নবী রাসূলদের প্রতি ঈমান-২

দয়াময় মেহেরবান আল্লাহর নামে-

শেষ নবী স এর প্রতি ইমানঃ

হযরত ইবরাহীম আ  তাঁর পুত্এর হযরত ইসমাইল আ সহ কাবা নির্রমানের সময় দু’আ করেছিলেন, সে দু’আ কবুল হইয়েছিলো যা আমরা জানতে পারি-

(২:১২৭) অর্থ- স্মরণ কর, যখন ইব্রাহীম ও ইসমাঈল কা’বাগৃহের ভিত্তি স্থাপন করছিল। তারা দোয়া করেছিল, পরওয়ারদেগার! আমাদের থেকে কবুল কর। নিশ্চয়ই তুমি শ্রবণকারী, সর্বজ্ঞ।

(২:১২৮) অর্থ- হে পরওয়ারদেগার! আমাদের উভয়কে তোমার আজ্ঞাবহ কর এবং আমাদের বংশধর থেকেও একটি অনুগত দল সৃষ্টি কর, আমাদের হজ্বের রীতিনীতি বলে দাও এবং আমাদের ক্ষমা কর। নিশ্চয় তুমি তওবা কবুলকারী। দয়ালু।

(২:১২৯) অর্থ- হে আমাদের মালিক তাদের মাঝে তদের (নিজেদের বংশ) থেকে (এমন) একজন রাসূল পাঠাও, যে তাদের কাছে তোমার আয়াতসমূহ পড়ে শোনাবে, তাদেরকে তোমার কিতাবের জ্ঞান ও প্রজ্ঞা শিক্ষা দেবে, উপরন্তু সে তাদের পবিত্র করে দেবে; কারন তুমিই মহাপরাক্রমশালী ও পরম কুশলী।

কাবা গৃহের ভিত্তি স্থাপনের সময় পিতা এবং পুত্র হযরত ইব্রাহীম (আঃ) ও ইসমাঈল (আঃ)  তাদের মনোবাসনা পূরণের জন্য দোয়া করেছিলেন।

পরবর্তিতে ঠিক সেই কাজগুলোই আমাদের শেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পৃথিবীতে এসে রাসূল হিসেবে সেই কাজই করে গিয়েছেন যা আমরা জানতে পারি–

মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন–

তিনিই মহান সত্তা যিনি উম্মীদের মধ্যে তাদেরই একজনকে রসূল করে পাঠিয়েছেন যে তাদেরকে তাঁর আয়াত শুনায়, তাদের জীবনকে সজ্জিত ও সুন্দর করে এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমাত শিক্ষা দেয়৷ অথচ ইতিপূর্বে তারা স্পষ্ট গোমরাহীতে নিমজ্জিত ছিল৷

(এ রসূলের আগমন) তাদের অন্য লোকদের জন্যও যারা এখনো তাদের সাথে যোগ দেয়নি৷ আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী ও জ্ঞানময়৷

এটা তাঁর মেহেরবানী, তিনি যাকে চান তা দান করেন৷ আল্লাহ মহাকরুণার অধিকারী৷সূরা জুম’আঃ ২-৪

আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়াতের ওপর ঈমান:

নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়াতের ওপর ঈমান আনা ঈমানের মূলনীতিসমূহের একটি অন্যতম মূলনীতি। এর ওপর ঈমান আনা ছাড়া কারোও ঈমান পরিপূর্ণ হবে না।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَمَن لَّمۡ يُؤۡمِنۢ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ فَإِنَّآ أَعۡتَدۡنَا لِلۡكَٰفِرِينَ سَعِيرٗا ١٣﴾ [الفتح: ١٣]

“যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ওপর ঈমান আনে না, আমি সেসব কাফিরের জন্য জ্বলন্ত অগ্নি প্রস্তুত করে রেখেছি।” [সূরা আল-ফাতহ, আয়াত: ১৩]

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«أمرت أن أقاتل الناس حتى يشهدوا أن لا إلا إله إلا الله وإني رسول الله».

“আমি আদেশপ্রাপ্ত হয়েছি যে মানুষের সাথে যুদ্ধ করব যতক্ষণ না তারা-আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার কোনো মা‘বুদ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল-এ কথার সাক্ষ্য দিবে।” (সহীহ মুসলিম)

নিম্নে বর্ণিত বিষয়ের ওপর ঈমান আনার মাধ্যমে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর ঈমান আনা পরিপূর্ণ হবে:

প্রথমত:

আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা বা জানা। তিনি হলেন মুহাম্মাদ ইবন আব্দুল্লাহ ইবন আব্দুল মুত্তালিব ইবন হাশিম, হাশিম কুরাইশ বংশ, আর কুরাইশ আরব বংশ আর আরব ইসমাঈল ইবন ইবরাহীম আল-খালীল এর বংশধর, তাঁর ও আমাদের নবীর ওপর সর্ব উত্তম দুরুদ ও সালাম বর্ষিত হউক। তাঁর তেষট্টি বছর বয়স হয়েছিল। নবুয়াতের পূর্বে চল্লিশ বৎসর, নবী ও রাসূল হওয়ার পরে তেইশ বৎসর।

দ্বিতীয়ত:

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে বিষয়ে সংবাদ দিয়েছেন সে বিষয়ে তাঁকে বিশ্বাস করা, যে বিষয় তিনি আদেশ করেছেন, তার অনুসরণ করা। যে বিষয় থেকে তিনি নিষেধ করেছেন ও সতর্ক করেছেন তা থেকে বিরত থাকা। তিনি যে বিধান দান করেছেন সে অনুযায়ী আল্লাহর ইবাদত করা।

তৃতীয়ত: তিনি জিন্ন ও ইনসান সকলের নিকট প্রেরিত আল্লাহর রাসূল এ কথার বিশ্বাস রাখা। সবাইকে তাঁর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অনুসরণ করতে হবে।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿قُلۡ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ إِنِّي رَسُولُ ٱللَّهِ إِلَيۡكُمۡ جَمِيعًا﴾ [الاعراف: ١٥٨]

“আপনি বলুন হে মানবসকল! আমি তোমাদের সকলের প্রতি আল্লাহর রাসূল হিসেবে প্রেরিত হয়েছি।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৫৮]

চতুর্থত: তাঁর রিসালাতের ওপর ঈমান আনা, তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ ও শেষ নবী।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَلَٰكِن رَّسُولَ ٱللَّهِ وَخَاتَمَ ٱلنَّبِيِّ‍ۧنَۗ ﴾ [الاحزاب: ٤٠]

“তিনি আল্লাহর রাসূল ও শেষ নবী।” [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৪১]

এবং তিনি আল্লাহর খালীল ও আদম সন্তানের সর্দার বা নেতা। তিনি মহান শাফা‘আতের মালিক এবং জান্নাতে সুউচ্চ ওসীলা নামক স্থান তাঁরই জন্য। তিনি কাউসারের মালিক। তাঁর উম্মাত সর্বশ্রেষ্ঠ বা উত্তম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

“তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত যা মানুষের (কল্যাণের) জন্য সৃজিত হয়েছে।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ২০]

অধিকাংশ জান্নাতবাসী হবে তাঁরই উম্মত এবং তাঁর রিসালাত পূর্ববর্তী সকল রিসালাতের রহিতকারী।

পঞ্চমতঃ মু’যিজা কুর’আন যা সংরক্ষিত

আল্লাহ তাঁকে মহান মু‘জিযা ও সুস্পষ্ট নিদর্শন দ্বারা সহযোগিতা করেছেন। তা হলো মহাগ্রন্থ আল-কুরআন; আল্লাহর বাণী, যা পরিবর্তন ও পরিবর্ধন হতে সংরক্ষিত।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,“বলুন, যদি মানব ও জিন্ন এই কুরআনের অনুরূপ রচনা করে আনয়নের জন্য একত্রিত হয় এবং তারা পরস্পরের সাহায্যকারী হয়,তবুও তারা এর অনুরূপ রচনা করে আনতে পারবে না।” [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ৮৮]

তিনি আরো বলেন,

﴿إِنَّا نَحۡنُ نَزَّلۡنَا ٱلذِّكۡرَ وَإِنَّا لَهُۥ لَحَٰفِظُونَ ٩ ﴾ [الحجر: ٩]

“আমরা স্বয়ং এ উপদেশ গ্রন্থ অবতরণ করেছি এবং আমরা নিজেই এর সংরক্ষক।” [সূরা আল-হিজর, আয়াত: ৯]

ষষ্টত: কল্যানকামী জানা

নিশ্চয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রিসালাত প্রচার করেছেন, আমানত আদায় করেছেন, উম্মাতদেরকে উপদেশ দিয়েছেন। সকল প্রকার কল্যাণের সন্ধান দিয়েছেন ও তার প্রতি উৎসাহিত করেছেন। সকল প্রকার অকল্যাণ হতে তাঁর উম্মাতকে নিষেধ করেছেন ও তা থেকে তাদেরকে সাবধান করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

“তোমাদের কাছে এসেছে তোমাদের মধ্য থেকেই একজন রাসূল। তোমাদের দুঃখ-কষ্ট তাঁর পক্ষে-দুঃসহ। তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী, মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল, দয়াময়। [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ১২৮]

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

“আমার উম্মাতের পূর্বে আল্লাহ যত নবী প্রেরণ করেছেন, তাদের ওপর দায়িত্ব ছিল নিজ উম্মাতের জন্য যা কল্যাণকর তাদেরকে তার সন্ধান দেওয়া। আর যা কল্যাণকর নয় তা থেকে তাদেরকে সতর্ক করা।” (সহীহ মুসলিম)

সপ্তমত: ভালোবাসা ও আনুগত্য

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালোবাসা ও তাঁর ভালোবাসাকে নিজের জানের ও সকল সৃষ্টিজীবের ভালোবাসার ওপর প্রাধান্য দেওয়া। তাঁকে সম্মান করা, মর্যাদা দেওয়া, ইহতেরাম করা ও তাঁর আনুগত্য করা। নিশ্চয় এটা সে হক্ব বা অধিকার যা আল্লাহ তাঁর কিতাবে তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য সাবস্ত করেছেন। কারণ তাঁর ভালোবাসা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর ভালোবাসা এবং তাঁর আনুগত্য প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর আনুগত্য।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

“বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাস, তাহলে আমাকে অনুসরণ কর, যাতে আল্লাহও তোমাদিগকে ভালোবাসেন এবং তোমাদিগকে তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাকারী দয়ালু।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৩১]

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«لا يؤمن أحدكم حتى أكون أحب إليه من ولده ووالده والناس أجمعين».

“তোমাদের কেহই ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারে না যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তার নিকট তার ছেলে সন্তান, পিতামাতা ও সকল মানুষের চেয়ে প্রিয়তম না হবো।” (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)

অষ্টমত: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর দুরুদ ও সালাম বেশি বেশি পাঠ করা। কারণ কৃপণ ঐ ব্যক্তি যার নিকট নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম উল্লেখ হওয়ার পরও তাঁর ওপর দুরূদ পাঠ করে না।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿إِنَّ ٱللَّهَ وَمَلَٰٓئِكَتَهُۥ يُصَلُّونَ عَلَى ٱلنَّبِيِّۚ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ صَلُّواْ عَلَيۡهِ وَسَلِّمُواْ تَسۡلِيمًا ٥٦﴾ [الاحزاب: ٥٦]

“আল্লাহ ও তাঁর ফিরিশতাগণ নবীর ওপর দুরুদ পাঠ করেন। হে মুমিনগণ! তোমরা নবীর ওপর দুরুদ ও সালাম পাঠ কর।” [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৫৬]

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«من صلى عليّ واحدة صلى الله عليه بها عشراً».

“যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দুরূদ পাঠ করবে আল্লাহ তার ওপর এর বিনিময়ে দশবার দুরুদ পাঠ করবেন।” (সহীহ মুসলিম)

নবম: সম্মান

তাঁর জীবদ্দশায় তাঁর সামনে উচু আওয়াজ না করা, অনুরূপ তাঁর কবরে তাঁর ওপর সালাম দেওয়ার সময় উচু আওয়াজ না করা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ইহতেরামের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

“হে মুমিনগণ! তোমরা নবীর কন্ঠস্বরের ওপর তোমাদের কন্ঠস্বর-উঁচু করো না এবং তোমরা একে অপরের সাথে যেরূপ উঁচুস্বরে কথা বল, তাঁর সাথে সেরূপ উঁচু স্বরে কথা বলো না। এতে তোমাদের কর্ম নিষ্ফল হয়ে যাবে এবং তোমরা টেরও পাবে না।” [সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত: ২]

দশমতম:

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদেরকে, পরিবার-পরিজনকে ও স্ত্রীদেরকে ভালোবাসা ও তাদের সকলের সাথে বন্ধুত্ব রাখা। তাদের মর্যাদাহানী হতে বা তাদেরকে গালী দেওয়া থেকে ও তাদের চরিত্রে কোনো প্রকার আঘাত হানা থেকে সাবধান থাকা। কারণ, আল্লাহ তাদের প্রতি রাজি হয়েছেন ও তাদেরকে তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহচর হিসেবে নির্বাচন করে নিয়েছেন। এই উম্মাতের ওপর তাদের সাথে বন্ধুত্ব রাখা ওয়াজিব করে দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

“আর যারা সর্বপ্রথম হিজরতকারী ও আনসারদের মাঝে পুরাতন এবং যারা তাদের অনুসরণ করেছে, আল্লাহ সে সমস্ত লোকদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে।” [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ১০০]

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«لا تسبوا أصحابي فوالذي نفسي بيده لو أنفق أحدكم مثل أحد ذهبا ما بلغ مد أحدهم ولا نصيفه».

“তোমরা আমার সাহাবাদেরকে গালী দিও না, সেই সত্তার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ, তোমাদের কেউ যদি উহুদ পর্বতের সমপরিমাণ (আল্লাহর পথে) ব্যয় করে, তবুও তাদের এ বিশাল ব্যয় সাহাবাদের আল্লাহর রাস্তায় এক মুদ (প্রায় ৭০০ গ্রাম) বা অর্ধ মুদ ব্যয় করার সমান হবে না।” (সহীহ বুখারী)

সুতরাং পরবর্তী লোকদের উচিৎ সাহাবীদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং নিজেদের মনে তাদের ব্যাপারে যাতে কোনো প্রকার কুটিলতা না থাকে এ জন্য আল্লাহর কাছে দো‘আ করা।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَٱلَّذِينَ جَآءُو مِنۢ بَعۡدِهِمۡ يَقُولُونَ رَبَّنَا ٱغۡفِرۡ لَنَا وَلِإِخۡوَٰنِنَا ٱلَّذِينَ سَبَقُونَا بِٱلۡإِيمَٰنِ وَلَا تَجۡعَلۡ فِي قُلُوبِنَا غِلّٗا لِّلَّذِينَ ءَامَنُواْ رَبَّنَآ إِنَّكَ رَءُوفٞ رَّحِيمٌ ١٠﴾ [الحشر: ١٠]

“যারা তাদের পরে আগমন করেছে তারা বলেঃ হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদেরকে এবং ঈমানে অগ্রণী আমাদের ভাইদেরকে ক্ষমা কর এবং ঈমানদারদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরে কোনো বিদ্বেষ রেখো না। হে আমাদের রব, আপনি দয়ালু পরম করুণাময়।” [সূরা আল-হাশর, আয়াত: ১০]

একাদশতম: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যাপারে অতিরঞ্জিত করা থেকে বিরত থাকা।

কারণ, অতিরঞ্জিত করা তাঁকে বড় কষ্ট দেওয়ার অন্তর্ভুক্ত। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মাতকে তাঁর ব্যাপারে অতিরঞ্জিত করা থেকে ও তাঁর প্রশংসা করার সময় সীমালংঘন করা থেকে সতর্ক করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে যে মর্যাদা দিয়েছেন, তাঁকে তার চেয়ে মর্যাদা দেওয়া থেকে সতর্ক করেছেন। কারণ, তা একমাত্র আল্লাহর জন্য খাস।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন,

«لا تطروني كما أطرت النصارى ابن مريم».

“তোমরা আমার ব্যাপারে অতিরঞ্জিত কর না যেমন খৃষ্টানরা ঈসা ইবন মারইয়াম-এর ব্যাপারে অতিরঞ্জিত করেছিল।” (সহীহ বুখারী)

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আহ্বান করা ও তাঁর কাছে ফরিয়াদ করা। তাঁর কবরের পাশ দিয়ে ত্বাওয়াফ করা, তাঁর নামে মান্নত মানা, পশু যবেহ করা বৈধ নয়।

এ সকল কাজ আল্লাহর সাথে শরীক করার নামান্তর, অথচ আল্লাহ অন্যের ইবাদত করা থেকে নিষেধ করেছেন।

অনুরূপভাবে তাঁকে ইহতেরাম না করায় তাঁর প্রতি অনীহা প্রকাশ পায়। তাঁর মানহানি করা, তাঁকে তুচ্ছ জানা, তাঁর ব্যাপারে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা, ইসলাম থেকে মুর্তাদ বা বের হয়ে যাওয়া ও আল্লাহর সাথে কুফুরী করা।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

“আপনি বলুন, তোমরা কি আল্লাহর সাথে তাঁর হুকুম-আহ্কামের সাথে এবং তাঁর রাসূলের সাথে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করেছিলে? ওযর পেশ করো না, তোমরা তো কাফির হয়ে গেছ ঈমান প্রকাশ করার পর।” [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ৬৫-৬৬]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সত্যিকার ভালোবাসা, তাঁর নীতির ও সুন্নাতের অনুসরণ-অনুকরণ, তাঁর পথের বিরোধিতা না করার প্রেরণা যোগায়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

“বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাস, তাহলে আমাকে অনুসরণ কর; যাতে আল্লাহও তোমাদিগকে ভালোবাসেন এবং তোমাদিগকে তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাকারী দয়ালু।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৩১]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সম্মানের ব্যাপারে কম-বেশি করে সীমালঙ্ঘন না করা ওয়াজিব। তাই তাঁকে ইলাহ বা মা‘বুদের গুণে গুণাম্বিত করা যাবে না। তাঁর মর্যাদা সম্মান ও ভালোবাসার অধিকার কমানোও যাবে না, যার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো তার শরী‘আতের অনুসরণ করা, তার নীতির ওপর চলা ও তাঁর অনুকরণ করা।

দ্বাদশতম: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর ঈমান আনা পূর্ণাঙ্গ হবে তাঁকে সত্যায়ন করা এবং তিনি যে শরী‘আত নিয়ে এসেছেন তার ওপর আমল করার মাধ্যমে, এটাই তাঁর আনুগত্য করার অর্থ।

বস্তুতঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য আল্লাহরই আনুগত্য, আর তাঁর নাফরমানী বস্তুত আল্লাহরই নাফরমানী। আর তাঁকে পূর্ণভাবে বিশ্বাস ও অনুসরণের মাধ্যমেই তাঁর প্রতি পরিপূর্ণভাবে ঈমান আনা হয়ে থাকে।

‘আর যখন তাদেরকে বলা হয়, আল্লাহর অবতীর্ণ বিধান সমূহের দিকে এসো এবং রাসূলের দিকে এসো, তখন তারা বলে, আমাদের জন্য ওটাই যথেষ্ট, যার উপর আমাদের বাপ-দাদাদেরকে পেয়েছি; যদিও তাদের বাপ-দাদারা না কোন জ্ঞান রাখতো, আর না হেদায়াত প্রাপ্ত ছিল’ (মায়েদাহ ৫/১০৪)।

অন্যত্র তিনি বলেন, بَلْ قَالُوْا إِنَّا وَجَدْنَا آبَاءَنَا عَلَى أُمَّةٍ وَإِنَّا عَلَى آثَارِهِمْ مُهْتَدُوْنَ، وَكَذَلِكَ مَا أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ فِيْ قَرْيَةٍ مِنْ نَذِيْرٍ إِلاَّ قَالَ مُتْرَفُوْهَا إِنَّا وَجَدْنَا آبَاءَنَا عَلَى أُمَّةٍ وَإِنَّا عَلَى آثَارِهِمْ مُقْتَدُوْنَ-  ‘বরং তারা বলে, আমরাতো আমাদের পূর্ব পুরুষদেরকে পেয়েছি এক মতাদর্শের উপর এবং আমরা তাদেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করে হেদায়াতপ্রাপ্ত। অনুরূপ তোমার পূর্বে কোন জনপদে যখনই কোন সতর্ককারী প্রেরণ করেছি তখন ওর সমৃদ্ধশালী ব্যক্তিরা বলতো আমরা তো আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে পেয়েছি এক মতাদর্শের উপর এবং আমরা তাদেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করছি’ (যুখরুফ ৪৩/২২-২৩)।

রাসূলের  সা আনুগত্যঃ

আনুগত্য অর্থ : কোন প্রতিবাদ, বিতর্ক ও পরিবর্তন ব্যতিরেকে আদেশ-নিষেধ শ্রবণ করা বা মান্য করাই হচ্ছে আনুগত্য।

আনুগত্যের প্রকার : আনুগত্যকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়।

যথা- ক. নিষিদ্ধ আনুগত্য খ. ফরয ও ওয়াজিব আনুগত্য।

বল! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসূলের আনুগত্য কর। অতঃপর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে তাঁর উপর অর্পিত দায়িত্বের জন্য সে দায়ী এবং তোমাদের উপর অর্পিত দায়িত্বের জন্য তোমরা দায়ী। আর তোমরা তাঁর আনুগত্য করলে সৎপথ পাবে, রাসূলের কর্তব্য হচ্ছে শুধু স্পষ্টভাবে পৌঁছে দেয়া’ (নূর ২৪/৫৪)।

হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসূল (ছাঃ)-এর আনুগত্য কর, আর (তা না করে) তোমাদের আমল সমূহ বিনষ্ট করো না’ (মুহাম্মাদ ৪৭/৩৩)

রাসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা হ’তে তোমাদের নিষেধ করেন তা হ’তে বিরত থাকো’ (হাশর ৫৯/৭)।

আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোন বিষয়ে ফায়ছালা করলে কোন মুমিন পুরুষ কিংবা মুমিন নারীর নিজেদের ব্যাপারে অন্য কোন সিদ্ধান্তের ইখতিয়ার থাকবে না। কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করলে সে তো স্পষ্টই পথভ্রষ্ট হবে’ (আহযাব ৩৩/৩৬)।

আর এটাই আমার সরল পথ, সুতরাং তোমরা এ পথেরই অনুসরণ। এ পথ ছাড়া অন্য কোন পথের অনুসরণ করো না। অন্যথা তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দূরে সরিয়ে দিবে। আল্লাহ তোমাদেরকে এই নির্দেশ দিলেন, যেন তোমরা বেঁচে থাকতে পার’ (আন‘আম ৬/১৫৩)।

‘আর যে কেউ আল্লাহ ও রাসূলের অনুগত হয়, তবে তারা ঐ ব্যক্তিদের সঙ্গী হবে যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন; অর্থাৎ নবীগণ, সত্য সাধকগণ, শহীদগণ ও সৎকর্মশীলগণ। আর এরাই সর্বোত্তম সঙ্গী’ (নিসা ৪/৬৯)। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি কুরআন-সুন্নাহর বিরুদ্ধাচরণ করবে সে জাহান্নামে যাবে।

আর সুপথ প্রকাশিত হওয়ার পর যে রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং বিশ্বাসীগণের বিপরীত পথের অনুগামী হয়, তবে সে যাতে অভিনিবিষ্ট আমি তাকে তাতেই প্রত্যাবর্তিত করব ও তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব এবং এটা নিকৃষ্টতর প্রত্যাবর্তন স্থল’ (নিসা ৪/১১৫)।

‘অতঃপর যদি তারা তোমার আহবানে সাড়া না দেয়, তাহ’লে জানবে যে, তারা তো শুধু নিজেদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে। আল্লাহর পথনির্দেশ অগ্রাহ্য করে যে ব্যক্তি নিজ খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে, সে ব্যক্তি অপেক্ষা অধিক পথভ্রষ্ট আর কে? আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে পথ-নির্দেশ করেন না’ (ক্বাছাছ ২৮/৫০)।

মুমিনদের উক্তি তো এই, যখন তাদের মধ্যে ফায়ছালা করে দেবার জন্য আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের দিকে আহবান করা হয় তখন তারা বলবে, আমরা শ্রবণ করলাম ও মান্য করলাম, আর তারাই সফলকাম। যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, আল্লাহকে ভয় করে ও তাঁর অবাধ্যতা হ’তে সাবধান থাকে তারাই সফলকাম’ (নূর ২৪/৫১-৫২)।

‘আমার সকল উম্মতই জান্নাতে প্রবেশ করবে, কিন্তু যে অস্বীকার করবে (সে নয়)। তারা বললেন, কে অস্বীকার করে? তিনি বললেন, যারা আমার অনুসরণ করবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর যে আমার অবাধ্য হবে সেই অস্বীকার করে’ (বুখারী হা/৭২৮০)।

বিভিন্ন বই নেট তাফসির থেকে সংগৃহিত করে নোট।