নিয়্যত বা ইচ্ছা ও ইরাদা-২

আসসালামু’আলাইকুম

 

সমাজে বিভিন্ন রকমের মানুষের অবস্থা, আর বিভিন্নতা প্রকাশ পায় মানুষের অন্তরের বিশ্বাসের অবস্থান থেকেই। মানুষের অন্তরের স্পষ্ট অবস্থান মহান আল্লাহর জ্ঞানের আওতায় দৃষ্টির মধ্যেই থাকে।

আর তাই আখেরাতের প্রতিদান দিবেন মহান আল্লাহ নিজে সেই অন্তরের অবস্থানকে যাচাই করেই। দুনিয়াতে মানুষ বাহ্যিকভাবে বিভিন্ন রকম ছল চাতুরির আশ্রয় নিতে পারে কিন্তু অন্তরের মূল অবস্থানটি রবের রেকর্ডে সংরক্ষন থাকে।

আল কুর’আনে এসেছে-

আসমান ও যমীনের সবকিছু সম্পর্কেই তিনি জানেন, আর তোমরা যা গোপন করো এবং যা প্রকাশ করো তাও তিনি জানেন৷মানুষের অন্তরের কথাও তিনি খুব ভাল করে জানেন৷সূরা তাগাবুনঃ৪

আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘আমি সকল অংশীদার অপেক্ষা অধিক শির্ক (অংশীদারী) হতে বেপরোয়া। অতএব যে ব্যক্তি আমার জন্য কোন এমন আমল করবে, যাতে সে আমি ভিন্ন অন্য কাউকে অংশী করবে, আমি তার থেকে সম্পর্কহীন। আর সে আমল তার জন্য হবে যাকে সে শরীক করেছে।” (ইবনে মাজাহ ৪২০২, আহমাদ ৭৯৯৯নং)

আবূ মূসা আব্দুল্লাহ ইবনে কায়স আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে এমন ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল, যে বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য যুদ্ধ করে, অন্ধ পক্ষপাতিত্বের জন্য যুদ্ধ করে এবং লোক প্রদর্শনের জন্য (সুনাম নেওয়ার উদ্দেশ্যে) যুদ্ধ করে, এর কোন যুদ্ধটি আল্লাহর পথে হবে? আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর কালেমাকে উঁচু করার উদ্দেশ্যে যুদ্ধ করে, একমাত্র তারই যুদ্ধ আল্লাহর পথে হয়।” (বুখারী ৭৪৫৮, মুসলিম ৫০২৯ নং)

আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

এক ব্যক্তি বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! এক ব্যক্তি জিহাদ করতে চায়, কিন্তু সে তাতে পার্থিব কোন স্বাৰ্থ কামনা করে।’ রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “তার জন্য কোন সওয়াব নেই।” লোকটি ঐ একই কথা তিনবার ফিরিয়ে বলল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রত্যেক বারেই উত্তরে বললেন, “তার জন্য কোন সওয়াব নেই।” (আবূ দাঊদ ২৫১৮নং)

ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ বলেছেন, “যখন কোন জাতির উপর মহান আল্লাহ আযাব অবতীর্ণ করেন, তখন তাদের মধ্যে বিদ্যমান সমস্ত লোককে তা গ্রাস ক’রে ফেলে। তারপর (বিচারের দিনে) তাদেরকে স্ব স্ব কৃতকর্মের ভিত্তিতে পুনরুখিত করা হবে।” (বুখারী ৭১০৮, মুসলিম ৭৪২৫নং)

সুতরাং এখান থেকে আমাদের অত্যন্ত সচেতন হতে হবে। আমরা অনেকেই অনেক অনেক ভালো কাজ করে থাকি, অন্য বেঈমান যারা তারাও করে থাকে। শুধুমাত্র নিয়্যতের অবস্থান ঠিক না থাকার কারনে সকলের ফলাফল একই হতে পারে। পরীক্ষার খাতা ভর্তি করে উত্তর লেখা হলো কিন্তু যে জিনিষ জানতে চাচ্ছে সেটার উল্লেখ নাই তাতে সেই পরীক্ষার্থীর উত্তরে কোন নাম্বার আসবে কি?

আমাদের সকল সময় প্রতিটি কাজের পিছনে নিয়্যতকে খালেস করে নিতে হবে। কখনোই রবের সন্তুষ্টির সাথে দুনিয়াবী পাওয়াটা এক কাতারে নেয়া যাবে না। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই কাজ করতে হবে,ফলাফল স্বাভাবিকভাবেই দুনিয়ার প্রাপ্তি চলে আসবে। কিন্তু নিয়্যতের মাঝে রবের আনুগত্যের সাথে যদি দুনিয়ার প্রাপ্তিকে নিয়ে নেয় তাহলে দুনিয়াতে পাবে কিন্তু আখেরাতে কিছুই পাবে না।

তাই কাজ করার পূর্বে নিজের নিয়্যতকে ঠিক করে নেয়া একটি অত্যাবশ্যক কাজ। শয়তান এই সময় বার বার ওয়াস ওয়াসা দিতে আসে,মহান রবের কাছে ক্ষমা ও সাহায্য চাইতে থাকতে হবে বেশী করে।