আসসালামু’আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ
পর্দা বা হিজাব সেই বিধি-ব্যবস্থা ও চেতনা যার মাধ্যমে ঘর থেকে শুরু করে পথ-প্রতিষ্ঠান-সমাবেশ সহ সমাজের সকল ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের নিজস্বতা সংরক্ষণ ও সম্মান বজায় রেখে উভয়ের মধ্যে অপ্রয়োজনীয়, নিয়ন্ত্রণহীন কথাবার্তা, দর্শন, দৃষ্টিবিনিময়, সৌন্দর্য প্রদর্শন ও সংস্পর্শ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ করা হয়। মহান আল্লাহকে আনুষ্ঠানিক ভাবে স্মরণের উদ্দেশ্যে নামাজ, রোজা, যাকাত ইত্যাদি ফরয ইবাদাত নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়। কিন্তু ঈমান রক্ষা ও হিজাব পালন নারী ও পুরুষের জন্য সার্বক্ষণিক ফরয ইবাদাত যার জন্য প্রতিটি মুহূর্তেই সতর্ক থাকতে হয়। একটি সমাজে নানা রকমের মানুষ বসবাস করে। ভারসাম্যপূর্ণ সমাজ ও নৈতিক জীবন যাপনের জন্য মহান আল্লাহ তা’আলা ইসলামকে সার্বজনীন জীবন বিধান হিসাবে অনুসরণযোগ্য করে পাঠিয়েছেন যা প্রতি যুগের জন্য উপযোগী। একমাত্র মহান আল্লাহই ভবিষ্যতকেও জানেন, মানুষকে যে জ্ঞান মেধা দিয়েছেন সেটাকে কাজে লাগিয়ে সে কতদূর প্রযুক্তিগত উন্নয়ন করবে তাও জানেন। মহান আল্লাহই কিয়ামত পর্যন্ত হিজাবের বিধান দিয়ে দিয়েছেন।
মহান আল্লাহ এই পৃথিবীকে নর ও নারীকে জোড়ায় জোড়ায় ও একে অপরের পরিপূরক হিসেবে পাঠিয়েছেন। সমাজ, পরিবার পরিবেশকে শান্তি নিরাপদ সুখময় রাখার জন্য কিছু নির্দেশনা দিয়ে দিয়েছেন।এই নির্দেশনা হাঁ বাচক ও না বাচক। মহান রবকে একমাত্র শুধুমাত্র নিজের প্রভু হিসেবে মেনে নেয়ার প্রকাশ হলো তাঁরই আনুগত্যে থাকা এবং এর অর্থই হলো সকল হাঁ নির্দেশনা যথাসাধ্য মেনে চলা ও সকল না সূচক অবশ্যই দূরে রাখা।
আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোন কাজের আদেশ করলে কোন ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন ক্ষমতা নেই যে, আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আদেশ অমান্য করে সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হয়।সূরা আল-আহযাব: ৩৬
সাহাবী আজমাঈনদের জীবনের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় তাঁরা আখিরাতের ব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাস এবং মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ভালবাসার মাধ্যমে আল্লাহ সুবহানা ওয়াতা’লা ও রাসূল সা: এর প্রতি আনুগত্যের উত্তম উদাহরণ রেখে গিয়েছেন। যার ফলে এই দুনিয়াতে থাকা অবস্থায়ই মহান আল্লাহ তা’লা তাঁদের জান্নাত প্রদানের ঘোষণা দিয়েছিলেন। সুবহানআল্লাহ। সাহাবী রা:গণ কিন্তু এত ব্যাখ্যা জানতে চাননি। যখনই কোন বিধান নাযিল হয়েছে তাঁরা “আমরা শুনলাম এবং মানলাম” এই মনোভাব নিয়ে আমল করে গিয়েছেন। মহান আল্লাহ তা’লা বলেছেন:
মুমিনদের বক্তব্য কেবল এ কথাই – যখন তাদের মধ্যে ফয়সালা করার জন্যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে তাদেরকে আহবান করা হয়, তখন তারা বলে: আমরা শুনলাম ও আদেশ মান্য করলাম। তারাই সফলকাম। যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে আল্লাহকে ভয় করে ও তাঁর শাস্তি থেকে বেঁচে থাকে তারাই কৃতকার্য। সূরা আন-নূর: ৫১-৫২
আর যখন আপনি তাদেরকে বলবেন, আল্লাহর নির্দেশের দিকে এসো – যা তিনি রাসূলের প্রতি নাযিল করেছেন, তখন আপনি মুনাফিকদেরকে দেখবেন, ওরা আপনার কাছ থেকে সম্পূর্ণভাবে সরে যাচ্ছে। সূরা আন-নিসা: ৬১
না, হে মুহাম্মাদ! তোমার রবের কসম, এরা কখনো মু’মিন হতে পারে না যতক্ষণ এদের পারস্পরিক মতবিরোধের ক্ষেত্রে এরা তোমাকে ফায়সালাকারী হিসেবে মেনে না নেবে, তারপর তুমি যা ফায়সালা করবে তার ব্যাপারে নিজেদের মনের মধ্য কোনো প্রকার কুণ্ঠা ও দ্বিধার স্থান দেবে না, বরং সর্বান্তকরণে মেনে নেবে। সূরা আন-নিসা: ৬৫
আজ একটু ব্যতিক্রমভাবে পুরুষের পর্দা নিয়েই কথা বলতে কলম হাতে নিলাম।
আজ সমাজে বিশেষ করে বাংগালী সমাজের একটি স্পষ্ট চিত্র দেখা যায় তা হলো স্ত্রী কর্তৃক স্বা্মীকে সত্যের শিক্ষা প্রদান অনেকটাই যেন কঠিন ও অসম্ভব একটি বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। আর তাই ভাইদের বলবো নিজেকে মুমিনের মানে নিতে হলে অবশ্যই রাসূল স.কে অনুসরন করতে হবে। রাসূল স. স্ত্রীদের পরামর্শ গ্রহন করেছেন। কুর’আনে মুমিনের বৈশিষ্ট্য বলতে “পরামর্শ করা” উল্লেখ এসেছে।
আল্লাহর কাছে যা আছে তা যেমন উত্তম তেমনি চিরস্থায়ী৷ তা সেই সব লোকের জন্য যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের রবের উপর নির্ভর করে, যারা বড় বড় গোনাহ এবং লজ্জাহীনতার কাজ থেকে বিরত থাকে এবং ক্রোধ উৎপত্তি হলে ক্ষমা করে,যারা তাদের রবের নির্দেশ মেনে চলে, নামায কায়েম করে এবং নিজেদের সব কাজ পরস্পর পরামর্শের ভিত্তিতে চালায়, আমি তাদের যা রিযিক দিয়েছি তা থেকে খরচ করে, শূরাঃ৩৬-৩৮
আর সম্মানতো মহান আল্লাহর দান, যেই নারী(আপনার স্ত্রী) রবের খুব পছন্দনীয় ও প্রিয় হয়ে থাকলে সেখানে আপনি তাকে হেয় করে থাকলে সেটা অত্যন্ত কঠিন অবমূল্যায়ন করা হয় রবের পছন্দকে। সুতরাং এইক্ষেত্রে সচেতন থাকা প্রয়োজন। যাক এই বিষয়টি আলাদা আলোচনা রাখে।
আমাদের সমাজের পরিবর্তন আনতে হলে আমাদের ছেলে সন্তান/পিতা/ ভাইদের শেখাতে হবে। একজন মা হিসেবে তুমি অনেক সহজে ছেলেকে সঠিক জ্ঞান দিতে পারবে যা স্ত্রী হয়ে স্বামীকে(বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই)দিতে পারছো না।
এবার আসি মূল আলোচনায়।
সমাজের যে সকল পুরুষেরা ইসলামের বিধান মানতে চান না তাদের নিয়ে কথা নয়, এখানে তাদের সম্পর্কেই বলা হচ্ছে যারা ইসলামের অনুশীলন করতে চান সেই সকল পুরুষদের জন্য।
সমাজে পর্দা বিধানের ইসলামের বাস্তব অনুশীলন পুরুষের মাঝে দেখা যায় না এর কারন অনেকগুলোর মাঝে কয়েকটি তুলে ধরলাম—
১। পর্দা সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান নাই
২। পর্দা শুধুমাত্র নারীর জন্য-চিন্তায় লালন করা
৩। ঈমানী দূর্বলতা
৪। মুনাফিকী নীতি অবলম্বন করা ( যখন যেমন তেমন ভূমিকা রাখা)
৫। পর্দার ধরন সম্পর্কে বুঝতে অক্ষম
৬। পাছে লোকে কিছু বলে এই তাড়নায় নড়বড়ে থাকা
এইক্ষেত্রে মনে রাখা প্রয়োজন মহান রবের বিধান সুস্পষ্ট। কবরে নারী পুরুষ সকলকেই আলাদা ভাবেই যেতে হবে ও বিচারের ময়দানে দাড়াতে হবে একাকীই।
মহান আল্লাহ জানিয়েছেন–
যারা আমার আয়াতগুলো মেনে নিতে অস্বীকার করেছে তাদেরকে আমি নিশ্চিতভাবেই আগুনের মধ্যে নিক্ষেপ করবো৷ আর যখন তাদের চামড়া পুড়ে গলে যাবে তখন তার জায়গায় আমি অন্য চামড়া তৈরী করে দেবো, যাতে তারা খুব ভালোভাবে আযাবের স্বাদ গ্রহণ করতে পারে৷ আল্লাহ বিপুল ক্ষমতার অধিকারী এবং তিনি নিজের ফায়সালাগুলো বাস্তবায়নের কৌশল খুব ভালোভাবেই জানেন৷সূরা নিসাঃ৫৬
নবী সা: বলেছেন, আমার উম্মতের সকলেই জান্নাতে প্রবেশ করবে, তবে যারা অস্বীকার করেছে (তারা ব্যতিত)। (উপস্থিত সাহাবাগণ) জিজ্ঞেস করলেন, কে অস্বীকার করে? তিনি বললেন, যে ব্যক্তি আমার (দ্বীনের) আনুগত্য করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর যে ব্যক্তি আমাকে অমান্য করবে সে-ই অস্বীকার করে। সহীহ বুখারী: ৬৭৭১
তাহলে কি তোমরা কিতাবের একটি অংশের ওপর ঈমান আনছো এবং অন্য অংশের সাথে কুফরী করছো? তারপর তোমাদের মধ্য থেকে যারাই এমনটি করবে তাদের শাস্তি এ ছাড়া আর কি হতে পারে যে, দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছিত ও পর্যুদস্ত হবে এবং আখেরাতে তাদেরকে কঠিনতম শাস্তির দিকে ফিরিয়ে দেয়া হবে। তোমাদের কর্মকান্ড থেকে আল্লাহ বেখবর নন৷সূরা বাকারাঃ৮৫
হে শ্রদ্ধেয় পুরুষ-
মহান আল্লাহ সর্বপ্রথম পর্দার আয়াত কুর’আনে নাযিল করেছেন পুরুষকে উল্লেখ করে।
হে নবী! মুমিন পুরুষদের বলে দিন তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনমিত রাখে এবং যৌন পবিত্রতা রক্ষা করে চলে। এটাই তাদের জন্য পবিত্রতম পন্থা। নিশ্চয়ই তারা যা কিছু করে আল্লাহ তা অবহিত। (সূরা আননূর : ৩০)।
আমি হাদীসের উদাহরনপড়ে যাচ্ছি, মহান আল্লাহ এই আয়াতে যা বলেছেন,তা কি আমাদের পুরুষ মহল আমল করে থাকেন?
যদি করেন তাহলে কিভাবে একজন পুরুষ নিজ স্ত্রী ও মাহরাম নারী ছাড়া অন্য নারীর( সে অফিসের কলিগ বা ক্লাশমেট বা প্রতিবেশী নারী বা পথিক নারী বা নিজ গায়ের মাহরাম নারী আত্মীয়া) সাথে তাকিয়ে তাকিয়ে গল্প গুজব, আড্ডা, হাস্যরসে মেতে থাকতে পারে? কিভাবে এই সকল নারীদের সাথে পাশাপাশী বসে খেতে খেতে ফটোসেশনে যেতে পারে? যেখানে নিজ চোখের বেগানা নারীর দিকে তাকানোকেই নিষেধ করে দেয়া হয়েছে,সেখানে কিভাবে সেই নারীর হাত ধরা জায়েয হতে পারে?
অনেক পুরুষ আছেন যারা সুন্নাতী দাঁড়ী, লেবাস আমল করেন ও নিজ পরিবারে নারীদের পর্দার বিধানে শক্ত ভূমিকা রাখেন অথচ নিজে বেগানা নারীর সাথে গল্পে আড্ডায় ছবি তোলায় কোন গুনাহ মনে করেন না-এটা কিভাবে সম্ভব যে, কুর’আনের জ্ঞান নিজে আমল না করে শুধু অন্যের বেলায় হুকুমদারি করে থাকেন? একটু কি ভয় হয় না যে, এর ফলে নিজ অবস্থান মুনাফিকীর পরিনতির দিকে যাচ্ছে, আবার মহান রবের অতিক্রোধ উদ্রেককারী কাজ করে নিজ পরিনতি ভয়াবহতার দিকে নিয়ে যাচ্ছেন!নিজে জাহান্নামের দিকে যেয়ে পরিবারকে জান্নাতের দিকে ডাকার কথা আসে নি, এসেছে নিজে আগে জাহান্নাম থেকে দূরে থাকার প্রচেষ্টা চালাতে তারপর পরিবার। আর এটাতো বোকা ও অধমের কাজ যে নিজেকে জাহান্নামের দিকে ঠেলে দেয়া! মহান আল্লাহ আমাদের সকল পুরুষ ঈমানদার ভাইদের হেফাজত করুন।
এবার আসি হাদীসের আলোকে নির্দেশনা—
জারির ইবনে আবদিল্লাহ বাজালি (রা.) থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে কোনো নারীর প্রতি হঠাৎ দৃষ্টি পড়ে যাওয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, সাথে সাথেই দৃষ্টি সরিয়ে নেবে (সহিহ মুসলিম)।
বুরাইদা (রা.) থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) আলী (রা.)-কে বললেন, হে আলী! দৃষ্টির ওপর দৃষ্টি ফেলো না। হঠাৎ যে দৃষ্টি পড়ে ওটা তোমার ক্ষমার্হ; কিন্তু পরবর্তী দৃষ্টি তোমার জন্য ক্ষমাহীন পাপ (হাদিসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম আবু দাউদ (রহ.)।
বিশ্বনবী রাসূলে আকরাম (সা.) বলেন- তোমরা (মুমিনরা) নবীপত্নীদের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা পর্দার (পর্দার বিধান) তোমাদের এবং তাদের অন্তরসমূহের জন্য পবিত্র থাকার উত্তম পন্থা (সূরা আহযাব: ৫৩)।
তিনি আর বলেছেন, “যখনই কোন পুরুষ কোন মহিলার সাথে নির্জনতা অবলম্বন করে, তখনই শয়তান তাদের তৃতীয় সাথী (কোটনা)হয়।” ৪৯৫ (তিরমিযী, সহীহ তিরমিযী ৯৩৪ নং)
কোনো (পর) পুরুষ যেন কোনো মহিলার সাথে নির্জনে মিলিত না হয়। তবে মাহরাম ব্যক্তির (ব্যাপারটি) স্বতন্ত্র। আর কোনো মহিলা যেন মাহরাম ছাড়া একাকী তিন দিনের পথ (৪৮ মাইল) পথ ভ্রমণ না করে (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)।
হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসুল (সাঃ) বলেনঃ “সাবধান! তোমরা পথের উপর বসা থেকে বিরত থাকো। সাহাবীগণ বললেন, কিন্তু আমাদের জরুরী কথাবার্তা চালানোর জন্য এই বসার জায়গাগুলোকে পরিহার করার যে কোন বিকল্প নেই। রাসুল (সাঃ) বললেন, যদি তোমাদের সে জায়গাগুলোতে বসতেই হয়, তবে পথের হক আদায় কর। তাঁরা জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! পথের হক কি? তিনি বললেন, সেগুলো হচ্ছে- দৃষ্টিকে সংযত/নত করা, মানুষের ক্ষতি করা থেকে বিরত থাকা, সালামের জবাব দেয়া, ভাল কাজের আদেশ দেয়া এবং মন্দ কাজের নিষেধ করা”। (বুখারী, হাদীসঃ ২৪৬৫/ অধ্যায়-৪৬, হাদীস-২৬)
“কোন পুরুষ যেন কোন বেগানা নারীর সঙ্গে তার সাথে এগানা পুরুষ ছাড়া অবশ্যই নির্জনতা অবলম্বন না করে। আর মাহরাম ব্যতিরেকে কোন নারী যেন সফর না করে।” এক ব্যক্তি আবেদন করল, ‘হে আল্লাহ্র রাসুল! আমার স্ত্রী হজ্জ পালন করতে বের হয়েছে। আর আমি অমুক অমুক যুদ্ধে নাম লিখিয়েছি।’ তিনি বলেন, “যাও, তুমি তোমার স্ত্রীর সঙ্গে হজ্জ কর।” ৪৯৪ (বুখারী, মুসলিম ৩৩৩৬ নং)
স্থানীয় কোথাও গেলে সঙ্গে যদি অন্য কোন সাবালক ছেলে, পুরুষ বা মহিলা থাকে, তাহলে যাওয়া চলে। কিন্তু সফর হলে সঙ্গে মাহরাম ছাড়া মোটেই যাওয়া বৈধ নয়; যদিও সাথে অন্য মহিলা বা পুরুষ থাকে। ৪৯৬ (ইবনে বায, ইবনে উষাইমীন)
এবার আসি করমর্দন করার ব্যপারে ইসলাম কি বলে—
আমাদের সমাজে অনেকেই এই বিষয়টা অনেক হালকা করে দেখেন,অথচ কঠিন হাদীস রয়েছে এই ব্যপারে।
যার সাথে পুরুষের কোন কালে বিবাহ বৈধ, তার সাথে মুসাফাহাহ করা অথবা তার চেহারা দেখা বৈধ নয়। কাপড় বা কভারের উপরেও তার হাত ধরে মুসাফাহাহ হারাম। মহিলা বুড়ি অথবা পুরুষ বুড়ো হলেও আপোষের মুসাফাহাহ নাজায়েয। বায়াআতের সময় মহানবী (সঃ) কোন মহিলার হাত স্পর্শ করতেন না, ৫০০ (আহমাদ ২৬৪৬৬, বুখারী ৫২৮৮, মুসলিম ১৮৬৬, নাসাঈ ৪১৮১, ইবনে মাজাহ ২৮৭৪)
পরন্ত তিনি বলেছেন, “যে মহিলা (স্পর্শ করা) হালাল নয়, তাকে স্পর্শ করার চেয়ে তোমাদের কারো মাথায় লোহার সুচ গেঁথে যাওয়া অনেক ভাল।” ৫০১ (ত্বাবারানী, শাহীহুল জামে ৫০৪৫ নং)
বলা বাহুল্য, মহিলার জন্য তার মামাতো, খালাতো, চাচাতো ফুফাতো ভাই, ফোফা, খালু, স্বামীর ভাই (দেওর), বুনাই বা নন্দাইয়ের সাথে মুসাফাহাহ করা বৈধ নয়।
মহান আল্লাহ বলেন, “হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং নিজেদের পরিবার পরিজনকে রক্ষা কর অগ্নি থেকে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যাতে নিয়োজিত আছে নির্মম হৃদয়, কঠোর স্বভাব ফিরিশতাগণ, যারা আল্লাহ যা তাঁদেরকে নির্দেশ করেন, তা অমান্য করে না এবং তারা যা করতে আদিষ্ট হয়, তাই করে।” (তাহরীমঃ ৬)
গোনাহর বিষয়ে কারো অনুগত্য বৈধ নয়। সেটা পিতা মাতা স্বামী-স্ত্রী,সন্তান,সমাজ রাষ্ট্র যা-ই হোক.
মহানবী (সঃ) বলেন, “স্রষ্টার অবাধ্যতা করে কোন সৃষ্টির বাধ্য হওয়া বৈধ নয়।”৫০৯ (আহমাদ, হাকেম, সঃ জামে ৭৫২০ নং)
যারা চায় মু’মিনদের সমাজে অশ্লীলতার প্রসার ঘটুক তারা দুনিয়ায় ও আখেরাতে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি ভোগ করবে। আল্লাহ জানেন এবং তোমরা জানো না। সূরা আন-নূর: ১৯
যারা পরিকল্পিতভাবে সমাজে বিভিন্ন মিডিয়াতে/হলে/হোটেলে/মোবাইলে নোংরা অশ্লীলতার রোগ-জীবাণু ছড়িয়ে যাচ্ছে তাদের সাবধান করে দিয়েছেন আল্লাহ তা’আলা। এক্ষেত্রে মুমিন নারী ও পুরুষের চোখকে সংযম করে চলতে হবে। মনে রাখতে হবে, এই জীবন ক্ষণস্থায়ী। মহান আল্লাহ তা’আলা আমাদের পরীক্ষা করছেন অর্থাৎ আমরা পরীক্ষার হলে আছি, সময় অনিশ্চিত, যে কোন মুহূর্তেই প্রত্যেককেই নিজ নিজ খাতা নিয়ে হাযির হয়ে যেতে হবে চিরস্থায়ী ফলাফল লাভের জীবনে।
রাসূল(সঃ) বলেছেন-মহিলারা হল পর্দায় থাকার বস্তু। সুতরাং তাঁরা যখন (পর্দা উপেক্ষা করে) বাইরে বের হয়ে আসে, তখন শয়তান তাদেরকে (অন্য পুরুষের চোখে) সুসজ্জিত করে দেখায়। তিরমিযী: ১১৭৩
মহান আল্লাহ তা’আলা বলেছেন:
আর সেই সময়ের কথাও একটু চিন্তা করো যখন আল্লাহর এসব দুশমনকে দোযখের দিকে যাওয়ার জন্য পরিবেষ্টিত করা হবে। তাদের অগ্রবর্তীদেরকে পশ্চাদবর্তীদের আগমন করা পর্যন্ত থামিয়ে রাখা হবে। পরে যখন সবাই সেখানে পৌঁছে যাবে তখন তাদের কান, তাদের চোখ এবং তাদের দেহের চামড়া তারা পৃথিবীতে কি করতো সে সম্পর্কে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে। তারা তাদের শরীরের চামড়াসমূহকে বলবে, তোমরা আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলে কেন? তারা জবাব দেবে, সেই আল্লাহই আমাদের বাকশক্তি দান করেছেন যিনি প্রতিটি বস্তুকে বাকশক্তি দান করেছেন। তিনিই তোমাদেরকে প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলেন। আর এখন তোমাদেরকে তাঁর কাছেই ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পৃথিবীতে অপরাধ করার সময় তোমরা গোপন করতে তখন তোমরা চিন্তাও করোনি যে, তোমাদের নিজেদের কান, তোমাদের চোখ এবং তোমাদের দেহের চামড়া কোন সময় তোমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে। তোমরা তো বরং মনে করেছিলে, তোমাদের বহু সংখ্যক কাজ-কর্মের খবর আল্লাহও রাখেন না। সূরা হামীম আস-সাজদাহ: ২০-২১
রাসূল সা: বলেছেন: যে মুসলমানের দৃষ্টি কোন মেয়ের সৌন্দর্যের উপর পড়ে এবং সে দৃষ্টি সরিয়ে নেয়, এ অবস্থায় আল্লাহ তার ইবাদাতে বিশেষ স্বাদ সৃষ্টি করে দেন। মুসনাদে আহমাদ
রাসূল সা: বলেছেন, আমি আমার পরে এমন কোন মারাত্মক ফিৎনাহ রেখে যাইনি যা পুরুষের জন্যে অধিকতর ক্ষতিকর হতে পারে নারীদের ফিৎনাহ অপেক্ষা। অর্থাৎ আমার পরে সবচেয়ে মারাত্মক ও ক্ষতিকর ফিৎনাই হচ্ছে নারীদের থেকে। মুসলিম: ৬৭৪৮
অনেক পুরুষ দেখা যায় যারা পর্দা করে মুখ ঢেকে চলে সেই সব নারীদের সাথে প্রয়োজনে কথা বললে দৃষ্টি নত রাখে আবার এই ব্যক্তিটিই মুখের সৌন্দর্য খোলা রেখে চলা নারীদের সাথে হাসি-ঠাট্টা করে যায় অপ্রয়োজনে। বলতে হবে পুরোপুরি পর্দা যারা মেনে চলেন সেই নারীদের প্রতি এটা আল্লাহ প্রদত্ত সম্মান। এই ধরনের পুরুষদের জন্য রয়েছে সাবধানবানী। মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন:
এসব লোকদের সেদিন সম্পর্কে সাবধান করে দাও যা সন্নিকটবর্তী হয়েছে। যেদিন কলিজা মুখের মধ্যে এসে যাবে আর সব মানুষ ভীত সন্ত্রস্ত ও দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকবে। জালেমদের জন্য না থাকবে কোন অন্তরঙ্গ বন্ধু, না থাকবে কোন গ্রহণযোগ্য শাফায়াতকারী। আল্লাহ চোখের চুরি ও মনের গোপন কথা পর্যন্ত জানেন। সূরা মু’মিন: ১৮-১৯
রাসূল(সঃ) বলেছেন, নিশ্চয়ই এই দুনিয়াটা একটা মধুর চাকচিক্যময় বস্তু এবং মহান আল্লাহ তোমাদেরকে দুনিয়ায় স্থলাভিষিক্ত করে দিয়েছেন। তিনি অবলোকন করছেন, তোমরা কি ভাবে কাজকর্ম করছো। অতএব তোমরা দুনিয়া থেকে সাবধান থাক। এবং নারী জাতি থেকে সাবধান থাক। মনে রেখ, বনী ইসরাইলের প্রথম ফিৎনাহ ছিল নারীদের সম্পর্কিত। মুসলিম: ৬৭৫১
নারীকে যেমন শরীয়তের পর্দা মেনে চলে ফিতনার বিষয় থেকে দূরে থাকতে হবে তেমনি পুরুষকেও শরীয়তের পর্দা মেনে দৃষ্টি সংযত রেখে ফিতনাহ থেকে দূরে হেফাজত অবস্থানে থাকতে হবে।
তবে পুরুষের দৃষ্টি দেয়ার ব্যপারে যতটা শক্ত করে বলা হয়েছে নারীর বেলায় একটু কম শক্ত করে বলা আছে। প্রকৃতিগতভাবেই এই পার্থক্য। পুরুষ যত সহজে একজন নারীকে দেখলেই আবেগাপ্লুত হতে পারে নারী ততো সহজেই তা হয় না। তাই দেখা যায় বুখারী হাদীসে এসেছে:
হযরত আয়েশা(রা) বলেন, “আমি দেখেছি, রাসূল সা: আমার বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে তাঁর চাদর দিয়ে আমাকে পর্দা করছিলেন এবং আমি ইথিওপীয়-হাবশীদের দিকে তাকিয়ে ছিলাম, তারা মসজিদের মধ্যে তাঁদের সড়কি-বল্লম নিয়ে খেলা করছিল। অতঃপর যতক্ষণ না আমি নিজে ক্লান্ত হতাম ততক্ষন তিঁনি আমার জন্য এভাবেই দাঁড়িয়ে থাকতেন। কাজেই তোমরা অল্পবয়স্কা খেলাধূলা-প্রিয় মেয়ের মর্যাদা-গুরুত্ব অনুধাবন করবে। বুখারী: ৫/২০০৬
এই ঘটনাটি ঘটেছিল ৭ম হিজরীতে ইথিওপিয়া থেকে মদিনায় মুসলিম প্রতিনিধি দলের আগমনের পর যখন হযরত আয়েশা(রাঃ) এর বয়স ছিল ১৬ বছর।
আবার আরেকটি ঘটনায় দেখা যায়- হযরত উম্মে সালমা(রা) ও হযরত উম্মে মাইমূনাহ(রা) রাসূল(সঃ)এর কাছে বসেছিলেন। এমন সময় হযরত ইবনে উম্মে মাকতুম (রাঃ) এসে গেলেন। নবী(সঃ) উভয় স্ত্রীকে বললেন, তার থেকে পর্দা করো। স্ত্রীরা বললেন, তিনি কি অন্ধ নন? তিনি বললেন, “তোমরা দুজনও কি অন্ধ? তোমরা কি তাকে দেখতে পাচ্ছো না?” আবু দাউদ, তিরমিযী
দৃষ্টি হলো হৃদয়ের পরিচালক, তার সংবাদবাহক ও গোয়েন্দা।
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ(রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী(সঃ) আল্লাহর উক্তি বর্ণনা করেছেন- “দৃষ্টি হচ্ছে ইবলিসের বিষাক্ত তীরগুলোর মধ্য থেকে একটি তীর, যে ব্যক্তি আমাকে ভয় করে সে তা ত্যাগ করবে আমি তার বদলে তাকে এমন ঈমান দান করবো যার মিষ্টতা সে নিজের হৃদয়ে অনুভব করবে”। তাবারানী
নিষিদ্ধ দৃশ্যাবলী থেকে চোখকে অবনমিত রাখলে- যেমন নারী ও শ্মশ্রুবিহীন সুদর্শন পুরুষের দিকে নজর দেয়া থেকে চোখকে অবনমিত রাখলে তিন প্রকারের অতি মর্যাদাপূর্ণ ফায়দা পাওয়া যায়:
১। ঈমানের সুখ-স্বাদ আস্বাদন করা।
২। আত্মিক নূর ও অন্তর্দৃষ্টির আলোর অধিকারী হওয়া।
৩। আত্মিক শক্তি, দৃঢ়তা ও সাহসিকতা অর্জন।
আল্লাহ তা’আলা তার মধ্যে যুক্তি-প্রমান উপস্থাপনের যোগ্যতা প্রদানের সাথে সাথে দৃষ্টি ক্ষমতা দান করেন। কারণ যে ব্যক্তি তার নফসের বিপরীত কাজ করে শয়তান তার ছায়া থেকে বেরিয়ে পড়ে। এ কারনে কু-প্রবৃত্তির অনুসারীরা আত্মিক লাঞ্ছনা, অপমান ও দূর্বলতায় ভোগে। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন:
অথচ সম্মান ও মর্যাদা তো কেবল আল্লাহ, তাঁর রসূল ও মু’মিনদের জন্য। কিন্তু এসব মুনাফিক তা জানে না। সুরা মুনাফিকুন: ৮