নিয়্যত বা ইচ্ছা ও ইরাদা-৩

আসসালামু’আলাইকুম

 

কাফিরদের বা যারা পরকালের কথা চিন্তা করে না এইরকম ইমানের দাবীদারদের ব্যপারে সহজ ও স্পষ্ট কথা হলো—

“যারা ইহকাল কামনা করে, আমি সে সব লোককে যা ইচ্ছা সত্ত্বর দিয়ে দেই। অতঃপর তাদের জন্য জাহান্নাম নির্ধারণ করি। ওরা তাতে নিন্দিত-বিতাড়িত অবস্থায় প্রবেশ করবে।  আর যারা পরকাল কামনা করে এবং মু‘মিন অবস্থায় তার জন্য যথাযথ চেষ্টা-সাধনা করে, এমন লোকদের চেষ্টা স্বীকৃত হয়ে থাকে।” [সূরা বানী ইসরাঈল: ১৮-১৯]

উপরোক্ত প্রথম আয়াতটি কাফিরদের ব্যাপারে বলা হয়েছে যারা নিজেদের প্রত্যেক কাজকে ক্রমাগতভাবে ও সদাসর্বদা শুধু ইহকালের উদ্দেশ্যেই আচ্ছন্ন করে রাখে-পরকালের প্রতি কোনোই লক্ষ্য রাখে না।

দ্বিতীয় আয়াতে মু‘মিনদের কথা বলা হয়েছে অর্থ এই যে, মু‘মিন যখনই যে কাজে পরকালের ইচ্ছা ও নিয়ত করবে, তার সে কাজ গ্রহণযোগ্য হবে। মু‘মিনের যে কর্ম খাঁটি নিয়ত সহকারে অন্যান্য শর্তানুযায়ী হবে, তা কবুল করা হবে আর  যে কর্ম এরূপ হবে না, তা কবুল করা হবে না।

“যে পরকালের ফসল প্রত্যাশা করে আমরা তার জন্য সে ফসল আরো বাড়িয়ে দেই। আর যে ইহকালের ফসল কামনা করে আমরা তাকে এর কিছু দিয়ে দেই। কিন্তু পরকালে তার জন্য কিছু থাকবে না।” [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ২০]

যে সকল লোকেরা বলে যে, হে আমাদের রব! আমাদেরকে দুনিয়াতে দান করুন। তাদের জন্য পরকালে কোনো অংশ নেই।” [সূরা  আল-বাকারাহ, আয়াত: ২০০]

“যারা পার্থিব জীবন ও তার চাকচিক্য কামনা করে, আমি তাদের দুনিয়াতে ‘আমলের প্রতিফল ভোগ করিয়ে দেই এবং তাতে তাদের প্রতি কিছুমাত্র কমতি করা হয় না। এরাই হল সে সব লোক আখেরাতে যাদের জন্য আগুন ছাড়া কিছুই নেই। তারা এখানে যা কিছু করেছিল সবই বরবাদ করেছে আর যা কিছু উপার্জন করেছিল সবই বিনষ্ট হলো।” [সূরা হূদ, আয়াত: ১৫-১৬]

 

মু‘আবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু, মায়মুন ইবনে মিহরান ও মুজাহিদ রহ.প্রমুখ উপরোক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন: অত্র আয়াতে ঐ সব লোকের অবস্থা বর্ণিত হয়েছে যারা তাদের যাবতীয় সৎকাজ শুধু পার্থিব ফায়দা হাসিলের জন্য করে থাকে, চাই সে আখেরাতের প্রতি অবিশ্বাসী কাফির হোক অথবা নামধারী মুসলিম হোক, যে পরকালকে মৌখিক স্বীকার করেও কার্যত: সে দিকে কোনো লক্ষ্য রাখে না বরং পার্থিব লাভের দিকেই সম্পূর্ণ মগ্ন ও বিভোর থাকে।

সহীহ মুসলিমে আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আল্লাহ তা‘আলা কারো প্রতি যুলুম করেন না। সৎকর্মশীল মু‘মিন ব্যক্তিরা দুনিয়াতে আংশিক প্রতিদান লাভ করে থাকে এবং পূর্ণ প্রতিদান আখেরাতে লাভ করবে। আর কাফিররা যেহেতু আখেরাতের কোনো ধ্যান-ধারনাই রাখে না, তাই তাদের প্রাপ্য হিস্যা ইহজীবনেই তাদেরকে পুরোপুরি ভোগ করতে দেওয়া হয়। তাদের সৎ কার্যাবলীর প্রতিদানস্বরূপ তাদেরকে ধন-সম্পদ, আরাম-আয়েশ, বস্তুগত উন্নতি ও ভোগ-বিলাসের সামগ্রী দান করা হয়। অবশেষে যখন আখেরাতে উপস্থিত হবে, তখন সেখানে তাদের প্রাপ্তব্য কিছুই থাকবে না।”

আমাদের সমাজে অনেকেই অমুসলিমদের উন্নতি খ্যাতি যশ দেখে লোভাতুর হিংসায় আক্রান্ত হয়ে সেই ধরনের অবস্থা পেতে মরিয়া হয়ে উঠেন,ফলে দেখা যায় মহান রবের স্মরন থেকেই গাফেল হয়ে যান। আবার চিন্তা চেতনা লক্ষ্য থাকে শুধুমাত্র দুনিয়ার আরাম আয়েশ লাভ প্রাপ্তিকে নিয়েই, আখেরাতের কথা বেমালুম ভুলে যান। আর তাই প্রতিদিনের জীবন যাত্রায় শুধু ব্যস্থতা ব্যস্থতা-সালাতে কুর’আনে সময় দেয়ার ফুরসৎ থাকে না।আর যদি কেউ কেউ দিতেও চান তা হয়ে যায় অনেকটাই দায় সারা মনে হয় যেন আল্লাহকে করু্না করছেন অথবা মানুষকে বুঝানো যে সে ধার্মিক।

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যে বিদ্যা দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা যায়, তা যদি একমাত্র সামান্য পার্থিব স্বার্থ লাভের উদ্দেশ্যে কেউ শিক্ষা করে, তাহলে সে কিয়ামতের দিনে জান্নাতের সুগন্ধটুকুও পাবে না।” (আবূ দাঊদ ৩৬৬৬নং)

উবাই বিন কা’ব কর্তৃক থেকে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “এই উম্মতকে স্বাচ্ছন্দ্য, সমুন্নতি, দ্বীন সহ সুউচ্চ মর্যাদা, দেশসমূহে তাদের ক্ষমতা বিস্তার এবং বিজয়ের সুসংবাদ দাও। কিন্তু যে ব্যক্তি পার্থিব কোন স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে পরকালের কর্ম করবে তার জন্য পরকালে প্রাপ্য কোন অংশ নেই।” (আহমদ ২১২২৪, ইবনে মাজাহ, হাকেম, বাইহাক্বীর শুআবুল ঈমান ৬৮৩৩, ইবনে হিব্বান ৪০৫, সহীহ তারগীব ২১নং)

মহান আল্লাহ রিযিক বরাদ্দ করে রেখেছেন,আর তাই মহান রবের সন্তুষ্টির লক্ষ্যি নিজের সকল প্রচেষ্টা নিবদ্ধ থাকতে হবে। জীবনের লক্ষ্য হবে মহান রবের কাছে পূর্ণ আনুগত্যশীল হয়ে ফিরে যাওয়া ও আখেরাতের সফলতা। আর তখনই এই নিয়্যত নিয়ে চলার পথে যত শক্তি মেধা পরিশ্রম সময় ব্য্য হবে তা ইবাদাত বা কল্যান কাজ হিসেবেই কবুল হবে ইন শা আল্লাহ। অনেকে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল রেখে সবর করতে পারেন না ফলে দ্রুত প্রাপ্তির আশায় অন্যায় পথে পা বাড়ান। অথচ তাকদীরের অংশ কেউ রুখতে পারবে না।–

নিশ্চয়ই কোন প্রাণী মরবে না যতক্ষণ না সে তার রূযী পূর্ণভাবে প্রাপ্ত

হবে। অতএব সাবধান! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সম্পদ উপার্জনে উত্তম (অর্থাৎ বৈধ) পন্থা অবলম্বন কর। প্রাপ্য রিযিক পৌঁছতে দেরী হওয়া যেন তোমাদেরকে তা অন্বেষণে অন্যায় পথ অবলম্বনে প্ররোচিত না করে। কেননা আল্লাহর নিকটে যা রয়েছে, সেটা তাঁর আনুগত্য ব্যতীত লাভ করা যায় না’

বায়হাক্বী শো‘আব হা/১০৩৭৬; মিশকাত হা/৫৩০০; ছহীহুল জামে‘ হা/২০৮৫; ছহীহাহ

হা/২৮৬৬।