দয়াময় মেহেরবান আল্লাহর নামে
যে যে সময়ে নামায নিষিদ্ধ
দিবারাত্রে পাঁচটি সময়ে নামায পড়া নিষিদ্ধ; মহানবী (সাঃ) বলেন,
(১) “আসরের নামাযের পর সূর্য না ডোবা পর্যন্ত আর কোন নামায নেই এবং
(২) ফজরের নামাযের পর সূর্য না ওঠা পর্যন্ত আর কোন নামায নেই।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ১০৪১ নং)
উক্ববা বিন আমের (রাঃ) বলেন, আল্লাহর রসূল (সাঃ) আমাদেরকে তিন সময়ে নামায পড়তে এবং মুর্দা দাফন করতে নিষেধ করতেন;
(৩) ঠিক সূর্য উদয় হওয়ার পর থেকে একটু উঁচু না হওয়া পর্যন্ত,
(৪) সূর্য ঠিক মাথার উপর আসার পর থেকে একটু ঢলে না যাওয়া পর্যন্ত এবং
(৫) সূর্য ডোবার কাছাকাছি হওয়া থেকে ডুবে না যাওয়া পর্যন্ত। (মুসলিম, আহমাদ, মুসনাদ, আবূদাঊদ, সুনান, নাসাঈ, সুনান, ইবনে মাজাহ্, সুনান, মিশকাত ১০৪০ নং) যেহেতু এই সময়গুলিতে সাধারণত: কাফেররা সূর্যের পূজা করে থাকে তাই। (মুসলিম, মিশকাত ১০৪২ নং)
নামায নিষিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে এটি হল সাধারণ নির্দেশ। কিন্তু অন্যান্য হাদীস দ্বারা কিছু সময়ে কিছু নামাযকে ব্যতিক্রম করা হয়েছে। যেমন:-
১। ফরয নামায বাকী থাকলে তা আদায় করার সুযোগ হওয়া মাত্র যে কোন সময়ে সত্বর পড়ে নেওয়া জরুরী। মহানবী (সাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি সূর্য ডোবার পূর্বে আসরের এবং সূর্য ওঠার পূর্বে ফজরের এক রাকআত নামায পেয়ে যায়, সে (যথাসময়ে) নামায পেয়ে যায়।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৬০১নং)
তিনি আরো বলেন, “যে ব্যক্তি সূর্য ডোবার পূর্বে আসরের এক রাকআত নামায পায়, সে যেন (সূর্য ডুবে গেলেও) তার বাকী রাকআত নামায সম্পন্ন করে নেয়। আর যে ব্যক্তি সূর্য ওঠার পূর্বে ফজরের এক রাকআত নামায পায়, সে যেন (সূর্য উঠে গেলেও) তার বাকী রাকআত নামায সম্পন্ন করে নেয়।” (বুখারী, মিশকাত ৬০২নং)
২। অনুরুপ কোন ফরয নামায পড়তে ভুলে গিয়ে থাকলে তা স্মরণ হওয়া মাত্র সত্বর যে কোন সময়ে অথবা ঘুমিয়ে গিয়ে থাকলে জাগার পর উঠে সত্বর যে কোন সময়ে আদায় করা জরুরী। মহানবী (সাঃ) বলেন, “কেউ ঘুমিয়ে গেলে তা তার শৈথিল্য নয়। শৈথিল্য তো জাগ্রত অবস্থাতেই হয়ে থাকে। সুতরাং যখন কেউ কোন নামায পড়তে ভুলে যাবে অথবা ঘুমিয়ে যাবে, তখন তার উচিৎ, তা স্মরণ (বা জাগ্রত) হওয়া মাত্র পড়ে নেওয়া। কারণ, আল্লাহ তাআলা বলেন, “আমাকে স্মরণ করার উদ্দেশ্যে তুমি নামায কায়েম কর।” (মুসলিম, মিশকাত ৬০৪নং, কুরআন মাজীদ ২০/১৪)
৩। দিন-দুপুরে মসজিদে জুমুআহ পড়তে এসে ইচ্ছামত নফল নামায পড়া বিধেয়। এ নামাযও নিষেধের আওতাভুক্ত নয়। (মিশকাত ১০৪৬নং)
৪। ফজরের ফরয নামাযের পূর্বে দু’ রাকআত সুন্নত পড়তে সময় না পেলে ফরযের পর তা পড়া যায়। আল্লাহর রসূল (সাঃ) একদা এক ব্যক্তিকে দেখলেন ফজরের ফরয নামাযের পর দু’ রাক্আত নামায পড়ল। তিনি তাকে বললেন, “ফজরের নামায তো দু’ রাকআত মাত্র!” লোকটি বলল, ‘আমি ফরযের পূর্বে দু’ রাকআত পড়তে পাই নি, এখন সেটা পড়ে নিলাম।’ এ কথা শুনে তিনি নীরব থাকলেন। (অর্থাৎ, মৌনসম্মতি জানালেন।) (আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, মিশকাত ১০৪৪)
৫। কারণ-সাপেক্ষ যাবতীয় নামায যথার্থ কারণ উপস্থিত হওয়া মাত্র যে কোন সময়েই পড়া যায়। যেমন :-
ক- কাবা শরীফের তওয়াফের পর দু’ রাকআত নামায। তওয়াফ শেষ হওয়ার পরেই যে কোন সময়ে ঐ নামায পড়া যায়। মহানবী (সাঃ) বলেন, “হে আব্দে মানাফের বংশধর! দিবারাত্রের যে কোন সময়ে কেউএ গৃহের তওয়াফ করে নামায পড়লে তাকে তোমরা বাধা দিও না।” (আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, নাসাঈ, সুনান, মিশকাত ১০৪৫ নং)
খ- তাহিয়্যাতুল মাসজিদ (মসজিদ-সেলামী) দু’ রাকআত নামায। যে কোনও সময়ে মসজিদ প্রবেশ করে বসার ইচ্ছা করলে বসার পূর্বে এই নামায পড়তে হয়। মহানবী (সাঃ) বলেন, “তোমাদের কেউ মসজিদ প্রবেশ করলে সে যেন দু’ রাকআত নামায পড়ার পূর্বে না বসে।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৭০৪নং)
গ- সূর্য বা চন্দ্র গ্রহণের নামায। মহানবী (সাঃ) বলেন, “সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম। কারো জন্ম বা মৃত্যুর কারণে তাতে গ্রহণ লাগে না। সুতরাং গ্রহণ লাগা দেখলে তোমরা আল্লাহর নিকট দুআ কর, তকবীর পড়, নামায পড় এবং সদকাহ্ কর।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ১৪৮৩ নং)
ঘ- জানাযার নামায। আসর ও ফজর নামাযের পরও জানাযার নামায পড়া যাবে। অবশ্য শেষোক্ত তিন সময়ে এই নামায বৈধ নয়। যেমন পূর্বোক্ত হাদীসে এ কথা বর্ণিত হয়েছে। (আজামে ১৩০-১৩১পৃ:)
সুতরাং সাধারণ নফল নামায উক্ত সময়গুলিতে নিষিদ্ধ। তবে আসরের পর সূর্য হ্লুদবর্ণ না হওয়া পর্যন্ত নিষিদ্ধ নয়। (সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ২৫৪৯ নং)
১। যে ব্যক্তি ওয়াক্ত শেষ হওয়ার পূর্বে এক রাকআত নামায পেয়ে নেবে সে ওয়াক্ত পেয়ে যাবে। অর্থাৎ, তার নামায যথা সময়ে আদায় হয়েছে এবং কাযা হয়নি বলে গণ্য হবে। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৬০১নং) বিধায় যে ব্যক্তি এক রাকআতের চেয়ে কম নামায পাবে, সে সময় পাবে না; অর্থাৎ তার নামায যথাসময়ে আদায় হবে না এবং তা কাযা বলে গণ্য হবে। তবে ইচ্ছাকৃতভাবে বিনা ওজরে শেষ সময়ে নামায পড়া বৈধ নয়।
যদি কোন মহিলা মাগরেবের নামায না পড়ে থাকে এবং এতটা সময় অতিবাহিত হওয়ার পর তার মাসিক শুরু হয়ে যায়, যার মধ্যে এক রাকআত নামায পড়া যেত, তাহলে ঐ মহিলার জন্য ঐ মাগরেবের নামায ফরয। মাসিক থেকে পাক হওয়ার পরে তাকে ঐ নামায কাযা পড়তে হবে। (রাসাইল ফিকহিয়্যাহ্, ইবনে উসাইমীন ২৩-২৪পৃ:)