প্রদত্ত ঋণের যাকাত আদায় করার বিধান কি?
সম্পদ যদি ঋণ হিসেবে অন্যের কাছে থাকে, তবে ফিরিয়ে না পাওয়া পর্যন্ত তাতে যাকাত আবশ্যক নয়। কেননা উহা তার হাতে নেই। কিন্তু ঋনগ্রস্ত ব্যক্তি যদি সম্পদশালী লোক হয়, তবে প্রতি বছর তাকে (ঋণ দাতাকে) যাকাত বের করতে হবে। নিজের অন্যান্য সম্পদের সাথে তার যাকাত আদায় করে দিলে যিম্মামুক্ত হয়ে যাবে। অন্যথা উহা ফেরত পাওয়ার পর হিসেব করে বিগত প্রত্যেক বছরের যাকাত আদায় করতে হবে। কেননা উহা সম্পদশালী লোকের হাতে ছিল। আর তা তলব করাও সম্ভব ছিল। সুতরাং ঋণদাতার ইচ্ছাতেই চাইতে দেরী করা হয়েছে।
কিন্তু ঋণ যদি অভাবী লোকের হাতে থাকে। অথবা এমন ধনী লোকের হাতে যার নিকট থেকে উদ্ধার করা কষ্টকর, তবে তার উপর প্রতি বছর যাকাত আবশ্যক হবে না। কেননা উহা হাতে পাওয়া তার জন্য অসম্ভব। কেননা আল্লাহ্ বলেনঃ
]وَإِنْ كَانَ ذُو عُسْرَةٍ فَنَظِرَةٌ إِلَى مَيْسَرَةٍ[
“যদি অভাবী হয় তবে তাকে সচ্ছলতা পর্যন্ত অবকাশ দিবে।” (সূরা বাক্বারাঃ ২৮০) অতএব তার জন্য সম্ভব নয় এসম্পদ পূণরুদ্ধার করা এবং তা দ্বারা উপকৃত হওয়া। কিন্তু পূণরুদ্ধার করতে পারলে বিদ্বানদের মধ্যে কেউ বলেন, তখন থেকে নতুন করে বছর গণনা শুরু করবে। আবার কেউ বলেন, বিগত এক বছরের যাকাত বের করবে। এবং পরবর্তী বছর আসলে আবার যাকাত আদায় করবে। এটাই অত্যধিক সতর্ক অভিমত।
মৃত ব্যক্তির ঋণ কি যাকাত থেকে পরিশোধ করা যাবে?
ইবনু আবদুল বার্ ও আবু উবাইদা বলেন, বিদ্বানদের এজমা বা ঐকমত্য হচ্ছে, কোন সম্পদ রেখে যায়নি এমন অভাবী ঋণগ্রস্ত মৃত ব্যক্তির ঋণ যাকাত দ্বারা পরিশোধ করা যাবে না। কিন্তু আসলে বিষয়টি মতবিরোধপূর্ণ। অবশ্য অধিকাংশ আলেম বলে থাকেন, যাকাত দ্বারা মৃতের ঋণ পরিশোধ করা যাবে না। কেননা মৃত ব্যক্তি তো আখেরাতে পাড়ি জমিয়েছে। ঋণের কারণে জীবিত ব্যক্তি যে ধরণের লাঞ্ছনা ও অবমাননার স্বীকার হয় মৃত ব্যক্তি এরূপ হয় না। তাছাড়া নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মৃতের ঋণ যাকাত থেকে আদায় করতেন না; বরং গনীমতের সম্পদ থেকে উক্ত ঋণ পরিশোধ করতেন। এথেকে বুঝা যায় যাকাত থেকে মৃতের ঋণ পরিশোধ করা বিশুদ্ধ নয়।
বলা হয়, মৃত ব্যক্তি যদি পরিশোধ করার নিয়ত রেখে ঋণ করে থাকে, তবে আল্লাহ্ তাঁর দয়া ও অনুগ্রহে তার পক্ষ থেকে তা আদায় করে দিবেন। কিন্তু গ্রহণ করার সময় পরিশোধের নিয়ত না থাকলে, অপরাধী হিসেবে তার জিম্মায় উহা অবশিষ্ট থাকবে এবং ক্বিয়ামত দিবসে তা পরিশোধ করবে। আমার মতে এই মতটিই অধিক পছন্দনীয় যাকাত থেকে তার ঋণ পরিশোধ করার মতের চেয়ে।
এমনও বলা হয়, প্রয়োজনীয়তার দিকে লক্ষ্য রেখে জীবিত ও মৃতের মধ্যে পার্থক্য করতে হবে। জীবিত লোকদের অভাব, ঋণ, জিহাদ প্রভৃতি ক্ষেত্রে যদি যাকাতের অধিক প্রয়োজনীয়তা থাকে, তবে তাদের বিষয়টি অগ্রগণ্য। কিন্তু তাদের এধরণের কোন প্রয়োজনীয়তা না থাকলে, সহায়-সম্বলহীন মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া ঋণ যাকাত দ্বারা পরিশোধ করতে কোন অসুবিধা নেই। সম্ভবতঃ এটি মধ্যমপন্থী মত।