সালাতে নারী পুরুষের সতর

দয়াময় মেহেরবান আল্লাহর নামে

 

প্রশ্ন: সালাতে সতর তথা শরীরের কতটুকু ঢাকা আবশ্যক? হাফ প্যান্ট পরিহিত (হাঁটু ঢাকা অবস্থায়) বা হাফ শার্ট/টি শার্ট পরিধান করে সালাত আদায় করলে তা কি শুদ্ধ হবে?

উত্তর:

সালাতে পুরুষদের ন্যূনতম সতর হল, দু কাঁধ এবং নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত ঢাকা। অর্থাৎ সর্ব নিম্ন এতটুকু ঢাকা থাকা সালাত শুদ্ধ হওয়ার জন্য শর্ত।

 

অবশ্য কাঁধ ঢাকা শর্ত কি না এ ব্যাপারে সম্মানিত ফকিহদের মাঝে দ্বিমত রয়েছে। তবে একাধিক বিশুদ্ধ হাদিসের আলোকে সালাতে দু কাঁধ ঢাকার মতটি অধিক শক্তিশালী বলে প্রতিয়মান হয়। যেমন হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ لاَ يُصَلِّ أَحَدُكُمْ فِي الثَّوْبِ الْوَاحِدِ لَيْسَ عَلَى مَنْكِبَيْهِ مِنْهُ شَىْءٌ ‏”‏ ‏

 

আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “তোমাদের কেউ যেন কাঁধ খোলা রেখে এক কাপড়ে সালাত আদায় না করে।” (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)

হাদিসে আরও বর্ণিত হয়েছে:

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ إِذَا صَلَّى أَحَدُكُمْ فِي ثَوْبٍ فَلْيُخَالِفْ بِطَرَفَيْهِ عَلَى عَاتِقَيْهِ ‏”

 

আবু হুরাইরাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “তোমাদের কেউ এক কাপড়ে সলাত আদায় করলে সে যেন কাপড়ের ডান পাশকে বাম কাঁধের উপর এবং বাম পাশকে ডান কাঁধের উপর ঝুলিয়ে রাখে।” (সহীহ মুসলিম)

এ হাদিসদ্বয় থেকে দু কাঁধ ঢাকার মতটি অধিক শক্তিশালী বলে প্রতিয়মান হয়। অবশ্য যে সকল ফকিহগণ কাঁধ ঢাকার বিষয়টিকে আবশ্যক মনে করে না তাদের মতে, কাঁধ ঢাকা সালাতের একটি সৌন্দর্য বা আদব মাত্র; এর বেশি নয়। যা হোক, একান্ত জরুরি পরিস্থিতির শিকার না হলে ইচ্ছাকৃতভাবে দু কাঁধ খোলা রেখে সালাত আদায় করা ঠিক নয়।

উল্লেখ্য যে, মহিলাদের জন্য পর পুরুষ দেখার সম্ভাবনা না থাকলে মুখ মণ্ডল ও দু হাতের কব্জি ব্যতিরেকে মাথা থেকে পা পর্যন্ত সারা শরীর ঢাকা আবশ্যক। আর পর পুরুষ দেখার সম্ভাবনা থাকলে মুখ ও হাতের কব্জি দ্বয়ও ঢাকতে হবে।

সুতরাং কোন পুরুষ যদি একটি গামছা/তোয়ালে দ্বারা তার দু কাঁধ ঢাকে বা হাফ শার্ট বা টি শার্ট পরিধান করে এবং এতটুকু লম্বা হাফ প্যান্ট পরিধান করে যে, তার নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত ঢেকে যায় তাহলে তাতে সালাত শুদ্ধ হবে ইনশাআল্লাহ।

তবে একান্ত প্রয়োজন ছাড়া সালাতে এত ছোট পোশাক পরা উচিৎ নয় বরং সারা শরীর সুন্দরভাবে আবৃত করত: শালীন ও রুচি সম্মত জামা-কাপড় পরিধান করাই সালাতের সৌন্দর্য ও আদব। আল্লাহু আলাম।

▬▬▬▬●◈●▬▬▬▬

উত্তর প্রদানে:

আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল

দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।।

মহিলাদের লেবাসে চুল, পেট, পিঠ,হাতের কব্জির উপরি ভাগের অঙ্গ (কনুই, বাহু প্রভৃতি) বের হয়ে থাকলে নামায হয় না। কেবল চেহারা ও কব্জি পর্যন্তহাত বের হয়ে থাকবে। পায়ের পাতাও ঢেকে নেওয়া কর্তব্য। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্‌ ১৬/১৩৮, ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্‌,ৎ

সঊদী উলামা-কমিটি ১/২৮৮, কিদারেমী, সুনান ৯৪পৃ:)  অবশ্য সামনে কোন বেগানা পুরুষ থাকলে চেহারাও ঢেকে নিতে হবে।

ঘর অন্ধকার হলেও বা একা থাকলেও নামায পড়তে পড়তে ঢাকা ফরয এমন কোন অঙ্গ প্রকাশ পেয়ে গেলে নামায বাতিল হয়ে যাবে। সেই নামায পুনরায় ফিরিয়ে পড়তে হবে। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্‌, সঊদী উলামা-কমিটি ১/২৮৫)

প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন, “কোন সাবালিকা মেয়ের মাথায় চাদর ছাড়া তার নামায কবুল হয় না।” (আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, মিশকাত ৭৬২নং)

আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

যে ব্যক্তি অহঙ্কারবশত কাপড় ঝুলিয়ে রাখে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তার দিকে (রহমতের দৃষ্টিতে) তাকাবেন না। তখন উম্মুল মুমিনীন উম্মে সালামা রা. জিজ্ঞাসা করলেন, তাহলে মহিলারা তাদের কাপড়ের ঝুল  কীভাবে রাখবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এক বিঘত ঝুলিয়ে রাখবে। উম্মে সালামা বললেন, এতে তো তাদের পা অনাবৃত থাকবে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে এক হাত ঝুলিয়ে রাখবে, এর বেশি নয়। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৪১১৭; জামে তিরমিযী ৪/২২৩; সুনানে নাসাঈ ৮/২০৯; মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ১১/৮২

ইমাম তিরমিযী বলেন, এই হাদীসে নারীর জন্য কাপড় ঝুলিয়ে রাখার অবকাশ দেওয়া হয়েছে। কারণ এটিই তাদের জন্য অধিক আবৃতকারী।

প্রশ্ন: সালাতের সময় মহিলাদের মুখমণ্ডল খোলা রাখা জায়েয আছে- এটা আমরা জানি। কিন্তু কেউ কেউ বলে যে, মহিলাদের থুতনি পর্যন্ত ঢেকে রাখতে হবে। কেননা, থুতনিও সতরের মধ্যে পড়ে।

আসলে কি আমাদের থুতনিও ঢেকে রাখতে হবে? থুতনি বের হয়ে থাকলে কি সালাত বিশুদ্ধ হবে না?

উত্তর:

সালাতে পরপুরুষ দেখার সম্ভাবনা না থাকলে মহিলাদের মুখমণ্ডল খোলা রাখা জায়েয রয়েছে। কিন্তু মুখমণ্ডলের পরিসীমা কতটকু? এ ব্যাপারে সম্মানিত ফকীহগণ বলেন, “মুখমণ্ডের পরিসীমা হল, মাথার চুল গজানোর স্থান থেকে নিয়ে চোয়ালের হাড়ের শেষ পর্যন্ত এবং দু পাশে দু কান পর্যন্ত।”

তাহলে আমরা জানতে পারলাম যে, থুতনি বা চোয়ালের হাড়ের শেষ পযর্ন্ত চেহারার অন্তর্ভুক্ত। (তার নিচের অংশ চেহারার অন্তর্ভুক্ত নয়।)

সুতরাং ওযুতে মুখমণ্ডলের এ স্থানটুকু ধৌত করা আবশ্যক।

 

আর সালাতে মহিলাদের থুতনি সহ মুখমণ্ডল খুলে রাখা জায়েয (যদি পরপুরুষ দেখার সম্ভাবনা না থাকে)। কেননা থুতনি মুখমণ্ডলের অন্তর্ভুক্ত। তবে থুতনির নিচের অংশ ঢাকা আবশ্যক। জানা স্বত্বে থুতনির নিচের অংশ খোলা থাকলে সালাত বাতিল হয়ে যাবে।

আল্লাহু আলাম।

——————

উত্তর প্রদানে:

আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলিল মাদানি

দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব

প্রশ্ন: নামাযের মধ্যে অনিচ্ছাকৃতভাবে কোন নারীর শরীরের কিছু অংশ যেমন- গলা, চুল বা ঘাড় উন্মুক্ত হয়ে যায় এবং নামাযের মধ্যেই সে দ্রুত তা ঢেকে নেয় তার এ নামাযের হুকুম কি? তাকে কি এ নামায পুনরায় পড়তে হবে? অথবা তার করণীয় কি?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

এক:

জমহুর আলেমের মতে, সতর ঢাকা নামায শুদ্ধ হওয়ার অন্যতম শর্ত। সেটি পুরুষের ক্ষেত্রে হোক অথবা নারীর ক্ষেত্রে হোক। নামাযে নারীর সতর কতটুকু তা জানতে 1046 নং প্রশ্নোত্তরটি দেখুন। এর দলিল হচ্ছে- আয়েশা (রাঃ) কর্তৃক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থকেএ বর্ণিত হাদিস তিনি বলেন: “আল্লাহ তাআলা খিমার পরিধান করা ব্যতীত কোন প্রাপ্ত বয়স্কা নারীর নামায কবুল করেন না।”[সুনানে আবু দাউদ, সুনানে তিরমিযি, আলবানি সহিহ আবু দাউদ গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন]

 

ইবনে আব্দুল বার (রহঃ) বলেন: “যারা সতর ঢাকাকে নামাযের ফরজ আমল বলেন তারা ইজমা দিয়ে দলিল দেন যে, যে ব্যক্তি সতর ঢাকতে সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও সতর না ঢেকে উলঙ্গ হয়ে নামায পড়ে তার নামায বাতিল।” তিনি আরও বলেন: “তারা সকলে এ ব্যাপারে ইজমা বা ঐকমত্য করেছেন।” সমাপ্ত [দেখুন আল-মুগনি (১/৩৩৭)]

দুই:

যে ব্যক্তি সতর ঢেকে নামায পড়ছিলেন কিন্তু অনিচ্ছাকৃতভাবে সতরের কিছু অংশ অনাবৃত হয়ে গেছে এবং সে সাথে সাথে ঢেকে নিয়েছে তাহলেও তার নামায শুদ্ধ হবে। সে ব্যক্তি পুরুষ হোক অথবা নারী হোক। সতরের সে অংশ সাধারণ অঙ্গ হোক অথবা বিশেষ অঙ্গ হোক। উন্মুক্ত অংশ কম হোক অথবা বেশি হোক।

কাশশাফুল কিনা (১/২৬৯) গ্রন্থে বলেন:

অনিচ্ছাকৃতভাবে সতরের কিছু অংশ উন্মুক্ত হয়ে গেলে নামায বাতিল হবে না। যদি সতরের কিছু অংশ দীর্ঘ সময়ের জন্য উন্মুক্ত থাকে তবুও। আর যদি সতরের বড় একটা অংশ স্বল্প সময়ের জন্য উন্মুক্ত হয়ে পড়ে সে ক্ষেত্রেও নামায বাতিল হবে না। যদি বাতাসে তার সতর থেকে আচ্ছাদন সরে যায়, এমনকি এতটুকু সরে যায় দীর্ঘসময় যতটুকু উন্মুক্ত রাখা যায় না; এমনকি এতে করে যদি তার সম্পূর্ণ সতর উন্মুক্ত হয়ে পড়ে কিন্তু সে দ্রুত সময়ের মধ্যে আমলে কাছির (বেশি কাজ) না করে ঢেকে নিতে পারে তাহলেও তার নামায বাতিল হবে না। কারণ সময়ের স্বল্পতা সামান্য সতর বেশি সময় ধরে উন্মুক্ত থাকার সাথে তুল্য। যদি সতর ঢাকতে গিয়ে আমলে কাছির (বেশি কাজ) এ লিপ্ত হতে হয় তাহলে নামায বাতিল হয়ে যাবে। সমাপ্ত।

শাইখ উছাইমীন (রহঃ) বলেন: যদি সতরের বেশি অংশ সামান্য সময়ের জন্য উন্মুক্ত হয়ে পড়ে তাহলে নামায বাতিল হবে না। যেমন- ‘কেউ নামাযের রুকুতে ছিলেন, এর মধ্যে তীব্র বাতাসে কাপড় সরে গেল এবং তাৎক্ষণিকভাবে সে কাপড় ঠিক করে নেয়’ গ্রন্থকারের মতে এ ব্যক্তির নামায বাতিল। কিন্তু সঠিক মতানুযায়ী: নামায বাতিল হবে না। যেহেতু তিনি অতিদ্রুত কাপড়টি পরে নিতে পেরেছেন এবং তিনি তো ইচ্ছাকৃতভাবে সতর খোলেন নি। আল্লাহ তাআলা বলেন: “তোমরা সাধ্যানুযায়ী আল্লাহকে ভয় কর।”[সূরা আত-তাগাবুন, আয়াত: ১৬] শরহে আল-শরহুল মুমতি (২/৭৫)]

এ আলোচনার ভিত্তিতে বলা যায়: আপনার নামায সহিহ। যেহেতু তাৎক্ষণিকভাবে সতর ঢেকে নিয়েছেন সুতরাং আপনাকে এ নামায পুনরায় পড়তে হবে না।

আল্লাহই ভাল জানেন।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

What is the proof that women have to cover their feet during prayer for prayer to be accepted?

Answer

Praise be to Allah.

The free woman who has attained the age of majority is obliged to cover her entire body during prayer, apart from her face and hands, because all of her is ‘awrah. If she prays and any part of her ‘awrah becomes uncovered, such as a shin or foot or all or part of her head, then her prayer is invalid, because the Prophet said:

“Allaah will not accept the prayer of a woman who has started to menstruate, except with a khimaar (covering)” (Reported by Ahmad, Abu Dawud, Ibn Maajah and al-Tirmidhi, with a saheeh isnaad)

 

Abu Dawud reported from Umm Salamah that she asked the Prophet about a woman who prayed wearing a dir’ (chemise or upper garment) and a khimaar (head cover), but no izaar (lower garment). He said: “The woman is ‘awrah.”

 

As for the face, the Sunnah is to uncover it during prayer, so long as no non-mahram men are present. According to the majority of scholars, the feet must be covered; some scholars allow uncovering the feet but the majority say the opposite. Abu Dawud reported from Umm Salamah (may Allaah be pleased with her) that she was asked about a woman who prayed in a khimaar and qamees (dress or gown). She said, “There is nothing wrong with it if the dir’ (chemise) covers her feet.” In any case, it is better to cover the feet, to be on the safe side. As far as the hands are concerned, there is more leeway: there is nothing wrong with either covering them or uncovering them, although some scholars think that it is better to cover them. And Allaah is the Source of strength.

 

Source: Fataawa Al-Mar’ah Al-Muslimah, By Shaykh ‘Abd Al-‘Azeez Ibn Baaz, P. 57

 

https://islamqa.info/en/answers/1046/ruling-concerning-women-covering-their-feet-in-prayer