আত্মউপলব্ধি-৫(প্রেক্ষাপট-৪)

প্রেক্ষাপটঃ ৪

 সমাজে একটি পরিবারে স্ত্রীর অবস্থান

নারী হিসেবে নারীরা নিজেদের উপর কিভাবে যুলুম করেন বা সুন্দর সুন্দর দায়িত্ব কিভাবে তারা হেলায় নষ্ট করে ফেলছেন তা তুলে ধরার চেষ্টা করবো ইনশা’আল্লাহ।

যে নারী দুনিয়ার জীবনেই সব পেতে চান আখেরাতে যার চাওয়ার বা পাওয়ার কোন ইচ্ছা নেই তাদের কথা এখানে বলা উদ্দেশ্য না কিন্তু  যে নারীরা মহান আল্লাহ’তালার সন্তুষ্টি নিয়ে দুনিয়া তে শান্তি ও আখেরাতে উচ্চতর জান্নাত পেতে আগ্রহী সেই সকল সম্মানীতাদের জন্যই এই দিকগুলো তুলে ধরা যেন সংশোধিত হয়ে মহান আল্লাহর পথে ইস্তিকামাত হতে পারেন । আল্লাহতায়ালা আমাদের অন্তরকে খুলে দিন বুঝার জন্য এবং কুরআনকে এই অন্তরে বসিয়ে দিন।

একজন নারী পরিবারে কেউ বোন, কেউ স্ত্রী কেউ বা কন্যা এবং কেউ বা সম্মানিতা মায়ের পদে অবস্থান করছেন। অনেক ক্ষেত্রে সবগুলো জায়গাতেই একজন নারীকে বিচরন করতে হয়। কিন্তু নারীরা কি একবারও ভেবেছেন এই পদগুলো মহান আল্লাহ তা’আলা দিয়েছেন কেন?  আবার অনেকে রিযিকের প্রয়োজনে অথবা যোগ্যতার সঠিক ব্যবহারের জন্য ঘর থেকে চাকরীর জন্য বের হয়ে থাকেন, একভাবে বলা যায় প্রফেশনাল একটি পদ লাভ করেন।

নারী পুরুষ প্রত্যেককেই মহান আল্লাহতায়ালা সৃষ্টিগতভাবে দুটি পদ দিয়েছেন তা হলো —-

আমি জীন ও মানুষকে আমার ইবাদাত(উপাসনা ও দাসত্ব) করা ছাড়া আর অন্য কোন উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করি নাই। সূরা যারিয়াতঃ৫৬

যে দুটি পদ আরবি শব্দ ইবাদার পরিপূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে তাহলো – উপাসনা এবং দাসত্ব। অধিকাংশ সময় আমরা যেকোনো একটি অর্থ গ্রহণ করি। বাংলায় দুটি আলাদা বিষয়, কিন্তু আরবি একটি শব্দ ইবাদা দ্বারাই উভয়টি বোঝায়।

উপাসনা হলো – কিছু সুনির্দিষ্ট কাজের নাম। রোজা রাখা, নামাজ পড়া, হজ্জ পালন করা, কুর’আন তিলাওয়াত করা, দান করা – এইসব কাজ হলো উপাসনা। কিন্তু একজন দাস সবসময়-ই একজন দাস। সে এই কাজগুলো পালন করুক আর নাই করুক। এই ধারনাটি খুবই শক্তিশালী। এর মানে হলো – আমাদেরকে জীবন যাপন করতে হবে সেভাবে- যেভাবে আল্লাহ জীবন যাপন করতে বলেছেন।

 মানুষ আল্লাহর উপাসনা করে কিন্তু তার দাসের মত আচরণ করে না। কেউ হারাম ব্যবসা করে যেমন-মদের,সিনেমা, আবার প্রত্যহ পাঁচবার নামাজ পড়তে আসে। সে আল্লাহর উপাসনা করে কিন্তু সুস্পষ্টরূপে সে আল্লাহর দাস এর মত আচরণ করে না। সে আল্লাহর নির্দেশ পালন করছে না, আপনি আল্লাহর উপাসনা করেন কিন্তু এখনো আপনি আল্লাহর বান্দাহ নন। উপাসনা হলো একটি অংশ আর দাসত্ব হলো অন্য অংশ। উপাসনা এবং দাসত্ব উভয়ই ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত।

 সেই আল্লাহই তোমাদেরকে দুনিয়ার প্রতিনিধি বানিয়েছেন এবং তোমাদের ভেতর থেকে কাউকে কারোর চেয়ে উচুঁ মর্যাদা দিয়েছেন, যেন তোমাদেরকে তিনি যা কিছু দান করেছেন তার ভেতর তোমাদের পরীক্ষা করতে পারেন। সুরা আন’আম ১৬৬

কুর’আনের আয়াতের শিক্ষায় সেই পদ দুটি হলো মহান আল্লাহর বান্দা বা দাস এবং অন্যটি আল্লাহ সুবহান তায়ালার প্রতিনিধি রাসূলের স.এর প্রতিনিধিত্ব করা।

একদিকে সর্বনিম্ন অধ্যায় দাসত্ব এবং অন্য দিকে উচ্চতর মর্যাদা মহান রবের খলিফা বা প্রতিনিধির(রাসূল স.এর) প্রতিনিধিত্ব। আমরা কি আমাদের জীবনের প্রতিটি সময়ে এই অবস্থানে নিজেকে রাখতে সচেষ্ট হচ্ছি!

এই দুটি পদে অবস্থান করে মহান রবের সাথে নারী বা পুরুষ যে কেউ চুক্তি করতে পারে যে, তার জান মাল যা আল্লাহই দিয়েছেন তা বিক্রি করবে আল্লাহর কাছে জান্নাতের বিনিময়ে অর্থাৎ মূল চেতনা হলো ব্যক্তির এই কথাতে আসতে হবে যে-

নিশ্চয়ই আমার নামাজ আমার জীবন আমার কুরবানী সবকিছুই সেই মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্য যিনি সমস্ত জাহানের প্রভু যার কোন শরীক নেই। সূরা আন’আমঃ ১৬২

আর এই চেতনা বিশ্বাসকে দৃঢ় ভাবে ধারন করে একনিষ্ঠ ভাবে দুনিয়ার জীবনে যে যে পদে আছেন তার সঠিক দায়িত্বের আঞ্জাম দিয়ে যেতে হবে। আর এর সাথে প্রয়োজন ভারসাম্য পুর্ণ ভাবে কাজকে সময়ের সাথে সমন্বয় করে চলা যেন বেহুদা সময় থাকার কোন সুযোগ না থাকে। যার যার দায়িত্ব ভারসাম্যপূর্ণভাবে ও সুন্দরভাবে পালন করতে হলে অনেক পরিশ্রমী হতে হবে।

মহান আল্লাহ বলেছেন-

আর যে ব্যক্তি কোন সৎকাজ করবে, সে পুরুষ বা নারী যেই হোক না কেন, তবে যদি সে মুমিন হয়, তাহলে এই ধরনের লোকেরাই জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের এক অণুপরিমাণ অধিকারও হরণ করা হবে না ৷

সেই ব্যক্তির চাইতে ভালো আর কার জীবনধারা হতে পারে, যে আল্লাহর সামনে আনুগত্যের শির নত করে দিয়েছে, সৎনীতি অবলম্বন করেছে এবং একনিষ্ট হয়ে ইবরাহীমের পদ্ধতি অনুসরণ করেছে ? সেই ইবরাহীমের পদ্ধতি যাকে আল্লাহ নিজের বন্ধু বানিয়ে নিয়েছিলেন ৷ সূরা নিসা ১২৪-১২৫

“আমি কি তোমাদেরকে জান্নাতী লোকদের বিষয়ে খবর দিব না? নবী জান্নাতী, সিদ্দীক জান্নাতী, শহীদ জান্নাতী, ভূমিষ্ঠ সন্তান জান্নাতী, ঐ ব্যক্তি জান্নাতী যে শুধুমাত্র আল্লাহকে খুশী করার জন্য শহরের এক কোণে বসবাসকারী ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এবং ঐ স্ত্রী জান্নাতী, যে তার স্বামীর প্রতি সর্বাধিক প্রেমময়ী, অধিক সন্তান দায়িনী ও স্বামীর দিকে অধিক প্রত্যাবর্তনকারিনী। স্বামী অসন্তুষ্ট হলে সে দ্রুত ফিরে আসে ও স্বামীর হাতে হাত রেখে বলে, আপনি খুশী না হওয়া পর্যন্ত আমি ঘুমের স্বাদ নেব না।” [বায়হাক্বী শু‘আব হা/৮৩৫৮]

ইবনে উমার রা: থেকে বর্ণিত। নবী সা: বলেন: তোমাদের প্রত্যেকেই রাখাল (অভিভাবক) এবং নিজ অধীনস্থ লোকদের ব্যপারে সে দায়ী। শাসক একজন অভিভাবক এবং কোন ব্যক্তি তার পরিবারের লোকদের অভিভাবক (দায়িত্বশীল)। কোন মহিলা তার স্বামী-গৃহের ও তার সন্তানদের অভিভাবক (রক্ষক)। অতএব তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং নিজ অধীনস্থ লোকদের ব্যপারে তোমাদের প্রত্যেককেই জবাবদিহি করতে হবে। বুখারী: ৪৮১৮

 মক্কায় হেরেম শরীফে  দরজা দিয়ে ঢুকার সময় লক্ষ্য করুন প্রতিটা দরজার নাম বিশেষ সাহাব(রা) দের নামানুসারে এবং পবিত্র মদিনাতেও তাই। অথচ  আল্লাহ তা’আলা ও রাসূল(সঃ) এর কাছে বিবি খাদিজা(রাঃ) আয়েশা(রাঃ) উনারাতো অনেক সম্মানিতা, তাহলে উনাদের নামে তো কোন দরজা উল্লেখ করা হয়নি! কোন নারীর নামেই দেয়া হয় নাই। এর মূল উদ্দেশ্য কি জানি না। তবে মনে হয়েছে সম্মানীতা নারীরা মর্যাদায় থাকেন তাদের কাজের ধারায়, যা কিয়ামত পর্যন্ত জারি থাকবে। হতে পারে এটাও শরীয়তে পর্দার কোন নমুনা। আল্লাহই ভালো জানেন।

মদিনায় উহুদ যুদ্ধেও আমরা দেখি কুরাঈশ কাফির নারীরা যেখানে নাচ গান বাদ্য কবিতা দিয়ে তাদের দলকে ইন্ধন যোগাচ্ছে সেখানে মুসলিম নারীরা মহান আল্লাহর কাছে দোয়ায় মগ্ন থেকেছেন আবার প্রয়োজনে ময়দানে বের হয়ে আহতদের সেবা এমনকি অস্ত্র ধরতেও সক্ষম হয়েছিলেন ।

মিসরের সেই সংগ্রামী নারী জয়নাব আল গাজালী- তিনিও তাঁর কাজের ত্যাগের ও অটল অবিচল থাকার যে উদাহরন রেখে গিয়েছেন তা কিন্তু আজো অনুসরনীয়।

আমরা নারীরা ভুলে যাই অথবা জ্ঞানের অভাবে বুঝতে অক্ষম থাকি অথবা ইচ্ছে করে মানতে চাই না যে, স্ত্রী হিসেবে একজন নারীকে কেন একজন পুরুষের কাছে সঁপে দিয়েছেন?

অনেক সুন্দর ও মোহনীয় করে মহান আল্লাহ তায়ালা নারীকে সৃষ্টি করেছেন যেন-

তিনি তোমাদের জন্য তোমাদেরই জাতির মধ্য হতে স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন যেন তোমরা তাদের নিকট থেকে পরম প্রশান্তি লাভ করতে পারো আর তোমাদের মধ্যে ভালবাসা ও সহৃদয়তার সৃষ্টি করে দিয়েছেন। নি;সন্দেহে এতে বিপুল নিদর্শন রয়েছে সেই লোকদের জন্য যারা চিন্তা ভাবনা করে। সূরা রুমঃ২১

হযরত আদম(আ) যখন জান্নাতে একা ছিলেন তখন মহান আল্লাহ মা হাওয়া(আ) কে সৃষ্টি করে দিয়েছেন তাঁর একাকীত্বকে দূর করার জন্য।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহী ওয়াসাল্লাম যখন হেরা গুহায় জিব্রাঈল(আ) কে দেখে পেরেশান হয়ে ঘরে ফিরে এসেছিলেন হযরত খাদীজা(রা)এর কাছে এবং বিবি খাদীজা(রা) প্রিয় স্বামীকে কিভাবে স্বস্তির বানী শুনিয়ে অস্থিরতা দূর করেছিলেন তা আমরা সকলেই জানি।

এখানে আমাদের জন্য শিক্ষা হলো হযরত খাদিজা(রা) এমন চরিত্র ও আচরন প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন যে স্বামী তাঁর কাছে আসাটাই প্রয়োজন বোধ করেছেন।

 অনেক স্ত্রীরাই সংসারে অনেক কাজই করে থাকেন, দেখা যায় সংসারের স্বামীর করনীয় কাজটিও সেই স্ত্রীকে অনেক সময় করতে হয় কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে স্ত্রীর আচরনে কি সেই নির্ভরতা স্বামী পান যে, প্রশান্তি লাভের জন্য কষ্ট /বিপদের/অস্থিরতার সময় স্ত্রীর  কাছে আসেন? স্ত্রীদের কথায় কি সেই সুন্দর শিক্ষনীয় আশার বানী যা মহান আল্লাহর বানী থেকে শিখে স্বামীকে শান্তি দিতে পারে সেরকম উদাহরন রাখতে পারছেন!! এখানে অবশ্যই স্বামীকেও সুন্দর সত্যকে গ্রহন করার মন থাকতে হয়।

রাসূল(সঃ) কে প্রশ্ন করা হলো-কোন নারী সবচেয়ে ভালো?

তিনি বললেন- যে নারী স্বামীকে আনন্দিত করে যখন স্বামী তার দিকে দৃষ্টি দেয়,

যে নারী স্বামীর আনুগত্য করে যখন স্বামী তাকে নির্দেশ দেয়

যে নারী স্বামীর সম্পদ ও নিজ নফসের ব্যপারে এমন কোন কর্মে লিপ্ত হয় না যা স্বামীর অপছন্দ। সহীহ আবু নাসাঈ-৩০৩০

প্রতিটি নারীর লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন যে, সে কি তার স্বামীর সম্পদকে এমন কাজে ব্যয় করছে যা তিনি জানলে অপছন্দ করবেন এবং যা শরীয়ত সম্মত নয়। অনেক স্ত্রী স্বামীর অনুপস্থিতিতে মোবাইলে ফেস বুকে, ব্লগে বিভিন্ন ভাবে গায়ের মাহরামদের সাথে অবৈধ যোগাযোগ করে থাকেন, একবারও কি মনে হয় না মহান আল্লাহ দেখছেন এবং কার তত্ত্বাবধানে থেকে অকৃতজ্ঞের মতো স্বামীকে প্রতারিত করছেন। যে সুন্দর সুন্দর আবেগ মাখা কথা গায়ের মাহরামদের সাথে বলছেন বা লিখছেন অথচ এই নারী নিজের সংসারে সুন্দর কথা দূরে থাক মেজাজের ভারসাম্যটা রক্ষা করে কথা বলতে পারে না অনেকক্ষেত্রে। সংসারের অনেক কাজ গুছিয়ে রাখাতে সময় দিতে পারে না অথচ বসে টিভি/কম্পিউটারে  সময় নষ্ট করে চলেছেন। আল্লাহ বলেছেন-

সেইদিন তাদের জিহবা,তাদের হাত এবং তাদের পা তারা যা কিছু করেছে সেই সম্পর্কে সাক্ষ্যদান করবে। সূরা নূরঃ২৪

দুইজন লেখক ডান ও বাম দিকে বসে প্রতিটি কাজের বিবরন লিপিবদ্ধ করছেন। কোন শব্দই মুখ থেকে উচ্চারিত হয় না যা সংরক্ষনের জন্য পর্যবেক্ষক উপস্থিত থাকে না। সুরা কাফঃ ১৭-১৮

অনেক নারীরা যখন কোথাও বেড়াতে যান তখন খুব ভালো দামী পোষাক পরে সেজে গুজে বেপর্দা বা যদিও পর্দার মধ্যে করা হয় কিন্তু  ঘরে স্বামীর চোখকে তৃপ্ত করার জন্য ইবাদাত মনে করে নিজেকে সাজিয়ে নেন কতজন নারী? বেপর্দা নারী কার চোখের তৃপ্তির জন্য বাইরে সেজে গুজে যান?

 পুরুষেরা বাইরে যখন বেগানা বেপর্দা নারীদের মধ্যে অবস্থান করতে বাধ্য থাকেন এবং যখন ঘরে ফিরে আসেন তখন নিজ স্ত্রীকে অগোছালো দেখাটা নিশ্চয়ই মনঃপূত হবে না। তারচেয়ে বড় কথা- স্বাভাবিক চাহিদা যা মহান আল্লাহ দিয়েছেন তাকে পবিত্র রাখার দায়িত্ব যেমন স্বামীর তেমনি এইক্ষেত্রে  বড় ভুমিকা রাখতে পারেন স্ত্রী। মা আয়েশা(রা) ভাষ্য থেকে জানা যায় রাসূল(সঃ) যেদিন তাঁর ঘরে যেতেন তিঁনি নববধূর মত সেজে থাকতেন। নারীরা কি এই আমলটি করে নেকীর পাল্লা ভারী করে সংসারে পবিত্র ভালোবাসার নমুনা রাখতে পারছেন!

আল কোরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-

আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোন নির্দেশ দিলে কোন মুমিন পুরুষ ও নারীর জন্য নিজেদের ব্যপারে অন্য কিছু করার এখতিয়ার থাকে না, আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করল সে স্পষ্টই পথভ্রষ্ট হবে। সূরা আহযাবঃ৩৬

রাসূল(সঃ) বলেছেন, আমার প্রত্যেক উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবে, তবে যে অস্বীকার করবে তারা ছাড়া। সাহাবারা প্রশ্ন করলেন, কে অস্বীকার করবে? তিঁনি বললেন-যে আমার অনুসরন করল সে জান্নাতে প্রবেশ করবে আর যে আমার অবাধ্য হলো সে অস্বীকার করল। সহীহ আল বুখারী

আজকের এই সমাজ ব্যবস্থাতে আমরা পারিবারিক জীবনে নানা ভাবে শান্তির পদ্ধতি বের করে যাচ্ছি অথচ শান্তির ধারা কি ভাবে আসতে পারে তা মহান সৃষ্টি কর্তা খুব সুন্দর করেই আল কুর’আনে জানিয়ে দিয়েছেন।

নারীরা কি মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এবং নিজের আল্লাহর দেয়া পদ মর্যাদাকে (যা আগে আলোচিত) মনে রেখে নিজ ও স্বামীর আত্মীয়দের ব্যপারে কি  একইরকম নীতি বজায় রাখতে সচেষ্ট আছেন!

নিজ পরিবারের প্রতি পরিশ্রমী যত্নশীল স্ত্রী বা আদর্শ পরিশ্রমী মা হতে কতজন নারী সচেতন থাকেন বা সন্তুষ্ট মনে বুঝেন যে এটাই তাকে দুনিয়া ও আখেরাতে সাফল্য এনে দিবে!

শাশুরী বা ননদ/ননাস/জা এদের সাথে সম্পর্কের তিক্ততার কারনই কিন্তু নারীর বৈষম্যমূলক চিন্তা এবং কথা ও কাজের মিল না থাকার কারনে। আর এর ফলে দেখা যায় স্বামীর বিশ্বাস ও নির্ভরতা স্ত্রীর উপর কমে আসে  চরিত্রের দ্বিমুখীতা লক্ষ্য করে। স্ত্রী যেমন খুশী হবে তার মা বাবা, ভাই বোনদের সাথে ভালো সুন্দর আচরন করলে তেমনি স্বামীও খুশী হবেন তাঁর রক্ত সম্পর্কের আত্মীয়দের সাথে ভালো ব্যবহার করলে। নারীরা কি ভেবে দেখেছেন যে, শুধুমাত্র স্বামীর খুশী নয় আল্লাহর বান্দাহ হিসেবে আমাদের প্রত্যেককেই সকলের সাথে সুসম্পর্ক রক্ষা করে দীনের ভীত প্রতিষ্ঠিত করতে হবে তার পরিবারেও।

আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-

ভালো ও মন্দ সমান নহে। তুমি অন্যায় ও মন্দকে দূর কর সেই ভালো দ্বারা যা অতীব উত্তম। তুমি দেখতে পাবে যে তোমার সাথে শত্রুতা ছিল সে প্রানের বন্ধু হয়ে গিয়েছে। এই গুন কেবল তাদের ভাগ্যেই জুটে থাকে যারা ধৈর্যধারন করতে পারে। সুরা হামীম আস সেজদা ৩৪-৩৫

সুতরাং পূন্যবতী নারীরা অনুগত, তারা লোকচক্ষুর অন্তরালে হেফাজতকারিনী ঐ বিষয়ের যা আল্লাহ হেফাজত করেছেন। সূরা নিসাঃ ৩৪

অনেক নারীরা অনেক সময় একটু কোন কারনে স্বামীর কথায় বা কাজে কষ্ট পেয়ে বলে ফেলেন সারাজীবনই কোন শান্তি দিলে না বা কিছুই পেলামনা ইত্যাদি নানারকমভাবে অকৃতজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ দেখান যা অত্যন্ত গর্হিত।

জাহান্নামের নারীর সংখ্যা বেশী হবে (সহীহ মুসলিম৪৬৫) স্বামীর নাশোকরী (অকৃতজ্ঞ) আচরনের জন্য যা রাসূল(সঃ) জানিয়ে দিয়েছেন, তাই নারীদের আরো বেশী সচেতন হয়ে রাগ অভিমানকে একটি নির্দিষ্ট শরীয়তের সীমার মধ্যে রেখে চলতে হবে।

সহীহ হাদীস থেকে জানা যায়- রাসুল(সঃ) হযরত আয়েশা(রা) কে বলেছিলেন, হে আয়েশা তুমি কখন আমার উপর রাগ হও তা আমি বুঝতে পারি। রাসূল(সঃ) বললেন তুমি স্বাভাবিক অবস্থায় বলো মুহাম্মদের আল্লাহ বলে কিন্তু রাগ হলে বলো ইব্রাহীম(আ)এর আল্লাহ । কি সুন্দর আচরন স্বামী ও স্ত্রী দুজনার।

আবার অনেক স্ত্রী স্বামীকে অসন্তুষ্টি করা না করাকে ধর্তব্যের মধ্যেই আনেন না যা অনেক ধনী স্ত্রী বা প্রফেশনাল বেশী যোগ্যতা সম্পন্ন নারীদের চরিত্রে সাধারনত দেখা যায় । অনেক স্ত্রী আমিত্ব বোধের কারনে দুঃখিত কথাটুকু বলতে ও পারেন না। একটু নরম হয়ে আদর দিয়ে কথা বলে স্বামীর রাগ কমাতেও যেন আত্মসম্মানে লাগে। স্বামী ব্যক্তিটিতো স্ত্রীর নিজের আপন একজন মানুষ। অত্যন্ত কাছের একজন। যার জন্য ভালোবাসা আল্লাহই স্ত্রীর অন্তরে দিয়ে দিয়েছেন।

যে যত তাকওয়া সম্পন্ন হবেন, যে যত নিজের মানকে আল্লাহতায়ালার দিকে এগিয়ে নিতে পারবেন, সে তত আদর্শ মুমিনা স্ত্রী হতে পারবেন- যিনি স্বামীর কাছে দুনিয়ার সবচেয়ে উত্তম সম্পদ হিসেবে থাকবেন(হাদীসের আলোকে)।

যখন স্বামী অন্যায়ভাবে খারাপ ব্যবহার করেন তখন  কতজন নারী ঠাণ্ডা মাথায় ধৈর্য ধারন করতে পারেন!! তাহলে অন্তত বড় ধরনের অঘটন থেকে বাঁচতে পারে অনেক পরিবার। কারন রাগের বশে তালাকের কথাও চলে আসে।

অনেক স্ত্রীও কথায় কথায় বলে ফেলেন তালাক দিয়ে দাও।

অথচ –যে নারী কোন কারন ছাড়া স্বামীর কাছে তালাক তলব করল, তার উপর জান্নাতের ঘ্রাণ পর্যন্ত হারাম- সহীহ জামে আত তিরমিযী,আবু দাউদ।

আবার তিরমিযী শরিফ ২৯৫ নং হাদীসে জানা যায়- ৩ ব্যক্তির নামাজ মাথার উপরে উঠে না। তাদের মধ্যে একজন হলো সেই নারীর নামাজ যে নিজের স্বামীকে রাগান্বিত রেখে রাত যাপন করে।

  স্ত্রীদের আরো নমনীয় হওয়া প্রয়োজন। তবে এর অর্থ সকল কিছু মেনে নেয়া নয় কারন কোন অবৈধ কাজে সহযোগীতা করা যাবে না। আমরা প্রত্যেকেই আমাদের চরিত্রকে সুন্দর করে সাজিয়ে নেই।

“বল, তোমাদের নিকট যদি তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভাই, তোমাদের পত্নী, তোমাদের গোত্র, তোমাদের অর্জিত ধন সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা যা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা কর এবং তোমাদের বাসস্থান যাকে তোমরা পছন্দ কর, তা আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং তাঁর পথে জিহাদ করা থেকে অধিক প্রিয় হয়, তবে অপেক্ষা কর আল্লাহর বিধান আসা পর্যন্ত আর আল্লাহ ফাসেক সম্প্রদায়কে হেদায়েত দান করেন না ৷”(সূরা আত তাওবাহঃ২৪)

ভালোবাসা যেমন মহান আল্লাহতায়ালা আমাদের অন্তরে দিয়েছেন তেমনি তার প্রয়োগের ক্ষেত্রে একটি সীমানা নির্ধারন করে দিয়েছেন। মহান আল্লাহ জানতে চান আমাদের মধ্যে কে সাচ্চা ঈমানদার এর কে মুনাফিক।

উপরের আয়াত থেকে আমরা বুঝতে পারছি ভালোবাসার ক্ষেত্রে স্থান দিতে হবে- মহান আল্লাহ, তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর পথে টিকে থাকার ও অনুসরন ও জীবনের সবক্ষেত্রে দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা, এরপর পিতা মাতা, স্ত্রী, সন্তান, ভাই-বোন ও অন্যান্য দুনিয়ার চলার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিষ।

আমরা অনেকেই মহান আল্লাহর এই নির্দেশনাকে আবেগের আতিশয্যে অবস্থান থেকে সরে আসি বা শয়তান যখন দেখে আমাদের দ্বারা ভালো কাজ বন্ধ করা যাবে না তখন এই অবস্থা সৃষ্টি করে আমাদের ফাসিকদের অন্তর্ভুক্ত করার অপপ্রয়াস চালায়।

স্বামীর প্রতি অতি ভালোবাসা বা আনুগত্যের ক্ষেত্রে অনেক বোনেরা এই অবস্থায় পড়ে যান যে এই ভালোবাসা শিরকের দিকে নিয়ে যায়। স্বামী পর্দা করা পছন্দ করেন না, তার খুশীর জন্য পর্দা করতে চান না। আবার অনেক স্ত্রী স্বামীর ব্যবসায়ের উন্নতি হবে মনে করে স্বামীর কথামতো ব্যবসায়ী বন্ধু পার্টনারের সাথে শরীয়তের সীমার বাইরে সম্পর্ক করে।

আমাদের মনে রাখা দরকার স্রষ্টার আনুগত্যের বাইরে সৃষ্টির আনুগত্য চলে না। মহান রবের কাছে আমাদের একাকী যেতে হবে। যে স্ত্রী  আজ এতো সুন্দর, এতো গুরুত্বপূর্ণ ভালোবাসার অবস্থান, মনে হয় একটি রাতও আলাদা থাকা অসম্ভব, সেই  স্ত্রীর যখন আত্মাটা থাকবেনা – সেই মুহূর্ত থেকে লাশ বা মূর্দা বলে সম্বোধন করে কত তাড়াতাড়ি কবরে সাদা কাপড়ে জড়িয়ে দিয়ে আসবে তা নিয়ে ব্যস্ত থাকবে পরিবারের মূল ব্যক্তি থেকে শুরু করে সবাই এবং আজ লাশের ঘরে থাকতেও প্রিয় মানুষেরা ভয় পাবে অথচ এই প্রিয় মানুষের গায়ের সাথে লেগে থাকাটাই একসময় ভালো লাগা ছিল।

এটাই বাস্তব সত্য যদিও শুনতে কষ্ট লাগে কিন্তু তাঁর চেয়ে কষ্ট লাগানো উচিৎ যেই স্রষ্টা আমাকে ৯৯ গুন ভালোবাসেন তাঁর ভালোবাসার প্রতিদান কি ভাবে মূল্যায়ন করছি?? সেই ভালোবাসার জন্য আনুগত্য কতটুকু করছি?? তাঁর ভালোবাসাকে আমার জীবনের পাথেয় হিসেবে নিতে পরিশ্রমী হচ্ছি কি না?

স্ত্রী ও স্বামী পরস্পরের পোশাক বলে কুর’আনে উল্লেখিত হয়েছে। এই ক্ষেত্রে  স্ত্রীরা অনেকেই আমল করা থেকে দূরে থাকেন। পোশাকের মৌলিক উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানা যায়:

১। দেহকে আবৃত করে বা অন্তরালে রাখে।

২। সৌন্দর্য বিধান করে।

৩। বিশ্বাস বা আদর্শের পরিচয় বহন করে। (তাকওয়া উত্তম )

৪। দেহকে সুরক্ষিত রাখে। খুঁত বা ত্রুটিকে ঢেকে রাখে।

৫। আভিজাত্যের প্রকাশ (নি’আমতের শুকরিয়া হবে)

কিন্তু দেখা যায় অনেক স্ত্রী তাঁর স্বামীর ত্রুটি নিয়ে নিজ আত্মীয় বা অন্য কারো সাথে অকপটে বলে বেড়াচ্ছে। অন্যের সামনে স্বামীকে অপমানিত করতে দ্বিধা করে না। অভিযোগের মাত্রা এতো বেশী করে ফেলে যে এই বিয়ে হওয়াটাই যেন ভুল।

একজন স্ত্রী হিকমাতের সাথে মহান আল্লাহর সাহায্য চেয়ে নিজেদের মধ্যে সমস্যাগুলো নিজেরা সমাধানের পদক্ষেপ নিলে সেটাই কল্যানকর। কল্যানকামী হয়ে স্বামীর ত্রুটিকে সংশোধন করার দায়িত্বও পালন করতে হবে। অনেক নারী যতটা যত্নের সহিত, সুন্দর আচরন দিয়ে ধৈর্য সহকারে বাইরের লোকদের মাঝে দাওয়াতের কাজ করে এগিয়ে আনতে চেষ্টা করে, নিজ স্বামীর বা পরিবারের ব্যপারে কি সেই রকম সময় দিয়ে চেষ্টা করেছেন??  নিজের আচরন সুন্দর করে, বেশী বেশি ইবাদাত ও দু’আ করেই অনেক কিছুর সমাধান হয়ে যায় আল্লাহর রহমতে। একান্তই যখন না হয় তখন কুর’আনের বিধান অনুযায়ী দুই পক্ষের একজন করে মুরুব্বীর সাথে পরামর্শ করার কথা এসেছে।

একবার এক নারী তার বান্ধবীর সাথে কথা বলার জন্য বাসায় ফোন দেন। ফোনটি রিসিভ করলেন বান্ধবীর স্বামী। সেই নারী তার বান্ধবী কোথায় জানতে চাওয়ার সাথে সাথে বান্ধবীর স্বামী অনেকগুলো অভিযোগ শুরু করে দিলেন –আপনার বান্ধবীতো বড় ডাক্তার হবে তার স্বামীর খবর নেয়ার সময় নেই। সারাদিন লাইব্রেরী হাসপাতাল নিয়ে থাকে ইত্যাদি। তার সেই বান্ধবীটি আসলে এফ সি পি এস কোর্সে ছিলেন। বাসায় দুটো সন্তান রেখে তার এক আত্মীয়াকে দেখাশুনার দায়িত্ব দিয়ে হাসপাতালে যেতেন সকালে এবং সন্ধ্যা হয়ে যেতো বাসায় ফিরতে। সে যাই হোক কয়েক বছর পর জানা গেলো বান্ধবী প্রফেসর হয়েছেন কিন্তু স্বামী সেই কথিত আত্মীয়াকে বিয়ে করে দিন পার করছেন। সেই বান্ধবী সন্তান দুটো নিয়ে আলাদা জীবন পার করছেন। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন।

ক্যারিয়ার ও চাকরী যদি এই রকম পরিবার বিচ্ছিন্ন হওয়ার অবস্থায় নেয়ার সম্ভাবনা থাকে সেই ক্ষেত্রে স্ত্রীকে পরিবারের হককে প্রাধান্য দিয়ে পরিকল্পনা নেয়া দরকার। পারস্পরিক পরামর্শ দিতে পারে সুন্দর ভাবে সমাধানের পথ।

আরেকজন ডাক্তার এফ সি পি এস করার ক্ষেত্রে তার স্বামীর ত্যাগ এর নমুনা এইভাবে জানালেন। যমজ দুটি সন্তানকে স্বামী নিজের কাছে রেখে স্ত্রীকে বললেন, তুমি হলে যেয়ে পড়াশুনা করো তাহলে তাড়াতাড়ি পাশ হবে। শুক্রবার একদিন তুমি এসে বাসায় থেকো। দিনে শাশুড়ি গৃহ পরিচারিকার সাহায্যে এবং রাতে স্বামী একাই সন্তান দুটোকে ফিডার ও ড্রেস চেঞ্জ সবই করতেন, আবার সকালে অফিসে চলে যেতেন। সেই পরিবারের স্ত্রীও প্রফেসর হয়েছেন এবং স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ে কাজ করে যাচ্ছেন। আলহামদুলিল্লাহ।

এই ক্ষেত্রে স্ত্রীকে ভুমিকা রাখতে হবে, বুঝতে হবে অবস্থাকে,  আখেরাতের জবাবদিহীকে প্রাধান্য দিয়েই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যে যত আখেরাতের প্রত্যাশী সে তত সহজেই জীবনের অবস্থানকে সহজ করে সাজাতে পারেন। এই ক্ষণস্থায়ী জীবনে সব কিছু পাওয়ার জন্য নয় কারন জান্নাতের জন্য অনেক কিছু কে রেখে দিতে হবে। একজনের জীবনের জান্নাতের পথ সহজ হতে পারে কোন রাস্তায় তা মহান আল্লাহ ভালো করে জানেন, তাই মহান রবের ফয়সালায় সন্তুষ্ট থেকে সবরের সহিত নিষ্ঠাবান বান্দাহর ভূমিকায় অবতীর্ণ থাকাটাই উত্তম।

মহান আল্লাহ বলেছেন-

আর তাদের সবরের বিনিময়ে তাদেরকে জান্নাত ও রেশমী পোষাক দান করবেন। সূরা আদ দাহরঃ১২

মহান আল্লাহ বলেছেন- যাদের কাছে আমরা কিতাবখানী দিয়েছি তারা তা এমনভাবে তিলাওয়াত করে যেমন তিলাওয়াত করা উচিত। তারাই হচ্ছে সেই সমস্ত ব্যক্তি যারা সেটাতে বিশ্বাস করে,আর যে কেউ এতে অবিশ্বাস করে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত।

সূরা বাকারাঃ১২১

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ(রা)বলেন,যার হাতে আমার জীবন, তাঁর শপথ। সঠিক তিলাওয়াত করা হচ্ছে-

“যা কিছু এটা বৈধ বলে ঘোষনা করে সেটাকে বৈধ মনে করা।

যা কিছুকে নিষিদ্ধ বলে ঘোষনা দেয়, সেটাকে নিষিদ্ধ বলে গন্য করা।

আল্লাহ যেভাবে নাযিল করেছেন সেভাবে একে আবৃত্তি করা,

সঠিক অর্থ থেকে কোন শব্দকে বিচ্যুত করে কোন বিকৃত অর্থ না নেয়া এবং এমনভাবে ব্যাখ্যা না করা যে ভাবে ব্যাখ্যা করা অনুচিত”।

আল্লাহ সর্বোত্তম বানী নাযিল করেছেন। এমন একটি গ্রন্থ যার সমস্ত অংশ সামঞ্জস্যপূর্ণ, যার মধ্যে বিভিন্ন জিনিষের পুনরাবৃত্তি হয়েছে।এসব শুনে সে সব লোকদের লোম শিউরে ওঠে যারা তাদের রবকে ভয় করে। তারপর তাদের দেহমন বিগলিত হয়ে আল্লাহর স্মরনের প্রতি আকৃষ্ট হয়।এটাই হচ্ছে আল্লাহর হেদায়েত। সূরা আয যুমারঃ২৩

আমাদের বর্তমান অবস্থা কী?

একজন স্ত্রী যখন একটি পরিবারে আসেন, তখন স্ত্রীর তার দায়িত্ব সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে এবং স্বামীর সাথে পরামর্শ করে মেনে নেয়ার ও বাস্তবে করনীয়ের জন্য অন্তরকে প্রস্তুত করে নিতে হবে শুধুমাত্র মহান আল্লাহর খাস বান্দা হওয়ার জন্য।

আরেকটি বিষয় অনেকেই হাদীসের শিক্ষাকে অমান্য করে বলেই অনেক অঘটন ঘটে যায়।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন নারীর জন্য বৈধ নয় যে, সে অন্য নারীর সাথে মিলিত হয়ে তার সৌন্দর্যের বর্ণনা তার স্বামীর সামনে এমনভাবে দেয় যেন তার স্বামী ঐ নারীকে স্বয়ং দেখতে পেরেছে। সহীহ আল বুখারী

গায়ের মাহরাম নারীর বর্ণনাই দেয়াটা নিষেধ করা আছে সেখানে অন্য নারীকে দেখারতো প্রশ্নই থাকতে পারে না। স্ত্রী অন্য নারীকে নিয়ে স্বামীর সাথে গল্প করতে করতে দেখা গেছে সেই নারীর প্রতি একটি আকর্ষণ তৈরী হয়ে যায়। সমাজে এই ভাবে অনেক সংসারে অশান্তিও বিরাজ করছে।

মূলত পরিবারের প্রতিটি ব্যক্তি যার যার নিজ স্থানে থেকেই শরীয়তের বিধান মেনে চলার জন্য চেষ্টা ও পরস্পরকে সাহায্য করলেই সম্ভব এই সমাজে কিছুটা শান্তি ফিরিয়ে আনা। যার যার অবস্থানে শরীয়া পূর্ণভাবে না মানার কারনে যেখানে ধর্মীয় অনুশাসন আপাত দৃষ্টিতে মেনে চলছে দেখা যায়, সেখানেই স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সম্পর্কের টানাপোড়েন বেশী দেখা যায়। এইক্ষেত্রে শয়তান আরো বেশী জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে থাকে। যারা দীনের অনুশাসন মানে না তাদের জন্য শয়তান চিন্তিত বা পেরেশান থাকে না কারন এরাতো নিজেরাই মহান রবের বিদ্রোহকারী হয়ে চলছে বাস্তব জীবনে।

 যারা ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলেন না তারা উদাহরন হিসেবে দেখান যে, ধার্মীক পরিবারের সদস্যদের সংকীর্ণমনা বলেই তাদের পরিবারে শান্তিতে নেই। আমরা এতো নিয়ম কানুন মানি না- ভালো আছি তবু। এইভাবেই আমরা শয়তানকে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন স্থানে জায়গা করে দিচ্ছি।

 একজন মুমিনা সে খুব আমলদার ও পুরু হিজাব মেনে চলতো, কিন্তু তার স্বামী কর্মক্ষেত্রে নারী কলিগদের সাথে শরীয়তের নিয়ম মেনে চলতেন না আবার স্ত্রীকেও হিজাব না করে শুধুমাত্র সতর ঢাকার মধ্যেই থাকতে বলতেন। এইভাবে প্রতিনিয়ত অশান্তির মাঝেই সন্তানরা জন্ম নেয়। একসময় স্ত্রী জিদ করে হিজাব খুলে ফেলেন এবং সাধারন সতরটুকুও ছেড়ে দেন, তাকে যখন প্রশ্ন করা হলো সে উত্তর দেয়, সে(তার স্বামী) খুব মজা করবে অন্য নারীদের সাথে আর আমি কেন এতো ঝামেলায় থাকবো । আমিও আমার মতো সবার সাথে মজা করবো…। কয়েক বছর পর জানা গেলো স্বামী নিজের সংশোধন করে খুব আমলদার হয়ে গিয়েছেন কিন্তু সেই মুমিনা স্ত্রীটি আগের মতো ভুল পথেই অটল আছে। স্বামী এখন স্ত্রীকে বুঝান কিন্তু তার সেই জিদ থেকে আগের কষ্টের কথা মনে করে কথা শুনতে চায় না। আল্লাহ সেই বোনটিকে সহ আমাদের বুঝার তৌফিক দান করুন।

সেই অনেক আমলদার জীনটিও অহংকার করে মহান আল্লাহর আনুগত্য থেকে দূরে চলে গেলো এবং জিদের কারনে আর তওবা করার সুযোগটিও হারালো। এইভাবে হয়ে গেলো চির অভিশপ্ত শয়তান।

আমাদের চরিত্র থেকে এই মনোভাব দূর করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন-

কোন ব্যক্তি অন্য কারোর গোনাহের বোঝা মাথায় নিবে না,যদি কারো উপর গুনাহের বড় বোঝা চেপে থাকে এবং সে সাহায্যের হাত প্রসারিত করার জন্য কাউকে ডাকে,তবে সে তার বোঝার কোন অংশই নিজের মাথায় তুলে নিবে না-সে আত্মীয় স্বজনই হোক না কেন।সুরা আল ফাতেরঃ১৮

“তোমাদের কি তোমাদের আমল ছাড়া অন্য কোন জিনিষের দৃষ্টিতে প্রতিফল দেয়া হবে”? সূরা আন নমলঃ৯০

শায়খ ইবনু জুবাইলান স্বামীর ভালবাসা ও প্রীতি অর্জন করার জন্য নারীদেরকে উদ্দেশ্যে করে কিছু নসীহত করেছেন। তা নিম্নরূপঃ

১) বিভিন্ন উপলক্ষে স্বামীর হাতে কপালে চুম্বন করা।

২) স্বামী বাইরে থেকে এলে সাথে সাথে স্বাগতম জানানোর জন্য দরজায় এগিয়ে আসা।

৩) সময় ও মেজাজ বুঝে স্বামীর সামনে প্রেম-ভালবাসা মিশ্রিত বাক্যালাপ করা। তার সামনে তার প্রশংসা করা। সম্মান ও শ্রদ্ধা মূলক আচরণ করা।

৪) স্বামীর পোশাক-আশাকের পরিচ্ছন্নতার প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখা। (পরিচ্ছন্ন পুরুষ মানেই তার স্ত্রী পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন)। রান্নার ক্ষেত্রে স্বামী যা পছন্দ করেন তা নিজ হাতে প্রস্তুত করতে সচেষ্ট থাকা।

৫) সর্বদা স্বামীর সামনে হাসি মুখে থাকা।

৬) স্বামীর জন্য নিজেকে সুসজ্জিত রাখা। শরীরে দুর্গন্ধ থাকলে বা রান্না ঘরের পোষাকে তার সম্মুখে না যাওয়া। মাসিক ঋতুর সময়ও সুসজ্জিত অবস্থায় থাকা।

৭) স্বামীর সামনে কখনই নিজের কন্ঠকে উঁচু না করা। নারীর সৌন্দর্য তার নম্র কন্ঠে।

৮) সন্তানদের সামনে স্বামীর প্রশংসা ও গুণগান করা।

৯) নিজের এবং স্বামীর পিতা-মাতা, ভাই-বোন ও আত্মীয়-স্বজনের সামনে আল্লাহর কৃতজ্ঞতার সাথে সাথে স্বামীর প্রশংসা করা ও তার শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরা। কখনই তার বিরুদ্ধে তাদের নিকট অভিযোগ করবে না।

১০) সুযোগ বুঝে স্বামীকে নিজ হাতে লোকমা তুলে খাওয়ানো।

১১) কখনো স্বামীর আভ্যন্তরীন গোপন বিষয় অনুসন্ধান না করা। কেননা কুরআনে আল্লাহ্ বলেন, ((ولا تجسسوا)) “তোমরা কারো গোপন বিষয় অনুসন্ধান কর না। (সূরা হুজুরাত -১৩) নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমরা কারো প্রতি কুধারণা থেকে বেঁচে থাক। কেননা ধারণা সবচেয়ে বড় মিথ্যা।

১২) স্বামী কখনো রাগম্বিত হলে চুপ থাকার চেষ্টা করা। সম্ভব হলে তার রাগ থামানোর চেষ্টা করা। যদি সে নাহক রেগে থাকে তবে অন্য সময় তার মেজাজ বুঝে সমঝোতার ব্যবস্থা করা।

১৩) স্বামীর মাতাকে নিজের পক্ষ থেকে (সাধ্যানুযায়ী) কিছু হাদিয়া-উপহার প্রদান করা।

১৪) সম্পদশালী হয়ে থাকলে স্বামীর অভাব অনটনের সময় তাকে সহযোগিতা করা। উম্মে সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! (আমার স্বামী) আবু সালামার সন্তানদের জন্য যদি আমি অর্থ ব্যয় করি তবে কি তাতে আমি প্রতিদান পাব। ওদেরকে তো এভাবে ছেড়ে দিতে পারি না। ওরা তো আমারও সন্তান। তিনি বললেন, হ্যাঁ, তুমি যে পরিমাণ তাদের জন্য সম্পদ খরচ করবে, তোমাকে তার প্রতিদান দেয়া হবে। (বুখারী ও মুসলিম)

১৫) স্বামীর নির্দেশ পালন, তার এবং তার সংসারের খেদমত প্রভৃতির মাধ্যমে আল্লাহর কাছে প্রতিদানের আশা করা।

আল্লাহ তায়ালা যেন আমাদেরকে পরিবারগুলোকে যে সুখ-সম্ভারে ভরে দেন এবং সেখান থেকে সকল অশান্তি দূর করে দেন। আমীন।

বিয়ের আগেই একজন পুরুষকে পরিকল্পনা করে বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, চাকরীজীবী স্ত্রী প্রয়োজন আছে কি না/ এই অবস্থা মেনে নিতে পারবেন কিনা এবং স্ত্রীকে সহযোগীতা করতে পারবেন কিনা, আবার নারীকেও আগে থেকেই বুঝে বা জেনে নিতে হবে যে, পরিবারের সহযোগীতা না থাকলে/ পরিবারের ক্ষতি করে/ অসুবিধা করে চাকরী করবে না।

 অভিজ্ঞতায়  আশে পাশের বিভিন্ন অবস্থা দেখে যা বুঝা যায় তা হলো, সংসার যদি শুধু চুক্তি দিয়ে চালাতে হয় তবে পরিবার হয়ে যায় ব্যক্তিগত লাভ ক্ষতির/চাওয়া পাওয়ার/ হিসেব নিকেশের জায়গা সেখানে পারস্পরিক আন্তরিকতা কমে যায়, শুধুমাত্র স্বার্থপরতার ভাব থাকে স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে। তখন পরিবারটির অবস্থা শান্তির ঘর থাকে না হয়ে যায় হোষ্টেল বা হোটেলের মত যেখানে এক ছাদের নীচে কিছু মানুষ থাকেন যার যার নিজের কাজ করে যান এবং বিছানায় এসে ঘুমিয়ে পড়েন। তাই পরিবারকে আপণ ঘর বানাতে সকলের একমুখী সিরাতের পথে আসতে হবে।

দুনিয়ার লোভ লালসা,খ্যাতি যশ ইত্যাদি যদি কোন পরিবারের মূল ব্যক্তিদের মূল লক্ষ্য হয় তবে কখনোই পরিবারে শান্তি আসা সম্ভব নয়। স্বামীও যখন দুনিয়ার জীবনের সবকিছু পাওয়াকেই জীবনের স্বার্থকতা মনে করে একটার পর একটা ডিগ্রী নিতে ব্যস্ত থাকেন, চাকরীর সময়ের বাইরেও আরো উপার্জনের পিছনে ছুটতে থাকেন, পরিবারের ব্যাপারে কোন খোঁজ নেবার সময়টি থাকে না, সেই অবস্থায় প্রাচুর্যই ঘরে থাকবে কিন্তু সুখ ও শান্তি দুনিয়াতেও থাকে না আর পরকালেতো কিছুই থাকবে না।

মহান আল্লাহ বলেছেন-

যে কেউ আশু লাভের আকাঙ্ক্ষা করে, তাকে আমি এখানেই যা কিছু দিতে চাই দিয়ে দেই, তারপর তার ভাগে জাহান্নাম লিখে দেই, যার উত্তাপ সে ভুগবে নিন্দিত ও ধিকৃত হয়ে। আর যে ব্যক্তি আখেরাতের প্রত্যাশী হয় এবং সেজন্য প্রচেষ্টা চালায়, যেমন সেজন্য প্রচেষ্টা চালানো উচিত এবং সে হয় মুমিন, এক্ষেত্রে এমন প্রত্যেক ব্যক্তির প্রচেষ্টার যথোচিত মর্যাদা দেয়া হবে। এদেরকেও এবং ওদেরকেও, দু’দলকেই আমি (দুনিয়ায়) জীবন উপকরণ দিয়ে যাচ্ছি, এ হচ্ছে তোমার রবের দান এবং তোমার রবের দান রুখে দেবার কেউ নেই। কিন্তু দেখো, দুনিয়াতেই আমি একটি দলকে অন্য একটির ওপর কেমন শ্রেষ্ঠত্ব দিয়ে রেখেছি এবং আখেরাতে তার মর্যাদা আরো অনেক বেশী হবে এবং তার শ্রেষ্ঠত্বও আরো অধিক হবে। সুরা বনী ইসরাঈল: ১৮-২১

এইভাবে যখন পরিবারের মূল ব্যাক্তিরা শুধু বহির্মুখী থাকেন তখন সমাজে এই ধরনের চিত্র আমরা দেখি, আজ বিভিন্ন ভালো নামকরা স্কুলের ছাত্র ও ছাত্রীরা নেশাগ্রস্থ হয়ে যাচ্ছে, স্ত্রীরা পরকীয়ায় ঝুঁকে পড়ছে, বিজাতীয় সংস্কৃতিকে আঁকড়ে ধরে আনন্দ পেতে চাচ্ছে, যুবক যুবতীরা একটু ভালোবাসার কথা/ একটু আদর মাখা কথা শুনার জন্য প্রেম করে, না বলে বিয়ে করে ফেলছে—আপনি যদি প্রশ্ন করেন এদেরকে, তাহলে জবাব পাবেন, অনেক কারনের মাঝে অন্যতম হলো পরিবারের পিতা/ মাতার সান্নিধ্য, ভালোবাসা,আদর মাখা শাসন থেকে বঞ্চিত থাকার কারনে এই জীবন ভালো লাগে না। এই জীবনে কোন বৈচিত্র নেই ইত্যাদি।

আমার এক কলিগের জীবন থেকে কিছু উল্লেখ করছি। বাবা মায়ের অনেক শখ ছিল মেয়েকে ডাক্তার হিসেবে মানব সেবায় নিয়োজিত করবে। কিন্তু স্বামীর ক্যারীয়ার ও সন্তানদের দুনিয়াতেও উপযুক্ত ও আখেরাতমুখী শিক্ষার চর্চায় বড় করতে যেয়ে নিজের জীবনের দুনিয়াবী ক্যারীয়ার করার সুযোগ লাভ করতে পারে নি। কিন্তু তার মনের শান্তি ও তৃপ্তি আসে এই ভেবে যে, মহান আল্লাহতা’আলার সাহায্যে সব সন্তানদের গড়ে তোলার মাধ্যমে একদিকে যেমন সঠিক ভাবে দায়িত্ব পালনের জবাবদিহীতার পথ সুগম করার চেষ্টা হচ্ছে,পাশাপাশি সদকায়ে জারিয়া হিসেবে অনেকগুলো আদর্শ পরিবারের ভিত্তি গড়ে দিয়ে যাচ্ছেন ইনশা’আল্লাহ কারন এই সন্তানেরা বিয়ের পর আলাদা আলাদা পরিবার হবে। এই কথা শুনে সেই কলিগের বাবা-মা খুশিতে মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলেন কারন উনারাও সেই সওয়াব পাবেন যা এই মেয়েটি করার চেষ্টা চালাচ্ছে তার সহযোগীতা করার জন্য।

সেই পরিবারের স্বামী শুধু নিজের ক্যারীয়ার ও চাকরী নিয়ে ব্যস্ত থেকেছেন ও স্ত্রীকে যেমন সহযোগীতা করেন নি তেমনি অসহযোগীতাও করেন নি। অসহযোগীতা বলতে এখানে বুঝাচ্ছি যে সেই স্ত্রী তার নিজের পরিকল্পনামতো সন্তানদের গড়তে পেরেছেন, স্বামী এই ব্যাপারে বাঁধা হয়ে দাড়ান নি বা উচ্চ বাচ্য করেন নি, এটাও একধরনের সহযোগীতা পরিবার গঠনের ক্ষেত্রে। এই ক্ষেত্রে স্বামী যদি স্ত্রীর প্রতি সন্তুষ্ট থেকে তার দায়িত্বের কৃতজ্ঞতা জানান তাহলে মহান আল্লাহর কাছে স্বামীও পূন্য পাবেন এবং স্ত্রীও আরো উদ্বুদ্ধ হবেন পরিবারে মনোযোগী হতে।

অনেক ক্ষেত্রে স্বামী পুরুষটির যোগ্যতার সীমাবদ্ধতার কারনে অনেক কাজ এক সাথে আঞ্জাম দিতে পারেন না, সেই ক্ষেত্রে যদি স্বামী স্ত্রীর সাথে খুলাখুলি পরামর্শ করে নেন তাহলে পরিবারের পরিবেশ সহজ থাকে কিন্তু দেখা যায় আমিত্ববোধের কারনে স্বামী দায়িত্ব পালন না করেও খুব অহংকারী  বা একধরনের ভাব ধরেন ও উচ্চ বাচ্য করেন ফলে স্ত্রী তার দায়িত্ব পালন করতে সমস্যায় পড়েন।

আবার এমন স্বামী আছেন যিনি একজন নারীকে এস এস সি পাশ বিয়ে করে তারপর তাকে মাষ্টার্শ ডিগ্রী, এম এড করিয়ে স্কুলে শিক্ষিকা হিসেব যোগদানে সহযোগীতা করেছেন,এর মাঝে সন্তান সন্তুতিও এসেছে ও বড় হয়েছে। পরস্পরের সহযোগীতায় দুজনেই মহান আল্লাহর সাহায্যে পরিবারকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যানের উদ্দেশ্যে।

মহান আল্লাহ বলেছেন

তাদের সাথে মিলে সদ্ভাবে জীবন-যাপন কর। তারা যদি তোমাদের মনোমত না হয়, তবে হতে পারে যে, কোন জিনিষ তোমাদের পছন্দ নয় কিন্তু আল্লাহ তাতেই তোমাদের জন্য অফুরন্ত কল্যান নিহিত রেখেছে। সূরা আন নিসাঃ১৯

মহান আল্লাহর শিক্ষাকে বাস্তবে আমল দিলেই সংসার শান্তিময় হতে পারে। একজন মানুষের চরিত্রে সব গুনের সমাহার না থাকতে পারে কিন্তু অন্তরের সুন্দরতম দিকটি পুরুপুরি থাকা সম্ভব যদি ব্যক্তি সেটা আত্মস্থ করতে চান।

ইবলিশ শুধুমাত্র অহংকার করার কারনে, নিজের আমিত্ব বোধের জন্যই মহান আল্লাহর নির্দেশে অনুগত হতে পারে নি এবং ভুল স্বীকার করে ক্ষমাও চায় নি। এতো ইবাদাত করার পরও সে বিতাড়িত অর্থাৎ শয়তান বলে গণ্য হয়েছে ও চির জাহান্নামী হয়েছে।

অনেক স্বামী এই ধারনা করেন যে, ভুল স্বীকার করে স্ত্রীর নিকট ক্ষমা চাইলে স্ত্রী আর তার আনুগত্য করবে না, সম্মান করবে না। অনেক সময় স্বামী ভাবেন এর মাধ্যমে বুঝি নিজেকে ছোট করে ফেললেন ।

রাসূল(সঃ)এর চাচা আবু তালিব এতো ত্যাগ তিতিক্ষা দেখিয়েছেন ভাতিজার জন্য যে, শিয়াবে আবুতালিব যা ৩টি বছর সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে খোলা আকাশের নীচে,পাহাড়ে রাসূল(সঃ) সহ সব ঈমানদারদের সাথে এই চাচাটিও ঈমান না এনেও কষ্ট করেছেন। কিন্তু শুধুমাত্র বংশীয় আভিজাত্যের কারনে দুনিয়ার তথাকথিত যশের জন্য ঈমান আনতে ব্যর্থ হয়ে জাহান্নামের সর্বনিম্ন শাস্তি লাভ করবে।

দেখা যায় অনেক পরিবারেও এই বংশীয় বড়ত্বের দোহাই দিয়ে স্বামী স্ত্রী পরস্পরের মাঝে সমঝোতায় আসা কষ্টকর হয়ে যায় ,এমনকি অনেক ক্ষেত্রে সম্ভব হয় না। এইভাবে দেখা যায় বংশের নামে গালি গালাজ শুরু করে দেন বিভিন্ন অকথ্য ভাষায় যা শুনলে মানুষ কেনো শয়তানও লজ্জা পেয়ে যাবে।

আবার অনেক স্বামী স্ত্রীর কোন ভুল হলে বা আচরনে ত্রুটি পেলে সংশোধন সুন্দর ভাবে না করে দেখা যায় ছেলে মেয়ের সামনেই অপদস্থ করতে থাকেন এবং এক পর্যায়ে স্ত্রীর মা-বোনদের উদাহরন টেনে নিয়েও খারাপ কথা বলতে থাকেন।

মহান আল্লাহ বলেছেনঃ

অতএব তোমাদেরকে যা দেয়া হয়েছে তা পার্থিব জীবনের কয়েকদিনের ভোগ মাত্র। আর আল্লাহর কাছে যা রয়েছে,তা উৎকৃষ্ট ও স্থায়ী তাদের জন্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও তাদের পালন কর্তার উপর ভরসা করে,যারা বড় বড় গুনাহ ও অশ্লিল কাজ থেকে বিরত থাকে এবং ক্রোধান্বিত হয়েও ক্ষমা করে, যারা তাদের পালনকর্তার আদেশ মান্য করে,নামায কায়েম করে, নিজেদের যাবতীয় সামগ্রিক ব্যাপারে পারস্পরিক পরামর্শক্রমে কাজ করে এবং আমি তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে,আর যখন তাদের উপর অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করা হয় তখন উহার মুকাবিলা করে।সূরা শূরাঃ৩৬-৩৯

যে পরিবার গঠন হয় তাকওয়া সম্পন্ন (quality+activity) নারী ও পুরুষের সমন্বয়ে সেখানে দুনিয়ার জীবনের চাওয়া পাওয়া নিয়ে সময় নষ্ট না করে পরিকল্পিত ভাবে পরিবারকে এগিয়ে নিয়ে যায় স্থায়ী জীবনের সুখের প্রত্যাশায়।

এখানে প্রয়োজন পারস্পরিক মমতা, সহমর্মিতা, নিজেদের মধ্যে নিবিড় অগাধ বুঝ ও বিশ্বাস, ত্যাগ করার মানসিকতা, সহযোগীতা করার মন, সংকীর্ণতা থেকে দূরে থাকা এবং সব কিছুর উপরে মূল ভিত্তি হবে তাকওয়াপূর্ণ জীবন যাপনে পরস্পরকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মনোভাব। তাহলে চাকরি করবে কি করবে না, কখন করবে, কিভাবে করবে ইত্যাদি সবই সহজ হয়ে যায়।

আলহামদুলিল্লাহ অনেক নারী আছেন খুবই পরিশ্রমী। তারা পরিবার সামলে রেখেও বাইরে কাজ করতে পারেন শরীয়াকে ঠিক রেখে, এইক্ষেত্রে স্বামীর সহযোগীতা দিতে পারে পরিবারের এই স্ত্রীকে একটু শান্তি, আরাম যার বিনিময়ে কিন্তু স্বামীও দেখবে ঘরে সুন্দর একটি পরিবেশ বিরাজ করছে।

মুসলিম পরিবারের অবকাঠামো হবে –

আল্লাহর উপর পূর্ণ ঈমান ও তাকওয়া অবলম্বন দ্বারা তাহলে মহান আল্লাহ যা দিবেন তাহলো (সূরা আত তালাক ২-৩ আয়াতের আলোকে–

  • সব সমস্যার উত্তরনের পথ করে দেবেন
  • ধারনাতীত উৎস হতে রিযিক দান করবেন
  • মহান আল্লাহর উপর ভরসা বা তাওয়াক্কুল যথেষ্ট করে দিবেন।