নারীর বিশেষ পবিত্রতা-৩(ইস্তেহাযা ও তার বিধান)

ইস্তেহাযা ও তার বিধান

ইস্তেহাযাহর সংজ্ঞা: কোন নারীর যদি অনবরত এমনভাবে রক্ত প্রবাহিত হয় যে কোন সময়েই বন্ধ হয় না, অথবা খুব অল্প সময় যেমন মাসে এক কি দুই দিন পর্যন্ত বন্ধ থাকে তাহলে উক্ত প্রবাহমান রক্তকে ইস্তেহাযাহ বলা হয়। এক সাথে এমনভাবে রক্ত প্রবাহিত হওয়ার দৃষ্টান্ত সহীহ বুখারীতে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে, তিনি বলেন:

ফাতেমা বিনতে আবী হুবাইশ রাদিয়াল্লাহু আনহা রাসূল সা.-কে বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! আমি পবিত্র হতে পারছি না। অন্য রেওয়ায়েতে আছে: আমার অবিরাম রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে যার ফলে আমি পবিত্রতা অর্জন করতে পারছি না।

মুস্তাহাযাহ তথা অস্বাভাবিক রক্তস্রাবে আক্রান্ত নারীর বিভিন্ন অবস্থা

অনবরত রক্ত প্রবাহিত হয় এমন নারীর অবস্থা তিন প্রকার:

১) ইস্তেহাযাহ অর্থাৎ অনবরত রক্ত প্রবাহ আরম্ভ হওয়ার পূর্বে তার প্রতি মাসে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ঋতুস্রাবের অভ্যাস ছিল। যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে পূর্ব নির্ধারিত সময় পর্যন্ত প্রবাহমান রক্তকে হায়েয হিসেবে গণ্য করা হবে এবং এর উপর হায়েযের বিধি-বিধান কার্যকরী হবে। নির্দিষ্ট সময়ের পরের রক্তস্রাবকে ইস্তেহাযাহ গণ্য করে তার নিয়ম-নীতি মেনে চলতে হবে। যেমন, একজন নারীর প্রতি মাসের প্রথম দিকে ছয় দিন করে রক্তস্রাব হয়ে থাকে। এখন হঠাৎ করে দেখা গেল যে, ঐ নারীর অবিরাম রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে, তাহলে তখন প্রতি মাসের প্রথম ছয় দিনে প্রবাহিত রক্তকে হায়েয হিসেবে গণ্য করে বাকীটাকে ইস্তেহাযাহ হিসেবে ধরে নিতে হবে। কেননা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার হাদীস দ্বারা তাই প্রমাণিত হয়। হাদীসটি হচ্ছে:

ফাতেমা বিনতে আবী হুবাইশ রাদিয়াল্লাহু আনহা রাসূল সা.-কে প্রশ্ন করেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার অবিরাম রক্তস্রাব হচ্ছে যার কারণে আমি পবিত্র হতে পারছি না। এমতাবস্থায় আমি কি নামায ছেড়ে দেব? উত্তরে নবী সা. বললেন: না, এটি রগ থেকে বের হয়ে আসা রক্ত। তবে হ্যাঁ, সাধারণতঃ অন্যান্য মাসে যতদিন তুমি ঋতুবতী থাকতে ততদিন নামায থেকে বিরত থাক তারপর গোসল করে নামায আদায় কর। [বুখারী]

আর সহীহ মুসলিমে আছে:

নবী করীম সা. উম্মে হাবীবা বিনতে জাহ্‌শ রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বলেছিলেন: তুমি ঐ পরিমাণ সময় অপেক্ষা কর যে পরিমাণ সময় সাধারণতঃ ঋতুস্রাবে আক্রান্ত থাক। অতঃপর গোসল করে নামায আদায় কর।))

এ থেকে বুঝা গেল যে, মুস্তাহাযাহ অর্থাৎ অবিরাম রক্তস্রাব হয় এমন নারী ঐ পরিমাণ সময় অপেক্ষা করবে এবং নামায থেকে বিরত থাকবে যে পরিমাণ সময় সে সাধারণতঃ ঋতুস্রাবে আক্রান্ত থাকত। তারপর গোসল করে নামায আদায় করতে থাকবে এবং রক্তের কারণে নামায আদায়ে মনে কোন রকম দ্বিধা রাখবে না।

২) ইস্তেহাযাহ আরম্ভ হওয়ার পূর্বে আক্রান্ত নারীর ঋতুস্রাবের কোন নির্দিষ্ট সময়-সীমা নেই। অর্থাৎ জীবনে এটাই তার প্রথম রক্তস্রাব। এমতাবস্থায় যতক্ষণ পর্যন্ত প্রবাহিত রক্তে কালো বর্ণ অথবা গাঢ়তা কিংবা কোন গন্ধ থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত হায়েযের বিধি-বিধান কার্যকরী হবে। অন্যথায় ইস্তেহাযাহ হিসেবে গণ্য করে তার নিয়ম-নীতি মেনে চলতে হবে। যেমন, একজন নারী জীবনে প্রথম লজ্জাস্থানে রক্ত দেখলো এবং সে রক্তকে দশদিন পর্যন্ত কালো দেখেছে এবং মাসের অবশিষ্ট দিনগুলিতে লাল দেখেছে। অথবা দশদিন পর্যন্ত গাঢ় ও ঘন ছিল এবং মাসের অবশিষ্ট দিনগুলিতে পাতলা ছিল। অথবা দশদিন পর্যন্ত তার মধ্যে গন্ধ ছিল এবং তার পরে কোন গন্ধই থাকে নাই, তাহলে প্রথম দৃষ্টান্তে প্রমাহমান রক্ত কালো বর্ণ থাকা পর্যন্ত, দ্বিতীয় দৃষ্টান্তে গাঢ়তা থাকা পর্যন্ত এবং তৃতীয় দৃষ্টান্তে গন্ধ থাকা পর্যন্ত হায়েয হিসেবে গণ্য হবে এবং এর পর হতে ইস্তেহাযাহ হিসেবে গণ্য হবে। কারণ হাদীসে বর্ণিত আছে নবী করীম স. ফাতেমা বিনতে আবী হুবাইশ রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বলেছেন:

যখন হায়েযের রক্ত দেখা দিবে তখন তা কালো বর্ণের হবে যা চেনা যায়। সুতরাং কালো বর্ণের রক্ত দেখা দিলে নামায থেকে বিরত থাক। আর কালো ছাড়া অন্য কোন বর্ণ দেখা দিলে ওযু করে নামায আদায় কর। কেননা তা রগ থেকে বের হয়ে আসা রক্ত।

[এ হাদীসটি ইমাম আবু দাউদ ও ইমাম নাসায়ী বর্ণনা করেছেন এবং ইবনে হিব্বান ও হাকেম বিশুদ্ধ বলে মতামত দিয়েছেন।] প্রকাশ থাকে যে, উক্ত হাদীসের সনদ ও মূল উদ্ধৃতিতে কিছু অসুবিধা থাকলেও ওলামায়ে কেরাম এর উপর আমল করেছেন। এবং অধিকাংশ নারী জাতির নিয়মিত অভ্যাসের দিকে লক্ষ্য করে হাদীসখানার উপর আমল করাই উত্তম।

৩) মুস্তাহাযাহ নারীর পূর্বে ঋতুস্রাবের না কোন নির্দিষ্ট সময়-সীমা আছে না ইস্তেহাযাহ ও হায়েযের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টিকারী কোন চিহ্ন আছে। অর্থাৎ জীবনে এটাই তার প্রথম রক্তস্রাব এবং রক্ত একাধারে অবিরাম বের হচ্ছে। প্রবাহমান রক্ত পুরোটাই এক ধরনের অথবা বিভিন্ন রকমের যেটাকে হায়েয হিসেবে গণ্য করা সম্ভব নয়। এমতাবস্থায় অধিকাংশ নারীর ঋতুস্রাবের সময়-সীমা অনুযায়ী আমল করতে হবে। অর্থাৎ অবিরাম রক্তস্রাব আরম্ভ হওয়ার পর থেকে প্রতি মাসে ছয় অথবা সাত দিন হায়েযের নিয়ম-নীতি কার্যকরী হবে। তারপর ইস্তেহাযার হুকুম পালন করতে হবে। যেমন, একজন মেয়ের মাসের ৫ তারিখে রক্ত প্রবাহ আরম্ভ হয়েছে এবং জীবনে এটাই তার প্রথম। রক্ত বিরতহীনভাবে বের হচ্ছে এতে হায়েযের কোন চিহ্ন নেই। রং ও গন্ধ ইত্যাদি দিয়ে পার্থক্য করারও কোন সুযোগ নেই। এমতাবস্থায় প্রতি মাসের ৫ তারিখ থেকে ছয় অথবা সাত দিন হায়েযের হুকুম পালন করতে হবে। কারণ হামনাহ বিনতে জাহ্‌শ রাদিয়াল্লাহু আনহা এ ব্যাপারে প্রিয় নবী সা.-এর শরণাপন্ন হয়ে বলেছিলেন:

হে আল্লাহর রাসূল! আমার তো অনেক দীর্ঘ সময় ধরে খুব বেশী পরিমাণে রক্তস্রাব হচ্ছে। এ অবস্থায় আপনার মতামত কি? এটা তো আমার নামায ও রোযা আদায়ের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাসূল সা. বললেন: আমি তোমাকে যোনীতে তুলা ব্যবহার করার পর পরামর্শ দিচ্ছি, তুলা রক্ত টেনে নিবে। তিনি পাল্টা প্রশ্ন করলেন যে, আমার প্রবাহিত রক্ত তার চেয়েও বেশী। তখন নবী সা. ইরশাদ করলেন: এটা শয়তানের একটা,খোঁচা মাত্র। আপাততঃ তুমি ছয় অথবা সাত দিন হায়েযের হুকুম পালন করে চল। তারপর ভাল করে গোসল কর। যখন তুমি মনে করবে যে, তুমি পবিত্রতা অর্জন করেছ তখন ২৪ দিন অথবা ২৩ দিন নামায ও রোযা আদায় করতে থাক।

[হাদীসখানা ইমাম আহমদ, ইমাম আবু দাউদ সহীহ বলেছেন এবং ইমাম বুখারী থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি হাসান বলেছেন।]

স্মরণ রাখতে হবে যে, উল্লিখিত হাদীসে ছয় অথবা সাত দিনের কথা বলা হয়েছে। এর অর্থ এই নয় যে, এটাকে ইচ্ছামত গ্রহণ করবে। মূলতঃ একটা সমাধান দেয়ার উদ্দেশ্যেই ইজতেহাদ করে এরকম বলা হয়েছে। সুতরাং রক্তস্রাবে আক্রান্ত নারীর অবস্থা ও বয়স ইত্যাদির সঙ্গে পূর্ণ সামঞ্জস্য ও সংগতি রেখে হায়েযের সময় নির্দিষ্ট করবে তা যদি ছয় দিন হয় তাহলে ছয় দিন এবং সাত দিন হলে সাতই ধার্য্য করবে।

মুস্তাহাযার সদৃশ নারীর অবস্থার বিবরণ:

জরায়ূতে অথবা জরায়ূর আশে-পাশে অপারেশন করার কারণে যদি লজ্জাস্থান দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হয় তাহলে তখন দুই অবস্থায় দুই প্রকার হুকুম পালন করতে হবে।

১) এ ব্যাপারে যদি নিশ্চিত হওয়া যায় যে, অস্ত্রোপচারের পর আর কোন ঋতুস্রাবের সম্ভাবনা নেই, অথবা অপারেশনের মাধ্যমে এমনভাবে গর্ভাশয়ের পথকে বন্ধ করা হয়েছে যে, আর কোন প্রকার রক্ত সেখান থেকে বের হবে না, তাহলে এই নারীর ক্ষেত্রে মুস্তাহাযার হুকুম প্রযোজ্য হবে না। এবং তার হুকুম ঐ মহিলার হুকুমের মতো হবে যে ঋতুস্রাব থেকে পবিত্র হওয়ার পর পুনরায় লজ্জাস্থানে হলুদ অথবা মাটি বর্ণের রক্ত অথবা স্যাঁতসেঁতে কিছু দেখতে পেল। সুতরাং এমতাবস্থায় নামায-রোযা ছেড়ে দেবে না, সহবাসও নিষিদ্ধ নয় এবং এ রক্তের কারণে গোসল করাও ওয়াজিব নয়। তবে নামাযের সময় রক্তটাকে পরিষ্কার করা এবং কাপড়ের কোন টুকরা দিয়ে লজ্জাস্থানে পট্টি বাঁধা আবশ্যক যেন রক্ত বের হতে না পারে। অতঃপর নামাযের ওযু করবে।

স্মরণ রাখতে হবে যে, উল্লিখিত অবস্থায় পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের ওয়াক্ত আরম্ভ হওয়ার পরেই ওযু করবে, আর নফল নামাযের ক্ষেত্রে নামাযের ইচ্ছা করার সময় ওযু করবে।

২) অস্ত্রোপচারের পর আর ঋতুস্রাব আসবে না এ ব্যাপারে যদি নিশ্চয়তা না থাকে বরং আসারই সম্ভাবনা থাকে তাহলে মুস্তাহাযাহ নারীর মতো হুকুম পালন করতে হবে। কারণ নবী করীম ৎ ফাতেমা বিনতে আবী হুবাইশকে বলেছিলেন:

এটা হায়েয নয় বরং একটি শিরা নিসৃত রক্ত। সুতরাং যখন হায়েয আসবে তখন নামায থেকে বিরত থাক।))

এ থেকে সাব্যস্ত হলো যে, মুস্তাহাযাহ নারীর হুকুম কেবল মাত্র সেই মহিলার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে যার ঋতুস্রাব হওয়ার বা বন্ধ হওয়ার উভয় সম্ভাবনা রয়েছে। পক্ষান্তরে যে সকল মহিলার ঋতুস্রাবের সম্ভাবনা নেই তাদের লজ্জাস্থান থেকে প্রবাহিত রক্ত রগের রক্ত হিসেবে পরিগণিত হবে।

ইস্তেহাযার বিধি-বিধান

নারীর লজ্জাস্থান থেকে প্রবাহিত রক্ত কখনো কখনো হায়েয হিসেবে এবং কখনো ইস্তেহাযাহ হিসেবে বিবেচিত হয়। যখন হায়েয হিসেবে গণ্য হবে তখন হায়েযের বিধি-বিধান কার্যকরী হবে। আর যখন ইস্তেহাযাহ হিসেবে গণ্য হবে তখন ইস্তেহাযার নিয়ম-নীতি পালন করতে হবে।

মূলতঃ ইস্তেহাযার হুকুম আর পবিত্রতার হুকুম একই। মুস্তাহাযাহ নারী এবং পবিত্র নারীর মধ্যে নিম্নলিখিত কয়েকটি বিষয় ছাড়া আর কোন পার্থক্য নেই।

১) মুস্তাহাযাহ নারীর উপর প্রতি নামাযে ওযু করা ওয়াজিব। প্রমাণ হচ্ছে নবী সা. ফাতেমা বিনতে আবী হুবাইশকে বলেছেন:

অত:পর তুমি প্রত্যেক নামাযের জন্য ওযু কর।)) [ইমাম বুখারী রাহিমাহুল্লাহ হাদীসটিকে ‘গুস্‌লুদ্দাম’ অর্থাৎ রক্ত ধৌত করার অধ্যায়ে বর্ণনা করেছেন।]

হাদীসের ব্যাখ্যা হচ্ছে: তুমি ইস্তেহাযাহ অবস্থায় ফরয অর্থাৎ ওয়াক্তি নামাযের জন্য নামাযের সময় আরম্ভ হওয়ার পরেই ওযু করবে। আর নফল নামাযের ক্ষেত্রে যখন নামায পড়ার ইচ্ছা করবে তখন ওযু করলেই চলবে।

২) মুস্তাহাযাহ নারী যখন ওযু করার ইচ্ছা করবে তখন রক্তের দাগ ধৌত করে যোনীতে তুলা দিয়ে পট্টি বেঁধে নিবে, যেন উক্ত তুলা রক্তটাকে আঁকড়ে ধরে। এ প্রসঙ্গে মুহাম্মাদ স. হামনাহ রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বলেছেন:

আমি তোমাকে লজ্জাস্থানে কুরসুফ তথা নেকড়া বা তুলা ব্যবহার করার উপদেশ দিচ্ছি। কেননা নেকড়া বা তুলা রক্তটাকে টেনে নিবে। জবাবে হামনাহ বললেন: আমার প্রবাহমান রক্তের পরিমাণ তদপেক্ষাও বেশী। অতঃপর রাসূল স. বললেন: তাহলে তুমি লজ্জাস্থানে কাপড় ব্যবহার কর। হামনাহ বললেন: প্রবাহমান রক্তের পরিমাণ তার চেয়ে আরো বেশী। এরপর রাসূল সা. হুকুম দিলেন যে, তুমি তাহলে যোনীর মুখে লাগাম বেঁধে নাও।

রক্তের দাগ-চিহ্ন পরিষ্কার করে যোনীতে তুলা দিয়ে পট্টি বাঁধার পরেও যদি রক্ত প্রবাহিত হয় তাহলে এতে কোন অসুবিধা নেই। কেননা এ প্রসঙ্গে রাসূলে করীম সা.-এর হাদীস রয়েছে যে তিনি ফাতেমা বিনতে আবী হুবাইশ রাদিয়াল্লাহু আনহাকে নির্দেশ দিয়েছেন:

যে কয়দিন তুমি ঋতুস্রাবে আক্রান্ত থাকবে সে কয়দিন নামায থেকে বিরত থাক। তারপর গোসল করে প্রতি নামাযের জন্য ওযু কর এবং নামায আদায় কর, যদিও রক্ত প্রবাহিত হয়ে চাটাইর উপর পড়ে তাতেও কোন অসুবিধা নেই।)) [আহমদ ও ইবনে মাজাহ]

৩) সহবাস প্রসঙ্গ: সহবাস বর্জন করলে যদি কোন বৈরিতার আশঙ্কা থাকে তাহলে ওলামায়ে কেরামের মাঝে এর বৈধতা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। তবে সঠিক অভিমত হচ্ছে, ইস্তেহাযার অবস্থায় স্ত্রী সঙ্গম জায়েয। কেননা নবী করীম সা.-এর যুগে দশ অথবা ততোধিক সংখ্যক মহিলা ইস্তেহাযাতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। অথচ আল্লাহ তা’আলা ও তাঁর প্রিয় রাসূল সা. তাঁদের সঙ্গে সহবাস করতে নিষেধ করেননি অথচ কুরআন মজীদে বলা হয়েছে:

“তোমরা হায়েযের অবস্থায় স্ত্রী সঙ্গম থেকে বিরত থাক।” [সূরা আল-বাকারাহ: ২২২]

এ আয়াত প্রমাণ করে যে হায়েয ছাড়া অন্য কোন অবস্থায় স্ত্রী মিলন থেকে বিরত থাকা ওয়াজিব নয়। দ্বিতীয়তঃ মুস্তাহাযাহ নারীর নামায যেহেতু জায়েয সেহেতু সঙ্গমও জায়েয। কেননা সঙ্গম তো নামাযের চেয়ে আরো সহজ। মুস্তাহাযাহ নারীর সাথে সহবাস করাটাকে ঋতুবতী মহিলার সঙ্গে সহবাস করার সাথে বিচার-বিবেচনা করলে চলবে না। কারণ এ দুটো কখনো এক হতে পারে না। এমনকি মুস্তাহাযাহ নারীর সাথে সঙ্গম করাকে যারা হারাম মনে করেন তাদের কাছেও দুটো এক নয়। সুতরাং উভয়ের মধ্যে অনেক পার্থক্য থাকায় একটাকে অপরটার উপর কিয়াস করা শুদ্ধ হবে না।