শেখে।

  • ঘুম,গোসল, খাবারের নির্দিষ্ট সময় করে অভ্যস্থ করুন।
  • খেলনা সাথে নিয়ে গুছানো ও বুঝিয়ে বলা।
  • দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য বাচ্চার আশপাশ যতটা সম্ভব নিরাপদ রাখুন,
  • বুকের দুধ খাওয়ানো চালু রাখুন এবং খেয়াল রাখুন যেন পর্যাপ্ত সকল পুষ্টিখাবার
  • শিশুর সব টীকাকরণ এবং পরামর্শ মত সব মাইক্রোনিউট্রিয়েণ্ট বিকল্প দেওয়া নিশ্চিত করুন
  • যদি শিশুর বিকাশ ধীরে হয় বা কোন অসামর্থ্য থাকে, যেসব সামর্থ্য আছে তাতে জোর দিন এবং

বাড়তি উদ্দীপনা ও বেশী মেলামেশা করুন।

বর্জনীয় কাজঃ  

কোন মানুষ বা ভূত জীনের ভয় দেখিয়ে খাওয়ানো বা ঘুম পাড়ানো।

অনৈসলামিক গান শুনিয়ে ঘুম পাড়ানো।

টিভিতে প্রানী (geography channel)ও কার্টুন দেখায় বসিয়ে রাখা

অন্য শিশুদের সাথে খেলনা শেয়ার করতে না দেয়া।

একাকী বিপরীত লিংগের কাছে ছেড়ে দেয়া আত্মীয় বা অনাত্মীয়

সন্তানের ঘর সাজাতে কোন প্রানীর বা কার্টুনের ছবি দেয়ালে  সাজানো

জন্মের ১-২ বছরঃ সিলেবাস ও করনীয়ঃ 

  • মা বাবার সান্নিধ্যেই বেশী সময় রাখা।
  • নির্দিষ্ট সময়ে যেমন সকাল ও বিকালে যিকিরগুলো নিজে করা ও শিশুকে একটি একটি করে

শেখানোর প্রচেষ্টা চালানো।

  • প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে কুর’আন তেলাওয়াত শুনানো।
  • আযান এর জবাব ও সালাত আদায়ের সময় সাথে নিয়ে করা।
  • সুর দিয়ে তেলাওয়াত করতে উদ্বুদ্ধ করা।
  • আদর দিয়ে সুন্দর করে ডাক দেয়া ও তাকেও অভ্যস্থ করা যেন জবাব প্রতিক্রিয়া যেন সুন্দর হয়।
  • নিজে সুন্দর করে গল্প বলুন বা সুন্দর ঘটনা বলুন।
  • কনষ্ট্রাক্টিভ খেলায় শিশুকে যুক্ত করুন। ছবি আঁকার মাধ্যমে কিছু শেখানো।
  • বাচ্চার সাথে পড়ুন, শিশুকে বই দিন পড়ার জন্য(ভাববে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে অন্যদের মত)
  • বাচ্চাকে বিপজ্জনক জিনিষ এড়িয়ে যেতে শেখান
  • বাচ্চার সাথে সাথে স্বাভাবিকভাবে কথা বলুন, বাচ্চাদের মত করে কথা বলবেন না
  • বুকের দুধ খাওয়ানো চালু রাখুন এবং নিশ্চিত করুন যেন বাচ্চা যথেষ্ট খাবার পায় এবং বাড়ীর অন্য

খাবারও  বাচ্চাকে খেতে উৎসাহ দিন, জোর করে নয় বুঝিয়ে গল্পের ছলে।

  • সাধারণ কিছু নিয়ম এবং যুক্তিসংগত কিছু প্রত্যাশা বলে বুঝতে দিন
  • বাচ্চার করা কাজের জন্য প্রশংসা করুন
  • পরিবারের কিছু নিয়ম আছে সেটা সকলেই পালন করে বুঝতে দিন।

বর্জনীয় কাজঃ  

সাজ গোজের ও আয়নার সামনে থাকা বেশী উৎসাহিত করা

রাগ বা অভিমান করার দিকে খুব বেশী নজর দেয়া

ভালো কাজের পর কোন প্রতিক্রিয়া না দেখানো

খারাপ কাজ করে ফেললে অতিরিক্ত বকা বা প্রতিক্রিয়া দেখানো

ভুল করে ফেললে নির্লিপ্ত থাকা বা কিছু না বলা

শিশুর অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়া বা মেনে নেয়া

অন্যের সামনেই শিশুর ভুলগুলো তুলে ধরা

অন্যের সামনে শিশুর যা নেই তা বলে প্রশংসা করা

জন্মের ২-৩ বছরঃ সিলেবাস ও করনীয়ঃ

  • এই সময় সন্তানকে আরো বেশী কাছে রেখে সময় দিন।
  • কলেমা ও ছোট সূরা শেখানোর পরিকল্পনা নিন।
  • মহান রবের নাম শেখান।
  • যেকোন সুন্দর দৃশ্য বা ছবি দেখে মহান রবের বড়ত্ব তুলে ধরুন।
  • ছোট ছোট দু’আ যেমন খাবারের পূর্বে ও পরে, ঘুমের সময় ইত্যাদি শেখান ও অভ্যস্থ করুন।
  • হাত ধুয়া ও টয়লেট থেকে পরিচ্ছন্ন হওয়ার আদব শেখান
  • নিজের কাপড় চোপড়, জুতা ও খেলনা বই গুছিয়ে রাখানো শেখান।
  • পরিবারের অন্যদের সাথে সহায়ক ভূমিকা রাখাও সাথে নিয়ে উদ্বঅদ্ধ করুন।
  • বিকালে বাইরে খোলা আকাশের নীচে সবুজ ঘাসের সান্নিধ্যে নিয়ে যাওয়া মাঝে মাঝে।

জন্মের ৩-৫ বছরঃ

আমাদের সমাজে অনেক পরিবারেই দেখা যায় শিশুকে ৩ বছর হলেই স্কুলে ভর্তি করার জন্য খুব জোর প্রচেষ্টা চালাতে থাকেন। প্রিস্কুলের পড়াশুনাটা মা বাবা নিজেরাই বাসায় শিশুকে দিলে সবচেয়ে ভালো ও উন্নত শিক্ষা লাভ করতে পারে শিশুটি, এইক্ষেত্রে শিশুর সুন্দর বিকাশ ও মানসিক প্রশান্তি ও পরিবারে নিজেদের মধ্যে বন্ধন আরো গভীর হয়। ৫ বছর পর্যন্ত শিশুটিকে নিজ হাতে পরিবারের সুন্দর পরিবেশে শিক্ষা দিলে সবচেয়ে উত্তম। তবে অনেক ক্ষেত্রেই চাকরিজীবী হওয়ার কারনে বা অল্প শিক্ষিত বা অসুস্থতার কারনে সন্তানের শিক্ষা দিতে অপারগ পরিবার পূর্বেই স্কুলে দিয়ে থাকেন, এইক্ষেত্রে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে যেন একটি আদর্শ সুন্দর ও ঘরোয়া পরিবেশে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা যায়। মূলত বাবা মা নিজেরাই যদি স্কুল কলেজের পড়াশুনার গাইড দিতে পারেন সেটা হবে সন্তানের জন্য অনেক বড় নি’আমত এবং এই শিশুরা অন্যরকম ভালো হয়ে গড়ে উঠে তা বাস্তবতার আলোকেই বুঝা যায়।

৩-৫ বছরের সন্তানদের জন্য বাংলা ইংরেজী পড়ার সাথে সাথে দীনী সিলেবাসঃ

মনে রাখতে হবে বাংলা ইংরেজী শেখাতে যেয়েও এমন জিনিষের সাহায্য নেয়া যাবে না যা শরীয়ত অনুমোদন করে না। যেমন মিউজিক সহ অন্য জাতির অনুসরনীয় রাইমস বা গল্প বা ছবি।

বয়স ও সামর্থ অনুসারে শেখান ও বাস্তবে আমল করান।

  • কলেমা তাইয়েবা ও কলেমা শাহাদাত
  • মহান আল্লাহর পরিচয়
  • মহান আল্লাহর নাম-১০টি অর্থসহ
  • তাওহিদ ও সুন্নাত উদাহরন দিয়ে বুঝানো
  • শিরক ও বিদ’আত উদাহরন দিয়ে বুঝানো
  • আল্লাহর হক ও বান্দাহর হক কি বুঝানো?
  • ছোট সূরা অর্থ সহঃ ফাতিহা, ইখলাস, কাউসার ফালাক ও নাস, ফীল, কুরাইশ,তাকাসুর,নসর,লাহাব,যিলযাল,আয়াতুল কুরসী,সুরা বাকারার শেষ ২ আয়াত,
  • ছোট ছোট দু’আঃ

প্রাত্যহিক জীবনের জন্য ও মহান রবের কাছে চাওয়া

  • গল্পের মত করে শুনান—

রাসূল স.এর শিশুবেলা থেকে কিশোর জীবন

চার খলিফাসহ বিভিন্ন সাহসী ও বিরত্ব্মূলক ঘটনা

উম্মুল মু’মিনীনদের কথা ও ঘটনা বিশেষ করে খাদীজা ও আয়েশা রা.এর জীবনী।

হযরত আদম আ.এর কথা

হযরত ইবরাহীম আ. ও ইসমাইল আ. এর কথা / কুরবানীর ঘটনা

জুম’আ ও দুই ঈদের কথা

জান্নাত ও জাহান্নামসহ ইবলিশের কথাও শুনান

কুর’আনের বিভিন্ন ঘটনা- গুহাবাসী, মুসা আ.ও বনী ইসরাইল, পিপড়া ও সুলায়মান আ. মৌ্মাছির কথা,

উটের কথা, মাকড়সার কথা

  • মৌলিক ইবাদাত প্রশিক্ষন (৫টি ভিত্তি সম্পর্কে জ্ঞান)

সহিহভাবে অযু

পবিত্রতা বিশেষ করে ইস্তিঞ্জা থেকে পবিত্রতা

সালাত ও সালাতে পঠিত বিষয় সমূহ সহিহ করে অর্থ বুঝিয়ে শেখা ও এর শিক্ষা জানানো।

সঠিকভাবে  হাত ধোয়া

  • আরবী বর্নমালাসহ আরবী মাসের নাম, সংখ্যা ওয়াহেদ-আশারা
  • জান্নাত ও জাহান্নামের নাম সমূহ শেখান
  • সহীহ তেলাওয়াত শেখানো

 

ঈমান

বর্তমানে সন্তান প্রতিপালন একটি অন্যতম চ্যলেঞ্জিং ভূমিকা। তবে মহান রবের সাহায্যে পিতা মাতার সঠিক ভূমিকায় সহজ হয়ে যেতে পারে এই কাজ।

সাহাবীদের অবস্থা দেখুন। তাঁরা বুদ্ধির উন্মেষের সঙ্গে সঙ্গেই শিশুকে তাওহীদ শেখাতেন। ঈমানের শিক্ষাকে তাঁরা এলেম ও আমলের শিক্ষার ওপর অগ্রাধিকার দিতেন। কারণ, এলেম ও আমলেরও আগে ঈমান। জুনদুব বিন আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

‘আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে থাকতাম। তখন আমরা টগবগে যুবা ছিলাম। সে সময় আমরা ঈমান শিখি আমাদের কুরআন শেখার আগে। এরপর আমরা কুরআন শিখি। এতে করে আমাদের ঈমান বেড়ে যায় বহুগুণে।’ (সহীহ ইবন মাজা : ৬১)

এ জন্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদেরকে কুরআন শেখানোর আগে ঈমান শিক্ষা দেন। আর ঈমান হলো- হাদীসে যেমন এসেছে : আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

‘ঈমানের সত্তরের কিছু বেশি অথবা (বর্ণনাকারীর মতে তিনি বলেছেন) ষাটের কিছু বেশি শাখা রয়েছে। এসবের সর্বোচ্চটি হলো, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলা এবং সর্বনিম্নটি হলো পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করা। আর লজ্জা ঈমানের একটি অংশ।’ (মুসলিম : ১৬২; মুসনাদ আহমদ : ৯৩৫০)

ঈমান কাকে বলে?  ঈমানের শাখা-প্রশাখা এবং রুকন কয়টি ও কী কী?

ঈমানের আভিধানিক অর্থ হলো: স্বীকার করা। আর পারিভাষিক অর্থ হলো:  মুখের স্বীকৃতি (ঘোষণা), অন্তরের বিশ্বাস এবং অংগ-প্রত্যংগ দিয়ে বাস্তবে কাজ করা।

সৎ কাজের মাধ্যমে ঈমান বৃদ্ধি পায়, আর পাপ কাজ করলে ঈমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ঈমানের রুকন ছয়টি: পূর্ণ ঈমান আনয়ন করা (১) আল্লাহ (২) আল্লাহর ফেরেশতাগণ (৩) আল্লাহর কিতাবসমূহ (৪) তাঁর রাসূলগণ (৫) আখেরাত (পরকাল) দিবস এবং (৬) তাকদীরের ভালো মন্দের প্রতি। এর সমর্থনে দলীল হলো, আল্লাহর বাণী:

‘‘সৎ কর্ম শুধু এ নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিম দিকে মুখ করবে, বরং সৎ কাজ হলো এ যে ঈমান আনবে আল্লাহর উপর, আখেরাত দিবসের উপর, ফিরিশতাদের উপর, আসমানী কিতাবের উপর এবং নবী-রাসুলগণের উপর’’। (সূরা আল-বাকারা: ১৭৭)

আল্লাহ আরো বলেন:

‘‘আমরা প্রত্যেক বস্তুকে নির্ধারণ অনুসারে সৃষ্টি করেছি’’। (সূরা আল ক্বামার: ৪৯)

হাদীস-এক.উমার ইবনে খাত্তাব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে বসে ছিলাম। তখন হঠাৎ একজন লোক আসল। লোকটির পোশাক ছিল সাদা ধবধবে। তার কেশগুলো ছিল কাল কুচকুচে। সফর করে এসেছে এমন কোন আলামত তার মধ্যে দেখা যাচ্ছিল না। আবার আমাদের মধ্যে তাকে কেহ চেনেও না। সে সোজা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে গিয়ে তার দু হাটু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দু হাটুর সাথে লাগিয়ে, নিজ হাত দুটো রানের উপর রেখে বসে গেল। এবং বলল, “হে মুহাম্মাদ! ইসলাম সম্পর্কে আমাকে বলুন।”

তিনি উত্তরে বললেন, “ইসলাম হল, তুমি স্বাক্ষ্য দেবে যে, আল্লাহ ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই আর মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল। সালাত কায়েম করবে। যাকাত প্রদান করবে। রমজান মাসে সিয়াম পালন করবে। আর যদি মক্কায় যেতে সামর্থ রাখো তাহলে হজ্জ করবে।” লোকটি বলল, “আপনি সত্য বলেছেন।” আমরা আশ্চর্য হলাম যে, সে নিজেই প্রশ্ন করছে আবার নিজেই তা সত্যায়ন করছে।

তারপর লোকটি বলল, “আমাকে ঈমান সম্পর্কে বলুন।”

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তুমি আল্লাহর প্রতি, তার ফেরেশতাদের প্রতি, তার কিতাবসমূহের প্রতি, তার রাসূলদের প্রতি ও শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে। আরো বিশ্বাস করবে তাকদীরের ভাল ও মন্দ (আল্লাহর পক্ষ থেকে) নির্ধারিত।”

লোকটি বলল, “আমাকে ইহসান সম্পর্কে বলুন।”

তিনি বললেন, “এমনভাবে আল্লাহ তাআলার ইবাদত করবে যেন তুমি তাকে দেখতে পাচ্ছ। যদি তুমি তাকে দেখতে না-ও পাও তাহলে তিনি নিশ্চয় তোমাকে দেখতে পাচ্ছেন।”

লোকটি বলল, “আমাকে কেয়ামত সম্পর্কে অবহিত করুন।” তিনি বললেন, “যাকে প্রশ্ন করা হয়েছে সে প্রশ্নকারীর চেয়ে বেশী জানে না।”

লোকটি বলল, “তাহলে আমাকে কেয়ামতের আলামত সম্পর্কে বলুন।” তিনি বললেন, “দাসী তার মুনিবকে প্রসব করবে। আর খালি পা, উলঙ্গ, দরিদ্র ছাগলের রাখালদের তুমি সুউচ্চ প্রাসাদে বসে অহংকার করতে দেখবে।”

এরপর লোকটি চলে গেল। আমি বেশ কিছুক্ষণ বসে থাকলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, “হে উমার! তুমি কি জান এ প্রশ্নকারী কে?” আমি বললাম, “আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ভাল জানেন।” তিনি বললেন, “সে হল জিবরীল। সে তোমাদের কাছে এসেছিলো তোমাদের ধর্ম শেখাতে।” মুসলিম

ইসলাম ও ঈমানের পরিচয় সম্পর্কে এটি সবচেয়ে বিশুদ্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ হাদীস। হাদীসটি ‘হাদীসে জিবরীল’ নামে পরিচিত।

আহমদ বিন হাম্বল রহ. আব্দুল্লাহ বিন উমর রা. সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

‘নূহ আলাইহিস সালামের যখন মৃত্যু উপস্থিত হলো, তিনি তখন তার পুত্রের উদ্দেশে বললেন, ‘আমি তোমাকে সংক্ষেপে অসিয়ত করছি। তোমাকে দুটি বিষয়ের নির্দেশ দিচ্ছি এবং দুটি বিষয় থেকে নিষেধ করছি। তোমাকে নির্দেশ দিচ্ছি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-এর। কেননা সাত আকাশ আর সাত যমীনকে যদি এক পাল্লায় রাখা হয় আর ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ কে রাখা হয় আরেক পাল্লায় তবে সাত আসমান ও যমীনের চেয়ে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-র পাল্লাই ভারী হবে। যদি সাত আসমান আর সাত যমীন কোনো হেঁয়ালীপূর্ণ বৃত্ত ধারণ করে তবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ তা ভেদ করে চলে যাবে। (আল-আদাবুল মুফরাদ : ৫৪৮; মুসনাদ আহমদ : ৬৫৮৩)

উদ্দেশ্য হলো, সন্তান যখন আধো আধো ভাষায় অস্ফূটকণ্ঠে কথা বলতে শুরু করে, প্রথম যখন তার বাকপ্রতিভার অভিষেক ঘটে, তখন ঈমানের শাখাগুলোর মধ্যে প্রথম ও সর্বোচ্চটি তথা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-এর মাধ্যমেই তা করার চেষ্টা করা উচিত।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন সঠিক মা’বুদ বা উপাস্য নেই, আর আমি আল্লাহর রাসূল। যে বান্দা এ দুটো বিষয়ে সন্দেহ-সংশয়মুক্ত অবস্থায় আল্লাহর সাক্ষাতে হাজির হবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। মুসলিম: (১/৫৬), হাদিস নং-২৭০।

কালেমা

কালেমা তাইয়েবার অর্থ জানা। এ কালেমার দুটো অংশ রয়েছে তা পরিপূর্ণভাবে জানা। সে দুটো অংশ হলো:

১। কোন হক মা’বুদ নেই, আল্লাহ ছাড়া (অর্থাৎ তিনিই শুধু মা’বুদ)- এটাই দীন যা সকল সময়ই একই।

২।  হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর প্রেরিত রাসূল।  এটা শরীয়ত বা বিধি-বিধান যা এই উম্মতের জন্য।

সহিহ হাদীসের আলোকে ৫ কলেমার কথা জানা যায়নি। কলেমা শেখাতে হবে নিম্নের দুটো।

কালেমা তাইয়েবা:

আরবি উচ্চারণঃ       لآ اِلَهَ اِلّا اللّهُ مُحَمَّدٌ رَسُوُل اللّهِ

বাংলা উচ্চারণঃ    লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ।

অর্থঃ আল্লাহ এক আর কোন মাবুদ নেই। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর প্রেরিত রাসূল।

Pronunciation: La ‘ilaa-ha ‘il-lal-laa-hu mu-ham-ma-dur ra-soo-lul-laah.

Meaning: There is none worthy of worship besides Allah and Muhammad (Sallallaho-Alaihe-Wa-Sallam) is Allah’s Messenger.

নিঃসন্দেহে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ কালেমাটিই হচ্ছে দ্বীনের মূল। এর সাথে ‘মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল’ সাক্ষ্য প্রদান সংযুক্ত হয়ে কালেমাটি ইসলামের প্রথম রোকন। যেমনটি আবদুল্লাহ বিন ওমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

“ইসলাম পাঁচটি ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত:

(১) এই সাক্ষ্য দেয়া যে,আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন মা’বূদ নেই এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর রাসূল

(২) নামায প্রতিষ্ঠা করা

(৩) যাকাত আদায় করা

(৪) আল্লাহর ঘরের হজ্জ পালন করা

(৫) রামাযানের রোযা রাখা।

বিদ্বানগণ কালেমার শর্ত উল্লেখ করেছেন ৮টি। যথা:

(১) ইলম

(২) ইয়াকীন

(৩) ইখলাস

(৪) সত্যায়ন

(৫) ভালোবাসা

(৬) বশ্যতা স্বীকার

(৭) গ্রহণ করা

অষ্টম আরেকটি হচ্ছে:

(৮) আল্লাহ ব্যতীত সব কিছুকে অস্বীকার করা।

শর্তগুলোর সংক্ষেপ ব্যাখ্যা:

(১) ইলম: অর্থাৎ এমনভাবে কালেমার অর্থ জানা যাতে অজ্ঞতা বিদূরিত হয়। পূর্বে আলোচনা হয়েছে যে, এই কালেমার অর্থ হল: আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোন মাবুদ বা উপাস্য নেই। অতএব আল্লাহ ব্যতীত মানুষ আর যা কিছুর উপাসনা করে তা সবই বাতিল।

(২) ইয়াকীন বা দৃঢ় বিশ্বাস যা সন্দেহের বিপরীত: অতএব এই কালেমা পাঠকারীর অন্তরে এ দৃঢ় বিশ্বাস থাকবে যে, আল্লাহ সুবহানাহুই প্রকৃত মাবূদ ও উপাস্য।

(৩) ইখলাস: অর্থাৎ বান্দা তার যাবতীয় ইবাদত খালেস তথা নির্ভেজাল ভাবে তার পালনকর্তা আল্লাহর জন্যই সম্পন্ন করবে। সে যদি ইবাদতের কোন কিছু আল্লাহ ব্যতীত কারো উদ্দেশ্যে করে যেমন নবী বা ওলী বা ফেরেশতা বা মূর্তি বা জিন ইত্যাদি তবে সে আল্লাহর সাথে শিরক করল এবং ইখলাসের শর্তকে নষ্ট করে ফেলল।

(৪) সত্যায়ন: অর্থাৎ এমনভাবে এই কালেমা বলবে যে, সে তাতে সত্যবাদী থাকবে। তার অন্তর হবে মুখের কথার মোতাবেক। মুখের কথা হবে অন্তরের মোতাবেক। শুধু যদি মুখে উচ্চারণ করে আর অন্তর তার অর্থ ও তাৎপর্যের বিশ্বাস না করে, তবে কোন লাভ হবে না। ফলে অন্যান্য মুনাফেকদের মত সেও কাফেরে পরিণত হবে।

(৫) ভালোবাসা: অর্থাৎ আল্লার প্রতি ভালোবাসা রেখে এটা উচ্চারণ করবে। কিন্তু আল্লাহর প্রতি ভালবাসা না রেখে যদি এই কালেমা পাঠ করে, তবে কাফেরই থেকে যাবে। ইসলামে প্রবেশ করা হবে না। তবে তার হুকুম হবে অন্যান্য মুনাফেকদের ন্যায়।

এর প্রমাণ হচ্ছে, আল্লাহ বলেন,

قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ

“আপনি বলে দিন, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাসো, তবে আমার অনুসরণ কর, তবে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন।” (আল ইমরানঃ ৩১) আল্লাহ সুবহানাহু আরও বলেন,

وَمِنَ النَّاسِ مَن يَتَّخِذُ مِن دُونِ اللّهِ أَندَاداً يُحِبُّونَهُمْ كَحُبِّ اللّهِ وَالَّذِينَ آمَنُواْ أَشَدُّ حُبّاً لِّلّهِ

“কিছু লোক আল্লাহ্‌ ছাড়া অন্যদেরকে তাঁর সমকক্ষ ও প্রতিপক্ষ দাঁড় করায় এবং তাদেরকে এমন ভালোবাসে যেমন আল্লাহ‌কে ভালোবাসা উচিত অথচ ঈমানদাররা সবচেয়ে বেশী ভালোবাসে আল্লাহ‌কে।” (বাকারাঃ ১৬৫)

(৬) বশ্যতা স্বীকার ও আত্মসমর্পণ: এই কালেমার তাৎপর্যকে মেনে নেয়া। অর্থাৎ এককভাবে আল্লাহর ইবাদত করা এবং তাঁর শরীয়তের কাছে আত্মসমর্পণ করা। তার প্রতি ঈমান আনবে এবং এ বিশ্বাস রাখবে যে এটাই প্রকৃত হক ও সত্য। যদি এই কালেমা মুখে উচ্চারণ করে কিন্তু আল্লাহর ইবাদত এককভাবে না করে, তাঁর শরীয়তের কাছে আত্মসমর্পণ না করে; বরং তা থেকে অহংকার প্রদর্শন করে, তবে সে হবে এমন মুসলিম যেমন ছিল ইবলিস ও তার দলবল।

(৭) কবুল বা গ্রহণ করা: এই কালেমা দ্বারা যা প্রমাণ হয়, যেমন খালেস ভাবে এক আল্লাহর ইবাদত করা এবং তিনি ব্যতীত সব ধরণের ইবাদতকে বর্জন করা। এই নীতিকেই আঁকড়ে থাকা ও তাতে সন্তুষ্ট থাকা।

(৮) আল্লাহ ব্যতীত যার ইবাদত করা হয় তার সবকিছুকে অস্বীকার করা: অর্থাৎ গাইরুল্লাহর ইবাদত থেকে নিজেকে মুক্ত করা এবং তা যে বাতিল তা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করা। যেমন আল্লাহ বলেন,

فَمَنْ يَكْفُرْ بِالطَّاغُوتِ وَيُؤْمِنْ بِاللَّهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَى لَا انْفِصَامَ لَهَا وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ

“যে কেউ তাগুতকে অস্বীকার করে আল্লাহর ওপর ঈমান আনে, সে এমন একটি মজবুত অবলম্বন আঁকড়ে ধরে, যা কখনো ছিন্ন হয় না। আর আল্লাহ্‌ (যাকে সে অবলম্বন হিসেবে আঁকড়ে ধরেছে) সবকিছু শোনেন ও জানেন।” (বাকারাঃ ২৫৬)  (মূল: শাইখ আল্লামা আবদুল আযীয বিন বায (রহঃ))

কালেমা শাহাদাত

আরবি উচ্চারণঃ    اشْهَدُ انْ لّآ اِلهَ اِلَّا اللّهُ وَحْدَه لَا شَرِيْكَ لَه، وَ اَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّدً اعَبْدُهوَرَسُولُه

বাংলা উচ্চারণঃ আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্‌দাহু লা শারীকালাহু, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু।

অর্থঃ আমি সাক্ষ্য প্রদান করছি যে, আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্য কোন মাবুদ নেই। তিনি এক। তাঁহার কোন অংশীদার নেই, এবং আমি আরও সাক্ষ্য প্রদান করছি যে, নিশ্চয়ই হযরত মুহাম্মদ (সঃ) আল্লাহর প্রেরিত বান্দা ও রাসূল।

Pronunciation: ‘Ash-hadu ‘an laa’i-laa-ha ‘il-lal-laa-hu wa ‘ash-ha-du ‘anna mu-ham-ma-dan ‘ab-du-hoo wa ra-soo-luh.

Meaning: I testify that there is none worthy of worship besides Allah And I testify that Muhammad (Sallallaho-Alaihe-Wa-Sallam) is Allah’s worshipper and messenger.

 

মহান আল্লাহর পরিচয়

মহান আল্লাহর পরিচয় তিঁনি নিজেই কুর’আনে জানিয়ে দিয়েছেন এইভাবে-

﴿بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ

قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ﴾

﴿اللَّهُ الصَّمَدُ﴾

﴿لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ﴾

﴿وَلَمْ يَكُن لَّهُ كُفُوًا أَحَدٌ﴾

বলো,  তিনি আল্লাহ, একক৷

আল্লাহ কারোর ওপর নির্ভরশীল নন এবং সবাই তাঁর ওপর নির্ভরশীল ৷

তাঁর কোন সন্তান নেই এবং তিঁনি কারোর সন্তান নন৷

এবং তাঁর সমতুল্য কেউ নেই৷ (সূরা ইখলাস)

১। তোমার রব (প্রতিপালক) কে?

আমার প্রতিপালক আল্লাহ; যিনি আমাকে ও সমস্ত পৃথিবীকে তাঁর বিশেষ নিয়ামতসমূহ দ্বারা লালন-পালন করেন। তিনিই আমার মা‘বুদ (উপাস্য) তিনি ব্যতীত আমার আর কোন মা‘বুদ নেই। এর সমর্থনে আল্লাহর বাণী হলো:

ٱلۡحَمۡدُ لِلَّهِ رَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٢

‘‘সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহরই জন্য যিনি সমগ্র বিশ্বের প্রতিপালক’’। (সূরা আল-ফাতিহা: ১)

অতএব আল্লাহ ছাড়া সব কিছুই সৃষ্টজগত এবং আমিও সেই সৃষ্টজগতের একটি অংশ মাত্র।

২।  কীভাবে আল্লাহকে চেনা (জানা) যায়?

(১) আল্লাহর সৃষ্টিসমূহকে পর্যবেক্ষণ-পর্যালোচনা করলেই আল্লাহকে চেনা ও জানা সহজ হবে। সৃষ্টজগতে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব, আধিপত্য, সৃষ্টিতত্ত্ব (কৌশল) নিদর্শন এবং অনুগ্রহসমূহ দেখে চিন্তা ভাবনা করলেই আল্লাহ সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা যাবে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা‘আলা বলেন:

‘তারা কি লক্ষ্য করে না, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সার্বভৌম কর্তৃত্ব সম্পর্কে এবং আল্লাহ যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তা সম্পর্কে’’। (সূরা আল-আ‘রাফ: ১৮৫)

অনুরূপভাবে মহান আল্লাহ সূরা আলে ইমরানের ১৯০ নং আয়াতে বলেন:

‘‘আকাশমণ্ডলী, পৃথিবী ও দিবা-রাত্রির পরিবর্তনের মধ্যে অবশ্যই অনেক নিদর্শন বিদ্যমান আছে বোধশক্তিসম্পন্ন লোকদের জন্য’’।

(২) আল্লাহর অহী বা শরীয়তী বিধি ও বিধান সম্পর্কিত আয়াতসমূহ অনুধাবন করার মাধ্যমে আল্লাহকে চেনা যাবে। যেমন; মহান আল্লাহ বলেন:

‘‘তবে কি তারা কুরআন নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করে না? যদি তা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নিকট থেকে আসত তবে তারা এতে অনেক অসঙ্গতি পেত’’ (সূরা আন-নিসা: ৮২)

(৩) মুমিন ব্যক্তি জেনে ও বুঝে অন্তর দিয়ে আল্লাহকে গ্রহণ ও স্মরণ করবে অতঃপর এমনভাবে আমল ও ইবাদাত করবে যেন সে আল্লাহকে  দেখছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহসান সম্পর্কে বলেন:

‘‘তুমি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদাত ইবাদাত করবে যেন তুমি আল্লাহকে দেখছো, আর যদি মনে কর তুমি আল্লাহকে দেখছ না, কিন্তু আল্লাহ অবশ্যই তোমাকে দেখছেন’’। মুখতাছার আল বুখারী লিয-যাবীদি, পৃষ্ঠা: ২১, নং ৪৭

৩। রব অর্থ কি?

রব দ্বারা উদ্দেশ্য মালিক, সৃষ্টিকর্তা, রিযিক্বদাতা, নিয়ন্ত্রণকারী, আকৃতিদানকারী ও প্রতিপালনকারী। তাঁর অনুমতি ব্যতীত কিছুই হয় না এবং তাঁর অনুমতি ও ইচ্ছা ব্যতীত কোনো কিছু সামান্যতম নড়াচড়াও করে না।

৪। আল্লাহ অর্থ কি?

মহান প্রভু, সবকিছুর সৃষ্টিকর্তার নাম হচ্ছে আল্লাহ্‌। “আল্লাহ্‌” এই নামটি হচ্ছে মহান রবের সকল নামের মধ্যে সবচাইতে মর্যাদাপূর্ণ। যাবতীয় ইবাদত এবং উপাসনা পাওয়ার যোগ্য একমাত্র সত্ত্বা-ই হচ্ছেন আল্লাহ। মহব্বত ও তাযীম মিশ্রিত হৃদয়ে ইলাহ ও মাবুদ হিসেবে যার প্রতি সৃষ্টিকুল ধাবিত হয়।

“তিনিই আল্লাহ্‌, যিনি ছাড়া লা ইলাহা ইল্লা হুয়া (আর কেউ নাই উপাসনা করার), দৃশ্যমান এবং অদৃশ্যমান জগতের সব ব্যাপারে যিনি সম্যক অবগত। তিনি সবচাইতে দয়ালু, সবচাইতে ক্ষমাশীল। তিনিই আল্লাহ্‌, যিনি ছাড়া লা ইলাহা ইল্লা হুয়া, যিনি সবকিছুর অধিপতি, পূতঃপবিত্র, সবকিছুর উর্ধে, নিরাপত্তা প্রদানকারী, অভিভাবক, সর্বশক্তিমান, সমুচ্চ, গৌরবান্বিত, সকল প্রশংসা তাঁর জন্য, তারা তাঁর সাথে যা কিছু শরিক করে সেগুলা থেকে তিনি অনেক উর্ধে। তিনি আল্লাহ্‌, যিনি শূন্য থেকে সৃষ্টি শুরু করেছেন, সবকিছু তৈরি করেছেন, আকৃতি দিয়েছেন। সবচাইতে ভাল নামগুলি তাঁর জন্যই প্রযোজ্য। মহাকাশ এবং পৃথিবীর মধ্যে যা কিছু আছে সবকিছু তাঁর মহত্ত্ব বর্ণনা করে, এবং তিনিই সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞ।” [৫৯:২২-২৪]

 ৫। আল্লাহ কোথায়?

আমার প্রভু আল্লাহ উর্ধ্বে, আরশের উপরে আছেন। মহান আল্লাহ নিজের সম্পর্কে বলেন,

“পরম দয়াময় আল্লাহ আরশের উপর উঠেছেন” (ত্বা-হাঃ ৫)।

সত্যিকার অর্থেই আল্লাহ্‌র সত্ত্বার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ এমনভাবে তিনি আরশের উপর উঠেছেন; তাঁর আরশের উপর উঠার বিষয়টিকে কোনোরূপ পরিবর্তন-পরিবর্ধন করা যাবে না এবং এটির কল্পিত কোনো আকৃতি যেমন স্থির করা যাবে না, তেমনি কোনো সৃষ্টির সাথে এর কোনোরূপ সাদৃশ্য বিধানও করা চলবে না।

অতএব, আপনি কোনো অবস্থাতেই বলতে পারেন না যে, আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান। কেননা সর্বোচ্চে অবস্থান মহান আল্লাহ্‌র একটি প্রশংসনীয় বিশেষণ। আর সে কারণেই তো আমরা সেজদাতে বলে থাকি, ‘আমার প্রভু সর্বোচ্চ’। ইমামগণ একমত পোষণ করেছেন যে, মহান আল্লাহ যমীনে অবতরণ করেন না। যে ব্যক্তি এই আক্বীদা পোষণ করে যে, আল্লাহ তাঁর কোনো সৃষ্টির মধ্যে প্রবিষ্ট হন, সে ব্যক্তির কুফরীতে নিপতিত হওয়ার ব্যাপারেও তাঁরা একমত পোষণ করেছেন। বরং মহান আল্লাহ দুনিয়ার নিকটতম শেষ আসমানে এমনভাবে অবতরণ করেন, যেমন অবতরণ করা তাঁর মহত্ত্বের সাথে মানানসই। রাতের শেষাংশে আল্লাহ্‌র শেষ আসমানে অবতরণ এবং অবস্থানের ধরণ সম্পর্কে কেউ কিছুই জানে না। এই সময় তিনি বলেন,

«هَلْ مِنْ دَاعٍ فَأَسْتَجِيبَ لَهُ»

“কোনো প্রার্থনাকারী আছে কি? আমি তার প্রার্থনা মঞ্জুর করব” (বুখারী ও মুসলিম)।

কেউ প্রশ্ন করতে পারে, তাহলে নিম্নোক্ত আয়াতটির অর্থ কি?

“তিনি তোমাদের সাথে আছেন, তোমরা যেখানেই থাক” (হাদীদঃ ৪)।

তোমরা যা কর, আল্লাহ তা দেখেন। জবাবে বলব, এখানে সবার সঙ্গে থাকার অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ্‌র ইলম এবং শক্তি। কারণ তাঁর পবিত্র সত্ত্বা সর্বোচ্চ আরশে আছে; কিন্তু তাঁর জ্ঞান এবং শক্তি সবার সাথে আছে। কোনো কিছুই তাঁর শক্তি এবং জানার বাইরে নেই।

৬। মহান আল্লাহর সিফাত সমূহঃ

‘আর আল্লাহর জন্যই রয়েছে সুন্দরতম নামসমূহ। সুতরাং তোমরা তাঁকে সেসব নামেই ডাক।  সূরা আরাফ : ১৮০

‘নিশ্চয় আল্লাহ তাআলার নিরানব্বই -এক কম একশত- নাম আছে। যে ব্যক্তি এগুলো সংরক্ষন করবে (অর্থাৎ এগুলো সম্পর্কে জানবে, বুঝবে, বিশ্বাস করবে এবং এর চাহিদানুযায়ী আমল করবে) সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। বুখারী : ৭৩৯২

মহান রবের সুন্দর নামসমূহের কিছু তুলে ধরা হলোঃ

ক্রমিক নং    নাম        বাংলা                অর্থ

১.           الرَّحْمَنُ আর-রহ়মান    সবচাইতে দয়ালু, কল্যাণময়, করুণাময়

২.           الرَّحِيمُ   আর-রহ়ীম           সবচাইতে ক্ষমাশীল

৩.           الْمَلِكُ    আল-মালিক          অধিপতি

৪.           الْقُدُّوسُ   আল-ক্বুদ্দূস          পূতঃপবিত্র, নিখুঁত

৫.           السَّلَامُ    আস-সালাম        শান্তি এবং নিরাপত্তার উৎস, ত্রাণকর্তা

৬.           الْمُؤْمِنُ   আল-মু’মিন        জামিনদার, সত্য ঘোষণাকারী

৭.           الْمُهَيْمِنُ  আল-মুহাইমিন অভিভাবক, প্রতিপালক

৮.           الْعَزِيزُ   আল-’আযীয     সর্বশক্তিমান, সবচেয়ে সম্মানিত

৯.           الْجَبَّارُ    আল-জাব্বার     দুর্নিবার, সমুচ্চ, মহিমান্বিত

১০.         الْمُتَكَبِّرُ    আল-মুতাকাব্বির        সর্বশ্রেষ্ঠ, গৌরবান্বিত

১১.          الْخَالِقُ   আল-খলিক্ব      সৃষ্টিকর্তা, (শূন্য থেকে)

১২          الْبَارِئُ    আল-বারি’        বিবর্ধনকারী, নির্মাণকর্তা, পরিকল্পনাকারী

১৩.         الرَّزَّاقُ    আর-রযযাক্ব    প্রদানকারী

১৪.   الْفَتَّاحُ     আল-ফাত্তাহ়           প্রারম্ভকারী, বিজয়দানকারী

১৫.   الْعَلِيمُ          আল-’আলীম     সর্বজ্ঞানী, সর্বদর্শী

১৬.    الْحَيُّ     আল-হ়াইই   চিরঞ্জীব, যার কোন শেষ নাই

১৭.   الْقَيُّومُ   আল-ক্বইয়ূম    অভিভাবক, জীবিকানির্বাহ প্রদানকারী

১৮.    الْحَقُّ    আল-হাক্ক্ব     প্রকৃত সত্য,

১৯.    الْأَوَّلُ আল-আউয়াল   সর্বপ্রথম, যার কোন শুরু নাই

২০.    الْآخِرُ আল-আখির    সর্বশেষ, যার কোন শেষ নাই

 

বিবিধ যা জানা অত্যাবশ্যক

তাওহীদ কাকে বলে? উহা কত প্রকার ও কি কি?

তাওহীদ শব্দটি (وحد) ক্রিয়ামূল থেকে উৎপত্তি হয়েছে। এর আভিধানিক অর্থ কোন জিনিসকে একক হিসাবে নির্ধারণ করা। ‘না’ বাচক ও ‘হ্যাঁ’ বাচক উক্তি ব্যতীত এটির বাস্তবায়ন হওয়া সম্ভব নয়।

অর্থাৎ একককৃত বস্ত ব্যতীত অন্য বস্ত হতে কোন বিধানকে অস্বীকার করে একককৃত বস্তর জন্য তা সাব্যস্ত করা। উদাহরণ স্বরূপ আমরা বলব, “আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন মা’বূদ নেই” একথার সাক্ষ্য দেয়া ব্যতীত কোন ব্যক্তির তাওহীদ পূর্ণ হবে না। যে ব্যক্তি এই সাক্ষ্য প্রদান করবে, সে আল্লাহ ছাড়া অন্যান্য সকল বস্ত হতে উলুহিয়্যাতকে (ইবাদত) অস্বীকার করে শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য তা সাব্যস্ত করবে। মুসলিম বিদ্বানগণ তাওহীদকে তিনভাগে বিভক্ত করেছেন।

১)      তাওহীদুর্‌ রুবূবীয়্যাহ

২)      তাওহীদুল উলুহীয়্যাহ

৩)      তাওহীদুল আসমা অস্‌ সিফাত

শির্ক কত প্রকার ও কী কী?

শির্ক দুই প্রকার:

(১) শির্কে আকবার বা বড় শির্ক: আল্লাহর ইবাদাতে অন্য কিছুকেই শরীক বা অংশীদার মনে করে সেগুলোর কাছে দো‘আ করা, কিছু কামনা করা, ভয় করা, আল্লাহর মতই সে সবকে ভালোবাসা অথবা অন্য যে কোনো প্রকারের ইবাদাতে আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে সংযোগ করা। এ জাতীয় শির্কে যারা জড়িত হবে তাদের জন্যে জান্নাত হারাম হয়ে যাবে এবং জাহান্নামই হবে তাদের চিরস্থায়ী বাসস্থান।

(২) শির্কে আসগর বা ছোট শির্ক: সব ধরনের কথা ও কাজ যা বড় শির্কের দিকে নিয়ে যায়। যেমন: আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে হলফ বা কসম করা, সামান্য লোক দেখানো ইবাদাত করা এবং খালেসভাবে আল্লাহর জন্য ইবাদাত সম্পন্ন না করা। আল-জামে আল-ফরিদ, পৃষ্ঠা:২৭।

  দ্বীন কী?

দ্বীন হলো জীবন ব্যবস্থা।  দ্বীন হলো আল্লাহর মনোনীত আল-ইসলাম।

ইসলামের পরিচয় কী?

 একত্ববাদের সাথে একমাত্র আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করা। আল্লাহর নিরংকুশ আনুগত্য করা এবং শির্ক ও তার অনুসারীদের থেকে দূরে থাকা।

দ্বীনের স্তর কয়টি ও কী কী?

দ্বীনের স্তর তিনটি

(১) ইসলাম

(২) ঈমান

(৩) ইহসান (উত্তম পন্থা অবলম্বন ও সদ্বব্যবহার)।

 ইসলামের রুকন (স্তম্ভ) কয়টি ও কী কী?

ইসলামের রুকন পাঁচটি;

(ক) ঘোষণা দেওয়া যে, আল্লাহ ব্যতীত আর কোনো সত্য ইলাহ (মা‘বুদ) নেই; আর এ ঘোষণা দেওয়া যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দাহ ও রাসূল।

(খ) সালাত (নামায) কায়েম করা

(গ) যাকাত আদায় করা

(ঘ) রমযান মাসে সওম (রোযা) পালন করা

(ঙ) আল্লাহর ঘরে গিয়ে হজ্জ আদায় করা।

ইহসান কাকে বলে?

ইহসান শব্দের অর্থ হল ‘সুন্দর করা’। পরিভাষায় আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগী সুন্দরভাবে আদায় ও তার সৃষ্টিকুলের জন্য কল্যাণকর ও সুন্দর আচরণ-কে ইহসান বলে।

‘‘আল্লাহর ইবাদাত করার সময় মনে করতে হবে যে,  তুমি আল্লাহকে দেখছো, আর যদি তুমি দেখতে না পাও তবে নিশ্চয়ই তিনি তোমাকে দেখছেন’’। (সহীহ আল-বুখারী)

মহান আল্লাহ বলেন:

“নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদের সাথে আছেন যারা তাকওয়া অবলম্বন করে এবং যারা মুহসিন (সর্বোত্তমভাবে তাদের কর্ম করে)’’। (সূরা আন-নাহল: ১২৮)

 নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরিচয় কী?

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা‘আলা বলেন:

‘‘মুহাম্মাদ তোমাদের কোনো পুরুষের পিতা নন; বরং তিনি আল্লাহর রাসূল এবং তিনি শেষ নবী। আর আল্লাহ সব বিষয়ে সর্বজ্ঞ’’। (সূরা আল-আহযাব: ৪০)

তিনি হলেন, মুহাম্মাদ ইবন আব্দুল্লাহ ইবন আব্দুল-মুত্তালিব, ইবন হাশিম আল-কুরাশি আল-আরাবী ইসমাঈল ইবন ইবরাহীম আল- খলীলের বংশধর। আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর দরুদ ও সালাম বর্ষিত হউক।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুওয়ত পেয়েছেন ৪০ বৎসর বয়সে, আর নবুওয়তের পর ২৩ বছর জীবিত ছিলেন। অর্থাৎ ৬৩ বৎসর বয়সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মারা যান। এ ২৩ বৎসর কেটেছে নবী ও রাসূল হিসেবে। নবুওয়তের সূচনা হয়:

‘‘পড় তোমার সৃষ্টিকর্তা রবের নামে’’ (সূরা আল-আলাক্ব:১) এর মাধ্যমে।

আর রেসালতের (আল্লাহর পথে কাফেরদেরকে আহ্বানের) দায়িত্ব পালনের আদেশ পান সূরা আল-মুদ্দাস্‌সিরের প্রথম ৬ আয়াতের  মাধ্যমে। সেখানে আল্লাহ তাঁকে শির্কের ব্যাপারে সতর্ককারী এবং তাওহীদী (একত্ববাদ) দাওয়াতের পরিচালক বানিয়ে দেন। মহান আল্লাহ বলেন:

(১) হে বস্ত্রাবৃত (২) উঠুন, সতর্ক করুন (৩) এবং আপনার রবের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করুন (৪) আপনার পোষাক-পরিচ্ছেদ পবিত্র করুন (৫) অপবিত্রতাকে বর্জন করুন (৬) আর দয়া প্রদর্শন না করে আরও বেশি করে কাজ করুন। (সূরা আল-মুদ্দাসসির: ১-৬)

মহান আল্লাহ আরো বলেন:

‘‘হে নবী! আমরা আপনাকে প্রেরণ করেছি সাক্ষীপ্রদানকারী, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে  এবং আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাঁর দিকে আহ্বানকারী, এক উজ্জ্বল প্রদীপরূপে’’। (সূরা আল-আহযাব: ৪৫-৪৬)

আল্লাহ রসূলগণকে কেন পাঠিয়েছেন?  তাঁদের মধ্যে প্রথম এবং শেষ রাসূল কে?

আল্লাহ দুনিয়াবাসীদের কাছে রাসূলগণকে সুসংবাদ প্রদান ও সতর্ক করার জন্যে প্রেরণ করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন: ‘‘প্রেরিত রসূলগণ সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী। রাসূল প্রেরণের পর যেন মানুষ আল্লাহর প্রতি কোনো অভিযোগ আরোপ করার অবকাশ না পায়’’। (সূরা আন-নিসা: ১৬৫)

আর প্রথম রাসূল নূহ আলাইহিস সালাম এবং শেষ রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। মহামহিয়ান আল্লাহ বলেন:

“নিশ্চয় আমরা আপনার প্রতি অহী প্রেরণ করেছি যেমন করে নূহ ও তার পরবর্তী নবীগণের নিকট অহী প্রেরণ করেছিলাম’’। (আন-নিসা: ১৬৩)

অনুরূপভাবে শাফা‘আত সংক্রান্ত সহীহ হাদীসে বর্ণিত আছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

‘‘কেয়ামত দিবসে মানবমণ্ডলী নূহ আলাইহিস সালাম এর নিকট এসে তাকে বলবে আপনি প্রথম রাসূল যাকে পৃথিবীবাসীদের কাছে পাঠানো হয়েছিল’’। (বুখারীঃ ৩৩৪০, মুসলিমঃ১৯৪)

সুন্নাহ কি? বিদয়াত কি?

সুন্নাহ শব্দের অর্থ চলার পথ, কর্মের নীতি ও পদ্ধতি। যে পন্থা ও রীতি মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবলম্বন করতেন তাই সুন্নাহ। কুরআনে রাসূলের সর্বোত্তম আদর্শ বলতে সুন্নাহকেই বুঝানো হয়েছে। হাদিসের অপর নাম রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কথা, কাজ ও সমর্থনকে হাদিস বলে।

ওয়াহী দুই প্রকার: এক- ওয়াহী মাতলু – কুরআন মাজীদ।

দুই- ওয়াহী গাইরে মাতলু। – সুন্নাহ বা হাদিস।

সূন্নাহ বা হাদিসও আল্লাহ তা’আলার পক্ষ হতে প্রেরিত ওহী।

হাসান বিন আত্বিয়া বলেন, জিবরীল (আঃ) যেরূপ কুরআন নিয়ে মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট অবতীর্ণ হতেন তেমনি হাদিস নিয়েও অবতীর্ণ হতেন। অতঃপর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে কুরআনের ন্যায় হাদিসও শিক্ষা দিতেন।

“(তাদের প্রেরণ করেছি) স্পষ্ট প্রমাণাদি ও কিতাবসমূহ এবং তোমার প্রতি নাযিল করেছি কুরআন, যাতে তুমি মানুষের জন্য স্পষ্ট করে দিতে পার, যা তাদের প্রতি নাযিল হয়েছে। আর যাতে তারা চিন্তা করে”। সূরা নাহল: ৪৪

“রাসূল তোমাদের যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাক”। সূরা হাসর: ৭

কুর’আনের ব্যখ্যাই হলো হাদীস। যেমন কুর’আন বলেছে সালাত কায়েম করো, হাদীস থেকে জানা যায় কিভাবে কায়েম করতে হবে।

মালিক ইবনু আনাস (রহঃ) হতে মুরসালরূপে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন: “আমি তোমাদের মধ্যে দু’টি জিনিস রেখে যাচ্ছি। যতক্ষণ তোমরা সে দু’টি জিনিস আঁকড়ে থাকবে, পথভ্রষ্ট হবে না: আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের হাদিস”। মুয়াত্তা ইমাম মালেক: ৩৩৩৮

“আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের উপর আমার নেয়ামত সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে কবুল করে নিলাম”। সূরা মায়েদা: ৩

আর যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন গ্রহণ করতে চাইবে কক্ষনো তার সেই দ্বীন কবুল করা হবে না এবং আখিরাতে সে ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। সূরা আলে ইমরান: ৮৫

কুর’আন ও হাদীসের এতো নির্দেশনার পর  মানুষ নিজেদের মনগড়া পথে ইবাদাতই হলো বিদ’আত।

“আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমাদের এ দ্বীনে নতুন কিছু উদ্ভাবন করেছে যা এতে নেই, তা প্রত্যাখ্যাত”।বুখারি, হাদিস: ২৪৭৯, মুসলিম, হাদিস: ১৭১৮

জাবির (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, “রাসূলূল্লাহ  (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন: অতঃপর অবশ্য অবশ্যই সর্বোত্তম বাণী হচ্ছে আল্লাহ তা’আলার কিতাব। আর সর্বোচ্চ পথ হচ্ছে মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর পথ। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট হল দ্বীনে নতুন জিনিস সৃষ্টি করা। এরূপ সব নতুন জিনিসই গুমরাহী (পথভ্রষ্ট)”।মুসলিম, হাদিস: ৮৬৭

আরবী বারো মাসের নামঃ

মুহররম

সফর

রবিউল আউয়াল

রবিউস সানি

জমাদিউল আউয়াল

জমাদিউস সানি

রজব

শা’বান

রমজান

শাওয়াল

জ্বিলকদ

জ্বিলহজ্জ

আরবী সংখ্যাঃ

واحد (١) ওয়াহিদ ১

اثنان (٢) ইসনান ২

ثلاثة (٣) সালাসাহ ৩

اربعة (٤) আরবাআহ ৪

(٥) خمسة খামসাহ ৫

ستة (٦) সিত্তাহ ৬

سبعة (٧) সাবআহ ৭

ثمانية (٨) সামানিয়াহ ৮

تسعة (٩) তিসআহ ৯

(١٠) عشرة আশারাহ ১০

জান্নাত ও জাহান্নামের নাম সমূহঃ

জান্নাত

جنة এক বচন, বহুবচনে  جنات, অর্থ ঘন সন্নিবেশিত বাগান, বাগ-বাগিচা। আরবীতে বাগানকে روضة (রওদ্বাতুন) এবং حديقة (হাদীকাতুন) ও বলা হয়। কিন্তু جنات (জান্নাত) শব্দটি আল্লাহ রব্বুল ‘আলামীনের নিজস্ব একটি পরিভাষা। পারিভাষিক অর্থে জান্নাত বলতে এমন স্থানকে বোঝায়, যা আল্লাহ রব্বুল ‘আলামীন তাঁর অনুগত বান্দাদের জন্য নির্দিষ্ট করে রেখেছেন। যা দিগন্ত বিস্তৃত নানা রকম ফুলে ফুলে সুশোভিত সুরম্য অট্টালিকা সম্বলিত মনোমুগ্ধকর বাগান; যার পাশ দিয়ে প্রবাহমান বিভিন্ন ধরনের নদী-নালা ও ঝর্ণাধারা। যেখানে চির বসন্ত বিরাজমান।

“আমি আমার নেক বান্দাদের জন্য এমন নেয়ামত তৈরি করে রেখেছি, যা কোনো চক্ষু দেখে নি, কোনো কান শোনে নি এবং এমনকি কোনো মানুষ তা কল্পনাও করতে পারে না। এরপর তিনি বলেন, যদি তোমরা চাও, তাহলে নিম্নোক্ত আয়াতটি পড়ো। যার অর্থ হলো: “কেউ জানে না, তার জন্য কি কি নয়নাভিরাম বিনিময় লুকায়িত আছে।” (বুখারী, ৩২৪৪; মুসলিম, ২৮২৪)

‘কেউ জানে না তার জন্য কৃতকর্মের কি কি নয়নাভিরাম বিনিময় লুকায়িত আছে।’’ (সূরা সাজদাহ: ১৭)

জান্নাত মোট আট প্রকারঃ

আট প্রকার জান্নাতের কথাই আল-কুরআন ও সহীহ হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রকারগুলো হচ্ছে :

1)      জান্নাতুল ফিরদাউস।

2)      জান্নাতুন্ নায়ীম।

3)      জান্নাতুল মাওয়া।

4)      জান্নাতুল আদন।

5)      জান্নাতু দারুস সালাম।

6)      জান্নাতুদ দারুল খুলদ।

7)      জান্নাতু দারুল মাকাম।

8)      জান্নাতু দারুল কারার।

জাহান্নাম

চির দুঃখ-কষ্ট-পেরেশানী, লাঞ্ছনা-গঞ্জনা, অপমান, বিড়ম্বনা, দুর্ভাগ্য, লজ্জা-শরম, ক্ষুধা-পিপাসা, আগুন, অশান্তি, হতাশ-নিরাশা, চীৎকার-কান্নাকাটি, শাস্তি, অভিশাপ, আযাব-গযব ও অসন্তোষের স্থান হলো জাহান্নাম।

“আর তুমি কি জানো, জাহান্নাম কি? তা শান্তিতে থাকতে দেয় না আবার ছেড়েও দেয় না। চামড়া ঝলসে দেয়। উনিশজন ফেরেশতা তার প্রহরী হবে।’’ (সূরা মুদ্দাসসির: ২৭-৩০)

‘‘নিশ্চয় জাহান্নাম একটি ঘাঁটি। আল্লাহদ্রোহীদের জন্য আশ্রয়স্থল। সেখানে তারা যুগ যুগ ধরে অবস্থান করবে।’’ (সূরা নাবা: ২১-২৩)

“তোমাদের দুনিয়ার আগুন, জাহান্নামের আগুনের ৭০ ভাগের ১ ভাগ। তাঁকে প্রশ্ন করা হলো, এটা কি যথেষ্ট নয়? তিনি উত্তরে বলেন: এর সাথে আরো ৬৯ গুন যোগ করা হবে এবং প্রত্যেকটির গুণ এ আগুনের মতো।” (বুখারী, ৩২৬৫ ও মুসলিম, ২৮৪৩)

মহান আল্লাহ বলেন,

﴿ لَهَا سَبۡعَةُ أَبۡوَٰبٖ لِّكُلِّ بَابٖ مِّنۡهُمۡ جُزۡءٞ مَّقۡسُومٌ ٤٤ ﴾ [الحجر: ٤٤]

‘‘জাহান্নামের সাতটি দরজা (স্তর) আছে। প্রত্যেকটি দরজার জন্য ভিন্ন ভিন্ন দল নির্ধারিত হয়েছে।’’ (সূরা আল-হিজর: ৪)

অর্থাৎ জাহান্নাম হচ্ছে পরলোকের এমন একটি বিশাল এলাকা যেখানে বিভিন্ন ধরনের শাস্তির জন্য ভিন্ন ভিন্ন এলাকা নির্ধারিত আছে।

সেগুলোকে প্রধানত: সাত ভাগে ভাগ করা হয়েছে: যথা:

1)      হাবিয়া।

2)      জাহীম।

3)      সাকার।

4)      লাযা।

5)      সাঈর।

6)      হুতামাহ্ ।

7)      জাহান্নাম।

প্রাত্যহিক জীবনে যিকরঃ

  ১। কোন কাজ শুরুতে-বিসমিল্লাহ

২। কাজ শেষ হলে- الْحَمْدُ لِلَّهِ» (আলহামদু লিল্লাহ) “সকল প্রশংসা আল্লাহরই

৩। পড়াশুনা শুরুর আগে বিসমিল্লাহ বলা এবং সাথে পড়তে অভ্যাস করা

رَّبِّ زِدْنِي عِلْمًا﴾

রব্বী যীদনী ঈলমা

হে আমার পরওয়ারদিগার! আমাকে আরো জ্ঞান দাও। সূরা ত্বাহা-১১৪

رَبِّ اشْرَحْ لِي صَدْرِي

﴿وَيَسِّرْ لِي أَمْرِي﴾

﴿وَاحْلُلْ عُقْدَةً مِّن لِّسَانِي

﴿يَفْقَهُوا قَوْلِي

রাব্বিশ রাহলী ছোয়াদরী ওয়া ইয়াসসিরলি আমরী ওয়াহলুল উক্বদাতাম মিললিসানী ইয়াফ ক্বাহুকাওলী।

“হে আমার রব!  আমার বুক প্রশস্ত করে দাও৷আমার কাজ আমার জন্য সহজ করে দাও  এবং আমার জিভের জড়তা দূর করে দাও, যাতে লোকেরা আমার কথা বুঝতে পারে৷ সূরা ত্বাহাঃ২৫-২৮

খাওয়ার আদবঃ

দুই হাত কবজি পর্যন্ত ভালোভাবে ধুয়ে নিবে।

ডান হাত দিয়ে খাবার খাবে, হাতের তালুতে যেন খাবার না লাগে।

খাওয়ার পূর্বে দো

“যখন তোমাদের কেউ আহার শুরু করে তখন সে যেনো বলে,

«بِسْمِ اللَّهِ» (বিসমিল্লাহ) “আল্লাহর নামে।” আর শুরুতে বলতে ভুলে গেলে যেন বলে,

«بسمِ اللَّهِ فِي أَوَّلِهِ وَآخِرِهِ»

(বিস্‌মিল্লাহি ফী আওওয়ালিহী ওয়া আখিরিহী)।

“এর শুরু ও শেষ আল্লাহ্‌র নামে।”আবূ দাঊদ ৩/৩৪৭, নং ৩৭৬৭

আহার শেষ করার পর দো

«الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَطْعَمَنِي هَذَا، وَرَزَقَنِيهِ، مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِنِّي وَلاَ قُوَّةٍ».

(আলহামদু লিল্লা-হিল্লাযী আত‘আমানী হা-যা ওয়া রাযাকানীহি মিন গাইরি হাউলিম মিন্নী ওয়ালা কুওয়াতিন)।

“সকল প্রশংসা আল্লাহ্‌র জন্য, যিনি আমাকে এ আহার করালেন এবং এ রিযিক দিলেন যাতে ছিল না আমার পক্ষ থেকে কোনো উপায়, ছিল না কোনো শক্তি-সামর্থ্য।” আবূ দাউদ, নং ৪০২৫;

 দুধ পান করার সময়:

«اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيهِ وَزِدْنَا مِنْهُ».

(আল্লা-হুম্মা বারিক লানা ফীহি ওয়াযিদনা মিনহু)।

“হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে এই খাদ্যে বরকত দিন এবং আমাদেরকে তা থেকে আরও বেশি দিন।”তিরমিযী ৫/৫০৬, নং ৩৪৫৫।

 ঘুমানোর আদব ও যিক্‌রসমূহ

  • দাঁত মিসওয়াক সহ অযু করা
  • বিছানা ঝেড়ে নিবে।
  • সূরা ইখলাস, সূরা আল ফালাক, সূরা আন নাস-৩বার করে
  • আয়াতুল কুরসী
  • (সুবহা-নাল্লাহ, (৩৩ বার) আলহামদুলিল্লা-হ (৩৩ বার) আল্লা-হু আকবার (৩৪ বার)-)
  • ডান হাত গালের নীচে রেখে নিচের দু’আ পড়ে ঘুম দিবে

«بِاسْمِكَ اللَّهُمَّ أَمُوتُ وَأَحْيَا».

(বিস্‌মিকাল্লা-হুম্মা আমূতু ওয়া আহ্ইয়া)।

“হে আল্লাহ ! আপনার নাম নিয়েই আমি মরছি (ঘুমাচ্ছি) এবং আপনার নাম নিয়েই জীবিত (জাগ্রত) হবো।” বুখারী, (ফাতহুল বারীসহ) ১১/১১৩, নং ৬৩২৪;

দুই হাতের তালু একত্রে মিলিয়ে সূরাগুলো (ইখলাস, ফালাক,নাস) পড়ে তাতে ফুঁ দিবে তারপর দুই হাতের তালু দ্বারা দেহের যতোটা অংশ সম্ভব মাসেহ করবে। মাসেহ আরম্ভ করবে তার মাথা, মুখমণ্ডল ও দেহের সামনের দিক থেকে। (এভাবে ৩ বার করবে।)

বুখারী, (ফাতহুল বারীসহ) ৯/৬২, নং ৫০১৭; মুসলিম ৪/১৭২৩, নং ২১৯২।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: ‘যে কেউ যখন রাতে আপন বিছানায় যাবে এবং ‘আয়াতুল কুরসী’ পড়বে, তখন সে রাতের পুরো সময় আল্লাহর পক্ষ থেকে তার জন্য হেফাযতকারী থাকবে; আর সকাল হওয়া পর্যন্ত শয়তান তার নিকটেও আসতে পারবে না’।বুখারী, (ফাতহুল বারীসহ), ৪/৪৮৭, নং ২৩১১।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী এবং ফাতেমাকে বলেন:  আমি কি তোমাদেরকে এমন কিছু বলে দিবো না যা তোমাদের জন্য খাদেম অপেক্ষাও উত্তম হবে? যখন তোমরা তোমাদের বিছানায় যাবে, তখন তোমরা দু’জনে ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদু লিল্লাহ, এবং ৩৪ বার বলবে, যা তা খাদেম অপেক্ষাও তোমাদের জন্য উত্তম হবে’’।

«سُبْحَانَ اللَّهِ (ثلاثاً وثلاثين) وَالْحَمْدُ لِلَّهِ (ثلاثاً وثلاثين) وَاللَّهُ أَكْبَرُ (أربعاً وثلاثينَ»

(সুবহা-নাল্লাহ, (৩৩ বার) আলহামদুলিল্লা-হ (৩৩ বার) আল্লা-হু আকবার (৩৪ বার)-)আল্লাহ অতি-পবিত্র (৩৩ বার), সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য (৩৩ বার), আল্লাহ অতি-মহান (৩৪ বার)। বুখারী, (ফাতহুল বারীসহ) ৭/৭১, নং ৩৭০৫;

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ঘুমানোর ইচ্ছা করতেন তখন তাঁর ডান হাত তাঁর গালের নীচে রাখতেন, তারপর এ দো‘আটি বলতেন।”

«اللَّهُمَّ قِنِي عَذَابَكَ يَوْمَ تَبْعَثُ عِبَادَكَ».

(আল্লা-হুম্মা ক্বিনী ‘আযা-বাকা ইয়াওমা তাব‘আছু ‘ইবা-দাকা)।

“হে আল্লাহ! আমাকে আপনার আযাব থেকে রক্ষা করুন, যেদিন আপনি আপনার বান্দাদেরকে পুনর্জীবিত করবেন।” তিরমিযী:৩৩৯৮

ঘুমন্ত অবস্থায় ভয় এবং একাকিত্বের অস্বস্তিতে পড়ার দো

«أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ غَضَبِهِ وَعِقَابِهِ، وَشَرِّ عِبَادِهِ، وَمِنْ هَمَزَاتِ الشَّياطِينِ وَأَنْ يَحْضُرُونِ».

(আ‘ঊযু বিকালিমা-তিল্লাহিত্তা-ম্মাতি মিন্ গাদ্বাবিহি ওয়া ইক্বা-বিহি ওয়া শাররি ‘ইবা-দিহি ওয়ামিন হামাযা-তিশ্‌শায়া-ত্বীনি ওয়া আন ইয়াহ্‌দুরূন)।

“আমি আশ্রয় চাই আল্লাহ্‌র পরিপূর্ণ কালামসমূহের অসীলায় তাঁর ক্রোধ থেকে, তাঁর শাস্তি থেকে, তাঁর বান্দাদের অনিষ্ট থেকে, শয়তানদের কুমন্ত্রণা থেকে এবং তাদের উপস্থিতি থেকে।”আবূ দাঊদ ৪/১২, নং ৩৮৯৩

খারাপ স্বপ্ন বা দুঃস্বপ্ন দেখে যা করবে

(১) “তার বাম দিকে হাল্কা থুতু ফেলবে।” (৩ বার) মুসলিম, ৪/১৭৭২, নং ২২৬১।

(২) “শয়তান থেকে এবং যা দেখেছে তার অনিষ্ট থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইবে প্রার্থনা করবে।” (৩ বার) মুসলিম, ৪/১৭৭২, ১৭৭৩, নং ২২৬১, ২২৬২।

(৩) “কাউকে এ ব্যাপারে কিছু বলবে না।” মুসলিম, ৪/১৭৭২, নং ২২৬১ ও নং ২২৬৩।

(৪) “অতঃপর যে পার্শ্বে সে ঘুমিয়েছিল তা পরিবর্তন করবে।” মুসলিম, ৪/১৭৭৩, নং ২২৬১।

(৫) “যদি ইচ্ছা করে তবে উঠে সালাত আদায় করবে।”  মুসলিম ৪/১৭৭৩, নং ২২৬৩।

ঘুম থেকে জেগে উঠার সময়ের যিক্‌রসমূহ

الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِيْ أَحْيَانَا بَعْدَ مَا أَمَاتَنَا، وَإِلَيْهِ النُّشُوْرُ».

(আলহামদু লিল্লা-হিল্লাযী আহ্ইয়া-না- বা‘দা মা- আমা-তানা- ওয়া ইলাইহিন্ নুশূর)

হামদ-প্রশংসা আল্লাহ্‌র জন্য, যিনি (নিদ্রারূপ) মৃত্যুর পর আমাদেরকে জীবিত করলেন, আর তাঁরই নিকট সকলের পুনরুত্থান”[ বুখারী ফাতহুল বারী ১১/১১৩, নং ৬৩১৪

বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময়ের যিক্‌র

«بِسْمِ اللَّهِ، تَوَكَّلْتُ عَلَى اللَّهِ، وَلَاَ حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ».

(বিসমিল্লাহি, তাওয়াককালতু ‘আলাল্লা-হি, ওয়ালা হাওয়া ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ)।

“আল্লাহ্‌র নামে (বের হচ্ছি)। আল্লাহর উপর ভরসা করলাম। আর আল্লাহর সাহায্য ছাড়া (পাপ কাজ থেকে দূরে থাকার) কোনো উপায় এবং (সৎকাজ করার) কোনো শক্তি কারো নেই”। সহীহুত তিরমিযী, ৩/১৫১।

ঘরে প্রবেশের সময় যিক্‌র

«بِسْمِ اللَّهِ وَلَجْنَا، وَبِسْمِ اللَّهِ خَرَجْنَا، وَعَلَى اللَّهِ رَبِّنَا تَوَكَّلْنَا»

(বিসমিল্লাহি ওয়ালাজনা,  ওয়াবিস্‌মিল্লাহি খারাজনা,  ওয়া ‘আলাল্লাহি রাব্বিনা তাওয়াক্কালনা)

“আল্লাহ্‌র নামে আমরা প্রবেশ করলাম, আল্লাহ্‌র নামেই আমরা বের হলাম এবং আমাদের রব আল্লাহ্‌র উপরই আমরা ভরসা করলাম”।

অতঃপর ঘরের লোকজনকে সালাম দিবে।আবূ দাউদ ৪/৩২৫, ৫০৯৬।

সফরে চলার সময় তাকবীর ও তাসবীহ

আমরা যখন উঁচুতে আরোহণ করতাম তখন ‘আল্লাহু আকবার’ বলতাম, আর যখন নীচের দিকে নামতাম তখন ‘সুবহানাল্লাহ’ বলতাম।”বুখারী, (ফাতহুল বারীসহ) ৬/১৩৫, নং ২৯৯৩।

তাহলে লিফটে বা সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠার সময় ও নীচে নামার সময় একইভাবে আমল করা।

সম্ভাসন জানানোঃ (কারো সাথে দেখা হলে)

সালাম বিনিময় ও হাসি দিয়ে কথা বলা

ইমরান ইবনে হুসাইন (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একটি লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে এভাবে সালাম করল ‘আসসালামু আলাইকুম’ আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জবাব দিলেন। অতঃপর লোকটি বসে গেলে তিনি বললেন, ‘‘ওর জন্য দশটি নেকী।’’ তারপর দ্বিতীয় ব্যক্তি এসে ‘আসসালামু আলাইকুম অরহমাতুল্লাহ’ বলে সালাম পেশ করল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সালামের উত্তর দিলেন এবং লোকটি বসলে তিনি বললেন, ‘‘ওর জন্য বিশটি নেকী।’’ তারপর আর একজন এসে ‘আসসালামু আলাইকুম অরাহমাতুল্লাহি অবারাকাতুহ’ বলে সালাম দিল। তিনি তার জবাব দিলেন। অতঃপর সে বসলে তিনি বললেন, ‘‘ওর জন্য ত্রিশটি নেকী।’’

(আবূ দাউদ, তিরমিযী হাসান সূত্রে)(তিরমিযী ২৬৮৯, আবূ দাউদ ৫১৯৫, আহমাদ ১৯৪৪৬, দারেমী ২৬৪০)

যখন তোমাদের সালাম দেয়া হয় তখন তোমরা এর চেয়ে উত্তম পন্থায় সালামের উত্তর দাও কিংবা (অন্তত) ততটুকুই বলে দাও। সূরা নিসা: ৮৬

পায়খানায় প্রবেশের আদব ও দু

বিসমিল্লাহ বলে টয়লেটে প্রবেশ করা।

টয়লেটে প্রথমে বাম পা দিয়ে প্রবেশ করা। কেননা টয়লেটের ভেতরের চেয়ে বাহির উত্তম।

আলী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন,

আদম সন্তানের লজ্জাস্থান এবং জিনের মাঝে পর্দা হ’ল যখন সে টয়লেটে প্রবেশ করবে, তখন বলবে ‘বিসমিল্লাহ’। ইবনু মাজাহ, হা/২৯৭; তিরমিযী, হা/৬০৬; নাছিরুদ্দীন আলবানী হাদীছটিকে ছহীহ বলেছেন।

জুতা পরিধান করার সময় ডান পা দিয়ে শুরু করতে বলেছেন এবং খোলার সময় বাম পা দিয়ে শুরু করতে বলেছেন। শারহুল মুমতে আলা যাদিল মুসতাকনে ১/১০৮; ফিক্বহুল মুয়াস্সার, পৃঃ ১০

«[بِسْمِ اللَّهِ] اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْخُبْثِ وَالْخَبائِث».

([বিসমিল্লাহি] আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযু বিকা মিনাল খুব্‌সি ওয়াল খাবা-ইসি)

“[আল্লাহ্‌র নামে।] হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট অপবিত্র নর জিন্ ও নারী জিন্ থেকে আশ্রয় চাই”। বুখারী ১/৪৫, নং ১৪২

পায়খানা থেকে বের হওয়ার দো

ডান পা দিয়ে বের হওয়া ও বলা

«غُفْرَانَكَ».

(গুফরা-নাকা)

“আমি আপনার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।”শাইখ আলবানী সহীহ সুনান আবি দাউদে ১/১৯ একে সহীহ বলেছেন।

অযুর পূর্বে যিক্‌র

«بِسْمِ اللَّهِ».

(বিস্‌মিল্লাহ্)

‘আল্লাহ্‌র নামে’। আবূ দাউদ, নং ১০১

 অযু শেষ করার পর যিক্‌র

أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّداً عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ..».

(আশ্‌হাদু আল্লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্‌দাহু লা- শারীকা লাহূ ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আব্দুহূ ওয়া রাসূলুহূ)

“আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল”। মুসলিম ১/২০৯, নং ২৩৪।

«اللَّهُمَّ اجْعَلْنِي مِنَ التَّوَّابِينَ وَاجْعَلْنِي مِنَ الْمُتَطَهِّرِينَ».

(আল্লা-হুম্মাজ‘আলনী মিনাত্ তাওয়াবীনা ওয়াজ‘আলনী মিনাল মুতাতাহ্‌হিরীন)

“হে আল্লাহ! আপনি আমাকে তাওবাকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদেরও অন্তর্ভুক্ত করুন।”সহীহুত তিরমিযী, ১/১৮।

আজানের সময় করনীয়ঃ আবদুল্লাহ ইবন ইউসুফ (র.) _ _ _ আবূ সায়ীধ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যখন তোমরা আযান শুনতে পাও তখন মুআযযিন যা বলে তোমরাও তার অনুরুপ বলবে। [সহীহ বুখারী শরীফ – ই ফা : হাদিস/৫৮৪, তাওহীদ পাবলিকেশন : হাদিস/৬১১]

আযানের জবাব কিভাবে দিতে হবে :

আযানের বাক্য       – – – – –     আযানের জবাব

১. আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার — আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার—২ বার

২. আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ —আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ — ২ বার

৩. আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ –আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ ২ বার

৪. হাইয়া ‘আলাছ ছালা-হ — লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াত্তা ইল্লা বিল্লাহ — ২ বার

৫. হাইয়া ‘আলাল ফালা-হ — লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াত্তা ইল্লা বিল্লাহ — ২ বার

৬. আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার — আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার — ১ বার

৭. লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ —লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ — ১ বার

৮. ফজরের আযানের সময় “হাইয়া ‘আলাল ফালা-হ”  – এর পরে “আছছালা-তু খায়রুম মিনান নাঊম” — “আছছালা-তু খায়রুম মিনান নাঊম” — ২ বার (সহীহ আবু দাউদ – ই ফা : হাদিস/৫২৭ এর আলোকে]

আযানের জবাব শেষে সহীহ দু সমূহঃ

১. আযানের জওয়াব দান শেষে প্রথমে দরূদ পড়বে। অতঃপর আযানের দো‘আ পড়বে।

২. আযানের দু’আ- (আরবী দেখে)

اللَّهُمَّ رَبَّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ، وَالصَّلاَةِ الْقَائِمَةِ، آتِ مُحَمَّداً الْوَسِيلَةَ وَالْفَضِيلَةَ، وَابْعَثْهُ مَقَامَاً مَحمُوداً الَّذِي وَعَدْتَهُ،

“আল্লাহুম্মা রব্বা হা-যিহিদ দা’ওয়াতিত তা-ম্মাহ ওয়াস্বলা-তির ক্ব-য়িমাহ, আ-তি মুহাম্মাদানিল ওয়াসীলাতা ওয়াল ফায্বীলাহ, ওয়াব’আছহু মাক্ব-মাম মাহ:মূদানিল্লাযী ওয়া’আত্তাহ।

৩। সা’দ ইবনু আবূ ওয়াককাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তি মুয়াযযিনের আযান শুনে বলবে, “ওয়া আনা আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু ওয়া আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু রাযীতু বিল্লাহি রাব্বান ওয়া বিল-ইসলামি দীনান ওয়া বি মুহাম্মাদিন রাসূলান” আল্লাহ তা’আলা তার গুনাহ ক্ষমা করে দেন। [ সহীহ আত তিরমিযি হাদিস/২১০, সহীহ ইবনু মাজাহ হাদিস/৭২১]

 মসজিদে প্রবেশের দো

ডান পা দিয়ে ঢুকবে এবং বলবে,

«أَعُوذُ بِاللَّهِ العَظِيمِ، وَبِوَجْهِهِ الْكَرِيمِ، وَسُلْطَانِهِ الْقَدِيمِ، مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ» [بِسْمِ اللَّهِ، وَالصَّلَاةُ] [وَالسَّلَامُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ] «اللَّهُمَّ افْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ».

(আ‘ঊযু বিল্লা-হিল ‘আযীম, ওয়া বিওয়াজহিহিল কারীম, ওয়াসুলতা-নিহিল ক্বদীম, মিনাশ শাইত্বা-নির রাজীম।

[বিসমিল্লা-হি ওয়াসসালাতু] [ওয়াসসালা-মু ‘আলা রাসূলিল্লা-হি], আল্লা-হুম্মাফ্‌তাহ লী আবওয়া-বা রাহ্‌মাতিক)।

“আমি মহান আল্লাহ্‌র কাছে তাঁর সম্মানিত চেহারা ও প্রাচীন ক্ষমতার ওসীলায় বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।”[সহীহুল জামে‘ ৪৫৯১।

আল্লাহ্‌র নামে (প্রবেশ করছি), সালাত] [ও সালাম আল্লাহ্‌র রাসূলের উপর।] “হে আল্লাহ! আপনি আমার জন্য আপনার রহমতের দরজাসমূহ খুলে দিন।”

আবূ দাউদ ১/১২৬; নং ৪৬৫;

 মসজিদ থেকে বের হওয়ার দো

বাম পা দিয়ে শুরু করবে এবং বলবে,

«بِسْمِ اللَّهِ وَالصّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ، اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِك، اللَّهُمَّ اعْصِمْنِي مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ».

(বিস্‌মিল্লা-হি ওয়াস্‌সালা-তু ওয়াস্‌সালা-মু ‘আলা রাসূলিল্লাহ, আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা মিন ফাদ্বলিকা, আল্লা-হুম্মা আ‘সিমনি মিনাশ শাইত্বানির রাজীম।)

“আল্লাহ্‌র নামে (বের হচ্ছি)। আল্লাহ্‌র রাসুলের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। হে আল্লাহ! আপনি আমার গুনাসমূহ মাফ করে দিন এবং আমার জন্য আপনার দয়ার দরজাগুলো খুলে দিন। হে আল্লাহ, আমাকে বিতাড়িত শয়তান থেকে হেফাযত করুন”। ইবন মাজাহ্‌ ১/১২৯।

আনন্দায়ক কোনো বিষয় হলে-

«الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي بِنِعْمَتِهِ تَتِمُّ الصَّالِحَاتُ»

(আলহামদু লিল্লা-হিল্লাযী বিনি‘মাতিহী তাতিম্মুস সা-লিহা-ত)।

“আল্লাহ্‌র জন্য সমস্ত প্রশংসা, যাঁর নেয়ামত দ্বারা সকল ভাল কিছু পরিপূর্ণ হয়।”

«سُبْحَانَ اللَّهِ!».

(সুবহা-নাল্লা-হ)“আল্লাহ পবিত্র-মহান।”

 অপছন্দনীয় বিষয় আসলে-

«الْحَمْدُ لِلَّهِ عَلَى كُلِّ حَالٍ».

(আলহামদুলিল্লা-হি ‘আলা কুল্লি হাল)

“সকল অবস্থায় যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ্‌র জন্য।” শাইখ আলবানী তাঁর সহীহুল জামে‘ ৪/২০১।

. ভীত অবস্থায় যা বলবে

«لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ!».

(লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ !)“আল্লাহ ব্যতীত কোনো হক্ব উপাস্য নেই! বুখারী, (ফাতহুল বারীসহ) ৬/৩৮১, নং ৩৩৪৬

কেউ সদাচারণ করলে তার জন্য দো

«جَزَاكَ اللَّهُ خَيْراً».

(জাযা-কাল্লা-হু খাইরান)।

“আল্লাহ আপনাকে উত্তম বিনিময় দান করুন।” তিরমিযী, হাদিস নং ২০৩৫।

কেউ যদি বলে, ‘আল্লাহ আপনার উপর বরকত দিন’, তার জন্য দো‘আ

«وَفِيكَ بَارَكَ اللَّهُ».

(ওয়াফীকা বা-রাকাল্লা-হ)

“আর আপনার মধ্যেও আল্লাহ বরকত দিন।”

ক্রোধ দমনের দোআ ও করণীয়

দাঁড়ানো অবস্থায় থাকলে বসে পড়বে

অযু করে আসবে বা গোসল করে ফেলবে

মহান রবের কাছে বলবে-

– «أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ».

(আ‘ঊযু বিল্লাহি মিনাশ্-শাইত্বা-নির রাজীম)।

“আল্লাহ্‌র নিকট আশ্রয় চাই বিতাড়িত শয়তান থেকে।”বুখারী ৭/৯৯, নং ৩২৮২

. হাঁচির দো

তোমাদের কেউ হাঁচি দিলে বলবে,

«الْحَمْدُ لِلَّهِ»

(আলহামদু লিল্লা-হি)

“সকল প্রশংসা আল্লাহ্‌র” এবং তার মুসলিম ভাই বা সাথী যেন অবশ্যই বলে,

« يَرْحَمُكَ اللَّهُ »

(ইয়ারহামুকাল্লা-হ)

“আল্লাহ আপনাকে রহমত করুন”। যখন তাকে ইয়ারহামুকাল্লাহ বলা হয়, তখন হাঁচিদাতা যেন তার উত্তরে বলে,

« يَهْدِيكُمُ اللَّهُ وَيُصْلِحُ بَالَكُمْ».

(ইয়াহ্‌দীকুমুল্লা-হু ওয়া ইউসলিহু বা-লাকুম)

“আল্লাহ আপনাদেরকে সৎপথ প্রদর্শন করুন এবং আপনাদের অবস্থা উন্নত করুন।”বুখারী ৭/১২৫, নং ৫৮৭০।

শরীরে কোনো ব্যথা অনুভব করলে যা করবে ও বলবে

“আপনার দেহের যে স্থানে আপনি ব্যথা অনুভব করছেন, সেখানে আপনার হাত রেখে তিনবার বলুন,

«بِسْمِ اللَّهِ»

(বিসমিল্লাহ)

“আল্লাহর নামে।” আর সাতবার বলুন,

«أَعُوذُ بِاللَّهِ وَقُدْرَتِهِ مِنْ شَرِّ مَا أَجِدُ وَأُحَاذِرُ».

(আ‘ঊযু বিল্লা-হি ওয়া ক্বুদরাতিহী মিন শাররি মা আজিদু ওয়া উহা-যিরু)।

“এই যে ব্যথা আমি অনুভব করছি এবং যার আমি আশঙ্কা করছি, তা থেকে আমি আল্লাহ্‌র এবং তাঁর কুদরতের আশ্রয় প্রার্থনা করছি।” মুসলিম ৪/১৭২৮, নং ২২০২।

কোনো মুসিবতে পতিত ব্যক্তির দো

«إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ، اللَّهُمَّ أْجُرْنِي فِي مُصِيبَتِي، وَأَخْلِفْ لِي خَيْرَاً مِنْهَا».

(ইন্না লিল্লা-হি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজি‘উন। আল্লা-হুম্মা আজুরনী ফী মুসীবাতী ওয়াখলুফ লী খাইরাম মিনহা)।

“আমরা তো আল্লাহ্‌রই। আর নিশ্চয় আমরা তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী। হে আল্লাহ! আমাকে আমার বিপদে সওয়াব দিন এবং আমার জন্য তার চেয়েও উত্তম কিছু স্থলাভিষিক্ত করে দিন।” মুসলিম ২/৬৩২, নং ৯১৮।

রোগী দেখতে গিয়ে তার জন্য দো

«لاَ بأْسَ طَهُورٌ إِنْ شَاءَ اللَّهُ».

(লা বা’সা তুহুরুন ইন শা-আল্লা-হ)।

“কোনো ক্ষতি নেই, আল্লাহ যদি চান তো (রোগটি গুনাহ থেকে) পবিত্রকারী হবে।”বুখারী (ফাতহুল বারীসহ) ১০/১১৮, নং ৩৬১৬।

সালাতে ও কেরাআতে শয়তানের কুমন্ত্রণায় পতিত ব্যক্তির দো

– «أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيطَانِ الرَّجِيمِ».

(আ‘ঊযু বিল্লা-হি মিনাশ শাইত্বানির রাজীম)

“বিতাড়িত শয়তান থেকে আমি আল্লাহ্‌র আশ্রয় নিচ্ছি।”

অতঃপর বাম দিকে তিনবার থুতু ফেলবে। মুসলিম ৪/১৭২৯, ২২০৩।

 কঠিন কাজে পতিত ব্যক্তির/পরীক্ষার্থীর দো

– «اللَّهُمَّ لاَ سَهْلَ إِلاَّ مَا جَعَلْتَهُ سَهْلاً، وَأَنْتَ تَجْعَلُ الْحَزْنَ إِذَا شِئْتَ سَهْلاً».

(আল্লা-হুম্মা লা সাহ্‌লা ইল্লা মা জা‘আলতাহু সাহ্‌লান, ওয়া আনতা তাজ্‘আলুল হাযনা ইযা শি’তা সাহ্‌লান)।

“হে আল্লাহ! আপনি যা সহজ করেছেন তা ছাড়া কোনো কিছুই সহজ নয়। আর যখন আপনি ইচ্ছা করেন তখন কঠিনকেও সহজ করে দেন।” সহীহ ইবন হিব্বান ২৪২৭

ইফতারের সময় রোযাদারের দো

ذَهَبَ الظَّمَأُ وَابْتَلَّتِ العُرُوقُ، وَثَبَتَ الْأَجْرُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ

(যাহাবায-যামাউ ওয়াবতাল্লাতিল ‘উরূকু ওয়া সাবাতাল আজরু ইনশা-আল্লা-হু)।

“পিপাসা মিটেছে, শিরাগুলো সিক্ত হয়েছে এবং আল্লাহ্ চান তো সওয়াব সাব্যস্ত হয়েছে।” আবূ দাউদ ২/৩০৬, নং ২৩৫৯, সহীহুল জামে‘৪/২০৯।

শবে কদরের রাতে পড়ার দু

اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي

আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আ’ফুউউন তুহিব্বুল আ’ফওয়া ফা’ফু আ’ন্নী

আয়েশা রা. বলেছেন: হে রাসূলুল্লাহ! যদি আমি জানি কোন রাতে লাইলাতুল ক্বদর তবে আমি সেই রাতে কি বলবো? তিনি সা. বললেন, বল: আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আ’ফুউউন তুহিব্বুল আ’ফওয়া ফা’ফু আ’ন্নী

হে আল্লাহ! তুমি বড়ই ক্ষমাকারী, বড়ই অনুগ্রহশীল।মাফ করে দেয়াই তুমি পছন্দ কর। তাই তুমি আমার গুনাহ মাফ করে দাও। আল জামে আত তিরমিযী

কুর’আনিক কিছু দু’আঃ

দুআঃ ১

رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ

হে পরওয়ারদেগার! আমাদিগকে দুনিয়াতেও কল্যাণ দান কর এবং আখেরাতেও কল্যাণ দান কর এবং আমাদিগকে দোযখের আযাব থেকে রক্ষা কর। সূরা বাকারা-২০১

দুআঃ ২

رَبَّنَا آتِنَا مِنْ لَدُنْكَ رَحْمَةً وَهَيِّئْ لَنَا مِنْ أَمْرِنَا رَشَدًا

হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদেরকে নিজের কাছ থেকে রহমত দান করুন এবং আমাদের জন্যে আমাদের কাজ সঠিকভাবে পূর্ণ করুন। (সূরা কাহফ আয়াতঃ১০)

দুআঃ ৩

رَّبِّ زِدْنِي عِلْمًا

হে আমার পরওয়ারদিগার! আমাকে আরো জ্ঞান দাও৷   সূরা ত্বাহা আয়াতঃ ১১৪

দুআঃ ৪

رَبِّ اشْرَحْ لِي صَدْرِي

وَيَسِّرْ لِي أَمْرِي

وَاحْلُلْ عُقْدَةً مِّن لِّسَانِي

يَفْقَهُوا قَوْلِي

وَاجْعَل لِّي وَزِيرًا مِّنْ أَهْلِي

 “হে আমার রব! আমার বুক প্রশস্ত করে দাও৷ আমার কাজ আমার জন্য সহজ করে দাও   এবং আমার জিভের জড়তা দূর করে দাও, যাতে লোকেরা আমার কথা বুঝতে পারে৷আর আমার জন্য নিজের পরিবার থেকে সাহায্যকারী হিসেবে নিযুক্ত করে দাও।       সূরা ত্বাহা  আয়াতঃ২৫-২৯

দুআঃ ৫

رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا

হে আমার প্রতিপালক! তাদের প্রতি দয়া করো, যেমন তারা দয়া, মায়া, মমতা সহকারে শৈশবে আমাকে প্রতিপালন করেছিলেন৷  বনী ইসরাইলঃ২৪

দুআঃ ৬

رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا

হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের স্ত্রীদের পক্ষ থেকে এবং আমাদের সন্তানের পক্ষ থেকে আমাদের জন্যে চোখের শীতলতা দান কর এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের জন্যে আদর্শস্বরূপ কর। (সূরা ফুরকান,আয়াতঃ৭৪)

হাদীসের আলোকে কিছু দু’আ

দুআঃ ১

الْعَظِيم حَسْبِيَ اللَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ عَلَيهِ تَوَكَّلتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْش

হাসবিয়াল্লা-হু লা ইলা-হা ইল্লা হুয়া, ‘আলাইহি তাওয়াক্কালতু, ওয়াহুয়া রব্বুল ‘আরশিল ‘আযীম)

“আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট, তিনি ছাড়া আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই। আমি তাঁর উপরই ভরসা করি। আর তিনি মহান আরশের রব্ব।” আবূ দাউদ ৪/৩২১; মাওকূফ সনদে, নং ৫০৮১।

দুআঃ ২

يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوبِ ثَبِّتْ قَلْبِى عَلَى دِينِكَ

*”ইয়া মুকাল্লিবাল কুলুব, সাব্বিত কলবি আ’লা দীনিক”* অর্থাৎ *”হে অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী! আমার অন্তরকে তোমার দ্বীনের উপর সুদৃঢ় করে দাও।”* -(তিরমিযি ২১৪০)

দুআঃ ৩

“‏اللهم مصرف القلوب صرف قلوبنا على طاعتك‏”‏ ‏(‏‏(‏رواه مسلم‏)‏‏)‏‏.‏

‘ইয়া মুসাররিফাল কুলুব সাররিফ কুলুবানা আলা ত-আতিক।’

অর্থ : হে আল্লাহ! (আপনি) হৃদয়সমূহের পরিবর্তনকারী! আমাদের হৃদয়গুলোকে আপনার আনুগত্যের দিকে ঘুরিয়ে দিন। -সহিহ মুসলিম-২৬৫৪

দুআঃ ৪

‏ “‏اللهم إني أسألك الهدى، والتقى، والعفاف، والغنى‏”‏

‏”আল্লাহুম্মা ইন্নি আস-আলুকাল হুদা ওয়াত-তুকা ওয়াল আ’ফাফা ওয়াল গিনা।”

অর্থ: হে আল্লাহ আমি তোমার কাছে হেদায়েত, তাকওয়া, সুস্থতা ও সম্পদ প্রার্থনা কর্ছি। (আমিন)

সুনানে আত-তিরমিযী: ৩৪৮৯, হাদীসটি সহীহ।

দুআঃ ৫

   يَا حَيُّ يَا قَيُّومُ بِرَحْمَتِكَ أَسْتَغيثُ أَصْلِحْ لِي شَأْنِيَ كُلَّهُ وَلاَ تَكِلْنِي إِلَى نَفْسِي طَرْفَةَ  عَيْنٍ».

(ইয়া হাইয়্যু ইয়া ক্বাইয়্যূমু বিরহ্‌মাতিকা আস্তাগীসু, আসলিহ্‌ লী শা’নী কুল্লাহু, ওয়ালা তাকিলনী ইলা নাফসী ত্বারফাতা ‘আইন)।

“হে চিরঞ্জীব, হে চিরস্থায়ী! আমি আপনার রহমতের অসীলায় আপনার কাছে উদ্ধার কামনা করি, আপনি আমার সার্বিক অবস্থা সংশোধন করে দিন, আর আমাকে আমার নিজের কাছে নিমেষের জন্যও সোপর্দ করবেন না।” সহীহ আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব ১/২৭৩।

 

দৈনিক  তাসবীহ, তাহমীদ, তাহলীল ও তাকবীর –

১। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “দুটি বাক্য এমন রয়েছে, যা যবানে সহজ, মীযানের পাল্লায় ভারী এবং করুণাময় আল্লাহ্‌র নিকট অতি প্রিয়। আর তা হচ্ছে,

سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ، سُبْحانَ اللَّهِ الْعَظِيمِ (সুব্‌হানাল্লা-হি ওয়া বিহামদিহী, সুব্‌হানাল্লা-হিল ‘আযীম)।

‘আল্লাহ্‌র প্রশংসাসহকারে তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা বর্ণনা করছি। মহান আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি’।” বুখারী ৭/১৬৮, নং ৬৪০৪;

(২) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার— সূর্য যা কিছুর উপর উদিত হয় তার চেয়ে এগুলো বলা আমার কাছে অধিক প্রিয়।” মুসলিম, ৪/২০৭২, নং ২৬৯৫।

৩। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “যে ব্যক্তি ১০০ বার ‘সুবহানাল্লাহ’ বলবে, তার জন্য এক হাজার সওয়াব লেখা হবে অথবা তার এক হাজার পাপ মুছে ফেলা হবে।”মুসলিম ৪/২০৭৩, নং ২৬৯৮।

৪। কোনো ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে প্রথমে সালাত শিক্ষা দিতেন। অতঃপর এসব কথা দিয়ে দো‘আ করার আদেশ দিতেন,

«اللَّهُمَّ اغْفِرِ لِي، وَارْحَمْنِي، وَاهْدِنِي، وَعَافِنِي وَارْزُقْنِي».(আল্লা-হুম্মাগফির লী ওয়ারহামনী ওয়াহদিনী ওয়া ‘আ-ফিনী ওয়ারযুক্বনী)। “হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, আমাকে দয়া করুন, আমাকে আপনি হেদায়াত দিন, আমাকে নিরাপদ রাখুন এবং আমাকে রিযিক দান করুন।” মুসলিম ৪/২০৭৩;

(৫) “সর্বশ্রেষ্ঠ দো‘আ হল,   «الْحَمْدُ لِلَّهِ» (আলহামদু লিল্লাহ) “সকল প্রশংসা আল্লাহরই”। আর সর্বোত্তম যিক্‌র হল,   «لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ» (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) “আল্লাহ ব্যতীত কোনো হক্ব ইলাহ নেই।” তিরমিযী নং ৩৩৮৩;

رَضِيتُ بِاللَّهِ رَبَّاً، وَبِالْإِسْلاَمِ دِيناً، وَبِمُحَمَّدٍ نَبِيّاً

৬।  রদ্বীতু বিল্লা-হি রব্বান, ওয়াবিল ইসলা-মি দীনান, ওয়াবি মুহাম্মাদিন সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামা নাবিয়্যান)। (৩ বার)।

আল্লাহকে রব, ইসলামকে দীন ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে নবীরূপে গ্রহণ করে আমি সন্তুষ্ট।” আবু দাউদঃ ১৫৩১;

اللَّهُمَّ صَلِّ وَسَلِّمْ عَلَى نَبَيِّنَا مُحَمَّدٍ

৭। (আল্লা-হুম্মা সাল্লি ওয়াসাল্লিম ‘আলা নাবিয়্যিনা মুহাম্মাদ) [১০ বার করে]

“হে আল্লাহ! আপনি সালাত ও সালাম পেশ করুন আমাদের নবী মুহাম্মাদের উপর।

বুখারী, ৭/১৬২, নং ১১৬২।

৮। ফযর সালাতের পর যে কালিমাহ্‌ চারটির ওযন ভারী।

ফযর সালাতের পর যে কালিমাহ্‌ চারটির ওযন ভারী।

وَمِدَادَ كَلِمَاتِهِ وَزِنَةَ عَرْشِهِ،  وَرِضَا نَفْسِهِ،  عَدَدَ خَلْقِهِ،  سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِه

(সুব্‌হা-নাল্লা-হি ওয়া বিহামদিহী ‘আদাদা খালক্বিহী, ওয়া রিদা নাফসিহী, ওয়া যিনাতা ‘আরশিহী, ওয়া মিদা-দা কালিমা-তিহী)। (৩ বার)

আমি আল্লাহর প্রশংসার সাথে তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা করছি তাঁর মাখলুকের সংখ্যার পরিমাণ, তাঁর সন্তুষ্টির পরিমাণ, তাঁর ‘আর্‌শের ওযন পরিমাণ ও তাঁর কালিমাসমূহের সংখ্যার পরিমাণ।” (৩বার পড়বে) মুসলিম ৪/২০৯০, নং ২৭২৬।

 

«أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ».

৯। আস্তাগফিরুল্লাহ ওয়া আতূবু ইলাইহি।

“আমি আল্লাহ্‌র কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তাঁর নিকটই তাওবা করছি”। (প্রতি দিন ১০০ বার)

বুখারী ১১/১০১, নং ৬৩০৭;

 

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ عِلْماً نافِعاً، وَرِزْقاً طَيِّباً، وَعَمَلاً مُتَقَبَّلاً

১০ . আল্লা-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা ‘ইলমান না-ফি‘আন্ ওয়া রিয্‌কান ত্বায়্যিবান ওয়া ‘আমালান মুতাক্বাব্বালান।

“হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট উপকারী জ্ঞান, পবিত্র রিযিক এবং কবুলযোগ্য আমল প্রার্থনা করি।”এটি ফজর নামাযের সালাম ফিরানোর পর পড়বে। ইবন মাজাহ্‌, নং ৯২৫; নাসাঈ,

১১। প্রতি ওয়াক্তের (ফরয) নামাযের পর দশ বার সুবহানাল্লাহ, দশবার আলহামদুলিল্লাহ্ ও দশ বার আল্লাহু আকবার বলবে।

আবু হুরাইরা(রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, একবার দরিদ্র মুহাজিররা রাসুলু্‌ল্লাহ (সাঃ) এর নিকটএসে বললেনঃ ধনবানরা তো সমস্ত বড় মর্যাদাগুলো দখল করে নিলেন এবং স্থায়ী নিয়ামতগুলো তাদের ভাগে পড়ল। আমরা যেমন নামায পড়ি তারাও তেমনি নামায পড়ে, আমরা যেমন রোযা রাখি তারাও তেমনি রোযা রাখে, কিন্তু ধন-সম্পদের দিক থেকে তারা আমাদের অপেক্ষা অগ্রসর। ফলে তারা হজ্জ করে, উমরা করে, আবার জিহাদ করে এবং সাদকাও করে। তিনি (সাঃ)বললেনঃ আমি কি তোমাদেরকে এমন বস্তু শিক্ষা দেবো না? যার ওপর আমল করে তোমরা নিজেদের অপেক্ষা অগ্রবর্তীদেরকে ধরে ফেলবে এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদের থেকেও এগিয়ে যাবে,আর তোমাদের মতো ঐ আমলগুলো না করা পর্যন্ত কেউ তোমাদের অপেক্ষা অগ্রবর্তী হবে না। তারা বললেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! অবশ্যই বলে দিন। তিনি বললেনঃ তোমরা প্রত্যেক নামাযের পর ৩৩ বার তাসবীহ, তাহমীদ ও তাকবীর পড়ো। বর্ণনাকারী আবু সালিহ সাহাবী(রহঃ) আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, যখন তাকে ঐ কালেমা গুলো পড়ার নিয়ম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো, তিনি বললেনঃ এ কালেমা গুলো সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ(সাঃ) বলেছেন, “সুবহানাল্লাহ, ওয়াল হামদুলিল্লাহ ওয়াল্লাহু আকবার” অবশেষে এ প্রত্যেকটি কালেমাই হবে ৩৩ বার। (বুখারী ও মুসলিম)।

আবদুল্লাহ ইবনু’আমর (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ কোন মুসলমান ব্যক্তি দুইটি অভ্যাসে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত হতে পারলে সেনিশ্চয়ই জান্নাতে প্রবেশ করবে। জেনে রাখ! উক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো আয়ত্ত করা সহজ। সে অনুসারে অনেক অল্প সংখ্যক লোকই তা আমল করে থাকে।

(১) প্রতি ওয়াক্তের (ফরয) নামাযেরপর দশ বার সুবহানাল্লাহ, দশবার আলহামদুলিল্লাহ্ ও দশ বার আল্লাহু আকবার বলবে।’

আবদুল্লাহ (রাযিঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি নামাযের পর স্বীয় হস্তে গণনা করতে দেখেছি। তারপর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ (পাঁচ ওয়াক্তে) মুখের উচ্চারণে একশত পঞ্চাশবার এবং মীযানে (দাঁড়িপাল্লায়) দেড় হাজার হবে।

(২) আর ঘুমাতে যাওয়ার সময় তুমি”সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ্ ও আল্লাহু আকবার এক শত বার বলবে (প্রথম দুটি৩৩ বার ও শেষের টি ৩৪ বার মোট ১০০) ফলে তা মীযানে এক হাজারে রূপান্তরিত হবে।

তোমাদের মাঝে কে এক দিন ও রাতে দুই হাজার পাঁচশ গুনাহে লিপ্ত হয়? (অর্থাৎ এত গুলো পাপও ক্ষমা যোগ্য হবে) ;সাহাবীগণ বলেন, কোন ব্যক্তি সবসময় এরূপ একটি ‘ইবাদাত কেন করবে না! রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের কেউ নামাযে অবস্থান থাকাকালেতার কাছে শয়তান এসে বলতে থাকে, এটা মনে কর, ওটা মনে কর। ফলে সেই নামাযী (শয়তানেরধোঁকাবাজি থাকা মাঝেই রত অবস্থায়) নামাযে শেষ করে। আর উক্ত তাসবিহ আমল করার সেসুযোগ পায়না। পুনরায় তোমাদের কেউ শোয়ার জন্য শয্যা গ্রহণ করতে শয়তান তার নিকটএসে তাকে ঘুম পাড়ায় এবং সে তাসবিহ পাঠ না করেই ঘুমিয়ে পড়ে।  হাদিসটি সহিহঃ ইবনু মাজাহ/৯২৬।

শেষ কথা

আলহামদুলিল্লাহ। আমরা পিতা মাতা বা অভিভাবকরা ইসলামের মূল ভিত্তি সম্পর্কে যদি সন্তানের ছোট বয়স থেকেই শেখানো ও আমলে পরিনত করতে উদ্বুদ্ধ করি তাহলে ইন শা আল্লাহ একদিকে যেমন পিতা মাতা হিসেবে দায়িত্ব পালন হবে অপরদিকে সন্তান সঠিক শিক্ষা পেয়ে একনিষ্ঠ মুসলিম হিসেবে গড়ে উঠবে ইন শা আল্লাহ।

যেহেতু আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় মুসলিম হিসেবে যে সিলেবাস থাকার কথা তা পাওয়া যায় না, তাই পিতা মাতার কর্তব্য সিলেবাসকে পূর্ণতায় আনতে প্রয়োজনে বাসায় নিজেরা একটি সিলেবাস প্রনয়ন করে শিক্ষা দেয়ার চেষ্টা করা। তাহলে সন্তানকে সঠিক ভাবে গাইড লাইন দিয়ে দ্বীনের সহিহ জ্ঞানসহ বিজ্ঞানের শিক্ষায় এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন। আরো সুন্দর সুন্দর সহিহ আকীদার বই এখন পাওয়া যাচ্ছে যা ছোটদের জন্যই লেখা, সেগুলো সংগ্রহ করে শিক্ষাদান করা প্রয়োজন। পিতা মাতা যদি  শুরু থেকেই সচেতন থাকেন, সন্তানের সহিহ আকীদা দান শিক্ষার ব্যপারে তাহলে মহান আল্লাহই পথ উত্তোরন করে দিবেন ইন শা আল্লাহ। মহান আল্লাহ আমাদের সকল পরিবারকে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যানদানের পথে অগ্রসর হওয়ার তাওফিক দান করুন।