একদিন এক প্রতিবেশীর কাছে শুনলাম যে তার পরিচিত একজন ভদ্রমহিলা মারা গিয়েছেন,সেখানে যাবে দেখতে,ইচ্ছে হলো তার সাথে সংগী হওয়ার। সেখানে গিয়ে দেখা গেলো কিছুটা বাক বিতণ্ড চলছে,স্বামী তার এই মৃত স্ত্রীকে দেখা নিয়ে,কেউ বলছে পারবে না কেউ বলছে পারবে।
আবার কিছু মানুষ বলছে মুর্দাকে একদম ঢেকে রাখো অন্য পুরুষ যেন না দেখে। অথচ জীবিত থাকা অবস্থায় এই ভদ্র মহিলা কখনোই নিজের মুখের সৌন্দর্যকে ঢেকে রাখেন নি। তখন তার স্বা্মী ও অন্য ব্যক্তিরা বলেনি যে আপনার মুখের সৌন্দর্যটা ঢেকে রাখেন।
আশ্চর্য আমাদের মানুষদের মন। এতো সহজাতভাবে মৃত নারীর ব্যপারে বুঝতে পারেন যে মুখ অন্য ব্যক্তি দেখলে গুনাহ হবে অথচ জীবিত থাকাকালে সেটা বুঝতে চান না।অথচ জীবিত অবস্থায় এই পর্দা ছিল অত্যন্ত জরুরী।
আচ্ছা মৃত নারীর মুখ দেখে কি জীবিত ব্যক্তির মাঝে বিয়ের বা খারাপ চিন্তা আসবে? নাকি জীবিত নারীর মুখের সৌন্দর্য দেখে অন্যের মনে কুচিন্তা আসবে?
যে ব্যক্তি মারা গেলো অর্থাৎ রুহ বের হয়ে যাওয়ার পরে আর তার কোন হিসেব নিকেস নাই কারন সে জীবিত থাকা অবস্থায় যা করেছেন তার উপর বিচার হবে। আর মারা যাবার পর জীবিতরা লাশের সাথে কি আচরন করেছে সেটা তাদের(জীবিত) জবাবদিহী করতে হবে।
একজন নারী তার মুখের সৌন্দর্য ও মুখের বাচন ভঙ্গি/কথা দিয়ে কত পরিবারের অনিষ্ট করে যাচ্ছেন তা যদি একটু চিন্তা হতো যে কত গুনাহের বোঝা তার আমলনামায় জমে যাচ্ছে তাহলে এই ধরনের ফিতনা থেকে নিজেকে সরিয়ে শরীয়তের পর্দার মধ্যে চলে আসতো। মহান আল্লাহ আমাদের সকল বোনদের বুঝ দিন। এই মুখ ঢাকা যেন আমার লাশের না হয়ে জীবিত শরীরেই হয়।
মৃতব্যক্তিকে গোসল দেওয়া, কাফন পড়ানো, জানাযার সালাত পড়া ও তাকে কবরস্থ করা ফরযে কিফায়া।
যরত উবাই ইবনে কায়াবের সূত্রে মুস্তাদরাকের হাদীসে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, “হযরত আদমের মৃত্যু হলে ফেরেশতাগণ তার গোসল, জানাযা, কাফন-দাফন ইত্যাদির কাজ সমাধা করেন। হযরত আদম থেকে আজ পর্যন্ত এই সুন্নতের প্রচলন বহাল রয়েছে।
গোসল দেওয়ার ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম সেই ব্যক্তি হকদার, যার ব্যাপারে মৃত ব্যক্তি অসিয়ত করে গিয়েছে। তারপর পুরুষের বেলায় তার পিতা বা পুত্র। তারপর অপরাপর নিকটাত্মীয়। আর মহিলার গোসলে প্রথম হকদার হলো তার অসিয়তকৃত মহিলা। তারপর তার মা। তারপর তার মেয়ে। তারপর অন্যান্য নিকটাত্মীয় মহিলাগণ।
মৃত ব্যক্তি যদি তার গোসলের জন্য কাউকে অসিয়ত করে যায়, তার অসিয়ত পুরো করা জরুরি।
যদি অসিয়ত করে না যেয়ে থাকেন সেইক্ষেত্রে স্বামী বা স্ত্রী যদি অভিজ্ঞ হয় তাহলে তার স্ত্রী বা স্বামীকে গোসল দিতে আপত্তি নেই। যেমন আসমা বিনতে উমাইস রাদিয়াল্লাহু আনহা তার স্বামী আবুবকর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে গোসল দিয়েছেন।
পরিবারের লোককেই গোসল করাতে হবে এমন বাধ্যবাধকতা নেই তবে বিশ্বস্ত এবং এ বিষয়ে ভাল জ্ঞান রাখে এ রকম লোকই উত্তম।
মৃতের গোসলে অংশগ্রহণকারীদের নির্ধারিত কোন সংখ্যা আছে কি?
গোসলদাতা ও তার একজন সহায়ক, মোট দু’জনেই যথেষ্ট।
মৃত ব্যক্তির সম্মান মর্যাদা ও সতর পর্দার দিকে সচেতন ও যত্নবান হওয়া অবশ্যই জীবিতদের কর্তব্য।
স্বামী স্ত্রীকে ও স্ত্রী স্বা্মীকে মারা যাবার পর দেখতে পারবেন কি না?
মৃত্যুর মাধ্যমে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক বাতিল হয়ে যায় না। যেকোন একজনের মৃত্যু হলে দেখতে পারে, গোসল দিতে পারে তাতে কোন অসুবিধা নেই।
-আয়েশা রা. হতে বর্নিত তিনি বলেন, যা আমি পরে অবগত হয়েছি, তা যদি আমি পূর্বে অবহিত হতে পারতাম, তাহলে নবী স. কে তার স্ত্রীগণ ব্যতিত আর কেউ গোসল দিতে পারতো না। [ইবনু মাজাহা হ/১৪৬৪; আবু দাউদ ৩১৪১]
এখান থেকে জানা যায় রাসূল স.এর মৃত্যুর সময় আয়েশা রা.জানতেন না যে স্ত্রীরাও স্বা্মীকে গোসল দিতে পারে, জানা থাকলে অন্যদের দিয়ে গোসল করাতেন না। রাসূল স.এর স্ত্রীরাই গোসল দিতেন তা উক্ত হাদীস থেকে বুঝা যায়।
ইমাম মালিক থেকে বর্ণনা আল মুয়াত্তা থেকে জানা যায়-আব্দুল্লাহ ইবনে আবি বকর রা.থেকে বর্ণিত হাদীস যে স্ত্রী হযরত আসমা বিনতে উমাইস (রা) গোসল দেন। (আল জানাইযঃ৪৬৬)
অপর আর একটি হাদীস দেখুন-
-আয়েশা (রাঃ) হতে বর্নিত তিনি বলেন, রাসুল ﷺ বাকী (কবরস্থান) হতে ফিরে এসে আমাকে মাথা ব্যাথা অবস্থায় পেলেন। তখন আমি বলছিলোম ‘হে আমার মাথা’। তিনি বললেন, ‘হে আয়েশা আমিও মাথা ব্যাথায় ভুগছি, হে আমার মাথা’!
অতপর তিনি বললেন, তুমি যদি আমার পূর্বে মারা যেতে তোমার কোন ক্ষতি হতো না। কেননা আমি তোমাকে গোসল করাতাম, কাফন পরাতাম, তোমার যানাযার সালাত আদায় করতাম এবং তোমাকে দাফন দিতাম। [ইবনু মাজাহা হ/১৪৬৫; ইরওয়া ৭০০]
এই হাদীস পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট মৃত্যুর পর স্বামী-স্ত্রী একজন অপরজনকে গোসল দেওয়া বৈধ! বরং এটাই ছিলো নবী ﷺ ও তাঁর স্ত্রীদের নিকট আকাংখিত। সুতরাং যেখানে গোসল দেওয়া ইসলামী শরীয়তে জায়েজ সেখানে দেখা দেওয়া না-জায়েজ হয় কি করে?
যখন ফাতিমা বিনতে মোহাম্মদ (রা.)-এর মৃত্যু হয়, তখন আলী ইবনে আবু তালিব (রা.) নিজেই গোসল দিয়েছেন এবং নিজেই দাফনের কাজ সম্পন্ন করেছেন।হাকেম হা/৪৭৬৯; বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/৬৯০৭; বায়হাক্বী, মা‘রেফাতুস সুনান ওয়াল আছার হা/২১৫৭; দারাকুৎনী
হা/১৮৭৩; সনদ হাসান, ইওয়াউল গালীল হা/৭০১।
গোসলের শরিয়তসম্মত পদ্ধতি হচ্ছে-
প্রথমে ইসতেনজা করাবে। অর্থাৎ মৃতব্যক্তির পেশাব বা পায়খানা জাতীয় কিছু বের হলে গোসলদানকারী হাতে একটি নেকড়া বেঁধে নিয়ে মৃতব্যক্তির পায়খানা ও পেশাবের স্থানদ্বয় ধুয়ে পরিস্কার করবে। নাভি ও হাঁটুর মাঝখানের স্থান ঢেকে নিয়ে পানি ঢালবে।
এরপর ওজু করাবে। মুখ ও নাক পানি দিয়ে মুছে দিবে। চেহারা ও হাতদ্বয় ধুয়ে দিবে। মাথা ও কানদ্বয় মাসেহ করাবে। পা দুটো ধুয়ে দিবে। এরপর বরইপাতা মিশ্রিত পানি তার মাথার উপর ঢালবে। এরপর তার ডান পার্শ্বে পানি ঢালবে। তারপর বাম পার্শ্বে পানি ঢালবে। এরপর সারা শরীরে পানি ঢালবে। শেষবার পানির সাথে কর্পুর দিবে। কর্পুর একজাতীয় সুগন্ধি; যা সবাই চিনে। কর্পুর শরীরকে ভাল রাখে এবং সুগন্ধি ছড়ায়।
এটি গোসলের উত্তম পদ্ধতি। তবে যেভাবেই গোসল করানো হোক না কেন সেটা জায়েয। গুরুত্বপূর্ণ হলো-মৃতব্যক্তির সারা শরীরে পানি পৌঁছানো ও নাপাকি দূর করা।
তবে উত্তম হলো- ইসতেনজা করানোর মাধ্যমে শুরু করা। এরপর ওজু করানো। এরপর বরই পাতার পানি দিয়ে তিনবার পানি ঢালা। এরপর সারা শরীরে তিনবার পানি ঢালা। প্রথমে ডান পাশে। তারপর বাম পাশে। তিনবার পানি ঢালবে।
যদি তিনবারের বেশিও পানি ঢালা প্রয়োজন হয় তাহলে পাঁচবার পানি ঢালা যেতে পারে। যদি পাঁচবারের বেশি প্রয়োজন হয় তাহলে সাতবার পানি ঢালবে। অর্থাৎ বেজোড় সংখ্যায় শেষ করবে।
এটি উত্তম। যদি একবার বা দুইবার গোসল করায় সেটাও জায়েয হবে। তবে উত্তম হচ্ছে- তিনবার। প্রয়োজন হলে পাঁচবার, আরও বেশি প্রয়োজন হলে সাতবার।[শাইখ বিন বাযের নুরুন আলাদ দারব ফতোয়াসমগ্র থেকে কিঞ্চিত সংক্ষেপিত]
গোসল দেওয়ার সুন্নাত হলো, প্রথমে তার লজ্জাস্থান ঢেকে দেবে, নারীর ক্ষেত্রে গলা থেকে হাঁটুর নীচ পর্যন্ত ও পুরুষের ক্ষেত্রে নাভী থেকে হাঁটু পর্যন্ত।তারপর তার সমস্ত কাপড় খুলে নিবে। অতঃপর তার মাথাটা বসার মতো করে উপরের দিকে উঠাবে এবং আস্তে করে পেটে চাপ দিবে, যাতে করে পেটের ময়লা বেরিয়ে যায়।
এরপর বেশি করে পানি ঢেলে তা পরিস্কার করে নিবে। তারপর হাতে কাপড় জড়িয়ে বা হাত মোজা পরে তা দিয়ে উভয় লজ্জা স্থানকে (দৃষ্টি না দিয়ে) ধৌত করবে। তারপর ‘বিসমিল্লাহ্’ বলবে এবং সালাতের ন্যায় অযু করাবে। তবে মুখে ও নাকে পানি প্রবেশ করাবে না। বরং ভিজা কাপড় আঙ্গুলে জড়িয়ে তা দিয়ে তার উভয় ঠোঁটের ভিতর অংশ ও দাঁত পরিস্কার করবে। একইভাবে নাকের ভিতরও পরিস্কার করবে।
পানিতে কুল পাতা মিশিয়ে তা ফুটিয়ে গোসল দেওয়া মুস্তাহাব। বরই পাতা দিয়ে ফোটানো পানি দ্বারা মৃতের মাথা ও দাঁড়ি ধৌত করতে হবে। মৃতের গোসলের পানিতে বড়ই বা কুলপাতা দেয়া শরীয়ত সম্মত, তবে ওয়াজিব নয়। আলেমগণ হাদিসের নির্দেশকে মুস্তাহাব বলেছেন। কারণ কুলপাতা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য খুব কার্যকরী। কুলপাতা না পাওয়া গেলে সাবান বা এ জাতীয় কিছু ব্যবহার করাই যথেষ্ট।
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“এক ব্যক্তি আরাফাতে ওয়াকুফ অবস্থায় হঠাৎ তার উটনী থেকে পড়ে যায়। এতে তার ঘাড় মটকে গেল অথবা বর্ণনাকারী বলেছেন, তার ঘাড় মটকিয়ে দিল। (এতে সে মারা যায়)। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে বরই পাতাসহ পানি দিয়ে গোসল করাও এবং দুই কাপড়ে তাকে কাফন দাও। তাকে সুগন্ধি লাগাবে না এবং তার মাথা ঢাকবে না। কেননা কিয়ামতের দিন সে তালবিয়া পাঠ করতে করতে উত্থিত হবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১২৬৫।]
প্রথমে শরীরের ডান পাশের সামনের দিক ধৌত করবে। তারপর পিছন দিক তারপর বাম দিক ধৌত করবে। উম্মে আতিয়্যাহ্ রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কন্যার গোসলের ব্যাপারে বলেছেন,
“তোমরা তার ডান দিক থেকে এবং অযুর স্থানসমূহ থেকে শুরু করবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১২৬৫।]
এভাবে তিনবার গোসল দিবে। প্রতিবার হালকা ভাবে পেটে হাত বুলাবে এবং ময়লা কিছু বের হলে পরিস্কার করে নিবে।
গোসলের সময় সাবান ব্যবহার করতে পারে এবং প্রয়োজন মোতাবেক তিনবারের বেশি সাত বা ততোধিক গোসল দিতে পারে। শেষবার কর্পুর মিশ্রিত করে গোসল দেওয়া সুন্নাত। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কন্যা যায়নাব রাদিয়াল্লাহু আনহার শেষ গোসলে কর্পুর মিশ্রিত করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন।
উম্মে আতিয়্যাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কন্যাগণের মধ্যে একজন মারা গেলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে গেলেন এবং বললেন, তোমরা তাকে তিনবার পাঁচবার অথবা যদি তোমরা প্রয়োজনীয় মনে কর, তবে তার চাইতে অধিকবার বরই পাতাসহ পানি দিয়ে গোসল দাও। শেষবারে কর্পূর (অথবা তিনি বলেন) ‘কিছু কর্পূর’ ব্যবহার করবে। গোসল শেষ করে আমাকে জানাবে। উম্মে আতিয়্যাহ্ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, আমরা শেষ করে তাঁকে জানালাম। তখন তিনি তাঁর চাদর আমাদের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, এটি তার ভিতরের কাপড় হিসেবে পরাও। আইয়ূব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হাফসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা সূত্রে উম্মে আতিয়্যাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেন এবং তাতে তিনি (উম্মে আতিয়্যাহ) বলেছেন, তিনি বলেছেন, তাঁকে তিন, পাঁচ, সাত বা প্রয়োজনবোধে তার চাইতে অধিকবার গোসল দাও। হাফসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, উম্মে আতিয়্যাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, আমরা তার মাথার চুলকে তিনটি বেনী বানিয়ে দেই”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১২৫৮, ১২৫৯।]
মৃতের বগল বা নাভীর নিচের চুল কাটা যাবে না। মৃতের চুল আঁচড়ানোর দরকার নেই। তবে নারীর ক্ষেত্রে তার চুলগুলোতে তিনটি বেণী বেঁধে তা পিছনে ছড়িয়ে দিবে।
উম্মে আতিয়্যাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কন্যার মাথা তিনটি বেণী করে দেন। তারা তা খুলেছেন, এরপর তা ধুয়ে তিনটি বেণী করে দেন”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১২৬০।]
সাত বার গোসল দেওয়ার পরও যদি পেট থেকে ময়লা (পেশাব বা পায়খানা) বের হতেই থাকে তবে উক্ত স্থান ধুয়ে সেখানে তুলা বা কাপড় জড়িয়ে দিবে। তারপর তাকে অযু করাবে। কাফন পরানোর পরও যদি ময়লা বের হয়, তবে আর গোসল না দিয়ে সেভাবেই রেখে দিবে। কেননা তা অসুবিধার ব্যাপার।
হজ বা ওমরায় গিয়ে ইহরাম অবস্থায় যদি কেউ মারা যায়, তবে তাকে কুল পাতা মিশ্রিত পানি দিয়ে গোসল দিবে। কিন্তু কোনো সুগন্ধি ব্যবহার করবে না এবং পুরুষ হলে কাফনের সময় তার মাথা ঢাকবে না।
আল্লাহর রাস্তায় শহীদ ব্যক্তিকে গোসল দিবে না এবং তাকে তার সাথে সংশ্লিষ্ট কাপড়েই দাফন করবে। কেননা হাদীসে এসেছে,
“নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদের শহীদদেরকে তাদের রক্তমাখা কাপড় নিয়েই দাফন করতে নির্দেশনা দেন, তিনি তাদেরকে গোসল দেন নি।” [বুখারী, ১৩৪৬]
গর্ভস্থ সন্তান যদি চার মাস অতিক্রম হওয়ার পর পড়ে যায়, তবে তার গোসল ও জানাযার সালাত আদায় করবে। আর তার বয়স যদি চার মাসের কম হয়, তবে তাতে প্রাণ না থাকার কারণে সাধারণ একটি গোশতের টুকরা গণ্য হবে। যা কোনো গোসল বা জানাযা ছাড়াই যে কোনো স্থানে মাটিতে গেড়ে দেওয়া হবে। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন
“তোমাদের প্রত্যেকের শুক্র তার মাতৃ উদরে চল্লিশ দিন জমাট থাকে। এরপর অনুরূপ চল্লিশ দিনে রক্তপিণ্ডে পরিণত হয়। এরপর অনুরূপ চল্লিশ দিনে তা একটি গোশত পিণ্ডের রূপ নেয়। এরপর আল্লাহ তাআলার তরফ থেকে একজন ফিরিশতা পাঠানো হয়। সে তাতে রুহ ফুকে দেয়। আর তাঁকে চারটি বিষয় লিপিবদ্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। আর তা হল এই তার রিযিক, তার মৃত্যুক্ষণ, তার কর্ম এবং তার বদকার ও নেককার হওয়া। সেই সত্তার কসম যিনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই, নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ জান্নাতবাসীদের মতো আমল করতে থাকে, অবশেষ তার মধ্যে ও জান্নাতের মধ্যে মাত্র একহাত ব্যবধান থাকে। এরপর তাকদীরের লিখন তার উপর জয়ী হয়ে যায়। ফলে সে জাহান্নামীদের কাজ-কর্ম শুরু করে। এরপর সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হয়। আর তোমাদের মধ্যে কোনো কোন ব্যক্তি জাহান্নামের কাজ-কর্ম করতে থাকে। অবশেষে তার ও জাহান্নামের মাঝখানে একহাত মাত্র ব্যবধান থাকে। এরপর ভাগ্যলিপি তার উপর জয়ী হয়। ফলে সে জান্নাতীদের ন্যায় আমল করে। অবশেষে জান্নাতে দাখিল হয়”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬৪৩।]
সাঈদ ইবন মুসাইয়্যিব রহ. মৃত গর্ভপাত সম্পর্কে বলেন,
“চার মাস হলে তাতে রূহ ফুক দেওয়া হয় তখন জানাযা পড়া হবে”। [মুসান্নাফ ইবন আবী শাইবা, হাদীস নং ১১৫৯৪।]
গুপ্ত আঘাত ও নির্মমভাবে নিহত ব্যক্তিদের কি গোসল দেয়া হবে?
– হ্যাঁ, তাদেরকে গোসল দেয়া হবে এবং তাদের উপর সালাত পড়া হবে। যেমন খলীফা ওমর ইব্ন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু ও খলীফা ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু নির্মমভাবে শহীদ হয়েছিলেন, অতঃপর তাদেরকে গোসল দেয়া হয়েছে এবং তাদের উপর জানাযা পড়া হয়েছে। অনরূপ আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু নির্মমভাবে শহীদ হয়ে ছিলেন, তাকেও গোসল দেয়া হয়েছে এবং তার উপর জানাযা পড়া হয়েছে।
যুদ্ধের ময়দানে মৃত যদি নানা আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়, তাকেও কি গোসল, জানাযা ও কাফন দেয়া হবে?
– হ্যাঁ, তাকেও গোসল ও কাফনসহ সব কিছু করা হবে, তার উপর জানাযা পড়া হবে। তার নিয়ত বিশুদ্ধ হলে ইনশাআল্লাহ সে শাহাদাতের মর্যাদা লাভ করবে।