টাকার সাথে সংযোগ করা হবে, মহিলাদের ব্যবহারিক স্বর্ণ ও রূপা, যদিও তা ব্যবহারের জন্য হয়ে থাকে। আলেমদের বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী মহিলাদের ব্যবহারিক স্বর্ণ বা চাঁদি যদি নিসাব পরিমাণ পৌঁছে থাকে এবং তার ওপর এক বছর অতিবাহিত হয়, তাতে যাকাত দিতে হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণীর ব্যাপকতাই এর প্রমাণ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَا مِنْ صَاحِبِ ذَهَبٍ وَلَا فِضَّةٍ، لَا يُؤَدِّي مِنْهَا حَقَّهَا، إِلَّا إِذَا كَانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ، صُفِّحَتْ لَهُ صَفَائِحُ مِنْ نَارٍ،ِ»
“সোনা রূপার মালিক যদি এর যাকাত আদায় না করে, তবে কিয়ামতের দিন এ ধন সম্পদকে তার শাস্তির জন্য আগুনের পাত বানানো হবে”।সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯৮৭
এ ছাড়াও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীস বর্ণিত, একজন মহিলার হাতে স্বর্ণের দু’টি চুড়ি দেখে তিনি বললেন,
«أَتُعْطِينَ زَكَاةَ هَذَا؟» ، قَالَتْ: لَا، قَالَ: «أَيَسُرُّكِ أَنْ يُسَوِّرَكِ اللَّهُ بِهِمَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ سِوَارَيْنِ مِنْ نَارٍ؟» ، قَالَ: فَخَلَعَتْهُمَا، فَأَلْقَتْهُمَا إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَقَالَتْ: هُمَا لِلَّهِ عَزَّ وَجَلَّ وَلِرَسُولِهِ
“তুমি কি এর যাকাত আদায় কর? সে বলল, না, তখন আল্লাহর রাসূল বললেন, তুমি কি পছন্দ কর যে, কিয়ামতের দিন আগুনের দু’টি চুড়ি তোমাকে পরিয়ে দেওয়া হোক? এরপর তিনি চুড়ি দু’টি খুলে ফেললেন এবং রাসূলের দরবারে ফেলে দিয়ে বললেন, এ দু’টি চুড়ি আল্লাহ জন্য এবং তার রাসূলের জন্য।
আবূ দাউদ, হাদীস নং ১৫৬৩; নাসাঈ, হাদীস নং ২৪৭৯
উম্মে সালমা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, স্বর্ণের কিছু অলংকার তিনি ব্যবহার করতেন, তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, এগুলো কি গচ্ছিত সম্পদ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, «مَا بَلَغَ أَنْ تُؤَدَّى زَكَاتُهُ، فَزُكِّيَ فَلَيْسَ بِكَنْزٍ» “যে সম্পদ যাকাতের নিসাব পরিমাণ পৌঁছার পর তার যাকাত আদায় করা হয়, তা গচ্ছিত সম্পদ নয়”।আবু দাউদ, হাদীস নং ১৫৬৪। আল্লামা আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন।
হাদীছে বর্ণিত আছে, মা আয়েশা (রাঃ) বলেন,
دَخَلَ عَلَىَّ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَرَأَى فِيْ يَدِيْ فَتَخَاتٍ مِنْ وَرِقٍ فَقَالَ مَا هَذَا يَا عَائِشَةُ فَقُلْتُ صَنَعْتُهُنَّ أَتَزَيَّنُ لَكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ قَالَ أَتُؤَدِّيْنَ زَكَاتَهُنَّ قُلْتُ لاَ أَوْ مَا شَاءَ اللهُ قَالَ هُوَ حَسْبُكِ مِنَ النَّارِ-
‘একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমার নিকট উপস্থিত হয়ে আমার হাতে রূপার বড় বড় আংটি দেখতে পান এবং বলেন, হে আয়েশা! এটা কি? আমি বললাম, হে রাসূল (ছাঃ)! আপনার উদ্দেশ্যে সৌন্দর্য্য বর্ধনের জন্য তা তৈরী করেছি। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি এর যাকাত দাও? আমি বললাম, না অথবা আল্লাহর যা ইচ্ছা ছিল। তিনি বললেন, তোমাকে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট।আবূদাউদ হা/১৫৬৫, সনদ ছহীহ।
অন্য হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَسْمَاءَ بِنْتِ يَزِيْدَ قَالَتْ دَخَلْتُ أَنَا وَخَالَتِيْ عَلَى النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم وَعَلَيْهَا أَسْوِرَةٌ مِنْ ذَهَبٍ فَقَالَ لَنَا أَتُعْطِيَانِ زَكَاتَهُ قَالَتْ فَقُلْنَا لاَ قَالَ أَمَا تَخَافَانِ أَنْ يُسَوِّرَكُمَا اللهُ أَسْوِرَةً مِنْ نَارٍ أَدِّيَا زَكَاتَهُ-
আসমা বিনতে ইয়াযীদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ও আমার খালা হাতে স্বর্ণের বালা পরিহিত অবস্থায় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর দরবারে প্রবেশ করলাম। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাদেরকে বললেন, তোমরা এর যাকাত দাও কি? তিনি বলেন, তখন আমরা বললাম, না। তখন তিনি (ছাঃ) বললেন, ‘তোমরা কি ভয় কর না যে, এর পরিবর্তে আল্লাহ তা‘আলা আগুনের বালা পরিধান করাবেন। সুতরাং তোমরা যাকাত আদায় কর’।
মুসনাদে আহমাদ হা/২৭৬৫৫; ছহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব হা/৭৭০, সনদ ছহীহ লিগায়রিহি (হাসান)।
ইবনু মাসউদ (রাঃ) বলেন,
سَأَلَتْهُ امْرَأَةٌ عَنْ حُلِيٍّ لَهَا أَفِيْهِ زَكَاةٌ؟ قَالَ إِذَا بَلَغَ مِائَتَيْ دِرْهَمٍ فَزَكِّيْهِ، قَالَتْ إِنَّ فِيْ حِجْرِيْ أَيْتَامًا فَأَدْفُعُهُ إِلَيْهِمْ؟ قَالَ نَعَمْ-
‘এক মহিলা তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন যে, অলংকারের যাকাত দিতে হবে কি? তিনি বললেন, যদি তা দুইশত দিরহামে পৌঁছে, তাহলে তার যাকাত আদায় করবে। মহিলাটি বললেন, আমার ঘরে কতিপয় ইয়াতীম রয়েছে, তাদেরকে কি (যাকাত) প্রদান করতে পারব? তিনি বললেন, হ্যাঁ’।মুছান্নাফ আব্দুর রায্যাক ৪/৮৩ পৃঃ; মু‘জামুল কাবীর লিত ত্ববারানী ৯/৩৭১ পৃঃ; সনদ ছহীহ লিগায়রিহি।
আয়েশা (রাঃ) বলেন, لاَ بَأْسَ بِلُبْسِ الْحُلِيِّ إِذَا أَعْطَى زَكَاتَهُ ‘অলংকার পরিধানে কোন সমস্যা নেই, যদি তার যাকাত দেওয়া হয়’।দারাকুত্বনী ২/১০৭ পৃঃ; বায়হাক্বী ৪/১৩৯ পৃঃ; সনদ হাসান।
উপরোল্লিখিত হাদীছ ও আছার সমূহ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, নারীর ব্যবহৃত অলংকার নিছাব পরিমাণ হলে যাকাত দিতে হবে।
স্ত্রী এবং কন্যার সম্পদ পৃথক হ’লে এবং নিছাব পরিমাণ হ’লে তারা পৃথকভাবেই যাকাত দিবে। একত্রিত করে যাকাত দেওয়ার কোন বিধান শরী‘আতে নেই (আবুদাউদ ১৫৭৩, ৭৪, ৭৯, ৮০; মিশকাত হা/১৭৯৯)। তবে স্ত্রী, কন্যা ও নিজের সম্পদ যদি একত্রিত থাকে তাহ’লে এক সঙ্গে মিলিয়ে যাকাত দিবে।