নামাযে পঠিত বিষয়গুলোর অর্থ ও শিক্ষা—১২(বিতর সালাত)

 

                           দয়াময় মেহেরবান আল্লাহর নামে

যে সমস্ত নামায আদায় করার ব্যাপারে অধিক গুরুত্বারোপ করা হয়েছে এবং তাতে অফুরন্ত সওয়াবের উল্লেখ হয়েছে তাকে বলা হয় সুন্নাতে মুআক্কাদা নামায। তম্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেঃ পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামাযের সাথে সংশ্লিষ্ট ১২ রাকাত নামায,বিতর সালাত।

বিতর সালাত

আমাদের সমাজে বিতর সালাত একভাবে প্রচলিত ছিল,এখনো আছে, তবে আলহামদুলিল্লাহ এখন অনেকেই সহিহ পদ্ধতি জেনে সেই অনুযায়ী আমল করা শুরু করেছেন। আসলে এটাই মুমিনের চরিত্র। যখনই সহিহ  হাদীস জানা যাবে তখন আর পূর্ব নিয়মের উপর আমল করার কোন ওজর নেই। যখন জানা যায় নাই বা সমাজের ধর্মীয় ব্যক্তিদের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে আমল করা হয়েছে, তা ভুল হলেও সেই জন্য ইন শা আল্লাহ মহান আল্লাহ ক্ষমা করবেন, তবে জানার চেষ্টা থাকতে হবে অবশ্যই। দুনিয়ার প্রয়োজনে আমরা জানার জন্য কতভাবে সময় ও শ্রম দিয়ে থাকি,আখেরাতের স্থায়ী জীবনের ফলাফল যেন সফল হয়, সেই বিষয়গুলো জানা আমাদের অবশ্যই কর্তব্য।

বিতর সালাত অধিকাংশ স্কলার্স বলেছেন সুন্নাতে মুয়াক্কাদা(অবশ্য পালনীয় সুন্নাহ) এবং কেউ বলেছেন ওয়াজিব।

তবে বিতর নামাজের গুরুত্ব ও ফযীলত অনেক বেশী।যেমন

খারেজাহ্‌ ইবনে হুযাফাহ্‌ (রাঃ) বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা আমাদের নিকট এসে বললেন: নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে একটি নামায দিয়ে অনুগ্রহ করেছেন। উহা তোমাদের জন্য লাল উটের চাইতে উত্তম। তা হচ্ছে  বিতর নামায। এ নামায আদায় করার জন্য তিনি সময় নির্ধারণ করেছেন, এশার নামাযের পর থেকে ফজর উদিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত।

আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ নামায, অনুচ্ছেদঃ বিতর নামায মুস্তাহাব, হা/১২০৮। তিরমিযি, অধ্যায়ঃ নামায, অনুচ্ছেদঃ বিতর নামাযের ফযীলত, হা/৪১৪।

আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিতর নামায পড়েছেন এবং বলেছেন, হে কুরআনের অনুসারীগণ তোমরা বিতর নামায পড়। কেননা আল্লাহ তা’আলা একক, তিনি বিতর নামায পছন্দ করেন।

আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ বিতর নামায, অনুচ্ছেদঃ বিতর নামায মুস্তাহাব হা/১৪১৬। ছহীহ ইবনু মাজাহ্‌- আলবানী হা/১/১৯৩।

রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ নামায গুরুত্ব সহকারে আদায় করতেন। এমনকি সফরে গেলেও এ নামায পড়া ছাড়তেন না।

 

ইবনু উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সফর অবস্থায় ফরয নামায ব্যতীত রাতের নফল নামায ইঙ্গিতের মাধ্যমে নিজ বাহনের উপর বসে- বাহন যে দিকে যায় সে দিকেই- পড়তেন। তিনি বিতর নামায আরোহীর উপর পড়তেন।

বুখারী, অধ্যায়ঃ জুমআর নামায, অনুচ্ছেদঃ সফরে বিতর পড়া, হা/৯৪৫।

বিতর সালাতের সময়ঃ

 ইশার নামাযের পর থেকে নিয়ে ফজর সালাতের সময়ের আগ পর্যন্ত। উক্ত সময়ের মধ্যবর্তী সময়ে এ নামায আদায় করবে।

বিতরের সময় এশার পর থেকে নিয়ে ফজরের আগে পর্যন্ত। মহানবী (সাঃ) বলেন, “আল্লাহ তোমাদেরকে একটি অতিরিক্ত নামায প্রদান করেছেন। আর তা হল বিতরের নামায সুতরাং তোমরা তা এশা ও ফজরের মধ্যবর্তী সময়ে পড়ে নাও।” (আহমাদ, মুসনাদ, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ১০৮নং)

সাহাবী গুযাইফ বিনহারেস বলেন, একদা আমি আয়েশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম যে, ‘— নবী (সাঃ) বিতরের নামায প্রথম রাত্রিতে পড়তেন, নাকি শেষ রাত্রিতে?’ তিনি বললেন, ‘কখনো তিনি প্রথম রাত্রিতে বিত্‌র পড়তেন, আবার কখনো শেষ রাত্রিতে।’ আমি বললাম, ‘আল্লাহু আকবার! সেই আল্লাহর প্রশংসা যিনি (দ্বীনের) ব্যাপারে প্রশস্ততা রেখেছেন।—’ (মুসলিম,  আবূদাঊদ, সুনান ২০৯, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান, মিশকাত ১২৬৩নং)

অবশ্য যে ব্যক্তি মনে করে যে, সে শেষ রাত্রে উঠতে পারবে না, তার জন্য উত্তম হল প্রথম রাত্রে বিত্‌র পড়ে ঘুমানো। পক্ষান্তরে যে মনে করে যে, সে শেষ রাত্রে উঠতে পারবে তার জন্য উত্তম হল শেষ রাত্রে বিত্‌র পড়া।

মহানবী (সাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি ধারণা করে যে, সে শেষ রাত্রে উঠতে পারবে না, তার জন্য উত্তম হল প্রথম রাত্রে বিত্‌র পড়ে নেওয়া। পক্ষান্তরে যে ধারণা করে যে, সে শেষ রাত্রে উঠতে পারবে তার জন্য উত্তম হল শেষ রাত্রে বিত্‌র পড়া। কারণ, শেষ রাতের নামাযে ফিরিশ্‌তা উপস্থিত হন এবং এটাই হল শ্রেষ্ঠতম।” (আহমাদ, মুসনাদ, মুসলিম,  তিরমিযী, সুনান, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান, মিশকাত ১২৬০নং)

একদা তিনি হযরত আবূ বাক্‌র (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কখন বিত্‌র পড়?” আবূ বাক্‌র (রাঃ) বললেন, ‘প্রথম রাত্রে এশার পরে।’ অতঃপর তিনি হযরত উমার (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, “আর উমার তুমি?” উমার (রাঃ) বললেন, ‘শেষ রাতে।’ পরিশেষে তিনি বললেন, “কিন্তু তুমি হে আবূ বাক্‌র! স্থির-নিশ্চয়তা অবলম্বন করে থাক। আর তুমি হে উমার! (শেষ রাতে উঠার পূর্ণ) আত্মবিশ্বাস গ্রহণ করে থাক।” (আহমাদ, মুসনাদ, আবূদাঊদ, সুনান,হাকেম, মুস্তাদরাক)

শেষ জীবনে মহানবী (সাঃ) শেষ রাতেই বিত্‌র পড়তেন। কেননা, সেটাই ছিল উত্তম। এতদসত্ত্বেও তিনি তাঁর একাধিক সাহাবীকে স্থির-নিশ্চয়তা অবলম্বন পূর্বক প্রথম রাত্রে বিত্‌র পড়ে নিতে বিশেষ উপদেশ দিতেন। যেমন উপদেশ দিয়েছিলেন হযরত আবূ হুরাইরা (রাঃ)-কে। (বুখারী, মুসলিম,  মিশকাত ১২৬২নং)

হযরত সা’দ বিন আবী অক্কাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর মসজিদে এশার নামায পড়ে এক রাকআত বিত্‌র পড়ে নিতেন। তাঁকে বলা হল, ‘আপনি কেবল এক রাকআত বিত্‌র পড়েন, তার বেশী পড়েন না (কি ব্যাপার)?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, আমি আল্লাহর রসূল (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, “যে ব্যক্তি বিত্‌র না পড়ে ঘুমায় না, সে হল স্থির-নিশ্চিত মানুষ।” (আহমাদ, মুসনাদ)

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার প্রাণপ্রিয় বন্ধু আমাকে তিনটি বিষয়ে উপদেশ দিয়েছেন, মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত আমি উহা পরিত্যাগ করব না। ১) প্রত্যেক মাসে তিনটি নফল রোযা (প্রত্যেক আরবী মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ)

২) চাশতের নামায (ছালাতুয্‌ যুহা),

৩) নিদ্রা যাওয়ার পূর্বে বিতর নামায পড়া। বুখারী, হা/১১০৭ মুসলিম,

বিতর সালাতের রাক’আত সংখ্যাঃ

বিতর অর্থই হলো বেজোড়। বিত্‌র নামায একটানা এক সালামে  ৯, ৭, ৫, ৩ রাকআত পড়া যায়।

৯ রাকআত বিতরের নিয়ম হল, ৮ রাকআত একটানা পড়ে তাশাহ্‌হুদে বসতে হবে। তাতে আত্‌-তাহিয়্যাত ও দরুদ-দুআ পড়ে সালাম না ফিরে উঠে গিয়ে আরো এক রাকআত পড়ে সালাম ফিরতে হবে। (মুসলিম,  মিশকাত ১২৫৭নং)

৭ রাকআত বিতরের নিয়ম হল, ৬ রাকআত একটানা পড়ে তাশাহ্‌হুদে বসতে হবে। তাতে আত্‌-তাহিয়্যাত ও দরুদ-দুআ পড়ে সালাম না ফিরে উঠে গিয়ে আরো এক রাকআত পড়ে সালাম ফিরতে হবে। (সুনানু আরবাআহ (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ ও ইবনে মাজাহ্‌), আবূদাঊদ, সুনান ১৩৪২, নাসাঈ, সুনান ১৭১৯নং)

কোন কোন বর্ণনা মতে ষষ্ঠ রাকআতে না বসে একটানা ৭ রাকআত পড়ে সর্বশেষে তাশাহহুদ পড়ে সালাম ফিরতে হবে। (নাসাঈ, সুনান ১৭১৮নং)

৫ রাকআত বিতরের নিয়ম হল, ৫ রাকআত একটানা পড়ে তাশাহ্‌হুদে বসতে হবে। তাতে আত্‌-তাহিয়্যাত ও দরুদ-দুআ পড়ে সালাম ফিরতে হবে। (বুখারী, মুসলিম,  নাসাঈ, সুনান ১৭১৭, মিশকাত ১২৫৬নং)

৩ রাকআত বিতরের নিয়ম হল দুই প্রকার:

(ক) ২ রাকআত পড়ে সালাম ফিরে দিতে হবে। অতঃপর উঠে পুনরায় নতুন করে আরো এক রাকআত পড়ে সালাম ফিরতে হবে। (ইবনে আবী শাইবা, ইর: ২/১৫০)  ইবনে উমারও এইভাবে বিত্‌র পড়তেন। (বুখারী)

(খ) ৩ রাকআত একটানা পড়ে তাশাহ্‌হুদে বসতে হবে। তাতে আত্‌-তাহিয়্যাত ও দরুদ-দুআ পড়ে সালাম ফিরতে হবে। (হাকেম, মুস্তাদরাক ১/৩০৪, বায়হাকী ৩/২৮, ৩/৩১) এ ক্ষেত্রে মাগরেবের নামাযের মত মাঝে (২ রাকআত পড়ে) আত্‌-তাহিয়্যাত পড়া যাবে না। যেহেতু আল্লাহর রসূল (সাঃ) বিতরকে মাগরেবের মত পড়তে নিষেধ করেছেন। (ইবনে হিব্বান, সহীহ ২৪২০,হাকেম, মুস্তাদরাক ১/৩০৪, বায়হাকী ৩/৩১, দারাক্বুত্বনী, সুনান ১৬৩৪নং)

এতদ্ব্যতীত ৩ রাকআত বিত্‌র মাগরেবের মত করে পড়া, (দারাক্বুত্বনী, সুনান ১৬৩৭নং) নতুন করে তাহ্‌রীমার তকবীর দেওয়ার মত (উল্টা) তকবীর দিয়ে পুনরায় হাত বেঁধে কুনূত পড়া ইত্যাদি কিছু সলফ কর্তৃক বর্ণনা করা হলেও তা সহীহ নয়। (ইর: ৪২৭নং, তুহ্‌ফাতুল আহওয়াযী ১/৪৬৪) অতএব তা বিদআত ও পরিত্যাজ্য।

১ রাকআত বিত্‌র :

বিত্‌র এক রাকআতও পড়া যায়। স্বয়ং মহানবী (সাঃ) এক রাকআত বিত্‌র পড়তেন। তিনি বলেন, “রাতের নামায দু রাকআত দু রাকআত। অতঃপর তোমাদের কেউ যখন ফজর হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করে তখন সে যেন এক রাকআত বিত্‌র পড়ে নেয়।” (বুখারী, মুসলিম,  মিশকাত ১২৫৪নং)

তিনি আরো বলেন, “বিত্‌র হল শেষ রাতে এক রাকআত।” (মুসলিম,  মিশকাত ১২৫৫নং)

তিনি বলেন, “বিত্‌র হল প্রত্যেক মুসলিমের জন্য হ্‌ক বা সত্য। সুতরাং যে ৫ রাকআত বিত্‌র পড়তে পছন্দ করে সে তাই পড়ুক, যে ৩ রাকআত পড়তে পছন্দ করে সে তাই পড়ুক এবং যে এক রাকআত পড়তে পছন্দ করে সে তাই পড়ুক।” (আবূদাঊদ, সুনান ১৪২২, নাসাঈ, সুনান, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান, মিশকাত ১২৬৫নং)

ইবনে আব্বাস (রাঃ)-কে বলা হল যে, মুআবিয়া (রাঃ) এশার পরে এক রাকআত বিত্‌র পড়লেন (সেটা কি ঠিক)? উত্তরে তিনি বললেন, ‘তিনি ঠিকই করেছেন। তিনি তো ফকীহ্‌। তাঁকে নিজের অবস্থায় ছেড়ে দাও, তিনি নবী (সাঃ)-এর সাহাবী।’ (বুখারী, মিশকাত ১২৭৭নং)

বিতর সালাতে কোন সূরা পড়বেঃ

নামাযে সূরা ফাতিহার পর যে কোন সূরা পড়া যায়।

তবে মুস্তাহাব হল, প্রথম রাকআতে সূরা আ’লা, দ্বিতীয় রাকআতে সূরা কাফিরুন এবং তৃতীয় রাকআতে সূরা ইখলাস পড়া। (আহমাদ, মুসনাদ, নাসাঈ, সুনান, দারেমী, সুনান,হাকেম, মুস্তাদরাক, মিশকাত ১২৭০-১২৭২নং)

মহানবী (সাঃ) কখনো কখনো তৃতীয় রাকআতে সূরা ইখলাসের সাথে সূরা নাস ও ফালাকও পাঠ করতেন। (আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান,হাকেম, মুস্তাদরাক ১/৩০৫)

বিতর সালাতে দু’আ কুনূতঃ

সমাজে প্রচলিত কথা যে কুনূত পড়া ওয়াজিব যা সহিহ নয়।

এটা একটি দু’আ। বিতরের কুনূতকে কুনূতে গায়র নাযেলাহ্‌ বলা হয়। আর তা সব সময় প্রত্যেক রাত্রে বিত্‌র নামাযে পড়া হয়। অবশ্য কুনূতের দুআ পড়া মুস্তাহাব; জরুরী নয়। সুতরাং কেউ ভুলে ছেড়ে দিয়ে সিজদায় গেলে সহু সিজদা লাগে না। যেমন প্রত্যেক রাত্রে তা নিয়মিত না পড়ে মাঝে মাঝে ত্যাগ করা উচিত। (সিফাতু স্বালাতিন নাবী (সাঃ), আলবানী ১৭৯পৃ:, আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ৪/২৭)

বিতর সালাতের শেষ রাক’আতের কির’আত করার পর রুকু করার পূর্বে বা পরে দু’আ কুনূত পড়া যায়।

কুনূতের দুআ (শেষ রাকআতের) রুকুর আগে বা পরে যে কোন স্থানে পড়া যায়। হুমাইদ বলেন, আমি আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম যে, কুনূত রুকূর আগে না পরে? উত্তরে তিনি বললেন, ‘আমরা রুকূর আগে ও পরে কুনূত পড়তাম।’ (ইবনে মাজাহ্‌, সুনান, মিশকাত ১২৯৪নং)

অনুরুপ (দুআর মত)হাত তোলা ও না তোলা উভয় প্রকার আমলই সলফ কর্তৃক বর্ণিত আছে। (তুহ্‌ফাতুল আহওয়াযী ১/৪৬৪)

বিতরের কুনূত :

মহানবী (সাঃ) হযরত হাসান বিন আলী (রাঃ)-কে নিম্নের দুআ বিত্‌র নামাযে ক্বিরাআত শেষ করার পর (রুকূর আগে) পড়তে শিখিয়েছিলেন:-

اَللّهُمَّ اهْدِنِيْ فِيْمَنْ هَدَيْتَ وَعَافِنِيْ فِيْمَنْ عَافَيْتَ وَتَوَلَّنِيْ فِيْمَنْ تَوَلَّيْتَ وَبَارِكْ لِيْ فِيْمَا أَعْطَيْتَ وَقِنِيْ شَرَّ مَا قَضَيْتَ  فَإِنَّكَ تَقْضِيْ وَلاَ يُقْضى عَلَيْكَ إِنَّهُ لاَ يَذِلُّ مَنْ وَّالَيْتَ وَلاَ يَعِزُّ مَنْ عَادَيْتَ تَبَارَكْتَ رَبَّنَا وَتَعَالَيْتَ لاَ مَنْجَا مِنْكَ إِلاَّ إِلَيْكَ (وَصَلَّى اللهُ عَلى نَبِيِّنَا مُحَمَّدٍ)।

উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মাহ্‌দিনী ফী মানহাদাইত। অআ-ফিনী ফীমান আ ফাইত। অতাওয়াল্লানী ফী মান তাওয়াল্লাইত। অবা-রিকলী ফী মা আ’ত্বাইত। অকি¸নী শার্রামা ক্বাযাইত। ফাইন্নাকা তাক্বয্ব অলা ইউক্বযা আলাইক। ইন্নাহু লা য়্যাযিল্লু মাঁ উওয়া-লাইত। অলা য়্যাইযযু মান আ’-দাইত। তাবা-রাকতা রাব্বানা অতাআ’-লাইত। লা মানজা মিনকা ইল্লা ইলাইক। (অ স্বাল্লাল্লাহু আলা নাবিয়িনা মুহাম্মাদ।)

অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি আমাকে হেদায়াত করে তাদের দলভুক্ত কর যাদেরকে তুমি হেদায়াত করেছ। আমাকে নিরাপদে রেখে তাদের দলভুক্ত কর যাদেরকে তুমি নিরাপদে রেখেছ, আমার সকল কাজের তত্তাবধান করে আমাকে তাদের দলভুক্ত কর যাদের তুমি তত্তাবধান করেছ। তুমি আমাকে যা কিছু দান করেছ তাতে বরকত দাও। আমার ভাগ্য তুমি যা ফায়সালা করেছ তার মন্দ থেকে রক্ষা কর। কারণ তুমিই ফায়সালা করে থাক এবং তোমার উপর কারো ফায়সালা চলে না। নিশ্চয় তুমি যাকে ভালোবাস সে লাঞ্জিত হয় না এবং যাকে মন্দ বাস সে সম্মানিত হয় না। তুমি বরকতময় হে আমাদের প্রভু এবং তুমি সুমহান। তোমার আযাব থেকে তুমি ছাড়া কোন আশ্রয়স্থল নেই। আর আমাদের নবীর উপর আল্লাহ রহ্‌মত বর্ষণ করেন। (আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, নাসাঈ, সুনান, আহমাদ, মুসনাদ, বায়হাকী, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান, মিশকাত ১২৭৩নং, ইর: ২/১৭২)

 

বিতরের নামাযের সালাম ফিরে দুআ:

سُبْحَانَ الْمَلِكِ الْقُدُّوْسِ،

উচ্চারণ: সুবহা-নাল মালিকিল কুদ্দূস।

অর্থ: আমি পবিত্রময় বাদশাহ্‌র পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি।

এই দুআটি তিনবার পড়তে হয়। তন্মধ্যে তৃতীয় বারে উচ্চস্বরে পড়া কর্তব্য। (আবূদাঊদ, সুনান, নাসাঈ, সুনান, মিশকাত ১২৭৪-১২৭৫নং)

বিতরের সালাতের কাযাঃ

বিত্‌র নামায যথা সময়ে না পড়া হলে তা কাযা পড়া বিধেয়। মহানবী (সাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি বিত্‌র না পড়ে ঘুমিয়ে যায় অথবা তা পড়তে ভুলে যায় সে ব্যক্তি যেন তা স্মরণ হওয়া মাত্র তা পড়ে নেয়।” (আহমাদ, মুসনাদ, সুনানু আরবাআহ (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ ও ইবনে মাজাহ্‌),হাকেম, মুস্তাদরাক, জামে ৬৫৬২নং)  তিনি আরো বলেন, “যে ব্যক্তি ঘুমিয়ে থেকে বিত্‌র না পড়তে পারে সে ব্যক্তি যেন ফজরের সময় তা পড়ে নেয়।” (তিরমিযী, সুনান, ইর: ৪২২, জামে ৬৫৬৩নং)

স্বয়ং   মহানবী (সাঃ)-এর কোন রাত্রে বিত্‌র না পড়ে ফজর হয়ে গেলে তখনই বিত্‌র পড়ে নিতেন। (আহমাদ, মুসনাদ ৬/২৪৩, বায়হাকী ১/৪৭৯, ত্বাবারানী, মু’জাম, মাজমাউয যাওয়াইদ,হাইষামী ২/২৪৬)

একদা এক ব্যক্তি মহানবীর দরবারে এসে বলল, ‘হে আল্লাহর নবী! ফজর হয়ে গেছে অথচ আমি বিত্‌র পড়তে পারিনি।’ তিনি বললেন, “বিত্‌র তো রাত্রেই পড়তে হয়।” লোকটি পুনরায় বলল, ‘হে আল্লাহর নবী! ফজর হয়ে গেছে অথচ আমি বিত্‌র পড়তে পারিনি।’ এবারে তিনি বললেন, “এখন পড়ে নাও।” (ত্বাবারানী, মু’জাম, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ১৭১২নং)

এ হাদীস থেকে স্পষ্ট হয় যে, ফজর হয়ে গেলেও বিতর নামায বিতরের মতই কাযা পড়া যাবে। (সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ৪/২৮৯ দ্র:)

 

বিতরের পর নফল ২ রাকআ্তঃ

ব্যতিক্রম নামায হল, বিতরের পরে ২ রাকআত সুন্নত বসে বসে পড়া। মা আয়েশা (রাঃ) বলেন, রসূল (সাঃ) (বিত্‌র নামাযের) সালাম ফিরার পর বসে বসে ২ রাকআত নামায পড়তেন। (মুসলিম, সহীহ) হযরত উম্মে সালামাহ্‌ বলেন। ‘তিনি বিতরের পর বসে বসে (হাল্কা করে) ২ রাকআত নামায পড়তেন।’ (আহমাদ, মুসনাদ, আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, মিশকাত ১২৮৪নং)

 

মহানবী (সাঃ) বলেন, “নিশ্চয় এই (সফর) রাত্রি জাগরণ ভারী ও কষ্টকর। সুতরাং তোমাদের কেউ যখন বিত্‌র পড়বে তখন সে যেন ২ রাকআত পড়ে নেয়। অতঃপর সে যদি রাত্রে উঠতে পারে তো উত্তম। নচেৎ, ঐ ২ রাকআত তার (রাতের নামায) হয়ে যাবে।” (দারেমী, সুনান, মিশকাত ১২৮৬, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ১৯৯৩নং দ্র:)

উক্ত হাদীস থেকে বুঝা যায় যে, ঐ ২ রাকআত পড়া উত্তম। আর তা মহানবী (সাঃ)-এর জন্য খাস নয়।

আবূ উমামাহ্‌ বলেন, ‘নবী (সাঃ) ঐ ২ রাকআত নামায বিতরের পর বসে বসে পড়তেন। আর তার প্রথম রাকআতে সূরা যিলযাল ও দ্বিতীয় রাকআতে সূরা কাফিরুন পাঠ করতেন।’ (আহমাদ, মুসনাদ, মিশকাত ১২৮৭নং)

সংগ্রহঃ শায়খ আব্দুল হামীদ আল ফাইযী আল-মাদানী

বিতর সালাত কাজা পড়তে হবে কিভাবে?

বিতর সালাত কাজা আদায় করনীয়