আসসালামু’আলাইকুম
দয়াময় মেহেরবান আল্লাহর নামে
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ তাআলা অজস্র বৈশিষ্ট্য আর মর্যাদা এবং গুণ ও সৌন্দর্যে ভূষিত করেছেন। তার নাম ও সুনামকে করেছেন সমুন্নত। বলেছেন-
ورفعنا لك ذكرك ورفعنا لك ذكرك
অর্থাৎ আর হে নবী আমি কি আপনার নামকে বুলন্দ করিনি? (সূরা আলাম নাশরাহ : ৪)
আর তাই দেখা যায় আজ প্রতি আযানে রাসূল স এর নাম উচ্চারিত হয়, আযানের পর দরুদ পাঠ করা হয়। প্রতি সালাতের শেষ জলসায় দরুদ পাঠ করা সুন্নাত।
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
“আর রাসূল তোমাদেরকে যা দেন তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা থেকে বারণ করেন তা থেকে তোমরা বিরত থাক।” [সূরা হাশর, ৭]
তিনি আরও বলেন:
“অতএব, যারা তাঁর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা এ বিষয়ে সতর্ক হোক যে, তাদেরকে বিপর্যয় স্পর্শ করবে অথবা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি তাদেরকে গ্রাস করবে।” [সূরা নূর, ৬৩]
“তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্য রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর জীবনে রয়েছে উত্তম আদর্শ।” [সূরা আহযাব/২১]
আর যারা সর্বপ্রথম হিজরতকারী, আনসার এবং যারা তাদের অনুসরণ করেছে, আল্লাহ সে সকল লোকদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। আর তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন সেই জান্নাত যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে নদীসমূহ। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। এটাই হলো মহা কৃতকার্যতা।” [সূরা তাওবা/১০০]
আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করলাম, তোমাদের উপর আমার নেয়ামতকে সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে দ্বীন হিসাবে তোমাদের জন্য মনোনীত করলাম। [সূরা মায়েদা/৩]
তবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ভালোবাসতে হবে যেভাবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল জানিয়েছেন সেইভাবে ও ততটুকুই। অতিরঞ্জিত যেনো না হয়া।যা করা নিষেধঃ
রাসূল (ﷺ) থেকে সহীহ সনদে এসেছে, তিনি বলেছেন,
«إياكم والغلو في الدين فإنما أهلك من كان قبلكم الغلو في الدين»
“তোমরা দ্বীনের মধ্যে অধিক বাড়াবাড়ি করা থেকে বেঁচে থাক, কেননা দ্বীনের মধ্যে অধিক বাড়াবাড়িই তোমাদের পূর্ববর্তী লোকজনকে ধ্বংস করেছে।” মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ৩২৩৮,
তিনি আরও বলেন:
«لا تطروني كما أطرت النصارى ابن مريم، إنما أنا عبد فقولوا عبد الله ورسوله» أخرجه البخاري في صحيحه
“তোমরা আমার প্রশংসায় সীমালঙ্ঘন করো না যেমন খৃষ্টানরা ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর ব্যাপারে করেছে, বরং আমি কেবল একজন বান্দা, কাজেই তোমরা বলো যে, আমি আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল।” বুখারী শরীফ হাদীস নং ৩৪৪৫
নবী (ﷺ) বলেন:
«أنا أول من ينشق القبر يوم القيامة وأنا أول شافع وأول مشفّع»
“আমিই সর্বপ্রথম কিয়ামতের দিন কবর থেকে উঠব এবং আমিই প্রথম সুপারিশকারী আর আমার সুপারিশই সর্বপ্রথম গ্রহণ করা হবে।” আহমাদ, হাদীস নং ১০৬০৪, ইবনে মাজাহ, যুহদ অধ্যায়, শাফায়াত উল্লেখ অনুচ্ছেদ, হাদীস নং ৪৩০৮।
রাসূল স এর প্রতি দরুদ ও সালাম পাঠানোঃ
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর উপর স্বলাত ও সালাম পাঠ করা নৈকট্য লাভের উত্তম মাধ্যম এবং তা সৎকর্মসমূহের অন্তর্ভুক্ত। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
إِنَّ ٱللَّهَ وَمَلَٰٓئِكَتَهُۥ يُصَلُّونَ عَلَى ٱلنَّبِيِّۚ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ صَلُّواْ عَلَيۡهِ وَسَلِّمُواْ تَسۡلِيمًا
“আল্লাহ এবং তাঁর ফেরেস্তামণ্ডলী নবীর উপর স্বলাত পাঠ করে. কাজেই হে যারা ঈমান এনেছ, তোমরা তার উপর স্বলাত পাঠকর এবং যথাযথ সালাম দাও।” [সূরা আল-আহযাব/৫৬]
শাব্দিক দৃষ্টিকোন থেকে সালাত অর্থ রহমত আর সালাম অর্থ শান্তি ও নিরাপত্তা।
আবুল আলীয়া রহ. বলেন, ‘আল্লাহর সালাত তার নবীর উপর’ এ কথাটিরঅর্থ, ফেরেশতাদের নিকট নবীর প্রশংসা করা। আর নবীর উপর ফেরেশতাদের সালাত’ এ কথাটির অর্থ, নবীর জন্য দোআ করা।
ইবনে আব্বাস রা. বলেন,ফেরেশতারা আল্লাহর নবীর উপরসালাত পড়ে এ কথাটির অর্থ হল,তারা বরকতের জন্য দো‘আ করে।
ইমামতিরমিযি রহ. সুফিয়ান সাওরী সহ বিভিন্ন আহলে ইলম থেকে বর্ণনা নকল করেন, তারা বলেন, ‘সালাতুর রব এ কথার অর্থ, রহমত, আর ‘সালাতুল মালায়েকা’এ কথার অর্থ, ক্ষমা চাওয়া।
এ আয়াত দ্বারা উদ্দেশ্য হল, আল্লাহতার স্বীয় বান্দাদেরকে উর্ধ্বজগতে তার প্রিয় বান্দা ও নবীর যে কত বড় মর্যাদা তা জানিয়ে দেওয়া-আল্লাহ তা‘আলা নিজেই তারনিকটতম ফেরেশতাদের নিকট তার প্রশংসা করেন এবং ফেরেশতারা তার জন্য রহমতের দো‘আ করতে থাকে। তারপর আল্লাহ তা‘আলা জমীনের অধিবাসীদেরনির্দেশ দেন তারাও যেন, তার নবীর উপর সালাত ও সালাম পড়ে। যাতে আসমান ও জমীন উভয় জগতের অধিবাসী আল্লাহর নবীর উপর সালাত ও সালাম পেশ করারবিষয়ে একত্র হয়।
ফেরেশতারা দু’আ করেনঃ
আমার উপর দরূদ পাঠকারী যতক্ষণ দরূদ পড়ে ফেরেশতারা তার জন্য দুআ করতে থাকে। সুতরাং বান্দার ইচ্ছা, সে দরূদ বেশি পড়বে না কম।-মুসনাদে আহমদ ৩/৪৪৫; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৬/৪০; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ৯০৭
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের মধ্য থেকে কোনো ব্যক্তি তার ছালাতের স্থানে যতক্ষণ বসে থাকবে ততক্ষণ তার ওযু না ভাঙ্গা পর্যন্ত মালাইকারা অর্থাৎ ফেরেশতারা তার উপর সালাত পড়তে থাকে। তারা বলে, হে আল্লাহ! তাকে ক্ষমা করে দাও,হে আল্লাহ তার প্রতি দয়া কর।বুখারীঃ ৬৫৯
দরুদ পাঠের ফযিলতঃ
‘আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আমর ‘আস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন, “যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরূদ পাঠ করবে, আল্লাহ তার দরুন তার উপর দশবার দুরুদ পাঠ করবেন। মুসলিম ৩৮৪, তিরমিযী ৩৬১৪,
যে আমার উপর একবার দরূদ পড়বে আল্লাহ তার উপর দশটি রহমত নাযিল করবেন, তার দশটি গুনাহ ক্ষমা করা হবে এবং দশটি দরজা বুলন্দ হবে।-সুনানে নাসায়ী ১/১৪৫; মুসনাদে আহমদ ৩/১০২; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ২/৪৩
ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কিয়ামতের দিন সেই ব্যক্তি সব লোকের চাইতে আমার বেশী নিকটবর্তী হবে, যে তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী আমার উপর দরূদ পড়বে।” (তিরমিযী, হাসান তিরমিযী ৪৮৪
যখনই কোনো মুসলিম আমাকে সালাম দেয় তখনই আল্লাহ আমার রুহ্ বা আত্মা আমার নিকট ফিরিয়ে দেন তার সালামের উত্তর দেওয়ার জন্য।” (আবূ দাউদ)
জুম’আ বারে দরুদ পাঠঃ
আওস ইবনে আওস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের দিনগুলির মধ্যে সর্বোত্তম দিন হচ্ছে জুমুআর দিন। সুতরাং ঐ দিন তোমরা আমার উপর অধিকমাত্রায় দরূদ পড়। কেননা, তোমাদের দরূদ আমার কাছে পেশ করা হয়।” লোকেরা বলল, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি তো (মারা যাওয়ার পর) পচে-গলে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবেন। সে ক্ষেত্রে আমাদের দরূদ কিভাবে আপনার কাছে পেশ করা হবে?’ তিনি বললেন, “আল্লাহ পয়গম্বরদের দেহসমূহকে খেয়ে ফেলা মাটির উপর হারাম করে দিয়েছেন।” (বিধায় তাঁদের শরীর আবহমান কাল ধরে অক্ষত থাকবে।) (আবু দাউদ, বিশুদ্ধ সানাদ) আবূ দাউদ ১০৪৭, ১৫৩১,
কোন মজলিসে বসেঃ
মুহাম্মদ ইবন বাশশার (রহঃ) …… আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, তারা সাক্ষ্য দিয়ে বলেন যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন সম্প্রদায় যখন কোন মজলিসে বসে কিন্তু সেখানে তারা যদি আল্লাহর যিকর না করে এবং তাদের নাবীর উপর দুরুদ পাঠ না করে, তবে তা তাদের জন্য আফসোস ও ক্ষতির কারণ হবে। ইচ্ছা করলে আল্লাহ্ তাদের শস্তি দিবেন আর ইচ্ছা করলে তাদের তিনি মাফ করে দিবেন।
সহীহ, সহীহাহ ৭৪, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ৩৩৮০ [আল মাদানী প্রকাশনী]
হাদীসটি হাসান। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে একাধিকভাবে এটি বর্ণনা আছে। হাদিসের মানঃ সহিহ
রাসূল স এর নাম শুনেঃ
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই অভিশাপ দিলেন যে, “সেই ব্যক্তির নাক ধূলা-ধূসরিত হোক, যার কাছে আমার নাম উল্লেখ করা হল, অথচ সে (আমার নাম শুনেও) আমার প্রতি দরূদ পড়ল না।” (অর্থাৎ ‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম’ বলল না।) (তিরমিযী হাসান) তিরমিযী ৩৫৪৫, আহমাদ ৭৪০২
উক্ত রাবী হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমরা আমার কবরকে উৎসব কেন্দ্রে পরিণত করো না (যেমন কবর পূজারীরা উরস ইত্যাদির মেলা লাগিয়ে করে থাকে)। তোমরা আমার প্রতি দরূদ পেশ কর। কারণ, তোমরা যেখানেই থাক, তোমাদের পেশ-কৃত দরূদ আমার কাছে পৌঁছে যায়।” (আবূ দাউদ বিশুদ্ধ সূত্রে) আবূ দাউদ ২০৪২, আহমাদ ৭৭৬২, ৮২৩৮,
উক্ত রাবী হতে এটি বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে কোনো ব্যক্তি যখন আমার উপর সালাম পেশ করে, তখন আল্লাহ আমার মধ্যে আমার আত্মা ফিরিয়ে দেন, ফলে আমি তার সালামের জবাব দিই।” (আবূ দাউদ- বিশুদ্ধ সানাদ) আবূ দাউদ ২০৪১, আহমাদ ১০৪৩৪
(এর ধরন আল্লাহই জানেন। অবশ্য এর অর্থ এ নয় যে, তাঁর জবাব কেউ শুনতে পায়।)
দু’আ করার পূর্বেঃ
ফাযালা ইবনে উবাইদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি লোককে নামাযে প্রার্থনা করতে শুনলেন। সে কিন্তু তাতে আল্লাহর প্রশংসা করেনি এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর দরূদও পড়েনি। এ দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “লোকটি তাড়াহুড়ো করল।” অতঃপর তিনি তাকে ডাকলেন ও তাকে অথবা অন্য কাউকে বললেন, “যখন কেউ দো‘আ করবে, তখন সে যেন তার পবিত্র প্রতিপালকের প্রশংসা বর্ণনা যোগে ও আমার প্রতি দরূদ ও সালাম পেশ করে দো‘আ আরম্ভ করে, তারপর যা ইচ্ছা (যথারীতি) প্রার্থনা করে।” (আবু দাউদ, তিরমিযী) আবূ দাউদ ১৪৮১, তিরমিযী ৩৪৭৬, ৩৪৭৭, নাসায়ী ১২৮৪, আহমাদ ২৩৪১৯
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর দরুদ পড়া। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর দরুদ না পড়া পর্যন্ত যে কোন দোয়া আটকে থাকে”[আল-মুজাম আল-আওসাত (১/২২০), আলবানী ‘সহিহুল জামে’ গ্রন্থে (৪৩৯৯) হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন]
আজান শুনার পরঃ
“যখন মুয়াজ্জিনের আওয়াজ শ্রবণ কর, তখন তার ন্যায় তোমরাও বল, অতঃপর আমার ওপর দুরূদ পাঠ কর, কারণ আমার ওপর যে একবার দরূদ পাঠ করবে আল্লাহ তার ওপর দশবার দরূদ প্রেরণ করবেন। অতঃপর আমার জন্য উসীলা প্রার্থনা কর, উসীলা জান্নাতের একটি বিশেষ মর্যাদা যার ভাগীদার শুধু একজন বান্দাই হবে, আমি আশা করছি সে ব্যক্তিটি হবো আমিই। আমার জন্য যে ওসিলা প্রার্থনা করবে, তার জন্য আমার শাফা‘আত ওয়াজিব হয়ে যাবে”।সহিহ মুসলিমঃ৩৮৪
কিভাবে সালাত ও সালাম পাঠাবেঃ
আবূ মুহাম্মদ কা‘ব ইবনে ‘উজরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একদা) আমাদের নিকট এলে। আমরা বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনার প্রতি কিভাবে সালাম পেশ করতে হয় তা জেনেছি, কিন্তু আপনার প্রতি দরূদ কিভাবে পাঠাব?’ তিনি বললেন, “তোমরা বলোঃ-
‘আল্লা-হুম্মা স্বাল্লি আলা মুহাম্মাদিঁউ অআলা আ-লি মুহাম্মদ, কামা স্বাল্লাইতা আলা আ-লি ইবরা-হীম। ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লা-হুম্মা বা-রিক আলা মুহাম্মাদিঁউ অআলা আ-লি মুহাম্মদ, কামা বা-রাকতা আলা আ-লি ইবরা-হীম। ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।’
যার অর্থ, হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মদ তথা মুহাম্মদের পরিবারবর্গের উপর দরুদ পাঠ করো; যেমন দরূদ পেশ করেছিলে ইব্রাহীমের পরিবারবর্গের উপর। নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত ও অতি সম্মানার্হ। হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মদ ও তাঁর পরিজনবর্গের প্রতি বরকত নাযিল কর; যেমন বরকত নাযিল করেছ ইব্রাহীমের পরিজনবর্গের প্রতি। নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত ও মহা সম্মানীয়।”সহীহুল বুখারী ৩৩৭০, ৪৭৯৭, ৬৩৫৭, মুসলিম ৪০৬, তিরমিযী ৪৮৩, নাসায়ী ১২৮৭-১২৮৯, আবূ দাউদ ৯৭৬, ইবনু মাজাহ ৯০৪, আহমাদ ১৭৬৩৮, ১৭৬৩১, ১৭৬৬৭, দারেমী ১৩৪২
আবূ হুমাইদ সায়েদী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, লোকেরা বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কিভাবে আপনার প্রতি দরূদ পেশ করব?’ তিনি বললেন, “তোমরা বলো, “আল্লা-হুম্মা স্বাল্লি আলা মুহাম্মাদিঁউ অআলা আযওয়া-জিহি অযুর্রিয়্যাতিহি কামা স্বাল্লাইতা আলা আ-লি ইবরা-হীম, অবা-রিক আলা মুহাম্মাদিঁউ অআলা আযওয়া-জিহি অযুর্রিয়্যাতিহি কামা বারাকতা আলা আ-লি ইবরা-হীম, ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।”
অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মদ, তাঁর পত্নীগণ ও তাঁর বংশধরের উপর সালাত পেশ কর; যেমন তুমি ইব্রাহীমের বংশধরের উপর সালাত পেশ করেছ। আর তুমি মুহাম্মদ, তাঁর পত্নীগণ ও তাঁর বংশধরের উপর বরকত বর্ষণ কর যেমন তুমি ইবরাহীমের বংশধরের উপর বরকত বর্ষণ করেছ। নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত গৌরবান্বিত। সহীহুল বুখারী ২৩৬৯, ৬৩৬০, মুসলিম ৪০৭, নাসায়ী ১২৯৪, আবূ দাউদ ৯৭৯, ইবনু মাজাহ ৯০৫, আহমাদ ২৩০৮৯, মুওয়াত্তা মালিক ৩৯৭
বাজারে যে সকল প্রচলিত দরুদ রয়েছে , লাখি হাজারিসহ আরো কিছু নামে- সেগুলো থেকে নিজেদের দূরে রাখতে হবে ও অন্যকেও সঠিক জ্ঞান জানাতে হবে। সহিহ আমল প্রচার করা জরুরী। বিদ’আত থেকে দূরে থাকা ও অন্যকেও দূরে থাকার পরামর্শ দেয়াও অত্যাবশ্যক।
মহান আল্লাহ আমাদের সঠিক আমল করার তাওফিক দিন ও কবুল করে নিন।