নারীর বিশেষ পবিত্রতা-৪(নিফাস ও তার বিধান)

নেফাসের সংজ্ঞা: সন্তান প্রসবের কারণে জরায়ূ থেকে প্রবাহিত রক্তকে নেফাস বলা হয়। চাই সে রক্ত প্রসবের সাথেই প্রবাহিত হোক অথবা প্রসবের দুই বা তিন দিন পূর্ব থেকেই প্রসব বেদনার সাথে প্রবাহিত হোক।

শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন: ‘প্রসব ব্যথা আরম্ভ হলে মহিলা তার লজ্জাস্থানে যে রক্ত দেখতে পায় সেটাই হচ্ছে নেফাস।’ এখানে তিনি দুই অথবা তিন দিনের সাথে নির্দিষ্ট করেননি। তাঁর উদ্দেশ্য হচ্ছে এমন ব্যথা যার পরিণতিতে প্রসব হবেই। অন্যথায় তা নেফাস হিসেবে পরিগণিত হবে না।

প্রসবোত্তর রক্তস্রাব ৪০ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরেও যদি অব্যাহত থাকে এবং ৪০ দিনের পর বন্ধ হওয়ার পূর্ব অভ্যাস যদি তার থেকে থাকে বা ৪০ দিনের পর বন্ধ হওয়ার কোন লক্ষণ দেখা যায় তাহলে বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। আর তা না হলে ৪০ দিন পূর্ণ হওয়ার পর গোসল করবে। কেননা অধিকাংশ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সময় ৪০ দিনই হয়ে থাকে। তবে ৪০ দিন পূর্ণ হওয়ার পর যদি আবার মাসিক রক্তস্রাব অর্থাৎ হায়েযের সময় এসে যায় তাহলে হায়েযের সময় শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। তারপর বন্ধ হলে মনে করতে হবে যে, এটা মহিলার অভ্যাস অনুসারেই হয়েছে। সুতরাং ভবিষ্যতেও কোন সময় এ রকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে সে হিসেবে আমল করবে। আর যদি হায়েযের সময় শেষ হওয়ার পরেও রক্তস্রাব অব্যাহত থাকে তাহলে তখন ইস্তেহাযাহ গণ্য করে তার হুকুম পালন করবে।

প্রকাশ থাকে যে, প্রসবোত্তর রক্তস্রাব বন্ধ হলেই মহিলা পবিত্র হয়ে যাবে। এমনকি ৪০ দিনের পূর্বেই যদি বন্ধ হয়ে যায় তাহলেও পবিত্র হবে, সুতরাং গোসল করে নামায-রোযা আদায় করতে থাকবে এবং স্বামী-স্ত্রী সহবাসে লিপ্ত হতে পারবে। কিন্তু এক দিনের চেয়েও কম সময়ের মধ্যে যদি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে তার কোন হুকুম নেই। [মুগনী গ্রন্থে তাই বলা হয়েছে।]

মানুষের আকৃতি স্পষ্টভাবে প্রকাশ পাওয়ার সর্ব নিম্ন সময়-সীমা হচ্ছে গর্ভবতী হওয়ার পর থেকে ৮০ দিন, আর সর্বোচ্চ সময় হচ্ছে ৯০ দিন। এ প্রসঙ্গে মাজ্‌দ ইবনে তাইমিয়াহ রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন: ‘সর্ব নিম্ন সময় অথবা গর্ভধারণ করার পর থেকে ৮০ দিন অতিবাহিত হওয়ার পূর্বেই যদি প্রসব বেদনার সাথে রক্ত দেখা যায় তাহলে সে দিকে কোন ভ্রুক্ষেপই করা হবে না। আর যদি ৮০ দিন অতিক্রান্ত হওয়ার পর রক্ত দেখে তাহলে প্রসব পর্যন্ত নামায-রোযা থেকে বিরত থাকবে। প্রসবের পর যদি দেখা যায় যে, প্রসূত সন্তান বা ভ্রূণের মধ্যে মানুষের কোন আকৃতিই নেই তাহলে গর্ভবতী মহিলা তার পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসবে এবং ক্ষতিপূরণ করবে অর্থাৎ নামায-রোযার কাযা করবে। আর যদি বিষয়টি স্পষ্ট না হয় তাহলে বাহ্যিক হুকুমই মেনে চলবে অর্থাৎ নামায-রোযা থেকে বিরত থাকবে এবং কাযা করা লাগবে না। [শারহুল ইক্‌না’ নামক গ্রন্থে এভাবে বর্ণিত হয়েছে।]

 

চল্লিশ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও নেফাসের স্রাব চলতে থাকলে কি করবে?

উত্তরঃ কোন পরিবর্তন ছাড়াই যদি নেফাস বিশিষ্ট নারীর স্রাব চল্লিশ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও চলতে থাকে- যদি চল্লিশ দিনের পরের স্রাব ঋতুস্রাবের সময়ে হয়ে থাকে, তবে তা হায়েয বা ঋতু স্রাব হিসেবে গণ্য করবে। কিন্তু পূর্ববর্তী স্বাভাবিক ঋতু স্রাবের সময়ে না হয়, তবে সে সম্পর্কে বিদ্বানদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।

একদল বিদ্বান বলেন, চল্লিশ দিন পূর্ণ হলেই গোসল করে পবিত্র হয়ে যাবে এবং স্বাভাবিক নিয়মে ছালাত-ছিয়াম আদায় করবে। আর প্রবাহিত রক্ত ইস্তেহাযা বা অসুস্থতা গণ্য করবে।

আরেকদল বিদ্বান বলেন, সে অপেক্ষা করবে এবং ষাট দিন পূর্ণ করবে। কেননা ষাট দিন পর্যন্ত নেফাস হয়েছে, এমন অনেক নারীও পাওয়া গেছে। এটা বাস্তব বিষয়। কেননা প্রকৃত পক্ষে কোন কোন নারীর ষাট দিন পর্যন্তই নেফাস হয়েছে। অতএব এই ভিত্তিতে ষাট দিন পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। এরপর স্বাভাবিক ঋতু স্রাবের দিকে ফিরে যাবে। আর সেই মাসিকের সময় অপেক্ষা করে পবিত্র হলে গোসল করে নামায-রোযা আদায় করবে। এরপরও যদি স্রাব চলতেই থাকে তখন উহা ইস্তেহাযা হিসেবে গণ্য করবে।[44]

 

নেফাসের চল্লিশ দিন শেষ হওয়ার আগেই পবিত্র হয়ে গেলে বা চল্লিশ দিনের পর পূণরায় স্রাব দেখা গেলে কি করবে?

উত্তরঃ নেফাস বিশিষ্ট স্ত্রীর সাথে সহবাস করা স্বামীর জন্য জায়েয নয়। যদি চল্লিশ দিনের মধ্যে সে পবিত্র হয়ে যায়, তবে গোসল করে নামায আদায় করা তার জন্য ওয়াজিব এবং নামাযও বিশুদ্ধ। এ অবস্থায় স্বামী সহবাসও তার জন্য জায়েয। কেননা আল্লাহ বলেন,

(يسألونَكَ عَنْ الْمَحِيْضِ قُلْ هُوَ أذىً فَاعْتَزِلُوْا النِّسَاءَ فِيْ الْمَحِيْضِ وَلاَ تَقْرَبُوْهُنَّ حَتَّى يَطْهُرْنَ)

অর্থাৎ- “আর তারা তোমার কাছে জিজ্ঞাসা করে হায়েয স¤পর্কে। বলে দাও, এটা অপবিত্র। কাজেই তোমরা হায়েয অবস্থায় স্ত্রী মিলন থেকে বিরত থাক। তখন পর্যন্ত তাদের সাথে সহবাসে লিপ্ত হবে না; যতক্ষণ না তারা পবিত্র হয়ে যায়।” (সূরা বাক্বারা- ২২২)

যতক্ষণ অপবিত্রতা তথা রক্ত বিদ্যমান থাকবে ততক্ষণ স্বামীর সাথে সহবাস জায়েয হবে না। পবিত্র হয়ে গেলেই সহবাস জায়েয হবে। যেমনটি নামায আদায় করাও তার জন্য ওয়াজিব। চল্লিশ দিনের পূর্বে পবিত্র হলে, নেফাস অবস্থার যাবতীয় নিষিদ্ধতা শেষ হয়ে যাবে। তবে সহবাসের ক্ষেত্রে কিছুটা ধৈর্যাবলম্বন করা উচিত। কেননা সহবাসের ফলে পুনরায় রক্ত চালু হয়ে যেতে পারে।

চল্লিশ দিন পূর্ণ হওয়ার পর এবং পবিত্র হওয়ার পর যদি আবার রক্ত দেখা যায়, তবে উহা মাসিকের রক্ত হিসেবে গণ্য করবে। নেফাসের রক্ত নয়। মাসিকের রক্ত নারীদের কাছে পরিচিত। যখনই উহা অনুভব করবে মনে করবে উহা ঋতুস্রাব। এই রক্ত যদি প্রবাহমান থাকে এবং সামান্য সময় ব্যতীত কখনই বন্ধ হয় না, তবে উহা ইস্তেহাযা হিসেবে গণ্য হবে। তখন ঋতুর নির্দিষ্ট দিন সমূহ অপেক্ষা করবে এবং অবশিষ্ট দিন সমূহ পবিত্র হিসেবে গণ্য করবে এবং গোসল করে নামায আদায় করবে। (আল্লাহই অধিক জ্ঞাত)