রুকু কিভাবে করতে হবে

দয়াময় মেহেরবান আল্লাহর নামে

রুকুর পদ্ধতি:

রুকুতে রাসূলুল্লাহ (স.) হাঁটুতে হাত রাখতেন এবং তাঁর পিঠ সোজা রাখতেন। অর্থাৎ মাথা থেকে কোমর পর্যন্ত তাঁর পিঠটা মাটির সমান্তরালে এমন সোজা করে রাখতেন, যার উপর পানি রাখলেও ঐ পানি সমান উচ্চতায় স্থির হয়ে থাকবে।(ইবনে মাজাহ: ৮৭২)

নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রুকুতে স্বীয় হাঁটুদ্বয়ের উপর হস্তদ্বয় রাখতেন। বুখারী ও আবু দাউদ

এবং তিনি এজন্য নির্দেশ দিতেন।বুখারী ও মুসলিম।

তিনি ছালাতে ক্ৰটিকারীকেও এ বিষয়ে আদেশ করেন যেমন ইতিপূর্বে উল্লেখ হয়েছে। তিনি অঙ্গুলিগুলোর মাঝে ফাঁক রাখতেন।বুখারী ও আবু দাউদ।

হস্তদ্বয়কে হাঁটুদ্বয়ের উপর স্থাপন করতেন; দুই হাঁটুকে আঁকড়ে ধরার মত করে। সহীহ আবু দাউদে উদ্ধৃত হয়েছে। (৮০৯)

যখন তুমি রুকূ করবে তখন তোমার হস্তদ্বয় উভয় হাঁটুর উপর রাখবে এবং অঙ্গুলগুলোর মাঝে ফাঁক রাখবে অতঃপর এমন সময় পর্যন্ত থামবে যাতে প্রত্যেকটি অঙ্গ স্ব স্ব স্থানে স্থির হতে পারে।ইবনু খুযাইমাহ ও ইবনু হিব্বান স্ব-স্ব ছহীহ গ্রন্থে।

সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট চোর হচ্ছে সেই ব্যক্তি যে সালাতে চুরি করে। সাহাবাগণ জিজ্ঞাসা করলেন হে আল্লাহর রাসূল! সালাতে আবার কিভাবে চুরি করবে? উত্তরে তিনি বললেনঃ সে সালাতের রুকু ও সাজদাগুলো পূর্ণ করেনা।ইবনু আবী শাইবাহ (১/৮৯/২) ত্বাবারানী, হাকিম— এবং তিনি একে সহীহ বলেছেন ও যাহাবী তার সাথে ঐকমত্য পোষণ করেছেন।

রুকু অবস্থায় হাত রাখার নিয়ম:

হাঁটুতে হাতের আঙ্গুলগুলো ফাঁক ফাঁক করে রাখবে।(আবূ দাউদ: ৭৩১)

নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রুকু ও রুকুর পর দাঁড়ানো, সাজদাহ এবং দুই সাজদার মাঝখানে অবস্থানের পরিমাণ বরাবরের কাছাকাছি রাখতেন। বুখারী ও মুসলিম, এটি ইরওয়াউল গালীল’ গ্রন্থে (৩৩১) উদ্ধৃত হয়েছে।

রুকুতে থাকা অবস্থায় দৃষ্টি কোথায় রাখতে হবে, সেটা হাদীস থেকে জানা যায় না।  কিয়াম অবস্থায় সাজদার স্থানে তাকানো হাদীসে এসেছে।

দাঁড়ানো  অবস্থায় রাসূলুল্লাহ (স.)-এর দৃষ্টি থাকত সিজদার স্থানে, আর বসার সময় তিনি ডান হাতের শাহাদাত অঙ্গুলির দিকে নজর রাখতেন (সুনানে নাসাঈ: ১২৭৫, ১১৬০)। উল্লেখ্য, সালাত অবস্থায় বা নামাযে দু’আর সময় রাসূলুল্লাহ (স.) আকাশের দিকে তাকাতে নিষেধ করেছেন, অন্যথায় তাদের দৃষ্টি ছিনিয়ে নেওয়া হবে (মুসলিম: ৪২৮, ৪২৯)

স্কলার্স বলেছেন, যেহেতু কোন স্থান নির্দিষ্ট করা নেই রুকু অবস্থায় , এইক্ষেত্রে দু’পায়ের মধ্যবর্তী বা সিজদার স্থানে তাকালে ইন শা আল্লাহ হবে ।

কাওমার সময়: 

রুকু থেকে উঠার নাম কাওমা। রুকুতে রাসূলুল্লাহ (স.) যে পরিমাণ সময় ব্যয় করতেন রুকু থেকে উঠেও তিনি প্রায় সেই পরিমাণ বা তার কাছাকাছি সময় পরিপূর্ণ সোজা হয়ে (স্থিরভাবে) দাঁড়িয়ে থাকতেন। (বুখারী: ৭৯২, ইফা ৭৫৬, আধুনিক ৭৪৮)।

অনেকেই রুকু থেকে সোজা হয়ে পরিপূর্ণভাবে দাঁড়ানোর আগেই সিজদায় চলে যান। এতে একটি ওয়াজিব বাদ পড়ে যায়। এটি বহুল প্রচলিত একটি মারাত্মক ভুল। অথচ আনাস ইবনে মালেক (রা) একবার নবী (স.)-এর সালাত আদায়ের পদ্ধতি দেখাতে গিয়ে তিনি যখন রুকু থেকে মাথা উঠালেন তখন (এত দীর্ঘ সময়) দাঁড়িয়ে রইলেন যে, অন্যরা মনে করল তিনি (বোধহয় সিজদার কথা) ভুলেই গিয়েছেন। এভাবে ধীরস্থিরভাবে রাসূলুল্লাহ (স.) ও তাঁর সাহাবায়ে কেরাম সালাত আদায় করতেন। রাসূলুল্লাহ (স) ইমাম হয়ে বা একাকী সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে রুকু থেকে মাথা উঠানোর সময় তিনি বলতেন, সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদা “যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রশংসা করে আল্লাহ তার কথা শুনেছেন।’ (বুখারী ৭৮৯, ইফা ৭৫৩)

 

 

 

নামাযে পঠিত বিষয়গুলোর অর্থ ও শিক্ষা—৪ (রুকু)

নামাযে পঠিত বিষয়গুলোর অর্থ ও শিক্ষা—৫ (রুকু থেকে ঊঠার সময়)