সূরা ফাতিহার পর কির’আত কিভাবে পড়া যাবে

দয়াময় মেহেরবান আল্লাহর নামে

অনেকেই ধারনা করেন যে সুরা ফাতিহা পাঠের পর অন্য সূরা সম্পূর্ন পড়তে হবে,অথবা প্রথম থেকে পড়তে হবে। আমরা একটু জানার চেষ্টা করি।

প্রথমেই যা জানা প্রয়োজন তা হলো, সূরা ফাতিহা পাঠের পর অন্য কোন কিরা’আত পাঠ সুন্নাহ।

 

কুর’আনের পরের অংশকে পূর্বে এনে পড়াকে বলে তানকিস বা ইনভার্সন।(Reading later parts of the Quraan before earlier parts is called Tankees (inversion).

বিভিন্ন রকম তানকিস আছে।

১। Tankees al-Huroof (inversion of letters)- বর্নকে উল্টিয়ে পড়া-হারাম।

means putting a later letter before a previous letter in one word, for example, instead of Rabb one reads Barr

Undoubtedly this is haraam, and invalidates a person’s prayer, because it changes the Quraan from the way in which it was spoken by Allaah, and usually alters the meaning in a drastic manner. (Al-Sharh al-Mumti by Ibn Uthaymeen, 3/110)

২। Tankees al-Kalimaat (inversion of words)- পরের শব্দকে আগে পড়া-হারাম

Tankees al-Kalimaat (inversion of words) means putting a later word before a previous word, for example, instead of Qul huwa Allaahu ahad, one reads Ahad Allaah huwa qul!

This also is undoubtedly haraam, because it changes the Quraan from the way in which it was spoken by Allaah.(Al-Sharh al-Mumti, 3/110)

৩। Tankees al-Aayat (inversion of verses)- পরের আয়াতকে আগে পড়া-অধিকাংশ মত এটা হারাম

Tankees al-Aayat (inversion of verses) means reciting a later aayah before a previous aayah, for example, reciting min sharr il-waswaas il-khannaas before ilaah il-naas!

Shaykh Ibn Uthaymeen said:

Tankees al-aayaat (inverting verses) is also haraam according to the most correct view, because the order of the aayahs is tawqeefi (something which is based on revelation [and not open to ijtihaad]). The meaning of tawqeefi is that it was dictated by the order of the Messenger (peace and blessings of Allaah be upon him).(al-Sharh al-Mumti, 3/110)

৪। Tankees al-Suwar (inversion of Soorahs)-পরের সূরা আগে পড়ে নেয়া এরপর আগের সূরা পাঠ

Tankees al-Suwar (inversion of Soorahs) means, reciting later soorahs before earlier ones, for example, reciting Aal Imraan before al-Baqarah.

s that the order of soorahs is not tawqeefi; it is the result of ijtihaad on the part of some of the Sahaabah.

তাওকিফী অর্থ হলো যা রাসূল সা অহীর জ্ঞানে  নির্ধারন করেছেন(The meaning of tawqeefi is that it was dictated by the order of the Messenger (peace and blessings of Allaah be upon him).

https://islamqa.info/en/answers/7198/reciting-surahs-and-aayahs-in-a-different-order

The Prophet (peace and blessings of Allaah be upon him) and the ummah after him in all ages regarded it as permissible to differ from the order of soorahs in prayer, and when studying and teaching.

Al-Imaam al-Bukhaari said:

Al-Ahnaf recited al-Kahf in the first rakah and Yoosuf or Yoonus in the second, and he said that he had prayed Fajr with Umar and he had done the same.(Baab al-Jam bayna Sooratayn fil-Rakah, in Kitaab al-Adhaan).

With regard to the latter part of your question, we say:

It is permissible to recite aayahs 50-60 of al-Baqarah in the first rakah, then to recite aayahs 1-20 of al-Baqarah in the second rakah, because then the meaning of the passage will be complete.

But reciting aayahs 10-20  means that one is cutting off the meaning, so it is better not to do this. Perhaps you mentioned the numbers only by way of example and you did not mean these particular aayaat. And Allaah knows best.

Source: Sheikh Muhammed Salih Al-Munajjid

সূরার মাঝখান থেকেও কতক আয়াত পাঠ করা যায়। তবে অবশ্যই আয়াতের অংশটুকু  পূর্ন অর্থ বহন করবে।।

যেহেতু আল্লাহ তাআলা বলেন,

فاقرَؤُوْا مَا تَيَسَّرَ مِنَ الْقُرْآن

অর্থাৎ, —কাজেই কুরআনের যতটুকু অংশ পাঠ করা তোমাদের জন্য সহ্‌জ, ততটুকু তোমরা পাঠ কর। (কুরআন মাজীদ ৭৩/২০)

নামায ভুলকারী সাহাবীকেও রসূল (সাঃ) বলেছিলেন, “অতঃপর কুরআন থেকে যতটুকু তোমার জন্য সহ্‌জ হয় ততটুকু পাঠ কর।” (বুখারী, মুসলিম,  প্রমুখ, মিশকাত ৭৯০ নং) তাছাড়া তিনি

ফজরের সুন্নতে প্রথম রাকআতে সূরা বাক্বারার ১৩৬ নং আয়াত এবং দ্বিতীয় রাকআতে সূরা আ-লে ইমরানের ৬৪ নং আয়াত পাঠ করেছিলেন। (মুসলিম,  মিশকাত ৮৪৩ নং)

আর এ কথা বিদিত যে, যা নফল নামাযে পড়া যায়, তা ফরয নামাযেও (কোন আপত্তির দলীল না থাকলে) পড়া যাবে। আর পড়া আপত্তিকর হলে নিশ্চয় তার বর্ণনা থাকত। যেমন সাহাবাগণ যখন মহানবী (সাঃ) এর উট ও সওয়ারীর উপর নফল এবং বিত্‌র নামায পড়ার কথা বর্ণনা করেন, তখনই তার সাথে এ কথাও বর্ণনা করেন যে, ‘অবশ্য তিনি সওয়ারীর উপর ফরয নামায পড়তেন না।’ (বুখারী ১০৯৮, মুসলিম, সহীহ ৭০০নং)

তবে এক রাকআতে পূর্ণ একটি সূরা এবং সূরার শুরু অংশ থেকে পাঠ করাই আফযল। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ৩/১০৩-১০৪, ৩৩৪, ৩৬০)

আফযল অর্থ অপেক্ষাকৃত ভালো; উত্তম ।

আল্লাহর রসূল (সাঃ) (তাহাজ্জুদের) নামাযে যখন কুরআন পড়তেন, তখন ধীরে ধীরে পড়তেন। কোন তাসবীহর আয়াত পাঠ করলে তাসবীহ পড়তেন, কোন প্রার্থনার আয়াত পাঠ করলে প্রার্থনা করতেন এবং কোন আশ্রয় প্রার্থনার আয়াত পাঠ করলে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। (মুসলিম, সহীহ ৭৭২ নং)

ব্যাপারটি নফল নামাযের হলেও ফরয নামাযেও আমল করা বৈধ। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ৩/৩৯৬)

ক. সকল প্রকার সালাতের প্রথম দু’রাকআতে ফাতিহা পাঠের পর অপর একটি সূরা পড়বে, অথবা কোন সূরার অংশবিশেষ পড়বে।
খ. আর তৃতীয় ও চতুর্থ রাকআতে সূরা ফাতিহার পর রাসূলুল্লাহ (স.) কখনো সূরা মিলাতেন, আবার কখনো মিলাতেন না।
গ. প্রথম রাকআতে সূরা পাঠ তুলনামূলকভাবে একটু দীর্ঘায়িত করতেন।
ঘ. যোহর ও আসরের সালাতে ইমামের পেছনে প্রথম দু’রাকআতে মুক্তাদীগণও সূরা ফাতিহার সাথে অন্য একটি সূরা পড়তে পারে। আবার শুধু ফাতিহা পাঠ করেও ক্ষান্ত হতে পারে।
ঙ. একই রাকআতে সূরার অংশবিশেষ বা পূর্ণ সূরা বা একাধিক সূরা পাঠ করা জায়েয।

প্রথম রাকআত ছাড়া পরবর্তী কোন রাকআতে আর ছানা পড়তে হয় না এবং আউযুবিল্লাহ পড়ারও দরকার নেই। তবে প্রতি রাকআতেই সূরা ফাতিহা ও অন্য সূরার শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়া মুস্তাহাব। আর বাকি সব। নিয়ম-কানুন প্রথম রাকআতের মতোই। তবে প্রথম রাকআতের তুলনায় দ্বিতীয় রাকআতের কিরাআত পড়া ছোট করা ভালো। (মুসলিম: ৪৫১)

সালাতে পঠিত কির’আতের জবাবঃ

 

তিনি সূরা কিয়ামাহ্‌ এর শেষ আয়াত, أَلَيْسَ ذلِكَ بِقَادِرٍ عَلى أَنْ يُحْيِىَ الْمَوْتى (অর্থাৎ যিনি এত কিছু করেন তিনি কি মৃতকে পুনঃজীবিত করতে সক্ষম নন?) পড়লে জওয়াবে বলতেন,  سُبْحَانَكَ فَبَلى  (সুবহা-নাকা ফাবালা), অর্থাৎ তুমি পবিত্র, অবশ্যই (তুমি সক্ষম)।

 

সূরা আ’লার প্রথম আয়াত, سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الأَعْلىঅর্থাৎ তোমার প্রতিপালকের নামের পবিত্রতা ঘোষণা কর) পাঠ করলে জওয়াবে বলতেন,سُبْحَانَ رَبِّىَ الأَعْلى  (সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা। অর্থাৎ আমি আমার মহান প্রতিপালকের পবিত্রতা ঘোষণা করছি)। (আবূদাঊদ, সুনান ৮৮৩, ৮৮৪নং, বায়হাকী)

 

আল্লামা আলবানী বলেন, উক্ত আয়াতদ্বয়ের জওয়াবে উক্ত দুআ বলার ব্যাপারটা সাধারণ; অর্থাৎ, ক্বিরাআত নামাযে হোক বা তার বাইরে, ফরযে হোক বা নফলে সর্বক্ষেত্রে উক্ত জওয়াব দেওয়া যাবে। আবূ মূসা আশআরী এবং উরওয়াহ্‌ বিন মুগীরাহ্‌ ফরয নামাযে উক্ত দুআ বলতেন। (ইবনে আবী শাইবা ৮৬৩৯, ৮৬৪০, ৮৬৪৫ নং)

 

একদা মহানবী (সাঃ) সাহাবীদের নিকট সূরা রহ্‌মান শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পাঠ করলেন। সাহাবীগণ নীরব বসে তেলাওয়াত শুনছিলেন। তিনি বললেন, “যে রাত্রে আমার নিকট জিনের দল আসে, সে রাত্রে আমি উক্ত সূরা ওদের নিকট পাঠ করলে ওরা সুন্দর জওয়াব দিচ্ছিল। যখনই আমি পাঠ করছিলাম,

فَبِأَيِّ آلاَءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبانِ

(অর্থাৎ, তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্‌ নিয়ামতকে অস্বীকার কর?) তখনই তারাও এর জওয়াবে বলছিল,

لاَ بِشَيْءٍ مِّنْ نِّعَمِكَ رَبَّنَا نُكَذِّبُ، فَلَكَ الْحَمْدُ।

উচ্চারণ:- লা বিশাইইম মিন নিআ’মিকা রাব্বানা নুকাযযিবু, ফালাকালহাম্‌দ।

অর্থ:-  তোমার নেয়ামতসমূহের কোন কিছুকেই আমরা অস্বীকার করি না হে আমাদের প্রতিপালক! (তিরমিযী, সুনান, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ২১৫০নং)

এ তো গেল ইমাম বা একাকী নামাযীর কথা। কিন্তু মুক্তাদী হলে ইমাম চুপ থেকে ঐ সমস্ত দুআ পাঠ করলে সেও পড়তে পারে। নচেৎ ইমাম চুপ না হলে ইমামের ক্বিরাআত চলাকালে ঐ সমস্ত জওয়াব পড়া বৈধ নয়। কারণ, ক্বিরাআতের সময় ইমামের পশ্চাতে সূরা ফাতিহা ছাড়া অন্য কিছু পড়ার অনুমতি নেই। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ৩/৩৯৪)

 

ক্বিরাআতে মুসহাফের তরতীব (অনুক্রম) বজায় রেখে পাঠ করা মুস্তাহাব। অর্থাৎ, দ্বিতীয় সূরা বা দ্বিতীয় রাকআতে যে সূরা পাঠ করবে, তা যেন মুসহাফে প্রথমে পঠিত সূরার পরে হয়। অবশ্য এর বিপরীত করা দোষাবহ্‌ নয়; বরং বৈধ। যেমন মহানবী (সাঃ) এর তাহাজ্জুদের ক্বিরাআতে আমরা জানতে পারব। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্‌ ১৯/১৪৮, সিফাতু স্বালাতিন নাবী (সাঃ), আলবানী ১০৪পৃ:, ৪নং টীকা)

 

মহানবী (সাঃ) আল্লাহর আদেশ অনুসারে ধীরে ধীরে স্পষ্ট ও সুন্দরভাবে কুরআন পাঠ করতেন; তাড়াহুড়ো করে শীঘ্রতার সাথে নয়। বরং এক একটা হ্‌রফ স্পষ্টভাবে উচ্চারণ করে পাঠ করতেন। (ইবনুল মুবারক, যুহ্‌দ, আবূদাঊদ, সুনান, আহমাদ, মুসনাদ সিফাতু স্বালাতিন নাবী (সাঃ), আলবানী ১২৪পৃ:)

 

তিনি বলতেন, “কুরআন তেলাওয়াতকারীকে পরকালে বলা হবে, ‘পড়তে থাক এবং মর্যাদায় উন্নীত হতে থাক। আর (ধীরে ধীরে, শুদ্ধভাবে কুরআন) আবৃত্তি কর, যেমন দুনিয়ায় অবস্থানকালে আবৃত্তি করতে। যেহেতু যা তুমি পাঠ করতে তার সর্বশেষ আয়াতের নিকট তোমার স্থান হবে।” (আবূদাঊদ, সুনান, নাসাঈ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, জামে ৮১২২ নং)

 

হযরত আবূ হুরাইরা (রাঃ) বলেন, ‘প্রত্যেক নামাযেই ক্বিরাআত আছে। সুতরাং আল্লাহর রসূল (সাঃ) যা আমাদেরকে শুনিয়েছেন, তা আমি তোমাদেরকে শুনালাম এবং যা চুপেচুপে পড়েছেন, তা চুপেচুপে পড়লাম।’ এক ব্যক্তি বলল, ‘যদি আমি সূরা ফাতিহার পর অন্য কিছু না পড়ি?’ তিনি বললেন, ‘যদি অন্য কিছু পড় তাহলে উত্তম। না পড়লে সূরা ফাতিহাই যথেষ্ট।” (বুখারী ৭৭২, মুসলিম, সহীহ ৩৯৬ নং)