আল্লাহর আহবানে বায়তুল্লাহর অতিথির সাড়া-“হে আল্লাহ আমি হাযির”-৪ হজ্জ কি ও কেন

ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মাঝে হজ্জ একটি বিশেষ স্তম্ভ।

হজ্জ একটি আরবি শব্দ এর আভিধানিক অর্থ হলো ইচ্ছা করা বা সংকল্প করা। ইসলামী পরিভাষায় হজ্জ বলা হয় নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট কতিপয় এবাদত পালনের উদ্দেশ্যে বাইতুল্লাহ যিয়ারতের সংকল্প করা।

হযরত ইব্রাহীম আ.কে আল্লাহতাআলা নির্দেশ দিয়ে বলেছিলেন,
আর লোকদেরকে হজ্জ করার জন্য প্রকাশ্যভাবে আহবান জানাও- তারা যেন তোমার কাছে আসে, পায়ে হেঁটে আসুক কিংবা দূরবর্তী স্থান থেকে কৃশ উটের পিঠে চড়ে আসুক। এখানে এসে তারা যেন দেখতে পায় তাদের জন্য দ্বীন দুনিয়ার কল্যানের কত সুন্দর ব্যবস্থা রয়েছে এবং নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর দেয়া জন্তুগুলোকে আল্লাহর নামে কুরবানী করবে, তা থেকে নিজেরাও খাবে এবং দরিদ্র ও অভাবগ্রস্ত লোকদেরও খেতে দেবে।  সূরা আল হজ্জ: ২৬-২৮
ইব্রাহীম আ.বলেছিলেন, হে আল্লাহ আমার এই ক্ষুদ্র আওয়াজ দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ কিভাবে শুনবে? উত্তরে আল্লাহ বলেছিলেন,তুমি ডাক দিয়ে দাও। আওয়াজ পৌছানোর দায়িত্ব আমার।
আজ হজ্জে গমনকারীর সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি দেখে সেই সত্যটাই উন্মোচন হলো।
হজ্জ বান্দাহর উপর মহান আল্লাহর হক।

নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের উপর কাবা ঘরের হজ্জ ফরয করেছেন এবং এ হজ্জকে ইসলামের একটি স্তম্ভ হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেছেন:
মানুষের উপর আল্লাহর অধিকার রয়েছে যে, যার এই ঘর পর্যন্ত পৌঁছার সামর্থ্য আছে, সে যেন তার হজ্জ সম্পন্ন করে। আর যে এ নির্দেশ পালন করতে অস্বীকার করবে তার জেনে রাখা আবশ্যক যে, আল্লাহ দুনিয়াবাসীদের প্রতি কিছুমাত্র মুখাপেক্ষী নন। সূরা আলে ইমরান: ৯৭

হজ্জে গমনকারী ব্যক্তি আল্লাহর মেহমান।
আল্লাহর পথে জিহাদকারী এবং হজ্জ ও উমরা পালনকারীরা আল্লাহর মেহমান।আল্লাহ তাদের ডেকেছেন,তারা সে ডাকে সাড়া দিয়েছে। অতএব, তারা আল্লাহর কাছে যা চাইবে আল্লাহ তাই তাদের দিয়ে দিবেন।  ইবনে মাজাহ:২৮৯৩

তিন ব্যক্তি আল্লাহর মেহমান। হাজী, উমরা পালনকারী ও আল্লাহর পথে জিহাদকারী। নাসাঈ:২৬২৫

হজ্জ জিহাদতূল্য ইবাদাত।
আবু হুরায়রা রা.থেকে বর্ণিত,রাসূল স. বলেছেন, বয়স্ক,শিশু,দূর্বল ও নারীর জিহাদ হলো হজ্জ এবং উমরা পালন করা।  নাসাঈ:২৬২৬
আয়িশাহ রা. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললেন,
হে আল্লাহর রাসূল,মেয়েদের উপর কি জিহাদ ফরয!
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললেন, মেয়েদের উপর এমন জিহাদ ফরয, যাতে লড়াই নেই-তা হচ্ছে হজ্জ ও উমরাহ পালন করা।
আহমাদ:২৪৭৯৪ ও ইবনে মাজাহ

হজ্জ গুনাহমুক্ত করে।
আবু হুরায়রা (রাঃ) এর হাদিস থেকে সাব্যস্ত হয়েছে যে, তিনি বলেন, নবী স. বলেছেন: “যে ব্যক্তি হজ্ব আদায় করেন, কিন্তু কোন পাপের কথা বা কাজ করেননি সে ব্যক্তি ঐদিনের মত হয়ে ফিরে আসবে যেদিন তার মা তাকে প্রসব করেছিল”।
সহীহ বুখারী:১৫২১ ও সহীহ মুসলিম ১৩৫০

হজ্জের বিনিময় হবে জান্নাত। দারিদ্রতা দূর হয়।
আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত,রাসূল স. বলেছেন, তোমরা হজ্জ ও উমরা পালন কর। কেননা হজ্জ ও উমরা উভয়টি দারিদ্র্য ও পাপরাশিকে দূরিভূত করে যেমনিভাবে হাপর স্বর্ণ, রৌপ্য ও লোহার মরিচা দূর করে দেয়। আর মাবরুর হজ্জের বদলা হলো জান্নাত।
তিরমিযী:৮১০

 হজ্জ রিযিকে বরকত এনে দেয়।
বুরাইদা রা. তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন,তিনি বলেন,রাসূল স. বলেছেন, হজ্জে খরচ করা আল্লাহর পথে(জিহাদে) খরচ করার সমতূল্য সওয়াব।হজ্জে খরচকৃত সম্পদকে সাতশত গুন বাড়িয়ে এর প্রতিদান দেয়া হবে।  আহমাদ:২২৪৯১ হাদীসটি সহিহ

জাহান্নাম থেকে মুক্তিলাভের ঘোষণা।
আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ স. বলেন, আরাফার দিন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার বান্দাদের এত অধিক সংখ্যক জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন যা অন্য দিনে দেন না। তিনি এ দিনে বান্দাদের নিকটবর্তী হন ও তাদের নিয়ে ফেরেশতাদের কাছে গর্ব করে বলেন, তোমরা কি বলতে পার আমার এ বান্দাগণ আমার কাছে কি চায় ?  সহিহ মুসলিম: ১৩৪৮

নাবালক সন্তানের হজ্জের সাওয়াব হজ্জ সম্পাদনে সহায়তাকারী পাবে।
ইবনে আব্বাস রা.থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,এক মহিলা তাঁর শিশুকে উঁচু করে তুলে ধরে বললো,হে আল্লাহর রাসূল।এই শিশুর হজ্জ কি শুদ্ধ হবে? তিনি বললেন,হ্যা, তবে তুমি তার সওয়াব পাবে। সহিহ মুসলিম:৩১১৭

এক নামাযে লক্ষ নামাযের সওয়াব নিহিত।
মসজিদুল হারামে এক ওয়াক্ত সালাত আদায় করা অন্য মসজিদে (এ সালাতটি) এক লক্ষ বার আদায়ের চেয়েও বেশী সওয়াব। তবে মসজিদে নববী ব্যতীত।   আহমাদ

জীবনে একবার হজ্জ করা ফরয।
আবু হুরায়রা রা.থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রাসূল স.আমাদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন। তিনি বলেন, হে মানবমণ্ডলী! আল্লাহ তোমাদের উপর হজ্জ ফরয করেছেন। কাজেই তোমরা হজ্জ করবে। তখন এক ব্যক্তি বললো, হে আল্লাহর রাসূল! প্রতি বছর কি হজ্জ করতে হবে? তিনি চুপ রইলেন এবং লোকটি এভাবে তিনবার জিজ্ঞেস করল। অত:পর রাসূল স. বললেন,আমি যদি হ্যা বলতাম,তাহলে তা (প্রতি বছরের জন্যেই) ফরয হয়ে যেত। কিন্তু তোমাদের পক্ষে তা করা সম্ভব হত না। তিনি আরো বললেন, যে ব্যাপারে আমি তোমাদেরকে কিছু বলিনি সে বিষয় সে রুপ থাকতে দাও। কেননা তোমাদের পূর্বে যারা ছিল তারা বেশী বেশী প্রশ্ন করার ও তাদের নবীদের সাথে মতবিরোধ করার কারনেই ধ্বংস হয়েছে। কাজেই আমি যখন তোমাদের কোন নির্দেশ দেই, তোমরা তা যথাসাধ্য পালন করবে, আর যখন কোন বিষয়ে নিষেধ করি তখন তা পরিত্যাগ করবে।
সহিহ মুসলিম:৩১২০