শিশু ক্যান্সার হাসপাতালে যাকাতের অর্থ প্রদান করা কি জায়েয আছে?
উত্তর
আলহামদু লিল্লাহ।.
এক:
যাকাতের খাতসমূহ: যাকাত প্রদানের খাতগুলো সুনির্দিষ্ট। আল্লাহ্ নিজেই কুরআনে কারীমে সে খাতগুলো উল্লেখ করেছেন। যে ব্যক্তি উক্ত খাতগুলো ব্যতীত অন্য কোন খাতে যাকাত প্রদান করবে তার যাকাত আদায় হবে না।
তার উচিত হবে এ যাকাত পুনরায় আদায় করা এবং শরিয়ত অনুমোদিত কোন খাতে প্রদান করা।
যাকাতের খাতগুলো জানতে 46209 নং প্রশ্নোত্তরটি দেখুন।
হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা, হাসপাতালের ডেকোরেশন করা, যন্ত্রপাতি ক্রয় করা– যাকাতের খাতের মধ্যে পড়ে না। দেখুন: 212183 নং ও 224651 নং প্রশ্নোত্তর।
যে ব্যক্তি কোন হাসপাতালের ফান্ডে যাকাত প্রদান করেছে সেটা শরিয়ত অনুমোদিত খাতে ব্যয় করা হয়েছে কিনা– তা নিশ্চিত হওয়া খুবই দুষ্কর। হতে পারে সেটা হাসপাতালের ডেকোরেশনের খাতে, হাসপাতাল সম্প্রসারণে, যন্ত্রপাতি ক্রয় করা, কর্মচারীদের বেতন-বোনাস দেয়া কিংবা ধনী-গরীব, মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে সকল রোগীর মাঝে বিলিকৃত ঔষধ ক্রয়ের পিছনে ব্যয় করা হয়েছে।
রোগ হলেই মানুষ যাকাত গ্রহণ করার হকদার হয় না; বরং যাকাত নিতে হলে সে মানুষকে ফকির কিংবা মিসকীন (যার প্রয়োজন পূরণের মত সম্পদ নেই) হতে হবে কিংবা তাকে হাসপাতালের কাছে ঋণী হতে হবে; তখন তাকে যাকাত থেকে এ ঋণ পরিশোধ করার মত অর্থ দেয়া যাবে। অবশ্যই সে রোগীকে মুসলিম হতে হবে।
তাই…
হাসপাতালে যাকাত দিলে সেটি আপত্তি মুক্ত নয়। এভাবে যাকাত পরিশোধকারী শরিয়ত অনুমোদিত খাতে যাকাত পরিশোধ করতে পারল কিনা সেটা সে নিশ্চিত হতে পারে না?
ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটির আলেমগণকে প্রশ্ন করা হয়:
“কিং ফয়সাল বিশেষায়িত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সংযুক্ত পত্রটি সদয় দ্রষ্টব্য। উক্ত পত্রে তারা হাসপাতালের ‘চ্যারিটি-ফান্ড’ এর জন্য সাহায্য চাচ্ছেন। যে ফান্ডটি অভাবী ও দরিদ্র রোগীদের জন্য খাস; যে সকল রোগী চিকিৎসা খরচ এবং রোগী ও রোগীর সহযাত্রীররিয়াদে অবস্থানকালীন খরচ মেটাতে অক্ষম; যারা সৌদি আরবের নানা অঞ্চল থেকে এসে থাকে। আপনারা কি এই ফান্ডে যাকাতের অর্থ প্রদান করা জায়েয মনে করেন? এ বিষয়ে আমাদেরকে অবহিত করবেন। আল্লাহ্ আপনাদেরকে উত্তম প্রতিদান দিন এবং আমাদের ও আপনাদের আমলগুলোকে তাঁর সন্তুষ্টির জন্য খালেস করে নিন।
জবাবে তাঁরা বলেন:
এ ধরণের ফান্ডে যাকাতের অর্থ প্রদান করাটা আমরা জায়েয মনে করি না। এ ফান্ডের সুবিধাভোগীরা শরিয়ত নির্ধারিত যাকাতের খাতগুলোর অন্তর্ভুক্ত হবে সে নিশ্চয়তা ও আস্থা না থাকার কারণে।
আল্লাহ্ই উত্তম তাওফিকদাতা, আমাদের নবী মুহাম্মদ, তাঁর পরিবারবর্গ ও তাঁর সাথীবর্গের প্রতি আল্লাহ্র রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক।
গবেষণা ও ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটি।
শাইখ আব্দুল আযিয বিন বায, শাইখ আব্দুল্লাহ্ বিন কুয়ুদ, শাইখ আব্দুল্লাহ্ বিন গাদইয়ান”[সমাপ্ত]
[ফাতাওয়াল লাজনাহ্ আদ-দায়িমা (৯/৪৩৭, ৪৩৮)]
এ প্রশ্নটি এমন একটি ফান্ড সম্পর্কে করা হয়েছিল যে ফান্ড গরীব ও অভাবীদের জন্য খাস। কিন্তু, সুবিধাভোগীদের দরিদ্র হওয়ার বিষয়টি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিশ্চিত হতে না পারার প্রেক্ষিতে এ ফতোয়া এসেছে। কেননা যাকাত প্রদানকারীর কাছে এবং উক্ত ফান্ডের দায়িত্বশীলদের কাছে সুবিধাপ্রার্থীরা অচেনা মানুষ। তাই যাকাত তার নির্ধারিত খাতে প্রদান করা হল কিনা সেটা নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয়।
দুই:
যদি এ খাতে যাকাতের কিছু অর্থ প্রদান করা ব্যতীত যাকাত প্রদানকারীর অন্তর প্রশান্ত না হয় তাহলে তিনি নিজে হাসপাতালে গিয়ে রোগীর খোঁজ-খবর নিয়ে তাদের মধ্যে যে রোগী অভাবী, যাচাই-বাছাই করে নিজ হাতে তাকে কিংবা তার অভিভাবককে যাকাতের অর্থ দিতে পারেন, যদি অভিভাবকেরা রোগীর পেছনে খরচ করে থাকে।
আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।
সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব