সম্মানিত মাস মুহাররম-৫ (মুহাররম ও এই মাসের করনীয়)

পবিত্র ও সম্মানিত মাস মুহররম

 

মুহররম, একটি মহান বরকতময় মাস। হিজরি সনের প্রথম মাস। এটি  আশহুরে হুরুম তথা হারামকৃত মাস চতুষ্টয়ের অন্যতম। আশহুরে হুরুম সম্বদ্ধে আল্লাহ তাআলা বলেন,

নিশ্চয় মাসসমূহের গণনা আল্লাহর কাছে বার মাস আল্লাহর কিতাবে, (সেদিন থেকে) যেদিন তিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন। এর মধ্য থেকে চারটি সম্মানিত, এটাই প্রতিষ্ঠিত দীন। সুতরাং তোমরা এ মাসসমূহে নিজেদের উপর কোন জুলুম করো না। সূরা তাওবা: ৩৬

সাহাবি আবু বাকরাহ রা. নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, নবীজী স. বলেন,

বছর হলো বারোটি মাসের সমষ্টি, তার মধ্যে চারটি অতি সম্মানিত। তিনটি পর পর লাগোয়া যিলকদ, যিলহজ্জ ও মুহররম আর (চতুর্থটি হলো) জুমাদাস সানি ও শাবানের মধ্যবর্তী রজব। সহিহ আল বুখারি: ২৯৫৮

মুহররমকে মুহররম বলে অভিহিত করা হয়েছে কারণ এটি অতি সম্মানিত।

আল্লাহর বাণী তোমরা এতে নিজেদের উপর কোনো জুলুম করো না। অর্থাৎ, এই সম্মানিত মাস সমূহে তোমরা কোনো অন্যায় করো না। কারণ এ সময়ে সংঘটিত অন্যায় ও অপরাধের পাপ অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশি ও মারাত্মক।

আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা তোমরা এতে নিজেদের উপর কোনো জুলুম করো না। এর ব্যাখ্যায় বলেছেন, এই বারো মাসের কোনোটিতেই তোমরা অন্যায় অপরাধে জড়িত হয়ো না। অত:পর এর মাঝে চারটি মাসকে বিশেষভাবে নির্দিষ্ট করেছেন। তাদেরকে মহা সম্মানে সম্মানিত করেছেন। এসবের মাঝে সংঘটিত অপরাধকে অতি মারাত্মক অপরাধ বলে গণ্য করেছেন। আর তাতে সম্পাদিত নেক আমলকে বেশি সাওয়াব যোগ্য নেক আমল বলে সাব্যস্ত করেছেন।

কাতাদাহ রা. তোমরা এতে নিজেদের উপর কোনো জুলুম করো না।আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, যদিও জুলম সব সময়ের জন্য বড় অন্যায় তবে হারাম মাস চতুষ্টয়ে সম্পাদিত জুলুম অন্যান্য সময়ে সম্পাদিত জুলুম হতে অপরাধ ও পাপের দিক থেকে আরও বেশি মারাত্মক অন্যায়। আল্লাহ তাআলা নিজ ইচ্ছা মাফিক যাকে ইচ্ছা বড় করতে পারেন।

তিনি বলেন, মহান আল্লাহ নিজ সৃষ্টি হতে খাঁটি ও উৎকৃষ্টগুলোকে বাছাই করেছেন; ফেরেশতাদের মধ্য হতে দূত মনোনীত করেছেন, মানব জাতির মধ্য থেকে কতককে রাসূল হিসাবে বাছাই করেছেন। কথা হতে বাছাই করেছেন তাঁর যিকরকে। আর যমিন হতে বাছাই করেছেন মসজিদ সমূহকে। মাসসমূহ থেকে বাছাই করেছেন রামাদান ও সম্মানিত মাস চতুষ্টয়কে। দিনসমূহ হতে বাছাই করেছেন জুমুআর দিনকে আর রাত্রসমূহ থেকে লাইলাতুল কদরকে। সুতরাং আল্লাহ যাদের সম্মানিত করেছেন তোমরা তাদের সম্মান প্রদর্শন কর। আর বুদ্ধিমান লোকদের মতে, প্রতিটি বস্তুকে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা হয় মূলত: সেসব জিনিসের মাধ্যমেই যেসব দ্বারা আল্লাহ তাদেরকে সম্মানিত করেছেন।

সার সংক্ষেপ, তাফসির ইবন কাসির, সূরা তাওবা, আয়াত ৩৬

মুহাররম মাসের করনীয়

 

দ্বীনে ইসলামে কিছু পর্ব বা দিবস আছে। যেগুলো আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নির্ধারণ করেছেন ইবাদত-বন্দেগী বা নেক আমল করার জন্য। এমনি একটা দিবসের নাম আশুরা। হিজরী সনের প্রথম মাস মুহাররমের দশ তারিখ। মুসলিম উম্মাহর দ্বারে কড়া নাড়ে প্রতি বছর।

এ মাস আমাদের স্বরণ করিয়ে দেয় আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ স. এর হিজরত ও তার দাওয়াতী জিন্দেগী শুরু ও ইসলাম প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের কথা।

 এ মাসে রয়েছে এমন একটি দিন, দীর্ঘ সংগ্রাম শেষে যে দিনে নবী মুসা আ. এর বিজয় হয়েছিল। পতন হয়েছিল তখনকার সবচেয়ে শক্তিশালী জালেম সম্রাট ফেরআউন ও তার সাম্রাজ্যের। সে দিনটিই হল আশুরা; মুহাররম মাসের দশ তারিখ।

এ দিনটি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে খুবই প্রিয়। তাই তিনি এ দিনে সাওম পালনের সওয়াব প্রদান করে থাকেন বহুগুণে।

যেমন হাদীসে এসেছে

আবু হুরাইরাহ রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলে: রসূলুল্লাহ স. বলেছেনঃ রামাদানের পর সর্বোত্তম সাওম হল আল্লাহর প্রিয় মুহাররম মাসের সাওম। এবং ফরয সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত হল রাতের সালাত। সহিহ মুসলিম

আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,অর্থাৎ, রামাদানের পর সর্বোত্তম সাওম হচ্ছে আল্লাহর মাস মুহররম (মাসের সাওম)। সহিহ মুসলিম:১৯৮২

আল্লামা ক্বারী রহ. বলেন, হাদিসের বাহ্যিক শব্দমালা থেকে পূর্ণ মাসের সাওম বুঝে আসে। তবে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রামাদান ব্যতীত আর কোনো মাসে পূর্ণ মাস সাওম রাখেননি, এটি প্রমাণিত। তাই হাদিসকে এ মাসে বেশি পরিমাণে সাওম রাখার ব্যাপারে উৎসাহ দেয়া হয়েছে বলে ধরা হবে।

শাবান মাসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিক সাওম রেখেছেন বলে একাধিক সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। হতে পারে মুহররম মাসের ফযিলত সম্বন্ধে তাঁকে একেবারে জীবনের শেষ পর্যায়ে অবহিত করা হয়েছে আর তিনি তা বাস্তবায়ন করে যাবার সময় পাননি। ইমাম নববি, শারহু সহিহ মুসলিম

আল্লাহ তাআলা স্থান ও কাল যাকে ইচ্ছা মর্যাদা দিয়ে থাকেন।

আল্লামা ইজ্জ বিন আব্দুস সালাম রহ. বলেন, স্থান ও কালের একের উপর অপরের মর্যাদা দান দুই প্রকার।

এক.   পার্থিব।

  দুই.   দ্বীনী, যা আল্লাহর দয়া ও করুণার উপর নির্ভরশীল। তিনি সেসব স্থান বা কালে ইবাদত সম্পন্নকারীদের সাওয়াব বৃদ্ধি করে দিয়ে তাদের উপর করুণা করেন। যেমন, অন্যান্য মাসের সাওমের তুলনায় রামাদানের সাওমের মর্যাদা অনুরূপ আশুরার দিন..। এগুলোর মর্যাদা আল্লাহর দান ও ইহসানের উপর নির্ভরশীল। কাওয়ায়েদুল আহকাম:১/৩৮