যখন কোন ব্যক্তি বা রোগী মারা যান তখন যিনি কাছে থাকেন, তিনি মৃত ব্যক্তির চোখ বন্ধ করে দিবেন সাথে সাথে এবং দু’আটি পড়বেন।
মৃত ব্যক্তির চোখ বন্ধ করানোর দো‘আ
«اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِفُلاَنٍ (بِاسْمِهِ) وَارْفَعْ دَرَجَتَهُ فِي الْمَهْدِيِّينَ، وَاخْلُفْهُ فِي عَقِبِهِ فِي الْغَابِرِينَ، وَاغْفِرْ لَنَا وَلَهُ
يَا رَبَّ الْعَالَمِينَ، وَافْسَحْ لَهُ فِي قَبْرِهِ، وَنَوِّرْ لَهُ فِيهِ».
(আল্লা-হুম্মাগফির লি ফুলা-নিন (মৃতের নাম বলবে) ওয়ারফা‘ দারাজাতাহু ফিল মাহদিয়্যীন, ওয়াখলুফহু ফী ‘আক্বিবিহী ফিল গা-বিরীন, ওয়াগফির লানা ওয়ালাহু ইয়া রব্বাল আ-লামীন। ওয়াফসাহ্ লাহু ফী ক্বাবরিহী ওয়া নাউইর লাহু ফী-হি)।
“হে আল্লাহ! আপনি অমুককে (মৃত ব্যক্তির নাম ধরে) ক্ষমা করুন; যারা হেদায়াত লাভ করেছে, তাদের মাঝে তার মর্যাদা উঁচু করে দিন; যারা রয়ে গেছে তাদের মাঝে তার বংশধরদের ক্ষেত্রে আপনি তার প্রতিনিধি হোন। হে সৃষ্টিকুলের রব! আমাদের ও তার গুনাহ মাফ করে দিন। তার জন্য তার কবরকে প্রশস্ত করে দিন এবং তার জন্য তা আলোকময় করে দিন।” মুসলিম ২/৬৩৪, নং ৯২০।
হাত দুটো সোজা করে পাশে রাখা ও পা দুটো সমান করে সোজা করে দেয়া কারন পরে আর সোজা করা যায় না।
দূর-দুরান্ত থেকে নিকটাত্মীয়দের উপস্থিত হওয়ার অপেক্ষায় মৃত ব্যক্তিকে দাফন করতে বিলম্ব করার বিধান কি?
মৃত ব্যক্তির ক্ষেত্রে শরীয়তের নির্দেশ হচ্ছে দ্রুত দাফন কাফনের ব্যবস্থা করা। কেননা নবী সা. বলেন,
“তোমরা জানাযা বহণ করার সময় দ্রুত গতিতে চল। কেননা সে যদি নেক হয় তবে তাকে কল্যাণের দিকে এগিয়ে দিলে। আর যদি অন্য কিছু হয়, তবে খারাপ লোককে তোমাদের কাঁধ থেকে নামিয়ে দিলে।”
কোন কোন নিকটাত্মীয়ের উপস্থিত হওয়ার অপেক্ষায় বিলম্ব করা উচিত নয়। তবে অল্প কিছু সময় দেরী করাতে কোন দোষ নেই। তারপরও দ্রুত জানাযার ব্যবস্থা করাই উত্তম। নিকটাত্মীয়গণ বিলম্বে পৌঁছলেও কোন অসুবিধা নেই। তারা মৃতের কবরের উপর জানাযা নামায আদায় করতে পারবে। যেমনটি করেছিলেন নবী (সা.)। জনৈক মহিলা মসজিদে নববী ঝাড়- দেয়ার কাজে নিয়োজিত ছিল। সে মৃত্যু বরণ করলে লোকেরা বিষয়টি নবী সা.কে না জানিয়েই তাকে দাফন করে দেয়। তখন নবী সা. বলেন, “তোমরা আমাকে তার কবর দেখিয়ে দাও। অতঃপর তিনি তার কবরের উপর জানাযা নামায আদায় করেন।”
(ফতোওয়া আরকানুল ইসলাম থেকে) মূল: শায়খ মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল-উসাইমীন (রহ.)
কোন মুসলিম মৃত্যু বরণ করলে তার জন্য জীবিতদের কতিপয় করণীয় রয়েছে। সেগুলো সংক্ষেপে নিম্নরূপ:
১) মৃত্যুর সংবাদ শুনে “ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন” পাঠ করে নিজেকে স্মরন করিয়ে দেয়া এবং ধৈর্য ধারণ করা।
“যখন তারা বিপদে পতিত হয়,তখন বলে, “ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন” (নিশ্চয় আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তাঁরই সান্নিধ্যে ফিরে যাবো) তারা সে সমস্ত লোক,যাদের প্রতি আল্লাহর অফুরন্ত অনুগ্রহ ও রহমত রয়েছে এবং এসব লোকই হেদায়েত প্রাপ্ত। “সূরা বাকারা: ১৫৬ ও ১৫৭
২) শোকার্ত পরিবারকে সান্তনা দান করা।
মানুষ মারা গেলে নীরবে চোখের পানি ফেলা অথবা নিচু আওয়াজে ক্রন্দন করা বৈধ। রাসূল সা. এর ছেলে ইবরাহীম যখন মারা যায় তিনি তাকে কোলে নিয়ে ছিলেন। আর তার দুচোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিল। তাঁকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন:
“চক্ষু অশ্রু সজল হয়,অন্তর ব্যথিত হয়। তবে আমরা কেবল সে কথাই বলব যা আমাদের প্রভুকে সন্তুষ্ট করে। আল্লাহর কসম,হে ইবরাহীম,তোমার বিচ্ছেদে আমরা ব্যথিত। “ সহীহ মুসলিম
আপনজনের এই দুনিয়া থেকে চলে যাওয়ায় পরিবারের লোকেরা ধৈর্য্য ধরবেন এবং তাদেরকে সবরের পুরষ্কার ও দু’আগুলো স্মরন করে দেয়া।
“আল্লাহ তায়ালা যখন কোন মুমিন ব্যক্তির কোন প্রিয় মানুষকে দুনিয়া থেকে নিয়ে যান তখন সে যদি সবর করে এবং আল্লাহর নিকট প্রতিদান আশা করে তবে তিনি তার জন্য জান্নাতের আদেশ ছাড়া অন্য কিছুতে সন্তুষ্ট হন না। ” নাসাঈ ও দারেমী। আল্লামা আলবানী রাহ.উক্ত হাদীসটিকে সহীহ লি গাইরিহী বলেছেন।
. কোনো মুসিবতে পতিত ব্যক্তির দো‘আ
«إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ، اللَّهُمَّ أْجُرْنِي فِي مُصِيبَتِي، وَأَخْلِفْ لِي خَيْرَاً مِنْهَا».
(ইন্না লিল্লা-হি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজি‘উন। আল্লা-হুম্মা আজুরনী ফী মুসীবাতী ওয়াখলুফ লী খাইরাম মিনহা)।
“আমরা তো আল্লাহ্রই। আর নিশ্চয় আমরা তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী। হে আল্লাহ! আমাকে আমার বিপদে সওয়াব দিন এবং আমার জন্য তার চেয়েও উত্তম কিছু স্থলাভিষিক্ত করে দিন।”
মুসলিম ২/৬৩২, নং ৯১৮।
শোকার্তদের সান্ত্বনা দেওয়ার দো‘আ
রাসূল সা. তাঁর এক মেয়েকে যেভাবে সান্ত্বনা দিয়েছিলেন, ঠিক সেভাবে সান্ত্বনা দেওয়া উত্তম। রাসূল সা.-এর মেয়ের সন্তান মারা গেলে তিনি তাঁকে আহ্বান জানিয়ে তাঁর নিকট একজন দূত প্রেরণ করেন। এই দূতকে রাসূল সা. বলেছিলেন,
‘তাকে তুমি ধৈর্য্য ধরতে এবং এর বিনিময়ে নেকীর আশা করতে বল। কেননা আল্লাহ যা নিয়ে গেছেন, তা যেমন তাঁর, তেমনি যা তিনি রেখে গেছেন, তাও তাঁর। প্রত্যেকটি বস্তু একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত টিকে থাকবে।
বুখারী: হা/১২৮৪; মুসলিম: হা/৯২৩।
তবে ‘আল্লাহ আপনার নেকী বৃদ্ধি করে দিন,‘আল্লাহ আপনাকে উত্তম সান্ত্বনা দান করুন’, আল্লাহ আপনার মৃতকে ক্ষমা করুন’ ইত্যাদি যেসব দোআ মানুষের কাছে প্রসিদ্ধ হয়ে আছে, তা কিছু কিছু আলেম পছন্দ করেছেন। তবে হাদীস মোতাবেক আমল করাই উত্তম।
«إِنَّ للَّهِ مَا أَخَذَ، وَلَهُ مَا أَعْطَى، وَكُلُّ شَيْءٍ عِنْدَهُ بِأَجَلٍ مُسَمَّى… فَلْتَصْبِرْ وَلْتَحْتَسِبْ».
(ইন্না লিল্লা-হি মা আখাযা, ওয়ালাহু মা আ‘তা, ওয়া কুল্লু শাই’ইন ‘ইনদাহু বিআজালিম মুসাম্মা, ফালতাসবির ওয়াল তাহতাসিব) “নিশ্চয় যা নিয়ে গেছেন আল্লাহ্ তা তাঁরই, আর যা কিছু প্রদান করেছেন তাও তাঁর। তাঁর কাছে সব কিছুর একটি নির্দিষ্ট সময় রয়েছে। কাজেই সবর করা এবং সওয়াবের আশা করা উচিত।” বুখারী, ২/৮০, নং ১২৮৪; মুসলিম, ২/৬৩৬, নং ৯২৩।
আর নিম্নোক্ত দো‘আটি পড়াও ভালো:
«أَعْظَمَ اللَّهُ أَجْرَكَ، وَأَحْسَنَ عَزَاءَكَ، وَغَفَرَ لِمَيِّتِكَ».
(আ‘যামাল্লাহু আজরাকা, ওয়া আহসানা ‘আযা-’আকা, ওয়াগাফারা লিমাইয়্যিতিকা)
“আল্লাহ আপনার সওয়াব বর্ধিত করুন, আপনার (শোকার্ত মনে) সুন্দর ধৈর্য ধরার তাওফীক দিন, আর আপনার মৃতকে ক্ষমা করে দিন।” আল-আযকার লিন নাওয়াওয়ী, পৃ. ১২৬।
আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ “আর রাসূল তোমাদের জন্য যা নিয়ে এসেছেন তা তোমরা গ্রহণ কর এবং তিনি যা নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাক। সূরা হাশরঃ ৭
রাসূল স. বলেছেনঃ “যে এমন কাজ করল যার ব্যাপারে আমাদের কোন নির্দেশ নেই তা পরিত্যাজ্য”। মুত্তাফাকুন আলাইহ
রাসূল স. আরও বলেছেনঃ “সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হল, (দ্বীনের মধ্যে) নতুন উদ্ভাবিত বিষয় সমূহ। আর প্রতিটি নতুন উদ্ভাবিত জিনিসই বিদয়াত। আর প্রতিটি বিদয়াতই গুমরাহী। ” সুনান আবু দাউদ, সহীহ
মূলত: জানাযার নামায প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মৃত ব্যক্তির জন্য দু‘আ স্বরূপ। এখানে প্রাসংগিক মনে করিয়ে দেই যে, আমাদের জন্মের সময় প্রত্যেকের কানের কাছে আজান ও ইকামত দেয়া হয়েছে, শুধু সালাতটা বাকী। জানাযার সালাতের মাধ্যমে ব্যক্তির জন্য দু’আ করা হয়।