বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
power point presentation
যেখানেই তোমরা থাক না কেন, মৃত্যু তোমাদের পাকড়াও করবেই। এমনকি যদি তোমরা সুদৃঢ় দুর্গেও অবস্থান কর’ (নিসাঃ৭৮)।
এই পৃথিবীতে কোন প্রানই চিরস্থায়ী নয়। প্রতিটি প্রানের দুনিয়া থেকে বিদায়ের সুনির্দিষ্ট সময় ও স্থান মহান আল্লাহ নির্ধারন করে রেখেছেন। সেই অন্তিম সময়টি যখন আসবে তখন একমুহুর্ত আগে বা পরে হবে না। মহান আল্লাহ বলেছেন,
আমি তোমাদের মৃত্যুকাল নির্ধারিত করেছি এবং আমি অক্ষম নই। সূরা ওয়াকিয়া: ৬০
নির্ধারিত সময়ে যখন তাদের মৃত্যু এসে যাবে, তখন এক মুহুর্তও বিলম্বিত কিংবা তরাম্বিত করতে পারবে না। সূরা আন নহল:৬১
বলুন, তোমরা যে মৃত্যু থেকে পলায়নপর, সেই মৃত্যু অবশ্যই তোমাদের মুখামুখি হবে, অতঃপর তোমরা অদৃশ্য, দৃশ্যের জ্ঞানী আল্লাহর কাছে উপস্থিত হবে। তিনি তোমাদেরকে জানিয়ে দিবেন সেসব কর্ম, যা তোমরা করতে। সূরা জুমু’আ: ৮
দুনিয়াতে বেঁচে থাকা্র সময় অনিশ্চিত কিন্তু মৃত্যু সুনিশ্চিতভাবে আসবে।
সমাজে অনেকেই কারো মৃত্যু হলে এই কথা বলে যে, ছেলেটি বা মেয়েটি অকালে মারা গেলো বা সঠিক ব্যবস্থা নিলে বেঁচে যেতো অথবা আরেকটু সাবধান হলেই মৃত্যু হতো না ইত্যাদি অনেক রকমের মন্তব্য বা কথা। আসলে এই কথাগুলো বলাটাই সঠিক নয়। আমাদের কাজের ত্রুটি বা সাবধানতার ব্যবস্থা আমরা পর্যালোচনা করতে পারি বা বলতে পারি কিন্তু মৃত্যু এক অনবদ্য সত্য যা সময়মতোই রবের অনুমতিক্রমেই আসে। কেউ রুখতে পারে না।
মৃত্যুকে স্মরন করা বা করিয়ে দেয়া
সাহল বিন সা‘দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, জিব্রীল এসে রাসূলুল্লাহ (সা)-কে বললেন, হে মুহাম্মাদ! যতদিন খুশী জীবন যাপন কর। কিন্তু মনে রেখ তুমি মৃত্যুবরণ করবে। যার সাথে খুশী বন্ধুত্ব কর। কিন্তু মনে রেখ তুমি তাকে ছেড়ে যাবে। যা খুশী তুমি আমল কর। কিন্তু মনে রেখ তুমি তার ফলাফল পাবে। জেনে রেখ, মুমিনের মর্যাদা হ’ল ইবাদতে রাত্রি জাগরণে এবং তার সম্মান হ’ল মানুষের মুখাপেক্ষী না হওয়ার মধ্যে’।
হাকেম হা/৭৯২১; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৮৩১
আল্লাহ স্বীয় নবীকে বলেন, إِنَّكَ مَيِّتٌ وَإِنَّهُمْ مَيِّتُونَ ‘নিশ্চয়ই তুমি মরবে এবং তারাও মরবে’ (যুমারঃ ৩০)।
বিশ্ব ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ মানুষটিকে মহান আল্লাহ নিজে এবং জিব্রীলকে আঃ পাঠিয়ে মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। অতএব মৃত্যুর কথা স্মরণ করা ও স্মরণ করিয়ে দেওয়া দু’টিই মুমিনের জন্য অবশ্য কর্তব্য। কেননা দুনিয়ায় লিপ্ত মানুষ মৃত্যুকে ভুলে যায়। এই ফাঁকে শয়তান তাকে দিয়ে অন্যায় করিয়ে নেয়।
আমাদের মাঝে অনেকেই মৃত্যুর কথা শুনতে চান না। অনেকেই যেনো মনে করেন যে, মৃত্যুর কথা বললেই মৃত্যু চলে আসবে! আবার অনেকে এইভাবে ভাবেন যে, এখন মৃত্যুর কথা ভেবে আনন্দটাই নষ্ট করে ফেলবো কেনো, জীবনের আনন্দ মজাটা আগে নিয়ে নেই, পরে সময় হলেই দেখা যাবে! অথচ যে মৃত্যুকে শুনতেই চায় না সেই মৃত্যুই কার জীবনে কখন চলে আসবে কেউই বলতে পারি না। তবে এটা সত্য যে মৃত্যু হবেই এবং তা নির্ধারন হয়েই আছে। আর এই কারনেই মৃত্যুকে স্মরন করেই নিজেদের সঠিক পথে থাকার চেষ্টা চালানোর শিক্ষাই ইসলাম দিয়েছে।
একবার একজন স্কলার একটি লেকচার দিচ্ছিলেন, তখন একটি স্কুলের ছাত্র প্রশ্ন করেন কেনো মৃত্যু হবে? তখন সেই স্কলার খুব সুন্দর করে বললেন যে, তুমি পরীক্ষা দাও কেনো, পরীক্ষাতো কষ্ট,কঠিন! তারপরেও পরীক্ষা দাও। তখন ছেলেটি বললো যে, পরীক্ষা না দিলে পরবর্তী ক্লাশে প্রমোশন হবে কিভাবে?
তখন সেই স্কলার বললেন যে মৃত্যু না থাকলে কিভাবে আখেরাতে যাবে? আখেরাতে না গেলে তমার পুরস্কার কিভাবে পাবে। দুনিয়ার জীবনের পরিসমাপ্তিতো আখেরাতে ফলাফল লাভের জন্যই।
আসলেই তাই। দুনিয়ার জীবন থেকে মৃত্যুর মাধ্যমেই শুধুমাত্র আমাদের স্থানান্তর করা হয় ফলাফল প্রাপ্তির জন্য, এই ফলাফল আবার বিচার বা হিসাব নিকাশের পরই যার যার বিশ্বাস ও কাজ অনুযায়ী পেয়ে থাকবে।
রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন,أَكْثِرُوا ذِكْرَ هَاذِمِ اللَّذَّاتِ ‘তোমরা বেশী বেশী করে স্বাদ বিনষ্টকারী বস্তুটির কথা স্মরণ কর। তিরমিযীঃ ২৩০৭; ইবনু মাজাহঃ ৪২৫৮; নাসাঈ হা/১৮২৪; মিশকাত হা/১৬০৭।
অর্থাৎ মৃত্যুকে স্মরণ কর। যাতে দুনিয়ার আকর্ষণ হ্রাস পায় এবং আল্লাহর প্রতি আকর্ষণ বৃদ্ধি পায়। সেই সাথে তার দীদার লাভের জন্য হৃদয় ব্যাকুল হয়।
প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে এবং ক্বিয়ামতের দিন তোমরা পূর্ণ বদলা প্রাপ্ত হবে। অতঃপর যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে ও জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, সে ব্যক্তি সফলকাম হবে। বস্তুতঃ পার্থিব জীবন প্রতারণার বস্তু ছাড়া কিছুই নয়’ (আলে ইমরান ৩/১৮৫)।
দুনিয়ার এ চাকচিক্যে আমরা পরকালকে ভুলে যাই। অথচ নির্দিষ্ট আয়ুষ্কাল শেষে আমাদের সেখানে যেতেই হবে। কেউ আমাকে জগত সংসারে ধরে রাখতে পারবে না। আল্লাহ বলেন,
وَمَا كَانَ لِنَفْسٍ أَنْ تَمُوتَ إِلاَّ بِإِذْنِ اللهِ كِتَابًا مُؤَجَّلاًّ…-
‘আল্লাহর হুকুম ছাড়া কেউ মরতে পারে না। সেজন্য একটা নির্ধারিত সময় রয়েছে…’ (আলে ইমরান ৩ঃ১৪৫)।
তিনি বলেন, …وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ مَاذَا تَكْسِبُ غَدًا وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ بِأَيِّ أَرْضٍ تَمُوتُ إِنَّ اللهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ ‘…
আর কেউ জানে না আগামীকাল সে কি উপার্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন মাটিতে তার মৃত্যু হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে সম্যক অবহিত’ (লোকমান ৩১/৩৪)।
তিনি আরও বলেন, …فَإِذَا جَاءَ أَجَلُهُمْ لاَ يَسْتَأْخِرُونَ سَاعَةً وَلاَ يَسْتَقْدِمُونَ- ‘…অতঃপর যখন সেই সময়কাল এসে যায়, তখন তারা সেখান থেকে এক মুহূর্ত আগপিছ করতে পারে না’ (নাহঃ৬১)।
হযরত ওছমান গণী (রাঃ) কবরস্থানে গিয়ে কাঁদতেন। যাতে দাড়ি ভিজে যেত। তাঁকে বলা হ’ল জান্নাত-জাহান্নামের কথা শুনে আপনি কাঁদেন না, অথচ কবরে এসে কাঁদেন? জবাবে তিনি বলেন, কবর হ’ল আখেরাতের প্রথম মনযিল। যদি কেউ এখানে মুক্তি পায়, তাহ’লে পরের মনযিলগুলি তার জন্য সহজ হয়ে যায়। আর এখানে মুক্তি না পেলে পরের মনযিলগুলি তার জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। অতঃপর তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন যে, কবরের চাইতে ভীতিকর দৃশ্য আমি আর দেখিনি। তিরমিযীঃ২৩০৮; ইবনু মাজাহঃ৪২৬৭; মিশকাতঃ১৩২
উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর সান্নিধ্য পছন্দ করে, আল্লাহও তার সান্নিধ্য পছন্দ করেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সান্নিধ্য অপছন্দ করে, আল্লাহও তার সান্নিধ্য অপছন্দ করেন। (এ কথা শুনে) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) অথবা তাঁর স্ত্রীদের কেউ জিজ্ঞেস করলেন, আমরাতো মৃত্যুকে অপছন্দ করি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ ব্যাপারটি তা নয়। বরং এর অর্থ হলো, যখন মু’মিনের মৃত্যু আসে তখন তাকে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও সুসংবাদ দেয়া হয়। তখন সামনে তার এসব মর্যাদা হতে বেশী পছন্দনীয় জিনিস আর কিছু থাকে না। তাই সে আল্লাহর সান্নিধ্য পছন্দ করে। আল্লাহও তার সান্নিধ্য পছন্দ করেন। আর কাফির ব্যক্তির মৃত্যু হাযির হলে, তাকে আল্লাহর ‘আযাব ও তার পরিণতির ‘খোশ খবর’ দেয়া হয়। তখন এ কাফির ব্যক্তির সামনে এসব খোশ খবরের চেয়ে বেশী অপছন্দনীয় জিনিস আর কিছু থাকে না। তাই সে যেমন আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎকে অপছন্দ করে আল্লাহ তা‘আলাও তার সাক্ষাৎ অপছন্দ করেন। সহীহ : বুখারী ৬৫০৭, মুসলিম ২৬৪৩,
উবাই ইবনে কা’ব (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) এর নিয়ম ছিলঃ
রাতের এক-তৃতীয়াংশ পার হয়ে গেলে তিনি (ঘুম থেকে) উঠে বলতেনঃ হে মানুষ! আল্লাহ কে স্মরণ কর। প্রথম ফুৎকার তো এসেই গেছে। তার পরপরই আসছে দ্বিতীয় ফুৎকার। তার সাথেই আসছে মৃত্যু। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনার উপর খুব বেশি বেশি দরূদ পড়ে থাকি। আপনি আমাকে বলুন, আপনার প্রতি দরূদের জন্য আমি কতটুকু সময় নির্দিষ্ট করবো। তিনি বলেনঃ তোমার যতটুকু ইচ্ছা। আমি বললাম, চার ভাগের এক ভাগ? তিনি বলেনঃ তুমি যতটুকু সমীচীন মনে কর। তবে তুমি যদি এর চাইতেও বৃদ্ধি কর, তাহলে তা তোমার জন্য কল্যাণকর হবে। আমি বললাম, তাহলে দুই ভাগের এক ভাগ? তিনি বলেনঃ সেটা তোমার ইচ্ছা। তবে এর চাইতেও বেশি করলে তা তোমার জন্য কল্যাণকর হবে। আমি বললাম, তবে দুই-তৃতীয়াংশ? তিনি বলেনঃ তুমি যেটা ভালো মনে কর। তবে এর চাইতেও বেশি করতে পারলে তোমার জন্য কল্যাণকর হবে। আমি বললাম, আচ্ছা, দরূদ পড়ার জন্য পুরো সময়কেই যদি আমি নির্দিষ্ট করে নিই, তাহলে কিরূপ হয়? তিনি বলেনঃ এরূপ করতে পারলে, এ দরূদ তোমার যাবতীয় দুশ্চিন্তাকে দূরীভূত করার জন্য যথেষ্ট হবে এবং তোমার গুনাহরাশিকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে। ইমাম তিরমিযী এটি বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন, এ হাদীসটি হাসান।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মুমিনদের জানাযায় অংশগ্রহণ করতে বলেছেন এবং তাতে এক ক্বীরাত্ব তথা ওহোদ পাহাড়ের সম পরিমাণ নেকী ও দাফন শেষ করে ফিরে এলে তাতে দুই ক্বীরাত্ব সম পরিমাণ নেকীর কথা বলেছেন। বুখারীঃ৪৭; মুসলিমঃ৯৪৫; মিশকাতঃ১৬৫১।
যাতে অন্যের জানাযা দেখে নিজের জানাযার কথা স্মরণ হয়। অন্যের কবরে শোয়ানো দেখে নিজের কবরের কথা মনে হয়। অন্যের অসহায় চেহারা দেখে নিজের মৃত্যুকালীন অসহায় অবস্থার কথা স্মরণ হয়। যাতে মানুষের অহংকার চুর্ণ হয় ও সে বিনয়ী হয়। অতঃপর পরপারে যাত্রার প্রস্ত্ততি গ্রহণে তৎপর হয়। তিনি কবরপূজার শিরকের কথা চিন্তা করে প্রথমে কবর যিয়ারত নিষিদ্ধ করেছিলেন। কিন্তু পরে অনুমতি দিয়ে বলেন, نَهَيْتُكُمْ عَنْ زِيَارَةِ الْقُبُورِ فَزُورُوهَا ‘আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত থেকে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু এখন তোমরা যিয়ারত কর। মুসলিম হা/৯৭৭; মিশকাত হা/১৭৬২।
فَإِنَّهَا تُذَكِّرُ الْمَوْتَ ‘কেননা এটি তোমাদের মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে দেবে’
কোনো মুমূর্ষু ব্যক্তির পাশে যারা উপস্থিত থাকবেন, তাদের প্রথম কর্তব্য-কালেমায়ে তায়্যিবার তালকীন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
لَقِّنُوا مَوْتَاكُمْ لَا إِلَهَ إِلّا اللهُ.
তোমরা তোমাদের মৃত্যুগামী ব্যক্তিদের ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’র তালকীন করো। সহীহ মুসলিমঃ ৯১৬, ৯১৭
তালকীনের অর্থ হচ্ছে-মুমূর্ষু ব্যক্তির পাশে একটু আওয়াজ করে কালেমা পড়তে থাকা। তবে মনে রাখতে হবে, এ অবস্থায় তাকে কিছুতেই মুখে উচ্চারণ করে কালেমা পড়ার আদেশ করা যাবে না। জোরাজুরি করা যাবে না; এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। তাই নিয়ম হল, তার পাশে বসে মৃদু আওয়াজে কেবল কালিমা পড়তে থাকা।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
مَنْ كَانَ آخِرُ كَلاَمِهِ لاَ إِلَهَ إِلاّ اللهُ دَخَلَ الْجَنّةَ.
যার শেষ কথা হবে-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩১১৮
মৃত্যুকালীন অবস্থা সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন :
‘‘যখন তাদের কারও কাছে মৃত্যু আসে, তখন সে বলেঃ হে আমার পালণকর্তা! আমাকে পুনরায় (দুনিয়াতে ) প্রেরণ করুন। যাতে আমি সৎকর্ম করতে পারি, যা আমি করিনি। কখনই নয়, এ তো তার একটি কথার কথা মাত্র। তাদের সামনে পর্দা আছে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত। ’’[ সূরা আল মুমিনূন : ৯৯,১০০]
তুমি বলে দাও, নিশ্চয়ই যে মৃত্যু থেকে তোমরা পালিয়ে বেড়াচ্ছ, তা অবশ্যই তোমাদের কাছে উপস্থিত হবে। অতঃপর তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেওয়া হবে সেই সত্তার কাছে, যিনি অদৃশ্য ও দৃশ্যমান সবকিছু সম্পর্কে অবগত। অতঃপর তিনি তোমাদেরকে তোমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে জানিয়ে দিবেন’ (জুম‘আ ঃ৮)।
সে সময় মানুষ বলবে, ‘হে আমার প্রতিপালক! যদি তুমি আমাকে আরও কিছু দিনের জন্য সময় দিতে, তাহ’লে আমি ছাদাক্বা করে আসতাম ও সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হ’তাম’। ‘অথচ নির্ধারিত সময়কাল যখন এসে যাবে, তখন আল্লাহ কাউকে আর অবকাশ দিবেন না। বস্তুত তোমরা যা কর, সে বিষয়ে আল্লাহ সম্যক অবহিত’ (মুনাফিকূনঃ১০-১১)
ইবনে মাসঊদ (রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি বর্গক্ষেত্র আঁকলেন, তার মাঝ বরাবর কয়েকটি সরল রেখা টানলেন যা বর্গক্ষেত্র ভেদ করে বাইরে চলে গেছে। তিনি মধ্যবর্তী এ রেখাটির সাথে যুক্ত আরো কতগুলো ছোট ছোট সরল রেখা (আড়াআড়ি ভাবে) টানলেন, তারপর বলেন, ‘এটা হল মানুষ এবং এটা তার মৃত্যু যা তাকে বেষ্টন করে আছে। (বর্গক্ষেত্র ভেদ করে) বাইরে বেরিয়ে যাওয়া রেখাটুকু হচ্ছে তার আশা-আকাঙ্ক্ষা। ছোট ছোট রেখাগুলো হল তার জীবনের বিপদাপদ। একটি বিপদ থেকে ছুটতে পারলে অপর বিপদ এসে তাকে বিচলিত করে। আবার দ্বিতীয়টি থেকে রেহাই পেলে তৃতীয়টি তাকে নিষ্পেষিত করে।’ [(বুখারী) রিয়াদুস সলিহীন: ৫৭৮]
হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু একবার হজরত কাব রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলেছিলেন, আমাকে মৃত্যুর অবস্থা সম্পর্কে কিছু বলুন।
হজরত কা’ব বললেন, ‘মৃত্যু হলো কাঁটাদার গাছের মতো। যা মানুষের পেটে ঢোকানোর পর যখন তার প্রতিটি কাঁটা শিরায় শিরায় লেগে যায়, তখন একজন শক্তিশালী মানুষ তা জোরে টেনে বের করে। এই কাঁটার কষ্ট মানুষটি হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করে। অনুরূপ মৃত্যুপথযাত্রীর কাছেও মনে হয় তার শরীরের গোশতগুলো যেন একটি কাঁটার সঙ্গে বেরিয়ে আসছে। সে মৃত্যুযন্ত্রণা হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করে।
ইবনে উমার (রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু) বলতেন, ‘তুমি সন্ধ্যায় উপনীত হয়ে সকাল বেলার অপেক্ষা (আশা) করো না এবং সকালে উপনীত হয়ে সন্ধ্যা বেলার অপেক্ষা করো না। সুস্বাস্থ্যের দিনগুলোতে রোগব্যাধির (দিনগুলোর) জন্য প্রস্তুতি নাও এবং জীবদ্দশায় মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করো।’ [(বুখারী) রিয়াদুস সলিহীন: ৫৭৫]
আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সা) কয়েকটি রেখা টানলেন, তারপর বলেনঃ এটা হচ্ছে মানুষ এবং এটা তার মৃত্যু। মানুষ এভাবেই থাকা অবস্থায় নিকটবর্তী রেখা (মৃত্যু) এসে উপস্থিত হয়। (বুখারী)
ইবনে মাসঊদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সা) একটি বর্গক্ষেত্র আঁকলেন, তার মাঝ বরাবর কয়েকটি সরল রেখা টানলেন যা বর্গক্ষেত্র ভেদ করে বাইরে চলে গেছে। তিনি মধ্যবর্তী এ রেখাটির সাথে যুক্ত আরো কতগুলো ছোট ছোট সরল রেখা (আড়াআড়ি ভাবে) টানলেন, তারপর বলেনঃ এটা হল মানুষ এবং এটা তার মৃত্যু যা তাকে বেষ্টন করে আছে। (বর্গক্ষেত্র ভেদ করে) বাইরে বেরিয়ে যাওয়া রেখাটুকু হচ্ছে তার আশা-আকাঙ্ক্ষা। ছোট ছোট রেখাগুলো হল তার জীবনের বিপদাপদ। একটি বিপদ থেকে ছুটতে পারলে অপর বিপদ এসে তাকে খামচাতে থাকে। আবার দ্বিতীয়টি থেকে রেহাই পেলে তৃতীয়টি তাকে নিষ্পেষিত করে। (বুখারী)
তিনিই স্বীয় বান্দাদের উপর পরাক্রমশালী এবং তিনিই রক্ষক পাঠান। অবশেষে যখন তোমাদের কারো মৃত্যু উপস্থিত হয় তখন আমার পাঠানোরা তার মৃত্যু ঘটায় এবং তারা কোন ভুল করে না। তারপর তাদের প্রকৃত প্রতিপালক আল্লাহর দিকে তারা ফিরে আসে। দেখুন, কর্তৃত্ব তো তাঁরই এবং হিসেব গ্রহনে তিনিই সবচেয়ে তৎপর।” [সূরা আল আন’আম: ৬১–৬২]
সাকরার(জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষনের পরীক্ষা) ভুলঃ
সাকরা intoxication. Unconsciousness also.
ইমাম আহমদ বিন হাম্বাল(রহ) ও ইবলিসঃ “সাকরাতুল মউত” বা জীবন-মৃত্যুর মুহুর্ত। ইমাম আহমদ বিন হাম্বলের(রহ) ছেলে উনার এই সময়ের অবস্থা বর্ননা করছেন।
“আমার পিতার মূমুর্ষ অবস্থায়, আমি পাশে ছিলাম। এই সময় পিতা বলছিলেন, “না এক্ষনি নয়”। এটা থেকে আমরা ভাবছিলাম, হয়তো তিনি এটা বলতে চেয়েছেন, তিনি এক্ষুনি মরতে চান না। তিনি কিছুটা সুস্থ হলে আমরা জিজ্ঞাসা করি, আপনি বার বার কেন এটা বলছিলেন ? ইমাম আহমদ বিন হাম্বল(রহ) বলেন, ইবলিশ তার পাশে বসা ছিল।সে তার আংগুল দাতে কামড়াতে কামড়াতে বলছিল, হে আহমদ, তুমি তো আমার হাত থেকে ফস্কে গেলে? তখন আমি শয়তানকে বলছিলাম, না এক্ষুনি নয়।যতক্ষন না আমি, মারা যাচ্ছি, ততক্ষন তোমার-আমার যুদ্ধ চলবে। মৃত্যুবরন করলেই, আমি তোমার হাত থেকে চিরদিনের জন্য মুক্তি পাব”।
শয়তান বুঝতে পারছিল,সে ইমাম হাম্বলকে হারাতে যাচ্ছে।আহমদ হাম্বল(রহ) পরকালে চলে যাবে, কিন্তু শয়তান তাকে কিছুতেই ঈমানহারা করতে পারছেনা। হাম্বলকে(রহ) ধোকা দিয়ে কুফরি অবস্থায় মৃত্যুবরন করাতে পারছে না।“হে হাম্বল, তুমি তো আমার হাত থেকে বের হয়ে গেলে,” এটাও ছিল তার একটা ধোকা। ইমাম আহমদ বিন হাম্বল(রহ) এটা বুঝে, শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত যুদ্ধ চালায়ে যাচ্ছিলেন।
আহমদ বিন হাম্বলের(রহ) মত শ্রেষ্ঠ মানুষের যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে আমাদের কি হবে ? মৃত্যুর শেষ সময়ে শয়তান আসবে মিথ্যা/চালাকির মাধ্যমে মানুষের ঈমানকে নষ্ট করার জন্য। কারন কারন এটাই সে আল্লাহকে বলে এসেছে।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন প্রত্যেকের কাছে শয়তান এসে বলে, এটা কে সৃষ্টি করেছে? ওটা কে সৃষ্টি করেছে?’ এমনকি সে বলে, আল্লাহকে কে সৃষ্টি করেছে? এ পর্যন্ত পৌঁছালে যেন আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করে ও শয়তানকে অভিশাপ দেয়।’(সহিহ বুখারি: ৩২৭৬)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘সে যেন বলে আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের ওপর ঈমান এনেছি।’ (সহিহ মুসলিম : ১৩৪)
শয়তানের ধোঁকা থেকে মুক্তির তিন উপায় : উল্লিখিত দুই হাদিসে মহানবী (সা.) শয়তানের প্রতারণার ব্যাপারে উম্মাহকে সতর্ক করেছেন এবং তা থেকে আত্মরক্ষার উপায়ও বলে দিয়েছেন। তা হলো,
এক. বিরত হওয়ার মাধ্যমে আত্মনিয়ন্ত্রণ,
দুই. আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা,
তিন. ঈমানের বাক্য উচ্চারণ।
শয়তান মানুষের জন্মের সময় তাকে স্পর্শ করে কষ্ট দেয়, একইভাবে তার মৃত্যুর সময়েও শয়তান চেষ্টা করে তাকে ওয়াসওয়াসা দিয়ে তাঁর ঈমান নষ্ট করা কিংবা ক্ষতি করার জন্য। মানুষের মৃত্যু হচ্ছে তার জীবনে সবচেয়ে বড় বিপদ এবং কষ্টের মুহূর্ত। যেহেতু বিপদের সময় মানুষের স্বাভাবিক বুদ্ধি কম কাজ করে, একারণে সেই কষ্টকর সময়ে শয়তান এসে তাকে ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা করবে, এটাই স্বাভাবিক।
একারণে, মৃত্যুর সময়ে শয়তান যেনো ধোঁকা দিতে না পারে, সেইজন্যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তাআ’লার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এই বলে দুআ করতেন,
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَدْمِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ التَّرَدِّي، وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الْغَرَقِ، وَالْحَرَقِ، وَالْهَرَمِ، وَأَعُوذُ بِكَ أَنْ يَتَخَبَّطَنِيَ الشَّيْطَانُ عِنْدَ الْمَوْتِ، وَأَعُوذُ بِكَ أَنْ أَمُوتَ فِي سَبِيلِكَ مُدْبِرًا، وَأَعُوذُ بِكَ أَنْ أَمُوتَ لَدِيغًا
উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ’উযু বিকা মিনাল হাদমি, ওয়া আ’উযুবিকা মিনাত-তারাদ্দী, ওয়া আ’উযুবিকা মিনাল গরাক্বি ওয়াল হা’রাক্বি ওয়াল হারাম, ওয়া আ’উযু বিকা আঁই য়্যাতাখাব্বাত্বানিয়াশ শাইত্বা-নু ইন্দা’ল মাউত। ওয়া আউযু বিকা আন আমূতা ফী সাবীলিকা মুদবিরা। ওয়া আ’উযু বিকা আন আমূতা লাদীগা।
অর্থঃ হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি পড়ে যাওয়া, ভেঙ্গে (চাপা) পড়া, ডুবে ও পুড়ে যাওয়া থেকে তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। মৃত্যুকালে শয়তানের স্পর্শ থেকে, তোমার পথে (জিহাদে) পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে মৃত্যুবরণ করা থেকে এবং সর্পদষ্ট হয়ে মরা থেকেও আমি তোমার নিকট পানাহ চাচ্ছি। আবু দাউদঃ ২/৯২, সহীহ নাসাঈঃ ৩/১১২৩।
আল্লাহ বলেন, “আর পড়ে শুনাও সেই ব্যাক্তির বৃত্তান্ত,যাকে আমি সব দিয়েছিলাম। কিন্তু এগুলো থেকে সে নিজেকে গুটিয়ে নেয়। সেই জন্য তার পিছনে শয়তান এলো ও সে বিপথগামীদের অন্তর্ভূক্ত হল। যদি আমরা ইচ্ছা করতাম তাহলে তাকে উন্নীত করতাম। কিন্তু মাটি কামড়ে ধরে রইল। সে তার হীন কামনার অনুসরন করে চল্লো”। সূরা আল আরাফঃ ১৭৫
মৃত্যু যন্ত্রনাঃ
মৃত্যু-যন্ত্রনা মৃত্যুর পূর্বের পর্যায়ের নাম হচ্ছে ‘আল-ইহতিদার’। মৃত্যু-যন্ত্রনা নিশ্চয় আসবে। মহানবী(সঃ) শেষ সময়ে পাশে পানি রাখতেন ও বার বার মুখ মুছে মুখ ঠান্ডা করে নিতেন। মৃত্যুকালীন সময়ে রাসুলের(সঃ) শেষ কথা ছিল, “হে আল্লাহ ! আমাকে ক্ষমা কর,আমার প্রতি দয়া কর এবং আমাকে মহান বন্ধুর সাথে মিলিয়ে দাও”। তার পর তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এবং তার হাত ঢলে পড়ল। মুত্তাফাক আলাইহে,বুখারী রিক্কাক অধ্যায়, মরনের কষ্ট অনুচ্ছেদ।
মৃত্যুর কষ্টের বিস্তারিত বিবরণ(আব্দুল্লাহ জাহাংগীর হাদিসের নামে জালিয়াতি)
মৃত্যুর যন্ত্রণা ও কষ্ট বা ‘সাকারাতুল মাউত’ বিষয়ক কিছু কথা হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু মৃত্যু যন্ত্রণার বিস্তারিত বিবরণ, তুলনা, উদাহরণ, প্রত্যেক অঙ্গের সাথে আত্মার কথাবার্তা ইত্যাদি বিষয়ক প্রচলিত হাদীসগুলো কিছু বানোয়াট ও কিছু অত্যন্ত দুর্বল সনদে বর্ণিত হয়েছে। তাহির পাটনী, তাযকিরা, পৃ. ২১৩-২১৪।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। নিশ্চয়ই মৃত্যুর যন্ত্রণা অনেক কঠিন।’ (সহিহ বুখারি : ৬৫১০)
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মৃত্যুর কষ্ট দেখার পর অন্য কারো মৃত্যুর সময় কষ্ট হলে আমার হিংসা হয় না। তিরমিযীঃ২৯৭ হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
কুরআনের বর্ণনায় মৃত্যুযন্ত্রণা : পবিত্র কোরআনে স্পষ্টভাবে মৃত্যুযন্ত্রণার কথা জানানো হয়েছে, তা হলো—
১। وَجَاءَتْ سَكْرَةُ الْمَوْتِ بِالْحَقِّ ۖ ذَٰلِكَ مَا كُنتَ مِنْهُ تَحِيدُ﴾
তারপর দেখো, মৃত্যুর যন্ত্রণা পরম সত্য নিয়ে হাজির হয়েছে৷ এটা সে জিনিস যা থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলে৷ ক্বাফঃ১৯
২। হায় ! তুমি যদি জালেমদেরকে সে অবস্থায় দেখতে পেতে যখন তারা মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকবে এবং ফেরেশতারা হাত বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলতে থাকবে ৷ নাও, তোমাদের প্রাণ বের করে দাও৷ তোমরা আল্লাহর প্রতি অপবাদ আরোপ করে যেসব অন্যায় ও অসত্য কথা বলতে এবং তাঁর আয়াতের বিরুদ্ধে যে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করতে তারি শাস্তি স্বরূপ আজ তোমাদের অবমাননাকর শাস্তি দেয়া হবে৷ আন’আমঃ ৯৩
হায়, যদি তোমরা সেই অবস্থা দেখতে পেতে যখন ফেরেশতারা নিহত কাফেরদের রূহ কবয করেছিল৷ তারা তাদের চেহারায় ও পিঠে আঘাত করছিল এবং বলে চলছিল নাও এবং জ্বালাপোড়ার শাস্তি ভোগ করো ৷ আনফালঃ ৫০
৩। সুতরাং কেন নয়—প্রাণ যখন কণ্ঠাগত হয়, এবং তখন তোমরা তাকিয়ে থাক, আর আমরা তোমাদের চেয়ে তার কাছাকাছি, কিন্তু তোমরা দেখতে পাও না। অতঃপর যদি তোমরা হিসাব নিকাশ ও প্রতিফলের সম্মুখীন না হও। তবে তোমরা ওটা ফিরাও না কেন? যদি তোমরা সত্যবাদী হও! ওয়াকিয়াঃ ৮৩-৮৭
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “মুমিনের প্রাণ তো জান্নাতের গাছে পাখির আকারে থাকবে, পুনরুত্থান দিবসে তার প্রাণকে তার শরীরে ফেরৎ দেয়া পর্যন্ত এভাবেই সে থাকবে”। [মুসনাদে আহমাদ: ৩/৪৫৫, ইবনে মাজাহঃ ৪২৭১, মুয়াত্তা ইমাম মালেক: ৪৯]
৪। কখ্খনো না, যখন প্রাণ কণ্ঠনালীতে উপনীত হবে এবং বলা হবে,ঝাঁড় ফুঁক করার কেউ আছে কি? মানুষ বুঝে নেবে এটা দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়ার সময়৷ উভয় পায়ের গোছা বা নলা একত্র হয়ে যাবে৷সেদিনটি হবে তোমার প্রভুর কাছে যাত্রা করার দিন৷ সূরা কিয়ামাহঃ২৬-৩০
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কাউকে পিঁপড়া কামড়ালে যতটুকু কষ্ট অনুভব করো, শহীদের নিহত হওয়ার কষ্ট তার চেয়ে বেশি হবে না।
(সুনানে নাসায়ি : ৩১৬১)
সুরা ক্বাফের ১৯ নম্বর আয়াতে মৃত্যু সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলছেন:
‘মৃত্যুযন্ত্রণা নিশ্চিতই আসবে। তাকে বলা হবে,এ হচ্ছে সে বিষয় যা থেকে তুমি পালিয়ে বেড়াতে।’
সাকরাতুল মউত হচ্ছে মৃত্যুর প্রাক্কালের এমন এক অবস্থা যখন মানুষ গভীর আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠার কারণে এক ধরনের উদভ্রান্ততা বা অপ্রকৃতস্ততা অনুভব করে। মৃত্যু হচ্ছে এমন এক অন্তর্বর্তী স্থানান্তরের পর্যায় যখন মানুষ তার এতোকালের পরিচিত ও অভ্যস্ত পরিবেশ,অনুগত দেহ,প্রিয়জন ও জগতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে বাধ্য হয়। মৃত্যুর ফলে মানুষ এমন এক জগতে যেতে বাধ্য হয় যা পুরোপুরি অপরিচিত ও নতুন এক বিশ্ব।
মানুষ মৃত্যুর সময় এক নতুন দৃষ্টি বা দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করে। সে তখন ইহকালীন এই জগতের ক্ষণস্থায়ীত্ব উপলব্ধি করে এবং মৃত্যু-পরবর্তী জগতের ঘটনাবলী কম-বেশি দেখতে থাকে। আর এ সময়ই তাকে আতঙ্ক ঘিরে ধরে ও এক ধরনের উন্মত্ততা দেখা যায় তার মধ্যে যদিও বাস্তবে সে মাতাল নয়।
পবিত্র কুরআন বলছে,সাকরাতুল মউত হচ্ছে সেই অবস্থা যা থেকে তোমরা পালিয়ে বেড়াতে। হ্যাঁ,মৃত্যু হচ্ছে এমন এক বাস্তবতা যা থেকে বেশিরভাগ মানুষই পালিয়ে বেড়ায় বা যাকে প্রায় সবাইই এড়িয়ে চলতে চায়। কারণ,বেশিরভাগ মানুষই মনে করে যে মৃত্যু হচ্ছে ধ্বংস বা জীবনের অবসান,নতুন জগতে যাবার সড়ক বা পথ নয়। দুনিয়ার যত নাজ-নেয়ামত কিংবা ধন-সম্পদ,পদ-মর্যাদা ইত্যাদির প্রতি গভীর অনুরাগের কারণে কিংবা পাপের বোঝা খুব বেশি হওয়ার কারণেও মানুষ মৃত্যু থেকে দূরে থাকতে চায়। কিন্তু মানুষ যে অবস্থাতেই থাকুক না কেন মৃত্যু সবার জীবনেই আসবে অনিবার্যভাবে।
মৃত্যু হচ্ছে মুমিনদের জন্য ক্ষুদ্র এক জগত থেকে এক অসীম ও অশেষ খোদায়ী নাজ-নেয়ামতে পরিপূর্ণ এক নতুন জগতের অধিবাসী হওয়া। তবে কোনো মানুষের জন্যই মৃত্যু সহজ কোনো ব্যাপার নয়। কারণ মানুষের আত্মা দীর্ঘকাল ধরে তার দেহে অভ্যস্ত হয়েছিল ও দেহের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিল।
ইমাম জাফর আস সাদিক (আ)’র কাছে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে কেনো মানুষের আত্মা শরীর থেকে বের হওয়ার সময় মানুষ পীড়া বা যন্ত্রণা অনুভব করে?
উত্তরে ইমাম বলেন,এর কারণ হল তার আত্মা নিজ দেহের প্রতি অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিল ও দেহের গভীরে প্রবেশ করেছিল। ব্যাপারটা নষ্ট হয়ে যাওয়া দাঁতের মতো। ওই দাঁত তুলে ফেলা হলে মানুষ প্রশান্তি অনুভব করে। কিন্তু ওই দাঁত তোলার সময় ঠিকই যন্ত্রণা অনুভব করে।
মোট কথা এই আয়াতে স্মরণ করিয়ে দেয়া হচ্ছে যে মৃত্যু অনিবার্য এক বাস্তবতা। মৃত্যুর স্বাদ একদিন সবাইকে অনুভব করতেই হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এখানে মৃত্যুর বাস্তবতার প্রতি গুরুত্ব দেয়াটা হল এক ধরনের সতর্কবাণী। অন্য কথায় এ হুঁশিয়ারিতে বলা হচ্ছে যে খুব ভালো করে ভেবে দেখ যে সঠিক পথ বেছে নিয়েছ কিনা এবং চিরস্থায়ী জগতের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেছ কিনা!
মৃত্যর সময় ও পরবর্তী অবস্থাঃ
“এক আনসারী ব্যক্তির দাফন-কাফনের জন্য আমরা একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে বের হলাম। আমরা কবরের কাছে পৌঁছে গেলাম তখনও কবর খোঁড়া শেষ হয় নি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে বসলেন। আমরা তাঁর চার পাশে এমনভাবে বসে গেলাম যেন আমাদের মাথার উপর পাখি বসেছে। আর তাঁর হাতে ছিল চন্দন কাঠ যা দিয়ে তিনি মাটির উপর মৃদু পিটাচ্ছিলেন। তিনি তখন মাথা জাগালেন আর বললেন, তোমরা কবরের শাস্তি থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করো। কথাটি তিনি দু’বার কিংবা তিন বার বললেন। এরপর তিনি আরো বললেন, যখন কোনো ঈমানদার বান্দা পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়ে আখিরাতের দিকে যাত্রা করে তখন আকাশ থেকে তার কাছে ফিরিশতা আসে। তাদের চেহারা থাকবে সূর্যের মত উজ্জল। তাদের সাথে থাকবে জান্নাতের কাফন ও সুগন্ধি। তারা তার চোখ বন্ধ করা পর্যন্ত তার কাছে বসে থাকবে। মৃত্যুর ফিরিশতা এসে তার মাথার কাছে বসবে। সে বলবে, হে সুন্দর আত্মা! তুমি আল্লাহ তা‘আলার ক্ষমা ও তার সন্তুষ্টির দিকে বেরিয়ে এসো। আত্মা বেরিয়ে আসবে যেমন বেড়িয়ে আসে পান-পাত্র থেকে পানির ফোটা। সে আত্মাকে গ্রহণ করে এক মুহুর্তের জন্যেও ছাড়বে না। তাকে সেই জান্নাতের কাফন পরাবে ও সুগন্ধি লাগাবে। পৃথিবিতে যে মিশক আছে সে তার চেয়ে বেশি সুগন্ধি ছড়াবে। তাকে নিয়ে তারা আসমানের দিকে যেতে থাকবে। আর ফিরিশতাদের প্রতিটি দল বলবে, কে এই পবিত্র আত্মা? তাদের প্রশ্নের উত্তরে তারা তার সুন্দর নাম নিয়ে বলবে যে, অমুক অমুকের ছেলে। এমনিভাবে প্রথম আসমানে চলে যাবে। তার জন্য প্রথম আসমানের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হবে। এমনি করে প্রতিটি আসমান অতিক্রম করে যখন সপ্তম আসমানে যাবে তখন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলবেন, আমার বান্দা আমলনামাটা ইল্লিয়ীনে লিখে দাও। আর আত্মাটা দুনিয়াতে তার দেহের কাছে পাঠিয়ে দাও। এরপর কবরে প্রশ্নোত্তরের জন্য দুজন ফিরিশতা আসবে। তারা প্রশ্ন করবে, তোমার প্রভূ কে? সে বলবে আমার প্রভূ আল্লাহ। তারা প্রশ্ন করবে, তোমার দীন কি? সে উত্তর দিবে, আমার দীন ইসলাম। তারা প্রশ্ন করবে এই ব্যক্তিকে চেন, যাকে তোমাদের কাছে পাঠানো হয়েছে? সে উত্তরে বলবে, সে আল্লাহর রাসূল। তারা বলবে, তুমি কীভাবে জানলে? সে উত্তরে বলবে, আমি আল্লাহর কিতাব পাঠ করেছি। তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছি। তাকে সত্য বলে স্বীকার করেছি। তখন আসমান থেকে একজন আহবানকারী বলবে, আমার বান্দা অবশ্যই সত্য বলেছে। তাকে জান্নাতের বিছানা বিছিয়ে দাও। তার কবর থেকে জান্নাতের একটি দরজা খুলে দাও। জান্নাতের সুঘ্রাণ ও বাতাস আসতে থাকবে। যতদূর চোখ যায় ততদূর কবর প্রশস্ত করে দেওয়া হবে। তার কাছে সুন্দর চেহারার সুন্দর পোশাক পরিহিত সুগন্ধি ছড়িয়ে এক ব্যক্তি আসবে। সে তাকে বলবে, তুমি সুসংবাদ নাও। সূখে থাকো। দুনিয়াতে এ দিনের ওয়াদা দেওয়া হচ্ছিল তোমাকে। মৃত ব্যক্তি সুসংবাদ দাতা এ ব্যক্তিকে সে জিজ্ঞেস করবে, তুমি কে? সে উত্তরে বলবে, আমি তোমার নেক আমল (সৎকর্ম)। তখন সে বলবে, হে আমার রব! কিয়ামত সংঘটিত করুন! হে আমার রব! কিয়ামত সংঘটিত করুন!! যেন আমি আমার সম্পদ ও পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারি। আর যখন কোনো কাফির দুনিয়া থেকে বিদায় হয়ে আখিরাত পানে যাত্রা করে তখন তার কাছে কালো চেহারার ফিরিশতা আগমন করে। তার সাথে থাকে চুল দ্বারা তৈরি কষ্ট দায়ক কাপর। তারা চোখ বুজে যাওয়া পর্যন্ত তার কাছে বসে থাকে। এরপর আসে মৃত্যুর ফিরিশতা। তার মাথার কাছে বসে বলে, হে দুর্বিত্ত পাপিষ্ট আত্মা বের হয়ে আল্লাহর ক্রোধ ও গজবের দিকে চলো। তখন তার দেহে প্রচন্ড কম্পন শুরু হয়। তার আত্মা টেনে বের করা হয়, যেমন আদ্র রেশমের ভিতর থেকে লোহার ব্রাশ বের করা হয়। যখন আত্মা বের করা হয় তখন এক মুহুর্তের জন্যও ফিরিশতা তাকে ছেড়ে দেয় না। সেই কষ্টদায়ক কাপড় দিয়ে তাকে পেচিয়ে ধরে। তার লাশটি পৃথিবীতে পড়ে থাকে। আত্মাটি নিয়ে যখন উপরে উঠে তখন ফিরিশতারা বলতে থাকে কে এই পাপিষ্ট আত্মা? তাদের উত্তরে তার নাম উল্লেখ করে বলা হয় অমুক, অমুকের ছেলে। প্রথম আসমানে গেলে তার জন্য দরজা খোলার অনুরোধ করা হলে দরজা খোলা হয় না। এ সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ আয়াতটি পাঠ করলেন:
﴿لَا تُفَتَّحُ لَهُمۡ أَبۡوَٰبُ ٱلسَّمَآءِ وَلَا يَدۡخُلُونَ ٱلۡجَنَّةَ حَتَّىٰ يَلِجَ ٱلۡجَمَلُ فِي سَمِّ ٱلۡخِيَاطِۚ٤٠﴾ [الاعراف: ٤٠]
“তাদের জন্য আসমানের দরজাসমূহ খোলা হবে না এবং তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যতক্ষণ না উট সূঁচের ছিদ্রতে প্রবেশ করে”। [সূরা আল-আরাফ, আয়াত: ৪০]
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, তার আমলনামা সিজ্জীনে লিখে দাও যা সর্ব নিম্ন স্তর। এরপর তার আত্মাকে পৃথিবীতে নিক্ষেপ করা হবে। এ কথা বলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ আয়াতটি পাঠ করেন
﴿وَمَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَكَأَنَّمَا خَرَّ مِنَ ٱلسَّمَآءِ فَتَخۡطَفُهُ ٱلطَّيۡرُ أَوۡ تَهۡوِي بِهِ ٱلرِّيحُ فِي مَكَانٖ سَحِيقٖ ٣١﴾ [الحج: ٣١]
“আর যে আল্লাহর সাথে শরীক করে, সে যেন আকাশ থেকে পড়ল। অতঃপর পাখি তাকে ছোঁ মেরে নিয়ে গেল কিংবা বাতাস তাকে দূরের কোনো জায়গায় নিক্ষেপ করল”। [সূরা আল-হাজ, আয়াত: ৩১]।
এরপর তার দেহে তার আত্মা চলে আসবে। দু’ফিরিশতা আসবে। তাকে বসাবে। এরপর তাকে জিজ্ঞেস করবে, তোমার প্রভূ কে? সে বলবে, হায়! হায়!! আমি জানি না। তারা তাকে আবার জিজ্ঞেস করবে, তোমার ধর্ম কি? সে বলবে, হায়! হায়!! আমি জানি না। তারপর জিজ্ঞেস করবে, এ ব্যক্তি কে যাকে তোমাদের মধ্যে পাঠানো হয়েছিল? সে উত্তর দিবে, হায়! হায়!! আমি জানি না। তখন আসমান থেকে এক আহবানকারী বলবে, সে মিথ্যা বলেছে। তাকে জাহান্নামের বিছানা বিছিয়ে দাও। জাহান্নামের একটি দরজা তার জন্য খুলে দাও। জাহান্নামের তাপ ও বিষাক্ততা তার কাছে আসতে থাকবে। তার জন্য কবরকে এমন সঙ্কুচিত করে দেওয়া হবে যাতে তার হাড্ডিগুলো আলাদা হয়ে যাবে। তার কাছে এক ব্যক্তি আসবে যার চেহার বিদঘুটে, পোশাক নিকৃষ্ট ও দুর্গন্ধময়। সে তাকে বলবে, যে দিনের খারাপ পরিণতি সম্পর্কে তোমাকে বলা হয়েছিলো তা আজ উপভোগ করো। সে এই বিদঘুটে চেহারার লোকটিকে জিজ্ঞেস করবে, তুমি কে? সে বলবে, আমি তোমার অসৎকর্ম। এরপর সে বলবে, হে প্রভূ! আপনি যেন কিয়ামত সংঘটিত না করেন” মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ১৮৫৩৪, আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৭৫৩, মুসতাদরাক হাকেম, হাদীস নং ১০৭। আলবানী রহ. আহকামুল জানায়িয কিতাবে এ হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
“মানুষকে যখন তার কবরে রাখা হয় আর তার সাথিরা চলে যায়, তখন মৃত ব্যক্তি তাদের জুতার আওয়ায শুনতে পায়। এমন সময় দু’জন ফিরিশতা এসে তাকে বসায়। তারা তাকে জিজ্ঞেস করে, এই ব্যক্তি সম্পর্কে তুমি কী ধারনা রাখতে? তখন ব্যক্তি যদি ঈমানদার হয়, সে উত্তর দিবে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল। তাকে বলা হবে জাহান্নামে তোমার যেখানে অবস্থান ছিল সে দিকে তাকাও। আল্লাহ জাহান্নামের এ অবস্থানকে তোমার জন্য জান্নাত দিয়ে পরিবর্তন করেছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনে, সে উভয় অবস্থানকেই দেখবে। আর ব্যক্তি যদি মুনাফেক বা কাফির হয়, যখন তাকে প্রশ্ন করা হবে, এই ব্যক্তি সম্পর্কে তুমি কী ধারনা রাখতে? তখন উত্তরে সে বলবে, আমি জানি না। মানুষ যা বলত আমি তাই বলতাম। তাকে ফিরিশতাদ্বয় বলবে, তুমি জানলে না ও তাকে অনুসরণ করলে না। তখন তাকে লোহার হাতুরী দিয়ে প্রচন্ড আঘাত করা হয়। ফলে এমন চিৎকার দেয় যা মানুষ ও জিন ব্যতীত সকল প্রাণী শুনতে পায়। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৩৭৪, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৮৭০।
“যখন তোমাদের মধ্যে কোনো মৃত ব্যক্তিকে কবর দেওয়া হয় তখন কালো ও নীল বর্ণের দু’জন ফিরিশতা আগমন করে। একজনের নাম মুনকার অন্যজনের নাম হলো নাকীর। তারা তাকে জিজ্ঞেস করে, এই ব্যক্তি সম্পর্কে তোমরা কী বলতে? সে বলবে, সে আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। আমি স্বাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল। তখন ফিরিশতাদ্বয় বলবে, আমরা আগেই জানতাম তুমি এ উত্তরই দিবে। এরপর তার কবরকে সত্তর হাত প্রশস্ত করে দেওয়া হয়। সেখানে আলোর ব্যবস্থা করা হয়। এরপর তাকে বলা হয়, এখন তুমি নিদ্রা যাও। সে বলবে, আমি আমার পরিবারের কাছে ফিরে যাবো, তাদেরকে (আমার অবস্থা সম্পর্কে) এ সংবাদ দেব। তখন ফিরিশতাদ্বয় তাকে বলে, তুমি ঘুমাও সেই নব বধুর মত যাকে তার প্রিয়জন ব্যতীত কেউ জাগ্রত করে না। এমনিভাবে একদিন আল্লাহ তাকে জাগ্রত করবেন। আর যদি সে ব্যক্তি মুনাফেক হয়, সে উত্তর দিবে আমি তাঁর (রাসূলুল্লাহ) সম্পর্কে মানুষকে যা বলতে শুনেছি তাই বলতাম। বাস্তব অবস্থা আমি জানি না। তাকে ফেরেশ্তাদ্বয় বলবে, আমরা জানতাম, তুমি এই উত্তরই দিবে। তখন মাটিকে বলা হবে তার উপর চাপ সৃষ্টি করো। মাটি এমন চাপ সৃষ্টি করবে যে, তার হাড্ডিগুলো আলাদা হয়ে যাবে। কিয়ামত সংঘটনের সময় তার উত্থান পর্যন্ত এ শাস্তি অব্যাহত থাকবে। তিরমিজী, হাদীস নং ১০৭১, তিনি বলেছেন, হাদীসটি হাসান গরীব। আলবানী রহ. বলেছে্ হাদীসটির সুত্র হাসান। হাদীসটি ইমাম মুসলিমের বিশুদ্ধতার শর্তে উত্তীর্ণ। তিরমিজী, হাদীস নং ১০৭১, তিনি বলেছেন, হাদীসটি হাসান গরীব। আলবানী রহ. বলেছে্ হাদীসটির সুত্র হাসান। হাদীসটি ইমাম মুসলিমের বিশুদ্ধতার শর্তে উত্তীর্ণ।
ঈমানদার ব্যক্তি বরযখের জীবনে সুখ-নিদ্রায় বিভোর থাকবে। যখন কিয়ামত সংঘটিত হবে তখন তার নিদ্রা ভেঙ্গে যাবে ফলে সে অনেকটা বিরক্তির স্বরে বলবে:
﴿قَالُواْ يَٰوَيۡلَنَا مَنۢ بَعَثَنَا مِن مَّرۡقَدِنَاۜ ۗ هَٰذَا مَا وَعَدَ ٱلرَّحۡمَٰنُ وَصَدَقَ ٱلۡمُرۡسَلُونَ ٥٢﴾ [يس: ٥٢]
“হায়! কে আমাদের নিদ্রাস্থল থেকে উঠালো? (তাদের বলা হবে) এটা তো তা যার ওয়াদা পরম করুণাময় করেছিলেন এবং রাসূলগণ সত্য বলেছিলেন”। [সূরা ইয়াসীন, আয়াত: ৫২]
মুমিনের মৃত্যুকষ্ট হয় কেন :
একাধিক বিশুদ্ধ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত মৃত্যুর সময় মহানবী (সা.)-এর শারীরিক কষ্ট হয়েছিল। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে মুমূর্ষু অবস্থায় দেখেছি একটি পানিভর্তি বাটি তার সামনে রাখা ছিল। তিনি সেই বাটিতে তার হাত প্রবেশ করাচ্ছিলেন এবং পানি দিয়ে তার মুখমণ্ডল মলছিলেন। আর বলছিলেন, ‘হে আল্লাহ, মৃত্যুকষ্ট ও মৃত্যুযন্ত্রণা হ্রাসে আমায় সহায়তা করুন।’ (সুনানে তিরমিজি : ৯৭৮)
মুমিনের মৃত্যুযন্ত্রণা তার মর্যাদা বৃদ্ধির কারণ। অন্য হাদিসে এসেছে, ‘আল্লাহ যখন কোনো মুমিনের জন্য কোনো মর্যাদার স্তর নির্ধারণ করেন এবং নিজ আমল দ্বারা যদি তা অর্জন করতে না পারে, তখন আল্লাহ তাঁর শরীর বা তাঁর সম্পদ অথবা তাঁর সন্তানদের বিপদগ্রস্ত করেন। অতঃপর মুমিন ধৈর্যধারণ করার ফলে সে পূর্বনির্ধারিত মর্যাদার স্তরে পৌঁছে যায়।’ (সুনানে আবি দাউদ : ৩০৯০)
ভালো মৃত্যু বলতে কি বুঝায়ঃ
হুসনুল খাতিমা বা ভাল মৃত্যু… মানে- মৃত্যুর পূর্বে আল্লাহর ক্রোধ উদ্রেককারী গুনাহ হতে বিরত থাকতে পারা, পাপ হতে তওবা করতে পারা, নেকীর কাজ ও ভাল কাজ বেশি বেশি করার তাওফিক পাওয়া এবং এ অবস্থায় মৃত্যু হওয়া।
রাসূল সা বলেছেন- “আল্লাহ যদি কোন বান্দার কল্যাণ চান তখন তাকে (ভাল) কাজে লাগান।”সাহাবায়ে কেরাম বললেন: কিভাবে আল্লাহ বান্দাকে (ভাল) কাজে লাগান? তিনি বলেন: “মৃত্যুর পূর্বে তাকে ভাল কাজ করার তাওফিক দেন।” [মুসনাদে আহমাদ (১১৬২৫), তিরমিযি (২১৪২), আলবানি ‘সিলসিলা সহিহা’ গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ সাব্যস্ত করেছেন (১৩৩৪)।
“আল্লাহ তাআলা যদি কোন বান্দার কল্যাণ চান তখন সে বান্দাকে ‘আসাল’ করেন। সাহাবায়ে কেরাম বলেন: আসাল কি? তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলা বান্দাকে বিশেষ একটি ভাল কাজ করার তাওফিক দেন এবং এই আমলের উপর তার মৃত্যু ঘটান।[সহিহ আহমাদ (১৭৩৩০), আলবানি সিলসিলা সহিহা গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ ঘোষণা করেছেন (১১১৪)
- মৃত্যুকালে বান্দার নিকট তার ভাল মৃত্যুর যে আলামত প্রকাশ পায় সেটা হচ্ছে- বান্দাকে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও অনুগ্রহ লাভের সুসংবাদ দেয়া হয়।
আল্লাহ তাআলা বলেছেন-“নিশ্চয় যারা বলে, আমাদের পালনকর্তা আল্লাহ, অতঃপর তাতেই অবিচল থাকে, তাদের কাছে ফেরেশতা অবতীর্ণ হয় এবং বলে, তোমরা ভয় পেও না, চিন্তিত হইও না এবং তোমরা প্রতিশ্রুত জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ কর।”[সূরা ফুসসিলত, আয়াত: ৩০] মৃত্যুকালে মুমিন বান্দাদেরকে এই সুসংবাদ দেয়া হয়। দেখুন: তাফসিরে সাদী, পৃষ্ঠা- ১২৫৬।
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাতকে ভালবাসে আল্লাহও তার সাক্ষাতকে ভালবাসেন। যে ব্যক্তির কাছে আল্লাহর সাক্ষাত প্রিয়, আল্লাহর নিকটও তার সাক্ষাত প্রিয়। আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী! আপনি কি মৃত্যুর কথা বুঝাতে চাচ্ছেন? আমরা তো সবাই মৃত্যুকে অপছন্দ করি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: না, সেটা না। মুমিন বান্দাকে যখন আল্লাহর রহমত, তাঁর সন্তুষ্টি, তাঁর জান্নাতের সুসংবাদ দেয়া হয় তখন তিনি আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করাকে ভালবাসেন। আর কাফের বান্দাকে যখন আল্লাহর শাস্তি, তাঁর অসন্তুষ্টির সংবাদ দেয়া হয় তখন সে আল্লাহর সাক্ষাতকে অপছন্দ করে এবং আল্লাহও তার সাক্ষাতকে অপছন্দ করেন। সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিম
ইমাম নববী (রহঃ) বলেন: “হাদিসের অর্থ হচ্ছে- যখন মানুষের মৃত্যুর গড়গড়া শুরু হয়ে যায়, যে অবস্থায় আর তওবা কবুল হয় না, সে অবস্থার পছন্দ-অপছন্দকে এখানে উদ্দেশ্য করা হয়েছে। মুমূর্ষু ব্যক্তির কাছে সবকিছু স্পষ্ট হয়ে পড়ে, তার পরিণতি কী হতে যাচ্ছে সেটা তার সামনে পরিষ্কার হয়ে যায়।
- ভাল মৃত্যুর আলামত অনেক। আলেমগণ কুরআন-হাদিস খুঁজে এই আলামতগুলো বের করার চেষ্টা করেছেন। এই আলামতগুলোর মধ্যে রয়েছেঃ
১. মৃত্যুর সময় ‘কালেমা’ পাঠ করতে পারা।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তির সর্বশেষ কথা হবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ তিনি জান্নাতে প্রবেশ করবেন।” [সুনানে আবু দাউদ, ৩১১৬], সহিহ আবু দাউদ গ্রন্থে (২৬৭৩) আলবানি এই হাদিসকে সহিহ বলেছেন।
২. মৃত্যুর সময় কপালে ঘাম বের হওয়া।
বুরাইদা বিন হাছিব (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি তিনি বলেন: “মুমিন কপালের ঘাম নিয়ে মৃত্যুবরণ করে।”[মুসনাদে আহমাদ (২২৫১৩), জামে তিরমিযি (৯৮০), সুনানে নাসায়ি (১৮২৮) এবং আলবানি সহিহ তিরমিযি গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]
৩. জুমার রাতে বা দিনে মৃত্যুবরণ করা।
দলিল হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “যে ব্যক্তি জুমার দিনে বা রাতে মৃত্যুবরণ করেন আল্লাহ তাকে কবরের আযাব থেকে নাজাত দেন।”[মুসনাদে আহমাদ (৬৫৪৬), জামে তিরমিযি (১০৭৪), আলবানি বলেছেন: সনদের সবগুলো ধারা মিলালে হাদিসটি সহিহ]
৪. আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা।
দলিল হচ্ছে আল্লাহ তাআলার বাণী:“আর যারা আল্লাহর রাহে নিহত হয়,তাদেরকে তুমি কখনো মৃত মনে করো না। বরং তারা নিজেদের পালনকর্তার নিকট জীবিত ও জীবিকাপ্রাপ্ত। আল্লাহ নিজের অনুগ্রহ থেকে যা দান করেছেন তার প্রেক্ষিতে তারা আনন্দ উদযাপন করছে। আর যারা এখনও তাদের কাছে এসে পৌঁছেনি তাদের পেছনে তাদের জন্যে আনন্দ প্রকাশ করে। কারণ, তাদের কোন ভয় ভীতিও নেই এবং কোন চিন্তা ভাবনাও নেই। আল্লাহর নেয়ামত ও অনুগ্রহের জন্যে তারা আনন্দ প্রকাশ করে এবং তা এভাবে যে, আল্লাহ, ঈমানদারদের শ্রমফল বিনষ্ট করেন না।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৬৯-১৭১] এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “যে ব্যক্তি আল্লাহর রাহে নিহত হয় সে শহিদ এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর রাহে মারা যায় সেও শহিদ।”[সহিহ মুসলিম, ১৯১৫]
৫. প্লেগ রোগে মারা যাওয়া।
দলীল হচ্ছে নবী আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “প্লেগ রোগে মৃত্যু প্রত্যেক ঈমানদারের জন্য শাহাদাত।”[সহিহ বুখারী (২৮৩০) ও সহিহ মুসলিম (১৯১৬)] এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রী আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্লেগ রোগ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছি তখন তিনি আমাকে জানান যে, “এটি হচ্ছে- আল্লাহর পক্ষ থেকে আযাব। আল্লাহ যাদেরকে শাস্তি দিতে চান তাদের উপর এই রোগ নাযিল করেন। আর আল্লাহ এই রোগ মুমিনদের জন্য রহমতস্বরূপ পাঠিয়েছেন। যে মুমিন প্লেগ রোগে আক্রান্ত হয়ে নিজ এলাকাতে অবস্থান করবে, ধৈর্যধারণ করবে, সওয়াবের প্রত্যাশা করবে এবং এই একীন রাখবে যে, আল্লাহ তার জন্য যা লিখে রেখেছেন সেটাই ঘটবে সে ব্যক্তি শহিদের সমান সওয়াব পাবে।” [সহিহ বুখারি (৩৪৭৪)]
৬. যে কোন পেটের পীড়াতে মৃত্যুবরণ করা।
দলিল হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “যে ব্যক্তি পেটের পীড়াতে মৃত্যুবরণ করবে সে শহিদ।” [সহিহ মুসলিম (১৯১৫)]
৭. কোন কিছু ধ্বসে পড়ে অথবা পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণ করা।
দলিল হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “পাঁচ ধরনের মৃত্যু শাহাদাত হিসেবে গণ্য। প্লেগ রোগে মৃত্যু, পেটের পীড়ায় মৃত্যু, পানি ডুবে মৃত্যু, কোন কিছু ধ্বসে পড়ে মৃত্যু এবং আল্লাহর রাস্তায় শহিদ হওয়া।” [সহিহ বুখারি (২৮২৯) ও সহিহ মুসলিম (১৯১৫)]
৮. প্রসবউত্তর প্রসূতির মৃত্যু অথবা গর্ভবতী অবস্থায় নারীর মৃত্যু।
এর দলিল হচ্ছে আবু দাউদ (৩১১১) কর্তৃক বর্ণিত হাদিস; নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে নারী জুমা (বাচ্চা) নিয়ে মারা যায় তিনি শহিদ।”। ইমাম খাত্তাবি বলেন: এ হাদিসের অর্থ হচ্ছে- যে নারী পেটে বাচ্চা নিয়ে মারা যায়।[আওনুল মাবুদ] ইমাম আহমাদ উবাদা বিন সামেত (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শহিদের শ্রেণীগুলো উল্লেখ করতে গিয়ে বলেছেন: “যে নারী তার গর্ভস্থিত সন্তানের কারণে মারা যায় তিনি শহিদ। সে নারীকে তার সন্তান সুরার (নাভিরজ্জু) ধরে টেনে জান্নাতে নিয়ে যাবে।”[আলবানি ‘জানায়িয’ গ্রন্থে (৩৯) হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন] সুররা (নাভি): নবজাতকের জন্মের পর ধাত্রী নাড়ী কাটেন এবং সামান্য কিছু অংশ রেখে দেন। যে অংশটুকু রেখে দেন সেটাকে সুররা বা নাভি বলে। আর যে অংশটুকু কেটে ফেলেন সেটাকে সুরার (নাভিরজ্জু) বলা হয়।
৯. আগুনে পুড়ে, প্লুরিসি (ফুসফুসের আবরক ঝিল্লির প্রদাহজনিত রোগবিশেষ) এবং যক্ষ্মা রোগে মৃত্যু।
দলিল হচ্ছে- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহর রাহে নিহত হওয়া শাহাদাত, প্লেগ রোগে মারা যাওয়া শাহাদাত, পানি ডুবে মারা যাওয়া শাহাদাত, পেটের পীড়ায় মারা যাওয়া শাহাদাত, সন্তান প্রবসের পর মারা গেলে নবজাতক তার মাকে নাভিরজ্জু ধরে টেনে জান্নাতে নিয়ে যাবে। (সংকলক বলেন, এই হাদিসের জনৈক বর্ণনাকারী বায়তুল মোকাদ্দাসের খাদেম আবুল আওয়াম হাদিসটির অংশ হিসেবে “আগুনে পুড়ে মৃত্যু ও যক্ষ্মা রোগ” এর কথাও বর্ণনা করেছেন।) আলবানি বলেছেন: হাদিসটি হাসান-সহিহ।[সহিহুত তারগিব ওয়াত তারহিব (১৩৯৬)]
১০. নিজের ধর্ম, সম্পদ ও জীবন রক্ষা করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করা।
দলিল হচ্ছে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “যে ব্যক্তি তার সম্পদ রক্ষা গিয়ে মারা যায় সে শহিদ। যে ব্যক্তি তার ধর্ম (ইসলাম) রক্ষা করতে গিয়ে মারা যায় সে শহিদ। যে ব্যক্তি তার জীবন রক্ষা করতে গিয়ে মারা যায় সে শহিদ।”[জামে তিরমিযি (১৪২১)] সহিহ বুখারি (২৪৮০) ও সহিহ মুসলিমে (১৪১) আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে তিনি বলেন: আমি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি- “যে ব্যক্তি তার সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে মারা যায় সে শহিদ।”
১১. আল্লাহর রাস্তায় প্রহরীর দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যে ব্যক্তি মারা যায় সেও শহিদ।
দলিল হচ্ছে সহিহ মুসলিমের হাদিস (১৯১৩): সালমান আলফারেসি (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “একদিন, একরাত পাহারা দেয়া একমাস দিনে রোজা রাখা ও রাতে নামায পড়ার চেয়ে উত্তম। আর যদি পাহারারত অবস্থায় সে ব্যক্তি মারা যায় তাহলে তার জীবদ্দশায় সে যে আমলগুলো করত সেগুলোর সওয়াব তার জন্য চলমান থাকবে, তার রিযিকও চলমান থাকবে এবং কবরের ফিতনা থেকে সে মুক্ত থাকবে।”
১২. ভাল মৃত্যুর আরো একটি আলামত হলো- নেক আমলরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলল এবং এ অবস্থায় তার মৃত্যু হলো সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। যে ব্যক্তি কোন একটি সদকা করল এবং এ অবস্থায় তার মৃত্যু হলো সেও জান্নাতে প্রবেশ করবে।” [মুসনাদে আহমাদ (২২৮১৩), আলবানি জানায়িয গ্রন্থে পৃষ্ঠা-৪৩ এ হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন। দেখুন কিতাবুল জানায়িয, পৃষ্ঠা- ৩৪।
এই আলামতগুলো ব্যক্তির ভাল মৃত্যুর সুসংবাদ দেয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমরা নির্দিষ্টভাবে কোন ব্যক্তির ব্যাপারে এ নিশ্চয়তা দিব না যে, তিনি জান্নাতি। শুধু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যাদের ব্যাপারে নিশ্চয়তা প্রদান করেছেন তারা ছাড়া। যেমন চার খলিফার ব্যাপারে তিনি নিশ্চয়তা প্রদান করেছেন। আল্লাহ আমাদের সকলকে ভাল মৃত্যু দান করুন। সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব
- ভালো মৃত্যুর জন্য দু’আঃ
সলাতের সেজদা অবস্থায়, রমজানের রোজা অবস্থায়, কুরআন তিলাওয়াত রত অবস্থায়, হজ্জ-ওমরা সফরে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শহর মদিনায় মৃত্যুর জন্য দুআ করা জায়েজ। কেননা এগুলো ‘হুসনুল খাতিমা’ বা ভালো মৃত্যুর জন্য দুআ। আর ভালো মৃত্যুর পরিণতিও ভালো আশা করা যায়।
◆ উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি এ বলে দুআ করতেন,
اللَّهُمَّ ارْزُقْنِي شَهَادَةً فِي سَبِيلِكَ، وَاجْعَلْ مَوْتِي فِي بَلَدِ رَسُولِكَ صلى الله عليه وسلم
“হে আল্লাহ্, আমাকে তোমার রাস্তায় শাহাদাত লাভের তাওফিক দান কর এবং আমার মৃত্যু তোমার রাসূলের শহরে প্রদান কর।” (সহি বুখারি/ ১৮৯০, অধ্যায় ২৯/১৩) (মুয়াত্তা মালিক ৯৮৯)
মাজমাউল আনহার গ্রন্থের লেখক বলেন,
وأعظم الحاجات سؤال حسن الخاتمة وطلب المغفرة
“সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন হল, কল্যাণের উপর মৃত্যু এবং ক্ষমার জন্য দুআ করা।
” মুসলিম হিসেবে মৃত্যু বরণের দুআ:
اللَّهُم يا فَاطِرَ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ أَنْتَ وَلِيِّي فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ تَوَفَّنِي مُسْلِمًا وَأَلْحِقْنِي بِالصَّالِحِينَ
“অর্থ: হে নভোমণ্ডল ও ভূ-মণ্ডলের স্রষ্টা, আপনিই আমার কার্যনির্বাহী ইহকাল ও পরকালে। আমাকে ইসলামের উপর মৃত্যুদান করুন এবং আমাকে স্বজনদের সাথে মিলিত করুন।”(সূরা ইউসূফ এর ১০১ নং আয়াত থেকে এ দুআটি নেয়া হয়েছে)
اَللَّهُمَّ أَحْسِنْ عَاقِبَتَنَا فِيْ الْأُمُورِ كُلِّهَا، وَأجِرْنَا مِنْ خِزْيِ الدُّنْيَا وَعَذَابِ الآخِرَةِ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা আহসিন আক্বিবাতানা ফিল উমুরি কুল্লিহা ওয়া আঝিরনা মিন খিযয়িদ দুনইয়া ওয়া আজাবিল আখিরাহ।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমাদের সব কাজের শেষ ফল সুন্দর করুন এবং আমাদেরকে দুনিয়ার লাঞ্ছনা ও কবরের আজাব থেকে মুক্ত রাখুন।’ (মুসনাদে আহমদ)
- যার যে অবস্থার উপর মৃত্যু হবে কিয়ামতের দিন তাকে সে অবস্থার উপর উঠানো হবে।
জাবির রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
يُبعَثُ كلُّ عبدٍ على ما مات عليه المُؤمِنُ على إيمانِه والمُنافِقُ على نِفاقِه
“প্রত্যেক বান্দাকে ঐ অবস্থায় কিয়ামতের দিন উঠানো হবে যে অবস্থার উপর সে মৃত্যু বরণ করেছে। মুমিনকে উঠানো হবে ঈমানের উপর এবং মুনাফিককে উঠানো হবে নিফাকির উপর।” ( সহীহ ইবনে হিব্বান, হা/৭৩১৩)
➧ ইমাম নওবী রহ. উক্ত হাদিসে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, “উক্ত হাদিসে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ মর্মে খরব দিচ্ছেন যে, প্রত্যেক বান্দাকে -চাই সে পুরুষ হোক অথবা নারী হোক-কিয়ামতের দিন ঐ অবস্থায় উত্তোলন করা হবে যে অবস্থায় উপর সে মৃত্যু বরণ করেছিল। সে যদি ভালো কাজ ও কল্যণের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকা অবস্থায় মৃত্যু বরণ করে তাহলে কল্যাণের উপরই তাকে উঠানো হবে। আর অকল্যাণ ও খারাপিতে লিপ্ত থাকা অবস্থায় মৃত্যু বরণ করলে সে অবস্থায় উঠানো হবে। এই কল্যাণ ও অকল্যাণের যত অর্থ ও রূপ আছে সবই এখানে প্রযোজ্য।
সুতরাং প্রতিটি মানুষের এই আগ্রহ থাকা উচিৎ, যেন ভালো অবস্থায় (উত্তম কর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকা অবস্থায়) মৃত্যু তার মৃত্যু হয়।
উক্ত হাদিসে এ মর্মে বান্দাকে উৎসাহিত করা হয়েছে যে, সে যেন সদা সর্বদাই কল্যাণ ও আমলে সালেহ বা সৎকর্মে লিপ্ত থাকে। কেননা, কেউ জানে না, সে কখন মৃত্যু বরণ করবে।”
- মৃত্যুর প্রস্তুতি গ্রহণ করা এবং জীবনের বাকি সময়টুকুকে অমূল্য সম্পদ মনে করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন ও গুনাহ মোচনের জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করা।
করণীয় সম্পর্কে অতি সংক্ষেপে ১০টি দিক নির্দেশনা তুলে ধরা হল:
◈ ১) পরম ক্ষমাশীল ও অসীম দয়ালু আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে নিজের অতীত জীবনের সকল গুনাহের কথা তুলে ধরে অনুতপ্ত হৃদয়ে নিখাদ চিত্তে তওবা-ইস্তিগফার করা।
◈ ২) আল্লাহর সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে দুর্বলতা ও অতীত জীবনে ঘটে যাওয়া ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলোকে যথাসাধ্য অধিক পরিমাণে নফল ইবাদত-বন্দেগি ও নেকির কাজ দ্বারা ভরপুর করে দেয়া।
◈ ৩) সাধ্যমত কুরআন তিলাওয়াত, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, দুআ, তাসবিহ ও জিকির-আজকার দ্বারা জিহ্বাকে সজীব রাখা।
◈ ৪) কবরের অন্ধকার, হাশরের ভয়াবহতা, জাহান্নামের মর্মন্তুদ শাস্তি ইত্যাদির ভয়ে আল্লাহর নিকট ক্রন্দন করা এবং তার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করা।
◈ ৫) সর্বদা ওজু অবস্থায় থাকার চেষ্টা করা।
◈ ৬) গল্প-গুজব, খেলা-ধুলা, বিনা দরকারে মোবাইল টিপা, টিভি দেখা এবং অনর্থক কথা ও কাজে সময় অপচয় না করা।
◈ ৭) কারো সাথে লেনদেন থাকলে তা দ্রুত সমাধান করা।
◈ ৮) কারো ’হক‘ নষ্ট করে থাকলে অনতিবিলম্বে তা মালিককে ফিরিয়ে দেয়া। কাউকে কষ্ট দিয়ে থাকলে বা কারো প্রতি জুলুম-অত্যাচার করে থাকলে তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা বা তাকে ক্ষতিপূরণ দেয়া এবং তার প্রতি কারো দাবি-দাওয়া ও অভিযোগ-অনুযোগ থাকলে বিষয়টি মিটমাট করে নেয়া।
◈ ৯) দান-সদকা করা। (তবে তার সম্পদের সর্বোচ্চ তিনভাগের একভাগ দান করতে পারে। এর বেশি দান করা শরিয়ত সম্মত নয়)
◈ ১০) মৃত্যুর পরে কী করণীয় সে বিষয়ে তার পরিবার বা উত্তরাধিকারী লোকজনকে দিক নির্দেশনা দেয়া ও ওসিয়ত করা।
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আবদুল জলীল
দাঈ,জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, ksa
ভাল মৃত্যু মানে- মৃত্যুর পূর্বে আল্লাহর ক্রোধ উদ্রেককারী গুনাহ হতে বিরত থাকতে পারা, পাপ হতে তওবা করতে পারা, নেকীর কাজ ও ভাল কাজ বেশি বেশি করার তাওফিক পাওয়া এবং এ অবস্থায় মৃত্যু হওয়া।
১. আল্লাহর আনুগত্য ও তাকওয়া অবলম্বন করা :
আল্লাহর আনুগত্য ও তাকওয়ার মুল হল সর্ব ক্ষেত্রে আল্লাহর তাওহীদ তথা একাত্ববাদ প্রতিষ্ঠা। এটা হল; সকল প্রকার ফরজ ওয়াজিব আদায়, সব ধরণের পাপাচার থেকে সাবধান থাকা, অবিলম্বে তাওবা করা ও সকল প্রকার ছোট-বড় শিরক থেকে মুক্ত থাকা।
‘নিশ্চয় যারা তাদের প্রতিপালকের ভয়ে সন্ত্রস্ত, যারা তাদের প্রতিপালকের নিদর্শনাবলীতে ঈমান আনে, যারা তাদের প্রতিপালকের সাথে শরীক করে না, এবং যারা তাদের প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবর্তন করবে এই বিশ্বাসে তাদের যা দান করবার তা দান করে ভীত-কম্পিত হৃদয়ে। তারাই দ্রুত সম্পাদন করে কল্যাণকর কাজ এবং তারা তাতে অগ্রগামী। সূরা আল-মুমিনূন : ৫৭-৬১
২. বাহ্যিক ও আধ্যাতিক অবস্থা উন্নত করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা:
প্রথমে নিজেকে সংশোধন করার জন্য দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করতে হবে। যে নিজেকে সংশোধন করার জন্য চেষ্টা করবে আল্লাহ তার নীতি অনুযায়ী তাকে সংশোধনের সামর্থ দান করবেন। এর জন্যে প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য সকল ব্যাপারে তাকওয়া অবলম্বন করা অর্থাৎ আল্লাহকে ভয় এবং আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আদর্শ অনুসরণ করা। এটাই মুক্তির পথ। আল্লাহ তাআলা বলেন :
‘হে মুমিনগন! তোমরা আল্লাহকে যথার্থভাবে ভয় কর এবং তোমরা মুসলিম না হয়ে মৃত্যুবরণ করোনা।’ সূরা নিসা : ১০২
আল্লাহ আরো বলেন,
‘তোমার মৃত্যু উপস্থিত হওয়া পর্যন্ত তুমি তোমার প্রতিপালকের এবাদত কর।’ সূরা আল-হিজর : ৯৯।
ঈমানদার ব্যক্তির কর্তব্য হল সর্বদা পাপ থেকে সাবধান থাকবে। কবীরা গুনাহকে বলা হয় মুবিকাত বা ধ্বংসকারী। আর অব্যাহত সগীরা গুনাহ কবীরা গুনাহতে পরিণত হয়ে থাকে। বার বার সগীরা করলে অন্তরে জং ধরে যায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
‘তোমরা ছোট ছোট গুনাহ থেকে সাবধান থাকবে। ছোট গুনাহে লিপ্ত হয়ে পড়ার দৃষ্টান্ত হল সেই পর্যটক দলের মত যারা একটি উপত্যকায় অবস্থান করল। অত:পর একজন একজন করে তাদের জ্বালানী কাঠগুলো অল্প অল্প করে জালিয়ে তাপ নিতে থাকল, পরিনতিতে তাদের রুটি তৈরী করার জন্য কিছুই অবশিষ্ট রইল না।’ আহমদ : ২২৮০৮।
কখনো কোন ধরণের পাপকে ছোট ভাবা ঠিক নয়। প্রখ্যাত সাহাবী আনাস রা. বলেন,
‘তোমরা অনেক কাজকে নিজেদের চোখে চুলের চেয়েও ছোট দেখ অথচ তা আমরা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে ধ্বংসাত্নক কাজ মনে করতাম।’ বোখারি : ৬৪৯২।
৩. আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে সর্বদা কান্নাকাটি করে তার কাছে ঈমান ও তাকওয়ার উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার তাওফীক প্রার্থনা করা। তিনি যেন তার সন্তুষ্টির সাথে মৃত্যুর তাওফীক দেন।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রায়ই এ দোয়া করতেন,
يا مقلب القلوب ثبت قلبي على دينك. رواه الترمذي(
‘হে অন্তর পরিবর্তনকারী! আমার অন্তরকে আপনার দ্বীনের উপর অটল রাখেন।’ তিরমিজি : ২১৪০। সহিহ আল-জামে : ৭৯৮৮।
ইউসূফ (আ:) দোয়া করতেন :
تَوَفَّنِي مُسْلِمًا وَأَلْحِقْنِي بِالصَّالِحِينَ ﴿يوسف :
‘তুমি আমাকে মুসলিম হিসাবে মৃত্যু দাও এবং সৎকর্মপরায়নদের অন্তর্ভূক্ত কর।’ সূরা ইউসূফ : ১০১
৪. আল্লাহর যিকিরে মশগুল থাকা
যে ব্যক্তি আল্লাহর স্মরণে লিপ্ত থাকে ও সকল কাজ-কর্ম আল্লাহর স্মরণের সাথে সম্পন্ন হবে তার শেষ পরিণতি শুভ হবে। যেমন রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন :
“যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলল এবং এ অবস্থায় তার মৃত্যু হলো সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। যে ব্যক্তি কোন একটি সদকা করল এবং এ অবস্থায় তার মৃত্যু হলো সেও জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (মুসনাদে আহমাদ: ২২৮১৩), আলবানি এ হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন।
৫। মহান আল্লাহর প্রতি সুধারনা রাখা
যখন কোন ব্যক্তির মৃত্যু উপস্থিত হয় তার জন্য উচিত হবে আল্লাহর কাছে ক্ষমা পাবে এ আশা পোষণ করা। যেমন রাসূলে কারীম সা. বলেছেন,
‘আল্লাহর প্রতি ভাল ধারণা না নিয়ে তোমাদের মধ্যে কেহ যেন মৃত্যু বরণ না করে।’মুসলিম : ২৮৭৭
وَاعْبُدْ رَبَّكَ حَتَّى يَأْتِيَكَ الْيَقِينُ
তোমার মৃত্যু উপস্থিত হওয়া পর্যন্ত তুমি তোমার প্রতিপালকের ইবাদত কর।সূরা হিজর (১৫) : ৯৯
কিছু প্রশ্ন ও উত্তরঃ
(নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কিয়ামতের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো। তখন তিনি তাদের মাঝে সবচেয়ে কম বয়সী বালকের দিকে নজর দিয়ে বললেন: এ যদি বেঁচে থাকে তবে সে দীর্ঘদিন বাঁচার পুর্বেই সর্বশেষ সময় (কিয়ামত) তোমাদের কাছে আসবে।” এর দ্বারা তিনি তাদের মৃত্যু হওয়া এবং কিয়ামতকে বুঝিয়েছেন। কেননা সকল মানুষ অচিরেই মৃত্যুবরণ করবে এবং কিয়ামতের দিন হাযির হবে। কেউ কেউ বলছেন মানুষ মারা যাবার পরপর তার হিসাব গ্রহণ শুরু হয়ে যায়। এ হাদিসটি এই অর্থে সঠিক।)
এই হাদিসের অর্থ কি এই যে, ঐ বালকটি বৃদ্ধ হবার আগেই কিয়ামত শুরু হয়ে যাবে? দয়া করে হাদিসটির সঠিক অর্থ বিষদ ব্যাখ্যা করুন।
উত্তর
আলহামদু লিল্লাহ।.
এই হাদিসটি সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিমের বিভিন্ন রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে। যেমন, সহিহ বুখারী (৬১৪৬) ও সহিহ মুসলিম (২৯৫২)-এ এসেছে:
عن عائشة رضي الله عنها قالت : كان رجال من الأعراب جفاة يأتون النبي صلى الله عليه وسلم فيسألونه متى الساعة فكان ينظر إلى أصغرهم فيقول : إن يعش هذا لا يدركه الهرم حتى تقوم عليكم ساعتكم قال هشام [أحد رواة الحديث]: يعني موتهم.
(আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: কিছু অভদ্র বেদুঈন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এসে তাঁকে কিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে বললো যে, কিয়ামত কবে হবে? তখন তিনি তাদের মাঝে সবচেয়ে কম বয়সীর দিকে নজর দিয়ে বললেন: এ যদি বেঁচে থাকে তবে সে বৃদ্ধ হওয়ার পুর্বেই তোমাদের উপর তোমাদের কিয়ামত সংগঠিত হবে।” হিশাম -হাদিসটির একজন বর্ণনাকারী- বলেন: এর অর্থ হলো তাদের মৃত্যু।
হাদিসটির অর্থ পরিষ্কার। হাদিসের উদ্দেশ্য হল: এই লোকগুলোর কিয়ামত। অর্থাৎ তাদের মৃত্যু খুব নিকটবর্তী। এই বালকটি বৃদ্ধ হওয়ার আগেই তা সংঘটিত হবে। এ হাদিসে الساعة الكبرى (বড় কিয়ামত)-কে উদ্দেশ্য করা হয়নি; যেটা হচ্ছে পুনরুত্থান দিবস।
কাজী ইয়ায (রহঃ) বলেন: এখানে “তোমাদের কিয়ামত” দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে— তাদের মৃত্যু। অর্থাৎ তাদের প্রজন্মের মৃত্যু কিংবা সম্বোধিত ব্যক্তিদের মৃত্যু।[ইমাম নববী রচিত “শারহে মুসলিম” থেকে উদ্ধৃত]
আল-কারমানী (রহঃ) বলেন: এ উত্তরটি হিকমতপূর্ণ শৈলীর অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ তোমরা বড় কিয়ামতের সময় সম্পর্কে প্রশ্ন করা বাদ দাও। কেননা সেটা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। বরং তোমরা তোমাদের প্রজন্মের সমাপ্তিকাল সম্পর্কে জিজ্ঞেস কর। কারণ সেটি জানা তোমাদের জন্য বেশী উপযোগী। যেহেতু সেটা জানাটা তোমাদেরকে নেক আমলের প্রতি উদ্বুদ্ধ করবে, নেক আমলের সময় ফুরিয়ে যাবার আগে। কেননা তোমাদের কেউ জানে না যে, কার আগে কে মারা যাবে।
রাগিব ইসফাহানী (রহঃ) বলেছেন: ساعة শব্দের অর্থ— সময়ের একটি অংশ। দ্রুত হিসাব গ্রহণের উপমাস্বরূপ এ শব্দ দিয়ে কিয়ামতকে বুঝানো হয়। আল্লাহ্ তাআলা বলেন: وَهُوَ أَسرَعُ الحاسِبينَ (এবং তিনি দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী।)[সূরা আন’আম ৬:৬২] কিংবা নিম্নোক্ত আয়াতে আল্লাহ্ যা উল্লেখ করেছেন সে বিবেচনা থেকে কিয়ামত বুঝাতে এ শব্দটি ব্যবহৃত হয়। كَأَنَّهُم يَومَ يَرَونَ ما يوعَدونَ لَم يَلبَثوا إِلّا ساعَةً مِن نَهارٍ (তারা যেদিন তাদের প্রতিশ্রুত শাস্তি দেখতে পাবে সেদিন তাদের মনে হবে, যেন তারা দিনের এক মুহূর্তের বেশী (পৃথিবীতে) অবস্থান করেনি।)[সূরা আহকাফ; ৪৬:৩৫]
الساعة (আস-সা’আতু) শব্দটি তিনটি জিনিস বুঝাতে ব্যবহৃত হয়:
■ الساعة الكبرى (বড় কিয়ামত): তা হলো যেদিন মানুষকে হিসাব গ্রহণের জন্য পুনরুত্থিত করা হবে।
■ الساعة الوسطى (মধ্যবর্তী কিয়ামত): তা হলো কোনো প্রজন্মের সকলের মৃত্যু।
■ الساعة الصغرى (ছোট কিয়ামত): তা হলো কোনো ব্যক্তির মৃত্যু।
কাজেই প্রত্যেক ব্যক্তির কিয়ামত হলো তার মৃত্যু।[ফাতহুল বারী থেকে সংকলিত]
আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।
সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব
মৃত্যু সম্পর্কীয় দোয়া
মৃত্যুই হল আখিরাতের জীবনে প্রবেশ করার একমাত্র উপায়৷ মৃত্যুর মাধ্যমেই পরকালের পথে যাত্রা শুরু৷ পরকালের জীবনের এই শুরুটা যেন সুন্দর হয় সেটা কে না চায়। আমরা যেন খাটি দিলে তওবা করে ঈমানের সাথে সুন্দর ভাবে মৃত্যুবরণ করতে পারি সেই জন্য আল্লাহ তায়ালার কাছে সবসময় চাইতে হবে। সুন্দর কিছু দুয়ার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর কাছে ভাল মৃত্যু চাইতে পারি।
১.
اَللَّهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ حُسْنَ الْخَاتِمَةِ
আল্লহুম্মা ইন্নি আসআলুকা হুসনাল খ-তিমাহ।
হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে উত্তম মৃত্যু চাই। (তিরমিজি ২১৪০)
২.
رَبَّنَآ أَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًا وَتَوَفَّنَا مُسْلِمِينَ
রব্বানা-আফরিগ ‘আলাইনা-সবরওঁ ওয়া তাওয়াফফানা-মুছলিমীন
হে আমাদের রব, আমাদেরকে পরিপূর্ণ ধৈর্য দান করুন এবং মুসলিম হিসাবে আমাদেরকে মৃত্যু দান করুন।’ (সুরা আল-আরাফ- আয়াত ১২৬)
৩.
فَاطِرَ السَّمٰوٰتِ وَالْأَرْضِ أَنتَ وَلِىِّۦ فِى الدُّنْيَا وَالْءَاخِرَةِ ۖ تَوَفَّنِى مُسْلِمًا وَأَلْحِقْنِى بِالصّٰلِحِينَ
ফাতিরিস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ, আনতা ওয়ালিই ফিদ্দুনিয়া ওয়াল আখিরহ, তাওয়াফফানী মুসলিমাওঁ ওয়া আলহিক্বনী বিসসলিহীন।
হে আসমানসমূহ ও যমীনের স্রষ্টা, দুনিয়া ও আখিরাতে আপনিই আমার অভিভাবক, আমাকে মুসলিম অবস্থায় মৃত্যু দিন এবং নেককারদের সাথে আমাকে যুক্ত করুন’। (সুরা ইউসুফ- আয়াত ১০১)
৪.
اللَّهُمَّ ارْزُقْنِي شَهَادَةً فِي سَبِيلِكَ وَاجْعَلْ مَوْتِي فِي بَلَدِ رَسُولِكَ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
আল্লাহুম্মারযুকনি শাহাদাতান ফি সাবিলিক, ওয়ায’আল মাওতি ফি বালাদি রাসুলিকা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
“হে আল্লাহ, আমাকে শাহাদাতের মৃত্যু দিন এবং মৃত্যু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শহরে দিন।”(সহীহ বুখারী: ১৮৯০)
৫.
اللَّهُمَّ أَعِنِّي عَلَى غَمَرَاتِ الْمَوْتِ أَوْ سَكَرَاتِ الْمَوْتِ
আল্লাহুম্মা আ’য়িন্নি ‘আলা গমারা-তিল মাওতি আও সাকারা-তিল মাওত
‘হে আল্লাহ, মৃত্যুকষ্ট ও মৃত্যুযন্ত্রণা হ্রাসে আমাকে সহায়তা করুন।’
[সুনানুত তিরমিজি : ৯৭৮]
৬.
َنَّصُوحَةً قَبْلَ الْمَوْت َاَللَّهُمَّ أَرْزُقْنِي تَوْ
আল্লাহুম্মারযুক্বনি তওবাতান্নাসু-হাহ, ক্ববলাল মাউত।
হে আল্লাহ! আপনি আমাকে মৃত্যুর পূর্বে খাটি দিলে তওবা করার সুযোগ দিন। (ইবনে মাজাহ ৩৮৩৪
৭.
ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺇِﻧِّﻲ ﺃَﻋُﻮﺫُ ﺑِﻚَ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺘَّﺮَﺩِّﻱ، ﻭَﺍﻟْﻬَﺪْﻡِ، ﻭَﺍﻟْﻐَﺮَﻕِ، ﻭَﺍﻟْﺤَﺮِﻳﻖِ ،
আল্লাহুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিনাত-তারাদ্দী ওয়াল হাদমি, ওয়াল গরক্বি ওয়াল হারীক্ব,
(হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি উঁচু স্থান থেকে পড়ে এবং কোনো কিছুর নিচে চাপা পড়ে এবং অগ্নিকান্ড ও পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণ করা থেকে,)
ﻭَﺃَﻋُﻮﺫُ ﺑِﻚَ ﺃَﻥْ ﻳَﺘَﺨَﺒَّﻄَﻨِﻲ ﺍﻟﺸَّﻴْﻄَﺎﻥُ ﻋِﻨْﺪَ ﺍﻟْﻤَﻮْﺕِ ،
ওয়া আঊযুবিকা আইঁয়াতাখাব্বাতানিয়াশ-শায়ত্বানু ইনদাল মাউত
(আর আপনার আশ্রয় গ্রহণ করছি যাতে মৃত্যুকালে শয়তান আমাকে বিপথগামী করতে না পারে)
ﻭَﺃَﻋُﻮﺫُ ﺑِﻚَ ﺃَﻥْ ﺃَﻣُﻮﺕَ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻠِﻚَ ﻣُﺪْﺑِﺮًﺍ، ﻭَﺃَﻋُﻮﺫُ ﺑِﻚَ ﺃَﻥْ ﺃَﻣُﻮﺕَ ﻟَﺪِﻳﻐًﺎ
ওয়া আঊযুবিকা আন আমূতা ফী সাবীলিকা মুদবিরা, ওয়া আউযুবিকা আন আমূতা লাদীগ।
(এবং আপনার আশ্রয় চাচ্ছি যাতে আপনার রাস্তায় জিহাদকালে পৃষ্ঠ প্রদর্শনপূর্বক মারা না যাই। আর আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি, যাতে সর্প দংশনে মারা না যাই।)
( সহিহুল জামি,হা:১২৮২; সনদ সহিহ)
৮.
اللَّهُمَّ اجْعَلْ خَيْرَ عُمْرِي آخِرَهُ ، وَخَيْرَ عَمَلِي خَوَاتِمَهُ ، وَخَيْرَ أَيَّامِي يَوْمَ أَلْقَاكَ
আল্লাহুম্মাজ আল খয়রি উমরি আখিরহ, ওয়া খয়রি আমালি খওয়াতিমাহ, ওয়া খয়র আই ইয়ামি ইয়াওমা আলক্বক।
হে আল্লাহ, আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় যেন আমার মৃত্যুর সময়টি হয়, শ্রেষ্ঠ আমল যেন আমার শেষ আমলটি হয়, শ্রেষ্ঠ দিন যেন তোমার সাথে সাক্ষাৎ এর দিনটি হয়। (Musannaf Ibn Abi Shaybah, Hadith: 30124 & Amali Ibn Bishran, Hadith: 1042)
প্রশ্নঃ শুনেছি, কোন মানুষের মৃত্যুর সময় কষ্ট হলে সূরা ইয়াসীন পড়তে হয়। এতে নাকি মরন আসান হয়ে যায়। এ কথা কি ঠিক?
উত্তর: একটি হাদিসে ঐ শ্রেণীর কথা আছে, কিন্তু সেটি জাল হাদিস। ৪৮৮ (দ্রঃ সিঃ যয়ীফাহ ৫২১৯ নং)
সুতরাং তাতে বিশ্বাস রেখে উক্ত আমল শুদ্ধ নয়। অনুরূপ মরনের পর থেকে কবর পর্যন্ত (নামায ছাড়া অন্য স্থলে) মৃতের জন্য কুরআনখানী করা বিদআত। মরনের পূর্বে মরণোন্মুখ ব্যক্তি কুরআন শুনতে চাইলে সে কথা ভিন্ন। ৪৮৯ (দ্রঃ জানাযা দর্পণ)
সূত্র: দ্বীনী প্রশ্নোত্তর
লেখক: আব্দুল হামিদ ফাইযী আল মাদানী
প্রশ্নঃ ক্বিবলার দিকে মাথা রাখার জরুরত আছে কি?
ক্বিবলার দিকে মাথা রাখার মধ্যে কোন কল্যাণ নেই।
অনেক স্থানে মারা যাওয়ার পরপরই মৃত ব্যক্তির মাথা পশ্চিম দিকে ঘুরিয়ে রাখে। অথচ এর পক্ষে কোন ছহীহ দলীল নেই। যে বর্ণনাটি প্রচলিত আছে তা যঈফ।
عَنْ يَحْيَى بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ أَبِىْ قَتَادَةَ عَنْ أَبِيْهِ أَنَّ النَّبِىَّ حِيْنَ قَدِمَ الْمَدِيْنَةَ سَأَلَ عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ مَعْرُوْرٍ فَقَالُوْا تُوُفِّى وَأَوْصَى بِثُلُثِهِ لَكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ وَأَوْصَى أَنْ يُوَجَّهَ إِلَى الْقِبْلَةِ لَمَّا احْتُضِرَ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ أَصَابَ الْفِطْرَةَ وَقَدْ رَدَدْتُ ثُلُثَهُ عَلَى وَلَدِهِ ثُمَّ ذَهَبَ فَصَلَّى عَلَيْهِ وَقَالَ اللهُمَّ اغْفِرْ لَهُ وَارْحَمْهُ وَأَدْخِلْهُ جَنَّتَكَ وَقَدْ فَعَلْتَ.
ইয়াহইয়া ইবনু আব্দুল্লাহ ইবনু আবী ক্বাতাদা বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন মদ্বীনায় আগমন করলেন, তখন বারা ইবনু মা‘রূর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। তারা জবাবে বলল, সে মারা গেছে এবং আমাদেরকে তিনটি অছিয়ত করে গেছে। তার মধ্যে একটি হল, যখন তার মৃত্যু হবে তখন ক্বিবলার দিকে করবে। রাসূল (ছাঃ) বললেন, সে ঠিকই বলেছে। আমি এই তিনটি বিষয় তার সন্তানদের বলে গেলাম। অতঃপর তিনি তার জানাযা পড়ালেন। হাকেম হা/১৩০৫, ১/৩৫৩; বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/৬৮৪৩।
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি যঈফ। উক্ত বর্ণনার সনদে নাঈম বিন হাম্মাদ নামে একজন যঈফ রাবী আছে। এছাড়া বর্ণনাটি মুরসাল। কারণ ইয়াহইয়া বিন আব্দুল্লাহ ইবনে ক্বাতাদা ছাহাবী নন। তিনি একজন তাবেঈ। ইরওয়াউল গালীল হা/৬৮৯-এর আলোচনা দ্রঃ, ৩/১৫২ পৃঃ।
প্রশ্নঃ মারা যাওয়ার পর চুল, নখ ইত্যাদি কাটার ব্যপারে নির্দেশনা কি?
মারা যাওয়ার পর মৃত ব্যক্তির চুল-নখ কাটা উচিৎ নয়। এটি বহুল প্রচলিত বিদ‘আত। ঐভাবেই দাফন করতে হবে। এর পক্ষে যে বর্ণনাটি রয়েছে তা যঈফ।
عَنْ سَعْدِ بْنِ مَالِكٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ إِنَّهُ غَسَّلَ مَيْتًا فَدَعَا بِالْمُوْسَى فَحَلَقَ عَانَتَهُ.
সা‘দ বিন মালেক (রাঃ) বলেন, তিনি একদা এক মৃত ব্যক্তিকে গোসল দিচ্ছিলেন, তখন তিনি খুর নিয়ে আসালেন এবং নাভীর নীচের লোম কেটে দিলেন। মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক হা/৪২৩৫; মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ ৩/২৪৭।
তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি যঈফ। কারণ আবু ক্বেলাব নামে একজন রাবী আছেন, যার সাথে সা‘দ ইবনু মালেকের সাক্ষাৎ হয়নি। অথচ তার থেকে হাদীছ বর্ণনা করেছেন।তানক্বীহুল কালাম ফিল আহাদীছিয যঈফাহ ফী মাসাইলিল আহকাম, পৃঃ ৪৭৫।
জ্ঞাতব্য : মৃত ব্যক্তিকে গোসলের পূর্বে কুলুখ করানো, খিলাল করা, পেট টিপে ও উঠা বসা করিয়ে ময়লা বের করা এগুলো সব বিদ‘আতী প্রথা। এ সমস্ত কুসংস্কার থেকে সাবধান থাকতে হবে।
তানক্বীহুল কালাম ফিল আহাদীছিয যঈফাহ ফী মাসাইলিল আহকাম, পৃঃ ৪৭৫।
মৃতরা কি শুনতে পারে? সালাম নিতে পারে?
https://www.youtube.com/watch?v=kBl_h4TgZ-8
“সে ব্যক্তির চেয়ে অধিক বিভ্রান্ত আর কে হতে পারে – যে আল্লাহকে বাদ দিয়ে এমনসব সত্তাকে ডাকে যারা কিয়ামত পর্যন্তও তার জবাব দিতে পারে না। তারা বরঞ্চ এসব লোকের ডাকাডাকির কোন খবরই রাখে না।” – (সূরা আল আহকাফঃ ৫)
‘নিশ্চয়ই আপনি মৃতদেরকে শুনাতে পারেন না’ (নামল ৮০, রূম ৫২)।
‘আপনি কবরবাসীদেরকে শুনাতে সক্ষম নন’ (ফাত্বির ২২)।
আমাদের কি করনীয়ঃ
১। মৃত ব্যক্তির চোখ বন্ধ করানোর দো‘আ
«اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِفُلاَنٍ (بِاسْمِهِ) وَارْفَعْ دَرَجَتَهُ فِي الْمَهْدِيِّينَ، وَاخْلُفْهُ فِي عَقِبِهِ فِي الْغَابِرِينَ، وَاغْفِرْ لَنَا وَلَهُ
يَا رَبَّ الْعَالَمِينَ، وَافْسَحْ لَهُ فِي قَبْرِهِ، وَنَوِّرْ لَهُ فِيهِ».
(আল্লা-হুম্মাগফির লি ফুলা-নিন (মৃতের নাম বলবে) ওয়ারফা‘ দারাজাতাহু ফিল মাহদিয়্যীন, ওয়াখলুফহু ফী ‘আক্বিবিহী ফিল গা-বিরীন, ওয়াগফির লানা ওয়ালাহু ইয়া রব্বাল আ-লামীন। ওয়াফসাহ্ লাহু ফী ক্বাবরিহী ওয়া নাউইর লাহু ফী-হি)।
“হে আল্লাহ! আপনি অমুককে (মৃত ব্যক্তির নাম ধরে) ক্ষমা করুন; যারা হেদায়াত লাভ করেছে, তাদের মাঝে তার মর্যাদা উঁচু করে দিন; যারা রয়ে গেছে তাদের মাঝে তার বংশধরদের ক্ষেত্রে আপনি তার প্রতিনিধি হোন। হে সৃষ্টিকুলের রব! আমাদের ও তার গুনাহ মাফ করে দিন। তার জন্য তার কবরকে প্রশস্ত করে দিন এবং তার জন্য তা আলোকময় করে দিন।” মুসলিম ২/৬৩৪, নং ৯২০।
২। মৃত্যুর সংবাদ শুনে “ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন” পাঠ করে নিজেকে স্মরন করিয়ে দেয়া এবং ধৈর্য ধারণ করা।
“যখন তারা বিপদে পতিত হয়,তখন বলে, “ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন” (নিশ্চয় আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তাঁরই সান্নিধ্যে ফিরে যাবো) তারা সে সমস্ত লোক,যাদের প্রতি আল্লাহর অফুরন্ত অনুগ্রহ ও রহমত রয়েছে এবং এসব লোকই হেদায়েত প্রাপ্ত। “সূরা বাকারা: ১৫৬ ও ১৫৭
৩। শোকার্ত পরিবারকে সান্তনা দান করা।
মানুষ মারা গেলে নীরবে চোখের পানি ফেলা অথবা নিচু আওয়াজে ক্রন্দন করা বৈধ। রাসূল সা. এর ছেলে ইবরাহীম যখন মারা যায় তিনি তাকে কোলে নিয়ে ছিলেন। আর তার দুচোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিল। তাঁকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন:
“চক্ষু অশ্রু সজল হয়,অন্তর ব্যথিত হয়। তবে আমরা কেবল সে কথাই বলব যা আমাদের প্রভুকে সন্তুষ্ট করে। আল্লাহর কসম,হে ইবরাহীম,তোমার বিচ্ছেদে আমরা ব্যথিত। “ সহীহ মুসলিম
আপনজনের এই দুনিয়া থেকে চলে যাওয়ায় পরিবারের লোকেরা ধৈর্য্য ধরবেন এবং তাদেরকে সবরের পুরষ্কার ও দু’আগুলো স্মরন করে দেয়া।
“আল্লাহ তায়ালা যখন কোন মুমিন ব্যক্তির কোন প্রিয় মানুষকে দুনিয়া থেকে নিয়ে যান তখন সে যদি সবর করে এবং আল্লাহর নিকট প্রতিদান আশা করে তবে তিনি তার জন্য জান্নাতের আদেশ ছাড়া অন্য কিছুতে সন্তুষ্ট হন না। ” নাসাঈ ও দারেমী। আল্লামা আলবানী রাহ.উক্ত হাদীসটিকে সহীহ লি গাইরিহী বলেছেন।
. কোনো মুসিবতে পতিত ব্যক্তির দো‘আ
«إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ، اللَّهُمَّ أْجُرْنِي فِي مُصِيبَتِي، وَأَخْلِفْ لِي خَيْرَاً مِنْهَا».
(ইন্না লিল্লা-হি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজি‘উন। আল্লা-হুম্মা আজুরনী ফী মুসীবাতী ওয়াখলুফ লী খাইরাম মিনহা)।
“আমরা তো আল্লাহ্রই। আর নিশ্চয় আমরা তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী। হে আল্লাহ! আমাকে আমার বিপদে সওয়াব দিন এবং আমার জন্য তার চেয়েও উত্তম কিছু স্থলাভিষিক্ত করে দিন।”
মুসলিম ২/৬৩২, নং ৯১৮।
৩। শোকার্তদের সান্ত্বনা দেওয়ার দো‘আ
রাসূল সা. তাঁর এক মেয়েকে যেভাবে সান্ত্বনা দিয়েছিলেন, ঠিক সেভাবে সান্ত্বনা দেওয়া উত্তম। রাসূল সা.-এর মেয়ের সন্তান মারা গেলে তিনি তাঁকে আহ্বান জানিয়ে তাঁর নিকট একজন দূত প্রেরণ করেন। এই দূতকে রাসূল সা. বলেছিলেন,
‘তাকে তুমি ধৈর্য্য ধরতে এবং এর বিনিময়ে নেকীর আশা করতে বল। কেননা আল্লাহ যা নিয়ে গেছেন, তা যেমন তাঁর, তেমনি যা তিনি রেখে গেছেন, তাও তাঁর। প্রত্যেকটি বস্তু একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত টিকে থাকবে। বুখারী: হা/১২৮৪; মুসলিম: হা/৯২৩।
তবে ‘আল্লাহ আপনার নেকী বৃদ্ধি করে দিন,‘আল্লাহ আপনাকে উত্তম সান্ত্বনা দান করুন’, আল্লাহ আপনার মৃতকে ক্ষমা করুন’ ইত্যাদি যেসব দোআ মানুষের কাছে প্রসিদ্ধ হয়ে আছে, তা কিছু কিছু আলেম পছন্দ করেছেন। তবে হাদীস মোতাবেক আমল করাই উত্তম।
«إِنَّ للَّهِ مَا أَخَذَ، وَلَهُ مَا أَعْطَى، وَكُلُّ شَيْءٍ عِنْدَهُ بِأَجَلٍ مُسَمَّى… فَلْتَصْبِرْ وَلْتَحْتَسِبْ».
(ইন্না লিল্লা-হি মা আখাযা, ওয়ালাহু মা আ‘তা, ওয়া কুল্লু শাই’ইন ‘ইনদাহু বিআজালিম মুসাম্মা, ফালতাসবির ওয়াল তাহতাসিব) “নিশ্চয় যা নিয়ে গেছেন আল্লাহ্ তা তাঁরই, আর যা কিছু প্রদান করেছেন তাও তাঁর। তাঁর কাছে সব কিছুর একটি নির্দিষ্ট সময় রয়েছে। কাজেই সবর করা এবং সওয়াবের আশা করা উচিত।”
বুখারী, ২/৮০, নং ১২৮৪; মুসলিম, ২/৬৩৬, নং ৯২৩।
আবদুল্লাহ ইবনে জাফর (রা.) থেকে বর্ণিত, যখন জাফর (রা.)-এর মৃত্যুর খবর এলো মহানবী (সা.) বললেন, ‘জাফরের পরিবারের জন্য খাবার তৈরি করো। কেননা তাদের কাছে এমন দুঃসংবাদ এসেছে, যা তাদের ব্যস্ত করে রাখবে।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৩১৩২)
“যে স্ত্রীলোক আল্লাহ ও কিয়ামতের প্রতি ঈমান রাখে, তার পক্ষে স্বামী ছাড়া অন্য কোন মৃত ব্যক্তির জন্য তিন দিনের বেশী শোক পালন করা জায়েয নয়। অবশ্য তার স্বামীর জন্য সে চার মাস দশদিন শোক পালন করবে।” (বুখারী ১২৮২, ৫৩৩৪, মুসলিম ৩৭৯৮-৩৭৯৯)
৪। গোসল, জানাযা
আবু হুরায়রা রা. বর্ণিত, রাসূল সা. বলেন:
“যে ব্যক্তি জানাযার নামাযে উপস্থিত হবে তার জন্য রয়েছে এক কিরাত সমপরিমাণ সওয়াব আর যে দাফনেও উপস্থিত হবে তার জন্য দু কিরাত সমপরিমাণ সওয়াব। জিজ্ঞাসা করা হল, কিরাত কী? তিনি বললেন: দুটি বড় বড় পাহাড় সমপরিমাণ। “ বুখারী ও মুসলিম
হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, যদি কোন মুসলিম মৃত্যু বরণ করে আর তার জানাযায় চল্লিশজন এমন লোক উপস্থিত হয় যারা আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করে না আল্লাহ্ মৃত ব্যক্তির ব্যাপারে তাদের সুপারিশ কবুল করবেন।[মুসলিম শরীফ]
৫। মৃতকে দাফন করার পর দো‘আ
«اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ، اللَّهُمَّ ثَبِّتْهُ».
(আল্লা-হুম্মাগফির লাহু, আল্লা-হুম্মা সাববিতহু)।
“হে আল্লাহ! আপনি তাকে ক্ষমা করুন, হে আল্লাহ্ আপনি তাকে (প্রশ্নোত্তরের সময়) স্থির রাখুন।”
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর কবরের পাশে দাঁড়াতেন এবং বলতেন, ‘তোমাদের ভাইয়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর, আর তার জন্য দৃঢ়তা চাও। কেননা এখনই তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে’। আবু্দাউদ ৩/৩১৫, নং ৩২২৩; হাকেম এবং তিনি একে সহীহ বলেছেন, আর যাহাবী সমর্থন করেছেন, ১/৩৭০।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবীদের যুগে কারো ইন্তেকালের পরে তার জন্য দু‘আ করার উদ্দেশ্যে পরবর্তী সময়ে কখনো কোনোভাবে তাঁরা জমায়েত হন নি। কারো মৃত্যু হলে নিকটাত্মীয়গণের জন্য তিন দিন শোক প্রকাশের বিধান রয়েছে ইসলামে। এই তিন দিনে সমাজের মানুষেরা মৃতের আত্মীয়গণকে সমবেদনা জানাতে ও শোক প্রকাশ করতে তাঁদের বাড়িতে আসতেন। এছাড়া মৃত ব্যক্তির জানাযার নামাযের ও দাফনের পরে আর কখনো তাঁকে কেন্দ্র করে ৩ দিনে, ৭ দিনে, ৪০ দিনে বা মৃত্যুদিনে বা অন্য কোনো সময়ে মাসিক, বাৎসরিক বা কোনোভাবে তাঁর কবরের কাছে, অথবা বাড়িতে বা অনুষ্ঠানকারীর বাড়িতে বা অন্য কোথাও কোনোভাবে তাঁরা কোনো অনুষ্ঠান করেননি বা কোনো জমায়েতও করেন নি।
ইছালে ছাওয়াব কি :
‘ইছালে ছাওয়াব’ ফারসী শব্দ। আরবীতে হবে ‘ঈসালুস সওয়াব’। আভিধানিক অর্থ সওয়াব পৌঁছে দেয়া। অনেকে বলে থাকেন ‘সওয়াব রেসানী।’ এ শব্দটি ফারসি ভাষার হলেও, বাংলায় বহুল ব্যবহৃত বলে সাধারণ সমাজে খুবই পরিচিত। কেহ কেহ বলেন—‘সওয়াব বখশে দেয়া।’ নানা প্রকাশে শব্দগুলোর অর্থ ও মর্ম একই : পুণ্য বা সওয়াব প্রেরণ করা।
পরিভাষায় ইছালে ছাওয়াব হল, মৃত ব্যক্তির কল্যাণের জন্য কোন নেক আমল (সৎকর্ম) বা ইবাদত-বন্দেগী করে তা উক্ত ব্যক্তির জন্য উৎসর্গ করা।
ব্যক্তির মৃত্যুর পরও যে সব আমলের সাওয়াব সে অব্যাহতভাবে পেতে থাকে এবং জীবিতরাও মৃতের জন্য এ সকল কাজের আঞ্জাম দিতে পারে এ সম্পর্কে হাদীসে এসেছে –
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ «إِذَا مَاتَ الْإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلَّا مِنْ ثَلَاثَةٍ إِلَّا مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ»
‘‘আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন যে, মানুষ যখন মারা যায় তখন তিনটি আমল ব্যতীত তার সকল আমলই বন্ধ হয়ে যায়।
১. সাদাকায়ে জারিয়া,
২. মানুষ উপকৃত হয় এমন ‘ইলম এবং
৩. নেক সন্তান, যে তার জন্য দু‘আ করে। মুসলিম, কিতাবুল ওয়াসিয়্যাহ, হাদীস নং ৩০৮৪।
অপর এক হাদীসে এসেছে –
‘‘আবু উমামাহ আল বাহিলী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন যে, চারটি বিষয়ের সাওয়াব প্রাপ্তি মানুষের মৃত্যর পরও অব্যাহত থাকে।
১. আল্লাহর রাস্তায় সীমান্ত প্রহরী,
২. ব্যক্তির এমন (মাসনূন) আমল যা অন্যেরাও অনুসরণ করে,
৩. এমন সাদাকাহ যা সে স্থায়ীভাবে জারী করে দিয়েছে,
৪. এমন নেক সন্তান রেখে যাওয়া যে তার জন্য দু‘আ করে।
আহমদ, বাকী মুসনাদিল আনসার, হাদীস নং ২১২১৭। ৫/২৬০। সহীহ লিগাইরিহী।
‘আবু উসায়দ মালিক ইবন রবী‘আহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে ছিলাম, এমতাবস্থায় বনী সালামার এক ব্যক্তি এসে বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার পিতা-মাতার মৃত্যুর পর এমন কোন সদাচরণ কি বাকী আছে যা আমি তাঁদের সাথে করতে পারি ? তিনি বললেন, হ্যা, তাঁদের জন্য দু‘আ ও ক্ষমা প্রার্থনা করা, তাঁদের মৃত্যুর পর তাঁদের কৃত প্রতিশ্রুতিগুলো পূর্ণ করা, তাঁদের বন্ধু-বান্ধবদের সম্মান করা এবং সে আত্মীয়গুলো রক্ষা করা, যেগুলো শুধু তাঁদের বন্ধনের কারনেই রক্ষা করা হয়ে থাকে। ইবন মাজাহ, কিতাবুল আদব, হাদীস নং ৩৬৫৪।
সংগৃহিতঃ———
প্রশ্নঃ যারা আত্মহত্যা বা করে ইসলামে তাদের শাস্তির ব্যাপারে কী বলা হয়েছে? তারা কি চিরস্থায়ী জাহান্নামী? বিষয়টি একটু বিস্তারিত জানালে উপকৃত হবো ইনশাআল্লাহ।
উত্তরঃ নিম্নে আত্মহত্যা করার বিধান এবং তার শাস্তি সম্পর্কে সামান্য ব্যাখ্যা সহ কুরআন ও হাদিসেরর বক্তব্য তুলে ধরা হল:
আত্মহত্যা সম্পর্কে আমাদের শরীয়ত কী বলে?
◈ পবিত্র কুরআন থেকে :
ইসলামের দৃষ্টিতে আত্মহত্যা কবীরা গুনাহ। শিরকের পর সবচে বড় গুনাহ। সকল ফিকহবিদ এবং চার মাজহাবেই আত্মহত্যা হারাম। কারণ, আল্লাহ তা’আলা মানুষকে মরণশীল হিসেবেই সৃষ্টি করেছেন। ধনী-গরীব, বিদ্বান-মূর্খ, রাজা-প্রজা সবাইকে মরতেই হবে।
◍ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,
كُلُّ نَفۡسٖ ذَآئِقَةُ ٱلۡمَوۡتِۖ ثُمَّ إِلَيۡنَا تُرۡجَعُونَ
“প্রতিটি প্রাণ মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে, তারপর আমার কাছেই তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।”
সূরা আল-আনকাবূত, আয়াত : ৫৭
আর এ মৃত্যু দান করেন একমাত্র তিনিই। তিনি ছাড়া কেউ কাউকে মৃত্যু দিতে পারে না। ◍ আল্লাহ তা’আলা বলেন,
هُوَ يُحۡيِۦ وَيُمِيتُ وَإِلَيۡهِ تُرۡجَعُونَ
“তিনিই জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান আর তাঁর কাছেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন হবে।”
সূরা ইউনুস, আয়াত : ৫৬
উপরোক্ত আয়াতদুটি থেকে বুঝা যায় মানুষের মৃত্যু ঘটানোর কাজটি একমাত্র আল্লাহর। অতএব কেউ যদি কাজটি নিজের হাতে তুলে নেন, নিজের মৃত্যু ঘটান নিজের হাতে তবে তিনি অনধিকার চর্চাই করবেন। আল্লাহ তা পছন্দ করেন না। কেউ অনধিকার চর্চা প্রত্যাশা করে না।
ইসলামে তাই আত্মহত্যাকে মহাপাপ বলে গণ্য করা হয়েছে। এ কাজ থেকে বিরত থাকতে মহান আল্লাহ বিশেষভাবে নির্দেশ দান করেছেন এবং এর পরিণামের কথা ভাববার জন্য কঠোর ও যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির বর্ণনা দিয়ে মহা পবিত্র আল কুরআনে আয়াত অবতীর্ণ করেছেন।
◍ আল্লাহ রাববুল আলামীন বলেন,
وَلَا تَقۡتُلُوٓاْ أَنفُسَكُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ بِكُمۡ رَحِيمٗا – وَمَن يَفۡعَلۡ ذَٰلِكَ عُدۡوَٰنٗا وَظُلۡمٗا فَسَوۡفَ نُصۡلِيهِ نَارٗاۚ وَكَانَ ذَٰلِكَ عَلَى ٱللَّهِ يَسِيرًا
“আর তোমরা নিজেদের হত্যা করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়ালু। এবং যে কেউ জুলুম করে, অন্যায়ভাবে তা (আত্মহত্যা) করবে, অবশ্যই আমি তাকে অগ্নিদগ্ধ করবো, আল্লাহর পক্ষে তা সহজসাধ্য।”
সূরা আন-নিসা, আয়াত : ২৯-৩০সূরা আন-নিসা, আয়াত : ২৯-৩০
◍ আরেক আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَلَا تُلۡقُواْ بِأَيۡدِيكُمۡ إِلَى ٱلتَّهۡلُكَةِ
‘আর তোমরা নিজ হাতে নিজদেরকে ধ্বংসে নিক্ষেপ করো না।’
সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ১৯৫
◈ হাদীসে নাববী থেকে:
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও তাই কাজটি থেকে নানাভাবে বারণ করেছেন। এ থেকে মানুষকে সতর্ক করেছেন। যেমন, ছাবিত বিন যিহাক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
« مَنْ قَتَلَ نَفْسَهُ بِشَىْءٍ فِى الدُّنْيَا عُذِّبَ بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ »
“যে ব্যক্তি দুনিয়াতে কোনো বস্তু দিয়ে নিজেকে হত্যা করবে, কিয়ামতের দিন তাকে সে বস্তু দিয়েই শাস্তি প্রদান করা হবে।”
বুখারী : ৫৭০০; মুসলিম : ১১০
◍ অপর এক হাদীছে রয়েছে, আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« مَنْ تَرَدَّى مِنْ جَبَلٍ فَقَتَلَ نَفْسَهُ ، فَهْوَ فِى نَارِ جَهَنَّمَ ، يَتَرَدَّى فِيهِ خَالِدًا مُخَلَّدًا فِيهَا أَبَدًا ، وَمَنْ تَحَسَّى سَمًّا فَقَتَلَ نَفْسَهُ ، فَسَمُّهُ فِى يَدِهِ ، يَتَحَسَّاهُ فِى نَارِ جَهَنَّمَ خَالِدًا مُخَلَّدًا فِيهَا أَبَدًا ، وَمَنْ قَتَلَ نَفْسَهُ بِحَدِيدَةٍ ، فَحَدِيدَتُهُ فِى يَدِهِ ، يَجَأُ بِهَا فِى بَطْنِهِ فِى نَارِ جَهَنَّمَ خَالِدًا مُخَلَّدًا فِيهَا أَبَدًا ».
“যে ব্যক্তি নিজেকে পাহাড়ের ওপর থেকে নিক্ষেপ করে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামে যাবে। সেখানে সর্বদা সে ওইভাবে নিজেকে নিক্ষেপ করতে থাকবে অনন্তকাল ধরে। যে ব্যক্তি বিষপান করে আত্মহত্যা করবে, সে তার বিষ তার হাতে থাকবে। জাহান্নামে সর্বদা সে ওইভাবে নিজেকে বিষ খাইয়ে মারতে থাকবে অনন্তকাল ধরে। যে কোনো ধারালো অস্ত্র দ্বারা আত্মহত্যা করেছে তার কাছে জাহান্নামে সে ধারালো অস্ত্র থাকবে যার দ্বারা সে সর্বদা নিজের পেটকে ফুঁড়তে থাকবে।”
সহীহ বুখারী : ৫৪৪২; মুসলিম : ১০৯
◍ আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« مَنْ خَنَقَ نَفْسَهُ فِي الدُّنْيَا فَقَتَلَهَا خَنَقَ نَفْسَهُ فِي النَّارِ ، وَمَنْ طَعَنَ نَفْسَهُ طَعَنَهَا فِي النَّارِ ، وَمَنِ اقْتَحَمَ ، فَقَتَلَ نَفْسَهُ اقْتَحَمَ فِي النَّارِ».
“যে ব্যক্তি ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে সে দোজখে অনুরূপভাবে নিজ হাতে ফাঁসির শাস্তি ভোগ করতে থাকবে। আর যে বর্শার আঘাত দ্বারা আত্মহত্যা করে- দোজখেও সে সেভাবে নিজেকে শাস্তি দেবে। আর যে নিজেকে নিক্ষেপ করে আত্মহত্যা করবে, কিয়ামতের দিন সে নিজেকে উপর থেকে নিক্ষেপ করে হত্যা করবে।”
সহীহ ইবন হিব্বান : ৫৯৮৭; তাবরানী : ৬২১
◍ জুনদুব ইবন আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
« كَانَ فِيمَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ رَجُلٌ بِهِ جُرْحٌ فَجَزِعَ فَأَخَذَ سِكِّينًا فَحَزَّ بِهَا يَدَهُ فَمَا رَقَأَ الدَّمُ حَتَّى مَاتَ قَالَ اللَّهُ تَعَالَى بَادَرَنِي عَبْدِي بِنَفْسِهِ حَرَّمْتُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ ».
‘তোমাদের পূর্বেকার এক লোক আহত হয়ে সে ব্যথা সহ্য করতে পারেনি। তাই সে একখানা চাকু দিয়ে নিজের হাত নিজেই কেটে ফেলে। এর পর রক্তক্ষরণে সে মারা যায়। আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা নিজেকে হত্যা করার ব্যাপারে বড় তাড়াহুড়া করে ফেলেছে। তাই আমি তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিলাম।’
বুখারী : ৩২৭৬; মুসলিম : ১১৩
আত্মহত্যা তো দূরে থাক, মৃত্যু কামনাও বৈধ নয়:
আত্মহত্যা তো দূরের কথা আমাদের পবিত্র এই শরীয়ত কোনো বিপদে পড়ে বা জীবন যন্ত্রনায় কাতর হয়ে নিজের মৃত্যু কামনা করতে পর্যন্ত বারণ করেছে। যেমন আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« لاَ يَتَمَنَّيَنَّ أَحَدُكُمُ الْمَوْتَ لِضُرٍّ نَزَلَ بِهِ فَإِنْ كَانَ لاَ بُدَّ مُتَمَنِّيًا فَلْيَقُلِ اللَّهُمَّ أَحْيِنِى مَا كَانَتِ الْحَيَاةُ خَيْرًا لِى وَتَوَفَّنِى إِذَا كَانَتِ الْوَفَاةُ خَيْرًا لِى ».
‘তোমাদের কেউ যেন কোনো বিপদে পতিত হয়ে মৃত্যু কামনা না করে। মৃত্যু যদি তাকে প্রত্যাশা করতেই হয় তবে সে যেন বলে, ‘হে আল্লাহ আমাকে সে অবধি জীবিত রাখুন, যতক্ষণ আমার জীবনটা হয় আমার জন্য কল্যাণকর। আর আমাকে তখনই মৃত্যু দিন যখন মৃত্যুই হয় আমার জন্য শ্রেয়।’
বুখারী : ৫৬৭১; মুসলিম : ৬৯৯০
আত্মহত্যাকারী কি চিরস্থায়ী জাহান্নামী?
কেউ যখন নিজেকে হত্যা করে তখন সে নিজেকে মূলত আল্লাহর গজব ও ক্রোধের শিকারে পরিণত করে। সে আল্লাহর ইচ্ছাধীন। কারণ, তা কোনো শিরকী কাজ নয়। একমাত্র শিরকই এমন গুনাহ আল্লাহ যা ক্ষমা না করার ঘোষণা দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَغۡفِرُ أَن يُشۡرَكَ بِهِۦ وَيَغۡفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَآءُۚ وَمَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَقَدۡ ضَلَّ ضَلَٰلَۢا بَعِيدًا
‘নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমা করেন না তাঁর সাথে শরীক করাকে এবং এ ছাড়া যাকে চান ক্ষমা করেন। আর যে আল্লাহর সাথে শরীক করে সে তো ঘোর পথভ্রষ্টতায় পথভ্রষ্ট হল।’
সূরা আন-নিসা, আয়াত : ৪৮
শিরক ছাড়া যা আছে তা আল্লাহর ইচ্ছাধীন। আর আত্মহত্যা শিরক নয়। তেমনি যিনা, চুরি, মদ্য পান- সবকিছুই গুনাহ বটে। তবে তা শিরক নয়। এসবে লিপ্ত ব্যক্তি আল্লাহর ইচ্ছাধীন থাকবে।
কেউ যখন এসব গুনাহে লিপ্ত হয়ে মারা যাবে আল্লাহ চাইলে তাকে ক্ষমা করবেন- তার নেককাজগুলোর বদৌলতে কিংবা ইসলামে বিশ্বাসের ভিত্তিতে। আর তিনি চাইলে তাকে তার অপরাধ অনুপাতে তাকে শাস্তি দেবেন। অতপর সে গুনাহ থেকে পবিত্র হবার পর তাকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে।
আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের বিশ্বাস মতে সে চির জাহান্নামী হবে না। কোনো গুনাহগারই অনন্তকাল জাহান্নামে থাকবে না। খুনী, মদ্যপ কিংবা অন্য কোনো অপরাধীও নয়।
কিন্তু ওপরে যেমন বলা হলো, আল্লাহ চাইলে তাকে শাস্তি দেবেন, তার অপরাধ অনুযায়ী তাকে আজাব দেবেন তারপর তাকে জাহান্নাম থেকে বের করবেন। একমাত্র কাফেররাই শুধু জাহান্নামে অনন্তকাল থাকবে। আল্লাহতে অবিশ্বাসী মুশরিক কাফেররাই শুধু জাহান্নামে চিরকাল থাকবে।
যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনীত দীনকে যারা অস্বীকার করেছে।
তাহলে কারা মনে করে যে চিরকাল জাহান্নমী হতে হবে?
তবে শুধু খারেজী ও মুতাজিলা সম্প্রদায় মনে করে আত্মহত্যাকারী চিরকাল জাহান্নামে থাকবে। তাদের মতে গুনাহগার ব্যক্তিরাও চির জাহান্নামী। এ দু’টি দলই ভ্রান্ত ফেরকা। এটি তাদের ভ্রান্ত মত।
কেননা আহলে সুন্নত ওয়াল জামাত তথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীবৃন্দ এবং কিয়ামত পর্যন্ত আগত তাঁর আদর্শ অনুসারীদের মত হলো, গুনাহগার ব্যক্তিরা চির জাহান্নামী হবে না। কারণ গুনাহগার মাত্রেই সে নিজেকে অপরাধী ভাবে।
বরং শয়তানের প্ররোচনায় বা প্রবৃত্তির তাড়নায় সে গুনাহে জড়িয়ে পড়ে। তাই সে অনন্তকাল জাহান্নামী হবে না। বরং আল্লাহ চাইলে তাকে ক্ষমা করে দেবেন এবং তাকে তার ঈমানের বদৌলতে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।
অন্যথায় তাকে তার সাজা ভোগ করার পর জাহান্নাম থেকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আর এ ব্যাপারে হাদীসের কোনো অভাব নেই যে মানুষ জাহান্নামে প্রবেশ করবে অতপর সাজা খেটে সেখান থেকে জান্নাতে দাখিল হবে।
অবশ্য কেউ যদি নিজের গুনাহকে বৈধ মনে করে বা আল্লাহর বিধানের সঙ্গে কুফরীবশত গুনাহ করে বা আত্মহত্যা করে তবে সবার মতে সে জাহান্নামী। জাহান্নামই তার স্থায়ী ঠিকানা। আল্লাহ আমাদের হেফাযত করুন।
উৎস: আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয় বরং একটি সমস্যা
লেখকঃ আলী হাসান তৈয়ব | সম্পাদনা : ড. মুহাম্মাদ মানজুরে ইলাহী
উত্তর প্রদানেঃ
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
(লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।