আত্মউপলব্ধি-৬(প্রেক্ষাপট-৫)

প্রেক্ষাপট

সমাজে একটি পরিবারে স্বামীর অবস্থান নিয়ে

ইবনে আব্বাস(রাঃ) থেকে বর্ণিত,রাসূল(সঃ) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই সর্বোত্তম যে তার স্ত্রীর নিকট উত্তম,আর আমি তোমাদের মধ্যে আমার স্ত্রীদের নিকট সর্বোত্তম ব্যক্তি। সহীহ জামে আত তিরমিযীঃ৩৮৯৫

আমি যতবার হযরত ইব্রাহীম (আঃ)এর জীবনী নিয়ে চিন্তা করি ততবারই মুগ্ধতায় আচ্ছন্ন হয়ে যাই এবং খুঁজে পাই সেই সুখ-শান্তির বাস্তব চিত্র যা মহান আল্লাহর বিধান দ্বারাই একমাত্র সম্ভব।

পরিবার গঠনের উত্তম নমুনায় প্রিয় ব্যক্তিত্বের জায়গা দখল করে আছেন হযরত ইবরাহীম(আঃ) ও আমার প্রিয় রাসূল(সঃ)।  যারা ঈমানের ঘোষনা দিয়েছেন এবং ইসলামকে নিজের জীবনে বাস্তবায়ন ও অন্যের মাঝে প্রচারের ধারক হয়ে চলছেন- তাদের দিকে তাকিয়ে ও সমাজ সংসারের অশান্তি, মিথ্যা পাপ পঙ্কিলতার ও অবিশ্বাস প্রতারনা দেখে যখন হতাশ মনে হয় তখনই এই দুই ব্যক্তিত্ব জাগিয়ে তুলে অন্তরকে। আশাবাদী হই আবার, যদি আমাদের ভাই-বোনেরা এইভাবে নিজেদের গড়ে তুলতে পারেন তাহলে আমরা সেই শান্তির সুখের সত্য বিশ্বাসের বাতাস সমাজ সংসারে বয়ে যাবে ইনশা’আল্লাহ। এই ভিত্তি দিয়ে একেকজন মজবুত ঈমানদার হয়ে আল্লাহর পথের সৈনিক হয়ে দ্বীনের ধারক হতে পারবে। আমাকে সহ সবাইকে মহান আল্লাহ বুঝার ও আনুগত্য করার তাওফিক দান করুন।

হযরত ইব্রাহীম আ. এর জীবনীকে একটু গভীরভাবে লক্ষ্য করুন এবং আপনারা কি এইভাবে চিন্তা করেছেন-

বৃদ্ধ বয়সে সন্তান থেকে আনন্দ লাভের জন্য নয়/ সম্পদের উত্তরাধীকার হওয়ার জন্য নয়/ মানুষ ভাববে বন্ধ্যা  তার জন্যও নয় শুধুমাত্র দ্বীনের আলোকে সম্প্রসারিত করার তাগাদায় সন্তান লাভের জন্য আর্জি পেশ করেন মহান রবের কাছে, মরুভূমিতে একা স্ত্রী সন্তানকে রেখে আসা, অনেক চাওয়ার পর পাওয়া সন্তানকে কুরবানীর জন্য আবেগকে প্রশ্রয় না দিয়ে প্রস্তুত হয়ে যাওয়া কিভাবে সম্ভব হয়েছিল?

কোন্ ভালোবাসার শক্তি দিয়ে স্বামী স্ত্রী ও সন্তান একটি সিদ্ধান্তে কোন প্রশ্ন বা দ্বিধা ছাড়াই ঐক্যে থেকেছেন?

কোন্ বিশ্বাসের এতো মজবুতি যে, পরিবারের তিনজনই একই নীতির উপর অটল ছিলেন, কোন অপশক্তি তাদের টলাতে পারে নি?

কোন্ লাভের প্রত্যাশায় এতোখানি ত্যাগের পরাকাষ্ঠা দেখাতে চিন্তা করার সময়টুকু নিতে হই নি!

সব কিছুর মূলে ছিল ইব্রাহীম (আঃ)এর ব্যক্তিত্ব যা মহান আল্লাহর কাছ থেকে পাওয়া যা দয়াময় আল্লাহকে গভীর ভালোবাসা, মহান রবকে একমাত্র অভিভাবক হিসেবে মেনে নেয়া এবং মহান প্রতিপালকের ফয়সালাই সত্য, পরকালীন জীবনই একমাত্র স্থায়ী বাসস্থান এই বিশ্বাসকে দৃঢ় ভাবে অন্তরে ধারন করেই বাস্তবে বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমান করে দেখিয়েছেন এবং সেই চরিত্রের প্রতিফলন করেই গড়ে তুলেছিলেন আদর্শ পরিবার।

আজ এমন পরিবার কয়টি আছে যে কোন বাঁধ-বিবাধ ছাড়া / অসন্তুষ্টি চিত্ত ছাড়া কোন বিষয়ে সিদ্ধান্তে একমত হতে পেরেছে পরিবারের প্রতিটা সদস্য??

আমি এখন স্বামী হিসেবে আমাদের প্রিয় রাসূল(সঃ) কেমন ছিলেন সেই দিকে একটু ফিরে যাই।

রাসুল(সঃ)এর ব্যক্তিত্ব এমনই উচ্চ মানের ছিল যে প্রথম যখন ওয়াহী নাযিলের পর বিবি খাদীজা(রাঃ)এর কাছে কম্বল জড়িয়ে দিতে বললেন তখন খাদীজা(রাঃ) স্বামীর চরিত্রের যে মানপত্র তুলে ধরেছিলেন তা ছিল অসাধারন। স্বামীর পবিত্র, সত্য ও ন্যায়নীতির ব্যক্তিত্বের কারনে স্ত্রী ইসলাম গ্রহনেও বিন্দুমাত্র কালক্ষেপন করেননি।

হযরত আয়েশা(রাঃ) কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন,সাধারন মানুষের মতই তিনি ছিলেন। নিজের কাপড় চোপড়ের তদারকী তিনি নিজেই করতেন। ছাগলের দুধ নিজেই দোহন করতেন এবং নিজের প্রয়োজনীয় কাজগুলো নিজেই করতেন। কাপড়ে তালি নিজেই লাগাতেন, জুতা মেরামত করতেন, ভৃত্যের সাথেও কাজ করতেন, বাজারে যেতে লজ্জাবোধ করতেন না। কখনো একাই পরিশ্রম করতেন।

আচরন কেমন ছিল প্রশ্নের উত্তরে আয়েশা(রা) বলেন, সবচেয়ে বিনম্র স্বভাবের, হাসিমুখে প্রফুল্ল আচরন তিনি করতেন। কখনো কোন ভৃত্যকে ধমক পর্যন্ত দেন নি, আপন পরিজনের সাথে সহৃদয় আচরনে রাসূল(সঃ) এর কোন জুড়ি ছিল না।

সহীহ মুসলিম

আয়েশা(রাঃ) বলেন তিনি স্ত্রীদের কাজে সহযোগীতা করতেন আর যখন নামাজের সময় হতো তিনি নামাজে চলে যেতেন। সহীহ বুখারীঃ৬০৩৯

একদিন এক কলিগ বলছিলেন যে তার এক আত্মীয়ের বাসায় গেলে সেই মুরুব্বী বলা শুরু করলেন, ছেলেটা আমার অফিস করে এসেও বউকে সহযোগীতা করে অনেক কাজ করে। বিয়ে করালাম কি বউ এর কাজ করে দেবার জন্য? তখন সে তাকে বুঝালেন যে আপনার ছেলেতো রাসূল(সঃ)এর সঠিক উম্মত তাই অনুসরন করে চলেন প্রিয় নবী(সঃ) কে। সংসারের কাজতো বউদের এই ধারনাটা একপেশে। সবাই সুযোগমত কাজ করবে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।

আসলে এই ধারনাটা আমরা আমাদের ছেলে সন্তানদের এইভাবে দিয়ে থাকি যে, মেয়ে সন্তান দিয়ে ঘরের কাজ করাই আর ছেলে সন্তানকে দিয়ে সুযোগ থাকলেও কাজ করার মাধ্যমে পরিবারে সহযোগীতার শিক্ষাটা দেই না। যেন এটা একটি বিধিসম্মত নিয়ম যে ঘরের কাজ মেয়েকেই করতে হবে এবং ছেলেদের করতে হবে না। ছোটবেলা থেকেই একটি সম্পূর্ন ভিন্ন মন মানসিকতা নিয়ে বড় হয় ছেলেটি যা পুরুষ হিসেবেও আরো কঠোর অবস্থানে চলে যায় পরিবারে সহযোগীতার কথা উঠলে। পিতা মাতার পরিবার থেকেই একটি ছেলে বা মেয়েকে ইসলামের সঠিক দৃষ্টিভংগি জানিয়ে বড় করা প্রয়োজন।

সামষ্টিক জীবনে আমাদের সমাজে অনেক স্বামীরাই কৃত্রিম একটি মুখোশ পরে থাকেন-যার ফলে বাইরের লোকেরা তার আচরনের ও কাজের খুব প্রশংসা করে থাকেন কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে এসে সেই মুখোশ খুলে ফেলে আসল রুপ বের করেন। বাইরে প্রচুর মহৎ আচরন ও উদারতার মহড়া দেখান কিন্তু ঘরোয়া জীবনে যেয়েই নেমে যান পশুর চেয়েও অধম আচরনে। বাইরের জীবনে সরলতা ও বিনয়ের চরম পরাকাষ্ঠা দেখান আর ঘরে বিলাসিতায় ও আরাম আয়েশে মেতে উঠেন। স্ত্রীর সামনে একরকম চরিত্র এবং অন্যের সামনে ভিন্ন রকম ফলে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও বিশ্বাসের জায়গাটি দূর্বল হয়ে যায়। কিন্তু রাসূল(সঃ) এর ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক জীবন ছিল একই রকম। নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসূলের মধ্যে রয়েছে তোমাদের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ।

রাসুল(সঃ) বলেছেন, তোমরা নারীদের ব্যাপারে উত্তম ব্যবহারের উপদেশ গ্রহন করবে। কেননা নারী জাতিকে পাঁজরের হাড় দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পাঁজরের হাড়গুলোর মধ্য থেকে উপরের হাড়টি অধিক বাঁকা। তুমি যদি তা সোজা করতে যাও তাহলে তা ভেঙ্গে ফেলবে আর যদি ছেড়ে দাও তাহলে সব সময়ই তা বাঁকাই থেকে যাবে।কাজেই নারীদের সাথে কল্যান করার উপদেশ গ্রহন করো। সহিহ আল বুখারীঃ৩৩১

আমাদের সমাজের পুরুষেরা এই হাদীসটি নিয়ে স্ত্রী, বোনদের বিদ্রুপ করে থাকে বিভিন্ন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে যা সকল ব্যক্তির জন্য বিশেষ করে পরহেজগার লোকদের জন্য অত্যন্ত অশুভনীয় ও গুনাহের কারন।

এই হাদিস থেকে শিক্ষা নেয়া দরকার যে, এখানে পুরুষ জাতিকে তার নিজের নারীর সাথে কিরুপ আচরন করবে তার নির্দেশনা দিতে যেয়ে সুন্দর একটি উপমা দিয়ে বুঝানো হয়েছে। যারা বুদ্ধিমান ও মুত্তাকী তারাই এই হাদীসের মর্মার্থ বুঝে এর থেকে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করেন।

কোমলমতি বিশেষভাবে গঠন করা মহান রবের অপরুপ সৃষ্টি নারীর সাথে তার নিজের পুরুষ ব্যক্তিটি যেন খুবই যত্নের সাথে গুরুত্ব দিয়ে নরম আলতোভাবে  লেন দেন করেন  সেই শিক্ষা দেয়া হয়েছে।। অনেক দামী ও সূক্ষ্ম জিনিষকে আমরা কত যত্নের সাথে ধরি যেন ভেঙ্গে না যায়। আবার ফেলে রাখি না কারন সে জিনিষে ধূলা বালি পড়তে থাকবে। আবার নারীকেও সাবধান হতে হবে যেন একগুয়েমী না থাকে চরিত্রের মাঝে। পুরুষ ব্যক্তিটির ভারসাম্যপূর্ন সহযোগীতা করাই সম্পর্কের আলোকে দাবী রাখে।

কিন্তু দেখা যায় স্বামী অনেক ক্ষেত্রেই এর অনুসরন করেন না। আমাদের সমাজে আজ সবচেয়ে প্রকট আকার ধারন করেছে দুটি ব্যপার যা অনেক ক্ষেত্রেই সংসার ভাংগনের কারন হয়ে দাঁড়ায় অথবা অশান্তিপূর্ণ পরিবার গঠন হয় অথবা মানসিক রোগী হিসেবে চিকিৎসার দ্বারগ্রস্ত হতে হয়।

১। মা ও স্ত্রীর মাঝে আচরনে ভারসাম্যতা না থাকা।

২। চাকরীজীবি নারীর সাথে সমন্বয় করতে না পারা।

অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় স্বামী নিজ মায়ের দিকে অতিরিক্ত ঝুঁকে পড়ে স্ত্রীর সাথে অন্যায় আচরন করেন আবার অনেক ক্ষেত্রে স্ত্রীর দিকে ঝুঁকে পড়ে মায়ের সাথে অন্যায় আচরন করে ফেলেন। আমরা বাঙ্গালী জাতি বিশেষ ভাবে বেশী আবেগপ্রবন। এই আবেগপ্রবনতা পারিবারিক বন্ধনকে যেমন আগলে রাখে আবার এর কারনে বন্ধনগুলোতে রহমত থাকে না কারন আবেগের আতিশয্যে অনেকেই শরীয়তের নাজায়েজ কাজ করে ফেলেন।

একজন স্বামীর চরিত্রে শুধুমাত্র মুমিনের বৈশিষ্টের অনুশীলন দ্বারাই এই ধরনের সমস্যার সমাধান সম্ভব। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য আজ আমাদের অনেক ভাইরা ব্যক্তিগত আমল কিছু করলেও এই ধরনের লেন দেনে দৃঢ় ঈমানীয়াতের পরিচয় দিতে ব্যর্থ হোন, আবেগের কাছে নতজানু হয়ে যান, শয়তানের চক্রান্তে আটকে যান। মহান আল্লাহ আমাদের ভাইদের হেফাজত করুন।

একজন স্বামীকে এটা জানা থাকা প্রয়োজন যে বিয়ের পর মায়ের দায়িত্ব কমে যায় না বরং এর পাশাপাশি আরেকটি নতুন (স্ত্রীর) দায়িত্ব কাধে নিয়েছেন। যদিও পিতামাতার সন্তানের প্রতি দায়িত্ব কমে আসে। পিতা মাতার মনে রাখা প্রয়োজন বিয়ের পর সন্তানের প্রতি নজরদারি করার দায়িত্ব বর্তায় না। চোখের সামনে দীনের পথের বাইরের কিছু দেখলে সংশোধন করার তাগিদ দিবে কিন্তু সন্তানের সংসার জীবনে হস্তক্ষেপ করা মোটেও সমীচিন নয়। আখেরাতের বিধানের ব্যপারে সব সময় উপদেশ দিবেন কিন্তু সন্তানের সংসার জীবনের খুঁটিনাটি নিয়ে হস্তক্ষেপ করার দায়িত্ব পিতা মাতার নয়।

একটি পরিবারে এই স্বামীকেই দায়িত্বে্র মাঝে ভারসাম্যতা, ন্যায়পরায়নতা ও সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো তাকওয়ার নীতি অবলম্বন করতে হবে। মহান রবের সন্তুষ্টিকে প্রাধান্য দিয়ে সকলের প্রতি সঠিক দৃষ্টি রাখতে হবে। তাই পুরুষের জন্য এটি বড় চ্যালেঞ্জ বা পরীক্ষা।

দেখা যায় মা তার জীবনে অনেক কষ্ট করেছেন বলে অনেক ক্ষেত্রে সেগুলোকে সামনে রেখে সন্তানের সাথে বউএর ব্যাপারে অনেক অভিযোগ তুলে ধরেন,আবার স্ত্রী রান্না করেন না বলেও অভিযোগ তুলেন। স্ত্রীও সেই ধরনের নানা অভিযোগ তুলেন এই বলে যে আমার সংসারকে নিজের মতো সাজাতে পারলাম না ইত্যাদি। আরো অনেক ছোট ব্যাপার যা অনেক জটিল হয়ে দেখা দেয়, অনেক বড় ব্যাপারও হয় সেগুলো আমাদের আশে পাশে পরিবারগুলোতে দেখতে পাই। সব ঘটনা বলে শেষ করা যাবে না। একজন ইসলামী চিন্তাবিদ বলেছিলেন অভিযোগের জবাবের পিছনে সময় নষ্ট না করে দীনের মূল কাজ চালিয়ে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ, কারন জীবনের সময়ের চাকা যা একমুখী হয়ে ঘুরে চলছে কবরের দিকে সেই সময় দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। দুনিয়াতে ভালো কাজ করার পিছনে যেন সময় না পায় সেইজন্য শয়তান পারিবারিক এই ধরনের অবস্থার সৃষ্টি করতে পরিবারের সদস্যদের ওয়াস ওয়াসা দিতে থাকে, এইক্ষেত্রে শুধুমাত্র মহান রবের খাস বান্দা যারা নফসের বিরোধীতা করার শক্তি রাখে তারাই শয়তানের চক্রান্ত থেকে নিজেদের ও পরিবারকে রক্ষা করতে পারেন মহান আল্লাহর সাহায্যে।

তাই স্বামীরা যদি মহান রাসূল(সঃ)কে অনুসরন করেন তাহলে কোন সমস্যা হয় না। চরিত্রে যদি এই জিনিষগুলো না থাকে-

১। দ্বিমুখী নীতি ও সিদ্ধান্ত হীনতা:

অনেক স্বামী পরিবারে মায়ের কাছে একরকম কথা ও বউ এর কাছে আরেকরকম এই ভাবে সমাধান করতে চান। কিন্তু এই ভাবে সাময়িক সমস্যাকে আড়াল করা যায়, সমাধান হয় না বরং মা ও বউ এর কাছে বিশ্বাস হারাতে বসেন। সিদ্ধান্তহীনতা চরম দূর্বলতার একটি বৈশিষ্ট্য, এর ফলে স্ত্রী নির্ভরতা করার সাহস পান না যা স্বামীর ব্যক্তিত্বে আঘাত হানে। পরিবারের সদস্যদের সাথে পরামর্শ করে আল্লাহর সাহায্য চেয়ে সিদ্ধান্তে অটল থাকা মুমিনের ব্যক্তিত্ব।

আল্লাহ তা‘লা দ্বিমুখী নীতির সমালোচনা করে বলেন,

তারা এর মধ্যে দোদুল্যমান, না এদের দিকে আর না ওদের দিকে। আর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তুমি কখনো তার জন্য কোন পথ পাবে না। সূরা নিসা: ১৪৩

২। মিথ্যা কথা বলা ও গালি গালাজ করাঃ আমাদের অনেক শিক্ষিত পরিবারেও অকথ্য ভাষায় গালি দেয়ার অভ্যাস আছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।

বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কারনে ব্যক্তির রাগ বা ক্রোধ আসতে পারে কিন্তু তার ফলে জিহবা দিয়ে খারাপ গালি দেয়া কি ভাবে সম্ভব একজন মুমিনের পক্ষে? যে জিহবা দিয়ে আল্লাহর যিকির হয়, যা দিয়ে ভালোবাসার কথা হয়, কিভাবে সম্ভব তা দিয়ে খারাপ ভাষা ব্যবহার করা?  আবার কোন কিছু লুকাতে যেয়ে স্বামী মিথ্যার আশ্রয় নেন । অথচ সত্য বললে হয়তো সাময়িকভাবে স্ত্রী বা মা কষ্ট পেতে পারেন কিন্তু বিশ্বাস এর জায়গাটি বহাল থাকবে। এই বিশ্বাস হলো একটি সংসারের জন্য ভিত্তি।

আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাঃ বলেন, চারটি গুণ যার মধ্যে একত্র হবে, সে সত্যিকার মুনাফেক। আর যার মধ্যে এ তিনটি গুনের যে কোন একটি থাকবে সে যতদিন পর্যন্ত তা পরিহার না করবে তার মধ্যে নেফাকের একটি গুণ অবশিষ্ট থাকল। যখন কথা বলে মিথ্যা বলে। আর যখন কোন বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দেয়, তখন তা লঙ্ঘন করে, আর যখন ওয়াদা করে তা খিলাফ করে, যখন ঝগড়া-বিবাদ করে, সে অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ করে।সহীহ বুখারী-৩৪

৩। অশ্লীল কথা বলাঃ

অনেক স্বামী দেখা যায় নিজের আত্মীয়দের সাথে অশ্লীল গল্প গুজব করেন অকপটে, আবার নিজ পরিবারে বা শ্বশুর বাড়িতে ভিন্ন ভাব দেখান, এটাই অশান্তি নিয়ে আসে। এই অবস্থা দেখে স্ত্রী বা সন্তানদের অন্তরে পুরুষ ব্যক্তিটির সম্পর্কে শ্রদ্ধাবোধ কমে আসতে থাকে।

আবু উমামাহ রা. হতে বর্ণিত রাসূল সঃ বলেন, লজ্জা ও কথা কম বলা, ঈমানের দুটি শাখা আর অশ্লীলতা ও অতিকথন নেফাকের দুটি শাখা।জামে আত তিরমিযীঃ২০২৭

৪। নিজের জন্য যা পছন্দ স্ত্রীর বেলায় তা না করাঃ

একজন মুমিন হতে পারবে না যতক্ষন সে নিজের জন্য যা পছন্দ করে অন্য ভাইএর বেলায় তা না করবে। এই নীতি না থাকার কারনে দেখা যায় স্বামীর সাথে মনোমালিন্য।

একদিন একজন স্ত্রী বলছিলেন, আচ্ছা-বলেনতো, আমার স্বামী আজ পর্যন্ত ছোট একটি জিনিষ উপহার হিসেবে দূরে থাক প্রয়োজনীয় জিনিষ এনে আমাকে দেয় নাই, ভাবতাম এগুলো বুঝেই না মনে হয় কিন্তু যখন দেখলাম দেবর ননদের বেলায় প্রয়োজন বুঝে উপহার দেন কিন্তু আমার বেলায় সে বুঝে না, এটা কি ভণ্ডামী না?  

এই ধরনের অনেক অভিযোগ স্ত্রী তার একান্ত আপন মানুষকে নিয়েই করে থাকেন যা স্বামীর পরিবারে দায়িত্ব পালনের ব্যর্থতার চিত্র। হাশরের মাঠে কি হবে একবার কি চিন্তা করে দেখেছেন?

আসলে একজন নারীর প্রকৃতিগত স্বভাবই হলো লজ্জাশীলতা ও নিজ প্রয়োজনকে কারো কাছে চেয়ে পূরন করতে অভ্যস্থ থাকেন না।  আমাদের সমাজে মেয়ে সন্তানটি বড় হয় বাবা মায়ের আদরে, কখনোই এইভাবে চেয়ে আদায় করতে হয় নি। হাদীসে তাই শিক্ষা দিয়ে দেয়া হয়েছে যে স্ত্রীকে তাই পড়তে দিতে হবে যা সে নিজে পড়েন অর্থাৎ মানগত দিক বজায় রাখতে হবে।

আবার স্ত্রীর পছন্দে, স্ত্রীর আত্মীয়ের দিকে নিজ টাকা দিয়ে উপহার দিতেও অনেক স্বামী বাধা দেন , এটাও সমস্যা হয়, এই সব কিছুই ব্যক্তির চরিত্রের দুই রকম ধারা থাকাতেই দেখা যায়, যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে পরিবার চালান তিনি এই সব ঝামেলায় সাধারনত পড়েন না।

সূরা ইউসুফে মহান আল্লাহ জানিয়েছেন, স্বপ্নে ইউসুফ আঃ যা দেখেছিলেন সেই কথা, সূর্য,চাঁদ সহ ১১টি তারা ইউসুফ আঃ কে সেজদাহ করছে।

এখানে সূর্য কে তুলনা করা হয়েছে পিতার সাথে, চাঁদকে মায়ের সাথে ও তারাকে ভাইদের সাথে। খুব সুন্দর উপস্থাপন। পরিবারের স্বামী সেই সূর্যের মতো দীপ্ত যার আলো স্ত্রী ও সন্তানেরা ধারন করে চলে। কিন্তু যখন সূর্য গ্রহন বা চন্দ্র গ্রহন হয় তখন রাসূল সঃ নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন যতক্ষন না এই গ্রহন শেষ হয়ে আসে কারন এই অবস্থাটা কল্যানমূলক নয়। আমাদের পরিবারগুলোতে স্বামীকে সেই চরিত্রের ধারক হয়ে চলতে হবে যেন অকল্যান থেকে হেফাজত থাকে পরিবারগুলো।

মহান আল্লাহ বলেছেনঃ হে জনগন, তোমাদের রবকে ভয় কর যিনি তোমাদিগকে একটি প্রাণ থেকে সৃষ্টি করেছেন,উহা হতে উহার জুড়ি তৈরী করেছেন এবং এই উভয় হতে বহু সংখ্যক পুরুষ অ স্ত্রীলোক দুনিয়ায় ছড়িয়ে দিয়েছেন। সেই আল্লাহকে ভয় কর যার দোহাই দিয়ে তোমরা পরস্পরের নিকট হতে নিজের নিজের হক দাবী কর। এবং আত্মীয়সুত্র ও নিকটত্বের সম্পর্ক বিনষ্ট করা হতে বিরত থাক। নিশ্চিত জেনো যে,আল্লাহ তোমাদের উপর কড়া দৃষ্টি রাখছেন।সূরা আন নিসাঃ০১

এই আয়াতটি বিয়ের সময় কাজী সাহেব বলে থাকেন। কিন্তু আমরা কি জানি এই আয়াতে কি শিক্ষা ও আদেশ রয়েছে একজন নব বর ও বধূর জন্য?  যদি আমরা বুঝতাম এবং আমরা শুনলাম ও মানলাম এই নীতিতে আমল করতাম তাহলে হয়তো এতো দ্বন্ধ হতো না।

উভয় পক্ষের আত্মীয়দের সাথে সম্পর্ক বিনষ্ট করে এই ধরনের ভূমিকা থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে আল্লাহকে ভয় করে। মহান আল্লাহ তীক্ষ্ণ নজর রেখেছেন উভয়ের প্রতি।

তাই বিয়ের পর শুধু একজন নারীর তার স্বামীর আত্মীয়দের ব্যপারে যেমন হক আদায়ে সচেষ্ট থাকবে তেমনি একইভাবে স্বামী স্ত্রীর আত্মীয়দের ব্যপারে হক আদায়ে সচেষ্ট থাকতে হবে। দুই পরিবারের আত্মীয়রাও সচেষ্ট থাকবেন যেন সকলের সাথে সদ্ভাব বজায় থাকে।

আত্মীয়ের হকের ব্যাপারে অনেক জোড়ালো হাদীস এসেছে। সেটা আরেক অধ্যায় যা আলোচনার দাবী রাখে। কোন নর বা নারী বিয়ে করেন সম্পর্ক ছেদ করার জন্য এটা কোনভাবেই সত্য নয়। এই ধরনের পরিস্থিতি হওয়ার পিছনে অনেক কারন থাকে। অবশ্যই আমাদের সুন্দর সত্য উদার মন নিয়ে মহান আল্লাহর ভয়কে সামনে রেখে আখেরাতের ফয়সালার কথা চিন্তা করেই আমাদের নিজেদের অবস্থান যাচাই করা প্রয়োজন এবং সেই ভাবে কুর’আন হাদীসের আলোকে সংশোধিত হতে হবে যদি আমরা জান্নাত পেতে চাই। এই ব্যাপারে আমি মনে করি প্রতিটি নর বা নারী বিয়ের পূর্বে কমপক্ষে ৩ মাস কুর’আন হাদীসের আলোকে পড়া শুনা করে বিবাহীত জীবন সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা প্রয়োজন। অভিভাবকদের এই ব্যাপারে ভূমিকা রাখা প্রয়োজন।

সেই বুদ্ধিমান যে নিজেকে সংশোধন করে নিলো।

স্বামী পরিবারের মূল অভিভাবক বলেই দায়িত্বটা বেশী ও জবাবদিহীতাও বেশী। পরিবারের অধিনস্থদের হক সুন্দর ভাবে আদায় করাটা পরিবারের কর্তার দায়িত্ব। স্ত্রীকে ভালোবাসা দিয়েই তাকওয়া সম্পন্ন বানানোর চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। ওয়াহীর জ্ঞানের চর্চা রাখতে হবে নিজেদের মাঝে।

সব নারীকে এক কাতারে এনে পূর্ব ধারনার বশবর্তী হয়ে আচরন করলে কখনো শান্তি আসবে না।একজন নারী যখন তার আপন চির পরিচিত এক পরিবার থেকে অন্য একটি পরিবারে আসে তখন সেই পরিবারের সদস্যদের দায়িত্ব নতুন এই সদস্যাকে আপন করে নেয়া, এই ক্ষেত্রে স্বামীর সহযোগীতা খুবই গুরুত্ব রাখে। স্ত্রী নতুন করে পাওয়া মহান রবের আমানত।

 স্বামী স্ত্রীকে সহযোগীতা করবে এই ভাবে যে, পরিবারের মা বাবা কি পছন্দ করেন আর না করেন সেটা কিছু বুঝিয়ে দেয়া যেন স্ত্রী সেই ভাবে শশুর শাশুড়ীর সাথে আচরন করতে পারেন। স্ত্রীকেও সেই মনের আকাংক্ষী হতে হবে যে, সে দাঈ ইলাল্লাহ হিসেবে এই পরিবারে কাজ করার জন্য ভালো একটা সম্পর্ক তৈরী করতে হবে, এ ছাড়া স্বামীর জন্য দায়িত্ব পালন সহজ হবে এবং স্বামী খুশী থাকবে যদি শশুর শাশুড়ীর যত্ন দিতে পারেন স্ত্রী, সব কিছুরই মূল উদ্দেশ্য মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি। এখানে প্রসঙ্গত জানিয়ে নেই অনেক স্বামী স্ত্রীর উপর জুলুম করে তার পিতা-মাতার দায়িত্ব পালনের জন্য যা অন্যায়। ইসলামী শরীয়তে নারী, শশুর শাশুড়ী বা সেই পরিবারের অন্য সদস্যদের দায়িত্বের ব্যাপারে বাধ্য নন। নারী নিজের সংসারের জন্য আলাদা বাসস্থানের দাবীও করতে পারে। স্বামী তার সামর্থ অনুযায়ী থাকা,খাওয়া ও পড়ার ব্যবস্থার ব্যাপারে দায়িত্বশীল। তবে মনে রাখা প্রয়োজন পিতা মাতার বৃদ্ধাবস্থায় একটি ছেলে সন্তান সবচেয়ে বড় অভিভাবক। একসাথে থেকে এই অভিভাবকের দায়িত্ব পালন সহজ হয় এবং আখেরাতের দায়বদ্ধতা থেকেও সহজে মুক্তি পাওয়ার সুযোগ থাকে। স্ত্রীও এহসানের ভূমিকায় অবতীর্ন হয়ে মহান রবের প্রিয় বান্দাহ হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করতে পারবে। ভবিষ্যতে নিজ ছেলেরাও তাদের পিতা মাতার প্রতি সঠিক দায়িত্ব পালন করার শিক্ষা পাবে।

তবে কিছু যৌথ পরিবারের অবস্থা এমন হয় যে, মহান আল্লাহ এই সম্পর্ক দিয়েছেন এবং সম্পর্কের ব্যবস্থাপনাও জানিয়ে দিয়েছেন কিন্তু আবেগের আতিশয্যে সেই রবের দেয়া ব্যবস্থাপনাকে অবহেলা করে মূলত মহান রবের দেয়া বিধানকে অপমানিত করে থাকে। যেমন কিছু পরিবারে দেখা যায় এই সম্পর্ক ধরে রাখার নামে পর্দার বিধানকে উপেক্ষা করে দেবর-ভাসুর, ভাবী, দুলাভাই একসাথে বসে গল্প খাওয়া দাওয়া হাসি ঠাট্টা চলে যা শরীয়ত কোনভাবেই অনুমোদন করে না। এই ক্ষেত্রে পরিবারের স্বামীকেই মূল ভূমিকা রাখতে হবে। কিন্তু সমস্যা হয় স্বামীর নিরব ভূমিকা পালনের জন্য পরিবারের সদস্যরা সেই নারীকে ভুল বুঝে, যে শরীয়ত মেনে চলতে চায়। আবার অনেক পরহেজগার স্বামী আছেন যারা বাইরের সমাজেই পরহেজগার কিন্তু পরিবারের ভিতর ভাবী বা গায়ের মাহরাম নারীদের সাথে শরীয়তে বিধানের কোন তোয়াক্কাই করেন না যা স্ত্রীর মনে স্বামীর পরহেজগারীতাকে মুখোশ বলে মনে আসায় শ্রদ্ধা ও ভক্তি কমে যায় অনেক ক্ষেত্রেই। অশান্তি থাকে পরিবারে।

 এক কলিগের বিয়ের দিন শশুর নাই(মৃত) বিধায় ভাসুর এসে হাজির হয়েছেন আংটি পড়িয়ে দিবেন ছোট ভাইয়ের বউকে কারন সেই এখন মুরুব্বী, কিন্তু আমার কলিগ তখন বাধ্য হয়েই মেনে না নিয়ে বললেন যেন, তার জা(ভাসুর বউ) আংটি পড়ান। তাতে ভাসুর খুব অপমানিত ভাব ধরে রাগ হয়ে চলে গেলেন। এরপর অনেক দিনই সময় লেগেছে এই ব্যাপারটা সহজ করতে। সে যাই হোক অনেক ঘটনা আছে আমাদের ভাই ও বোনদের জীবনে যা শুনলে কষ্ট লাগে এইভেবে যে, আমরা যারা অন্তত কিছু হলেও কুর’আন হাদীস পড়ার ও মানার চেষ্টা করার কথা বলি,আমাদের পরিবারগুলোতেই সবাই তাকওয়া সম্পন্ন জীবন যাপন না করার কারনে পরিবারের যে ব্যক্তিটি শরীয়ত অনুযায়ী চলতে চান তার জন্য কষ্ট হয়ে যায়, ঈমানের দাবীর কারনেই সেই ব্যক্তিটিও অন্যায়ের বিপক্ষে কথা না বলে পারেন না। সমস্যা কিন্তু এখানেই। তাই পরিবারের মূল কর্তাকে তাকওয়া সম্পন্ন আমলদার হয়েই সবাইকে শিক্ষা দিতে হবে।

এ ব্যাপারে আমাদের ভাই/বোনদের অনুরোধ করবো islam QA web site থেকে পরিষ্কার জ্ঞান লাভ করবেন যা সঠিক ভাবে ইসলামের আলোকে দেয়া।

নিজের রক্তের সম্পর্কের ভাই বোনদের মাঝেও মতের অমিল হয়,তাই বলে কি আপনি খারাপ আচরন করে সম্পর্ক খারাপ করে ফেলেন? তাহলে স্ত্রীর বেলায় কথা বা আচরনে কেনো সহনশীলতা আসে না? আবার আপনার বোনটি শশুর বাড়ীতে কাজ করে বলে সেই পরিবারের সদস্যদের খারাপ বলেন বা আপনি মানতে চান না,তাহলে আপনার স্ত্রীর বেলায় কেনো অন্য রকম ধারনা করে থাকেন,এইক্ষেত্রে শাশুড়ীও নিজের মেয়ে সন্তানটির বেলায় যেমন চান ছেলের বউ এর বেলায় অন্যরকম আচরন দেখান,তাহলে কি ভাবে সেই নারী/বউ পরিবারে আপন ভাববে নিজেকে? পরিবারের অনেক ব্যাপার আপনারা বউকে মূল্য না দিয়ে আলোচনার বাইরে রাখেন তাহলে এই সদস্যাটি কি মানসিক ভাবে ভাববেন না যে আমাকে শুধু কাজের সময় প্রয়োজন। রাসূল(সঃ) অনেক ব্যাপারেই স্ত্রীদের সাথে পরামর্শ করেছেন, স্ত্রীদের সাথে কখনো খারাপ আচরন বা রাগা রাগিও করেন নি। দয়ার আচরন দেখিয়েছেন, খেলা ধূলা আনন্দ দিতেও তৎপর ছিলেন। আপনি স্বামী যদি স্ত্রীর সাথে নরম আচরন করেন তাহলে কি আপনার সম্মান চলে যাবে? না ভাই, তাতে সম্মান যাবে না বরং স্ত্রী লজ্জা পেয়ে সংশোধন হয়ে যাবে, মহান আল্লাহর কাছে আপনি সম্মানীত মুমিন হিসেবেই তালিকাভুক্ত হবেন। রাসূল(সঃ)এর চরিত্রের প্রতিফলন আজ খুবই প্রয়োজন তাহলে অন্তত পরহেজগার পরিবারের অশান্তি দূর হবে ইনশা’আল্লাহ এবং broken family সংখ্যা কমে আসবে।

ক্ষন স্থায়ী এই জীবনে যা হাসরের সময়ের হিসেবে হয়তো ১২ ঘন্টা বা ২৪ ঘন্টা। এই অল্প সময় যদি শুধুমাত্র এই নিয়ে, কে কি কাজ করল কি করলো না, সেই বিচার আমরা করতে থাকি তাহলে জীবনের মূল কাজ থেকে বঞ্চিত হয়ে শয়তানের পথেই পা বাড়ালাম। আর এভাবেই কবরেই যাবার সময় চলে আসবে-কিন্তু তখনও বুঝতেই পারলাম না। মহান আল্লাহ আমাদের বুঝার তাওফিক দান করুন।

রাসূল(সঃ) বলেছেন, কোন মুমিন পুরুষ কোন মুমিন নারীকে ঘৃণা ও অপছন্দ করবে না, যদি সে তার কোন স্বভাবকে অপছন্দ করেও তাহলে সে তার অপর একটি স্বভাবকে পছন্দ করবে। সহীহ মুসলিমঃ১৪৬৯

তবে এটা ইহসান যে একজন স্ত্রী যদি শশুর শাশুড়ী সহ অন্য সদস্যদের সাথে সহযোগীতা করে সুন্দর একটি পরিবেশ তৈরী করার চেষ্টা করতে থাকেন সবরের মাধ্যমে, তখন পরিবারের অন্যরাও সঠিকভাবে ইসলামকে বুঝার আগ্রহ লাভ করবে এবং আদর্শ হিসেবে অন্যেরাও তাকওয়া সম্পন্ন নারীর মর্যাদা দিবে, এই দুনিয়াতেও এবং আখেরাতেও পুরষ্কার পাবে।

মহান আল্লাহ বলেছেনঃ যে ব্যক্তি রসুলের বিরুদ্ধতা করার জন্য কৃত সংকল্প হবে এবং ঈমানদার লোকের নিয়ম-নীতির বিপরীত নীতিতে চলবে-এমতাবস্থায় যে, প্রকৃত সত্য পথ তার নিকট সুস্পষ্টরুপে প্রতিভাত হয়েছে-তাকে আমরা সেই দিকেই চালাইব যেদিকে সে নিজেই চলিতে শুরু করেছে এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবো যা নিকৃষ্টতম স্থান।সূরা আন নিসাঃ১১৫

আমাদের অন্তরকে মূল উদ্দেশ্যের দিকে কেন্দ্রিভূত করতে হবে যেন আমরা দুনিয়ার মায়ার বেড়াজালে ও শয়তানের চালবাজীতে নিজেকে বন্দি না করে ফেলি। মহান আল্লাহ আমাদের কেন এই যমীনে বিভিন্ন ইস্যু দিয়ে পাঠিয়েছেন তা আমাদের মনে রাখতে হবে প্রতি পদক্ষেপে। মহান আল্লাহ বলেছেনঃ

আর যে ব্যক্তি কোন সৎকাজ করবে, সে পুরুষ বা নারী যেই হোক না কেন, তবে যদি সে মুমিন হয়, তাহলে এই ধরনের লোকেরাই জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের এক অণুপরিমাণ অধিকারও হরণ করা হবে না ৷সেই ব্যক্তির চাইতে ভালো আর কার জীবনধারা হতে পারে, যে আল্লাহর সামনে আনুগত্যের শির নত করে দিয়েছে, সৎনীতি অবলম্বন করেছে এবং একনিষ্ট হয়ে ইবরাহীমের পদ্ধতি অনুসরণ করেছে? সেই ইবরাহীমের পদ্ধতি যাকে আল্লাহ নিজের বন্ধু বানিয়ে নিয়েছিলেন ৷

সূরা নিসা ১২৪-১২৫