বিয়ে কি ও কেনো?

আসসালামু’আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ

মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন–

 “তিনিই পানি থেকে সৃষ্টি করেছেন মানুষ, অতঃপর মানুষকে করেছেন বংশ সম্পর্কীয় ও বিবাহ সম্পর্কীয়, তোমার প্রতিপালক সব কিছু করতে সক্ষম।” (সূরাহ আল-ফুরকানঃ ৫৪)

সেই পরম সত্তা তো আল্লাহ-ই যিনি সৃষ্টির পরিকল্পনাকারী, পরিকল্পনা বাস্তবায়নের র্নিদেশ দানকারী এবং সেই অনুপাতে রূপদানকারী।   সূরা হাসর:২৪

আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, তিন জনের একটি দল নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ‘ইবাদাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার জন্য নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর স্ত্রীদের বাড়িতে আসল। যখন তাঁদেরকে এ সম্পর্কে জানানো হলো, তখন তারা ‘ইবাদাতের পরিমাণ কম মনে করল এবং বলল, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর সঙ্গে আমাদের তুলনা হতে পারে না। কারণ, তাঁর আগের ও পরের সকল গুনাহ্‌ ক্ষমা ক’রে দেয়া হয়েছে। এমন সময় তাদের মধ্য হতে একজন বলল, আমি সারা জীবন রাতভর সলাত আদায় করতে থাকব। অপর একজন বলল, আমি সবসময় সওম পালন করব এবং কক্ষনো বাদ দিব না। অপরজন বলল, আমি নারী সংসর্গ ত্যাগ করব, কখনও বিয়ে করব না। এরপর রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের নিকট এলেন এবং বললেন, “তোমরা কি ঐ সব লোক যারা এমন এমন কথাবার্তা বলেছ? আল্লাহ্‌র কসম! আমি আল্লাহ্‌কে তোমাদের চেয়ে বেশি ভয় করি এবং তোমাদের চেয়ে তাঁর প্রতি বেশি অনুগত; অথচ আমি সওম পালন করি, আবার তা থেকে বিরতও থাকি। সলাত আদায় করি এবং নিদ্রা যাই ও মেয়েদেরকে বিয়েও করি।  সুতরাং যারা আমার সুন্নাতের প্রতি বিরাগ পোষণ করবে, তারা আমার দলভুক্ত নয়।  [মুসলিম ১৬/১, হাঃ ১৪০১, আহমাদ ১৩৫৩৪] (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৯০, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৯৩)

যে কোন ‘ইবাদাতের ক্ষেত্রে ‘ইবাদাতের সময়, পরিমাণ, স্থান, অবস্থা ইত্যাদির দিকে খেয়াল রাখতে হবে। আবেগ তাড়িত হয়ে ফারযের মধ্যে যেমন কম বেশি করা যাবে না; তেমনি সুন্নাতের ক্ষেত্রেও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নির্দেশ বা তার ‘আমালের পরিবর্তন করা যাবে না। নফল ‘ইবাদাতেও কারো সময় থাকলে বা নিজের খেয়াল খুশি মত করা ইসলাম সমর্থিত নয়। ইসলামে সলাত, সওমের পাশাপাশি ঘুমানো, বিয়ে করা, বাণিজ্য করা ইত্যাদিও ‘ইবাদাতের মধ্যে গণ্য যদি তা সাওয়াবের আশায় এবং সঠিক নিয়মানুসারে পালন করা হয়।
কিন্তু যদি কেউ সার্বিক দিক থেকে সমর্থ হওয়া সত্ত্বেও রসূলের সুন্নাতের প্রতি অনীহা ও অবিশ্বাসের কারণে বিয়ে পরিত্যাগ করে, তাহলে সে রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর তরীকা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।

আল্লাহ তা’আলা মানুষকে যে প্রকৃতি, বৈশিষ্ট্য ও চাহিদা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন সেগুলোকে উপেক্ষা করে আল্লাহর প্রিয়পাত্র হওয়া তো দূরের কথা, মানুষ মানুষের স্তরেই থাকতে পারবে না। মানুষ অতিরিক্ত খাদ্য খেলে বা একেবারেই খাদ্য পরিত্যাগ করলে তার বেঁচে থাকা নিয়েই আশঙ্কা দেখা দিবে। একাধারে সওম পালন করলেও একই অবস্থা দেখা দিবে। তাই আল্লাহর রসূল আমাদেরকে এমন শিক্ষা দিয়েছেন যাতে আমরা মানুষ হিসেবে স্বাভাবিক জীবন যাপন করেও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি। জীবনের যে কোন ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক পন্থা অবলম্বন করলে দুর্ভোগ ও বিপর্যয় আসবে। খ্রীস্টান পাদ্রীদের অনুসৃত বৈরাগ্যবাদ ও দাম্পত্য জীবনের প্রতি লোক-দেখানো অনীহা তাদের অনেককেই যৌনাচারের ক্ষেত্রে পশুর স্তরে নামিয়ে দিয়েছে।
ইসলামে নারী-পুরুষের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের একমাত্র বৈধ পন্থা হল বিবাহ। পরিবার গঠন, সংরক্ষণ ও বংশ-বিস্তারের জন্যই বিয়ে ছাড়া আর কোন বিধি সম্মত পথ নেই। এর মাধ্যমেই ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবন পবিত্র ও কলুষমুক্ত হয়ে নৈতিকতার সর্বোচ্চ শিখরে উন্নীত হতে পারে। এ জন্যই ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করলে আল্লাহ্‌র চিরাচরিত বিধান এবং নবী – এর সুন্নাত হিসেবে বিয়ে করা ফরয আর এ অবস্থায় অর্থনৈতিক দিক থেকে সমর্থ না হলে সওম পালন করার বিধান দেয়া হয়েছে। আবার শারীরিক দিক থেকে সমর্থ হলে আর ব্যভিচারে লিপ্ত হবার আশঙ্কা না থাকলে বিয়ে করা মুসতাহাব। আর জৈবিক চাহিদা শূন্য হলে বিয়ে করা মুবাহ্‌। আবার এ অবস্থায় যদি মহিলার পক্ষ থেকে তার বিয়ের উদ্দেশ্যই নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে তাহলে এরূপ স্বামীর শারীরিকভাবে সমর্থ নারীকে বিয়ে করা মাকরূহ।
কিন্তু যদি কেউ সার্বিক দিক থেকে সমর্থ হওয়া সত্ত্বেও রসূলের সুন্নাতের প্রতি অনীহা ও অবিশ্বাসের কারণে বিয়ে পরিত্যাগ করে, তাহলে সে রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর তরীকা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। (http://ihadis.com/books/bukhari/chapter/67)

আলক্বামাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যখন আমি ‘আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ) – এর সঙ্গে ছিলাম, ‘উসমান (রাঃ) তাঁর সঙ্গে মিনাতে দেখা করে বলেন, হে ‘আবদুর রহমান! আপনার সাথে আমার কিছু দরকার আছে। অতঃপর তারা দু’জনে এক পাশে গেলেন। তারপর ‘উসমান (রাঃ) বললেন, হে আবূ ‘আবদুর রহমান! আমি কি আপনার সঙ্গে এমন একটি কুমারী মেয়ের বিয়ে দিব, যে আপনাকে আপনার অতীত কালকে স্মরণ করিয়ে দিবে? ‘আবদুল্লাহ্‌ যখন দেখলেন তার এ বিয়ের দরকার নেই তখন তিনি আমাকে ‘হে ‘আলক্বামাহ’ বলে ইঙ্গিত করলেন। আমি তাঁর কাছে গিয়ে শুনলাম, আপনি আমাকে এ কথা বলছেন (এ ব্যাপারে) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে বলেছেন, হে যুবকের দল! তোমাদের মধ্যে যে বিয়ের সামর্থ্য রাখে, সে যেন বিয়ে করে এবং যে বিয়ের সামর্থ্য রাখে না, সে যেন ‘সাওম’ পালন করে। কেননা, সাওম যৌন ক্ষমতাকে দমন করে।[১৯০৫; মুসলিম ১৬/১, হাঃ ১৪০০, আহমাদ ৪০৩৩] (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৯২, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৯৫)

হাদীসে ‘যুব সম্প্রদায়’ কাদের বলা হয়েছে, এ সম্পর্কে ইমাম নাবাবী লিখেছেন-
আমাদের লোকদের মতে যুবক-যুবতী বলতে তাদেরকে বোঝানো হয়েছে যারা বালেগ [পূর্ণ বয়স্ক] হয়েছে এবং ত্রিশ বছর বয়স পার হয়ে যায়নি।
আর এ যুবক-যুবতীদের বিয়ের জন্য রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকীদ করলেন কেন, তার কারণ সম্পর্কে আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী তার বিশ্ববিখ্যাত বুখারীর ভাষ্যগ্রন্থ “উমদাতুল ক্বারী” গ্রন্থে লিখেছেনঃ
“হাদীসে কেবলমাত্র যুবক-যুবতীদের বিয়ে করতে বলার কারণ এই যে, বুড়োদের অপেক্ষা এ বয়সের লোকদের মধ্যেই বিয়ে করার প্রবণতা ও দাবী অনেক বেশী বর্তমান দেখা যায়। যুবক-যুবতীদের বিয়ে যৌন সম্ভোগের পক্ষে খুবই স্বাদপূর্ণ হয়। মুখের গন্ধ খুবই মিষ্টি হয়, দাম্পত্য জীবন যাপন খুবই সুখকর হয়, পারস্পরিক কথাবার্তা খুবই আনন্দদায়ক হয়, দেখতে খুবই সৌন্দর্যমণ্ডিত হয়, স্পর্শ খুব আরামদায়ক হয় এবং স্বামী বা স্ত্রী তার জুড়ির চরিত্রে এমন কতগুলো গুণ সৃষ্টি করতে পারে যা খুবই পছন্দনীয় হয়, আর এ বয়সের দাম্পত্য ব্যাপার প্রায়ই গোপন রাখা ভাল লাগে। যুবক বয়স যেহেতু যৌন সম্ভোগের জন্য মানুষকে উন্মুখ করে দেয়। এ কারণে তার দৃষ্টি যে কোন মেয়ের দিকে আকৃষ্ট হতে পারে এবং সে যৌন উচ্ছৃঙ্খলতায় পড়ে যেতে পারে। এজন্য রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ বয়সের ছেলেমেয়েকে বিয়ে করতে তাকীদ করেছেন এবং বলেছেনঃ বিয়ে করলে চোখ যৌন সুখের সন্ধানে যত্রতত্র ঘুরে বেড়াবে না এবং বাহ্যত তার কোন ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না। এ কারণে রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যদিও কথা শুরু করেছেন যুবক মাত্রকেই সম্বোধন করে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিয়ের এ তাকীদকে নির্দিষ্ট করেছেন কেবল এমন সব যুবক-যুবতীদের জন্য যাদের বিয়ের সামর্থ্য আছে। আর যারা বিয়ের ব্যয় বহনের সঙ্গতি রাখে না তারা সওম পালন করবে। সওম পালন তাদের যৌন উত্তেজনা দমন করবে। কারণ পানাহারের মাত্রা কম হলে যৌন চাহিদা প্রশমিত হয়।

সা’দ ইব্‌নু আবী ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘উসমান ইব্‌নু মাজ’উনকে বিয়ে করা থেকে বিরত থাকতে নিষেধ করেছেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে যদি অনুমতি দিতেন, তাহলে আমরাও খাসি হয়ে যেতাম।[৫০৭৪; মুসলিম ১৬/১, হাঃ ১৪০২, আহমাদ ১৫১৬] ] (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৭০০, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৪৭০৩)

‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু মাস’উদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর সঙ্গে জিহাদে অংশ নিতাম; কিন্তু আমাদের কোন কিছু ছিল না। সুতরাং আমরা রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর কাছে বললাম, আমরা কি খাসি হয়ে যাব? তিনি আমাদেরকে এ থেকে নিষেধ করলেন এবং কোন মহিলার সঙ্গে একটি কাপড়ের বদলে হলেও বিয়ে করার অনুমতি দিলেন এবং আমাদেরকে এই আয়াত পাঠ করে শোনালেনঃ অর্থাৎ, “ওহে ঈমানদারগণ! পবিত্র বস্তুরাজি যা আল্লাহ তোমাদের জন্য হালাল করে দিয়েছেন সেগুলোকে হারাম করে নিও না আর সীমালঙ্ঘন করো না, অবশ্যই আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদের ভালবাসেন না।” (আল-মায়িদাহ ৫: ৮৭) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৭০২, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৪৭০৫ প্রথমাংশ)

 

দরিদ্র ব্যক্তির বিয়ে করা বৈধ।

আর তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন  তাদের বিয়ে সম্পাদন কর এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎ তাদেরও । তারা অভাবগ্রস্থ হলে আল্লাহ্ ‌নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন; আল্লাহ্‌তো প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।” (সূরা নূর-৩২)

সাহ্‌ল ইব্‌নু সা‘দ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক মহিলা রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমি আমার জীবনকে আপনার হাতে সমর্পণ করতে এসেছি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার দিকে তাকালেন এবং সতর্ক দৃষ্টিতে তার আপাদমস্তক লক্ষ্য করলেন। তারপর তিনি মাথা নিচু করলেন। যখন মহিলাটি দেখল, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার সম্পর্কে কোন ফয়সালা দিচ্ছেন না, তখন সে বসে পড়ল। এরপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর সহাবীদের মধ্যে একজন দাঁড়ালেন এবং বললেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! যদি আপনার বিয়ের প্রয়োজন না থাকে, তবে আমার সঙ্গে এর বিয়ে দিন। রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কাছে কিছু আছে কি? সে উত্তর করলো- না, আল্লাহ্‌র কসম, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমার কাছে কিছুই নেই। রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি তোমার পরিবার-পরিজনের কাছে ফিরে গিয়ে দেখ, কিছু পাও কিনা। এরপর লোকটি চলে গেল। ফিরে এসে বলল, আল্লাহ্‌র কসম! আমি কিছুই পাইনি। এরপর রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আবার দেখ, লোহার একটি আংটিও যদি পাও। তারপর লোকটি আবার ফিরে গেল। এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল! তাও পেলাম না, কিন্তু এই আমার লুঙ্গি (শুধু এটাই আছে)। (রাবী) সাহ্‌ল (রাঃ) বলেন, তার কাছে কোন চাদর ছিল না। লোকটি এর অর্ধেক তাকে দিতে চাইল। তখন রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সে তোমার লুঙ্গি দিয়ে কী করবে? তুমি যদি পরিধান কর, তাহলে তার কোন কাজে আসবে না, আর সে যদি পরিধান করে, তবে তোমার কোন কাজে আসবে না। তারপর বেশ কিছুক্ষণ লোকটি নীরবে বসে থাকল। তারপর উঠে দাঁড়াল। সে যেতে উদ্যত হলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে ডেকে আনলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কী পরিমাণ কুরআন মাজীদ মুখস্থ আছে? সে বলল, আমার অমুক অমুক সূরা মুখস্থ আছে এবং সে গণনা করল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, এগুলো কি তোমার মুখস্থ আছে। সে বলল, হাঁ। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যে পরিমাণ কুরআন তোমার মুখস্থ আছে তার বিনিময়ে তোমার কাছে এ মহিলাটিকে তোমার অধীনস্থ করে (বিয়ে) দিলাম।  (আধুনিক প্রকাশনী- ৪৭১৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭১৬)

 

বিবাহ কি আখেরাতের কাজ; নাকি দুনিয়াবী ও নফসের প্রয়োজনমূলক কাজ?

উত্তর

আলহামদুলিল্লাহ।

ব্যক্তি যদি বিয়ের মাধ্যমে ইবাদতের নিয়ত করে যেমন- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণের নিয়ত করা কিংবা নেক সন্তান লাভের নিয়ত করা কিংবা নিজের চরিত্র, লজ্জাস্থান, চক্ষু, অন্তর ইত্যাদি হেফাযত করার নিয়ত করা তাহলে এটি আখেরাতের কাজের মধ্যে পড়বে ও এর জন্য ব্যক্তি সওয়াব পাবে। আর যদি এমন কোন নিয়ত না করে তাহলে এটি দুনিয়ার ও নফসের প্রয়োজনমূলক মুবাহ (বৈধ) কাজ। এর জন্য কোন সওয়াবও নেই; গুনাহও নেই। আল্লাহই ভাল জানেন।  সূত্র: ইমাম নববীর ফতোয়াসমগ্র, পৃষ্ঠা-১৭৯

 

সংক্ষেপে বিয়ের রুকন, শর্ত ও ওলি বা অভিভাবক এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য শর্তসমূহ

উত্তর

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্য।

ইসলামে বিয়ের রুকন বা খুঁটি তিনটি:

এক:

বিয়ে সংঘটিত হওয়ার ক্ষেত্রে সমূহ প্রতিবন্ধকতা হতে বর-কনে উভয়ে মুক্ত হওয়া। যেমন- বর-কনে পরস্পর মোহরেম হওয়া; ঔরশগত কারণে হোক অথবা দুগ্ধপানের কারণে হোক। বর কাফের কিন্তু কনে মুসলিম হওয়া, ইত্যাদি।

দুই:

ইজাব বা প্রস্তাবনা: এটি মেয়ের অভিভাবক বা তার প্রতিনিধির পক্ষ থেকে পেশকৃত প্রস্তাবনামূলক বাক্য। যেমন- বরকে লক্ষ্য করে বলা যেতে পারে “আমি অমুককে তোমার কাছে বিয়ে দিলাম” অথবা এ ধরনের অন্য কোন কথা।

তিন:

কবুল বা গ্রহণ: এটি বর বা বরের প্রতিনিধির পক্ষ থেকে সম্মতিসূচক বাক্য। যেমন- বর বলতে পারেন “আমি গ্রহণ করলাম” অথবা এ ধরনের অন্য কোন কথা।

বিয়ে শুদ্ধ হওয়ার শর্তগুলো নিম্নরূপ:

(১) ইশারা করে দেখিয়ে দেয়া কিংবা নামোল্লেখ করে সনাক্ত করা অথবা গুণাবলী উল্লেখ অথবা অন্য কোন মাধ্যমে বর-কনে উভয়কে সুনির্দিষ্ট করে নেয়া।

(২) বর-কনে প্রত্যেকে একে অপরের প্রতি সন্তুষ্ট হওয়া। এর দলীল হচ্ছে-নবী (সাঃ) বাণী “স্বামীহারা নারী (বিধবা অথবা তালাকপ্রাপ্তা) কে তার সিদ্ধান্ত জানা ছাড়া (অর্থাৎ সিদ্ধান্ত তার কাছ থেকে চাওয়া হবে এবং তাকে পরিষ্কারভাবে বলতে হবে) বিয়ে দেয়া যাবে না এবং কুমারী মেয়েকে তার সম্মতি ছাড়া (কথার মাধ্যমে অথবা চুপ থাকার মাধ্যমে) বিয়ে দেয়া যাবে না। লোকেরা জিজ্ঞেস করল,ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ)! কেমন করে তার সম্মতি জানব (যেহেতু সে লজ্জা করবে)। তিনি বললেন,চুপ করে থাকাটাই তার সম্মতি।”[সহীহ বুখারী, (৪৭৪১)]

(৩) বিয়ের আকদ (চুক্তি) করানোর দায়িত্ব মেয়ের অভিভাবককে পালন করতে হবে। যেহেতু আল্লাহ তাআলা বিয়ে দেয়ার জন্য অভিভাবকদের প্রতি নির্দেশনা জারী করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন: “আর তোমরা তোমাদের মধ্যে অবিবাহিত নারী-পুরুষদের বিবাহ দাও।”[সূরা নুর, ২৪:৩২] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে নারী তার অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া বিয়ে করবে তার বিবাহ বাতিল, তার বিবাহ বাতিল, তার বিবাহ বাতিল।”[হাদিসটি তিরমিযি (১০২১) ও অন্যান্য গ্রন্থকার কর্তৃক সংকলিত এবং হাদিসটি সহীহ]

(৪) বিয়ের আকদের সময় সাক্ষী রাখতে হবে। দলীল হচ্ছে- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “অভিভাবক ও দুইজন সাক্ষী ছাড়া কোন বিবাহ নেই।” [তাবারানী কর্তৃক সংকলিত, সহীহ জামে (৭৫৫৮)]।

বিয়ের প্রচারণা নিশ্চিত করতে হবে। দলীল হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী- “তোমরা বিয়ের বিষয়টি ঘোষণা কর।”[মুসনাদে আহমাদ এবং সহীহ জামে গ্রন্থে হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলা হয়েছে (১০৭২)]

বিয়ের অভিভাবক হওয়ার জন্য শর্তঃ

১. সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন হওয়া।

২. প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া।

৩. দাসত্বের শৃঙ্খল হতে মুক্ত হওয়া।

৪.অভিভাবককে কনের ধর্মের অনুসারী হওয়া। সুতরাং কোন অমুসলিম ব্যক্তি মুসলিম নর-নারীর অভিভাবক হতে পারবে না। অনুরূপভাবে কোন মুসলিম ব্যক্তি অমুসলিম নর-নারীর অভিভাবক হতে পারবে না। তবে অমুসলিম ব্যক্তি অমুসলিম নারীর অভিভাবক হতে পারবে, যদিও তাদের উভয়ের ধর্ম ভিন্ন হোক না কেন। কিন্তু মুরতাদ ব্যক্তি কারো অভিভাবক হতে পারবে না।

৫. আদেল বা ন্যায়বান হওয়া। অর্থাৎ ফাসেক না হওয়া। কিছু কিছু আলেম এ শর্তটি আরোপ করেছেন। অন্যেরা বাহ্যিক আদালতকে (দ্বীনদারিকে) যথেষ্ট ধরেছেন। আবার কারো কারো মতে, যাকে তিনি বিয়ে দিচ্ছেন তার কল্যাণ বিবেচনা করার মত যোগ্যতা থাকলে চলবে।

৬.পুরুষ হওয়া। দলীল হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাণী- “এক মহিলা আরেক মহিলাকে বিয়ে দিতে পারবে না। অথবা মহিলা নিজে নিজেকে বিয়ে দিতে পারবে না। ব্যভিচারিনী নিজে নিজেকে বিয়ে দেয়।”[ইবনে মাজাহ (১৭৮২) ও সহীহ জামে (৭২৯৮)।

৭. বুদ্ধিমত্তার পরিপক্কতা থাকা। এটি হচ্ছে বিয়ের ক্ষেত্রে সমতা (কুফু) ও অন্যান্য কল্যাণের দিক বিবেচনা করতে পারার যোগ্যতা।

ইসলামী আইনবিদগণ অভিভাবকদের একটি ক্রমধারা নির্ধারণ করেছেন। সুতরাং নিকটবর্তী অভিভাবক থাকতে দূরবর্তী অভিভাবকের অভিভাবকত্ব গ্রহণযোগ্য নয়। নিকটবর্তী অভিভাবক না থাকলে অথবা তার মধ্যে শর্তের ঘাটতি থাকলে দূরবর্তী অভিভাবক গ্রহণযোগ্য হবে। নারীর অভিভাবক হচ্ছে- তাঁর পিতা। এরপর পিতা যাকে দায়িত্ব দিয়ে যান সে ব্যক্তি। এরপর পিতামহ, যতই উর্দ্ধগামী হোক। এরপর তাঁর সন্তান। এরপর তাঁর সন্তানের সন্তানেরা, যতই অধস্তন হোক। এরপর তাঁর সহোদর ভাই। এরপর তাঁর বৈমাত্রেয় ভাই। এরপর এ দুইশ্রেণীর ভাইয়ের সন্তানেরা। এরপর তাঁর সহোদর শ্রেণীর চাচা। এরপর বৈমাত্রেয় শ্রেণীর চাচা। এরপর এ দুইশ্রেণীর চাচার সন্তানেরা। এরপর মীরাছের ক্ষেত্রে যারা ‘আসাবা’ হয় সে শ্রেণীর আত্মীয়গণ। এরপর নিকটাত্মীয় থেকে ক্রমান্বয়ে দূরের আত্মীয়। যার কোন অভিভাবক নেই মুসলিম শাসক অথবা শাসকের প্রতিনিধি (যেমন বিচারক) তার অভিভাবক।

সূত্র: শাইখ মুহাম্মদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ

তোমরা বিয়ের প্রস্তাবনা গোপন রাখ এবং বিয়ে হওয়ার ঘোষণা কর” এ হাদিসটি কি সহিহ?  বিয়ের প্রস্তাবনা সম্পর্কে কী বলবেন?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।

এ হাদিসটি দাইলামী তার ‘মুসনাদ’ গ্রন্থে এ ভাষ্যে সংকলন করেছেন:

أظهروا النكاح وأخفوا الخِطبة

(তোমরা বিয়ের বিষয়টি প্রকাশ কর এবং প্রস্তাবনার বিষয়টি গোপন রাখ)। এটি একটি যয়ীফ (দুর্বল) হাদিস। শাইখ আলবানী তার ‘আস-সিলসিলা আয্‌যায়ীফা’ গ্রন্থে (২৪৯৪) ও ‘যয়ীফুল জামিয়িস সাগীর’ গ্রন্থে (৯২২) যায়ীফ (দুর্বল) বলেছেন।

কিন্তু, হাদিসের প্রথম বাক্যটি (أعلنوا-ঘোষণা কর) ভাষ্যে সহিহ। ইমাম আহমাদ আব্দুল্লাহ্‌বিন যুবাইর (রাঃ) থেকে তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: أعلنوا النكاح (তোমরা বিয়ের ঘোষণা কর)[আলবানী ‘ইরওয়াউল গালিল’ গ্রন্থে (১৯৯৩) হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন।]

‘বিয়ের ঘোষণা করা’ মানে ‘বিয়ের সাক্ষী রাখা’ অধিকাংশ আলেমের নিকট ওয়াজিব। বরং এটি বিয়ে শুদ্ধ হওয়ার অন্যতম একটি শর্ত। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: لا نكاح إلا بولي وشاهدي عدل (অভিভাবক ও দুইজন ন্যায়বান সাক্ষী ব্যতীত কোন বিয়ে নাই)[সুনানে বাইহাকীতে ইমরান (রাঃ) ও আয়েশা (রাঃ) এর হাদিস; আলবানী ‘সহিহুল জামে’ গ্রন্থে (৭৫৫৭) হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]

কিছু কিছু আলেম হিংসুটে মানুষের ভয়ে বিয়ের প্রস্তাবনার বিষয়টি গোপন রাখাকে মুস্তাহাব বলেছেন; যারা প্রস্তাবকারী ও পাত্রীর পরিবারের মাঝে কুৎসা রটনার চেষ্টা করে; যেমনটি এসেছে ‘হাশিয়াতুল আদাওয়ি আলা শারহি মুখতাসারি খালিল’ (৩/১৬৭)]

এ অভিমতের পক্ষে সমর্থন যোগায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ হাদিসটিও:

استعينوا على إنجاح الحوائج بالكتمان ، فإن كل ذي نعمةٍ محسود

(তোমরা তোমাদের প্রয়োজনগুলো সফল হওয়ার ক্ষেত্রে গোপনীয়তা রক্ষার মাধ্যমে সাহায্য চাও। কেননা প্রত্যেকটি নেয়ামত হিংসার পাত্র)[হাদিসটি তাবারানী সংকলন করেছেন এবং শাইখ আলবানী ‘সহিহুল জামে’ গ্রন্থে (৯৪৩) হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]

এ বিধানটি কেবল বিয়ের প্রস্তাবনার সাথে খাস নয়। বরং যে ব্যক্তি কারো প্রতি আল্লাহ্‌র কোন নেয়ামত দেখলেই তাকে হিংসা করে তার সামনে সেটি প্রকাশ করা উচিত নয়।

পক্ষান্তরে, বিয়ের প্রস্তাব পেশ উপলক্ষে অনুষ্ঠান করা অনেকের মাঝে প্রচলিত একটি প্রথা। ইনশা আল্লাহ্ ‌এতে কোন অসুবিধা নাই; যদি শরয়ি বিধিবিধান মেনে সে অনুষ্ঠান পালন করা হয়। অর্থাৎ এতে নর-নারীর সংমিশ্রণ না ঘটে এবং কোন মিউজিক্যাল ইন্সট্রুমেন্ট ব্যবহার করা না হয়; কেবল দফ ব্যতীত। যেহেতু বিয়েসাদীতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দফ ব্যবহার করার অবকাশ দিয়েছেন।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

যে ব্যক্তি সন্তান লালন-পালনের কাঠিন্যের কথা শুনে বিয়ে করতে ভয় পাচ্ছেন

উত্তর

শয়তান যে ফাঁদগুলোতে কিছু মানুষে নিমজ্জিত করে তার মধ্যে একটি হল বাতিলে লিপ্ত হওয়ার ভয়ে হক্ককে বর্জন করা। খারাপটাকে প্রতিহত করতে গিয়ে ভালোটার ব্যাপারে কৃচ্ছতা সাধন করা। অকল্যাণে নিমজ্জিত হওয়ার ভয়ে কল্যাণ থেকে দূরে থাকা। এটি শয়তানের একটি ওয়াসওয়াসা (কুমন্ত্রণা)। এর মাধ্যমে শয়তান চায় যে, মানুষকে আল্লাহ্‌র পথে আগোয়ানদের সোপানে উন্নীত হওয়া থেকে নিরস্ত করা; অনেকেই ধ্বংস হয়ে গেছে এই ওজুহাত তোলার মাধ্যমে। আল্লাহ্‌ তাআলা আমাদেরকে তাঁর উপর তাওয়াক্কুল (নির্ভর) করার, কর্মে অগ্রসর হওয়ার ও পরিশ্রম করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি আমাদের আমল কবুল করেন এবং আমাদের কসুর মার্জনা করেন।

আপনার জন্য নসিহত হচ্ছে—আপনি সন্তান প্রতিপালনে ব্যর্থ যারা তাদের নমুনার দিকে তাকাবেন না। যাতে করে, এ চিত্রগুলো আপনার উপর আধিপত্য বিস্তার করতে না পারে; শেষে আপনি এর থেকে নিজেকে ছুটাতে পারবেন না। কিন্তু, আপনি নিশ্চিন্ত মনে আশাবাদী হয়ে জীবনের দিকে অগ্রসর হোন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আশাবাদিতাকে পছন্দ করতেন। দুনিয়াবী কোন কল্যাণ অর্জনের সংবাদ শুনলে তিনি খুশি হতেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শই হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ ও সর্বোত্তম আদর্শ। তিনি নারীদেরকে বিয়ে করেছেন, সন্তান জন্ম দিয়েছেন, দাম্পত্য জীবনের সমস্যা মোকাবিলা করেছেন, সন্তান লালন-পালন করেছেন। সুতরাং বিয়ে করা থেকে বিরত না থেকে এগুলো করা মানুষের জন্য কল্যাণকর ও অধিক সওয়াবময়। অতএব, আপনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শের বিপরীত করবেন না।

আপনি সন্তানদেরকে নেককার হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রাণান্তকর চেষ্টা করবেন। সন্তান প্রতিপালনের পদ্ধতিগুলো জেনে নিবেন। এ বিষয়ে ব্যাপক পড়বেন যাতে করে বিষয়টির উপর আপনার যথেষ্ট জ্ঞান থাকে। যদি আপনি একটি নেককার পরিবার ও নবুয়তী আদর্শে আদর্শবান প্রজন্ম গড়ে তুলতে পারেন তাহলে আপনি মহা সফলতা অর্জন করলেন এবং সদকায়ে জারিয়া রেখে গেলেন। মৃত্যুর পরেও আপনি সেটার নেয়ামত পেতে থাকবেন। আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: এক নারী তার দুই মেয়ে নিয়ে আমার কাছে এসে ভিক্ষা চাইল। মহিলাটি আমার কাছ থেকে একটি খেজুর ছাড়া আর কিছু পেল না। আমি তাকে খেজুরটি দিলাম। সে খেজুরটি তার দুই মেয়ের মাঝে ভাগ করে দিল, নিজে কিছু খেল না। এরপর উঠে চলে গেল। ইতিমধ্যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আসলেন এবং আমি তাঁকে ঘটনাটি বললাম। তিনি বললেন: “কেউ যদি এ মেয়েদেরকে নিয়ে কোন পরীক্ষার সম্মুখীন হয় তাহলে এ মেয়েরা কিয়ামতের দিন তার জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে আড়াল হবে”।[সহিহ বুখারী (১৪১৮) ও সহিহ মুসলিম (২৬২৯)]

উকবা বিন আমের (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন: “যে ব্যক্তির তিনজন মেয়ে আছে, সে মেয়েদের ব্যাপারে ধৈর্য ধারণ করে এবং তার সামর্থ্য অনুযায়ী তাদের ভরণ-পোষণ করে— এ মেয়েরা কিয়ামতের দিন তার জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে আড়াল হবে।”[সুনানে ইবনে মাজাহ (৩৬৬৯), আলবানী ‘সহিহু ইবনে মাজাহ’ গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]

ইরাক্বী (রহঃ) বলেন: الإحسان إليهن (তাদের প্রতি ইহসান করা) দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে—তাদেরকে সুরক্ষা করা, তাদের ভরণ-পোষণ ও অন্যান্য যা প্রয়োজন সেটা প্রদান করা। তাদের স্বার্থটা দেখা। তাদের জন্য যা কিছু শেখা আবশ্যকীয় তাদেরকে সেটা শিক্ষা দেওয়া। যা কিছু বাঞ্ছিত নয় সেটার কারণে তাদেরকে ধমক দেওয়া ও শাস্তি দেওয়া। এ সবকিছু ইহসানের অন্তর্ভুক্ত। এমনকি প্রয়োজন হলে যদি ধমক দেওয়া হয় বা মারা হয় সেটাও। ব্যক্তির উচিত এক্ষেত্রে নিজের নিয়তকে আল্লাহ্‌র জন্য একনিষ্ঠ করা এবং এর মাধ্যমে আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির আশা করা। কেননা আমলসমূহ ধর্তব্য হয় নিয়তের ভিত্তিতে। তাদের প্রতি ইহসানের পরিপূর্ণতা হল— তাদের ব্যাপারে বিরক্তি, উদ্বিগ্নতা, অবজ্ঞা ও সংকোচন প্রকাশ না করা। কারণ এগুলোর প্রকাশ ইহসানকে মলিন করে দিবে।

হাদিসের কথা: كن له سترا من النار (তারা তার জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে আড়াল হবে): অর্থাৎ আল্লাহ্‌ তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে দূরে রাখার ক্ষেত্রে তারা কারণ হবে এবং জাহান্নামে প্রবেশ করা থেকে রক্ষা করবে। নিঃসন্দহে যে ব্যক্তি জাহান্নামে প্রবেশ করবে না; সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। যেহেতু জান্নাত ও জাহান্নাম ছাড়া আর কোন আবাসস্থল নেই। সহিহ মুসলিমের যে বর্ণনাটি আমরা উদ্ধৃত করেছি তাতে এর সপক্ষে প্রমাণ রয়েছে যে, আল্লাহ্‌ তাআলা ঐ নারীর উক্ত কর্মের কারণে তার জন্য জান্নাত অবধারিত করে দিয়েছেন। হাদিসে মেয়েদের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যেহেতু মেয়েরা দুর্বল, তাদের পরিস্থিতি মোকাবেলার ক্ষমতা কম, তারা স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়, তাদের সুরক্ষা প্রয়োজন এবং তাদের পেছনে খরচাদি বেশি লাগে। তাছাড়া অনেক মানুষ তাদেরকে বোঝা মনে করে ও অবজ্ঞা করে; যেটা ছেলেদের বেলায় করে না। কারণ উল্লেখিত দিকগুলোতে ছেলেরা মেয়েদের বিপরীত।

তবে, হাদিস থেকে এমনটি বুঝারও সম্ভাবনা রয়েছে যে, এ কথাটি শুধু বিশেষ ঐ ঘটনার ক্ষেত্রে উদ্ধৃত হয়েছে। সেটা ছাড়া এ বাণীর আর কোন মাফহুম (নির্দেশনা) নেই। ছেলেদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।[তারহুত তাসরিব (৭/৬৭)]

আরও জানতে দেখুন: 82968 নং ও 146150 নং প্রশ্নোত্তর।

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

ইসলামের দৃষ্টিতে তাকওয়া, পরহেযগারী, দীনদারী ও উন্নত চরিত্রই হচ্ছে জীবন সঙ্গিনী পছন্দ করার ক্ষেত্রে সর্বাধিক ও একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, চারটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রেখে মেয়েদেরকে বিয়ে করা হয়ঃ তার সম্পদ, তার বংশমর্যাদা, তার সৌন্দর্য ও তার দীনদারী। সুতরাং তুমি দীনদারীকেই প্রাধান্য দেবে নতুবা তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। [মুসলিম ১৭/১৫, হাঃ ১৪৬৬, আহমাদ ৯৫২৬] (আধুনিক প্রকাশনী- ৪৭১৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭১৯)

 যে সব কারণে সমাজে একজন পুরুষ বিশেষ একটি মেয়েকে স্ত্রীরূপে বরণ করার জন্য উৎসাহিত ও আগ্রহান্বিত হতে পারে তা হচ্ছে চারটি। (১) সৌন্দর্য (২) সম্পদ (৩) বংশ (৪) দীনদারী।
এ গুণ চতুষ্টয়ের মধ্যে সর্বশেষে উল্লেখ করা হয়েছে দীনদারী ও আদর্শবাদিতার গুণ। আর এ গুণটিই ইসলামের দৃষ্টিতে সর্বাগ্রগণ্য ও সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর আলোচ্য নির্দেশের সার কথা হল- দীনদারীর গুণসম্পন্না কনে পাওয়া গেলে তাকেই যেন স্ত্রীরূপে বরণ করা হয়, তাকে বাদ দিয়ে অপর কোন গুণসম্পন্না মহিলাকে বিয়ে করতে আগ্রহী হওয়া উচিত নয় – (সুবুলুস সালাম)।
চারটি গুণের মধ্যে দ্বীনদার হওয়ার গুণটি কেবল যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ তা-ই নয়, এ গুণ যার নেই তার মধ্যে অন্যান্য গুণ যতই থাক না কেন, ইসলামের দৃষ্টিতে সে অগ্রাধিকার যোগ্য কনে নয়। রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাদীস অনুযায়ী তো দ্বীনদারীর গুণ বঞ্চিতা নারী বিয়ে করাই উচিত নয়। তিনি স্পষ্ট ভাষায় নির্দেশ দিয়েছেন- তোমরা স্ত্রীদের কেবল তাদের রূপ-সৌন্দর্য দেখেই বিয়ে করো না- কেননা এরূপ সৌন্দর্যই অনেক সময় তাদের ধ্বংসের কারণ হতে পারে। তাদের ধন-মালের লোভে পড়েও বিয়ে করবে না, কেননা এ ধনমাল তাদের বিদ্রোহী ও অনমনীয় বানাতে পারে। বরং তাদের দ্বীনদারীর গুণ দেখেই তবে বিয়ে করবে। বস্তুত একজন দীনদার কৃষ্ণাঙ্গ দাসীও কিন্তু অনেক ভাল- (ইবনে মাজাহ, বায্‌যার, বাইহাকী)।
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল – বিয়ের জন্য কোন্‌ ধরনের মেয়ে উত্তম? জবাবে তিনি বলেছিলেন- যে স্ত্রীকে দেখলে সে তার স্বামীকে আনন্দ দেয়, তাকে যে কাজের আদেশ করা হয় তা সে যথাযথ পালন করে এবং তার নিজের স্বামীর ধন মালের ব্যাপারে স্বামীর পছন্দের বিপরীত কোন কাজই করে না- (মুসনাদে আহমাদ)। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেছেন- দুনিয়ার সব জিনিসই ভোগ সামগ্রী আর সবচেয়ে উত্তম সামগ্রী হচ্ছে নেক চরিত্রের স্ত্রী- (মুসনাদে আহমাদ)।
উপরের উদ্ধৃত হাদীসগুলো থেকে যে কথাটি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে তা এই যে, ইসলামের দৃষ্টিতে তাকওয়া, পরহেযগারী, দীনদারী ও উন্নত চরিত্রই হচ্ছে জীবন সঙ্গিনী পছন্দ করার ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়।
http://sistersforuminislam.com/articles/fiqh/%e0%a6%ac%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a6%bf-%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a7%9f%e0%a7%87-%e0%a6%95%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%b7%e0%a7%87%e0%a6%a4%e0%a7%8d/
https://www.youtube.com/watch?v=fII0q7vrfQ8&feature=share&fbclid=IwAR0FfKi3gWFga7KfOPp8WlPnGDsb8GRZUWDekyFUeGOgxlASkJn5oohVi6A
https://www.youtube.com/watch?v=zEXJ4duNSbI