সম্মানিত মাস মুহাররম-১১( কারবালা ও আশুরার মাঝে সম্পর্ক)

কারবালার ঘটনার সাথে আশুরার কি সম্পর্ক ?

 

বর্তমানে আমরা দেখছি প্রায় সর্ব মহল থেকে আশুরার মূল বিষয় বলে কারবালার ঘটনাকেই বুঝানো হচ্ছে। কিন্তু কুরআন ও সুন্নাহর দৃষ্টিকোণ থেকে এটা সঠিক নয়।

ইসলামের আগমনের পূর্বে আশুরা ছিল। যেমন আমরা হাদীস দ্বারা জানতে পেরেছি। তখন মক্কার মুশরিকরা যেমন আশুরার সাওম পালন করত তেমনি ইহুদীরা মুসা আ. এর বিজয়ের স্মরণে আশুরার সাওম পালন করত।

আল্লাহর রসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আশুরার সাওম পালন করেছেন জীবনের প্রতিটি বছর। তার ইন্তেকালের পর তার সাহাবায়ে কেরাম রা. আশুরার সাওম পালন করেছেন।

রসূলুল্লাহ স.এর ইন্তেকালের প্রায় পঞ্চাশ বছর পর হিজরী ৬১ সালে কারবালার ময়দানে জান্নাতী যুবকদের নেতা, রসূলুল্লাহ স. এর প্রিয় নাতী সাইয়েদুনা হুসাইন রা. শাহাদাত বরণ করেন। ইসলামের ইতিহাসে মুসলিম উম্মাহর জন্য এটা একটা হৃদয় বিদারক ঘটনা। ঘটনাক্রমে এ মর্মান্তিক ইতিহাস এ আশুরার দিনে সংঘঠিত হয়েছিল।

আল্লাহর রসূল স. ও তার সাহাবায়ে কেরাম যে আশুরা পালন করেছেন ও যে আশুরা উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য রেখে গেছেন তাতে কারবালার ঘটনার কোন ভূমিকা ছিলনা। থাকার প্রশ্নই আসতে পারেনা। কারবালার এ দুঃখজনক ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পর আল্লাহর রসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাহবাদের মধ্যে আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. আব্দুল্লাহ বিন উমার রা. আব্দুল্লাহ বিন আমর রা. আনাস বিন মালেক রা. আবু সাঈদ খুদরী রা. জাবের বিন আব্দুল্লাহ রা. সাহল বিন সায়াদ রা. যায়েদ বিন আরকাম রা. সালামাতা ইবনুল আওকা রা. সহ বহু সংখ্যক সাহাবায়ে কেরাম জীবিত ছিলেন। তারা তাদের পরবর্তী লোকদের চেয়ে রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তার পরিবারবর্গকে অনেক বেশী ভালবাসতেন। তারা আশুরার দিনে কারবালার ঘটনার স্মরণে কোন কিছুর প্রচলন করেননি।

 মাতম,তাযিয়া মিছিল, আলোচনা সভা কোন কিছুরই প্রমাণ পাওয়া যায় না। আল্লাহর রসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যেভাবে আশুরা পালন করেছেন তারা সেভাবেই তা অনুসরণ করেছেন। অতএব আমরা কারবালা কেন্দ্রিক যে আশুরা পালন করে থাকি, এ ধরণের আশুরা না রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পালন করেছেন, না তার সাহাবায়ে কেরাম। যদি এ পদ্ধতিতে আশুরা পালন আল্লাহর রসূলের মুহব্বাতের পরিচয় হয়ে থাকত, তাহলে এ সকল বিজ্ঞ সাহাবাগণ তা পালন থেকে বিরত থাকতেন না, তারা সাহসী ছিলেন। তারা আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করতেন না। কিন্তু তারা তা করেননি। তাই যে সত্য কথাটি আমরা বলতে বাধ্য হচ্ছি, তা হলো আশুরার দিনে কারবালার ঘটনার স্মরণে যা কিছু করা হয় তাতে আল্লাহর রসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তার সাহাবাদের রেখে যাওয়া আশুরাকে ভুলিয়ে দিয়ে এক বিকৃত নতুন আশুরা প্রচলনের প্রচেষ্টা ছাড়া আর কিছু নয়।

আশুরার দিনে সাইয়েদুনা হুসাইন বিন আলী রা. এর শাহাদাত স্মরণে যে তাযিয়া মিছিল করা হয়, যে মাতম করা হয়, আলোচনা সভার ব্যবস্থাসহ যা কিছু করা হয় এর সাথে ইসলামী শরীয়তের কোন সম্পর্ক নেই।

রসূলে কারীম (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কারো জন্ম বা মৃত্যু দিবস অথবা শাহাদত দিবস পালন করেননি। তারপরে তাঁর সাহাবায়ে কেরাম এ ধরনের কোন আমল করেননি। কেহ বলতে পারেন কারবালার ঘটনা যদি রসূলে কারীম (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জীবদ্দশায় হত তাহলে তিনি অত্যন্ত মর্মাহত হয়ে এর স্মরনে শোক ও মাতম ইত্যাদির ব্যবস্থা করে যেতেন।

আসলে এ ধারনা একেবারেই বাতিল। কারণ রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জীবনে অনেক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। তাঁর প্রিয়তমা সহধর্মীনি খাদিজা রা. র ইন্তেকাল তাকে সহ্য করতে হয়েছে।

সাহাবীয়া সুমাইয়া রা. শাহাদত বরণ প্রতক্ষ করতে হয়েছে।

 তাঁর সামনে তাঁর একাধিক সন্তান ইন্তেকাল করেছেন।

উহুদের যুদ্ধে তার প্রিয় চাচা ও দুধ ভাই হামযা রা. শাহাদত বরণ করেছেন। তিনি তার যে কত প্রিয় ছিলেন ও তার শাহাদতে তিনি যে কতখানি মর্মাহত হয়েছিলেন সীরাত পাঠক মাত্রই তা অবগত আছেন।

তেমনি মুস’আব বিন উমায়ের রা. সহ অনেক প্রিয় সাহাবী শহীদ হয়েছেন। তিনি তাদের জন্য অনেক ক্রন্দন করেছেনে। এমনকি ইন্তেকালের কয়েকদিন পূর্বে তিনি উহুদের ময়দানে তাদের কবর যিয়ারত করতে গিয়ে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। সেখানে তাদের জন্য দু’আ করেছেন। কিন্তু তাদের কারো জন্য তিনি শোক দিবস পালন করেননি।

উহুদ যুদ্ধের পর তিনি এক অঞ্চলের অধিবাসীদের দাবীর কারণে তাদেরই দ্বীনে ইসলাম শিক্ষা দেয়ার জন্য তাঁর প্রিয় সাহাবীদের মধ্য থেকে বাছাই করে শিক্ষিত সত্তর জন সাহাবীকে সে অঞ্চলের উদ্দেশ্যে প্রেরণ করেছিলেন। কিন্তু ‘বিরে মাউনা’ নামক স্থানে শক্ররা আক্রমন করে তাদের সকলকে নির্মমভাবে হত্যা করে। তাদের মাত্র একজন জীবন নিয়ে মদীনায় ফিরে এসে এ নির্মম ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন। এ ঘটনায় রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এত ব্যথিত ও মর্মাহত হলেন যে, রাহমাতুললিল আলামীন হয়েও হত্যাকারীদের শাস্তি ও ধ্বংস কামনা করে তিনি বহু দিন যাবত তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করতে থাকলেন। কোথায়! তিনি তো এ সকল মহান শহীদানের জন্য কোন দিবস পালন করতে নির্দেশ দিলেন না। প্রতি বছর শোক দিবস পালন করতে বললেন না।

মুতার যুদ্ধে তার তিনজন প্রিয় সেনাপতি সাহাবী শাহাদত বরণ করলেন। যায়েদ বিন হারিসা রা. জা’ফর বিন আবি তালিব রা. ও আব্দুল্লাহ বিন রাওয়াহা রা.। আরো অনেকে।

 যায়েদ বিন হারেসা রা. কে আল্লাহর রসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অত্যন্ত ভালবাসতেন। রসূলুল্লাহর ভালবাসার স্বীকৃতি হিসেবে সকলে তার উপাধি দিয়েছিল ‘হিব্বু রসূলিল্লাহ’। ইসলামের দাওয়াতের শুরু থেকে তিনি সর্বদা আল্লাহর রসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে ছায়ার মত থাকতেন।

আর জা’ফর বিন আবি তালিব রসূলুল্লাহর চাচাতো ভাই ছিলেন। তিনি আলী রা. এর আপন ভাই ও সাইয়েদুনা হুসাইন রা. এর আপন চাচা ছিলেন। আব্দুল্লাহ বিন রাওয়াহা রা. রসূলের ঘনিষ্ঠ সাহাবীদের একজন ছিলেন। তাদের শাহাদাতের খবর মদীনাতে পৌছার পর রসূলে কারীম (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কতখানি শোকাবিভূত হয়ে পড়েছিলেন সীরাত ও ইসলামী ইতিহাসের পাঠক তা ভালভাবে জানেন।

 রসূলে কারীম (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি তাদের জন্য শোক দিবস চালু করেছিলেন? না প্রচলন করতে বলেছিলেন? কখনো তা করেননি।

তারা তো ইসলাম প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই যুদ্ধ করেই জীবন দিয়েছিলেন। এ সকল মহাপ্রাণ সাহাবীদের সাথে তাঁর যেমন ছিল আত্নীয়তার সম্পর্ক তেমনি ছিল দ্বীনে ইসলামের সম্পর্ক। কেহ বলতে পারবেন না যে তিনি তাদের কম ভালবাসতেন। তারপরও তিনি তাদের জন্য প্রতি বছর শোক পালনের ব্যবস্থা করলেন না।

এমনিভাবে রসূলে কারীম (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ইন্তেকালের পর সাহাবায়ে কেরাম কতখানি ব্যথিত ও মর্মাহত হয়েছিলেন তা হাদীস ও ইতিহাসের কিতাবে সবিস্তারে বর্ণিত আছে। তারা তো প্রতি বছর দিবস পালনের প্রথা প্রচলন করলেন না।

এরপরে উমার রা. শহীদ হলেন, উসমান রা. শহীদ হলেন, শাহাদত বরণ করলেন আলী রা.। কিন্তু সাহাবায়ে কেরাম কারো জন্য শোক দিবস পালন করলেন না।

কারো জন্ম দিবস বা মৃত্যু দিবস অথবা শাহাদত দিবস পালন ইসলাম অনুমোদন করে না। ইসলামের কথা হল মানুষ মানুষের হ্রদয়ে বেঁচে থাকবে, ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে তার আমল বা কর্মের মাধ্যমে। বছরে একবার দিবস পালন করে কাউকে কৃত্রিমভাবে বাঁচিয়ে রাখার কোন প্রয়োজন নেই।

তাইতো দেখবেন কত নবী-রসূল, সাহাবা, ইমামগন, আওলিয়া, ন্যায় পরায়ন বাদশা, মনীষি রয়েছেন যাদের জন্য জন্ম বা মৃত্যু দিবস পালিত হয় না। কিন্তু তারা কি মানুষের হ্রদয় থেকে বা ইতিহাসের পাতা থেকে মুছে গেছেন? না, তারা মানুষের হ্রদয় দখল করে ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে আছেন এবং থাকবেন।

হুসাইন রা. এর উচ্চ মর্যাদার ব্যাপারে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে কারো দ্বিমত নেই। তিনি জ্ঞানী সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে অন্যতম। দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জাহানে তিনি মুসলিমদের নেতা। জান্নাতী যুবকদের নেতা। ইবাদত-বন্দেগী, সাহসিকতা-বীরত্ব, বদান্যতায় তিনি খ্যাত। সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানবের সর্বকনিষ্ঠা আদরের দুলালী ফাতেমা রা. এর সন্তান। তার মর্মান্তিক শাহাদাতের ঘটনায় বিশ্বের সকল মুসলিম চরমভাবে ব্যথিত ও মর্মাহত।

আল্লাহ আহকামুল হাকেমীন তার হত্যাকারীদের শাস্তি দিয়েছেন। তিনি পৃথিবীতে তাদের লাঞ্চিত ও অপদস্থ করেছেন। তারা বিভিন্ন রকম আজাব গজবে পতিত হয়েছে। দুনিয়ার শাস্তি থেকে তাদের খুব কম লোকই নাজাত পেয়েছে।

এ সকল কিছু বাদ দিলেও এর চেয়ে বড় শাস্তি আর কী হতে পারে যে, ইমাম হুসাইন রা. এর হত্যায় যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত ছিল বিশ্বের মুসলিম ও অমুসলিম নির্বিশেষে সকল মানুষ কিয়ামত পর্যন্ত তাদের ঘৃনা করবে, লা’নত ও ধিক্কার দিবে। তাদের নাম উচ্চারণ করার মত বিশ্বে কেহ অবশিষ্ট থাকল না। হুসাইন রা. কে নির্মূল করতে যেয়ে তারাই নির্মূল হয়ে গেছে।

সাইয়েদুনা হুসাইন রা. এর শাহাদাত ও এ জাতীয় মর্মান্তিক ঘটনা স্মরণের সময় আমাদের কর্তব্য হবে ধৈর্য ধারণ করা, আল্লাহর ইচ্ছার প্রতি সন্তুষ্ট থাকা। বান্দার জন্য যা কল্যাণকর আল্লাহ তা সংঘটিত করে থাকেন। যারা তাঁর দ্বীনের জন্য কুরবানী পেশ করেন তাদের তিনি এর উত্তম প্রতিদান দিয়ে থাকেন।

 

আজ যারা মুহাম্মাদ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর আহলে বাইতের মহব্বত ও ভালবাসার নামে কান্নাকাটি করেন,তাযিয়া করেন, মীলাদ পড়েন আরো অনেক কিছু করেন যা তিনি করতে বলেননি। তাঁর মহব্বতে বাড়াবাড়ি করতে গিয়ে তাঁর আদেশ পর্যন্ত লংঘন করেন। বিভিন্ন বিদ’আতী কাজ-কর্মে লিপ্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু তাঁর আদর্শ অনুসরণ ও বাস্তবায়নের কোন প্রয়োজন অনুভব করেন না।

যে মুসলিম আল্লাহকে ভয় করে তার জন্য হুসাইনের নিহত হওয়ার ঘটনা স্মরণ করে বিলাপ করা, শরীর জখম করা, গাল, মাথা ও বুক থাবড়ানো বা এ রকম অন্য কিছু করা জায়েজ নেই। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

 যে ব্যক্তি মুসীবতে পড়ে নিজ গালে চপেটাঘাত করল এবং শরীরের কাপড় ছিঁড়ল, সে আমাদের দলের নয়। সহিহ বুখারী

তিনি আরও বলেন:

মুসীবতে পড়ে বিলাপকারী, মাথা মুন্ডনকারী এবং কাপড় ও শরীর কর্তনকারীর সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন:

মৃত ব্যক্তির উপর বিলাপকারী যদি তওবা না করে মারা যায়, তাকে কিয়ামতের দিন খাঁজলীযুক্ত (লোহার কাঁটাযুক্ত) কোর্তা পড়ানো হবে এবং আলকাতরার প্রলেপ লাগানো পায়জামা পড়ানো হবে। সহিহ মুসলিম

তিনি আরও বলেন:

 আমার উম্মতের মধ্যে জাহেলী যুগের চারটি স্বভাব বিদ্যমান রয়েছে। তারা তা ছাড়তে পারবে না।

(১) বংশ মর্যাদা নিয়ে গর্ব করা,

(২) মানুষের বংশের নাম তুলে দুর্নাম করা,

(৩) তারকারাজির মাধ্যমে বৃষ্টি প্রার্থনা করা এবং

(৪) মৃত ব্যক্তির উপর বিলাপ করা। তিনি আরও বলেন: মানুষের মাঝে দুটি জিনিষ রয়েছে, যা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। মানুষের বংশের বদনাম করা এবং মৃত ব্যক্তির উপর বিলাপ করা। সহিহ মুসলিম

তিনি আরও বলেন:

 মৃত ব্যক্তির উপর বিলাপ করা জাহেলিয়াতের অন্তর্ভুক্ত। বিলাপকারী যদি তওবা না করে মারা যায়, তাকে কিয়ামতের দিন আল্লাহ আলকাতরার প্রলেপ লাগানো জামা পড়াবেন এবং অগ্নি শিখা দ্বারা নির্মিত কোর্তা পরাবেন। ইবনে মাজাহ

একজন বিবেকবান মুসলিমের উপর আবশ্যক হচ্ছে সে এ ধরণের মুসীবতের সময় আল্লাহর নির্দেশিত কথা বলবে। আল্লাহ্ তায়ালা বলেন:

 যখন তাঁরা বিপদে পতিত হয়, তখন বলে, নিশ্চয়ই আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তারই সান্নিধ্যে ফিরে যাবো। সূরা আল বাকারাঃ ১৫৬

হুসাইনের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র আলী বিন হুসাইন, মুহাম্মাদ এবং জাফর জীবিত ছিলেন। তাদের কেউ হুসাইনের মৃত্যুতে মাতম করেছেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না। তারা ছিলেন আমাদের হেদায়েতের ইমাম ও আদর্শ।

বিলাপ করা, গাল ও বুকে চপেটাঘাত করা বা এ জাতীয় অন্য কোন কাজ কখনই এবাদত হতে পারে না। আশুরার দিনে ক্রন্দনের ফজিলতে যে সমস্ত বর্ণনা উল্লেখ করা হয় তার কোনটিই বিশুদ্ধ নয়। বিলাপ করা জাহেলী জামানার আচরণ বলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে তা থেকে বিরত থাকার আদেশ দিয়েছেন।

 মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন জানিয়েছেন,

রাসূল এ উদ্দেশ্যেই প্রেরণ করেছি যে, আল্লাহর নির্দেশ অনুসারে তার আনুগত্য করা হবে। সূরা আন-নিসা: ৬৪

তার আনুগত্য না করে বিভিন্ন বিদআ’তী কার্যকলাপে লিপ্ত হয়ে তাঁর মহব্বতের দাবী করা একটা ধোকাবাজী ছাড়া আর কিছু নয়। মহব্বতের পরিচয় প্রকাশ পাবে শুধু আনুগত্য ও অনুসরণের মাধ্যমে। তাই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন:

বল, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবাস তবে আমাকে অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদের ভালবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করবেন। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। সূরা আলে ইমরান: ৩১

তাই যে যত বেশী আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে সে ততবেশী মহব্বত ও ভালবাসার দাবী করতে পারে।

রাসূল স.এর চাচা আবু তালিবের দিকে তাকান। তার কথা কারো অজানা নয়। মুহাম্মদ স. এর একেবারে শৈশব থেকে পঞ্চাশ বছর বয়স পর্যন্ত তাকে নিজ সন্তানের মত ভালবেসে লালন পালন করেছেন। আর এ ভালবাসতে গিয়ে অনেক কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করেছেন। দীর্ঘ তিন বছর খেয়ে না খেয়ে উপোষ থেকে এক গিরি উপত্যকায় মক্কাবাসী কর্তৃক আরোপিত বয়কট সহ্য করে মুহাম্মদের ভালবাসার মাশুল দিয়েছেন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত ছায়ার মত সাথে থেকেছেন। তার অনুসরণ করা দরকার এটা স্বীকারও করেছেন। তার উদ্দেশ্যে কবিতা ও রচনা করেছেন। কিন্তু অনুসরণ করলেন না তার আনীত পয়গামের। ফলে সবকিছু বৃথা হয়ে গেল। তার জন্য প্রার্থনা করতেও নিষেধ করা হল।

আল্লাহ তাআলা আশুরাসহ যাবতীয় কর্মে আমাদেরকে রাসূলুল্লাহর আদর্শের পূর্ণ অনুবর্তনের তাওফিক দান করুন।

 

 

সহায়ক গ্রন্থ-

তাফসীর ইবনে কাসীর

আশুরা করনীয় ও বর্জনীয়

সংকলন: আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান

সম্পাদনা: নোমান আবুল বাশার

মুহররম ও আশুরার ফজিলত

লেখক : মুহাম্মদ বিন সালেহ আল-মুনাজ্জিদ

অনুবাদক : ইকবাল হোছাইন মাছুম