সালাতে সাজদাহ, কখন কিভাবে ‘ইফতিরাশ’ ও তাওয়াররুক’ করতে হয়?

দয়াময় মেহেরবান আল্লাহর নামে

সালাতে এই কাজগুলো করা সুন্নাত, যা সালাতের সৌন্দর্য্য বাড়ায়, সুন্নাত আদায়ে অনেক সাওয়াব অর্জিত হয় ইন শা আল্লাহ। 

দুই রাকআত নামায শেষে রাসূলুল্লাহ (স.) আল্লাহু আকবার বলে সিজদা থেকে মাথা উঠিয়ে পুরোপুরি সোজা হয়ে বসতেন। সে সময় বাম পা বিছিয়ে এর উপর বসতেন এবং ডান পা খাড়া করে (পায়ের আঙুলগুলো কিবলামুখী করে) বসতেন। বসা অবস্থায় দুই হাত উরুতে রাখতেন (নাসাঈ: ১২৬৪; তিরমিযী: ২৯২)। এ কায়দার বৈঠককে ‘ইফতিরাশ’ বলা হয়।

 তিন বা চার রাকআত বিশিষ্ট সালাতের দ্বিতীয় বৈঠকে বাম পা ডান পায়ের নিচ দিয়ে বাম পায়ের অগ্রভাগ বের করে নিতম্বের উপর ভর করে বসবে। তখন ডান পায়ের আঙুলগুলো কিবলামুখী করে খাড়া করে রাখবে। এ পদ্ধতির বৈঠককে তাওয়াররুক’ বলা হয়।বুখারী: ৮২৮, ইফা ৭৯০, আধুনিক ৭৮২)।

 

রাসূলুল্লাহ (স.) সিজদায় যাওয়ার সময় আল্লাহু আকবার বলতেন। আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত, এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, মাটিতে হাঁটু রাখার পূর্বে হাত রাখবে।(আবু দাউদ: ৮৪০, নাসাঈ: ১০৯৪, হাদীসটি সহীহ)।

অন্য হাদীসে আছে, তিনি আগে দুই হাঁটু মাটিতে রাখতেন (আবু দাউদ: ৮৩৮, ৮৩৯)।

সিজদা করার পদ্ধতি: 

নবী করীম (স.) সিজদারত অবস্থায় হাতের তালু মাটিতে বিছিয়ে রাখতেন (বুখারী: ৮২৮, ইফা ৭৯০, আধুনিক ৭৮২)।

সাতটি অঙ্গের উপর ভর দিয়ে সিজদা করতেন (বুখারী: ৮১২, মুসলিম: ৪৯০)। যেমন-
(ক) কপাল ও নাক [তিনি (স.)] হাত দিয়ে নাকের প্রতি ইশারা করে নাককে কপালের অন্তর্ভুক্ত করেন) [বুখারী: ৮১২], ইফা ৭৭৫, আধুনিক ৭৬৭।
(খ) দুই হাত
(গ) দুই হাঁটু
(ঘ) দুই পায়ের আঙুলসমূহের অগ্রভাগ। কপালের মতো নাকও মাটিতে রাখতে হবে। তিনি (স.) হাতের আঙুলগুলো সোজা করে নরমভাবে কিবলামুখী করে রাখতেন। দুই পায়ের গোড়ালি একত্রে ভালোভাবে মিলিয়ে রাখতেন (সহীহ ইবনে খুযাইমা: ৬৫৪)। সে সময় রাসূল (স.)-এর মুখমণ্ডল তাঁর দুই হাতের মধ্যবর্তী স্থানে কাধ বা কান বরাবর রাখতেন এবং হাতের কজি থেকে কনুই পর্যন্ত তার বাহু যমীন থেকে উপরে উঠিয়ে রাখতেন। সাবধান! কুকুরের মতো কনুই পর্যন্ত হাত দুটো যমীনে বিছিয়ে দেবে না (বুখারী: ৮২২, আধুনিক ৭৭৬)।

তিনি দুই পায়ের আঙুলে ভর করে হাঁটু দাঁড় করিয়ে রাখতেন। কনুই ও বগল ফাঁকা থাকবে। সিজদা লম্বা হবে এবং পিঠ সোজা থাকবে। আল্লাহ ঐ বান্দার সালাতের দিকে তাকান না, যে ব্যক্তি তার সালাতে রুকু ও সিজদার মধ্যে নিজের মেরুদণ্ড সোজা করে না (আহমাদ- ২/৫২৫; তাবরানী; মুজামুল কবীর- ৮/৩৩৮)।

রাসূলুল্লাহ (স.) পেট থেকে উরু এতটুকু পরিমাণ দূরে রাখতেন, যাতে উক্ত ফাঁকা অংশ দিয়ে একটি বকরির বাচ্চা বা ছাগল ছানা আসা-যাওয়া করতে পারে (মুসলিম: ৪৯৬)। তাছাড়া দুই উরুর মাঝখানে একটু ফাঁকা থাকবে। পুরুষ ও মহিলা উভয়েই এই একই পদ্ধতিতে রাসূলুল্লাহ (স.)-এর মতো সিজদা করবে। মেয়েদের আলাদা পদ্ধতিতে সিজদা করার কোন কথা হাদীসে নেই। মেয়েদের কেউ কেউ হাত ও কনুই পর্যন্ত বাহু জমিনে বিছিয়ে বিছানার সাথে একেবারে মিশে গিয়ে সিজদা করে। অথচ এমনভাবে সিজদা করতে আল্লাহর রাসূল (স.) নিষেধ করেছেন। সিজদা করার এ পদ্ধতিকে রাসূলুল্লাহ (স.) কুকুরের বসার সাথে তুলনা করেছেন। আনাস বিন মালেক (রা) বর্ণিত এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন,

“সিজদার সময় তোমাদের কেউই যেন দুই বাহু বিছিয়ে না দেয়, যেমনভাবে বিছিয়ে দেয় কুকুর।” (বুখারী: ৮২২, ইফা ৭৮৪, আধুনিক ৭৭৬)

দুই সিজদার মধ্যবর্তী বৈঠকে সময়ের পরিমাণ:

 সিজদায় যে পরিমাণ সময় ব্যয় করবে এখানেও প্রায় সে পরিমাণ সময় লম্বা করবে। কারণ রাসূলুল্লাহ (স.)-এর রুকু, সিজদা, দুই সিজদার মধ্যবর্তী বৈঠক এবং রুকু থেকে মাথা উঠানোর পরবর্তী কিয়ামের সময়ের পরিমাণ প্রায় সমান সমান বা তার কাছাকাছি ছিল। (বুখারী: ৭৯২, ইফা ৭৫৬, মুসলিম: ৪৭১)

 

মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দিন আলবানী (রহ.)(নবী (সা.) এর ছলাত সম্পাদনের পদ্ধতি )

নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ছলতের যে বিবরণী ও পদ্ধতি উল্লেখ করা হল এতে নারী-পুরুষ সবাই সমান। ঐ সকল পদ্ধতির কিছু অংশেও নারীদের স্বাতন্ত্র্য রয়েছে। এ দাবীর স্বপক্ষে সুন্নাহতে কিছুই উদ্ধৃত হয়নি। বরং নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ বাণীর সাধারণভঙ্গি তাদেরকেও শামিল করেঃ صلوا كما رأيتموني أصلي তোমরা ঠিক ঐভাবে ছালাত আদায় কর যেভাবে আমাকে ছালাত আদা করতে দেখ। আর এটাই হচ্ছে ইবরাহীম নাখাঈর উক্তি। তিনি বলেছেনঃ

تفعل المرأة في الصلاة كما يفعل الرجل

নারী ছালাতে তাই করবে যা একজন পুরুষ করে। এটি বর্ণনা করেছেন ইবনু আবী শাইবাহ (১/৭৫/২) ছহীহ সনদে।

সাজদাহ অবস্থায় নারীর সংকুচিত হওয়ার যে হাদীছ রয়েছে যাতে এও আছে যে, এক্ষেত্রে নারী; পুরুষের মত নয়, সে হাদীছটি মুরসাল-ও (সূত্র ধারা ছিন্ন) এটা প্রমাণ্যের অযোগ্য। এটিকে বর্ণনা করেছেন আবু দাউদ “মারাসীল” গ্রন্থে (১১৭/৮৭) ইয়াযীদ বিন আবু হাবীবের বরাতে। আর এটি “যাঈফাহ”তে উদ্ধৃত হয়েছে ২৬৫২।

আর ইমাম আহমাদ যা বর্ণনা করেছেন স্বীয় ছেলে কর্তৃক সংকলিত তার থেকে বর্ণনাকৃত মাসায়েল গ্রন্থে (পৃষ্ঠা ৭১) ইবনু উমার (রাযিঃ) হতে বর্ণিত যে, তিনি মহিলাদেরকে ছলাতে চারজানুহয়ে বসতে বলতেন। এর সনদ ছহীহ নয়। কারণ এর বর্ণনা সূত্রের ভিতর আব্দুল্লাহ ইবনুল উমরী নামক রাবী যাঈফ বা দুর্বল।

পক্ষান্তরে ইমাম বুখারী “আততারীখুছ ছাগীর” গ্রন্থে (পৃষ্ঠা ৯৫) ছহীহ সনদে উম্মুদ দারাদা থেকে বর্ণনা করেছেন-

أنها كانت تجلس في صلاتها جلسة الرجل وكانت فقيهة

তিনি (উম্মুদ দারদা) ছলাতে পুরুষদের বসার মতই বসতেন, অথচ তিনি ফকীহাহ অর্থাৎ ধৰ্মজ্ঞানের অধিকারিণী ছিলেন।

নামাযে পঠিত বিষয়গুলোর অর্থ ও শিক্ষা—৬(সাজদাহ)

নামাযে পঠিত বিষয়গুলোর অর্থ ও শিক্ষা—৭(দুই সাজদাহ এর মাঝে)