দয়াময় মেহেরবান আল্লাহর নামে
আলী (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ সা বলেন, “কোনো বান্দা যদি কোনো গোনাহের কর্ম করে সাথে সাথে সুন্দর করে ওযু করে দু রাক’আত সালাত আদায় করে, এরপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায় তবে আল্লাহ তাঁকে অবশ্যই ক্ষমা করবেন।”সুনানুত তিরমিযী ২/২৫৭, নং ৪০৬, ৫/২২৮, নং ৩০০৬, সুনানু আবী দাউদ ২/৮৬, নং ১৫২১, সহীহ ইবনু হিব্বান ২/৩৯০, সহীহ ইবনু খুযাইমা ২/২১৬, সহীহু সুনানি আবী দাউদ ১/২৮৩।
সুতরাং এই দু’রাক’আত সালাত নির্দিষ্ট তখনই যখন কোন গুনাহ করা হয়। সেটা সগীরা বা কবীরা হতে পারে।
সব সময় পড়ার জন্য এই সালাত নয়।
ইস্তেগফার ও তাওবা এক নয়।
মুখে বললেই আস্তাগফিরুল্লাহ তাওবা হয় না। তাওবা হতে হবে গুনাহ থেকে ফিরে এসে ক্ষমা চাওয়ার মাধ্যমে।
ক্ষমা চাওয়া যায় আস্তাগফিরুল্লাহ বলে। আস্তাগফিরুল্লাহ সাথে গুনাহ থেকে দূরে আসতে হবে, তাওবার জন্য।
তাওবা কিভাবে করবো
অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে যে কোন সময়ই নিজের গুনাহের ফলে অনুশোচনায় ব্যথিত হওয়া যে, নিজের উপর যুলুম করে ফেলেছেন, ভবিষ্যতে আর এই কাজ করবেন না ও মহান আল্লাহর আনুগত্যে অটল থাকবেন এই অংগীকার নিয়ে মহান আল্লাহর কাছেই ক্ষমা চাওয়া দিয়েই তাওবা করা হয়ে যায়।
“নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা রাত্রিবেলা তাঁর হস্ত প্রসারিত করেন যাতে দিবাভাগের গোনাহগুলোর তওবা কবুল করতে পারেন। ওদিকে দিনের বেলায় হস্ত প্রসারিত করেন যাতে রাতের গোনাহ তওবা গ্রহণ করতে পারেন।
সহীহ মুসলিম: ২৭৪৭।
আমাদের সমাজে প্রচলিত মৌলভী ডেকে এনে তাওবা পড়ানোর পদ্ধতি সঠিক নয়। তাওবা নিজে নিজেই করবে আত্মোপলব্ধির সাথে। কেউ কাউকে তাওবা করে দিতে পারেন না। পূর্বে উল্লেখিত শর্তসমূহ মেনে চলে অনুতপ্ত হয়ে যে কোন সময়ই তাওবাতুন নাসূহা(উত্তম তাওবা) করতে পারেন।
তবে ক্ষমা প্রার্থনার জন্য বিশেষভাবে যে নফল সালাত আদায় করা হয়, তাকে ‘সালাতুত তাওবাহ’ বলা হয়।
আবুবকর রা. হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহসা.-কে বলতে শুনেছি যে, কোন লোক যদি গোনাহ করে। অতঃপর উঠে দাঁড়ায় ও পবিত্রতা অর্জন করে এবং দু’রাক‘আত সালাত আদায় করে। অতঃপর আল্লাহর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করে। আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন।
আবুদাঊদ, নাসাঈ, ইবনু মাজাহ, বায়হাক্বী, তিরমিযী, হাদীছ হাসান; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৫৯; মিশকাত হা/১৩২৪ ‘ঐচ্ছিক ছালাত’ অনুচ্ছেদ-৩৯; আলে ইমরান ৩/১৩৫।
উক্ত সালাত দুই বা চার রাক‘আত ফরয কিংবা নফল পূর্ণ ওযূ ও সুন্দর রুকূ-সিজদা সহকারে হ’তে হবে। আহমাদ হা/২৭৫৮৬; সহীহাহ হা/৩৩৯৮; সহীহ আত-তারগীব হা/২৩০।
আপনি বলে দিন, (আল্লাহ বলেন) হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের উপর অত্যাচার করেছো, তোমরা আল্লাহ তায়ালার রহমত হতে নিরাশ হয়ো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ (অতীতের) সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করবেন। নিশ্চয় তিনি বড়ই ক্ষমাশীল, দয়ালু।” সূরা আয্ যুমার: ৫৩
তওবার জন্য নিম্নের দো‘আটি বিশেষভাবে সিজদায় ও শেষ বৈঠকে সালাম ফিরানোর পূর্বে পাঠ করা যায়।
আস্তাগফিরুল্লা-হাল্লাযী লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইয়ুল ক্বাইয়ূমু ওয়া আতূবু ইলাইহে।
অনুবাদ : ‘আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি সেই আল্লাহর নিকটে যিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব ও বিশ্ব চরাচরের ধারক এবং তাঁর দিকেই আমি ফিরে যাচ্ছি বা তওবা করছি’।
তিরমিযী, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/২৩৫৩ ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯, ‘ক্ষমা প্রার্থনা ও তওবা করা’ অনুচ্ছেদ-৪।
প্রশ্ন: কারো যদি নির্দিষ্ট কোনো গুনাহের কথা মনে না থাকে তবুওআমভাবে সকল ভুল-ত্রুটির জন্য ক্ষমা পাওয়ার উদ্দেশ্যে প্রতিদিন সকালে এবং রাতে সালাতুত তওবা পড়ে এবং এটাকে অভ্যাসে পরিণত করে তবে কি বিদআত হবে?
উত্তর:
গুনাহ মোচনের জন্য সালাতুত তওবা অত্যন্ত কার্যকরী একটি সালাত। আহলে ইলমগণ এ সালাত পড়ার বৈধতার ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন।
এ মর্মে বর্ণিত হয়েছে একাধিক হাদিস। যেমন:
♦১) আবু বকর রা. বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি:
مَا مِنْ عَبْدٍ يُذْنِبُ ذَنْبًا فَيُحْسِنُ الطُّهُورَ ثُمَّ يَقُومُ فَيُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ يَسْتَغْفِرُ اللَّهَ إِلاَّ غَفَرَ اللَّهُ لَهُ ” . ثُمَّ قَرَأَ هَذِهِ الآيَةَ {وَالَّذِينَ إِذَا فَعَلُوا فَاحِشَةً أَوْ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ ذَكَرُوا اللَّهَ } إِلَى آخِرِ الآيَةِ
“যখন কোনো বান্দা গুনাহ করার পর সুন্দরভাবে উযু করে দাঁড়িয়ে যায় এবং দু’ রাক‘আত সালাত আদায় করে অত:পর আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে তখন নিশ্চয়ই আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন।”
অতঃপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করেন: “এবং যখন তারা কোনো অন্যায় কাজ করে কিংবা নিজেদের উপর অত্যাচার করে আল্লাহকে স্বরণ করে…” আয়াতের শেষ পর্যন্ত।(সূরা আলে ‘ইমরান: ১৩৫)।
[আল্লামা আলবানী সহীহ আবু দাউদে হাদিসটি সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন।]
♦ ২) ইমাম তাবরানী কিতাব আল-কবিরে বিশুদ্ধ সনদে আবুদ্ দারদা রা. হতে একটি হাদিস বর্ণনা করেন, তাতে তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
مَنْ تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ وُضُوءَهُ ثُمَّ قَامَ فَصَلَّى رَكْعَتَيْنِ أَوْ أَرْبَعًا (شك أحد الرواة) يُحْسِنُ فِيهِمَا الذِّكْرَ وَالْخُشُوعَ ، ثُمَّ اسْتَغْفَرَ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ ، غَفَرَ لَهُ
“যে ব্যক্তি সুন্দর ভাবে ওজু করে দাঁড়িয়ে যায় এবং দুই বা চার রাকাত (এক বর্ণনাকারী সংখ্যার ব্যাপারে সন্দিহান) সালাত আদায় করে এবং তাতে সে ভালোভাবে রুকু ও সেজদা করে, তারপর আল্লাহ তা‘আলার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে আল্লাহ তা‘আলা তাকে ক্ষমা করে দেন।”
এটাকেই সালাতুত তওবা বলা হয়।
সুতরাং যে কোনো গুনাহ সংঘটিত হয়ে গেলে আমাদের কর্তব্য হবে, কাল বিলম্ব না করে সুন্দরভাবে ওযু করে একান্ত নিবিষ্টচিত্তে দু বা চার রাকআত সালাত আদায় করে মহান রবের দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করা। তাহলে আশা করা যায়, দয়াময় আল্লাহ আমাদের গুনাহগুলো ক্ষমা করবেন। নিশ্চয় তিনি পরম দয়ালু ও অতিশয় ক্ষমাশীল।
🌀 তবে প্রতিদিন সকালে কিংবা রাতে বা অন্য একটি নির্দিষ্ট সময়ে নিয়মিতভাবে তা আদায় করা ঠিক নয়। কেননা আমাদের পূর্বসূরি তথা সাহাবী ও তাবেঈনের কেউ এমনটি করতেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না। অথচ আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাওয়া ক্ষেত্রে তারা ছিলেন আমাদের চেয়েও অধিক অগ্রগামী।
সুতরাং সালাতুত তওবা আদায় করার জন্য এভাবে নতুন নিয়ম চালু করা হলে তা বিদআতে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কেননা, যখন আপনি প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময়ে এ সালাত আদায় করবেন তখন স্বভাবতই প্রশ্ন সৃষ্টি হবে যে, এটা কি তাহলে নিয়মিত সুন্নত (সুন্নাতে রাতেবা)? নিয়মিত সুন্নত হলে তার দলিল কোথায়? আর যেহেতু নিয়মিত পড়ার দলিল নেই তাই এমনটি করা ঠিক হবে না। বরং যখনই কোনো গুনাহ সংঘটিত হবে তখনই তা পড়া উচিৎ। এটাই সঠিক নিয়ম।
আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আমীন।
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি
(লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।।
Question
Answer
Praise be to Allah.
By the mercy of Allaah towards this ummah, He has opened the gate of repentance to it, and it will not cease until the soul reaches the throat (at death) or the sun rises from the west.
By His Mercy to this ummah, He has prescribed for them an act of worship which is one of the best acts of worship, by means of which the sinner can draw close to his Lord with the hope of his repentance being accepted. This is salaat al-tawbah (the prayer of repentance) and there follow some issues that have to do with this prayer.
1 – The prayer of repentance is prescribed in sharee’ah
The scholars are unanimously agreed that the prayer of repentance is prescribed in sharee’ah. Abu Dawood (1521) narrated that Abu Bakr al-Siddeeq (may Allaah be pleased with him) said: I heard the Messenger of Allaah (peace and blessings of Allaah be upon him) say: “There is no one who commits a sin then purifies himself well and stands and prays two rak’ahs, then asks Allaah for forgiveness, but Allaah will forgive him. Then he recited this verse: ‘And those who, when they have committed Faahishah (illegal sexual intercourse) or wronged themselves with evil, remember Allaah and ask forgiveness for their sins; — and none can forgive sins but Allaah — and do not persist in what (wrong) they have done, while they know’ [Aal ‘Imraan 3:135].” Classed as sahaah by al-Albaani in Saheeh Abi Dawood.
Ahmad (26998) narrated that Abu’l-Darda’ (may Allaah be pleased with him) said: I heard the Messenger of Allaah (peace and blessings of Allaah be upon him) say: “The one who does wudoo’ and does it well, then stands and prays two rak’ahs or four (one of the narrators was uncertain), in which he remembers Allaah and focuses well, then asks Allaah for forgiveness, He will forgive him.” The editor of al-Musnad said: its isnaad is hasan. It was also quoted by al-Albaani in Silsilat al-Ahaadeeth al-Saheehah (3398).
2 – The reason for the prayer of repentance
The reason for the prayer of repentance is if a Muslim falls into sin, whether it is a major or minor sin, he has to repent from it straight away and it is recommended for him to pray these two rak’ahs. And when he repents he should do a righteous deed which is one of the best of deeds, namely prayer. So he may draw close to Allaah by means of this in the hope that He may accept his repentance and forgive his sin.
3 – The time for the prayer of repentance
It is mustahabb to offer this prayer when the Muslim has decided to repent from the sin that he has committed, whether this repentance comes immediately after committing the sin or later on. The sinner must hasten to repent but if he delays it, it will still be accepted, because repentance is accepted so long as one of the following impediments does not occur:
(i)When the soul reaches the throat (at death). The Messenger of Allaah (peace and blessings of Allaah be upon him) said: “Allaah will accept the repentance of His slave so long as the death rattle has not yet begun.” Classed as hasan by al-Albaani in Saheeh al-Tirmidhi (3537).
(ii)When the sun rises from the west. The Prophet (peace and blessings of Allaah be upon him) said: “Whoever repents before the sun rises from the west, Allaah will accept his repentance.” Narrated by Muslim (2703).
This prayer is prescribed at all times including times when prayer is disallowed (such as after ‘Asr prayer), because it is one of the prayers that are done for a reason, so it is prescribed when the reason for it is present.
Shaykh al-Islam Ibn Taymiyah said: Prayers which are done for a reason, such as the prostration of recitation, greeting the mosque, the eclipse prayer, prayer immediately after purifying oneself, as mentioned in the hadeeth of Bilaal, and istikhaarah prayer should not be delayed if the reason comes up at a time when prayer is disallowed, because delaying them may cause one to miss them, such as if the one who is praying istikhaarah may miss the thing concerning which he is seeking guidance if he delays the prayer. The same applies to the prayer of repentance. If a person commits a sin, then it is obligatory to repent straight away, and it is recommended for him to pray two rak’ahs, then repent, as it says in the hadeeth of Abu Bakr al-Siddeeq. End quote from Majmoo’ al-Fataawa (23/215).
4 –Description of the prayer of repentance
The prayer of repentance is two rak’ahs, as it says in the hadeeth of Abu Bakr al-Siddeeq (may Allaah be pleased with him).
It is prescribed for the one who is repenting to pray alone, because it is one of the naafil prayers that it is not prescribed to offer in congregation. After that it is prescribed to ask Allaah for forgiveness, because of the hadeeth of Abu Bakr (may Allaah be pleased with him).
There is no report from the Prophet (peace and blessings of Allaah be upon him) to say that it is mustahabb to recite any particular soorahs in these two rak’ahs, so the worshipper may recite whatever he wants.
It is mustahabb for the penitent to strive hard in doing righteous deeds as well as offering this prayer, because Allaah says (interpretation of the meaning):
“And verily, I am indeed forgiving to him who repents, believes (in My Oneness, and associates none in worship with Me) and does righteous good deeds, and then remains constant in doing them (till his death)”
[Ta-Ha 20:82]
Among the best of righteous deeds that the penitent can do is giving charity, for charity is one of the greatest means of expiating sin. Allaah says (interpretation of the meaning):
“If you disclose your Sadaqaat (almsgiving), it is well; but if you conceal them and give them to the poor, that is better for you. (Allaah) will expiate you some of your sins”
[al-Baqarah 2:271]
It is proven that Ka’b ibn Maalik (may Allaah be pleased with him) said, when Allaah accepted his repentance: O Messenger of Allaah, as part of my repentance I shall give up my wealth as charity for Allaah and His Messenger. The Messenger of Allaah (peace and blessings of Allaah be upon him) said: “Keep some of your wealth, for it is better for you.” He said: Then I shall keep my share in Khaybar. Agreed upon.
To sum up:
1-This prayer is proven from the Prophet (peace and blessings of Allaah be upon him).
2-It is prescribed when the Muslim repents from any sin, whether it is a major sin or a minor sin, and whether this repentance comes immediately after committing the sin or after some time has passed.
3-This prayer may be offered at any time, including times when prayer is disallowed.
4-It is mustahabb for the penitent to do some good deeds along with this prayer, such as charity etc.
May Allaah send blessings and peace upon our Prophet Muhammad and upon all his family and companions.
Islam QA