সাওম ও রমাদান মাসঃ ২০২২ (পর্ব-১)

সাওম ও রমাদানঃ ২০২২

power point presentation

1.সাওম ও রমাদান-2022

 

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম

রমাদান  ‘আরাবী’ বার মাসগুলোর একটি, আর এটি দ্বীন ইসলামে একটি সম্মানিত মাস।

মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন–

﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ﴾

১৮৩) হে ঈমানদাগণ! তোমাদের ওপর রোযা ফরয করে দেয়া হয়েছে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তী নবীদের অনুসারীদের ওপর ফরয করা হয়েছিল ৷ এ থেকে আশা করা যায়, তোমাদের মধ্যে তাকওয়ার গুণাবলী সৃষ্টি হয়ে যাবে ৷

এখানে ঈমানদারদের সম্বোধন করেই বলা হয়েছে যে সাওমের এই বিধান নতুন নয় পূর্বেও অন্যান্য জাতির জন্য সাওম ছিলো, এর উদ্দেশ্যই হলো তাকওয়ার গুনাবলী সৃষ্টি করা।

﴿أَيَّامًا مَّعْدُودَاتٍ ۚ فَمَن كَانَ مِنكُم مَّرِيضًا أَوْ عَلَىٰ سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ ۚ وَعَلَى الَّذِينَ يُطِيقُونَهُ فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِينٍ ۖ فَمَن تَطَوَّعَ خَيْرًا فَهُوَ خَيْرٌ لَّهُ ۚ وَأَن تَصُومُوا خَيْرٌ لَّكُمْ ۖ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ﴾

১৮৪) এ কতিপয় নিদিষ্ট দিনের রোযা ৷ যদি তোমাদের কেউ হয়ে থাকে রোগগ্রস্ত অথবা মুসাফির তাহলে সে যেন অন্য দিনগুলোয় এই সংখ্যা পূর্ণ করে ৷ আর যাদের রোযা রাখার সামর্থ আছে (এরপরও রাখে না)তারা যেন ফিদিয়া দেয় ৷ একটি রোযার ফিদিয়া একজন মিসকিনকে খাওয়ানো৷ আর যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় ও সানন্দে কিছু বেশী সৎকাজ করে , তা তার জন্য ভালো ৷ তবে যদি তোমরা সঠিক বিষয় অনুধাবন করে থাকো ৷  তাহলে তোমাদের জন্য রোযা রাখাই ভালো ৷

প্রথম যখন সাওমের নির্দেশনা এসেছে তখন বাধ্যতামূলক ছিলো না, পরবর্তীতে এটা ফরজ করে দেয়া হয়েছে। ইসলামের অন্যান্য বিধানের মতো সাওমও পর্যায়ক্রমে ফরয হয়৷ শুরুতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুসলামনদেরকে মাত্র প্রতি মাসে তিন দিন সাওম রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন৷ এ সাওম ফরয ছিল না৷ তারপর দ্বিতীয় হিজরীতে রমযান মাসের সাওমের এই বিধান কুরআনে নাযিল হয়৷ তবে এতে এতটুকুন সুযোগ দেয়া হয়, সাওমের কষ্ট বরদাশত করার শক্তি থাকা সত্ত্বেও যারা সাওম রাখবেন না তারা প্রত্যেক সাওমের বদলে একজন মিসকিনকে আহার করাবে৷ পরে দ্বিতীয় বিধানটি নাযিল হয়৷ এতে পূর্ব প্রদত্ত সাধারণ সুযোগ বাতিল করে দেয়া হয়৷ কিন্তু রোগী মুসাফির, গর্ভবর্তী মহিলা বা দুগ্ধপোষ্য শিশুর মাতা এবং সাওম রাখার ক্ষমতা নেই এমন সব বৃদ্ধদের জন্য এ সুযোগটি আগের মতোই বহাল রাখা হয়৷ পরে ওদের অক্ষমতা দূর হয়ে গেলে রমযানের যে ক’টি সাওম তাদের বাদ গেছে সে ক’টি পূরণ করে দেয়ার জন্য তাদের নির্দেশ দেয়া হয়৷

দ্বিতীয় হিজরীতে বদর যুদ্ধের আগে রমযানের সাওম সম্পর্কে যে বিধান নাযিল হয়েছিল এ পর্যন্ত সেই প্রাথমিক বিধানই বর্ণিত হয়েছে৷ এর পরবর্তী আয়াত এর এক বছর পরে নাযিল হয় এবং বিষয়বস্তুর সাদৃশ্যের কারণে এর সাথে সংযুক্ত করে দেয়া হয়৷

১৮৫﴿شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِّنَ الْهُدَىٰ وَالْفُرْقَانِ ۚ فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ ۖ وَمَن كَانَ مَرِيضًا أَوْ عَلَىٰ سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ ۗ يُرِيدُ اللَّهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمُ الْعُسْرَ وَلِتُكْمِلُوا الْعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُوا اللَّهَ عَلَىٰ مَا هَدَاكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ﴾

 রমযানের মাস, এ মাসেই কুরআন নাযিল করা হয়েছে , যা মানব জাতির জন্য পুরোপুরি হিদায়াত এবং এমন দ্ব্যর্থহীন শিক্ষা সম্বলিত, যা সত্য –সঠিক পথ দেখায় এবং হক ও বাতিলের পার্থক্য সুস্পষ্ট করে দেয় ৷ কাজেই এখন থেকে যে ব্যক্তি এ মাসের সাক্ষাত পাবে তার জন্য এই সম্পূর্ণ মাসটিতে রোযা রাখা অপরিহার্য এবং যে ব্যক্তি রোগগ্রস্ত হয় বা সফরে থাকে, সে যেন অন্য দিনগুলোয় রোযার সংখ্যা পূর্ণ করে ৷  আল্লাহ তোমাদের সাথে নরম নীতি অবলম্বন করতে চান, কঠোর নীতি অবলম্বন করতে চান না ৷ তাই তোমাদেরকে এই পদ্ধতি জানানো হচ্ছে, যাতে তোমরা রোযার সংখ্যা পূর্ণ করতে পারো এবং আল্লাহ তোমাদের যে হিদায়াত দান করেছেন সে জন্য যেন তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ করতে ও তার স্বীকৃতি দিতে এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারো ৷ 

এই আয়াতের মাধ্যমে যা জানতে পারি-

  • রমাদান মাসে কুর’আন নাযিল হয়েছে, যা মানুষের পথ চলার নির্দেশিকা,এমন শিক্ষা রয়েছে যা অর্জনের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি সঠিক পথে চলতে পারে ও সত্য মিথ্যার মাঝে পার্থক্য করার যোগ্যতা অর্জন করতে পারে। ফলে ব্যক্তি যেকোন পরিস্থিতি হোক না কেনো রবের দেয়া সঠিক পথে অটল থাকার তীব্র সিদ্ধান্ত রাখতে পারে।
  • এই আয়াতের মাধ্যমেই জানা যায় সাওম অত্যাবশ্যক। এই আয়াতটি পূর্ব আয়াতের ১বছর পর নাযিল হয়। এখন থেকে কোন শরীয়া কারন( অসুস্থতা ও সফর) ছাড়া সাওম বাদ দিতে পারবে না।
  • অসুস্থ ও সফরের কারনে সাওম সেই সময় না রাখতে পারলেও যখন এই কারন থেকে মুক্ত হবে তখনই সংখ্যা গুনে গুনে সাওম আদায় করতে হবে(যে কয়টি রমাদান মাসে করতে পারেনি)।
  • মহান আল্লাহ প্রতিপালক, তিনি বান্দার জন্য সহজতাই দান করেন,কঠিন করেন না।
  • এই মাসে যে হেদায়েতের বানী, চলার পথের বিধি বিধান পাঠিয়েছেন, সেই কুর’আন পাওয়ার কারনে মহান রবের শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ ও বিশ্বাস স্থাপনে স্বীকৃতি প্রদান করা এবং রবের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা (অন্তর, মুখে ও কাজের মাধ্যমে প্রকাশ)

১৮৬﴿وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ ۖ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ ۖ فَلْيَسْتَجِيبُوا لِي وَلْيُؤْمِنُوا بِي لَعَلَّهُمْ يَرْشُدُونَ﴾

 আর হে নবী! আমার বান্দা যদি তোমার কাছে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে, তাহলে তাদেরকে বলে দাও , আমি তাদের কাছেই আছি ৷ যে আমাকে ডাকে আমি তার ডাক শুনি এবং জবাব দেই, কাজেই তাদের আমার আহবানে সাড়া দেয়া এবং আমার ওপর ঈমান আনা উচিত    একথা তুমি তাদের শুনিয়ে দাও, হয়তো সত্য-সরল পথের সন্ধান পাবে ৷   বাকারাঃ১৮৬                                  

এই আয়াতের মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি-

  • সাওম সংক্রান্ত ইবাদাতে অবস্থাবিশেষে অব্যাহতি দান এবং বিভিন্ন সহজতা সত্বেও কিছু কষ্ট বিদ্যমান রয়েছে। এ কষ্টকে সহজ করার উদ্দেশ্যে আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে যে, আমি আমার বান্দাদের সন্নিকটে রয়েছি, যখনই তারা আমার কাছে কোন বিষয়ে দো’আ করে, আমি তাদের সে দোআ কবুল করে নেই এবং তাদের বাসনা পূরণ করে দেই। এমতাবস্থায় আমার হুকুম-আহকাম মেনে চলা বান্দাদেরও একান্ত কর্তব্য। তাতে কিছুটা কষ্ট হলেও তা সহ্য করা উচিত।

ইমাম ইবনে কাসীর দো’আর প্রতি উৎসাহ দান সংক্রান্ত এই মধ্যবর্তী বাক্যটির তাৎপর্য বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেছেন যে, এ আয়াতের দ্বারা সাওম রাখার পর দোআ কবুল হওয়ার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। সে জন্যই সাওমের ইফতারের পর দোআর ব্যাপারে বিশেষ তৎপরতা অবলম্বন করা উচিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেনঃ “সিয়াম পালনকারীর দো’আ ফিরিয়ে দেয়া হয় না অর্থাৎ কবুল হয়ে থাকে।” [ইবনে মাজাহ ১৭৫৩]

 সে জন্যই আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা ইফতারের সময় পরিবার পরিজনকে ডাকতেন এবং দো’আ করতেন। [ইবনে কাসীর]

বরকতময় রমযান মাসের বিধি-বিধান ও মসলা-মাসায়েলের সাথে দুআর কথা উল্লেখ করে এ কথা পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে যে, রমযান মাসে দুআরও বড় ফযীলত রয়েছে। অতএব এ মাসে দুআর প্রতি খুব যত্ন নেওয়া উচিত।

  • মহান আল্লাহ সরাসরি ব্যক্তির ডাকে সাড়া দিয়ে থাকেন কোনো মধ্যস্থতার জন্য অন্যের প্রয়োজন নেই।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘রমাদান- বরকতময় মাস তোমাদের দুয়ারে উপস্থিত হয়েছে। পুরো মাস রোযা পালন আল্লাহ তোমাদের জন্য ফরয করেছেন। এ মাসে জান্নাতের দরজা উন্মুক্ত করে দেয়া হয়, বন্ধ করে দেয়া হয় জাহান্নামের দরজাগুলো। দুষ্ট শয়তানদের এ মাসে শৃংখলাবদ্ধ করে দেয়া হয়। এ মাসে আল্লাহ কর্তৃক একটি রাত প্রদত্ত হয়েছে, যা হাজার মাস থেকে উত্তম। যে এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হল, সে বঞ্চিত হল (মহা কল্যাণ হতে)’’ [সুনান আত-তিরমিযি: ৬৮৩]

রামাদান মাস কেন এতো সম্মানিত

রামাদান  বিশেষ মাস বলে সম্মানিত লাভ যে কারণে তা হলো:

  • নিষ্ঠাপূর্ণ ঈমান ও পূর্ণ আত্মসমর্পণকারী হওয়ার উপায়
  • পথ নির্দেশিকা আল কুর’আন নাযিল
  • তাকওয়া অর্জনের জন্য রোযা ফরয
  • আত্মশুদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণের মাস
  • বিশেষ রজনী কদরের রাত – ভাগ্যরজনী এটাই।

      * ইতিকাফের মাধ্যমে আরো বেশী রবের সাথে সম্পর্কিত হওয়া

  • সারা বিশ্বে একই সময় এই ইবাদাত ভ্রাতৃত্বের বন্ধন ও ঐক্যের শিক্ষা দেয়

আমাদের শিশুদেরও রোযা রাখাতাম। তাদেরকে আমরা তুলা বা পশমের খেলনা তৈরী করে দিতাম। তারা কেউ খাওয়ার জন্য কাঁদলে আমরা তাদেরকে ঐ খেলনা দিয়ে ভুলিয়ে রাখতাম। আর এইভাবেই ইফতারের সময় হয়ে যেত। সহীহ আল বুখারী: ১৮২১

যে ব্যক্তি কোন ওজর বা রোগ ব্যতিরেকে রামাদান মাসের একটি রোযা ভংগ করে, তার সারা জীবনের রোযা দ্বারাও এর ক্ষতিপূরন হবে না। আত তিরমিযী: ৬৭১

মানুষের মাঝে ৩টি জিনিসের দাবী থাকে —

১। ক্ষুন্নিবৃত্তির দাবী (জীবন রক্ষার জন্য)

২। যৌন আবেগের দাবী

৩। শান্তি ও বিশ্রাম গ্রহণের দাবী

আর  সাহীহুল বুখারী ইমান অধ্যায়  ও  সাহীহ মুসলিম এ ইবনু উমার এর হাদীস থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে নবী সা (আল্লাহ তাঁর উপর সালাত ও সালাম বর্ষণ করুন) বলেছেনঃ “ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত এই সাক্ষ্য দেওয়া যে আল্লাহ ছাড়া আর কোন সত্য উপাস্য নেই, এবং মুহাম্মাদ (সাঃ) আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল সালাত কায়েম (প্রতিষ্ঠা) করা, যাকাত প্রদান করা, রমযান মাসে সাওম পালন করা এবং বাইতুল্লাহ (কা’বাহ)এর উদ্দেশ্যে হজ্জ করা”।

ইসলাম হলো মুসলমানের ৫ স্তম্ভ বিশিষ্ট ঘর।

সিয়াম বা রোযার আভিধানিক অর্থ – বিরত রাখা, আবদ্ধ রাখা।

পারিভাষিক অর্থ – নিয়তের সাথে সুব্‌হে সাদেক (ফজরের ওয়াক্তের প্রথম) হতে সুর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত সব ধরনের রোযা ভংগকারী যেমন পানাহার, জৈবিক ও শারীরিক কোনো কিছু ভোগ করা থেকে বিরত থাকা।

রামাদান অর্থ পুড়িয়ে ফেলা অর্থাৎ রোযা গুনাহকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করে দেয়।

রোযা মানুষের আত্ম-সংযমের শক্তি সৃষ্টি করে, মানুষের খুদী বা আত্মজ্ঞান যখন দেহ ও অন্যান্য শক্তিসমূহকে পরিপুর্ণভাবে আয়ত্তাধীন করে যাবতীয় সিদ্ধান্ত নিজের রুহের অধীন করে তখনই আত্মসংযম হয়। রোযার মাস আমাদের ট্রেনিং দেয় কিভাবে এই আত্মসংযম লাভ করা যায়। এই মাসে আমরা প্রত্যেকের অন্তরের অবস্থান যাচাই করতে পারি। কিভাবে! চলুন জানার ও বুঝার চেষ্টা করি।

আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত। রাসুল সা. বলেছেন, রমযান মাস শুরু হলে আসমানের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানদের শিকলে বন্দী করা হয়। সহীহ আল বুখারী: ১৭৬৪

এখানে অনেকে বলেন, তাহলে মানুষ রামাদান মাসে খারাপ কাজ করে কেন? এখানেই অন্তর যাচাই করার উত্তর চলে আসে। মানুষ খারাপ কাজ করে কারণ:

  • জীন শয়তান ওয়াদা করেছে মানুষকে জাহান্নামে নিবেই আর তাই সে নানা ভাবে প্রলুদ্ধ করে।
  • অথবা মানুষের ভেতর নফ্‌সে আম্মারা (সব সময় খারাপ দিকে যেতে চায়) ও নফসে লাওয়ামা (দ্বিধাগ্রস্ত অন্তর) খারাপ কাজের দিকে আহবান করে
  • অথবা মানুষের মধ্যেও প্ররোচনাকারী আছে যারা খারাপ কাজে উদ্বুদ্ধ করে।

আর তাই আল্লাহ তা’লা সুরা নাসের মাধ্যমে শিক্ষা দিয়েছেন আল্লাহর সাহায্য চাওয়ার জন্য।

বলো, আমি আশ্রয় চাচ্ছি মানুষের প্রতিপালক,  মানুষের মালিক,  মানুষের প্রকৃত উপাস্যের কাছে। এমন প্ররোচনা দানকারীর অনিষ্ট থেকে  যে বারবার ফিরে আসে, যে মানুষের মনে প্ররোচনা দান করে, সে জিনের মধ্য থেকে হোক বা মানুষের মধ্য থেকে ৷সূরা আন নাস

মহান আল্লাহ ঈমানদারদের বলছেন রোযার উদ্দেশ্য সম্পর্কে। এখানে সবাই সেই উদ্দেশ্য লাভ করবে তা বলা হয় নাই, আল্লাহ বলছেন সম্ভবত লাভ করবে, আর সেটা হলো তাকওয়া বা আল্লাহভীতি। এই রোযা পূর্ববর্তীদের উপর ফরয ছিল। তবে ধরন ছিল অন্যরকম যেমন দু’দিন বা তিনদিন।

তাকওয়ার মূল ধাতুর অর্থ বাঁচা, মুক্তি বা নিষ্কৃতি। তাকওয়ার আভিধানিক অর্থ হল ভয় করা, পরহেযগারী, বিরত থাকা।

মূলত তাকওয়া শুধু আল্লাহভীতি নয় বরং আল্লাহ সম্পর্কে সেই রকম সচেতনতা( যা তাঁর আসমা ওয়াস সিফাতকে জানা বুঝা ও নিজ জীবনে প্রতিফলন করা)) রাখা, যার ফলে গুনাহ থেকে সরে থাকা ও কল্যান কাজে লিপ্ত থাকা যায়, মহান আল্লাহ যা আদেশ করেছেন এবং যে পদ্ধতিতে করতে বলেছেন তার অনুসরন(রাসুল সা এর আদর্শ) করা।

শরিয়তের পরিভাষায়, আল্লাহর  ভয়ে ভীত হয়ে আল্লাহ তা’লার সকল আদেশ মানা এবং নিষিদ্ধ কাজ থেকে দূরে থাকার নাম তাকওয়া।

যে কোনো ধরনের বাঁচার নাম তাকওয়া নয়। ইসলাম বা আল-কুর’আনের আলোকে যেটা প্রকৃত মুক্তি, নিষ্কৃতি বা পরিত্রাণ নামে অভিহিত হওয়ার যোগ্য সেই মুক্তি/নিষ্কৃতিই তাকওয়ার আওতায় পড়বে। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন:

কাজেই তোমাদের মধ্যে যতটা সম্ভব হয় আল্লাহকে ভয় করতে থাকো। আর শুন ও অনুসরণ কর এবং নিজের ধন-মাল ব্যয় কর, এটা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। যে লোক স্বীয় মনের সংকীর্ণতা ও কৃপনতা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে পারবে তারাই সফলকাম হবে।  সূরা আত তাগাবুন: ১৬

হে মানুষ! আমরাই তোমাদেরকে একজন পুরুষ ও একজন স্ত্রী হতে সৃষ্টি করেছি। তারপর তোমাদের মধ্যে জাতি ও ভাতৃগোষ্ঠী বানিয়ে দিয়েছি, যেন তোমরা পরস্পরকে চিনতে পারো। নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে সর্বাধিক সম্মানিত সে, যে তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক আল্লাহভীরু। নিঃসন্দেহে আল্লাহ সবকিছু জানেন এবং সব বিষয়ে অবহিত। সূরা আল হুজুরাত: ১৩

যেদিন মানুষ নিজে যা কিছু করেছে তা সব স্মরণ করবে এবং প্রত্যেক দর্শনকারীর সামনে জাহান্নাম খুলে ধরা হবে, তখন যে ব্যক্তি সীমালংঘন করেছিল এবং দুনিয়ার জীবনকে বেশী ভালো মনে করে বেছে নিয়েছিল, জাহান্নামই হবে তার ঠিকানা। আর যে ব্যক্তি নিজের রবের সামনে এসে দাঁড়াবার ব্যাপারে ভীত ছিল এবং নফ্‌সকে খারাপ কামনা থেকে বিরত রেখেছিল তার ঠিকানা হবে জান্নাত। সূরা আন নাযিয়াত: ৩৫-৪১

আর তাই  মহান আল্লাহ ঈমানদের সম্বোধন করে আহবান করেছেন:

হে ঈমানদারগণ! তোমরা যথাযথভাবে আল্লাহকে ভয় করো। মুসলিম থাকা অবস্থায় ছাড়া যেন তোমাদের মৃত্যু না হয়। সূরা আলে ইমরান: ১০২

নিষিদ্ধ কাজ থেকে দূরে থাকবো আল্লাহর ভয়ে ও মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি পাওয়ার লক্ষ্যে। একটি ছোট সন্তানও রোযা রেখে  লুকিয়ে কিছু খেয়ে ফেলে না, পানি দিয়ে কুলি করলে, খুব সাবধানে করে যেন রোযা নষ্ট না হয়ে যায় – এইটি হলো তাকওয়ার প্রশিক্ষণ।

অন্যান্য খারাপ কাজ থেকেও দূরে থাকতে হবে – তা না হলে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে, এইভাবেই আত্মশুদ্ধি এনে দিতে পারে একজন ঈমানদারকে। হাদীস থেকে আমরা জানতে পারি সাওম কিভাবে এই আত্মশুদ্ধির প্রশিক্ষন দিয়ে থাকে।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

(রোযা থেকেও) কেউ যদি মিথ্যা কথা বলা ও তদনুযায়ী কাজ করা পরিত্যাগ না করে তবে তার শুধু খাদ্য ও পানীয় পরিত্যাগ করায় (রোযা রাখায়) আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই।সহীহ আল বুখারী: ১৭৬৮

প্রত্যেক জিনিষের যাকাত বা পরিশুদ্ধি আছে। শরীরের পরিশুদ্ধি হচ্ছে রোযা। রোযা সবরের অর্ধেক। ইবনে মাজা

তোমাদের কেউ রোযা রাখলে সে যেন গুনাহ, অজ্ঞতা ও জাহেলিয়াতের কাজ না করে। যদি কেউ তাকে গালি দেয় কিংবা তার সাথে লড়তে আসে সে যেন বলে দেয়, আমি রোযা রেখেছি, আমি রোযাদার। সহীহ আল বুখারী

সাওম যেনার কাজের গুনাহ থেকে দূরে রাখে – রাসূল সা. বলেছেন: তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে তার বিয়ে করা উচিত। কেননা বিয়ে চোখকে অবনতকারী ও গুপ্তাঙ্গের হেফাযতকারী। আর যে বিয়ে করতে সামর্থ নয় তার রোযা রাখা অবশ্য কর্তব্য। কেননা রোযা যৌন তাড়নাকে অবদমিত রাখে। সহীহ আল বুখারী: ১৭৭০

রাসূল সা. বলেছেন, সিয়াম ঢাল স্বরূপ যার দ্বারা সিয়াম পালনকারী নিজেকে জাহান্নাম হতে বাঁচাতে পারে। মুসনাদে আহমাদ: ১৫২৬৫

সাওমের পুরস্কার

রাসূল সা. বলেছেন:

যে রামাদান মাসে ঈমানের সাথে প্রতিদানের আশায় সাওম পালন করে, তার পূর্বের গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। সহীহ আল বুখারী: ৩৮

প্রত্যেক আদম সন্তানকে তার নেক আমল দশগুণ থেকে সাতশত গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করে দেয়া হবে। আল্লাহ তা’লা বলেন, তা অবশ্য সিয়ামের প্রতিদান ছাড়া, কারণ সিয়াম আমার জন্য, আর আমিই তার প্রতিদান দেব। কেননা আমার কারণেই সিয়াম পালনকারী তার যৌনকার্য ও আহার বর্জন করে থাকে। সহীহ মুসলিম: ১১৫১

আর সেই মহান সত্ত্বার শপথ, যাঁর মুঠিতে মুহাম্মাদের প্রাণ! আল্লাহর কাছে রোযাদারের মুখের গন্ধ কস্তরীর খোশবু থেকেও উত্তম। রোযাদারের খুশীর বিষয় দু’টি। যখন সে ইফতার করে তখন একবার খুশীর কারণ হয়। আরেকবার যখন সে তার রবের সাথে সাক্ষাত করে রোযার বিনিময় পেয়ে খুশী হবে। সহীহ আল বুখারী: ১৭৬৯

আল্লাহর রয়েছে প্রতি ফিতরে (ইফতারের সময় জাহান্নাম থেকে) মুক্তিপ্রাপ্ত বান্দারা। মুসনাদে আহমাদ: ৫/২৫৬

যে রামাদান মাসে সিয়াম পালন করল, এরপর শাওয়ালের ছয়দিন সাওম পালন করল, তবে তা সারা জীবন সাওম রাখার সমতুল্য। সহীহ মুসলিম: ১১৬৪

এ মাসে উমরা করা হজ্জ করার সমতূল্য।  সহীহ মুসলিম: ১২৫৬

যে কোন সাওম পালনকারীকে ইফতার করায়, তার (যে ইফতার করালো) তার (সাওম পালনকারীর) সমান সওয়াব হবে, অথচ সেই সাওম পালনকারীর সওয়াব কোন অংশে কমে যাবে না।   আত তিরমিযী: ৬৪৭

বেহেশতে ‘রাইয়ান’ নামক একটি দরজা আছে, কিয়ামতের দিন এটি দিয়ে রোযাদাররা (জান্নাতে) প্রবেশ করবে। রোযাদার ছাড়া আর কেউ এই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। (কিয়ামতের দিন রোযাদারকে ডেকে) বলা হবে, রোযাদাররা কোথায়? তখন তারা উঠে দাঁড়াবে। তারা ছাড়া আর একজন লোকও সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না। তাদের প্রবেশের পরই তা বন্ধ করে দেয়া হবে যাতে ঐ দরজা দিয়ে আর কেউ প্রবেশ করতে না পারে। সহীহ আল বুখারী: ১৭৬১

সিয়াম ও কোরআন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। সিয়াম বলবে, হে আল্লাহ! আমি তাকে পানাহার ও যৌনাচার থেকে বিরত রেখেছি। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। কোরআন বলবে, আমি রাতের ঘুম থেকে তাকে বিরত রেখেছি। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। উভয়ের সুপারিশ কবুল করা হবে।মুসনাদে আহমাদ: ৬৬২৬

তাহলে দুনিয়া ও আখেরাত কল্যাণের জন্যই আমাদের এই রামাদান মাসকে কাজে লাগানোর জন্য এখনি পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।

এ মাসে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল রয়েছে, যেগুলো পালন করার মাধ্যমে আমরা জান্নাতে যেতে পারি, জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেতে পারি। নিম্নে রমাদান মাসের আমল সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

তবে এ আমলগুলো করার জন্য শর্ত হলো:

এক:- ইখলাস অর্থাৎ ‘‘একনিষ্ঠতার সাথে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্যে আমল করা। সুতরাং যে আমল হবে টাকা উপার্জনের জন্য, নেতৃত্ব অর্জনের জন্য ও সুনাম-খ্যাতি অর্জনের জন্যে সে আমলে ইখলাস থাকবে না অর্থাৎ এসব ইবাদাত বা নেক আমলের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জিত হবে না বরং তা ছোট শির্কে রূপান্তরিত হতে পারে। আল-কুরআনে এসেছে: “আর তাদেরকে কেবল এই নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে, তারা যেন আল্লাহর ‘ইবাদাত করে তাঁরই জন্য দীনকে একনিষ্ঠ করে” [সূরা আল-বাইয়্যেনাহ : ৫]

দুই:- ইবাদাতের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ। সহীহ হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যে সকল ইবাদাতের কথা উল্লেখ আছে সেগুলো পরিপূর্ণ অনুসরণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো বাড়ানো বা কমানোর সুযোগ নেই। কারণ, ইবাদাত হচ্ছে তাই যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিখিয়ে দিয়েছেন। কুরআনে এসেছে:‘এবং রাসূল তোমাদের জন্য যা নিয়ে এসেছেন তা তোমরা গ্রহণ কর, আর যা থেকে সে তোমাদের নিষেধ করে তা থেকে বিরত হও’ [সূরা হাশর: ৭]

এ বিষয়ে রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘যে এমন ইবাদত করল যাতে আমাদের কোন নির্দেশনা নেই তা পরিত্যাজ্য হিসাবে গণ্য হবে’’। [সহীহ মুসলিম : ৪৫৯০]

আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম রামাদান এলে কি করতেন হাদীস থেকে আমরা জানার চেষ্টা করি।

গোটা মানব জাতির মধ্যে নবী সা. সবচেয়ে দানশীল ছিলেন। রামাদান মাসে জিবরাঈল আ. যে সময় তাঁর সাথে সাক্ষাত করতেন সে সময় তিনি সবচেয়ে বেশী দানশীল হয়ে উঠতেন। জিবরাঈল রামাদানে প্রতি রাতেই তাঁর সাথে সাক্ষাত করতেন। এভাবেই রামাদান মাস অতিবাহিত হত। নবী স. (এ সময়) তার সামনে কুর’আন পড়ে শুনাতেন। যখন জিবরাঈল তাঁর সাথে সাক্ষাত করতেন তখন তিনি গতিবান বায়ুর চাইতেও বেশী দানশীল হয়ে উঠতেন। সহীহ আল বুখারী: ১৭৬৭

তাহলে এই হাদিস থেকে জানা যায় নবী সা. রামাদানে কি করতেন:

  • বেশী বেশী দান করা
  • কুর’আন পাঠ করা

মহান আল্লাহতা’লা বলেছেন:

যারা নিজেদের অর্থ সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তাদের (দানের) উপমা একটি শস্যবীজ, যা উৎপাদন করে সাতটি শীষ এবং প্রত্যেক শীষে শতদানা। (এভাবেই) যাকে ইচ্ছা আল্লাহ বহুগুণ বৃদ্ধি করে দেন। তিনি মহা প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞানী।সূরা আল বাকারা: ২৬১

হে সেই সব লোক যারা ঈমান এনেছো! তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তানাদি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফিল করে না দেয়।  যারা এরূপ করবে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকবে। আমি তোমাদের যে রিযিক দিয়েছি তোমাদের কারো মৃত্যুর সময় আসার পূর্বেই তা থেকে খরচ করো। সে সময় সে বলবে: হে আমার রব, তুমি আমাকে আরো কিছুটা অবকাশ দিলে না কেন? তাহলে আমি দান করতাম এবং নেককার লোকদের মধ্যে শামিল হয়ে যেতাম। অথচ যখন কারো কাজের অবকাশ পূর্ণ হয়ে যাওয়ার সময় এসে যায় তখন আল্লাহ তাকে আর কোন অবকাশ দেন না মোটেও। তোমরা যা কিছু কর সে বিষয়ে আল্লাহ‌ পুরোপুরি অবহিত।সূরা আল মুনাফিকুন: ৯-১১

রোযা ভঙ্গের কারণগুলো কি কি?

আল্লাহ তাআলা পরিপূর্ণ হেকমত অনুযায়ী রোযার বিধান জারী করেছেন। তিনি রোযাদারকে ভারসাম্য রক্ষা করে রোযা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন; একদিকে যাতে রোযা রাখার কারণে রোযাদারের শারীরিক কোন ক্ষতি না হয়। অন্যদিকে সে যেন রোযা বিনষ্টকারী কোন বিষয়ে লিপ্ত না হয়।

এ কারণে রোযা-বিনষ্টকারী বিষয়গুলো দুইভাগে বিভক্ত:

কিছু রোযা-বিনষ্টকারী বিষয় রয়েছে যেগুলো শরীর থেকে কোন কিছু নির্গত হওয়ার সাথে সম্পৃক্ত। যেমন- সহবাস, ইচ্ছাকৃত বমি করা, হায়েয ও শিঙ্গা লাগানো। শরীর থেকে এগুলো নির্গত হওয়ার কারণে শরীর দুর্বল হয়। এ কারণে আল্লাহ তাআলা এগুলোকে রোযা ভঙ্গকারী বিষয় হিসেবে নির্ধারণ করেছেন; যাতে করে এগুলো নির্গত হওয়ার দুর্বলতা ও রোযা রাখার দুর্বলতা উভয়টি একত্রিত না হয়। এমনটি ঘটলে রোযার মাধ্যমে রোযাদার ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং রোযা বা উপবাসের ক্ষেত্রে আর ভারসাম্য বজায় থাকবে না।

আর কিছু রোযা-বিনষ্টকারী বিষয় আছে যেগুলো শরীরে প্রবেশ করানোর সাথে সম্পৃক্ত। যেমন- পানাহার। তাই রোযাদার যদি পানাহার করে তাহলে যে উদ্দেশ্যে রোযার বিধান জারী করা হয়েছে সেটা বাস্তবায়িত হবে না।[মাজমুউল ফাতাওয়া ২৫/২৪৮]

আল্লাহ তাআলা নিম্নোক্ত আয়াতে রোযা-বিনষ্টকারী বিষয়গুলোর মূলনীতি উল্লেখ করেছেন:

“এখন তোমরা নিজ স্ত্রীদের সাথে সহবাস কর এবং আল্লাহ তোমাদের জন্য যা কিছু লিখে রেখেছেন তা (সন্তান) তালাশ কর। আর পানাহার কর যতক্ষণ না কালো সুতা থেকে ভোরের শুভ্র সুতা পরিস্কার ফুটে উঠে…”[সূরা বাকারা, আয়াত: ১৮৭]

এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা রোযা-নষ্টকারী প্রধান বিষয়গুলো উল্লেখ করেছেন। সেগুলো হচ্ছে- পানাহার ও সহবাস। আর রোযা নষ্টকারী অন্য বিষয়গুলো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর হাদিসে উল্লেখ করেছেন।

তাই রোযা নষ্টকারী বিষয় ৭টি; সেগুলো হচ্ছে-

১। সহবাস

২। হস্তমৈথুন

৩। পানাহার

৪। যা কিছু পানাহারের স্থলাভিষিক্ত

৫। শিঙ্গা লাগানো কিংবা এ জাতীয় অন্য কোন কারণে রক্ত বের করা

৬। ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করা

৭। মহিলাদের হায়েয ও নিফাসের রক্ত বের হওয়া

এ বিষয়গুলোর মধ্যে প্রথম হচ্ছে- সহবাস;

এটি সবচেয়ে বড় রোযা নষ্টকারী বিষয় ও এতে লিপ্ত হলে সবচেয়ে বেশি গুনাহ হয়। যে ব্যক্তি রমযানের দিনের বেলা স্বেচ্ছায় স্ত্রী সহবাস করবে অর্থাৎ দুই খতনার স্থানদ্বয়ের মিলন ঘটাবে এবং পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগ লজ্জাস্থানের ভেতরে অদৃশ্য হয়ে যাবে সে তার রোযা নষ্ট করল; এতে করে বীর্যপাত হোক কিংবা না হোক। তার উপর তওবা করা, সেদিনের রোযা পূর্ণ করা, পরবর্তীতে এ দিনের রোযা কাযা করা ও কঠিন কাফফারা আদায় করা ফরয।

এর দলিল হচ্ছে- আবু হুরায়রা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদিস তিনি বলেন: “এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট এসে বলল: ইয়া রাসূলুল্লাহ, আমি ধ্বংস হয়েছি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: কিসে তোমাকে ধ্বংস করল? সে বলল: আমি রমযানে (দিনের বেলা) স্ত্রীর সাথে সহবাস করে ফেলেছি। তিনি বললেন: তুমি কি একটি ক্রীতদাস আযাদ করতে পারবে? সে বলল: না। তিনি বললেন: তাহলে লাগাতার দুই মাস রোযা রাখতে পারবে? সে বলল: না। তিনি বললেন: তাহলে ষাটজন মিসকীনকে খাওয়াতে পারবে? সে বলল: না…[হাদিসটি সহিহ বুখারী (১৯৩৬) ও সহিহ মুসলিমে (১১১১) এসেছে]

স্ত্রী সহবাস ছাড়া অন্য কোন কারণে কাফফারা আদায় করা ওয়াজিব হয় না।

দ্বিতীয়: হস্তমৈথুন। হস্তমৈথুন বলতে বুঝায় হাত দিয়ে কিংবা অন্য কিছু দিয়ে বীর্যপাত করানো। হস্তমৈথুন যে রোযা ভঙ্গকারী এর দলিল হচ্ছে- হাদিসে কুদসীতে রোযাদার সম্পর্কে আল্লাহর বাণী: “সে আমার কারণে পানাহার ও যৌনকর্ম পরিহার করে” সুতরাং যে ব্যক্তি রমযানের দিনের বেলা হস্তমৈথুন করবে তার উপর ফরয হচ্ছে— তওবা করা, সে দিনের বাকী সময় উপবাস থাকা এবং পরবর্তীতে সে রোযাটির কাযা পালন করা। আর যদি এমন হয়— হস্তমৈথুন শুরু করেছে বটে; কিন্তু বীর্যপাতের আগে সে বিরত হয়েছে তাহলে আল্লাহর কাছে তওবা করতে হবে; তার রোযা সহিহ। বীর্যপাত না করার কারণে তাকে রোযাটি কাযা করতে হবে না। রোযাদারের উচিত হচ্ছে— যৌন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী সবকিছু থেকে দূরে থাকা এবং সব কুচিন্তা থেকে নিজের মনকে প্রতিহত করা। আর যদি, মজি বের হয় তাহলে অগ্রগণ্য মতানুযায়ী— এটি রোযা ভঙ্গকারী নয়।

তৃতীয়: পানাহার। পানাহার বলতে বুঝাবে— মুখ দিয়ে কোন কিছু পাকস্থলীতে পৌঁছানো। অনুরূপভাবে নাক দিয়ে কোন কিছু যদি পাকস্থলীতে পৌঁছানো হয় সেটাও পানাহারের পর্যায়ভুক্ত। এ কারণে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “তুমি ভাল করে নাকে পানি দাও; যদি না তুমি রোযাদার হও।”[সুনানে তিরমিযি (৭৮৮), আলবানি সহিহ তিরমিযিতে হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন] সুতরাং নাক দিয়ে পাকস্থলীতে পানি প্রবেশ করানো যদি রোযাকে ক্ষতিগ্রস্ত না করত তাহলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভাল করে নাকে পানি দিতে নিষেধ করতেন না।

চতুর্থ: যা কিছু পানাহারের স্থলাভিষিক্ত। এটি দুইটি বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করে। ১. যদি রোযাদারের শরীরে রক্ত পুশ করা হয়। যেমন- আহত হয়ে রক্তক্ষরণের কারণে কারো শরীরে যদি রক্ত পুশ করা হয়; তাহলে সে ব্যক্তির রোযা ভেঙ্গে যাবে। যেহেতু পানাহারের উদ্দেশ্য হচ্ছে— রক্ত তৈরী। ২. খাদ্যের বিকল্প হিসেবে ইনজেকশন পুশ করা। কারণ এমন ইনজেকশন নিলে পানাহারের প্রয়োজন হয় না।[শাইখ উছাইমীনের ‘মাজালিসু শারহি রমাদান’, পৃষ্ঠা- ৭০] তবে, যেসব ইনজেকশন পানাহারের স্থলাভিষিক্ত নয়; বরং চিকিৎসার জন্য দেয়া হয়, উদাহরণতঃ ইনসুলিন, পেনেসিলিন কিংবা শরীর চাঙ্গা করার জন্য দেয়া হয় কিংবা টীকা হিসেবে দেয়া হয় এগুলো রোযা ভঙ্গ করবে না; চাই এসব ইনজেকশন মাংশপেশীতে দেয়া হোক কিংবা শিরাতে দেয়া হোক।[শাইখ মুহাম্মদ বিন ইব্রাহিম এর ফতোয়াসমগ্র (৪/১৮৯)] তবে, সাবধানতা স্বরূপ এসব ইনজেকশন রাতে নেয়া যেতে পারে।

কিডনী ডায়ালাইসিস এর ক্ষেত্রে রোগীর শরীর থেকে রক্ত বের করে সে রক্ত পরিশোধন করে কিছু কেমিক্যাল ও খাদ্য উপাদান (যেমন— সুগার ও লবণ ইত্যাদি) যোগ করে সে রক্ত পুনরায় শরীরে পুশ করা হয়; এতে করে রোযা ভেঙ্গে যাবে।[ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটির ফতোয়াসমগ্র (১০/১৯)]

পঞ্চম: শিঙ্গা লাগানোর মাধ্যমে রক্ত বের করা। দলিল হচ্ছে— নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “যে ব্যক্তি শিঙ্গা লাগায় ও যার শিঙ্গা লাগানো হয় উভয়ের রোযা ভেঙ্গে যাবে।”[সুনানে আবু দাউদ (২৩৬৭), আলবানী সহিহ আবু দাউদ গ্রন্থে (২০৪৭) হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]

রক্ত দেয়াও শিঙ্গা লাগানোর পর্যায়ভুক্ত। কারণ রক্ত দেয়ার ফলে শরীরের উপর শিঙ্গা লাগানোর মত প্রভাব পড়ে। তাই রোযাদারের জন্য রক্ত দেয়া জায়েয নেই। তবে যদি অনন্যোপায় কোন রোগীকে রক্ত দেয়া লাগে তাহলে রক্ত দেয়া জায়েয হবে। রক্ত দানকারীর রোযা ভেঙ্গে যাবে এবং সে দিনের রোযা কাযা করবে।[শাইখ উছাইমীনের ‘মাজালিসু শারহি রামাদান’ পৃষ্ঠা-৭১]

কোন কারণে যে ব্যক্তির রক্ত ক্ষরণ হচ্ছে— তার রোযা ভাঙ্গবে না; কারণ রক্ত ক্ষরণ তার ইচ্ছাকৃত ছিল না।[স্থায়ী কমিটির ফতোয়াসমগ্র (১০/২৬৪)]

আর দাঁত তোলা, ক্ষতস্থান ড্রেসিং করা কিংবা রক্ত পরীক্ষা করা ইত্যাদি কারণে রোযা ভাঙ্গবে না; কারণ এগুলো শিঙ্গা লাগানোর পর্যায়ভুক্ত নয়। কারণ এগুলো দেহের উপর শিঙ্গা লাগানোর মত প্রভাব ফেলে না।

ষষ্ঠ: ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করা। দলিল হচ্ছে— “যে ব্যক্তির অনিচ্ছাকৃতভাবে বমি এসে যায় তাকে উক্ত রোযা কাযা করতে হবে না। কিন্তু যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় বমি করল তাকে সে রোযা কাযা করতে হবে”[সুনানে তিরমিযিঃ ৭২০, আলবানী সহিহ তিরমিযি গ্রন্থে (৫৭৭) হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন]

হাদিসে ذرعه শব্দের অর্থ غلبه।

ইবনে মুনযির বলেন: যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত বমি করেছে আলেমদের ঐক্যবদ্ধ অভিমত (ইজমা) হচ্ছে তার রোযা ভেঙ্গে গেছে।[আল-মুগনী (৪/৩৬৮)]

যে ব্যক্তি মুখের ভেতরে হাত দিয়ে কিংবা পেট কচলিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করেছে কিংবা ইচ্ছাকৃতভাবে এমন কিছু শুকেছে কিংবা বারবার দেখেছে এক পর্যায়ে তার বমি এসে গেছে তাকেও রোযা কাযা করতে হবে।

তবে যদি কারো পেট ফেঁপে থাকে তার জন্য বমি আটকে রাখা বাধ্যতামূলক নয়; কারণ এতে করে তার স্বাস্থ্যের ক্ষতি হবে।[শাইখ উছাইমীনের মাজালিসু শাহরি রামাদান, পৃষ্ঠা-৭১]

সপ্তম: হায়েয ও নিফাসের রক্ত নির্গত হওয়া। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যখন মহিলাদের হায়েয হয় তখন কি তারা নামায ও রোযা ত্যাগ করে না!?” সহিহ বুখারীঃ ৩০৪ তাই কোন নারীর হায়েয কিংবা নিফাসের রক্ত নির্গত হওয়া শুরু হলে তার রোযা ভেঙ্গে যাবে; এমনকি সেটা সূর্যাস্তের সামান্য কিছু সময় পূর্বে হলেও। আর কোন নারী যদি অনুভব করে যে, তার হায়েয শুরু হতে যাচ্ছে; কিন্তু সূর্যাস্তের আগে পর্যন্ত রক্ত বের হয়নি তাহলে তার রোযা শুদ্ধ হবে এবং সেদিনের রোযা তাকে কাযা করতে হবে না।

আর হায়েয ও নিফাসগ্রস্ত নারীর রক্ত যদি রাত থাকতে বন্ধ হয়ে যায় এবং সাথে সাথে তিনি রোযার নিয়ত করে নেন; তবে গোসল করার আগেই ফজর হয়ে যায় সেক্ষেত্রে আলেমদের মাযহাব হচ্ছে— তার রোযা শুদ্ধ হবে।

হায়েযবতী নারীর জন্য উত্তম হচ্ছে তার স্বাভাবিক মাসিক অব্যাহত রাখা এবং আল্লাহ তার জন্য যা নির্ধারণ করে রেখেছেন সেটার উপর সন্তুষ্ট থাকা, হায়েয-রোধকারী কোন কিছু ব্যবহার না-করা। বরং আল্লাহ তার থেকে যেভাবে গ্রহণ করেন সেটা মেনে নেয়া অর্থাৎ হায়েয এর সময় রোযা ভাঙ্গা এবং পরবর্তীতে সে রোযা কাযা পালন করা। উম্মুল মুমিনগণ এবং সলফে সালেহীন নারীগণ এভাবেই আমল করতেন।[স্থায়ী কমিটির ফতোয়াসমগ্র (১০/১৫১)]

তাছাড়া চিকিৎসা গবেষণায় হায়েয বা মাসিক রোধকারী এসব উপাদানের বহুমুখী ক্ষতি সাব্যস্ত হয়েছে। এগুলো ব্যবহারের ফলে অনেক নারীর হায়েয অনিয়মিত হয়ে গেছে। তারপরেও কোন নারী যদি হায়েয বন্ধকারী ঔষধ গ্রহণ করার ফলে তার হায়েযের রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যায় এবং জায়গাটি শুকিয়ে যায় সে নারী রোযা রাখতে পারবে এবং তার রোযাটি আদায় হয়ে যাবে।

উল্লেখিত বিষয়গুলো হচ্ছে- রোযা বিনষ্টকারী। তবে, হায়েয ও নিফাস ছাড়া অবশিষ্ট বিষয়গুলো রোযা ভঙ্গ করার জন্য তিনটি শর্ত পূর্ণ হতে হয়:

-রোযা বিনষ্টকারী বিষয়টি ব্যক্তির গোচরীভূত থাকা; অর্থাৎ এ ব্যাপারে সে অজ্ঞ না হয়।

-তার স্মরণে থাকা।

-জোর-জবরদস্তির স্বীকার না হয়ে স্বেচ্ছায় তাতে লিপ্ত হওয়া।

রমাদান মাসের গুরুত্বপূর্ণ আমলগুলো হলো (লিখেছেন: হাবীবুল্লাহ মুহাম্মাদ ইকবাল  |  সম্পাদনা: ড.আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া)

[১] সিয়াম পালন করা:  ইসলামের পাঁচটি রুকনের একটি রুকন হল সিয়াম। আর রমাদান মাসে সিয়াম পালন করা ফরজ। সেজন্য রমাদান মাসের প্রধান আমল হলো সুন্নাহ মোতাবেক সিয়াম পালন করা। মহান আল্লাহ বলেন: “সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে, মাসটিতে উপস্থিত হবে, সে যেন তাতে সিয়াম পালন করে” [সূরা আল-বাকারাহ : ১৮৫]

সিয়াম পালনের ফযিলাত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ইখলাস নিয়ে অর্থাৎ একনিষ্ঠভাবে আল্লাহকে সন্তুষ্টি করার জন্য রমাদানে সিয়াম পালন করবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে’’ [সহীহ বুখারী : ২০১৪]

‘‘যে কেউ আল্লাহর রাস্তায় (অর্থাৎ শুধুমাত্র আল্লাহকে খুশী করার জন্য) একদিন সিয়াম পালন করবে, তাদ্বারা আল্লাহ তাকে জাহান্নামের অগ্নি থেকে সত্তর বছরের রাস্তা পরিমাণ দূরবর্তীস্থানে রাখবেন’’। [সহীহ মুসলিম : ২৭৬৭]

মিসওয়াক করা: মেসওয়াকের প্রতি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। হাদীসে এসেছে: অর্থাৎ মেসওয়াক মুখের জন্য পবিত্রকারী, এবং রবের সন্তুষ্টি আনয়নকারী। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোযা রেখেও মেসওয়াক করতেন বলে বিভিন্ন বর্ণনায় পাওয়া যায়। [সহীহ ইবন খুযাইমাহ : ১৩৫]

[২] সময় মত সালাত আদায় করা: সিয়াম পালনের সাথে সাথে সময় মত নামায আদায় করার মাধ্যমে জান্নাতে যাওয়ার পথ সুগম হয়। কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে: ‘নিশ্চয় সালাত মুমিনদের উপর নির্দিষ্ট সময়ে ফরয।’ [সূরা নিসা : ১০৩]

এ বিষয়ে হাদীসে এসেছে:আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী! কোন আমল জান্নাতের অতি নিকটবর্তী? তিনি বললেন, সময় মত নামায আদায় করা। [সহীহ মুসলিম : ২৬৩]

[৩] সহীহভাবে কুরআন শেখা: রমাদান মাসে কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে। এ মাসের অন্যতম আমল হলো সহীহভাবে কুরআন শেখা। আর কুরআন শিক্ষা করা ফরয করা হয়েছে। কেননা কুরআনে বলা হয়েছে:‘‘পড় তোমার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন’’ [সূরা আলাক : ১]

 রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআন শেখার নির্দেশ দিয়ে বলেন:‘‘তোমরা কুরআন শিক্ষা কর এবং তিলাওয়াত কর’’ [মুসনাদ আলজামি : ৯৮৯০]

 [৪] অপরকে কুরআন পড়া শেখানো: রমাদান মাস অপরকে কুরআন শেখানোর উত্তম সময়। এ মাসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে সাহাবীদেরকে কুরআন শিক্ষা দিতেন। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি সেই, যে নিজে কুরআন শিক্ষা করে ও অপরকে শিক্ষা দেয়’’ [সহীহ আল-বুখারী : ৫০২৭]

‘যে আল্লাহর কিতাব থেকে একটি আয়াত শিক্ষা দিবে, যত তিলাওয়াত হবে তার সাওয়াব সে পাবে’ [সহীহ কুনুযুস সুন্নাহ আন-নবুবিয়্যাহ : ০৭]

[৫] বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করা: এটি কুরআনের মাস। তাই এ মাসে অন্যতম কাজ হলো বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করা। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘যে ব্যক্তি কুরআনের একটি হরফ পাঠ করে, তাকে একটি নেকি প্রদান করা হয়। প্রতিটি নেকি দশটি নেকির সমান। আমি বলি না যে, আলিফ-লাম-মীম একটি হরফ। বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ এবং মীম একটি হরফ’’ [সুনান আত-তিরমিযী: ২৯১০, সহীহ]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমাদান ব্যতীত কোন মাসে এত বেশি তিলাওয়াত করতেন না। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: ‘‘রমাদান ব্যতীত অন্য কোনো রাত্রিতে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পূর্ণ কুরআন তিলাওয়াত করতে, কিংবা ভোর অবধি সালাতে কাটিয়ে দিতে অথবা পূর্ণ মাস রোযা পালন করে কাটিয়ে দিতে দেখি নি’’ [সহীহ মুসলিম : ১৭৭৩]

[৬] কুরআন মুখস্থ বা হিফয করা: কুরআন হিফয করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেননা আল্লাহ তা‘আলা নিজেই কুরআন হিফযের দায়িত্ব নিয়েছেন। তিনি এ দায়িত্ব মূলত বান্দাদেরকে কুরআন হিফয করানোর মাধ্যমেই সম্পাদন করেন। কুরআনে এসেছে: ‘‘নিশ্চয় আমি কুরআন নাযিল করেছি, আর আমিই তার হিফাযতকারী’’ [সূরা আল-হিজর: ৯]

যে যত বেশি অংশ হিফয করতে পারবে তা তার জন্য ততই উত্তম।আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল ‘আস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: ‘‘কুরআনের ধারক-বাহককে বলা হবে কুরআন পড়ে যাও, আর উপরে উঠতে থাক, ধীর-স্থিরভাবে তারতীলের সাথে পাঠ কর, যেমন দুনিয়াতে তারতীলের সাথে পাঠ করতে। কেননা জান্নাতে তোমার অবস্থান সেখানেই হবে, যেখানে তোমার আয়াত পড়া শেষ হবে” [সুনান আত-তিরমিযী : ২৯১৪]

৭। একজন অপরজনকে কুরআন শুনানো: রমাদান মাসে একজন অপরজনকে কুরআন শুনানো একটি উত্তম আমল। এটিকে দাওর বলা হয়। ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে: জিবরাইল আলাইহিস সালাম রমাদানের প্রতি রাতে রমাদানের শেষ পর্যন্ত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সাক্ষাৎ করতেন এবং রাসূল তাকে কুরআন শোনাতেন। [সহীহ আল-বুখারী : ১৯০২]

ইবনে হাজার রাহেমাহুল্লাহ্ বলেন : জিবরাইল প্রতি বছর রাসূলের সাথে সাক্ষাৎ করে এক রমযান হতে অন্য রমযান অবধি যা নাযিল হয়েছে, তা শোনাতেন এবং শুনতেন। যে বছর রাসূলের অন্তর্ধান হয়, সে বছর তিনি দু বার শোনান ও শোনেন ।

৮।  কুরআন বুঝা ও আমল করা: কুরআনের এ মাসে কুরআন বুঝা ও আমল করা গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। কুরআন অনুযায়ী নিজের জীবনকে গড়ে তোলা। এ বিষয়ে কুরআনে নির্দেশ দেয়া হয়েছে: ‘তোমাদের প্রতি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে যা নাযিল করা হয়েছে, তা অনুসরণ কর এবং তাকে ছাড়া অন্য অভিভাবকের অনুসরণ করো না। তোমরা সামান্যই উপদেশ গ্রহণ কর’। [সূরা আল-আ‘রাফ : ৩]

কুরআনের জ্ঞানে পারদর্শী আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: ‘আমরা যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে কুরআনের দশটি আয়াত শিক্ষা গ্রহণ করতাম, এরপর ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা পরবর্তী দশটি আয়াত শিক্ষা করতাম না, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা এই দশ আয়াতের ইলম ও আমল শিখতাম’ [শরহে মুশকিলুল আছার : ১৪৫০]

৯। সালাতুত তারাবীহ পড়া: সালাতুত তারাবীহ পড়া এ মাসের অন্যতম আমল। তারাবীহ পড়ার সময় তার হক আদায় করতে হবে। হাদীসে এসেছে: ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াব হাসিলের আশায় রমাদানে কিয়ামু রমাদান (সালাতুত তারাবীহ) আদায় করবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে’ [সহীহ আল-বুখারী : ২০০৯]

তারাবীহ এর সালাত তার হক আদায় করে অর্থাৎ ধীরস্থীরভাবে আদায় করতে হবে। তারাবীহ জামায়াতের সাথে আদায় করা সুন্নাহ এর অন্তর্ভুক্ত। হাদীসে আছে: ‘‘যে ব্যক্তি ইমামের সাথে প্রস্থান করা অবধি সালাত আদায় করবে (সালাতুত তারাবীহ) তাকে পুরো রাত কিয়ামুল লাইলের সাওয়াব দান করা হবে’’ [সুনান আবূ দাউদ : ১৩৭৭, সহীহ]

[১০] সাহরী খাওয়া: সাহরী খাওয়ার মধ্যে বরকত রয়েছে এবং সিয়াম পালনে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। হাদীসে এসেছে: ‘‘সাহরী হল বরকতময় খাবার। তাই কখনো সাহরী খাওয়া বাদ দিয়ো না। এক ঢোক পানি পান করে হলেও সাহরী খেয়ে নাও। কেননা সাহরীর খাবার গ্রহণকারীকে আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর ফেরেশতারা স্মরণ করে থাকেন’’ [মুসনাদ আহমাদ : ১১১০১, সহীহ]

 [১১] শুকরিয়া আদায় করা: রমাদান মাস পাওয়া এক বিরাট সৌভাগ্যের বিষয়। সেজন্য আল্লাহ তা‘আলার বেশি বেশি শুকরিয়া আদায় করা এবং আগামী রমাদান পাওয়ার জন্য তাওফীক কামনা করা। রমাদান সম্পর্কে কুরআনে বলা হয়েছে: ‘‘আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূরণ কর এবং তিনি তোমাদেরকে যে হিদায়াত দিয়েছেন, তার জন্য আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা কর এবং যাতে তোমরা শোকর কর।’’ [সূরা আল বাকারাহ : ১৮৫]

‘‘আর যখন তোমাদের রব ঘোষণা দিলেন, ‘যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় কর, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের বাড়িয়ে দেব, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয় আমার আজাব বড় কঠিন’।’’ [সূরা ইবরাহীম : ৭]

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়ামাতের শুকরিয়া আদায় করে বলতেন অর্থাৎ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য [সুনান আত-তিরমিযী : ২৭৩৮]

[১২] কল্যাণকর কাজ বেশি বেশি করা: এ মাসটিতে একটি ভাল কাজ অন্য মাসের চেয়ে অনেক বেশি উত্তম। সেজন্য যথাসম্ভব বেশি বেশি ভাল কাজ করতে হবে। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘এ মাসের প্রত্যেক রাতে একজন ঘোষণাকারী এ বলে আহবান করতে থাকে যে, হে কল্যাণের অনুসন্ধানকারী তুমি আরো অগ্রসর হও! হে অসৎ কাজের পথিক, তোমরা অন্যায় পথে চলা বন্ধ কর। (তুমি কি জান?) এ মাসের প্রতি রাতে আল্লাহ তায়ালা কত লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন’’ [সুনান আত-তিরমিযী : ৬৮৪]

 [১৩] সালাতুত তাহাজ্জুদ পড়া: রমাদান মাস ছাড়াও সালাতুত তাহাজ্জুদ পড়ার মধ্যে বিরাট সাওয়াব এবং মর্যাদা রয়েছে। রমাদানের কারণে আরো বেশি ফজিলত রয়েছে। যেহেতু সাহরী খাওয়ার জন্য উঠতে হয় সেজন্য রমাদান মাসে সালাতুত তাহাজ্জুদ আদায় করার বিশেষ সুযোগও রয়েছে। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘ফরয সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত হল রাতের সালাত অর্থাৎ তাহাজ্জুদের সালাত’’ [সহীহ মুসলিম : ২৮১২]

[১৪] বেশি বেশি দান-সদাকাহ করা: এ মাসে বেশি বেশি দান-সাদাকাহ করার জন্য চেষ্টা করতে হবে। ইয়াতীম, বিধবা ও গরীব মিসকীনদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া ও বেশি বেশি দান খয়রাত করা। হিসাব করে এ মাসে যাকাত দেয়া উত্তম। কেননা রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ মাসে বেশি বেশি দান খয়রাত করতেন। আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত: ‘‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দানশীল আর রমাদানে তাঁর এ দানশীলতা আরো বেড়ে যেত’’ [সহীহ আল-বুখারী : ১৯০২]

[১৫] উত্তম চরিত্র গঠনের অনুশীলন করা: রমাদান মাস নিজকে গঠনের মাস। এ মাসে এমন প্রশিক্ষণ নিতে হবে যার মাধ্যমে বাকি মাসগুলো এভাবেই পরিচালিত হয়। কাজেই এ সময় আমাদেরকে সুন্দর চরিত্র গঠনের অনুশীলন করতে হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘তোমাদের মধ্যে কেউ যদি রোযা রাখে, সে যেন তখন অশ্লীল কাজ ও শোরগোল থেকে বিরত থাকে। রোযা রাখা অবস্থায় কেউ যদি তার সাথে গালাগালি ও মারামারি করতে আসে সে যেন বলে, আমি রোযাদার’’ [সহীহ মুসলিম : ১১৫১]

১৬. তাকওয়া অর্জন করা: তাকওয়া এমন একটি গুণ, যা বান্দাহকে আল্লাহর ভয়ে যাবতীয় পাপকাজ থেকে বিরত রাখে এবং তাঁর আদেশ মানতে বাধ্য করে। আর রমাদান মাস তাকওয়া নামক গুণটি অর্জন করার এক বিশেষ মৌসুম। কুরআনে এসেছে: ‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে করে তোমরা এর মাধ্যমে তাকওয়া অবলম্বন করতে পারো’’ [সূরা আলবাকারাহ : ১৮৩]

যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরী করে দেন। [সূরা তালাক : ০২]

১৭। বেশি বেশি দো‘আ ও কান্নাকাটি করা: দো‘আ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। এজন্য এ মাসে বেশি বেশি দো‘আ করা ও আল্লাহর নিকট বেশি বেশি কান্নাকাটি করা। হাদীসে এসেছে: ‘‘ইফতারের মূহূর্তে আল্লাহ রাববুল আলামীন বহু লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। মুক্তির এ প্রক্রিয়াটি রমাদানের প্রতি রাতেই চলতে থাকে’’ [আল জামিউস সাগীর : ৩৯৩৩]

অন্য হাদীসে এসেছে: ‘‘রমযানের প্রতি দিবসে ও রাতে আল্লাহ তা‘আলা অনেককে মুক্ত করে দেন। প্রতি রাতে ও দিবসে প্রতি মুসলিমের দো‘আ কবূল করা হয়’’ [সহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব : ১০০২]

১৮। তাওবাহ ও ইস্তেগফার করা: তাওবাহ শব্দের আভিধানিক অর্থ ফিরে আসা, গুনাহের কাজ আর না করার সিদ্ধান্ত নেয়া। এ মাস তাওবাহ করার উত্তম সময়। আর তাওবাহ করলে আল্লাহ খুশী হন। আল-কুরআনে এসেছে: ‘‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা কর, খাটি তাওবা; আশা করা যায়, তোমাদের রব তোমাদের পাপসমূহ মোচন করবেন এবং তোমাদেরকে এমন জান্নাতসমূহে প্রবেশ করাবেন যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত’’ [সূরা আত-তাহরীম : ৮]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘হে মানবসকল! তোমরা আল্লাহর নিকট তাওবাহ এবং ক্ষমা প্রার্থনা কর, আর আমি দিনে তাঁর নিকট একশত বারের বেশি তাওবাহ করে থাকি’’ [সহীহ মুসলিম : ৭০৩৪]

 তবে তাওবাহ ও ইস্তেগফারের জন্য উত্তম হচ্ছে, মন থেকে সাইয়্যেদুল ইস্তেগফার পড়া, আর তা হচ্ছে ‘‘হে আল্লাহ, তুমি আমার প্রতিপালক, তুমি ছাড়া প্রকৃত এবাদতের যোগ্য কেউ নাই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ, আর আমি তোমার গোলাম আর আমি সাধ্যমত তোমার সাথে কৃত অঙ্গীকারের উপর অবিচল রয়েছি। আমার কৃত-কর্মের অনিষ্ট থেকে তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমাকে যত নেয়ামত দিয়েছে সেগুলোর স্বীকৃতি প্রদান করছি। যত অপরাধ করেছি সেগুলোও স্বীকার করছি। অত:এব, তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। কারণ, তুমি ছাড়া ক্ষমা করার কেউ নেই।’’ফযিলাত: ‘‘যে কেউ দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে দিনের বেলা এই দু‘আটি (সাইয়েদুল ইসতিগফার) পাঠ করবে ঐ দিন সন্ধ্যা হওয়ার আগে মৃত্যু বরণ করলে সে জান্নাতবাসী হবে এবং যে কেউ ইয়াকিনের সাথে রাত্রিতে পাঠ করবে ঐ রাত্রিতে মৃত্যুবরণ করলে সে জান্নাতবাসী হবে।’’ [সহীহ আল-বুখারী : ৬৩০৬]

১৯। আল্লাহর যিকর করা: এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘আল্লাহ তা’আলা চারটি বাক্যকে বিশেষভাবে নির্বাচিত করেছেন, তাহলো যে ব্যক্তি পড়বে, তার জন্য দশটি সাওয়াব লেখা হয়, আর বিশটি গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হয়। যে ব্যক্তি  পড়বে, তার জন্য বিশটি সাওয়াব লেখা হয়, আর বিশটি গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হয়। যে ব্যক্তি  পড়বে, তার জন্য বিশটি সাওয়াব লেখা হয়, আর বিশটি গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হয়। আর যে ব্যক্তি আন্তরিকভাবে পড়বে, তার জন্য ত্রিশটি সাওয়াব লেখা হয়, আর ত্রিশটি গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হয়’’। [মুসনাদ আহমাদ : ১১৩৪৫]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহ তা’আলা চারটি বাক্যকে বিশেষভাবে নির্বাচিত করেছেন, তাহলো

سُبْحَانَ اللهِ   الْحَمْدُ لِلَّهِ  لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، اللهُ أَكْبَرُ

যেব্যক্তি سُبْحَانَ اللهِ পড়বে, তার জন্য দশটি সাওয়াব লেখা হয়, আর বিশটি গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হয়। যে ব্যক্তি اللهُ أَكْبَرُ পড়বে, তার জন্য বিশটি সাওয়াব লেখা হয়, আর বিশটি গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হয়। যে ব্যক্তি   لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ،  পড়বে, তার জন্য বিশটি সাওয়াব লেখা হয়, আর বিশটি গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হয়। আর যে ব্যক্তি আন্তরিকভাবে  الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ পড়বে, তার জন্য ত্রিশটি সাওয়াব লেখা হয়, আর ত্রিশটি গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হয় [মুসনাদ আহমাদ : ১১৩৪৫]

২০। ইফতার করা: সময় হওয়ার সাথে সাথে ইফতার করা বিরাট ফজিলাতপূর্ণ আমল। কোন বিলম্ব না করা । কেননা হাদীসে এসেছে: ‘‘যে ব্যক্তি সিয়াম পালন করবে, সে যেন খেজুর দিয়ে ইফতার করে, খেজুর না পেলে পানি দিয়ে ইফতার করবে। কেননা পানি হলো অধিক পবিত্র ’’ [সুনান আবু দাউদ : ২৩৫৭, সহীহ]

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ইফতার করতেন তখন বলতেন : “পিপাসা নিবারিত হল, শিরা উপশিরা সিক্ত হল এবং আল্লাহর ইচ্ছায় পুরস্কারও নির্ধারিত হল।” [সুনান আবূ-দাউদ: ২৩৫৯, সহীহ]

অপর বর্ণনায় যে এসেছে- “হে আল্লাহ! তোমার জন্য রোযা রেখেছি, আর তোমারই রিযিক দ্বারা ইফতার করছি।” এর সনদ দুর্বল। আমাদের উচিত সহীহ হাদীসের উপর আমল করা। [সুনান আবু দাউদ :২৩৫৮]

 ২১। ইফতার করানো: অপরকে ইফতার করানো একটি বিরাট সাওয়াবের কাজ। প্রতিদিন কমপক্ষে একজনকে ইফতার করানোর চেষ্টা করা দরকার। কেননা হাদীসে এসেছে: ‘‘যে ব্যক্তি কোন রোযাদারকে ইফতার করাবে, সে তার সমপরিমাণ সাওয়াব লাভ করবে, তাদের উভয়ের সাওয়াব হতে বিন্দুমাত্র হ্রাস করা হবে না’’ [সুনান ইবন মাজাহ : ১৭৪৬, সহীহ]

২২ অপরকে খাদ্য খাওয়ানো: রমাদান মাসে লোকদের খাওয়ানো, বিশেষ করে সিয়াম পালনকারী গরীব, অসহায়কে খাদ্য খাওয়ানো বিরাট সাওয়াবের কাজ । কুরআনে এসেছে: তারা খাদ্যের প্রতি আসক্তি থাকা সত্ত্বেও মিসকীন, ইয়াতীম ও বন্দীকে খাদ্য দান করে। [সূরা আদ-দাহর: ৮]

এ বিষয়ে হাদীসে বলা হয়েছে: ‘‘আবদুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, একজন লোক এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, ইসলামে উত্তম কাজ কোনটি? তিনি বললেন, অন্যদেরকে খাবার খাওয়ানো এবং পরিচিত ও অপরিচিত সকলকে সালাম দেয়া’’ [সহীহ আল-বুখারী : ১২]

অপর বর্ণনায় বর্ণিত আছে যে :‘‘যে কোনো মুমিন কোনো ক্ষুধার্ত মুমিনকে খাওয়াবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতের ফল খাওয়াবেন। [বাইহাকী, শু‘আবুল ইমান : ৩০৯৮, হাসান]

২৩। আত্মীয়তার সম্পর্ক উন্নীত করা: আত্মীয়তার সম্পর্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর তা রক্ষা করাও একটি ইবাদাত। এ বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ‘‘আর তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর, যার মাধ্যমে তোমরা একে অপরের কাছে চাও। আরও তাকওয়া অবলম্বন কর রক্ত সম্পর্কিত আত্মীয়ের ব্যাপারে। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের উপর পর্যবেক্ষক। [সূরা আন-নিসা: ১]

আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:“সালাম বিমিয়ের মাধ্যমে হলেও আত্নীয়তার সম্পর্ক তরতাজা রাখ।” [সহীহ কুনুযুস সুন্নাহ আন-নবওয়িয়্যাহ : ১৩]

২৪ দাওয়াতে দ্বীনের কাজ করা: রমাদান মাস হচ্ছে দ্বীনের দাওয়াতের সর্বোত্তম মাস। আর মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকাও উত্তম কাজ। এজন্য এ মাসে মানুষকে দ্বীনের পথে নিয়ে আসার জন্য আলোচনা করা, কুরআন ও হাদীসের দারস প্রদান, বই বিতরণ, কুরআন বিতরণ ইত্যাদি কাজ বেশি বেশি করা। আলকুরআনের ঘোষণা : ‘‘ঐ ব্যক্তির চাইতে উত্তম কথা আর কার হতে পারে যে আল্লাহর দিকে ডাকলো, নেক আমল করলো এবং ঘোষণা করলো, আমি একজন মুসলিম’’ [সূরা হা-মীম সাজদাহ : ৩৩]

হাদীসে এসেছে:‘‘ভাল কাজের পথ প্রদর্শনকারী এ কাজ সম্পাদনকারী অনুরূপ সাওয়াব পাবে’’ [সুনান আত-তিরমীযি : ২৬৭০]

 

 ২৫। সামর্থ্য থাকলে উমরা পালন করা: এ মাসে একটি উমরা করলে একটি হাজ্জ আদায়ের সমান সাওয়াব হয়। আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘রমাদান মাসে উমরা করা আমার সাথে হাজ্জ আদায় করার সমতুল্য’’ [সহীহ আলবুখারী : ১৮৬৩]

২৬। লাইলাতুল কদর তালাশ করা: রমাদান মাসে এমন একটি রাত রয়েছে যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। আল-কুরআনের ঘোষণা: ‘‘কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম’’ [সূরা কদর : ৪]

হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘যে ব্যক্তি ঈমান ও সাওয়াব পাওয়ার আশায় ইবাদাত করবে তাকে পূর্বের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে’’ [সহীহ আল-বুখারী : ৩৫]

এ রাত পাওয়াটা বিরাট সৌভাগ্যের বিষয়। এক হাদীসে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন: ‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্য সময়ের তুলনায় রমদানের শেষ দশ দিনে অধিক হারে পরিশ্রম করতেন’’ [সহীহ মুসলিম : ১১৭৫]

 লাইলাতুল কদরের দো‘আ: আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, হে আল্লাহর নবী ! যদি আমি লাইলাতুল কদর পেয়ে যাই তবে কি বলব ? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, বলবেঃ ‘‘হে আল্লাহ আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমাকে ভালবাসেন, তাই আমাকে ক্ষমা করে দিন।’’ [সুনান আত-তিরমিযী : ৩৫১৩].

২৭। ফজরের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত মাসজিদে অবস্থান করা:ফজরের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত মাসজিদে অবস্থান করা। এটি একটি বিরাট সাওয়াবের কাজ। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি ফজর জামাআত আদায় করার পর সূর্য উদয় পর্যন্ত মাসজিদে অবস্থান করবে, অতঃপর দুই রাকাআত সালাত আদায় করবে, সে পরিপূর্ণ হাজ্জ ও উমারাহ করার প্রতিদান পাবে। [সুনান আত-তিরমিযী : ৫৮৬]

২৮।  ই‘তিকাফ করা: ই‘তিকাফ অর্থ অবস্থান করা। অর্থাৎ মানুষদের থেকে পৃথক হয়ে সালাত, সিয়াম, কুরআন তিলাওয়াত, দোয়া, ইসতিগফার ও অন্যান্য ইবাদাতের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলার সান্নিধ্যে একাকী কিছু সময় যাপন করা। এ ইবাদাতের এত মর্যাদা যে, প্রত্যেক রমাদানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমাদানের শেষ দশ দিন নিজে এবং তাঁর সাহাবীগণ ই‘তিকাফ করতেন। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত: ‘‘প্রত্যেক রমাযানেই তিনি শেষ দশ দিন ই‘তিকাফ করতেন। কিন্তু জীবনের শেষ রমযানে তিনি ইতিকাফ করেছিলেন বিশ দিন’’ । দশ দিন ই‘তেকাফ করা সুন্নাত। [সহীহ আলবুখারী : ২০৪৪]

২৯। সামর্থ্য থাকলে উমরা পালন করা: এ মাসে একটি উমরা করলে একটি হাজ্জ আদায়ের সমান সাওয়াব হয়। আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘রমাদান মাসে উমরা করা আমার সাথে হাজ্জ আদায় করার সমতুল্য’’ [সহীহ আলবুখারী : ১৮৬৩]

৩০। ফিতরাহ দেয়া: এ মাসে সিয়ামের ত্রুটি-বিচ্যুতি পূরণার্থে ফিতরাহ দেয়া আবশ্যক। ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের সালাত আদায়ের পুর্বে ফিতরাহ আদায় করার আদেশ দিলেন। [সহীহ আল-বুখারী :১৫০৩]

যা করণীয় নয়:  রমাদান মাসের ফজিলত হাসিল করার জন্য এমন কিছু কাজ রয়েছে যা থেকে বিরত থাকা দরকার, সেগুলো নিম্নে উপস্থাপন করা হলো :

  1. বিলম্বে ইফতার করা
  2. সাহরী না খাওয়া
  3. শেষের দশ দিন কেনা কাটায় ব্যস্ত থাকা
  4. মিথ্যা বলা ও অন্যান্য পাপ কাজ করা
  5. অপচয় ও অপব্যয় করা
  6. তিলাওয়াতের হক আদায় না করে কুরআন খতম করা
  7. জামা‘আতের সাথে ফরয সালাত আদায়ে অলসতা করা
  8. বেশি বেশি খাওয়া
  9. রিয়া বা লোক দেখানো ইবাদাত করা
  10. বেশি বেশি ঘুমানো
  11. সংকট তৈরি করা জিনিস পত্রের দাম বৃদ্ধির জন্য
  12. অশ্লীল ছবি, নাটক দেখা
  13. বেহুদা কাজে রাত জাগরণ করা
  14. বিদ‘আত করা
  15. দুনিয়াবী ব্যস্ততায় মগ্ন থাকা     (রমাদান মাসের গুরুত্বপূর্ণ আমলগুলো হলো (লিখেছেন: হাবীবুল্লাহ মুহাম্মাদ ইকবাল  |  সম্পাদনা: ড.আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া)

আর কত আমরা আমাদের আবেগ দিয়ে দুনিয়ার ও সংসারের শুধু দেনা পাওনার হিসেব করে সময় পার করবো? অল্প কয়েকদিনের এই জীবনের সময়কে অর্থবহ করতে কেনো উদ্যোগী হবো না? ঘর সাজানো, নিজকে সাজানো, ভোগ বিলাস, পরিবারে কে কি বললো আর কে কি দিলো না-এইটাই কি জীবনের মূল কাজ?

চলুন, আমরা আমাদের আল্লাহর দেয়া মর্যাদাকে উদ্ভাসিত করি ও জান্নাতী মুমিন হয়ে যার যার অবস্থানে কিছু নমুনা রাখার চেষ্টায় ব্রত হই। এই রামাদানপূর্ব সময়ে আমাদের পরিকল্পনা হোক এই শপথকে কেন্দ্র করে। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। মহান আল্লাহ আমাদের বুঝার, অনুধাবন করার ও সংশোধন হওয়ার তাওফিক দান করুন। দৃঢ় প্রত্যয়ের সাথে এই মুহুর্তেই ফিরে আসি, চির শান্তি জান্নাতের পথে, মহান রবের সন্তুষ্টি পাওয়ার লক্ষ্যে।