হৃদয়স্পর্ষী হাদীসঃ৮

আসসালামু’আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।

দয়াময় মেহেরবান আল্লাহর নামে

আনাস ইবনে মালেক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: যখন আমার প্রভূ আমাকে উর্ধ্বে আরোহন (মিরাজে গমন) করালেন তখন আমি এমন একদল মানুষ দেখলাম যাদের হাতে তামার বড় বড় নখ। এ নখ দিয়ে তারা তাদের মুখমন্ডল ও বক্ষ খামচাচ্ছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে জিবরীল! এরা কারা? সে বলল, এরা হল ঐ সকল মানুষ যারা মানুষের গোস্ত খেত, তাদের সম্মানহানী ঘটাতো।

(বর্ণনায়: আহমাদ, আলবানী হাদীসটিকে সহীহ আল জামে আস সগীর কিতাবে সহীহ বলে উল্লেখ করেছেন)

হাদীসটি থেকে আমরা যা শিখতে পারলাম :

১- মিরাজের সময়ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বরযখ, জাহান্নামের শাস্তি ও জান্নাতের কিছু চিত্র দেখানো হয়েছে।

২- মানুষের গোস্ত খাওয়ার অর্থ হল তাদের দোষ চর্চা করা, গীবত করা, তাদের দোষ প্রচার করে সমাজে তাদের কে হেয় প্রতিপন্ন বা মানহানী করা। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন:

তোমরা একে অপরের গীবত করো না। তোমাদের মধ্য কেউ কি নিজ মৃত ভাইয়ের গোস্ত খেতে পছন্দ করবে? তোমরাতো তা অপছন্দই করে থাকো। (সূরা আল হুজুরাতঃ ১২)

এ আয়াতে অপরের দোষ চর্চাকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নিজ মৃত ভাইয়ের গোস্ত খাওয়ার সাথে তুলনা করেছেন। যারা এটা করে তারা মূলতঃ নিজ মৃত ভাইয়ের গোস্ত খাওয়ার মত নিকৃষ্ট কাজ করে। এটা এমন একটি অপরাধ যা আল্লাহ নিজে ক্ষমা করবেন না। যতক্ষণ না যার গীবত করা হয়েছে সে তাকে ক্ষমা না করে। এটা ইসলামী বিধানে একটি মানবাধিকার। যারা গীবত করে, অপরের দোষ চর্চা করে সমাজে তাকে অপমান করে ততারা এ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অপরাধে অপরাধী। আল্লাহ তাদের ক্ষমা করবেন না। যার গীবত করা হয়েছে, যাকে অপমান করা হয়েছে তার কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে অথবা তাকে যথাযথ ক্ষতিপুরণ দিয়ে দায়মুক্ত হতে হবে। এই ধরনের গুনাহ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখার সহজ উপায় হলো কোন ব্যক্তিকে নিয়ে গল্প না করা বরং কল্যানমূলক কাজ নিয়ে গল্প করা এবং বেশী বেশী আল্লাহর জিকিরে জিহবাকে সিক্ত রাখা। ব্যক্তিকে নিয়ে গল্প করতে হলে আদর্শ ব্যক্তিদের জীবন থেকে শিক্ষনীয় গল্প করা।

৩- অপর মানুষের মান সম্মান রক্ষা করা মুমিনদের দায়িত্ব। অন্যের মান সম্মানে আঘাত করা ইসলামে হারাম করা হয়েছে। অপরের গোপন দোষ প্রচার করা, মিথ্যা অপবাদ দেয়া ইত্যাদি হারাম।

আজ যেন সমাজে প্রতিযোগীতায় নেমে গিয়েছে কে কাকে অসম্মান করে নিজেকে সম্মানিত বা উচ্চপদ লাভ করতে পারবে। অথচ মানুষ বুঝেনা যে, কাউকে অসম্মান করে সম্মানিত হওয়া যায় না। বরং অন্যকে সম্মান দিয়ে ও সঠিক মূল্যায়িত করেই মানুষের মন জয় করা যায় ও সম্মানিত হওয়া যায় কারন মহান আল্লাহই এই বিধানই দিয়েছেন এবং ব্যক্তি যদি উন্নত চরিত্রের হয় তখন আল্লাহ ভালোবেসে ব্যক্তিকে সম্মানিত ও মানুষের ভালোবাসা বাড়িয়ে দেন।

তবে প্রয়োজনে যথাযথ কর্তৃপক্ষ বা আদালতের কাছে সংশোধনের উদ্দেশ্যে অপরাধীর বিরুদ্ধে অভিযোগ বা সত্য স্বাক্ষ্য প্রদান করা নিষেধ নয়।