রবিউল আউয়াল (আরবি: ربيع الأول) হলো ইসলামি বর্ষপঞ্জির তৃতীয় মাস।
আরবী “রবি” অর্থ “বসন্ত” এবং আল-আউয়াল অর্থ “প্রথম”; কাজেই “রবিউল আউয়াল” দ্বারা বুঝানো হয় “প্রথম বসন্ত”
‘রবিউল আউয়াল’ অর্থ “শুরু (মাস)”, বা, “বসন্তের প্রারম্ভ”; এই মাসটির নাম ‘রবিউল আউয়াল’ হওয়ার কারণ হচ্ছে, প্রাক-ইসলামী আরব পঞ্জিকা অনুসারে এটি ছিলো প্রথম মাস।
রবিউস সানি মানে দ্বিতীয় বসন্ত বা বসন্তের দ্বিতীয় মাস। সেকালে আরব দেশে রবিউল আউয়াল ও রবিউস সানি—এই দুই মাস মিলে ছিল বসন্তকাল। বসন্ত ঋতু হলো পত্রপল্লবে সুশোভিত ঋতুরাজ।
এই মাসকে প্রচলিতভাবেই রাসূল স.এর জন্ম ও মৃত্যু দিন হিসেবে খুব মর্যাদা দেয়া হয়, এই মাসকে কেন্দ্র করেই দেখা যায় রাসূল স.এর জীবন চরিত নিয়ে অনেক সেমিনার আলোচনা,মিছিল মিটিঙ্গসহ নানা ভাবে বিভিন্ন মতের গ্রুপ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। মহান আল্লাহ আমাদের সকল ধরনের ফিতনা থেকে হেফাজত করে ইসলামের সঠিক শিক্ষাকে উপস্থাপন ও নিজ জীবনে আমল করার পথকে সহজ করে দিন।
আমাদের প্রিয় নবী রাসূল স. এর জন্ম হয়েছিল সোমবার এবং যে বছর ফিল এর বা হস্তীবাহিনীর ঘটনা ঘটেছিল সেই বছর হয়েছিল এটা সহিহভাবে জানা যায়। তবে মাস ও তারিখ নিয়ে নির্দিষ্ট সহিহভাবে জানা যায় নাই,বিভিন্ন রেওয়াত পাওয়া যায়।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম সম্পর্কিত যে তথ্যগুলোর ব্যাপারে সকলে একমত সেটা হচ্ছে- জন্মের সাল ।
জন্মেরসাল: তার জন্মের বছর ছিল “আমুল ফিল” তথা হস্তি বাহিনীর বছর। ইমাম ইবনুল কাইয়ূম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন: “এতে কোন সন্দেহ নেই যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কার অভ্যন্তরে হস্তি বাহিনীর বছর জন্ম গ্রহণ করেন।”[যাদুলমা‘আদ, পৃষ্ঠা-১/৭৬]
হস্তি বাহিনীর বছর হচ্ছে- ৫৭০অথবা ৫৭১ খ্রিষ্টাব্দ।”[আস-সিরাতুন নববিয়াহ আস-সাহিহাহ (১/৯৭)]
সোমবার। তিনি সোমবারে জন্ম গ্রহণ করেন, সোমবারে নবুওয়ত পান এবং সোমবারে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
আবু কাতাদা আনসারি (রাদিআল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন :
سئلصلىاللهعليهوسلمعنصوميومالاثنين؟قال : ذاك يومولدتفيه،ويومبعثت – أوأنزلعليفيه). رواهمسلم : (1162)
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সোমবারে রোজা রাখার কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। তিনি বলেন: এ দিনে আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং এ দিনে আমাকে নবুওয়াত প্রদান করা হয়েছে অথবা এ দিনে আমার উপর (অহি) নাযিল হয়েছে।” [সহিহ মুসলিম (১১৬২)]
এখানে প্রসংগত বলে নেয়া ভালো যে,রাসূল স. সোমবার জন্মদিন বলেই কিন্তু রোজা রাখেন নি, এটা একটি ঘটনা যা তিঁনি উল্লেখ করেছিলেন,কারন তিনি প্রতি সপ্তাহের সোমবার রোযা রাখতেন,বছরে একদিন সোমবার নয়। রোজা রেখেছিলেন আমলনামা পেশ হয় এই দিনে তাই।
ইমাম তিরমিযি (রহঃ) আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “প্রতি সোমবারে ও বৃহস্পতিবারে আমলনামা পেশ করা হয়। তাই আমি পছন্দ করি আমি রোযা রেখেছি এমতাবস্থায় যেন আমার আমলনামা উপস্থাপন করা হয়”[তিরমিযি হাদিসটিকে ‘হাসান’ আখ্যায়িত করেছেন। আলবানী ‘সহিহুত তিরমিযি’ গ্রন্থে হাদিসটিকে ‘সহিহ’ আখ্যায়িত করেছেন]
জন্মের মাস বা তারিখ জানার কোন প্রয়োজনীয়তা থাকলে হযরত আবু বকর রা. ও অন্যান্য সাহাবা আযমাঈনরাই তা লিপিবদ্ধ করে রাখতেন, মূলত কোন ব্যক্তির জন্ম তারিখ বা মৃত্যু তারিখ জানার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকতার সুযোগটাই ইসলাম সমর্থন দেয় না। ব্যক্তির রেখে যাওয়া শিক্ষা,কর্মকে লালন করার মাধ্যমে কল্যানের পথে চলার শিক্ষা ইসলাম দিয়ে থাকে। আর তাই রাসূল স.এর জীবন চরিত বা তাঁর আদর্শকে লালন করা অন্তরে ও বাস্তবে সেটাই ইসলাম শিক্ষা দেয়। সম্মানীত সাহাবা, তাবেয়ি ও তাবে তাবেয়ীন সকলেই তাই করে গিয়েছেন।
রাসূল স. এর জীবন চরিতকে জানার জন্য শুধু এই মাস নয় পুরু বছর জুড়ে প্রতিটি সময়েই আমাদের জীবনের সাথে মিলাতে হবে তাঁর আদর্শকে। কারন মহান আল্লাহই তা জানিয়ে দিয়েছেন–
‘তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসুলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।’ (সূরা আল-আহযাব: ২১)
“রাসূল তোমাদের যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাক”।সূরা হাসর: ৭
আবূ হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন: “আমার সকল উম্মাত জান্নাতে প্রবেশ করবে, কিন্তু যে অস্বীকার করবে সে ব্যতীত। জিজ্ঞেস করা হল, কে অস্বীকার করবে? তিনি বললেন, যারা আমার অনুসরণ করবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে আমার অবাধ্য হবে সে-ই ( জান্নাতে প্রবেশ করতে) অস্বীকার করল”। বুখারি: ৭২৮০
আল্লাহ তা’আলা বলেন,
“এসব আল্লাহর নির্ধারিত সীমা এবং যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং তার রাসূলের হুকুম অনুযায়ী চলবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার পাদদেশে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত, তারা তাতে চিরকাল থাকবে এবং এটা বিরাট সাফল্য”। নিসা: ১৩
সুতরাং আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের কার্যাবলী রাসূল স.এর দেখানো পদ্ধতি যা মহান রবের সন্তুষ্টির জন্য অনুসরনে করছি কি না সেটাই মূল বিষয়।
মহান আল্লাহ আমাদের সঠিক পথে চলার সুযোগ করে দিন।
প্রশ্ন
উত্তর
আলহামদুলিল্লাহ।
এক:
সিরাতগ্রন্থ লেখকগণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মতারিখ নিয়ে মতভেদ করেছেন। তবে তারা একমত যে, হিজরী ১১ সালের ১২ই রবিউল আউয়াল নবী সাল্লাল্লাহু এর মৃত্যু দিবস। অথচ সাধারণ মুসলমানেরা এ দিনটিকে “ঈদে মিলাদুন্নবী” আখ্যায়িত করে এ দিনটি উদযাপন করে থাকে।
বিস্তারিত জানতে 125690 নং প্রশ্নোত্তরটি দেখুন।
দুই:
ইসলামী শরিয়তে “ঈদে মিলাদুন্নবী” বলে কোন কিছু নেই। সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন কিংবা মুসলিম উম্মাহর ইমামগণ এ ধরণের কোন দিবস জানতেন না; থাকতো তাঁরা এমন কোন দিবস উদযাপন করবেন। বরঞ্চ বাতেনীপন্থী কিছু মূর্খ বিদাতি এটি উদ্ভাবন করেছে। পরবর্তীতে বিশ্বের আনাচে-কানাচের সাধারণ মুসলমানেরা এ বিদআতটি পালন করে আসছে।
এ দিনটি উদযাপন করা যে বিদআত এ সম্পর্কে 10070, 13810, 70317 নং প্রশ্নোত্তরে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
তিন:
সুন্নাহপ্রেমী কিছু কিছু ভাই আছেন যারা তাদের দেশে উদযাপিত এ অনুষ্ঠানাদির দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন; তারা এ বিদআত থেকে বাঁচার জন্য নিজের পরিবার-পরিজনকে নিয়ে একত্রিত হন এবং এ উপলক্ষে বিশেষ খাবার রান্না করে সবাই মিলে একত্রে খান। এদের মধ্যে কেউ কেউ এ উদ্দেশ্যে নিজের বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনদেরকেও একত্রিত করেন। আবার কেউ কেউ অন্য লোকদেরকে নিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সিরাত (জীবনী) পড়া ও দ্বীনি আলোচনা পেশ করার ব্যবস্থা করেন। বিদেশে ও বিধর্মীদের দেশে আপনারা একতাবদ্ধ থাকা ও দ্বীনি চেতনাকে উজ্জীবিত করার মত ভাল উদ্দেশ্য নিয়ে যা করতে চাচ্ছেন সেটা এ প্রকারের পর্যায়ভুক্ত।
বাস্তবতা হচ্ছে- এ ভাল নিয়তগুলো এমন সমাবেশগুলোকে শরয়ি বৈধতা দিবে না। বরং এগুলো গর্হিত বিদআত; সেটাই বলবৎ থাকবে। বরং আপনারা যদি উৎসব করতে চান তবে মুসলমানদের উৎসব হচ্ছে- ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা এ দুইটি। যদি এর চেয়ে বেশি উৎসব চান তবে জুমার দিন আমাদের সাপ্তাহিক ঈদ বা উৎসব। জুমার দিন আপনারা জুমার নামাযে একত্রিত হতে পারেন এবং দ্বীনি চেতনা উজ্জীবিত করতে পারেন।
যদি আপনাদের পক্ষে সেটি সম্ভবপর না হয় তাহলে বছরে দিনের সংখ্যা অনেক; যে কোন সময় আপনারা সমবেত হতে পারেন; তবে বিদাতী ঈদকে উপলক্ষ করে নয়। বরং যে কোন বৈধ উপলক্ষে হতে পারে যেমন- বিয়ের অনুষ্ঠান কিংবা কোন ভোজ অনুষ্ঠান কিংবা কোন আকিকার অনুষ্ঠান কিংবা কোন ভাল কাজের অভিনন্দন জ্ঞাপনের অনুষ্ঠান। এ উপলক্ষগুলোর যে কোনটি আপনারা যে উদ্দেশ্যগুলোর কথা উল্লেখ করেছেন- পারস্পারিক যোগাযোগ রাখা, একতাবদ্ধ থাকা, দ্বীনি মেজাজ ধরে রাখা সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য হতে পারে।
মিলাদুন্নবী উপলক্ষে এ জাতীয় নিয়ত নিয়ে সমবেত হওয়ার হুকুম সম্পর্কে আলেমগণের কিছু ফতোয়া নিম্নরূপ:
১। ইমাম আবু হাফস তাজুদ্দিন আল-ফাকিহানি (রহঃ) নানা প্রকার মিলাদের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন: ক. ব্যক্তি তার নিজের অর্থ খরচ করে তার পরিবার-পরিজন ও বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে মিলাদ পালন করা, এ সমাবেশকে শুধু খাবার গ্রহণের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা, এছাড়া অন্য কোন গুনাহতে লিপ্ত না হওয়া। ইতিপূর্বে আমরা যে বিদআতের কথা উল্লেখ করেছি এটাই হচ্ছে সে গর্হিত ও ঘৃণিত বিদআত। কারণ পূর্ববর্তী কোন সলফে সালেহীন, ইসলামের ফকীহগণ, যামানার সূর্য আলেমগণ এসব পালন করেননি।[আল-মাওরেদ ফি আমালিল মাওলিদ, পৃষ্ঠা-৫]
২। ইবনুল হাজ্জ আল-মালেকী (রহঃ) গান-বাজনা ও নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা এ জাতীয় শরিয়ত গর্হিত কার্যাবলী মুক্ত মিলাদুন্নবী পালনের হুকুম সম্পর্কে বলেন: যদি এ থেকে মুক্ত হয়, শুধুমাত্র খাবারের আয়োজন করা হয়, এর দ্বারা মিলাদ বা রাসূলের জন্মদিন পালনের নিয়ত করা হয়, এ উদ্দেশ্যে বন্ধুমহলকে দাওয়াত করা হয় এবং ইতিপূর্বে উল্লেখিত বিষয়াবলী থেকে মুক্ত হয় তদুপরি শুধু এ নিয়তের কারণে এটি পালন করা বিদআত। কেননা এটা পালন করা ইসলামী শরিয়তে একটি নতুন সংযোজন; যা পূর্ববর্তী সলফে সালেহীন পালন করেননি। সলফে সালেহীন যে অবস্থায় ছিলেন সেটা থেকে কোন কিছু না বাড়িয়ে তাদের অনুসরণ করাই উত্তম; বরং অপরিহার্য। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ অনুসরণ ও সুন্নাহর প্রতি সম্মান প্রদর্শনে তাঁরা ছিলেন সর্বাধিক আগ্রহী। এক্ষেত্রে তাঁদের অগ্রবর্তিতা সাব্যস্ত। তাঁদের কেউ মিলাদ পালন করেছেন মর্মে জানা যায় না। আমরা হচ্ছি তাঁদের অনুগামী। যা কিছু তাদের জন্য যথেষ্ট ছিল সেটা পালন করা আমাদের জন্যেও যথেষ্ট। জ্ঞানগত ক্ষেত্রে ও আমলী ক্ষেত্রে তাঁদেরকেই অনুসরণ করতে হবে এটা জ্ঞাত বিষয়; যেমনটি শাইখ ইমাম আবু তালেব আল-মাক্কী (রহঃ) তাঁর লিখিত গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।[আল-মাদখাল, ২/১০]
৩। তিনি আরও বলেন: কেউ কেউ এটি থেকে –অর্থাৎ হারাম কিছু শ্রবণ থেকে- বিরত থাকেন। এর বদলে সহিহ বুখারী কিংবা অন্য কিছু পড়ার মাধ্যমে মিলাদ পালন করেন। হাদিস পড়া বড় নেকীর কাজ ও ইবাদত, হাদিস পড়ার মধ্যে রয়েছে প্রভূত কল্যাণ ও অঢেল বরকত; তবে এ পড়া যদি হয় শরিয়তসম্মত পদ্ধতি ও শর্ত মোতাবেক; মিলাদ পালনের নিয়তে নয়। আপনি দেখছেন না— নামায সবচেয়ে বড় নেকীর কাজ; তা সত্ত্বেও কেউ যদি শরিয়তের অনুমোদনহীন সময়ে নামায আদায় করে সেটি নিন্দনীয় ও গর্হিত। যদি নামাযের ক্ষেত্রে এমন বিধান হয় তাহলে অন্য বিষয়ের ক্ষেত্রে কেমন হবে?![আল-মাদখাল ২/২৫]
আরও জানতে দেখুন 117651 নং প্রশ্নোত্তর।
সারাংশ:
আপনারা যেসব উদ্দেশ্যের কথা উল্লেখ করলেন- একতাবদ্ধ থাকা, উপদেশ ও দিকনির্দেশনা দেয়া ইত্যাদি উদ্দেশ্যের পরিপ্রেক্ষিতেও এ ধরণের সমাবেশ করা আপনাদের জন্য জায়েয হবে না। এ উদ্দেশ্যগুলো আপনারা অন্য কোন সময় বাস্তবায়ন করতে পারেন। আপনারা বছরের যে কোন সময় সমাবেশ করতে পারেন। আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি তিনি যেন আপনাদেরকে ভাল কাজ করার তাওফিক দেন এবং আপনাদের জন্য হেদায়েত ও তাওফিকের পরিধি বাড়িয়ে দেন।
আল্লাহই ভাল জানেন।
https://islamqa.info/bn/answers/148053/%E0%A6%95%E0%A6%A8-%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A6%B0-%E0%A6%97%E0%A6%A8-%E0%A6%AC%E0%A6%9C%E0%A6%A8-%E0%A6%AC-%E0%A6%B9%E0%A6%B0%E0%A6%AE-%E0%A6%95%E0%A6%9C-%E0%A6%B2%E0%A6%AA%E0%A6%A4-%E0%A6%A8-%E0%A6%B9%E0%A7%9F-%E0%A6%B0%E0%A6%B8%E0%A6%B2-%E0%A6%B8%E0%A6%B2%E0%A6%B2%E0%A6%B2%E0%A6%B2%E0%A6%B9-%E0%A6%86%E0%A6%B2%E0%A6%87%E0%A6%B9-%E0%A6%93%E0%A7%9F-%E0%A6%B8%E0%A6%B2%E0%A6%B2%E0%A6%AE%E0%A6%B0-%E0%A6%9C%E0%A6%A8%E0%A6%AE%E0%A6%AC%E0%A6%B0%E0%A6%B7%E0%A6%95-%E0%A6%AA%E0%A6%B2%E0%A6%A8-%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A6%B0-%E0%A6%B9%E0%A6%95%E0%A6%AE-%E0%A6%95
প্রশ্ন
প্রশ্ন: মিলাদুন্নবী (নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মদিন) উপলক্ষে যে খাবার বিতরণ করা হয় সেটা খাওয়া জায়েয হবে কিনা? কেউ কেউ এর সপক্ষে দলিল পেশ করতে গিয়ে বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মদিনে আবু লাহাব দাসী আযাদ করায় আল্লাহ তাআলা তার জন্য সেদিনের শাস্তি লঘু করেছেন।
উত্তর
আলহামদুলিল্লাহ।
এক:
ইসলামী শরিয়তে “ঈদে মিলাদুন্নবী” বলতে কিছু নেই। সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন, চার ইমাম ও অন্য আলেমগণ এমন কোন দিন জানতেন না। বরং এ ঈদ বা উৎসবটি উদ্ভাবন করেছে কিছু বিদআতী বাতেনী গোষ্ঠী। এরপর থেকে মানুষ এ বিদআত পালন করে আসছে; অথচ আলেমগণ সর্বকালে ও সর্বস্থানে এ বিদআত সম্পর্কে মানুষকে হুশিয়ার করে আসছেন।
এ বিদআতের ব্যাপারে এ ওয়েব সাইটের 10070 নং, 13810 নং ও 70317 নং প্রশ্নোত্তরে সাবধান করা হয়েছে।
দুই:
এ দিনকে উপলক্ষ করে মানুষ যা কিছু পালন করে থাকে যেমন- মাহফিল করা, খাবার বিতরণ করা ইত্যাদি সব হারাম কাজ হিসেবে গণ্য হবে। কারণ এর মাধ্যমে তারা আমাদের শরিয়তে একটি বিদআতী উৎসবকে চালু রাখতে চায়।
শাইখ সালেহ আল-ফাওযান ‘আল-বায়ান লি আখতায়ি বাযিল কুত্তাব’ (পৃষ্ঠা ২৬৮-২৭০) গ্রন্থে বলেন: কুরআন ও হাদিসে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কর্তৃক প্রদত্ত বিধানের অনুসরণ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং ধর্মীয় বিষয়ে নতুন কিছু প্রবর্তন করা থেকে নিষেধ করা হয়েছে- এটি কারো অজানা নয়। আল্লাহ তাআলা বলেন: “বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমার অনুসরণ কর, ফলে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের পাপরাশি মার্জনা করে দিবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীলও দয়ালু।[সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৩১] তিনি আরও বলেন: “তোমরা অনুসরণ কর, যা তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে কর্তাদের অনুসরণ করো না।”।[সূরা আরাফ, আয়াত: ৩] তিনি আরও বলেন: “তোমাদেরকে এ নির্দেশ দিয়েছেন, যেন তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর। নিশ্চিত এটি আমার সরল পথ। অতএব, এ পথে চল এবং অন্যান্য পথে চলো না। তা হলে সেসব পথ তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিবে।”[সূরা আনআম, আয়াত: ১৫৩] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “নিশ্চয় শ্রেষ্ঠ সত্যবাণী হচ্ছে আল্লাহর কিতাব। সর্বোত্তম আদর্শ হচ্ছে- নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ। সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হচ্ছে- নব প্রবর্তিত বিষয়গুলো।” তিনি আরও বলেন: “যে ব্যক্তি আমাদের দ্বীনে এমন কোন বিষয় চালু করে যা এতে নেই সেটা প্রত্যাখ্যাত” । সহিহ মুসলিমের এ বর্ণনায় এসেছে- “যে ব্যক্তি এমন কোন আমল করে যা আমাদের দ্বীনে নেই সেটা প্রত্যাখ্যাত”।
মানুষ যে সব বিদআতের প্রবর্তন করেছে তার মধ্যে রবিউল আউয়াল মাসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মবার্ষিকী পালন করা অন্যতম। এ জন্মবার্ষিকী পালন করার ক্ষেত্রে তারা কয়েক শ্রেণীর:
এক শ্রেণী যারা শুধু জমায়েত হয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্ম কাহিনী পড়ে; কিংবা এ উপলক্ষে আলোচনা পেশ করে ও কাসিদা পাঠ করে।
আর কেউ আছে খাবার-দাবার ও মিষ্টান্ন তৈরী করে উপস্থিত লোকদের মাঝে বিতরণ করে।
কেউ আছে মসজিদে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে; কেউ আছে বাড়ীতে আয়োজন করে।
আর কেউ আছে শুধু এ সবের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে আরও অনেক হারাম ও গর্হিত কাজে লিপ্ত হয়; যেমন নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, নাচগান, কিংবা বিভিন্ন শিরকমিশ্রিত কার্যাবলী যেমন- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট সাহায্য চাওয়া, তাঁকে ডাকা, শত্রুর বিরুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার জন্য তাঁর মদদ চাওয়া ইত্যাদি।
মিলাদ অনুষ্ঠানের এ নানাবিধ ধরন ও প্রকারসহ এটি একটি হারাম কাজ ও উত্তম ত্রি-প্রজন্মের উত্তরকালে প্রবর্তিত বিদআত।
ষষ্ঠ হিজরী কিংবা সপ্তম হিজরীতে প্রথমবারের মত এ বিদআতটি চালু করেন আর্বিলের বাদশা আবু সাঈদ (সাঈদের পিতা) আল-মুজাফফর কুকবুরি; যেমনটি উল্লেখ করেছেন ইতিহাসবিদ ইবনে কাছির ও ইবনে খাল্লিকান প্রমুখ।
আবু শামা বলেন: মোসুলে প্রথমবারের মত এ বিদআতটি পালন করেন একজন মশহুর দ্বীনদার মানুষ- শাইখ উমর বিন মুহাম্মদ আল-মোল্লা। এরপর আর্বিলের বাদশা ও অন্যরা তাকে অনুসরণ করেন।
হাফেয ইবনে কাছির ‘আল-বিদায়া’ গ্রন্থে (১৩/১৩৭) আবু সাঈদ কুকবুরি এর জীবনীতে লিখেন: “তিনি রবিউল আউয়াল মাসে মিলাদুন্নবী পালন করতেন এবং বিশাল অনুষ্ঠান করতেন…। এক পর্যায়ে তিনি বলেন: আল-সিবত বলেন: মুজাফফর কর্তৃক মিলাদুন্নবী উপলক্ষে আয়োজনকৃত ভোজানুষ্ঠানে যারা হাজির হয়েছেন এমন একজন বলেন যে, সে অনুষ্ঠানে পাঁচ হাজার ভুনা মাথা, দশ হাজার মুরগী, একলক্ষ দুধের পেয়ালা এবং ত্রিশ হাজার মিষ্টান্নের প্লেট উপস্থাপন করা হত…। এক পর্যায়ে তিনি বলেন: সুফি গান শুনার ব্যবস্থা থাকত জোহর থেকে ফজর পর্যন্ত। বাদশা নিজে তাদের সাথে নাচত।[সমাপ্ত]
ইবনে খাল্লিকান তাঁর ‘ওফাইয়াতুল আইয়ান’ নামক গ্রন্থে (৩/২৭৪) বলেন:
সফর মাস এলে তারা সে গম্বুজগুলোকে সৌন্দর্যমণ্ডিত বিলাসবহুল সাজে সাজাত। প্রত্যেক গম্বুজে একদল গায়ক বসত; একদল সাধক ও বাদক দল থাকত। ঐ গম্বুজগুলোর প্রত্যেকটি তলাতে এদের একদল থাকত।[সমাপ্ত]
অতএব, এ বিদআত উদযাপনের মধ্যে রয়েছে- এ দিনে নানা রকমের খাবার-দাবার প্রস্তুত করা, খাবার বিতরণ করা, মানুষকে সে ভোজের দাওয়াত দেয়া। সুতরাং, কোন মুসলমান যদি এসব কিছুতে তাদের সাথে অংশ গ্রহণ করে, তাদের প্রস্তুতকৃত খাবার খায়, তাদের দস্তরখানে বসে নিঃসন্দেহে সেটা এ বিদআত উদযাপনের মধ্যে পড়বে; এটি তাদেরকে এ বিদআত উদযাপনে সহযোগিতা করার নামান্তর। আল্লাহ তাআলা বলেন: “তোমরা পরস্পর পরস্পরকে নেকী ও তাকওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা কর; পাপকাজ ও সীমালঙ্ঘনের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করো না।[সূরা মায়েদা, আয়াত: ২]
এ কারণে সে দিনকে উপলক্ষ করে প্রস্তুতকৃত খাবার খাওয়া হারাম মর্মে আলেমগণ ফতোয়া দিয়েছেন এবং অন্য কোন বিদআত উৎসব উপলক্ষে প্রস্তুতকৃত খাবার খাওয়াও হারাম ফতোয়া দিয়েছেন।
শাইখ বিন বাযকে নিম্নোক্ত প্রশ্নটি জিজ্ঞেস করা হয় (৯/৭৪):
মিলাদুন্নবী উপলক্ষে জবাইকৃত পশুর গোশত খাওয়ার হুকুম কি?
জবাবে তিনি বলেন: যদি যার মিলাদ (জন্ম বার্ষিকী) তাঁর জন্য এ পশু জবাই করা হয় তাহলে এটি শিরকে আকবার (বড় শিরক)। আর যদি গোশত খাওয়ার জন্য জবাই করা হয় তাতে কিছু নেই। তবে কোন মুসলমানের সে গোশত খাওয়া উচিত নয়; সে অনুষ্ঠানে যাওয়া উচিত নয়; যাতে করে মুসলমান কথা ও কাজের মাধ্যমে বিদআতীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে পারেন। আর যদি তাদেরকে নসিহত করার উদ্দেশ্যে উপস্থিত হতে চান সেটা করতে পারেন; তবে তাদের খাবার বা অন্য কিছুতে অংশ গ্রহণ করবে না।[সমাপ্ত]
এ বিষয়ে এ ওয়েব সাইটে আরও কিছু ফতোয়া রয়েছে; যেমন দেখুন 7051 নং ও 9485 নং প্রশ্নোত্তর।
আল্লাহই ভাল জানেন।
https://islamqa.info/bn/answers/89693/%E0%A6%AE%E0%A6%B2%E0%A6%A6%E0%A6%A8%E0%A6%A8%E0%A6%AC%E0%A6%B0-%E0%A6%A6%E0%A6%A8-%E0%A6%AC%E0%A6%A4%E0%A6%B0%E0%A6%A3%E0%A6%95%E0%A6%A4-%E0%A6%96%E0%A6%AC%E0%A6%B0-%E0%A6%96%E0%A6%93%E0%A7%9F%E0%A6%B0-%E0%A6%B9%E0%A6%95%E0%A6%AE
https://islamqa.info/bn/answers/147601/%E0%A6%A8%E0%A6%AC-%E0%A6%B8%E0%A6%B2%E0%A6%B2%E0%A6%B2%E0%A6%B2%E0%A6%B9-%E0%A6%86%E0%A6%B2%E0%A6%87%E0%A6%B9-%E0%A6%93%E0%A7%9F%E0%A6%B8%E0%A6%B2%E0%A6%B2%E0%A6%AE-%E0%A6%8F%E0%A6%B0-%E0%A6%9C%E0%A6%A8%E0%A6%AE-%E0%A6%93-%E0%A6%AE%E0%A6%A4%E0%A6%AF%E0%A6%B0-%E0%A6%A4%E0%A6%B0%E0%A6%96-%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A6%95-%E0%A6%86%E0%A6%B2%E0%A6%AE%E0%A6%97%E0%A6%A3%E0%A6%B0-%E0%A6%8F%E0%A6%95%E0%A6%A7%E0%A6%95-%E0%A6%85%E0%A6%AD%E0%A6%AE%E0%A6%A4-%E0%A6%93-%E0%A6%85%E0%A6%97%E0%A6%B0%E0%A6%97%E0%A6%A3%E0%A6%AF-%E0%A6%AE%E0%A6%A4%E0%A6%B0-%E0%A6%89%E0%A6%B2%E0%A6%B2%E0%A6%96
https://islamqa.info/bn/answers/125690/%E0%A6%AF%E0%A6%B0-%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A6%AC%E0%A6%B0%E0%A6%B0-%E0%A6%B2%E0%A6%95%E0%A6%B0-%E0%A6%AE%E0%A6%B2%E0%A6%A6%E0%A6%A8%E0%A6%A8%E0%A6%AC-%E0%A6%89%E0%A6%A6%E0%A6%AF%E0%A6%AA%E0%A6%A8-%E0%A6%95%E0%A6%B0-%E0%A6%8F%E0%A6%AC-%E0%A6%8F%E0%A6%A4-%E0%A6%85%E0%A6%B6%E0%A6%97%E0%A6%B0%E0%A6%B9%E0%A6%A3-%E0%A6%A8-%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A6%B0-%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A6%A3-%E0%A6%A4%E0%A6%95-%E0%A6%A4%E0%A6%B0%E0%A6%B8%E0%A6%95%E0%A6%B0-%E0%A6%95%E0%A6%B0-%E0%A6%8F%E0%A6%AE%E0%A6%A4%E0%A6%AC%E0%A6%B8%E0%A6%A5%E0%A7%9F-%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A6%AC%E0%A6%B0%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A6%A5-%E0%A6%B8-%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A6%AA-%E0%A6%86%E0%A6%9A%E0%A6%B0%E0%A6%A3-%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A6%AC
https://islamqa.info/bn/answers/137931/%E0%A6%A8%E0%A6%9C%E0%A6%B0-%E0%A6%9C%E0%A6%A8%E0%A6%AE%E0%A6%A6%E0%A6%A8-%E0%A6%93-%E0%A6%A8%E0%A6%AC-%E0%A6%B8%E0%A6%B2%E0%A6%B2%E0%A6%B2%E0%A6%B2%E0%A6%B9-%E0%A6%86%E0%A6%B2%E0%A6%87%E0%A6%B9-%E0%A6%93%E0%A7%9F-%E0%A6%B8%E0%A6%B2%E0%A6%B2%E0%A6%AE%E0%A6%B0-%E0%A6%9C%E0%A6%A8%E0%A6%AE%E0%A6%A6%E0%A6%A8-%E0%A6%B0%E0%A6%AF-%E0%A6%B0%E0%A6%96