অন্তরের ব্যাধি বা মানসিক অসুস্থতা-২৩

প্রথমে আপনাদের সামনে চিকিৎসা বিজ্ঞানের আলোকে মানসিক রোগ বলতে কি বুঝায় তা তুলে ধরলাম।

মানসিক রোগ হলো মস্তিষ্কের এক ধরনের রোগ৷ এ ধরনের অসুস্থতায় মানুষের আচার আচরণ কথা-বার্তা চিন্তা-ভাবনা অস্বাভাবিক হয়ে যায়৷

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

মানসিক রোগ বা মনোরোগ (ইংরেজি: Mental disorder) একপ্রকারের ব্যবহারিক বা মানসিক দুর্দশা যা সাধারণ সামাজিক বা সংস্কৃতিক নীতিমালার অন্তর্ভুক্ত নয়। সময়ের সাথে সাথে বিভিন্ন সমাজ ও সংস্কৃতি, মানসিক সুস্থতার সংজ্ঞা ও গ্রহণযোগ্যতার পরিধি পরিবর্তন করে আসছে। যদিও কিছু সাধারণ গড়মাপ সকল সমাজেই স্বীকৃত।

বর্তমান ধারণা অনুযায়ী, জিন এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার জটিল পারস্পরিক ক্রিয়ার ফলে মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বিকাশ ও কর্মক্ষমতার বিপর্যয় ঘটলে মানসিক রোগ দেখা দিতে পারে। অন্যভাষায়, মানসিক রোগের জিনতত্ত্ব ও সম্ভাব্য ফলাফল সেই ব্যক্তির জৈবিক ও পারিপার্শিক পরিকাঠামোর সাথে গভীরভাবে সম্পৃক্ত।

মানসিক রোগ দু ধরনের হতে পারে:

    * মৃদু ধরনের মানসিক রোগ

    * তীব্র ধরনের মানসিক রোগ

মৃদু ধরনের মানসিক রোগ

এ ক্ষেত্রে জীবনের স্বাভাবিক অনুভূতিগুলো (দুঃখবোধ, দুশ্চিন্তা ইত্যাদি) প্রকট আকার ধারণ করে৷ এ ক্ষেত্রে যে সকল লক্ষণগুলো দেখা যায় তা হলো: অহেতুক মানসিক অস্থিরতা, দুশ্চিন্তা-ভয়ভীতি, মাথাব্যথা, মাথাঘোরা, খিঁচুনি, শ্বাসকষ্ট, বুক ধরফর করা, একই চিন্তা বা কাজ বারবার করা (শুচিবাই), মানসিক অবসাদ, বিষণত্না, অশান্তি, বিরক্তি, অসহায় বোধ, কাজে মন না বসা, স্মরণশক্তি কমে যাওয়া, অনিদ্রা, ক্ষুধামন্দা, আত্মহত্যার করার প্রবণতা বেড়ে যায় ইত্যাদি৷

তীব্র ধরনের মানসিক রোগ

এ ক্ষেত্রে আচার আচরণ কথাবার্তা স্পষ্টভাবে অস্বাভাবিক হয় ফলে আশেপাশের মানুষরা এটা বুঝতে পারে৷ এ ক্ষেত্রে যে সকল লক্ষণগুলো দেখা যায় তা হলো: অহেতুক মারামারি, ভাঙচুর করা, গভীর রাতে বাড়ির বাইরে চলে যাওয়া, আবোল-তাবোল বলা, সন্দেহ প্রবণতা, একা একা হাসা ও কথা বলা, নিজেকে বড় মনে করা, বেশি বেশি খরচ করা, স্বাভাবিক বিচারবুদ্ধি লোপ পাওয়া, ঠিকমতো ঘুম না হওয়া, খাওয়া-দাওয়া  ঠিকমতো করে না৷

নিউরোসিস- দুশ্চিন্তাগ্রস্ত একজন নিউরোসিস রোগী

নিউরোসিস বা সাইকোনিউরোসিস বা পরিজ্ঞানসম্পন্ন মানসিক রোগ হলো কিছু মানসিক রোগের সমন্বিত নাম। এই রোগে আক্রান্তদের নিউরোটিক বলা হয়ে থাকে। এসব রোগে গুরুতর বাতুলতার উপসর্গ থাকে না, ব্যক্তিত্ব তুলনামূলকভাবে অক্ষত থাকে এবং রোগী বাস্তবতাবোধ থেকে বিচ্ছিন্ন হয় না। প্রকৃতপক্ষে নিউরোসিসকে মানসিক চাপের মুখে রোগীর প্রতিক্রিয়ার অস্বাভাবিক প্রকাশ হিসেবে গণ্য করা যায়।

নিউরোসিসের উপসর্গ অনেকগুলো। তবে দুশ্চিন্তা সব ধরনের নিউরোসিসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। নিউরোসিসের সাধারণ কিছু উপসর্গের মধ্যে রয়েছে।

দুশ্চিন্তা, হতাশা, মনোযোগের অভাব, সিদ্ধান্ত গ্রহণে অক্ষমতা, অযৌক্তিক ভয়, ঘোর, রোষপ্রবণতা, ঘুমের সমস্যা, অকারণ চিন্তা, ইত্যাদি।

মহান আল্লাহতা’আলা কুর’আনে মনের রোগের উল্লেখ করেছেন বিভিন্ন পটভূমিকায়। দুনিয়ার জীবনে ব্যক্তি এই ধরনের রোগে আক্রান্ত থাকেন অনেকেই। যেমন-

অন্তরের ব্যাধি বলতে কুর’আনে মহান আল্লাহ মুনাফেকী কে বুঝিয়েছেন যাদের কথা ও কাজের সাথে মিল থাকে না। এটা একটি সন্দেহের রোগ।

এবং যখন মুনাফিক ও যাদের অন্তরে রোগ ছিল তারা বলছিল, আমাদেরকে প্রদত্ত আল্লাহ ও রসূলের প্রতিশ্রুতি প্রতারণা বৈ নয়। সূরা আহযাব:১২

অন্য আয়াতে কুচিন্তা, খারাপ কামনা, ব্যভিচারের ইচ্ছা ও পাপের অভিলাষকে অন্তরের ব্যাধি বা মনের রোগ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আর এই রোগ যুবক যুবতি সহ আবাল বৃদ্ধ-বনিতা সমাজের অনেকাংশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। যার ফলশ্রুতিতে দেখি সমাজে নেশা, ধর্ষন, খুন-খারাবী সহ আত্মহনন বেড়ে গিয়েছে।

হে নবী পত্নীগণ! তোমরা অন্য নারীদের মত নও; যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তবে পরপুরুষের সাথে কোমল ও আকর্ষনীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না, ফলে সেই ব্যক্তি কুবাসনা করে, যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে তোমরা সঙ্গত কথাবার্তা বলবে। সূরা আহযাব: ৩২  

মহান আল্লাহ বলেছেন, আল্লাহ তোমাদের উপর থেকে বিধি নিষেধের বোঝা লঘু করে(তোমাদের জীবনকে সহজ করে) দিতে চান, কারন, মানুষকে অত্যন্ত দূর্বল করেই সৃষ্টি করা হয়েছে। সূরা আন নিসা:২৮

মহান আল্লাহ তাঁর সৃষ্টিকে অত্যন্ত ভালোবেসেই তার কল্যানের জন্য এই দুনিয়াতে সুস্থ্য সুন্দর ও সুখে থাকার জন্য কিছু বিধি-নিষেধ দিয়েছেন। কারন তিনি জানেন মানুষ কত দূর্বল ও অক্ষম। মহান রবের নির্দেশিকা ছাড়া কোনভাবেই মানুষ শান্তিতে থাকতে পারে না। আল্লাহ বল

আমি কোরআনে এমন বিষয় নাযিল করি যা রোগের সুচিকিৎসা এবং মুমিনের জন্য রহমত। সূরা বনী ইসরাঈল:৮২

কিন্তু যখনই মানুষ মহান আল্লাহর দেয়া নির্দেশিকাকে দূরে ফেলে নিজেদের মনে যা চায় এবং শয়তানী শক্তি যেভাবে চায় সেদিকেই নিজেদের ঠেলে দিয়েছে তখনই নানাভাবে সমস্যায় জড়িয়ে ফেলেছে নিজেকে। ব্যক্তিগতভাবে ও পারিবারিক জীবনে ইসলামের এই অনুশাসন পূর্ণাংগভাবে না মানার কারনে মানসিক অস্থিরতা জন্ম নেয়, যা থেকে মানসিক অশান্তি এরপর তা মানসিক রোগ এবং শেষ পর্যন্ত তা শারিরীক অসুস্থতায় রুপ নিয়ে থাকে।

মানুষ যখন কল্পনার নিকট আত্মসমর্পন করে এবং তার মন যখন রোগ-ব্যাধি, ক্রোধ, বেদনাদায়ক কারণে বিশৃঙ্খলা, দুঃখ-কষ্টে নিপতিত হওয়া ইত্যাদির প্রভাবে উত্তেজিত হয়ে উঠে, এসব তখন তাকে দুশ্চিন্তা, দুর্ভাবনা, মানসিক ও শারীরিক রোগ এবং স্নায়ুবিক দুর্বলতার দিকে ঠেলে দেয়; তার এমন অনেক কুপ্রভাব রয়েছে, যার বহু ক্ষতিকারক দিক সাধারণ মানুষ প্রত্যক্ষ করে।

এবার চলুন, মহান আল্লাহ আমাদের জন্য কিভাবে সুস্থ্য থাকার পথ সুগম করে রেখেছেন, তা জানার চেষ্টা করি

প্রথমেই মনকে বুঝিয়ে নিতে হবে যে, এই দুনিয়া কাজের জায়গা যেখানে সব ফল পাওয়া যাবে না, আখেরাতের জীবনে, দুনিয়ার জীবনে করে যাওয়া প্রতিটি কাজের ফল পাওয়া যাবে। এই দুনিয়া অল্প কয়েকদিনের জন্য অস্থায়ী জীবন। স্থায়ী জীবনে তারাই সুখ পাবে যারা সবরের সহিত মহান রবের পথে অটল থেকে কাজ করে যায়।

মহান আল্লাহ  বলেছেন,

মানুষের জন্য নারী, সন্তান, সোনা-রূপার স্তূপ, সেরা ঘোড়া, গবাদী পশু ও কৃষি ক্ষেতের প্রতি আসক্তিকে বড়ই সুসজ্জিত ও সুশোভিত করা হয়েছে। কিন্তু এগুলো দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবনের সামগ্রী মাত্র। প্রকৃতপক্ষে উত্তম আবাস তো রয়েছে আল্লাহর কাছে।

 বলো, আমি কি তোমাদের জানিয়ে দেবো, ওগুলোর চাইতে ভালো জিনিস কি? যারা তাকওয়ার নীতি অবলম্বন করে তাদের জন্য তাদের রবের কাছে রয়েছে বাগান, তার নিম্নদেশে ঝরণাধারা প্রবাহিত হয়। সেখানে তারা চিরন্তন জীবন লাভ করবে। পবিত্র স্ত্রীরা হবে তাদের সঙ্গিনী এবং তারা লাভ করবে আল্লাহর সন্তুষ্টি। আল্লাহ তার বান্দাদের কর্মনীতির ওপর গভীর ও প্রখর দৃষ্টি রাখেন। সূরা আলে ইমরান:১৪-১৫

যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর যিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে; জেনে রাখ, আল্লাহর স্মরন দ্বারাই অন্তর সমূহ শান্তি পায়। সূরা রা’দ: ২৮

আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানীরাও এখন এই একই কথা বলছেন। ১৯৮২ সালে লন্ডনে অনুষ্ঠিত ‘ নিউ ডাইরেকশন ইন হেলথ’ শীর্ষক এক কনফারেন্স-এ প্রফেসর বেনসন দীর্ঘদিন যাবৎ বোষ্টনের ‘বেথ ইজরেল হসপিটাল’-এ হার্টের রোগীদের উপর প্রার্থনাসহ শিথিলায়ন পদ্ধতির প্রভাব বিষয়ে পরিচালিত তার গবেষনার উপর ভিত্তি করে শ্রোতাদের অবাক করে বলেন, প্রত্যেহ সকাল বিকাল (খাবারের পূর্বে)একটা শান্ত ও আরামদায়ক পরিবেশে গড়ে ২০ মিনিট করে প্রার্থনার একটা পবিত্র বানী, শব্দ বা শব্দগুচ্ছ (যেমন আল্লাহ, আল্লাহু আকবর, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ ইত্যাদি) নিঃশব্দে জপার অভ্যাস করলে তা টেনশন বা স্নায়ুবিক চাপের সময় সৃষ্ট অতিরিক্ত হরমোন (হরমন নরএড্রিনাল) কমিয়ে ফেলে। নরএড্রিনাল হচ্ছে আড্রিনাল মেডুল্লা কর্তৃক নিঃসৃত এক ধরনের হরমোন যা রক্তচাপ ও হার্টবিটের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। (তথ্যসুত্র: ঘুম অপেক্ষা প্রার্থনা শ্রেয়, প্রফেসর আবদুন নূর, লোকপ্রশাসন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়)

অসুস্থ ব্যক্তি শুয়ে শুয়ে মহান রবের যিকির করা দিয়ে বা কুর’আনের বানী শুনে শুনেও অন্তরে প্রশান্তি লাভ করতে পারেন। এর দ্বারা একদিকে মানসিক প্রশান্তি, শক্তিলাভ হয়,অপরদিকে শয়তান দূরে সরে যায় এবং সর্বোপরি মহান রবের ভালোবাসা বেশী পাওয়া যায়,ফেরেশতারা দু’আ করতে থাকে। মানসিক ও শারীরিক রোগ চিকিৎসার অন্যতম উপায় হচ্ছে মনোবল বৃদ্ধি। কল্পনাপ্রসূত অস্বস্তি ও আবেগ-উত্তেজনা বর্জন করে মহান রবের উপর সন্তুষ্ট থাকা ও সম্পূর্ণ নির্ভর করা দিয়েই মনোবল লাভ সম্ভব।

“তোমরা তোমাদের চেয়ে নিম্নমানের ব্যক্তির দিকে তাকাও। আর তোমাদের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তির দিকে তাকিও না। কারণ, সে উপযুক্ত ও যোগ্যব্যক্তি। আর তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহ প্রদত্ত নিয়ামতকে তুচ্ছ মনে করো না।” —(বুখারী ও মুসলিম)

আমাদের সমাজে নারীরা বেশী মানসিক অস্থিরতায় ভুগেন, যার একটি কারন অজ্ঞানতা ও পরিবেশ। পরিবার ও পরিবেশের অনেক কিছুই মনের মত বা চাওয়ার নাগালের মাঝে নাও আসতে পারে কিন্তু সব অবস্থায় ওহীর জ্ঞানের সাথে নিজের জ্ঞান মেধাকে কাজে লাগিয়ে, মহান রবের সাহায্য চেয়ে, নির্ভর করতে হবে আল্লাহর উপর। এরপর ফলাফল যা  হয় তা তাকদীরের অন্তর্ভূক্ত এই দৃঢ় ঈমানই তাকে মানসিক সুস্থ্যতা দান করবে। মুমিন বুঝে নেয় মহান রবের ফয়সালাতেই সকল কল্যান রয়েছে।

যখন বান্দার অন্তর আল্লাহ নির্ভরশীল হয়, সে নিজেও তার (আল্লাহর) উপর ভরসা করে, আন্দাজ-অনুমান ও কল্পনার নিকট আত্মসমর্পন না করে, দুশ্চিন্তা ও খারাপ কল্পনার অধিকারী না হয়, আল্লাহর প্রতি আস্থাশীল হয় এবং তার অনুগ্রহের আশা-আকাঙ্খা পোষণ করে, এসব দ্বারা তখন তার দুশ্চিন্তা ও দুর্ভাবনাসমূহ প্রতিরোধ হবে এবং তার মানসিক ও শারীরিক রোগসমূহ দূর হয়ে যাবে। আর মানসিক শক্তি, উদারতা ও প্রফুল্লতা অর্জিত হবে।

অনেক হাসপাতাল ও পরিবারে দিনে দিনে বেড়ে যাচ্ছে দুশ্চিন্তা ও দুর্ভাবনাগ্রস্ত মানসিক রোগীদের সংখ্যা। আর এসবের কারণে দুর্বল ব্যক্তি ছাড়াও অনেক শক্তিশালী লোকের মনের উপর প্রভাব বিস্তার করেছে এবং তারাও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। তার প্রভাব থেকে শুধু ঐ ব্যক্তিই বেঁচে গেছে, যাকে আল্লাহ ক্ষমা করেছেন এবং মানসিক শক্তি বৃদ্ধি ও মনের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দূর করার ফলপ্রসু উপায় অবলম্বনের যথাযথ চেষ্টা-প্রচেষ্টা করার তাওফিক দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

 “যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে, তিনিই তার জন্য যথেষ্ট।” —(সূরা আত-তালাক: ৩)

সুতরাং আল্লাহর উপর ভরসাকারী ব্যক্তি মানসিকভাবে শক্তিশালী, যাকে কোন কুধারনা ও দুশ্চিন্তা- দুর্ভাবনা প্রভাবিত করতে পারে না। আর তাকে কোন ঘটনা-দুর্ঘটনা বিরক্ত করতে পারে না তার এই জ্ঞান থাকার কারণে যে, নিশ্চয় এটা মানসিক দুর্বলতা এবং অবাস্তব ভয়-ভীতির কারণে সংঘটিত হয়েছে। এতদসত্ত্বেও সে জানে যে, যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে, তিনি তার সকল দায়-দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ফলে সে আল্লাহর প্রতি আস্থাশীল হয় এবং তাঁর প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে নিশ্চিত হয়। এতে তার দুশ্চিন্তা ও অস্থিরতা দূর হয়; দুঃখ সুখে পরিণত হয়; দুঃখ-কষ্ট আনন্দে রূপান্তর হয় এবং ভয়-ভীতি পরিণত হয় নিরাপত্তায়। সুতরাং আমরা আল্লাহ তা‘আলার নিকট সুস্থতা কামনা করছি এবং আরও প্রার্থনা করছি তিনি যেন আমাদের উপর অনুগ্রহ করেন মানসিক শক্তি ও তাঁর উপর পূর্ণ ভরসায় অটল থাকার দ্বারা, যে ভরসার কারণে আল্লাহ তার সকল কল্যাণের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন এবং সকল অকল্যাণ ও ক্ষয়-ক্ষতির প্রতিরোধ করবেন।

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, যখন দুঃখ-কষ্ট ও দুশ্চিন্তা নবী স.কে আক্রমন করতো অথবা কোন জটিল সমস্যায় পড়তেন, তখন তিনি মাথা আকাশের দিকে উত্তোলন করে বলতেন, সমস্ত গৌরব ও প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর, যিনি মহান ও অতীব পবিত্র। আত তিরমিযী: ৩৩৭০

আসমা বিনতে উমাইস রা. বর্ণনা করেন যে, রাসুল স.বলেছেন, আমি কি তোমাকে কিছু কালেমা বা এমন কয়েকটি বাক্য শিক্ষা দেবো না, যখন তুমি দুঃখ-কষ্ট, যন্ত্রণা ও মর্মপীড়ায় পতিত হবে, তখন তা পাঠ করবে, আল্লাহু, আল্লাহু রাব্বী, লা উশরিকু বিহি শাঈয়ান। আল্লাহ, আল্লাহই আমার প্রভু, যাঁর সাথে আমি কাউকে বা কোন কিছুকে শরীক করিনা।  আবু দাউদ: ১৫২৫, আত তিরমিযী: ৩৮৮২

আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেছেন, ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য কামনা করো। সূরা আল বাকারা: ৪৫

 আমাদের প্রিয় নবী স.এর জীবনেও এই নির্দেশের বাস্তব নমুনা দেখতে পাই। হুযায়ফা রা. বর্ননা করেছেন, রাসূল স. যখন কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হতেন তখন সালাতে মশগুল হয়ে যেতেন। আবু দাউদ: ১৩১৯

হযরত ইবনে আব্বাস রা. বর্ননা করেন, কেউ যদি এসব রোগে তথা দুঃখ-কষ্ট, বিষন্নতা, দুশ্চিন্তা উদ্বিগ্নতায় ভোগে, তাহলে তাকে নিয়মিত এ দু’আ পাঠ করতে হবে। ইবনুল কাইয়িম

লা হাওলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আযীম। কোন ক্ষমতা বা শক্তি নেই একমাত্র আল্লাহ ছাড়া, যিনি মহান ও সর্বশক্তিমান।

এছাড়া রাসূল স. প্রার্থনায় বলতেন,

يَا حَيُّ يَا قَيُّومُ بِرَحْمَتِكَ أَسْتَغيثُ أَصْلِحْ لِي شَأْنِيَ كُلَّهُ وَلاَ تَكِلْنِي إِلَى نَفْسِي طَرْفَةَ عَيْنٍ».

 (ইয়া হাইয়্যু ইয়া ক্বাইয়্যূমু বিরহ্‌মাতিকা আস্তাগীসু, আসলিহ্‌ লী শা’নী কুল্লাহু, ওয়ালা তাকিলনী ইলা নাফসী ত্বারফাতা ‘আইন)।

 “হে চিরঞ্জীব, হে চিরস্থায়ী! আমি আপনার রহমতের অসীলায় আপনার কাছে উদ্ধার কামনা করি, আপনি আমার সার্বিক অবস্থা সংশোধন করে দিন, আর আমাকে আমার নিজের কাছে নিমেষের জন্যও সোপর্দ করবেন না।” আত তারগিব তারহিব ১/২৭৩