أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ
Power Point Presentation
পবিত্র এই মুহররম মাস মনে করিয়ে দেয় সত্যের পথে টিকে থাকার জন্য যারাই চেষ্টা চালিয়েছে মহান আল্লাহ তাদের সাহায্য করেছেন, রক্ষা করেছেন ও সফলতা দান করেছেন। আর সত্যিকার ঈমানদারেরা তখন মহান রবের কৃতজ্ঞতায় আরো বেশী ইবাদাতে মশগুল হয়ে যেতেন। মহান আল্লাহ বলেন,
আমার আয়াতের প্রতি তো তারাই ঈমান আনে যাদেরকে এ আয়াত শুনিয়ে যখন উপদেশ দেয়া হয় তখন তারা সিজদায় লুটিয়ে পড়ে এবং নিজেদের রবের প্রশংসা সহকারে তার মহিমা ঘোষণা করে এবং অহংকার করে না।সূরা আস সাজদাহ:১৫
তোমাদের আগে অনেক যুগ অতিক্রান্ত হয়েছে। পৃথিবীতে ঘোরাফেরা করে দেখে নাও যারা (আল্লাহর বিধান ও হিদায়াতকে) মিথ্যা বলেছে তাদের পরিণাম কি হয়েছে।এটি মানব জাতির জন্য একটি সুস্পষ্ট সতর্কবাণী এবং যারা আল্লাহকে ভয় করে তাদের জন্য পথনির্দেশ ও উপদেশ। মনমরা হয়ো না, দুঃখ করো না, তোমরাই বিজয়ী হবে, যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাকো।সূরা আলে ইমরান: ১৩৭-১৩৯
একনজরে মুহাররম মাসের ঘটনাবলী
১। এ মাসকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সম্মানিত ঘোষনা করেছেন, আল্লাহর মাস বলেছেন এবং এই মাসের সাওম আল্লাহর কাছে প্রিয়।
২। ইসলামের ইতিহাসের ক্যালেন্ডার অর্থাৎ বছরের প্রথম মাস হিসেবে গননা শুরু। যা আমাদের রাসূল স. সহ মুমিন মুহাজিরদের ত্যাগ তিতিক্ষার কথা স্মরন করিয়ে দেয়। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য,প্রিয় রাসূল স.এর ভালোবাসায় উজ্জীবিত হয়ে নিজের প্রিয়জন,প্রিয় বাসস্থান,আত্মীয়-স্বজন ও জন্মভূমিকে ত্যাগ করে ঈমান রক্ষার্থে মুসলিমরা ও মহান আল্লাহর নির্দেশে প্রিয় নবী স. মদিনায় চলে এসেছিলেন যাকে হিজরত বলা হয়।
৩। অত্মাচারী শাসক ফেরাউনের কবল থেকে প্রিয় নবী মুসা আ. ও বনী ইসরাইল জাতীকে রক্ষা করেছিলেন। মুসা আ. এই শাসক ফেরাউওনকে আল্লাহর আনুগত্যের দাওয়াত দিয়েছিলেন কিন্তু শাসক গোষ্ঠী সেই দাওয়াত গ্রহন না করে মুসা আ. ও তাঁর অনুসারীদের পাকড়াও করেছিল। মহান রবের অশেষ মেহেরবানীতে ফেরাউনের কবল থেকে মুসা আ. উদ্ধার পেয়েছিলেন। তাই মহান আল্লাহর শুকরিয়া হিসেবে মুসা আ. সাওম রেখেছিলেন।
৪। এইদিনেই হযরত ইমাম হুসাইন রা. ইসলামের ইতিহাসে ইসলামী রাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থা,তার প্রকৃতি ও উদ্দেশ্যের পরিবর্তন যেন না আসে সেই, খিলাফাতের ধারা বজায় যেন থাকে,সেই জন্য সত্যের ধারক হয়ে কারবালায় শহীদ হয়েছিলেন।
হিজরী সন গননা কেনো ও কখন থেকেঃ———
যে মসজিদে প্রথম দিন থেকে তাকওয়ার ভিত্তেতে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল সেই মসজিদটি দাঁড়ানোরই (ইবাদতের জন্য) তোমার পক্ষে অধিকতর সমীচীন৷ সেখানে এমন লোক আছে যারা পাক -পবিত্র থাকা পছন্দ করে এবং আল্লাহ পবিত্রতা অর্জনকারীদেরকে ভালবাসেন৷ সূরা তওবা, আয়াত : ১০৮)
হিজরতের বছর গননা সেইদিন থেকেই।
আল্লামা ইবনে হাজর আসকালানি (রহ.) লিখেছে, ‘সাহাবায়ে কেরাম বর্ষ গণনার ক্ষেত্রে হিজরতকে প্রাধান্য দিয়েছেন সুরা তাওবার ১০৮ নম্বর আয়াতের পরিপ্রেক্ষিতে। সেখানে প্রথমদিন থেকে তাকওয়ার ওপর প্রতিষ্ঠিত মসজিদে নামাজ আদায় করতে বলা হয়েছে। এই ‘প্রথমদিন’ ব্যাপক নয়। এটি রহস্যাবৃত। এটি সেই দিন, যেদিন ইসলামের বিশ^জয়ের সূচনা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) নিরাপদে, নির্ভয়ে নিজ প্রভুর ইবাদত করেছেন। মসজিদে কুবার ভিত্তি স্থাপন করেছেন। ফলে সেদিন থেকে সন গণনার বিষয়ে সাহাবায়ে কেরাম মতৈক্যে পৌঁছেছেন। এ ছাড়া মহানবী (সা.)-এর জন্ম, নবুয়ত, হিজরত ও ওফাত এ চারটির মাধ্যমে বর্ষ গণনা করা যেত। কিন্তু জন্ম ও নবুয়তের সন নিয়ে ব্যাপক মতপার্থক্য আছে, আর মৃত্যু শোকের স্মারক। তাই অগত্যা হিজরতের মাধ্যমেই বর্ষ গণনা শুরু করা হয়। (ফতহুল বারি : ৭/২৬৮)
হিজরত’ ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। হিজরত শব্দটির একটি সাধারণ অর্থ এবং একটি পারিভাষিক অর্থ রয়েছে। হিজরতের সাধারণ অর্থ আল্লাহর সন’ষ্টির উদ্দেশ্যে কোনো বস্তু, স্থান বা ব্যক্তিকে পরিত্যাগ করা, তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া। এই অর্থটি ব্যাপক। এই ব্যাপক অর্থেই নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (তরজমা) ‘প্রকৃত মুহাজির সেই ব্যক্তি যে আল্লাহর বারণকৃত বস্তুকে পরিত্যাগ করে। (সহীহ বুখারী, হাদীস : ১০)
অপর একটি হাদীসে এসেছে, নবীজীকে প্রশ্ন করা হল, কোন হিজরত উত্তম? তখন তিনি বললেন, তোমার রবের অপছন্দীয় বস্তু ছেড়ে দেয়া। মুসনাদে আহমদ ২/১৬০ হাদীস : ৬৪৮৭
মাস হিসেবে মহররম কেনো ১মঃ-
মহানবী (সা.)-এর হিজরতের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে আরবি রবিউল আউয়াল মাসে। তাহলে হিজরি ক্যালেন্ডারে প্রথম মাস হিসেবে মহররমকে নির্বাচন করার কারণ কী? এ সম্পর্কে আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) লিখেছেন, সাহাবায়ে কেরাম হিজরতের দিন থেকেই বর্ষ গণনা শুরু করলেন। আর মহররমকে প্রথম মাস হিসেবে স্বীকৃতি দিলেন। কেননা তৎকালীন আরবে মহররমই প্রথম মাস হিসেবে পরিচিত ছিল। জনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যাতে বিঘœ না হয়, সে জন্য এটিকে পরিবর্তন করা হয়নি। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া : ৪/৫১৩)।
আল্লামা ইবনে হাজর (রহ.) লিখেছেন, রবিউল আউয়ালকে বাদ দিয়ে মহররম থেকে সন গণনা শুরু করা হয়েছে। কেননা হিজরতের সূচনা ও সিদ্ধান্ত হয়েছে মহররম থেকে। আর আকাবার দ্বিতীয় শপথও হয়েছে মধ্য জিলহজে। আর আকাবার দ্বিতীয় শপথ হিজরতকে ত্বরান্বিত করে। আর এ ভাঙা মাসের পর নতুন চাঁদ উদিত হয়েছে মহররম মাসে। তাই একে দিয়েই বছর গণনা শুরু করা হয়েছে। আমার জানা মতে, এটিই শক্তিশালী অভিমত। (ফতহুল বারি : ৭/২৬৮)।
মহররম মাসের গুরুত্বঃ
আশহুরে হুরুম তথা হারামকৃত মাস চতুষ্টয়ের অন্যতম। আশহুরে হুরুম সম্বদ্ধে আল্লাহ তাআলা বলেন,
নিশ্চয় মাসসমূহের গণনা আল্লাহর কাছে বার মাস আল্লাহর কিতাবে, (সেদিন থেকে) যেদিন তিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন। এর মধ্য থেকে চারটি সম্মানিত, এটাই প্রতিষ্ঠিত দীন। সুতরাং তোমরা এ মাসসমূহে নিজেদের উপর কোন জুলুম করো না।সূরা তাওবা: ৩৬
সাহাবি আবু বাকরাহ রা. নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, নবীজী স. বলেন,
বছর হলো বারোটি মাসের সমষ্টি, তার মধ্যে চারটি অতি সম্মানিত। তিনটি পর পর লাগোয়া যিলকদ, যিলহজ্জ ও মুহররম আর (চতুর্থটি হলো) জুমাদাস সানি ও শাবানের মধ্যবর্তী রজব। সহিহ আল বুখারি: ২৯৫৮
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, রামাদানের পর সর্বোত্তম সাওম হচ্ছে আল্লাহর মাস মুহররম (মাসের সাওম)। সহিহ মুসলিম:১৯৮২
মহররম মাসে করনীয়ঃ—
কৃতজ্ঞতা পেশঃ
এ মুক্তির পর তিনি সাওম পালন করে আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায় করার প্রয়াস পেয়েছেন। কেননা নেক আমল হল আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায়ের বড় মাধ্যম।
যেমন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেনঃ
“হে দাউদ পরিবার! শুকরিয়া হিসেবে তোমরা নেক আমল করতে থাক। আমার বান্দাদের মধ্যে অল্পই শুকরিয়া আদায়কারী রয়েছে।”সূরা সাবা: ১৩
শুকরিয়া আদায়ের অর্থ হল যে অনুগ্রহ করেছে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা।
- পাঁচটি বিষয়ের উপর আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া আদায়ের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত।
সে গুলো হলঃ
এক. নেয়ামত দাতা আল্লাহর প্রতি বিনয়াবনত হওয়া।
দুই. নেয়ামত দাতা আল্লাহকে মহব্বত করা।
তিন. নেয়ামতকে মনে প্রাণে গ্রহণ ও স্বীকার করা।
চার. মুখ দ্বারা নেয়ামত দাতা আল্লাহর প্রশংসা করা।
পাঁচ. নেয়ামতকে নেয়ামত দানকারী আল্লাহর অসন্তুষ্টিতে ব্যবহার না করা বরং তাঁর সন্তুষ্টির পথে তা ব্যয় করা।(মাদারেজুস সালেকীন)
সাওমঃ
আবু হুরাইরাহ রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলে: রসূলুল্লাহ স. বলেছেনঃ রামাদানের পর সর্বোত্তম সাওম হল আল্লাহর প্রিয় মুহাররম মাসের সাওম। এবং ফরয সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত হল রাতের সালাত।সহিহ মুসলিম
আরবী আশারা অর্থ দশ।
আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় আগমন করে দেখতে পেলেন ইহুদিরা আশুরার দিন সাওম পালন করছে। নবীজী বললেন, এটি কি? তারা বলল, এটি একটি ভাল দিন। এ দিনে আল্লাহ তাআলা বনি ইসরাইলকে তাদের দুশমনের কবল থেকে বাঁচিয়েছেন। তাই মুসা আ. সাওম পালন করেছেন। রাসূলুল্লাহ স.বললেন, মুসাকে অনুসরণের ব্যাপারে আমি তোমাদের চেয়ে অধিক হকদার। অত:পর তিনি সাওম রেখেছেন এবং সাওম রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।সহিহ আল বুখারি:১৮৬৫
আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন জাহেলী যুগে কুরাইশরা আশুরার সাওম পালন করত এবং রসূলুল্লাহ স. ও সাওম পালন করতেন। যখন তিনি মদীনায় হিজরত করলেন তখন তিনি এ সাওম পালন করলেন ও অন্যদের পালন করতে আদেশ দিলেন। যখন রামাদান মাসের সাওম ফরয হল তখন তিনি আশুরার সাওম সম্পর্কে বললেনঃ যার ইচ্ছা আশুরার সাওম পালন করবে, আর যার ইচ্ছা ছেড়ে দিবে। বুখারী ও মুসলিম
এই আশুরার সাওমের ফযিলতঃ
আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
আমি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সাওম রাখার জন্য এত অধিক আগ্রহী হতে দেখিনি যত দেখেছি এই আশুরার দিন এবং এই মাস অর্থাৎ রামাদান মাসের সাওমের প্রতি।সহিহ আল বুখারি:১৮৬৭
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
আশুরার দিনের সাওমের ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে আশা করি, তিনি পূর্ববর্তী এক বছরের পাপ ক্ষমা করে দেবেন।সহিহ মুসলিম:১৯৭৬
আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. বর্ণনা করেন,
অর্থাৎ, যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশুরার সাওম রাখলেন এবং (অন্যদেরকে) সাওম রাখার নির্দেশ দিলেন। লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! এটিতো এমন দিন, যাকে ইহুদি ও খ্রিষ্টানরা বড় জ্ঞান করে, সম্মান জানায়। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আগামী বছর এদিন আসলে, আমরা নবম দিনও সাওম রাখব ইনশাল্লাহ। বর্ণনাকারী বলছেন, আগামী বছর আসার পূর্বেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাত হয়ে গিয়েছে।সহিহ মুসলিম:১৯১৪৬
আরো করনীয়ঃ
১। নিজের ও অন্যের উপর যুলুম করা থেকে বিরত থাকা
২। ফরয ওয়াজীব ইহসানের সাথে করা
৩। তাওবা ইস্তিগফারে অন্তরকে জাগ্রত রাখা
৪। রবের স্মরনে যিকরে অভ্যস্থ হওয়া
৫। দান সাদাকা করা
৬। অন্যের কল্যানে সদা প্রস্তুত থাকা
৭। মিথ্যার কাছে মাথা নত না করা, সত্যের উপর অটল থাকা।
৮। হক কথা প্রচার করা ও অন্যায় থেকে বিরত রাখার প্রচেষ্টায় থাকা।
আল্লাহর পথে জিহাদ করো যেমন জিহাদ করলে তার হক আদায় হয়। তিনি নিজের কাজের জন্য তোমাদেরকে বাছাই করে নিয়েছেন এবং দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের ওপর কোন সংকীর্ণতা আরোপ করেননি। তোমাদের পিতা ইবরাহীমের মিল্লাতের ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাও। আল্লাহ আগেও তোমাদের নাম রেখেছিলেন “মুসলিম” এবং এর (কুরআন) মধ্যেও (তোমাদের নাম এটিই) যাতে রসূল তোমাদের ওপর সাক্ষী হন এবং তোমরা সাক্ষী হও লোকদের ওপর। কাজেই নামায কায়েম করো, যাকাত দাও এবং আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত হয়ে যাও। তিনি তোমাদের অভিভাবক, বড়ই ভালো অভিভাবক তিনি, বড়ই ভালো সাহায্যকারী তিনি। আল হাজ্জঃ ৭৮
আমার উম্মতের মধ্যে জাহেলী যুগের চারটি স্বভাব বিদ্যমান রয়েছে। তারা তা ছাড়তে পারবে না।
(১) বংশ মর্যাদা নিয়ে গর্ব করা,
(২) মানুষের বংশের নাম তুলে দুর্নাম করা,
(৩) তারকারাজির মাধ্যমে বৃষ্টি প্রার্থনা করা এবং
(৪) মৃত ব্যক্তির উপর বিলাপ করা। তিনি আরও বলেন: মানুষের মাঝে দুটি জিনিষ রয়েছে, যা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। মানুষের বংশের বদনাম করা এবং মৃত ব্যক্তির উপর বিলাপ করা।সহিহ মুসলিম
তিনি আরও বলেন:
মৃত ব্যক্তির উপর বিলাপ করা জাহেলিয়াতের অন্তর্ভুক্ত। বিলাপকারী যদি তওবা না করে মারা যায়, তাকে কিয়ামতের দিন আল্লাহ আলকাতরার প্রলেপ লাগানো জামা পড়াবেন এবং অগ্নি শিখা দ্বারা নির্মিত কোর্তা পরাবেন।ইবনে মাজাহ
প্রশ্ন ৩৫ –> জিহাদ কি ? বড় জিহাদ কোনটি?
উত্তর :
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর। দরুদ ও সালাম আল্লাহর রাসূল (সা) এর উপর। পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
জিহাদের সংজ্ঞা:
জিহাদ আরবী শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হল-
কোন বিষয়ের চুড়ান্ত সাফল্যে পৌছানোর লক্ষ্যে কথা ও কাজ দ্বারা প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালানো।
কষ্ট স্বীকার করা।
শত্রুকে প্রতিরোধ করতে সাধ্যমত চেষ্টা করা। (তাজুল উরুস,কামুসুল ফিকহী)
জিহাদের পারিভাষিক অর্থঃ
বুখারী শরীফের বিখ্যাত ব্যাখ্যাতা আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেন: কাফেরদের সাথে সংগ্রাম করতে গিয়ে শক্তি ক্ষয় করা। এর (জিহাদ শব্দ) দ্বারা নিজের প্রবৃত্তি, শয়তান এবং দুরাচার সকলের সাথে সংগ্রাম করাকেও বুঝায়।
এখানে প্রবৃত্তির সাথে জিহাদ বলতে দ্বীন শিক্ষাগ্রহণ করা, শিক্ষাদান করা ও নিজের জীবনে তা বাস্তবায়ন করা, শয়তানের সাথে সংগ্রাম বলতে তার আনীত সংশয় ও অযাচিত লোভ লালসা প্রতিরোধ করাকে বুঝায়। আর কাফেরের সাথে জিহাদ হাত (শক্তি প্রয়োগ), সম্পদ, কথা কিংবা অন্তর যে কোনটার মাধ্যমেই হতে পারে। এছাড়া দুরাচারীদের সাথে জিহাদ হাত দ্বারা(শক্তি প্রয়োগ) অতঃপর জবান তারপর অন্তর দ্বারা হতে পারে। (ফাতহুল বারী: জিহাদ ও সিয়ার অধ্যায়)
ইমাম জুরজানী (রহঃ) বলেন: জিহাদ হল-সত্য দ্বীন তথা ইসলামের দিকে মানুষকে আহবান করা। (আত-তা’রীফাত)
আল্লামা কাসানী (রহঃ) বলেন: আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের অর্থ হল- প্রচেষ্টা ও শক্তি ব্যয় করা কিংবা কোন কাজে সফল হওয়ার জন্য প্রাণান্তকর চেষ্টা করা। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় মুখের কথা, সম্পদ ও জীবন ইত্যাদি ক্ষয় করে সফলতার মানদন্ডে পৌছার জন্য প্রাণান্তকর প্রচেষ্টার নামই জিহাদ। (আল বাদায়েউস সানায়ে)
জিহাদের স্তর:
জিহাদের বেশ কিছু স্তর রয়েছে। জিহাদ বললেই অস্ত্র ব্যবহার করা বুঝায় না। জিহাদের স্তর সম্বন্ধে ইমাম ইবনুল কায়্যেম (রহঃ) বলেছেন:
>> প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে জিহাদের স্তর চারটি। সেগুলো হল-
সত্য দ্বীন (ইসলাম) শিক্ষাগ্রহণ করা। কেননা, সত্য দ্বীন তথা ইসলাম ছাড়া অন্যত্র কোন কল্যাণ নেই।
দ্বীন শিক্ষাগ্রহণের পর তা নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করা। কেননা, বাস্তবায়ন ছাড়া শুধুমাত্র শিক্ষাগ্রহণ করলে তাতে ক্ষতি না হলেও কোন লাভ হয় না।
যা শিক্ষাগ্রহণ করেছে তা অপরকে শিক্ষাদান করা। কেননা, দ্বীনের কোন কিছুকে গোপণ করলে আল্লাহ তায়ালার আযাব থেকে সে নিজেকে বাঁচাতে পারবেনা।
ইসলামের বিধানকে তুলে ধরতে গিয়ে কোন বিপদ আসলে ধৈর্যধারণ করা ও কষ্ট স্বীকার করা।
>> শয়তানের বিরুদ্ধে জিহাদের রয়েছে দু’টি স্তর:
সংশয় দূর করা।
কু-প্রবৃত্তিকে প্রতিরোধ করা।
>> কাফের ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদের স্তর চারটি।
অন্তর দিয়ে কাজটাকে ঘৃণা করা,
মুখের কথা দ্বারা তা প্রতিরোধ করা,
এ পথে সম্পদ ব্যয় করা ও
নিজের জীবন আল্লাহর রাস্তায় উৎসর্গ করা।
>> অত্যাচারী যালিম ও অবাধ্যদের বিরুদ্ধে জিহাদের স্তর তিনটি।
সক্ষম হলে(ক্ষমতাবান) শক্তি প্রয়োগ করে তা রুখে দেয়া।
শক্তি প্রয়োগে অক্ষম হলে মুখের কথা দিয়ে তা রুখবে।
তাতেও সক্ষম না হলে অন্তর দিয়ে তাকে (কাজকে) ঘৃণা করবে এবং তা প্রতিহত করার চিন্তায় ব্যাপৃত থাকবে।
এই হল জিহাদের ১৩ টি স্তর। কেউ যদি জিহাদ না করে কিংবা অন্ততঃপক্ষে জিহাদের কল্পনা মনের ভিতর না রেখে মারা যায় তাহলে, যেন সে মুনাফিকের একটা গুণাবলী নিয়েই মৃত্যুবরণ করল। (যাদুল মাআদ দ্রষ্টব্য)
জিহাদের স্তরগুলো নিয়ে কেউ গবেষণা করলে সে দেখতে পাবে, যে সমস্ত নবীদেরকে যুদ্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে তাদেরকে প্রথমে ইসলামের দাওয়াত (ইসলামের দিকে আহবান) দিতে বলা হয়েছে। তাদের অবর্তমানে তাদের উম্মতের মধ্যকার যোগ্য ব্যক্তিদেরকে এই দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারা যদি তাদের বাণীকে গ্রহণ না করে এবং এতে বাধা দেয় তবেই যুদ্ধের অনুমতি দেয়া হয়েছে। প্রথমেই যুদ্ধের নির্দেশ বা অনুমতি দেয়া হয়নি।
বড় জিহাদ কোনটি?
স্বভাবতই প্রশ্ন আসতে পারে কোন জিহাদ বড়? নাফস তথা প্রবৃত্তির সাথে জিহাদ নাকি কাফেরদের সাথে জিহাদ? আসুন দেখি হাদীসে এ সম্বন্ধে কি বলা হয়েছে-
# রাসুল (সাঃ) বলেছেন:অর্থাৎ, (সত্যিকার) মুজাহিদ তথা জিহাদকারী ঐ ব্যক্তি যে তার নাফস তথা প্রবৃত্তির সাথে জিহাদ তথা সংগ্রাম করে। (মুসনাদে আহমাদ)
নিজের প্রবৃত্তির সাথে জিহাদ করার পরই ব্যক্তি শত্রুর সাথে জিহাদ করার যোগ্যতা লাভ করে। কেননা, আল্লাহ তায়ালার আদেশ নিষেধকে পালন না করে কেউ শত্রুর সাথে যুদ্ধ করতে সক্ষম হয় না। (যাদুল মাআ’দ)
অপর এক হাদীসে এসেছে-
# রাসুল (সাঃ) বলেছেন: অর্থাৎ, সর্বোত্তম জিহাদ হচ্ছে অত্যাচারী শাসকের সামনে হক কথা বলা। (তিরমীজি, নাসায়ী, ইবনে মাজাহ, আবু দাউদ, মুসনাদে আহমাদ, দারেমী)
জিহাদের একটা অংশ হল যুদ্ধ। জিহাদ বলতে প্রথমেই যুদ্ধকে বুঝানো হয়না। বরং, যুদ্ধ হচ্ছে এর চুড়ান্ত স্তর।
# আয়েশা (রাঃ) বর্ণিত,এক হাদীসে এসেছে- হযরত আয়েশা (রাঃ)হতে বর্ণিত,তিনি বলেন:হে আল্লাহর রাসুল (সাঃ)!মহিলাদের কি কোন জিহাদ আছে?রাসুল (সাঃ)বললেন:মহিলাদের জন্য জিহাদ আছে কিন্তু,তাতে কোন যুদ্ধ নেই। আর তা হল- হজ্জ ও ওমরাহ আদায় করা। (ইবনে মাজাহ,দারে কুতনী,মুসনাদে আহমাদ)
সূত্র: ইসমাইল জাবীহুল্লাহর বই হতে