১. জিন, শয়তান, মানুষ বা অন্য কোনো সৃষ্টির কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে লিখিত তাবীয:
এ প্রকার তাবীয বড় শির্কের অন্তর্ভুক্ত। এ প্রকার তাবীয ব্যবহারকারী ইসলামের গণ্ডি থেকে বের হয়ে যাবে এবং পরকালে সে জাহান্নামের স্থায়ী বাসিন্দা হবে। কেননা আল্লাহ ছাড়া অন্যের কাছে এমন বিষয়ের সাহায্য প্রার্থনা করা শির্ক, যে বিষয়ে সাহায্য করার ক্ষমতা তার নেই। মহান আল্লাহ বলেন,
‘বলুন, তোমরা ভেবে দেখেছ কি, যদি আল্লাহ আমার অনিষ্ট করার ইচ্ছা করেন, তবে তোমরা আল্লাহ ব্যতীত যাদেরকে ডাক, তারা কি সে অনিষ্ট দূর করতে পারবে? অথবা তিনি আমার প্রতি রহমত করার ইচ্ছা করলে তারা কি সে রহমত রোধ করতে পারবে?’ (আয-যুমার, ৩৮)।
অনুরূপভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
‘যে ব্যক্তি তাবীয ঝুলালো, সে শির্ক করল’ (আহমাদ, হাকেম)।
২. বিভিন্ন প্রকার নকশা, চিত্র, জাদুমন্ত্র, নাম, শব্দ সম্বলিত তাবীয, যেগুলির অর্থ বোধগম্য নয়:
এ প্রকারের তাবীয হারাম। কেননা এগুলি মানুষকে শির্কের দিকে নিয়ে যায়।
৩. বালা-মুছীবত দূর করার জন্য পূঁতি, রিং, সূতা, আংটি ইত্যাদি ঝুলানো:
এগুলি ঝুলিয়ে যদি কেউ বিশ্বাস করে যে, খোদ এগুলি বালা-মুছীবত দূর করতে সক্ষম, তাহলে সে বড় শির্ক করল। কেননা সে আল্লাহ্র সাথে অন্য কিছুকে শরীক স্থাপন করল। পক্ষান্তরে যদি সে বিশ্বাস করে যে, উপকার-ক্ষতি শুধুমাত্র এক আল্লাহ্র হাতে; কিন্তু পূঁতি, রিং, সূতা, আংটি ইত্যাদি কারণ মাত্র, তাহলে সে এমন কিছু বস্তুকে কারণ বানালো, যেগুলিকে আল্লাহ কারণ বানান নি। ফলে এই বিশ্বাস রেখে ঐসব জিনিস ঝুলালে তা হারাম বলে গণ্য হবে এবং ছোট শির্কে পরিণত হবে।
উক্ববা ইবনে আমের আল-জুহানী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন,
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর কাছে একটি দল আসলে তিনি তাঁদের ৯ জনের বায়‘আত গ্রহণ করলেন, কিন্তু একজনের বায়‘আত গ্রহণ করলেন না। তাঁরা জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! আপনি ৯ জনের বায়‘আত গ্রহণ করলেন, কিন্তু এই ব্যক্তির বায়‘আত গ্রহণ করলেন না? তিনি বললেন, তার দেহে তাবীয আছে। অতঃপর তিনি তাঁর হাত ঢুকিয়ে তাবীযটি ছিড়ে ফেললেন। এরপর তার বায়‘আত গ্রহণ করলেন এবং বললেন, ‘যে ব্যক্তি তাবীয ঝুলালো, সে শির্ক করল’ (মুসনাদে আহমাদ, ১৫৬/৪; সিলসিলাহ ছহীহাহ, হা/৪৯২)।
(খ) তিনি অন্যত্র বলেন,
‘নিশ্চয়ই (নিষিদ্ধ) ঝাড়ফুঁক, তাবীয এবং স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টিকারী বিশেষ তাবীয (তিওয়ালা) শির্কের অন্তর্ভুক্ত’
মুস্তাদরাক হাকেম, তিনি হাদীছটিকে ‘ছহীহুল ইসনাদ’ বলেছেন এবং যাহাবী তাঁর বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন। আলবানী ‘সিলসিলা ছহীহাহ’ তে হাদীছটি উল্লেখ করেছেন, (হা/৩৩১)
(গ) আব্দুল্লাহ ইবনে উকাইম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
‘যে ব্যক্তি কোনো কিছু ঝুলাবে, তাকে তার দিকে ঠেলে দেওয়া হবে’. আলবানী, ছহীহুত-তারগীব ওয়াত-তারহীব, (হা/৩৪৫৬)।
এসব হাদীছে সাধারণভাবে সব ধরনের তাবীয নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কোন্টি কুরআন থেকে এবং কোন্টি কুরআন থেকে নয়, তার কোনো পার্থক্য করা হয়নি।
শায়খ উছায়মীন কুরআনের আয়াত দিয়ে তৈরীকৃত তাবীয সম্পর্কে উলামায়ে কেরামের মতভেদ উল্লেখ করার পর বলেন, তাবীয কুরআন দিয়ে তৈরী হলেও তা ঝুলানো বৈধ নয়। অনুরূপভাবে তা কোনো রোগীর বালিশের নীচে রাখা অথবা দেওয়াল বা অন্য কিছুতে ঝুলানোও বৈধ নয়] (আল-মাজমূ আছ-ছামীন, ১/৫৮)।