এই পর্ব থেকে কিছু ত্রুটিকে তুলে ধরা হলো, যা আমাদের কারো কারো জীবনের সাথে যুক্ত হয়ে আছে। মহান আল্লাহ আমাদের বুঝার, অনুধাবন করার ও সংশোধন হওয়ার তাওফিক দান করুন। দৃঢ় প্রত্যয়ের সাথে এই মুহুর্তেই ফিরে আসি, চির শান্তি জান্নাতের পথে, মহান রবের সন্তুষ্টি পাওয়ার লক্ষ্যে।
যা থেকে দূরে থাকতে হবে
১। গান ও মুভি/সিরিয়াল নাটক
জীবনের একটা সময় বিশেষ করে তরুন ও তরুনীরা এবং আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা যাদের সঠিক কাজের অভাব তারাই সময়কে পার করে দেন গান ও মুভি দেখার মাধ্যমে। ছোট ছোট শিশুদেরকে পিতা-মাতারা খাওয়ানোর জন্য মিউজিক সহ কার্টুন বা গান ছেড়ে দেন। আবার অনেক মায়েরা নিজের কাজ বা পড়াশুনা বজায় রাখতে যেয়েও সন্তানদের হাতে গান-বাজনার ডিভাইস তুলে দেন। আবার অনেকে নিজে না করলেও অন্যকে উৎসাহিত করে থাকেন এই কাজে।
এইগুলো দেখার পিছনে যে উদ্দেশ্য থাকে, খেয়াল করেছেন কি যে সেই উদ্দেশ্য সফল তো হয় না বরং শয়তান একটার পর আরেকটি দেখার উত্তেজনা এনে দেয়। আপনি শয়তানকে খুশি করার জন্য কত সময় দিচ্ছেন, ভেবে দেখেছেন কি? মহান আল্লাহ জীবনে সব দিয়েছেন, যেই চোখ দিয়ে যেই আবেগ দিয়ে আপনি এইগুলো দেখছেন, তা কিন্তু মহান আল্লাহর দেয়া আমানত। আল্লাহকে খুশি না করে কোথায় ছুটছেন?
একবারও কি মনে আসে না যে, এই সময়ে যদি মৃত্যুর ফেরেশতা এসে পড়েন এবং দুনিয়ার জীবনের শেষ সময়ে আপনি আছো, তাহলে কি ষ্ট্যাটাস নিয়ে মহান আল্লাহর দরবারে চলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হলেন?
সেই সময়েতো আপনার ঈমানের কথা মনেও থাকবে না, তাহলে কিভাবে কবরের প্রশ্নের উত্তর দিবেন? দুনিয়ায় একটা লজ্জার কাজ করলে, মানুষ যেন না জানে সেজন্য কত পন্থা অবলম্বন করে থাকেন অথচ মহান রব সবসময় দেখছেন, কিভাবে লজ্জাকর কাজ যা আল্লাহ নিষেধ করেছেন, তা করতে সময় দিচ্ছেন?
এগুলোকে য়াপনারা আবার অনেকেই মনে করেন এইতো গানের কথা বা মুভির এই চিত্রের সাথে নিজের জীবনের অনেক মিল খুঁজে পাওয়া যায়, আরো বেশী আবেগাপ্লুত মোহগ্রস্থ করে নিয়ে যায় নাটকের বা গানের আহবানের দিকে-ভুলিয়ে দেয় মহান রবের কাছে ফিরে যেয়ে জবাবদিহী করতে হবে সেই কথা, আরো ভুলিয়ে দেয় বাবা-মা বা পরিবারের সম্পর্কগুলোর কথা, আরো প্রকট করে তুলে অবৈধ জিনিষের রংগিন হাতছানি। নফসের চাওয়া পাওয়ায় মেতে উঠে, মরিয়া হয়ে উঠে- এইভাবে সে চলে যায় কুর’আন থেকে অনেক দূরে-সহজ হয়ে যায় গুনাহের জীবনে থাকাটা। আর যখন নফসের চাহিদাকে হাতের নাগালে আনতে পারে না তখন আরো বেশী গান ও মুভির জগতে গিয়ে সময় পার করে কাটিয়ে দিতে চায় এই জীবন নৌকাকে। ভুলে থাকতে চায় বা পালিয়ে থাকতে চায় সত্য সুন্দর বাস্তব জীবনের মুখোমুখী হতে। শয়তান খুব খুশি হয়ে চলে যায় আরেকজনের কাছে এই পথে নিয়ে আসার জন্য, কারন সে নিশ্চিত হয়ে যায় আপনার জাহান্নামের পরিনতির রাস্তায় দেখে। মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে বুঝার তাওফিক দান করুন। এই পথ থেকে ফিরে আসার ঈমানী শক্তি দান করুন।
মহান আল্লাহ বলেছেন-
একশ্রেণীর লোক আছে যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে গোমরাহ করার উদ্দেশে অবান্তর কথাবার্তা সংগ্রহ করে অন্ধভাবে এবং উহাকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে। এদের জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি। যখন ওদের সামনে আমার আয়তসমূহ পাঠ করা হয়, তখন ওরা দম্ভের সাথে এমনভাবে মুখ ফিরিয়ে নেয়, যেন ওরা তা শুনতেই পায়নি অথবা যেন ওদের দু’কান বধির। সুতরাং ওদেরকে কষ্টদায়ক আযাবের সংবাদ দাও।
সূরা লুকমানঃ ৬-৭
But there are, among men, those who purchase idle tales, without knowledge (or meaning), to mislead (men) from the Path of Allah and throw ridicule (on the Path): for such there will be a Humiliating Penalty. When Our Signs are rehearsed to such a one, he turns away in arrogance, as if he heard them not, as if there were deafness in both his ears: announce to him a grievous Penalty. Sura Luqman:6-7
কুরআনের আয়াত “এবং সেই মানুষগুলো যারা অর্থহীন কথাবার্তা ক্রয় করে” (সুরা লুকমানঃ ৬) , এখানে “অর্থহীন কথাবার্তা” বলতে গান বাজনাকে বোঝানো হয়েছে। আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু), যিনি একজন বিশিষ্ট সাহাবী, তিনি আল্লাহর শপথ করে বলেছেন এর মানে হল গান। আর গান যদি রাবাবা এর সাথে হয়,উদ(আরবীয় গিটার), বাঁশি কিংবা ঢোলের সাথে হয়, তবে তো আরো বেশি হারাম। যে কোন গান, যেকোন প্রকার বাদ্যযন্ত্র সহকারেই হোক তা হারাম এবং আলেমগণ এ ব্যাপারে একমত। সুতরাং, মুসলমানদের এ ব্যাপারে সাবধান হওয়া উচিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আমার উম্মতের মধ্য হতে একদল লোক এমন হবে যারা ব্যভিচার, রেশমি বস্ত্র পরিধান, মদ পান এবং বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার ইত্যাদি হালাল মনে করবে”(বুখারি)।
শেখ আব্দুল আযীয বিন বায(রাহিমুল্লাহ) এর কাছে গান বাজনা সম্পর্কে জানতে চেয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল, “এটা কি হারাম? আমি শুধু আনন্দের জন্যেই শুনি। রাবাবা(এক প্রকার গিটার) ও হারানো দিনের গান সম্পর্কে কি বলেন? আর বিয়ে শাদীতে ঢোল ব্যবহার সম্পর্কে?”
শেখ বিন বায বলেন, “ গান বাজনা শোনা হারাম এবং পাপ। এটা হল সেই কাজ যার ফলে আল্লাহর স্মরণ ও প্রার্থনা থেকে অন্তর দুর্বল করে দেয়। কুরআনের আয়াত “এবং সেই মানুষগুলো যারা অর্থহীন কথাবার্তা ক্রয় করে” (সুরা লুকমানঃ ৬) , এখানে “অর্থহীন কথাবার্তা” বলতে গান বাজনাকে বোঝানো হয়েছে। আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু), যিনি একজন বিশিষ্ট সাহাবী, তিনি আল্লাহর শপথ করে বলেছেন এর মানে হল গান। আর গান যদি রাবাবা এর সাথে হয়,উদ(আরবীয় গিটার), বাঁশি কিংবা ঢোলের সাথে হয়, তবে তো আরো বেশি হারাম। যে কোন গান, যেকোন প্রকার বাদ্যযন্ত্র সহকারেই হোক তা হারাম এবং আলেমগণ এ ব্যাপারে একমত। সুতরাং, মুসলমানদের এ ব্যাপারে সাবধান হওয়া উচিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আমার উম্মতের মধ্য হতে একদল লোক এমন হবে যারা ব্যভিচার, রেশমি বস্ত্র পরিধান, মদ পান এবং বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার ইত্যাদি হালাল মনে করবে”(বুখারি)।
আমি আপনাকে(প্রশ্নকর্তাকে) রেডিওতে কুরআনিক অনুষ্ঠান শোনার উপদেশ দিতে পারি, এভাবে একজন স্বস্তি খুঁজে পাবে এবং নিজেকে গান বাজনা থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারবে।
আর বিয়ে শাদীর ব্যাপারে, দফ (এক প্রকার আরবীয় বাদ্যযন্ত্র, দফ-এর এক পাশ খোলা। বাজালে ঢ্যাব ঢ্যাব আওয়াজ হয়। প্লাস্টিকের গামলা বাজালে যেমন আওয়াজ হবে তেমন। আসলে দফ কোনো বাদ্যযন্ত্রের পর্যায়ে পড়ে না। আওনুল বারী গ্রন্থে দফ-এর পরিচয় দিতে গিয়ে লেখা হয়েছে যে, এর আওয়াজ স্পষ্ট ও চিকন নয় এবং সুরেলা ও আনন্দদায়কও নয়। কোনো দফ-এর আওয়াজ যদি চিকন ও আকর্ষণীয় হয় তখন তা আর দফ থাকবে না; বাদ্যযন্ত্রে পরিণত হবে।-আওনুল বারী ২/৩৫৭ । আর দফ-এর মধ্যে যখন বাদ্যযন্ত্রের বৈশিষ্ট্য এসে যাবে তখন তা সর্বসম্মতিক্রমে নাজায়েয বলে পরিগণিত হবে) ব্যবহার করা যেতে পারে এমন কথার গানের সাথে যাকে পাপ বলা যায় না। আর এটা রাতে করা যেতে পারে, কেবলমাত্র বিয়ে শাদীতে, কেবলমাত্র মহিলাদের জন্যে এবং মহিলাদের দ্বারা। এই গীতসমূহ ইসলামিক বিয়ে ঘোষণার একটি অংশ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ হতে তা প্রমাণিত। এবং ড্রামস তথা ঢোলের ক্ষেত্রে, তা সর্বক্ষেত্রে হারাম। দফ কেবলমাত্র বিয়ে শাদীতে ব্যবহার করা যেতে পারে এবং শুধুমাত্র মহিলাদের দ্বারা শুধুমাত্র মহিলাদের জন্যে”।
সাহাবী ও তাবেয়ীদের ভাষ্য অনুযায়ী বহু গুনাহর সমষ্টি হল গান ও বাদ্যযন্ত্র। যথা :
- ক) নিফাক এর উৎস
- খ) ব্যভিচারের প্রেরণা জাগ্রতকারী
- গ) মস্তিষ্কের উপর আবরণ
- ঘ) কুরআনের প্রতি অনিহা সৃষ্টিকারী
- ঙ) আখিরাতের চিন্তা নির্মূলকারী
- চ) গুনাহের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টিকারী ও
- ছ) জিহাদী চেতনা বিনষ্টকারী।–[ইগাছাতুল লাহফান ১/১৮৭]
ইমাম ইবন তাইমিয়া (রাহিমুল্লাহ) বলেন, “যে সকল কাজ শয়তানের পথকে শক্তিশালী করে তাদের মধ্যে গান বাজনা শোনা এবং অন্যায় হাসি তামাশা অন্যতম। এটা সেই কাজ যা কাফেররা করত।
আল্লাহ তায়ালা বলেন “(এ ঘরের পাশে) তাদের (জাহেলী যুগের)নামায তো কিছু শিষ দেয়া ও তালি বাজানো ছাড়া কিছুই ছিল না” (সূরা আল আনফালঃ৩৫)
ইবন আব্বাস, ইবন উমর, আতিয়্যাহ, মুজাহিদ, আদ-দাহাক, আল হাসান এবং ক্বাতাদাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘মুকান’ অর্থ শিষ বাজানো, ‘তাসদিয়াহ’ অর্থ তালি বাজানো। এটা মুশরিকদের উপাসনার পথ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর সাহাবাগণ আল্লাহর ইবাদত করেছেন, তাঁর( আল্লাহর) আদেশ অনুসারে, তাদের ইবাদতে ছিল কুরআন তিলাওয়াত ও যিকর(দু’আ)। এমনটা কখনো হয়নি যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর সাহাবাগণ (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) গান-বাজনা শোনার জন্যে সমবেত হয়েছেন এবং যার সাথে তালি বাজানো হত অথবা ঢোল ব্যবহার করা হত”।
ইমাম ইবন তাইমিয়া (রাহিমুল্লাহ) আরো বলেন সেই ব্যক্তির সম্পর্কে যার স্বভাব হল গান-বাজনা শোনা, “ সে যখন কুরআন তিলাওয়াত শ্রবণ করে তখন সে আবেগাপ্লুত হয় না, অপরদিকে সে যখন শয়তানের বাদ্যযন্ত্র (গান-বাজনা) শ্রবণ করে, সে নেচে উঠে। যদি সে সালাত প্রতিষ্ঠা করে, তবে সে হয় বসে বসে তা আদায় করে অথবা মুরগী যেভাবে মাটিতে ঠোকর দিয়ে শস্যদানা খায় সেভাবে দ্রুততার সাথে আদায় করে। সে কুরআন তিলাওয়াত শ্রবণ করতে অপছন্দ করে এবং তাতে কোন সৌন্দর্য খুঁজে পায় না। তার কুরআনের প্রতি কোন রুচি নেই এবং যখন তা পড়া হয় সে এর প্রতি কোন টান বা ভালোবাসা অনুভব করে না। বরং, সে মুকা ও তাসদিয়া শুনে মজা পায়। এগুলো শয়তানী আনন্দ এবং সে তাদের অন্তর্ভুক্ত যাদের সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “যে ব্যক্তি দয়াময় আল্লাহর স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, আমি তার জন্যে একটি শয়তান নিযুক্ত করে দেই, অতঃপর সেই সর্বক্ষণ তার সাথী হয়ে থাকে”। (৪৩-৩৬) (আউলিয়া আর রাহমান)
মিউজিক ও বেহায়াপনা কিভাবে শুরু হলো তা জানতে চাইলে নিচের লিঙ্কে যাওয়ার অনুরোধ রইলো।