ভালোবাসা দিবস কি ও কেনো?

আসসালামু’আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ

সূধী আপনারা কি জানেন যে, শয়তান কবে থেকে নারীকে নিজের সৌন্দর্য অন্যের নিকট প্রকাশ করতে এবং পুরুষকে নারীর রুপে মোহিত হয়ে ও বাদ্যযন্ত্রের সুরে তাল দিয়েছে, নারী পুরুষ একসাথে বিভিন্নরকম পার্টী দিয়ে আনন্দে উল্লাসে নিজেদের বিলিন করা শিখিয়েছে?

কোন মুমিন যদি এই অপকর্মের উৎস জেনে থাকে তাহলে তার পক্ষে আর এই ধরনের গুনাহের কাজে লিপ্ত হওয়ার বিন্দু পরিমান খায়েশ থাকবে না বরং ঘৃ্নায় উৎকন্ঠায় নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখবে।

কাবীল ভাইকে হত্যার দায়ে আদম আ. এর সাহচর্য থেকে দূরে সরিয়ে দেন, পরবর্তীতে কাবীলের বংশের লোকেরা আলাদা স্থানে এবং আদম আ.এর পর ছেলে হযরত শীষ আ. এর বংশের লোকেরা আলাদা স্থানে অবস্থান নিয়ে থাকে। কাবীলের বংশে মেয়েরা ছিল খুব সুন্দরী এবং ছেলেরা সুন্দর ছিল না, কিন্তু শীস আ. এর বংশে ছেলেরা সুন্দরী ও মেয়েরা তেমন সুন্দরী ছিল না। কিন্তু হযরত শীষ আ. বংশে লোকদের জীবন ছিল পবিত্র পরিচ্ছন্ন। কাবীলের অবস্থা ছিল লাগামহীন, রবের পথ থেকে বিভ্রান্ত। এই সময় শয়তান সুন্দর পুরুষের বেশে কাবীলের বংশের কাছে যেয়ে শব্দের মাধ্যমে সুর ও নারীদের কাছে টানার অবস্থা তৈ্রী করে, আস্তে আস্তে বিভিন্ন পার্টী শুরু হয়ে যায়, রাত জেগে মদ গান নাচ চলতে থাকে। নারীরাও বিভিন্নভাবে নিজেদের সাজিয়ে উপস্থাপন করতে প্রতিযোগীতায় লিপ্ত হয়ে যায়, কে কত জনকে আকৃ্ষট করতে পারে! আবার শয়তান শীষ আ. যুবকদের মনে ওসওয়াসা দেয় যে কেনো কাবীলের বংশের সাথে যোগাযোগ নেই,তারাতো কাজীন,তারা হাবীলের হত্যার যুক্তি না মেনে নিয়ে গোপনে সেখানে যেয়ে দেখতে চায় তারা এতো আনন্দ কেমন করে পায়? একসময় এরাও সেই পার্টী ও নারীর প্রতি আসক্ত হয়ে যায়, এইভাবেই শয়তান নারী পুরুষের একসাথে অবস্থান করে যেনার পথ সুগম করে দেয়।
মুমিন ব্যক্তি কখনোই এই অবস্থাকে মেনে নিতে পারে না, মুমিনা নারী নিজের সৌন্দর্যকে সাজিয়ে বাইরে কাকে তৃপ্ত করতে চায়? আসলে মুমিনা নারী তা করতে পারে না। মহান রবের প্রতি যাদের মিনিমাম লজ্জা কৃ্তজ্ঞতা তাকওয়া থাকে তারা কখনোই এই কাজে লিপ্ত হতে পারে না কারন এই পথ জাহান্নামের পথ সুগম করে দেয়।

আজ ভালোবাসা দিবস প্রেম ইত্যাদি যেভাবে প্রচার প্রসার হচ্ছে এবং শয়তানের ফাঁদে পা দিয়ে কত তরুন তরুনীর জীবন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। মহান আল্লাহ আমাদেরসহ প্রতিটি মুমিন পরিবারকে এই ফেতনা থেকে হেফাজত করুন।

মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই আমাদের মুমিনদের নিজেদের মধ্যে ভালোবাসার দাবী হলো সঠিক পথে চলার আমন্ত্রন জানানো। যে যত বেশী মহান রবের পথে অগ্রসর হতে পারবো পারস্পরিক ভালোবাসা ও দু’আ ততবেশী গভীর হবে। ভালোবাসার ভিত্তিই যদি থাকে তাকওয়া তাহলে সেই ভালোবাসা পবিত্র,সম্মানিত এবং আখেরাতের স্থায়ী জীবনেও মুক্তি লাভে সহায়ক হবে।

যারা ঈমানদার মুমিন, তাদের অন্তরে আল্লাহর মহব্বত ভালবাসা হবে সর্বাধিক প্রগাঢ়। সূরা আল বাকারা। (সূরা আল বাকারা: ১৬৫)

আর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন:

কোন লোক পূর্ণ মুমিন হবে না যতক্ষণ না সে নিজের জীবন এবং পরিবার পরিজনের চেয়ে আমাকে বেশী ভালবাসবে।

রাসূল সা. এরশাদ করেন,

যে ব্যক্তি আমার সুন্নত থেকে মুখ ফিরায়, সে আমার উম্মত নয়।

অন্যথায় রাসূল সা. বলেন,

যে আমার সুন্নাতকে ভালবাসল, সে যেন আমাকে ভালবাসল, আর যে আমাকে ভালবাসল সে আমার সাথে বেহেশতে থাকবে।

ক্ষনস্থায়ী এই জীবনে অবৈধ জিনিষগুলো সাময়িক আনন্দ ও আবেগের উত্তেজনা দিতে পারে কিন্তু পরক্ষনেই এর খারাপ পরিনতি দুনিয়ার জীবনেই মানুষ ভোগ করছে আর আখেরাতেতো আছেই। মহান আল্লাহ যত ভালোবাসেন তাঁর সৃষ্টিকে অন্য কেউ বা কারোর সাথেই তুলনা করা যায় না। তাহলে যিনি এতো ভালোবাসেন,তাঁর নির্দেশনা পালন না করে বা তাঁকে অসন্তুষ্ট করে,এ কোন ভালোবাসা দিবস পালন বা  তাদের জন্য এতো বেশী তৎপরতা কতটা যুক্তিযুক্ত?

ভ্যালেনটাইন ডের অর্থ, উৎস, প্রভাব – নানান বিষয়ে অনেক কিছুই তরুন তরুনীরা বা অনেক মুসলিম বাবা মারাও জানে না।  সংক্ষেপে যদি বলি-ভ্যালেনটাইন, একজন কৃশ্চিয়ানের নাম। সে খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতাব্দীর পাদরি ছিল। ভ্যালেনটাইন ডে নিখাঁদ তাদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান। একজন খ্রিস্টান পাদরিকে অমর করে রাখার নিমিত্তে তার স্মৃতিচারণ মাত্র।

সাহাবি আবু অকেদ বলেন,
রসুল সা. খায়বার যাত্রায় মূর্তি পূজকদের একটি গাছ অতিক্রম করলেন। তাদের নিকট যে গাছটির নাম ছিল ‘জাতু আনওয়াত’। এর উপর তীর টানিয়ে রাখা হত। এ দেখে কতক সাহাবি রসুল সা.-কে বলল, হে আল্লাহর রসুল, আমাদের জন্যও এমন একটি ‘জাতু আনওয়াত’ নির্ধারণ করে দিন। রসুল সা. ক্ষোভ প্রকাশ করলেন, ‘সুবহানাল্লাহ, এ তো মুসা আ.-এর জাতির মত কথা। ‘আমাদের জন্য একজন প্রভু তৈরি করে দিন, তাদের প্রভুর ন্যায়।’ আমি নিশ্চিত, আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি, তোমরা পূর্ববর্তীদের আচার অনুষ্ঠানের অন্ধানুকরণ করবে। (তিরমিজি সহিহ)

ফতোওয়াটি সর্বোচ্চ ওলামা পরিষদে বিশ্লেষণের পর এই মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়েছে যে,

কুরআন সুন্নাহর স্পষ্ট প্রমাণাদি দ্বারা এ কথা অকাট্যভাবে প্রমাণিত যে, ইসলামে ঈদ বা উৎসবের দিন মাত্র দু’টি। সালাফে সালেহীনগণও এ বিষয়ে একমত হয়েছেন। ইসলামে স্বীকৃত ঈদ দুটির একটি হল ঈদুল ফিতর, অপরটি হল ঈদুল আজহা বা কুরবানির ঈদ। উল্লিখিত ঈদ দু’টি ব্যতীত যত ঈদ বা উৎসব আছে, হোক না তা কোন ব্যক্তির সাথে সম্পৃক্ত, বা কোন গোষ্ঠীর সাথে সম্পৃক্ত, বা কোন ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত, তা বিদআত।

মুসলমানদের তা পালন করা বা পালন করতে বলা বৈধ নয় এবং এ উপলক্ষে আনন্দ প্রকাশ করা ও এ ব্যাপারে কিছু দিয়ে সাহায্য করাও নিষেধ। কেননা এ ধরনের কাজ আল্লাহ তা’আলার সীমা লঙ্ঘন বৈ অন্য কিছু হবে না। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সীমা লঙ্ঘন করবে সে নিজের উপর অত্যাচার করবে। এ ধরনের কালচার বিধর্মীদের অনুসরনের কল্পে গ্রহণ করা হলে অপরাধ আরো মারাত্বক হবে। কারণ এর মাধ্যমে তাদের সদৃশ্যতা গ্রহণ করা এবং তাদেরকে এক ধরনের বন্ধু বানানো হয়। অথচ আল্লাহ তাআলা মুমিনদেরকে এ থেকে বারণ করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

যে ব্যক্তি কোনো সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্যতা অবলম্বন করল সে তাদের দলভুক্ত বলে গণ্য।

ভালবাসা দিবস পালন করাও এ নিষেধের অন্তর্ভুক্ত। কেননা এটি খৃষ্টানদের উৎসব। যে মুসলমান আল্লাহ এবং পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে তার জন্য এ কাজ করা দেয়া বা এই দিনে কাউকে ফুল বা অন্যকোনো উপহার দেয়া বৈধ নয়। বরং তার কর্তব্য হল আল্লাহ এবং তার রাসূলের হুকুম পালন করা এবং আল্লাহর শাস্তি ও গযব আসে এমন কাজ থেকে নিজে দূরে থাকা ও অন্যদের দূরে রাখা।

অতএব এ দিবসকে কেন্দ্র করে পানাহার করা, ক্রয়-বিক্রয় করা, কোন কিছু প্রস্তুত করা বা উপঢৌকন দেয়া, চিঠি-পত্র চালাচালি করা ও প্রচার-পত্র বিলি করা অবৈধ। এ সমস্ত কাজের মাধ্যমে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানি করা হয়। আল্লাহ তা’আলা বলেন,

ফতোয়াটি যারা সত্যায়ন করেছেন :

সৌদি আরবের গবেষণা ও ফতোয়া প্রদান বিষয়ক স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ও সদস্যবৃন্দ:

আব্দুল আযিয বিন আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ আলে শেখ

সদস্য: সালেহ বিন ফাওজান আল-ফাওজান

সদস্য: আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহমান আল-গদইয়ান

সদস্য: বকর বিন আব্দুল্লাহ আবু জায়েদ

 

বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম
ওয়া ‘আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
কয়েকটি কারণে ‘ভালবাসা দিবস’ উদযাপন জায়েয নয়:—
প্রথমত: এটি একটি নব-উদ্ভাবিত বিদ‘আতী দিবস, শরীয়তে যার কোনো ভিত্তি নেই।
দ্বিতীয়ত: এটি অনৈতিক-প্রেম পরিণতির দিকে মানুষকে ধাবিত করে।
তৃতীয়ত: এর কারণে সালাফে সালেহীনের পথ-পদ্ধতির বিরোধী এরূপ অর্থহীন বাজে কাজে মানুষের মন-মগজ ব্যস্ত করার প্রবণতা তৈরি হয়।
তাই এ-দিনে দিবস উদযাপনের কোনো কিছু প্রকাশ করা কখনও বৈধ নয়; চাই তা খাদ্য-পানীয় গ্রহণ, পোশাক-আশাক পরিধান, পরস্পর উপহার বিনিময় কিংবা অন্য কিছুর মাধ্যমেই হোক না কেন।
আর প্রত্যেক মুসলিমের উচিত নিজ দীন নিয়ে গর্বিত হওয়া এবং অনুকরণপ্রিয় না হওয়া: কেউ করতে দেখলেই সেও করবে, কেউ আহ্বান করলেই তাতে সাড়া দিবে, এমনটি যেন না হয়।
আল্লাহ্র নিকট দু‘আ করি, তিনি যেন প্রত্যেক মুসলিমকে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য যাবতীয় ফিতনা থেকে হেফাযত করেন; আর আমাদেরকে তিনি তাঁর অভিভাবকত্ব ও তাওফিক প্রদান করে ধন্য করেন।
মুফতী: শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-উসাইমীন রাহেমাহুল্লাহ